সূরা আল-বায়্যিনাহ তেলাওয়াত, উচ্চারণ, অনুবাদ ও তাফসীর || কারী শেখ আব্দুল বাসিত ||

সূরা আল-বায়্যিনাহ তেলাওয়াত

কারী শেখ আব্দুল বাসিত

সূরা আল-বায়্যিনাহ আরবি উচ্চারণ

১   لَمۡ یَکُنِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ وَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ مُنۡفَکِّیۡنَ حَتّٰی تَاۡتِیَهُمُ الۡبَیِّنَۃُ
২   رَسُوۡلٌ مِّنَ اللّٰهِ یَتۡلُوۡا صُحُفًا مُّطَهَّرَۃً ۙ
৩   فِیۡهَا کُتُبٌ قَیِّمَۃٌ
৪   وَ مَا تَفَرَّقَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ الۡبَیِّنَۃُ ؕ
৫   وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ ؕ
৬   اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ وَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ فِیۡ نَارِ جَهَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ اُولٰٓئِکَ هُمۡ شَرُّ الۡبَرِیَّۃِ ؕ
৭   اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ۙ اُولٰٓئِکَ هُمۡ خَیۡرُ الۡبَرِیَّۃِ ؕ
৮   جَزَآؤُهُمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ ؕ ذٰلِکَ لِمَنۡ خَشِیَ رَبَّهٗ 

সূরা আল-বায়্যিনাহ বাংলা উচ্চারণ


১.  লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূমিন আহলিল কিতা-বি ওয়াল মুশরিকীনা মুনফাক্কীনা হাত্তাতা’তিয়াহুমুল বাইয়িনাহ। 
২.  রাছূলুম মিনাল্লা-হি ইয়াতলূসুহুফাম মুতাহহারাহ। 
৩.  ফীহা-কুতুবুন কাইয়িমাহ। 
৪.  ওয়ামা- তাফাররাকাল্লাযীনা ঊতুলকিতা-বা ইল্লা- মিম বা‘দি মা- জাআতহুমুল বাইয়িনাহ। 
৫.  ওয়ামাউমিরূইল্লা-লিয়া‘বুদুল্লা-হা মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা হুনাফাআ ওয়া ইউকীমুসসালা-তা ওয়া ইউ’তুঝঝাকা-তা ওয়া যা-লিকা দীনুল কাইয়িমাহ। 
৬.  ইন্নাল্লাযীনা কাফারূমিন আহলিল কিতা-বি ওয়াল মুশরিকীনা ফী না-রি জাহান্নামা খা-লিদীনা ফীহা- উলাইকা হুম শাররুল বারিইইয়াহ। 
৭.  ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি উলাইকা হুম খাইরুল বারিইইয়াহ। 
৮.  জাঝাউহুম ‘ইনদা রাব্বিহিম জান্না-তু‘আদনিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু খা-লিদীনা ফীহাআবাদার রাদিয়াল্লা-হু ‘আনহুম ওয়া রাদূ ‘আনহু যা-লিকা লিমান খাশিয়া রাব্বাহ।

সূরা আল-বায়্যিনাহ অনুবাদ


১.  কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করে তারা ও মুশরিকরা, তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ না আসা পর্যন্ত (নিজদের অবিশ্বাসে) অটল থাকবে।
২.  আল্লাহর পক্ষ থেকে এক রাসূল পবিত্র কিতাবসমূহ তিলাওয়াত করে। 
৩.  তাতে রয়েছে সঠিক বিধিবদ্ধ বিধান। 
৪.  আর কিতাবীরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরই কেবল মতভেদ করেছে।
৫.  আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।
৬.  নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে থাকবে স্থায়ীভাবে। ওরাই হল নিকৃষ্ট সৃষ্টি। 
৭.  নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারাই সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট। 
৮.  তাদের রবের কাছে তাদের পুরস্কার হবে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা থাকবে স্থায়ীভাবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে। এটি তার জন্য, যে স্বীয় রবকে ভয় করে। 

