বিশ্ববিখ্যাত কারী আব্দুল বাসিতের সাথে কুরআন পড়ুন || সাত হাওয়ামীম || কারী শেখ আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ ||


সাত হাওয়ামীম

কারী শেখ আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ

সূরা গাফির, সূরা হা-মীম সেজদাহ্ বা সূরা ফুস্‌সিলাত, সূরা আশ-শূরা, সূরা আয্‌-যুখরুফ, সূরা আদ-দোখান, সূরা আল জাসিয়াহ, সূরা আল আহ্‌ক্বাফ

বিস্ময়কর সুন্দর তেলাওয়াত
আল কুরআন শুনুন এবং কণ্ঠ মিলিয়ে পড়ুন
সহী ভাবে কুরআন তেলাওয়াতের চমৎকার সুযোগ

সূরা গাফির এর পরিচয়ঃ

সূরা গাফির (سورة غافر‎‎), অর্থ বিশ্বাসী। এই সূরাটিকে আল মু'মিন এবং সূরা ‘ত্বাওল’ও বলা হয়। এটি  আল কুরআনের ৪০তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৮৫ টি।

সূরা হা-মীম সেজদাহ্ বা সূরা ফুস্‌সিলাত পরিচয়ঃ

সূরা হা-মীম সেজদাহ্ বা সূরা ফুস্‌সিলাত, (سورة فصلت‎‎), (বিশ্বাসী), আল কুরআনের ৪১তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৫৪ টি।
কুরআন-হাদিসের শিক্ষনীয় ইসলামিক গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হামীম-আস-সাজদাহ: নাযিল হওয়ার সময়-কাল 
(আরবী) فَإِنْ أَعْرَضُوا فَقُلْ أَنْذَرْتُكُمْ صَاعِقَةً مِثْلَ صَاعِقَةِ عَادٍ وَثَمُودَ নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত অনুসারে এর নাযিল হওয়ার সময়কাল হচ্ছে হযরত হামযার (রা:) ঈমান আনার পর এবং হযরত উমরের (রা:) ঈমান আনার পূর্বে। নবী করিম ﷺ এর প্রাচীনতম জীবনীকার মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল-কারযীর বরাত দিয়ে এই কাহিনী উদ্ধৃত করেছেন যে, একদিন কিছু সংখ্যক কুরাইশ নেতা মসজিদে হারামের মধ্যে আসর জমিয়ে বসেছিল এবং মসজিদের অন্য এক কোণে রসূলুল্লাহ ﷺ একাকী বসেছিলেন। এটা এমন এক সময়ের ঘটনা যখন হযরত হামযা ঈমান এনেছিলেন এবং কুরাইশরা প্রতিনিয়ত মুসলমানদের সাংগঠনিক উন্নতি দেখে অস্থির হয়ে উঠছিলো। এই সময় ‘উতবা ইবনে রাবী’আ (আবু সুফিয়ানের শ্বশুর) কুরাইশ নেতাদের বললেন, ভাইসব, আপনারা যদি ভালো মনে করেন তাহলে আমি গিয়ে মুহাম্মাদের ﷺ সাথে আলাপ করতে এবং তাঁর কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করতে পারি। সে হয়তো তার কোনটি মেনে নিতে পারে এবং আমাদের কাছেও তা গ্রহণ যোগ্য হতে পারে। আর এভাবে সে আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে। উপস্থিত সবাই তার সাথে একমত হলো এবং ‘উতবা উঠে নবী ﷺ এর কাছে গিয়ে বসলো। নবী ﷺ তার দিকে ফিরে বসলে সে বললো: ভাতিজা, বংশ ও গোত্রের বিচারে তোমার কওমের মধ্যে তোমার যে মর্যাদা তা তুমি অবগত আছো। কিন্তু তুমি তোমার কওমকে এক মুসিবতের মধ্যে নিক্ষেপ করেছো। তুমি কওমের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছো। গোটা কওমকে নির্বোধ প্রতিপন্ন করেছো। কওমের ধর্ম ও তাদের উপাস্যদের সমালোচনা করেছো এবং এমন কথা বলতে শুরু করেছো যার সারবস্তু হলো, আমাদের সকলের বাপ-দাদা কাফের ছিল। এখন আমার কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শোন। আমি তোমার কাছে কিছু প্রস্তাব রাখছি প্রস্তাবগুলো গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো। “হয়তো তার কোনটি তুমি গ্রহন করতে পার।” রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন: আবুল ওয়ালীদ, আপনি বলুন, আমি শুনবো। সে বললো: ভাতিজা, তুমি যে কাজ শুরু করেছো তা দিয়ে সম্পদ অর্জন যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় তাহলে আমরা সবাই মিলে তোমাকে এতো সম্পদ দেব যে, তুমি আমাদের মধ্যে সবার চেয়ে সম্পদশালী হয়ে যাবে। এভাবে তুমি যদি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কামনা করে থাকো তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের নেতা বানিয়ে নিচ্ছি, তোমাকে ছাড়া কোন বিষয়ে ফায়সালা করবো না। যদি তুমি বাদশাহী চাও তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের বাদশাহ বানিয়ে নিচ্ছি। আর যদি তোমার ওপর কোন জিন প্রভাব বিস্তার করে থাকে যাকে তুমি নিজে তাড়াতে সক্ষম নও তাহলে আমরা ভালো ভালো চিকিৎসক ডেকে নিজের খরচে তোমার চিকিৎসা করিয়ে দেই। ‘উতবা এসব কথা বলছিলো আর নবী ﷺ চুপচাপ তার কথা শুনছিলেন। অতপর তিনি বললেন: আবুল ওয়ালীদ, আপনি কি আপনার সব কথা বলেছেন? সে বললো: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তাহলে এখন আমার কথা শুনুন। এরপর তিনি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে এই সূরা তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন। উতবা তার দুই হাত পেছনের দিকে মাটিতে হেলান দিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে শুনতে থাকলো। সিজদার আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করে তিনি সিজদা করলেন এবং মাথা তুলে বললেন: হে আবুল ওয়ালীদ, আমার জবাবও আপনি পেয়ে গেলেন। এখন যা ইচ্ছা করেন।” ‘উতবা উঠে কুরাঈশ নেতাদের আসরের দিকে অগ্রসর হলে লোকজন দূর থেকে তাকে দেখেই বললো: আল্লাহ্‌র শপথ! ‘উতবার চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। যে চেহারা নিয়ে সে গিয়েছিল এটা সেই চেহারা নয়। সে এসে বসলে লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করলো: কি শুনে এলে। সে বললো: “আল্লাহ্‌র কসম! আমি এমন কথা শুনেছি যা এর আগে কখনো শুনিনি। আল্লাহ্‌র কসম! এটা না কবিতা, না যাদু, না গণনা বিদ্যা। হে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ, আমার কথা শোন এবং তাঁকে তাঁর কাজ করতে দাও। আমার বিশ্বাস, এ বাণী সফল হবেই। মনে করো আরবের লোকেরা যদি তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে তাহলে নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত তোলা থেকে তোমরা রক্ষা পেয়ে যাবে এবং অন্যরাই তাঁকে পরাভূত করবে। পক্ষান্তরে সে যদি আরবদের বিরুদ্ধে বিজয় হয় তাহলে তাঁর রাজত্ব তোমাদেরই রাজত্ব এবং তাঁর সম্মান ও মর্যাদা তোমাদের সম্মান ও মর্যাদা হবে।” তার এই কথা শোনা মাত্র কুরাঈশ নেতারা বলে উঠলো: “ওয়ালীদের বাপ, শেষ পর্যন্ত তোমার ওপর তার যাদুর প্রভাব পড়লো” ‘উতবা বললো: “আমি আমার মতামত তোমাদের সামনে পেশ করলাম। এখন তোমাদের যা ইচ্ছা করতে থাকো।” (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩১৩-৩১৪)

সূরা আশ-শূরা এর পরিচয়ঃ

আশ-শূরা, (سورة الشورى‎‎, অর্থ পরামর্শ)। মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৪২ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৫৩ টি।
এই সূরার ৩৮ নং আয়াতের وَاَمْرُهُمْ شُوْرَي بَيْنَهُمْ আয়াতাংশ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। এ নামের তাৎপর্য হলো, এটি সেই সূরা যার মধ্যে শূরা শব্দটি আছে।

