সূরা আল-আলা তেলাওয়াত, উচ্চারণ, অনুবাদ ও তাফসীর || তেলাওয়াত: কারী শেখ আব্দুল বাসিত || Qari Abdul Basit ||

সূরা আল-আলা তেলাওয়াত

কারী শেখ আব্দুল বাসিত || Qari Abdul Basit

সূরা আল-আলা আরবী

Surah Al-Ala in Arabic


১. سَبِّحِ ٱسْمَ رَبِّكَ ٱلْأَعْلَى
২. ٱلَّذِى خَلَقَ فَسَوَّىٰ
৩. وَٱلَّذِى قَدَّرَ فَهَدَىٰ
৪. وَٱلَّذِىٓ أَخْرَجَ ٱلْمَرْعَىٰ
৫. فَجَعَلَهُۥ غُثَآءً أَحْوَىٰ
৬. سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنسَىٰٓ
৭. إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ إِنَّهُۥ يَعْلَمُ ٱلْجَهْرَ وَمَا يَخْفَىٰ
৮. وَنُيَسِّرُكَ لِلْيُسْرَىٰ
৯. فَذَكِّرْ إِن نَّفَعَتِ ٱلذِّكْرَىٰ
১০. سَيَذَّكَّرُ مَن يَخْشَىٰ
১১. وَيَتَجَنَّبُهَا ٱلْأَشْقَى
১২. ٱلَّذِى يَصْلَى ٱلنَّارَ ٱلْكُبْرَىٰ
১৩. ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَىٰ
১৪. قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ
১৫. وَذَكَرَ ٱسْمَ رَبِّهِۦ فَصَلَّىٰ
১৬. بَلْ تُؤْثِرُونَ ٱلْحَيَوٰةَ ٱلدُّنْيَا
১৭. وَٱلْءَاخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰٓ
১৮. إِنَّ هَٰذَا لَفِى ٱلصُّحُفِ ٱلْأُولَىٰ
১৯. صُحُفِ إِبْرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ

সূরা আল-আলা বাংলা উচ্চারণ

Surah Al-Ala in Bangla

১) ছাব্বিহিছমা রাব্বিকাল আ‘লা-।
২) আল্লাযী খালাকা ফাছওওয়া-।
৩) ওয়াল্লাযী কাদ্দারা ফাহাদা-।
৪) ওয়াল্লাযীআখরাজাল মার‘আ-।
৫) ফাজা‘আলাহূগুছাআন আহওয়া-।
৬) ছানুকরিউকা ফালা-তানছা-।
৭) ইল্লা-মা-শাআল্লা-হু ইন্নাহূইয়া‘লামুল জাহরা ওয়ামা-ইয়াখফা-।
৮) ওয়া নুইয়াছছিরুকা লিল ইউছরা-।
৯) ফাযাক্কির ইন নাফা‘আতিযযিকরা-।
১০) ছাইয়াযযাক্কারু মাইঁ ইয়াখশা-।
১১) ওয়া ইয়াতাজান্নাবুহাল আশকা-।
১২) আল্লাযী ইয়াসলান্না-রাল কুবরা-।
১৩) ছু ম্মা লা-ইয়ামূতুফীহা-ওয়ালা-ইয়াহইয়া-।
১৪) কাদ আফলাহা মান তাঝাকা-।
১৫) ওয়া যাকারাছমা রাব্বিহী ফাসাল্লা-।
১৬) বাল তু’ছিরূনাল হায়া-তাদ্দুনইয়া-।
১৭) ওয়াল আ-খিরাতুখাইরুওঁ ওয়া আবকা-।
১৮) ইন্না হা-যা-লাফিসসুহুফিল উলা-।
১৯) সুহুফি ইবরা-হীমা ওয়া মূছা।