সূরা আল-বাইয়্যিনাহ তাফসীর


১. আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং মুশরিকরণ(১), তারা নিবৃত্ত হবে না যতক্ষন না তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসবে(২)
(১) আহলে কিতাব ও মুশরিক উভয় দলই কুফরী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলেও দু’দলকে দুটি পৃথক নাম দেয়া হয়েছে। যাদের কাছে আগের নবীদের আনা কোন আসমানী কিতাব ছিল, তা যত বিকৃত আকারেই থাক না কেন, তারা তা মেনে চলতো, তাদেরকে বলা হয় আহলি কিতাব; আর তারা হল ইয়াহুদী ও নাসারীগণ। আর যারা মূর্তি-পূজারী বা অগ্নি-পূজারী, তারা-ই মুশরিক। [ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ তারা তাদের কুফরী থেকে নিবৃত্ত হবে না যতক্ষণ না একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে তাদেরকে কুফরীর প্রতিটি গলদ ও সত্য বিরোধী বিষয় বুঝাবে এবং যুক্তিপ্রমাণের সাহায্যে সুস্পষ্ট পদ্ধতিতে সত্য সঠিক পথ তাদের সামনে পেশ করবে, এর মাধ্যমে তারা কুফরী থেকে বের হতে পারবে। এর মানে এ নয় যে, এই সুস্পষ্ট প্রমাণটি এসে যাবার পর তারা সাবাই কুফরী পরিত্যাগ করবে। তবে তার আসার পরও তাদের মধ্য থেকে যারা নিজেদের কুফরীর ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তার দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়। এরপর তারা আল্লাহর কাছে অভিযোগ করতে পারবে না যে, আপনি আমাদের হেদায়াতের কোন ব্যবস্থা করেননি। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, “অনেক রাসূল পাঠিয়েছি যাদের কথা আগে আমি আপনাকে বলেছি এবং অনেক রাসূল, যাদের কথা আপনাকে বলিনি এবং মূসার সাথে আল্লাহ সাক্ষাত কথা বলেছিলেন। এই রাসূলদেরকে সুসংবাদদানকারী ও সতর্ককারী করা হয়েছে যাতে রাসূলদের পর লোকদের জন্য আল্লাহর বিরুদ্ধে কোন যুক্তি না থাকে।” [সূরা আন-নিসা: ১৬৪–১৬৫]

আরও বলেন, “হে আহলে কিতাব! রাসূলদের সিলসিলা দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার পর প্রকৃত সত্যকে সুস্পষ্ট করার জন্য তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসেছে। যাতে তোমরা বলতে না পারো আমাদের কাছে না কোন সুসংবাদদানকারী এসেছিল, না এসেছিল কোন সতর্ককারী। কাজেই নাও, এখন তোমাদের কাছে সুসংবাদদানকারী এসে গেছে এবং সতর্ককারীও।” [সূরা আল-মায়িদাহ: ১৯]


২. আল্লাহর কাছ থেকে এক রাসূল, যিনি তেলাওয়াত করেন পবিত্র পত্ৰসমূহ(১)
(১) صحف শব্দটি صحيفة এর বহুবচন। আভিধানিক অর্থে ‘সহীফা’ বলা হয় লেখার জন্য প্রস্তুত, কিংবা লিখিত পাতাকে, এখানে পবিত্র সহীফা মানে হচ্ছে এমন সব সহীফা যার মধ্যে কোন প্রকার বাতিল, কোন ধরনের গোমরাহী ও ভ্ৰষ্টতা নেই এবং শয়তান যার নিকটে আসে না। এখানে পবিত্র সহীফা তেলাওয়াত করে শুনানো অর্থ তিনি সেসব বিধান শুনাতেন, যা পরে সহীফার মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়। কেননা, প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সহীফা থেকে নয় স্মৃতি থেকে পাঠ করে শুনাতেন। [ফাতহুল কাদীর] অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ ٭ مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ ٭ بِأَيْدِي سَفَرَةٍ ٭ كِرَامٍ بَرَرَةٍ) “ওটা আছে মর্যাদা সম্পন্ন লিপিসমূহে, যা উন্নত, পবিত্র, মহান, পূত-চরিত্র লেখকের হাতে লিখিত।” [সূরা আবাসাঃ ১৩–১৬]

