মুমীনের রোজার প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিৎ?




মুমীনের রোজার প্রস্তুতি



আর মাত্র কয়েক দিন পরেই শুরু হবে পবিত্র মাহে রমজান বা সিয়াম সাধনার মাস। রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তা’আলান পক্ষ থেকে বিশেষ এক নেয়ামত। রহমত বরকত ও নাজাতের এই মাস আত্মা-পরিশুদ্ধ করার নিয়ামক। আত্মসংযমী, বিনয়ী, দয়াশীলতা, ধৈর্য্যশীলতা, দানশীলতাসহ যাবতীয় উত্তম গুনাবলী অর্জন ও আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায় হলো মাহে রমজানে রোযা রাখা। রমজানে রোযা রাখার দ্বারা শরীর ও মন দুটোই পবিত্র হয়। রমজানের প্রস্তুতি কখন থেকে কীভাবে নিতে হয়, কী করণীয় কী বর্জনীয়, সে বিষয়ে এখানে সম্যক আলোচনা করা হবে।

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)-এর জীবনার্দশের ভিত্তিতে প্রত্যেক মুমীনের জন্য রমজানের আগেই ১১টি প্রস্তুতি নিতে হবে। 

মুমীনের জন্য রমজানের প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে?

রমজান মাস আমাদের জন্য রহমত বরকত এবং নাজাতের মাস। এই মাসের প্রস্তুতি মূলত রজব মাস থেকেই শুরু করতে হয়। রাসুল স. রজব মাস এলেই আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করে বলতেন, হে আল্লাহ আমাদের রজব এবং শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান পর্য্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। বুঝা গেলো রমজানের প্রস্তুতি রজব মাস থেকেই শুরু করতে হবে।

রমজানের প্রস্তুতি নিতে হয় দুইভাবে। জাহিরি ও বাতিনি। জাহিরি প্রস্তুতি হলো বাহ্যিক প্রস্তুতি আর বাতিনি প্রস্তুতি হলো মানসিক প্রস্তুতি। বাহ্যিকভাবে পবিত্র মাস আসার আগে পবিত্র হয়ে প্রবেশ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। পূর্বেকার কাযা রোযা, কাযা নামাজ বা ইবাদাতে অপূর্ণতা থাকলে সেটা পূর্ণ করে নিতে হবে। গোনাহ ছেড়ে দিতে হবে।

রমজানে ইবাদাতে যাতে ব্যঘাত না ঘটে সে জন্য অগ্রিম কিছু কাজ করে রাখতে হবে। কোনো কাজ জমিয়ে রাখা যাবে না। যেমন রোযার পর পরই ঈদ আসে। ঈদ উপলক্ষ্যে প্রায় সবাই মার্কেটিং করে থাকে। সেক্ষেত্রে পরামর্শ হলো রোযার আগেই প্রয়োজীয় মার্কেটিং এর কাজ সম্পন্ন করে রাখা। কেননা রোযা রেখে মার্কেটে গিয়ে মার্কেটিং করা শারীরিকভাবে কষ্টকর। তাছাড়া রোযা রেখে মার্কেটিং করা, রোযার হক নষ্ট হওয়ার মাধ্যমে আত্মিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়।

অন্যদিকে রমজান আসার আগেই মানসিকভাবে রোযা রাখার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

রোযার মূখ্য উদ্দেশ্য কী?

রমজানে রোযা রাখার মূখ্য বা প্রধান উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন, ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’ যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। মূল কথা হলো গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য তাকওয়া অর্জন করাই রমজানের মুখ্য উদ্দেশ্য।

রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা কি করবেন?

হ্যাঁ, কেউ যদি ইচ্ছে করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে তাহলে অবশ্যই রোযাদারদের কষ্ট দেয়ার কারণে তাকে গোনাহগার হতে হবে। এক্ষেত্রে উচিত ছিল রোযাদারের সম্মানে দ্রব্যাদির দাম কমিয়ে দেয়া যেমনটা আরব বিশ্বে হয়ে থাকে, কিন্ত সেটা না করে দাম বাড়িয়ে রোযাদারের ভোগান্তি বৃদ্ধি করার ফলে গোনাহগার হতে হবে। এজন্য ব্যবসায়ীদেরকে ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে রোজাদারগণ যাতে সহজে রাখতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য ব্যবসায়ীগণ, অল্প লাভে খাদ্য দ্রব্য বিক্রি করবেন। কোন ব্যবসায়ীই মালের মজুত গড়ে তুলবেন না। অসহায়দেরকে প্রয়োজনে বিনা লাভে বা ভর্তুকি মূল্যে কোন কোন ক্ষেত্রে বাকিতে মালামাল প্রদান করবেন। হোটেলগুলোতে গরীব অসহায়দের জন্য বিনামূল্যে সেহরী ও ইফতারের ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। 

অসৎ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বাঁচার উপায় কি?

এর থেকে উত্তরণের দুটি উপায় রয়েছে। ব্যক্তিগত পদ্ধতি এবং সামাজিক পদ্ধতি। ব্যক্তিগত পন্থায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বিশেষ করে মসজিদের ইমাম ও খতিবগণ জুমআর খুতবাসহ বিভিন্ন আলোচনায় ব্যবসায়ীদেরকে সচেতন করতে পারেন। এছাড়া সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে লোকদেরকে বুঝাতে হবে যাতে তারা অতিরিক্ত ব্যবসা না করে। সরকারিভাবেও প্রতিরোধমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। আগে তো রমজানের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরিমাণটা বেশি ছিল। সরকারিভাবে কিছুটা সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় এখন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে বলা য়ায়। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।

রমজানে ইবাদাতের জন্য মুমীনের পূর্ব প্রস্তুতি জরুরি কেন?

যে কোনো কাজেই পূর্বাপর প্রস্তুতি না থাকলে সুষ্ঠুভাবে তা আদায় করা যায় না। প্রত্যেকটা কাজেরই একটা পূর্ব প্রস্তুতি আছে। যেমন, নামাজের আগে অযু আছে। এমনকি নামাজের আগে নামাজ আছে নামাজের পরেও নামাজ আছে। ঠিক তদ্রুপ রোযার আগে রোযা আছে। রজব ও শাবানের রোযা, আইয়্যামে বীজের রোযা। এমনকি রোযার পরেও শাওয়ালের রোযা আছে। মোদ্দা কথা রোযার আগে যেমন প্রস্তুতিমূলক রোযা আছে রোযার পরেও রোযা আছে পূর্ববতী রোযার ফলাফল উবলব্ধি করার জন্য। সর্বোপরি রমজানের আগে ইবাদাতেদর জন্য অবশ্যই পরিকল্পনা এবং পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url