সূরা আল-আলা বাংলা অনুবাদ

Surah Al-Ala Bangla Translate

১) আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন
২) যিনি সৃষ্টি করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন।
৩) এবং যিনি সুপরিমিত করেছেন ও পথ প্রদর্শন করেছেন
৪) এবং যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেছেন,
৫) অতঃপর করেছেন তাকে কাল আবর্জনা।
৬) আমি আপনাকে পাঠ করাতে থাকব, ফলে আপনি বিস্মৃত হবেন না
৭) আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।
৮) আমি আপনার জন্যে সহজ শরীয়ত সহজতর করে দেবো।
৯) উপদেশ ফলপ্রসূ হলে উপদেশ দান করুন,
১০) যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে,
১১) আর যে, হতভাগা, সে তা উপেক্ষা করবে,
১২) সে মহা-অগ্নিতে প্রবেশ করবে।
১৩) অতঃপর সেখানে সে মরবেও না, জীবিতও থাকবে না।
১৪) নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়
১৫) এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।
১৬) বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,
১৭) অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।
১৮) এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববতী কিতাবসমূহে;
১৯) ইব্রাহীম ও মূসার কিতাবসমূহে।

সূরা আল-আলা তাফসীর

Surah Al-Ala Tafseer

১. আপনি আপনার সুমহান রবের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন(১),

(১) আল্লাহ তা'আলা বান্দাদেরকে তার তাসবীহ বা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যে পবিত্ৰতা ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহর যিকির, ইবাদাত, তাঁর মাহাত্মের জন্য বিনয় ও দীন-হীনাতা প্ৰকাশ পায়। আর তাঁর তাসবীহ যেন তাঁর সত্তার মাহাত্মা উপযোগী হয়। যেন তাকে তাঁর সুন্দর সুন্দর নামসমূহ দিয়েই সেগুলোর মহান অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখেই কেবল আহ্বান করা হয়। [সা’দী]

২. যিনি(১) সৃষ্টি করেন(২) অতঃপর সুঠাম করেন।(৩)

(১) এখানে মূলত: আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার কারণ ও হেতুসমূহ বর্ণনা করা হচ্ছে। এ আয়াত এবং এর পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে জগৎ সৃষ্টিতে আল্লাহর অপার রহস্য ও শক্তি সম্পর্কিত কতিপয় কর্মগত গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে।

(২) অর্থাৎ সৃষ্টি করেছেন। কোন কিছুকে নাস্তি থেকে আস্তিতে আনয়ন করেছেন। কোন সৃষ্টির এ কাজ করার সাধ্য নেই; একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার অপার কুদরতই কোন পূর্ব-নমুনা ব্যতিরেকে যখন ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা নাস্তি থেকে আস্তিতে আনয়ন করে।


(৩) অর্থ সামঞ্জস্যপূর্ণ, মজবুত ও সুন্দর করেছেন। [সা’দী] অর্থাৎ তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আর যে জিনিসটিই সৃষ্টি করেছেন তাকে সঠিক ও সুঠাম দেহসৌষ্ঠব দান করেছেন। তার মধ্যে ভারসাম্য ও শক্তির অনুপাত সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাকে এমন আকৃতি দান করেছেন যে, তার জন্য এর চেয়ে ভালো আকৃতির কল্পনাই করা যেতে পারে না। একথাটিকে অন্যত্র বলা হয়েছে, “তিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে চমৎকার তৈরি করেছেন।” [সুরা আস-সাজদাহ: ৭]

৩. আর যিনি নির্ধারণ করেন(১) অতঃপর পথনির্দেশ করেন(২),

(১) অর্থাৎ প্রতিটি বস্তুকে তাকদীর নির্ধারণ করেছেন। প্রতিটি জিনিস সে তাকদীর অনুসরণ করছে। [সা'দী]