৩. যাতে আছে সঠিক বিধিবদ্ধ বিধান।(১)
(১) বলা হয়েছে যে, সে সমস্ত লিখিত লিপিসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, তা সত্য, ইনসাফপূর্ণ ও সরল-সহজ। এ বিধি-বিধানই মানুষকে সরল পথের সন্ধান দেয়। এ প্রমাণ থাকলেই প্রমাণিত হয় কে প্রকৃত সত্যসন্ধানী। [সা'দী]


৪. আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা তো বিভক্ত হল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্ৰমাণ আসার পর।(১)
(১) আহলে-কিতাবদের নিকটেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলী, পরিচিতি ইত্যাদি জ্ঞান ছিল, তাই আয়াতে তাদের কথাই বলা হয়েছে- মুশরেকদের উল্লেখ করা হয়নি। আহলে কিতাবরা সত্যকে জানার পরও অনেকে তা অস্বীকার করেছিল। কিন্তু প্ৰথম ব্যাপারে উভয় দলই শরীক ছিল, তাই প্রথম আয়াতে উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে (لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ) বলা হয়েছে। [আদওাউল বায়ান]

৫. আর তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত প্ৰদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন।(১)
(১) অর্থাৎ আহলে-কিতাবদেরকে তাদের কিতাবে আদেশ করা হয়েছিল খাঁটি মনে ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে, সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে। এরপর বলা হয়েছে, এ নির্দেশটি শুধুমাত্র বর্তমান আহলে কিতাবদের জন্য নয়; বরং সঠিক মিল্লাতের অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সমস্ত কিতাবের তরীকাও তাই। [সা’দী]


৬. নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধ্যম।(১)
(১) অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি আর নেই। এমন কি তারা পশুরও অধম। কারণ পশুর বুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তা ও কর্মশক্তি নেই। কিন্তু এরা বুদ্ধি ও স্বাধীন চিন্তা ও কর্মশক্তি সত্বেও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [আদওয়াউল বায়ান]

৭. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই সৃষ্টির শ্ৰেষ্ঠ।

৮. তাদের রবের কাছে আছে তাদের পুরস্কার : স্থায়ী জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট(১) এবং তারাও তার প্রতি সস্তুষ্ট। এটি তার জন্য, যে তার রবকে ভয় করে।(২)
(১) এ আয়াতে জান্নাতীদের প্রতি সর্ববৃহৎ নেয়ামত আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা'আলা জান্নাতীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, হে জান্নাতীগণ! তখন তারা জওয়াব দেবে, হে আমাদের রব! আমরা উপস্থিত এবং আপনার আনুগত্যের জন্যে প্রস্তুত। সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা জওয়াব দেবে, হে আমাদের রব! এখনও সন্তুষ্ট না হওয়ার কি সম্ভাবনা? আপনি তো আমাদেরকে এত সব দিয়েছেন, যা অন্য কোন সৃষ্টি পায়নি। আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদেরকে আরও উত্তম নেয়ামত দিচ্ছি। আমি তোমাদের প্রতি আমার সস্তুষ্টি নাযিল করছি। অতঃপর কখনও তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না।” [বুখারী: ৬৫৪৯, ৭৫১৮, মুসলিম: ২৮২৯]


(২) অন্যকথায় যে ব্যক্তি আল্লাহর ব্যাপারে নির্ভীক এবং তাঁর মোকাবিলায় দুঃসাহসী ও বেপরোয়া হয়ে জীবন যাপন করে না। বরং দুনিয়ায় প্রতি পদে পদে আল্লাহকে ভয় করে জীবন যাপন করে; তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে তাকওয়া অবলম্বন করে। তার জন্যই আল্লাহর কাছে রয়েছে এই প্রতিদান ও পুরস্কার। [তাবারী]



*********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url