সূরা আয্‌-যুখরুফ এর পরিচয়ঃ

সূরা আয্‌-যুখরুফ (আরবি ভাষায়: الزّخرف) আল কুরআনের ৪৩ তম সূরা। এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৮৯ এবং এর রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৭। সূরা আয্‌-যুখরুফ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
এই সূরাটির ৮৫ নং আয়াতের وَزُخْرُفًا শব্দ থেকে এর নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে زُخْرُف (‘যুখরুফ’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা।

সূরা আদ-দোখান এর পরিচয়ঃ

সূরা আদ-দোখান (الدخان‎‎, অর্থ আগুনের ধোঁয়া)। আল কুরআনের ৪৪ তম সূরা; এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৫৯ এবং এর রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৩। সূরা আদ-দোখান মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
এই সূরাটির দশম আয়াতের يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ বাক্যাংশের دُخَان শব্দটি অনুসারে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে دُخَان (‘দোখান’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা। এটি এ সূরার শুধু নামই নয় বরং বিষয়বস্তু অনুসারে এর শিরোনামও । কেননা, আল্লাহ তা’আলা হুদাইবিয়ার সন্ধির আকারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলমানদেরকে যে মহান বিজয় দান করেছিলেন এসে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।
৬ষ্ঠ হিজরীর যুল-কা’দা মাসে মক্কার কাফেরদের সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদনের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনার দিকে ফিরে যাচ্ছিলেন সে সময় এ সূরাটি নাযিল হয় । এ ব্যাপারে সমস্ত রেওয়াত একমত ।

সূরা আল জাসিয়াহ এর পরিচয়ঃ

সূরা আল জাসিয়াহ ( الجاثية) আল কুরআনের ৪৫তম সূরা। এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৩৭ এবং এর রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৪। সূরা আল জাসিয়াহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
এই সূরাটির ২৮ নং আয়াতের وَتَرَى كُلَّ أُمَّةٍ جَاثِيَةً বাক্যাংশ থেকে جَاثِيَةً অংশটি অনুসারে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে الجاثية (‘জাসিয়াহ’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা।
এ সূরাটির নাযিল হওয়ার সময়-কাল কোন নির্ভরযোগ্য হাদীসে বর্ণিত হয়নি । তবে এর বিষয়বস্তু থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় এটি সুরা ‘দুখান’ নাযিল হওয়ার অল্প দিন পরই নাযিল হয়েছে । এ দুটি সূরার বিষয়বস্তুতে এতটা সাদৃশ্য বর্তমান যে সূরা দুটিকে যমজ বা যুগ্ম বলে মনে হয় ।

সূরা আল আহ্‌ক্বাফ এর পরিচয়ঃ

সূরা আল আহ্‌ক্বাফ (الأحقاف‎), আল কুরআনের ৪৬ তম সূরা। এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৩৫ এবং এর রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৪। সূরা আল আহ্‌ক্বাফ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
এই সূরাটির ২১ নং আয়াতের إِذْ أَنْذَرَ قَوْمَهُ بِالْأَحْقَافِ বাক্যাংশ থেকে بِالْأَحْقَافِ অংশটি অনুসারে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে الأحقاف‎ (‘আহ্‌ক্বাফ’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা।
এ সূরা নাযিল হওয়ার সময়-কাল ২৯ থেকে ৩২ আয়াতে বর্ণিত একটি ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে নিরূপিত হয়ে যায় । এ আয়াতগুলোতে রসূলুল্লাহর (সা) কাছে এসে জিনদের ইসলাম গ্রহণ করে ফিরে যাওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে । হাদীস ও সীরাত গ্রন্থসমূহে ঐকমত্যের ভিত্তিতে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহ অনুসারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সময় তায়েফ থেকে মক্কায় ফিরে আসার পথে নাখলা নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করেছিলেন সেই সময় ঘটনাটি ঘটেছিলো । সমস্ত নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক বর্ণনা অণুসারে হিজরতের তিন বছর পূর্বে নবী (সা) তায়েফ গমন করেছিলেন । সুতরাং এ সূরা যে নবুওয়াতের ১০ম বছরে শেষ দিকে অথবা ১১ শ বছরের প্রথম দিকে নাযিল হয়েছিলো তা নিরূপিত হয়ে যায় ।



*********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url