(২) অর্থাৎ স্রষ্টা যে কাজের জন্যে যাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সে কাজের পথনির্দেশও দিয়েছেন। সত্যিকারভাবে এ পথনির্দেশে আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টিই অন্তর্ভুক্ত আছে। কেননা, এক বিশেষ ধরনের বুদ্ধি ও চেতনা আল্লাহ তা'আলা সবাইকে দিয়েছেন, যদিও তা মানুষের বুদ্ধি ও চেতনা থেকে নিম্নস্তরের। অন্য আয়াতে আছেঃ (قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ) প্রত্যেক বস্তুর জন্য তাকদীর নির্ধারণ করেছেন, তারপর পথনির্দেশ করেছেন।” [সূরা ত্বাহা: ৫০] এ হিসেবে আলোচ্য আয়াতের অর্থ, আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক বস্তুকে সৃষ্টি করে এর জন্য তাকদীর নির্ধারণ করেছেন। তারপর সে তাকদীর নির্ধারিত বিষয়ের দিকে মানুষকে পরিচালিত করছেন। মুজাহিদ বলেন, মানুষকে সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যের পথ দেখিয়েছেন। আর জীব-জন্তুকে তাদের চারণভূমির পথ দেখিয়েছেন। [ইবন কাসীর]


৪. আর যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেন(১),

(১) তিনি চারণভূমির ব্যবস্থা করেছেন। যাবতীয় উদ্ভিদ ও ক্ষেত-খামার। [ইবন কাসীর] غُثَاءً শব্দের অর্থ খড়-কুটা, আবর্জনা; যা বন্যার পানির উপর ভাসমান থাকে। [ফাতহুল কাদীর] أَحْوَىٰ শব্দের অর্থ কৃষ্ণাভ গাঢ় সবুজ রং। [ফাতহুল কাদীর] এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা উদ্ভিদ সম্পর্কিত স্বীয় কুদরত ও হেকমত বর্ণনা করেছেন। তিনি ভূমি থেকে সবুজ-শ্যামল ঘাস উৎপন্ন করেছেন, অতঃপর একে শুকিয়ে কাল রং-এ পরিণত করেছেন এবং সবুজতা বিলীন করে দিয়েছেন। এতে দুনিয়ার চাকচিক্য যে ক্ষণস্থায়ী সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন। [কুরতুবী]

৫. পরে তা ধূসর আবর্জনায় পরিণত করেন।

৬. শীঘ্রই আমরা আপনাকে পাঠ করাব, ফলে আপনি ভুলবেন না(১),

(১) পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের জন্য তাঁর যে সমস্ত দুনিয়াবী নি'আমত প্রদান করেছেন সেগুলোর কিছু বর্ণনার পর এখন কিছু দ্বীনী নেয়ামত বর্ণনা করছেন। তন্মধ্যে প্রথমেই হচ্ছে কুরআন। [সা’দী] এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সুসংবাদ জানানো হচ্ছে যে, আল্লাহ তাকে এমন জ্ঞান দান করবেন যে, তিনি কুরআনের কোন আয়াত বিস্মৃত হবেন না। আপনার কাছে কিতাবের যে ওহী আমরা পাঠিয়েছি আমরা সেটার হিফাযত করব, আপনার অন্তরে সেটা গেথে দেব, ফলে তা ভুলে যাবেন না। [ইবন কাসীর; সা'দী]

৭. আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া।(১) নিশ্চয় তিনি জানেন যা প্ৰকাশ্য ও যা গোপনীয়।

(১) এই বাক্যটির কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. কুরআনের কিছু আয়াত রহিত করার এক সুবিদিত পদ্ধতি হচ্ছে প্রথম আদেশের বিপরীতে পরিষ্কার দ্বিতীয় আদেশ নাযিল করা। এর আরেকটি পদ্ধতি হলো সংশ্লিষ্ট আয়াতটিই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সকল মুসলিমের স্মৃতি থেকে মুছে দেয়া। এ সম্পর্কে এক আয়াতে আছে, (مَا نَنْسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنْسِهَا) অর্থাৎ “আমরা কোন আয়াত রহিত করি অথবা আপনার স্মৃতি থেকে উধাও করে দেই।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১০৬] তাই “আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া” বলে রহিত আয়াতগুলোর কথা বলা হয়েছে। দুই, অথবা আয়াতের উদ্দেশ্য, কখনো সাময়িকভাবে আপনার ভুলে যাওয়া এবং কোন আয়াত বা শব্দ আপনার কোন সময় ভুলে যাওয়া এই ওয়াদার ব্যতিক্রম। যে ব্যাপারে ওয়াদা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, আপনি স্থায়ীভাবে কুরআনের কোন শব্দ ভুলে যাবেন না।

হাদীসে আছে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন একটি সূরা তেলাওয়াত করলেন এবং মাঝখান থেকে একটি আয়াত বাদ পড়ল। ওহী লেখক উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মনে করলেন যে, আয়াতটি বোধ হয় মনসুখ হয়ে গেছে। কিন্তু জিজ্ঞাসার জওয়াবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ মনসুখ হয়নি, আমিই ভুলক্রমে পাঠ করিনি। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪০৭] অন্য হাদীসে এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সাহাবীকে কোন আয়াত পড়তে শোনে বললেন, আল্লাহ তাকে রহমত করুন, আমাকে এ আয়াতটি ভুলিয়ে দেয়া হয়েছিল এখন মনে পড়েছে। [মুসলিম: ৭৮৮] অতএব, উল্লিখিত ব্যতিক্রমের সারমর্ম এই যে, সাময়িকভাবে কোন আয়াত ভুলে যাওয়া অতঃপর তা স্মরণে আসা বর্ণিত প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী নয়। [দেখুন: কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

৮. আর আমরা আপনার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ।(১)

(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা আপনার জন্য সহজ সরল শরীআত প্ৰদান করবেন। যাতে কোন বক্রতা থাকবে না। [ইবন কাসীর]

৯. অতঃপর উপদেশ যদি ফলপ্রসূ হয় তবে উপদেশ দিন(১);

(১) অর্থাৎ যেখানে স্মরণ করিয়ে দিলে কাজে লাগে সেখানে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এর দ্বারা জ্ঞান দেয়ার আদব ও নিয়ম নীতি বোঝা যায়। সুতরাং যারা জ্ঞান গ্ৰহণ করার উপযুক্ত নয়, তাদের কাছে সেটা না দেয়া। যেমন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তুমি যদি এমন কওমের কাছে কোন কথা বল যা তাদের বিবেকে ঢুকবে না, তাহলে সেটা তাদের কারও কারও জন্য বিপদের কারণ হবে। তারপর তিনি বললেন, মানুষ যা চিনে তা-ই শুধু তাদেরকে জানাও, তুমি কি চাও যে লোকেরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করুক? [ইবন কাসীর]

১০. যে ভয় করে সেই উপদেশ গ্ৰহণ করবে।(১)

(১) অর্থাৎ যে ব্যক্তির মনে আল্লাহর ভয় এবং তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে হবে এমন ধারণা কাজ করে সে অবশ্যই আপনার উপদেশ মনোযোগ সহকারে শুনবে। [ইবন কাসীর]

১১. আর তা উপেক্ষা করবে যে নিতান্ত হতভাগ্য,
১২. যে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হবে,
১৩. তারপর সেখানে সে মরবেও না বাঁচবেও না।(১)

(১) অর্থাৎ তার মৃত্যু হবে না। যার ফলে আযাব থেকে রেহাই পাবে না। আবার বাঁচার মতো বাঁচাবেও না। যার ফলে জীবনের কোন স্বাদ-আহলাদও পাবে না। [ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আর যারা জাহান্নামী; তারা সেখানে মরবেও না, বাঁচবেও না। তবে এমন কিছু লোক হবে যারা গোনাহ করেছিল (কিন্তু মুমিন ছিল) তারা সেখানে মরে যাবে। তারপর যখন তারা কয়লায় পরিণত হবে তখন তাদের জন্য সুপারিশের অনুমতি দেয়া হবে; ফলে তাদেরকে টুকরা টুকরা অবস্থায় নিয়ে এসে জান্নাতের নালাসমূহে প্রসারিত করে রাখা হবে। তারপর বলা হবে, হে জান্নাতীরা তোমরা এদেরকে সিক্ত কর। এতে তারা বন্যায় ভেসে আসা বীজের ন্যায় আবার উৎপন্ন হবে।” [মুসলিম: ১৮৫]

এ হাদীস থেকে বোঝা গেল যে, আলোচ্য আয়াতে শুধু কাফের মুশরিকদের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে যে, তারা বাঁচবেও না আবার মরবেও না। অর্থাৎ তারা আরামের বাঁচা বাঁচবে না আবার মৃত্যুও হবে না যে, তারা আযাব থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। পক্ষান্তরে ঈমানদারদের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা জাহান্নামে গেলে সেখানে তাদের গোনাহ পরিমাণ শাস্তি ভোগ করার পর মৃত্যু প্রাপ্ত হবে, ফলে তারা অতিরিক্ত শাস্তি ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। এরপর সুপারিশের মাধ্যমে সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে।

১৪. অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে যে পরিশুদ্ধ হয়।(১)

(১) এখানে পরিশুদ্ধ বা পবিত্রতার অর্থ কুফর ও শির্ক ত্যাগ করে ঈমান আনা, অসৎ আচার-আচরণ ত্যাগ করে সদাচার অবলম্বন করা এবং অসৎকাজ ত্যাগ করে সৎকাজ করা। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যা নাযিল হয়েছে তার অনুসরণ করা। আয়াতের আরেক অর্থ, ধনসম্পদের যাকাত প্ৰদান করা। তবে যাকাতকেও এ কারণে যাকাত বলা হয় যে, তা ধন-সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে। এখানে تَزَكَّىٰ শব্দের অর্থ ব্যাপক হতে পারে। ফলে ঈমানগত ও চরিত্রগত পরিশুদ্ধি এবং আর্থিক যাকাত প্ৰদান সবই এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। [দেখুন: ফাতহুল কাদীর]

১৫. এবং তার রবের নাম স্মরণ করে ও সালাত কায়েম করে।(১)

(১) কেউ কেউ অর্থ করেছেন, তারা তাদের রবের নাম স্মরণ করে এবং সালাত আদায় করে। বাহ্যতঃ এতে ফরয ও নফল সবরকম সালাত অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ ঈদের সালাত দ্বারা এর তাফসীর করে বলেছেন যে, যে যাকাতুল ফিতর এবং ঈদের সালাত আদায় করে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, “নাম স্মরণ করা’ বলতে আল্লাহকে মনে মনে স্মরণ করা এবং মুখে তা উচ্চারণ করাও উদ্দেশ্য হতে পারে। অর্থাৎ আল্লাহকে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে স্মরণ করেছে, তারপর সালাত আদায় করেছে। সে শুধু আল্লাহর স্মরণ করেই ক্ষান্ত থাকেনি বরং নিয়মিত সালাত আদায়ে ব্যাপৃত ছিল। মূলত: এ সবই আয়াতের অর্থ হতে কোন বাধা নেই। [ফাতহুল কাদীর]

১৬. কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দাও,
১৭. অথচ আখিরাতই উৎকৃষ্ট(১) ও স্থায়ী।(২)

(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া তো শুধু এমন যেন তোমাদের কেউ সমূদ্রে তার আঙ্গুল ডুবিয়েছে। তারপর সে যেন দেখে নেয় সে আঙ্গুল কি নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে?” [মুসলিম: ২৮৫৮]

(২) অর্থাৎ আখেরাত দু'দিক দিয়ে দুনিয়ার মোকাবিলায় অগ্ৰাধিকার পাওয়ার যোগ্য। প্রথমত তার সুখ, স্বাচ্ছন্দ, আরাম-আয়েশ দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামতের চাইতে আনেক বেশী ও অনেক উচ্চ পর্যায়ের। দ্বিতীয়ত দুনিয়া ধ্বংসশীল এবং আখেরাত চিরস্থায়ী। [ইবন কাসীর]

১৮. নিশ্চয় এটা আছে পূর্ববর্তী সহীফাসমূহে—
১৯. ইবরাহীম ও মূসার সহীফাসমূহে।(১)

(১) অর্থাৎ এই সূরার সব বিষয়বস্তু অথবা সর্বশেষ বিষয়বস্তু (আখেরাত উৎকৃষ্ট ও চিরস্থায়ী হওয়া) পূর্ববর্তী ইবরাহীম ও মূসা আলাইহিস সালাম-এর সহীফাসমূহে লিখিত আছে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া


সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url