সূরা আল-বুরুজ তেলাওয়াত, উচ্চারণ, অনুবাদ ও তাফসীর || কারী শেখ আব্দুল বাসিত ||

সূরা আল-বুরুজ তেলাওয়াত

সূরা আল-বুরুজ কোরআন মাজিদের ৮৫ তম সূরা।
এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ২২ টি। 
সূরা আল-বুরুজ এর বাংলা অর্থ- নক্ষত্রমণ্ডল। 
সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। 

সূরা আল-বুরুজ আরবী উচ্চারণ

Surah Al-Burooj in Arabic


১ وَ السَّمَآءِ ذَاتِ الۡبُرُوۡجِ
২ وَ الۡیَوۡمِ الۡمَوۡعُوۡدِ ۙ
৩ وَ شَاهِدٍ وَّ مَشۡهُوۡدٍ
৪ قُتِلَ اَصۡحٰبُ الۡاُخۡدُوۡدِ ۙ
৫ النَّارِ ذَاتِ الۡوَقُوۡدِ ۙ
৬ اِذۡ هُمۡ عَلَیۡهَا قُعُوۡدٌ
৭ وَّ هُمۡ عَلٰی مَا یَفۡعَلُوۡنَ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ شُهُوۡدٌ ؕ
৮ وَ مَا نَقَمُوۡا مِنۡهُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ یُّؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ
৯ الَّذِیۡ لَهٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَهِیۡدٌ
১০ اِنَّ الَّذِیۡنَ فَتَنُوا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ثُمَّ لَمۡ یَتُوۡبُوۡا فَلَهُمۡ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَ لَهُمۡ عَذَابُ الۡحَرِیۡقِ
১১ اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَهُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ۬ؕؑ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡکَبِیۡرُ 
১২ اِنَّ بَطۡشَ رَبِّکَ لَشَدِیۡدٌ 
১৩ اِنَّهٗ هُوَ یُبۡدِئُ وَ یُعِیۡدُ
১৪ وَ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الۡوَدُوۡدُ 
১৫ ذُو الۡعَرۡشِ الۡمَجِیۡدُ
১৬ فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیۡدُ
১৭ هَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ الۡجُنُوۡدِ 
১৮ فِرۡعَوۡنَ وَ ثَمُوۡدَ
১৯ بَلِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِیۡ تَکۡذِیۡبٍ
২০ وَّ اللّٰهُ مِنۡ وَّرَآئِهِمۡ مُّحِیۡطٌ
২১ بَلۡ هُوَ قُرۡاٰنٌ مَّجِیۡدٌ 
২২ فِیۡ لَوۡحٍ مَّحۡفُوۡظٍ

সূরা আল-বুরুজ বাংলা উচ্চারণ

Surah Al-Burooj in Bengali

১) ওয়াছ ছামাই যা-তিল বুরূজ।
২) ওয়াল ইয়াওমিল মাও‘ঊদ।
৩) ওয়া শা-হিদিওঁ ওয়া মাশহূদ।
৪) কুতিলা আসহা-বুল উখদূদ ।
৫) আন্না-রি যা-তিল ওয়াকূদ।
৬) ইযহুম ‘আলাইহা-কু‘ঊদ।
৭) ওয়া হুম ‘আলা-মা-ইয়াফ‘আলূনা বিলমু’মিনীনা শুহূদ।
৮) ওয়া মা-নাকামূমিনহুম ইল্লাআইঁ ইউ’মিনূবিল্লা-হিল ‘আঝীঝিল হামীদ।
৯) আল্লাযী লাহূমুলকুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়াল্লা-হু ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন শাহীদ।
১০) ইন্নাল্লাযীনা ফাতানুলমু’মিনীন ওয়াল মু’মিনা-তি ছু ম্মা লাম ইয়াতূবূফালাহুম ‘আযা-বু জাহান্নামা ওয়া লাহুম ‘আযা-বুল হারীক।
১১) ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি লাহুম জান্না-তুন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু যা-লিকাল ফাওঝুল কাবীর।
১২) ইন্না বাতশা রাব্বিকা লাশাদীদ।
১৩) ইন্নাহূহুওয়া ইউবদিউ ওয়া ইউ‘ঈদ।
১৪) ওয়া হুওয়াল গাফূরুল ওয়াদূদু।
১৫) যুল ‘আরশিল মাজীদ।
১৬) ফা‘‘আ-লুলিলমা-ইউরীদ।
১৭) হাল আতা-কা হাদীছুল জুনূদ।
১৮) ফির‘আওনা ওয়া ছামূদ।
১৯) বালিল্লাযীনা কাফারূফী তাকযীব ।
২০) ওয়াল্লা-হু মিওঁ ওয়ারাইহিম মুহীত।
২১) বাল হুওয়া কুরআ-নুমমাজীদুন।
২২) ফী লাওহিম মাহফূজ।

সূরা আল-বুরুজ বাংলা অনুবাদ

Surah Al-Burooj Bangla Translate

১. কক্ষপথ বিশিষ্ট আসমানের কসম,
২. আর ওয়াদাকৃত দিনের কসম,
৩. আর কসম সাক্ষ্যদাতার এবং যার ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়া হবে তার,
৪. ধ্বংস হয়েছে গর্তের অধিপতিরা, 
৫. (যাতে ছিল) ইন্ধনপূর্ণ আগুন।
৬. যখন তারা তার কিনারায় উপবিষ্ট ছিল।
৭. আর তারা মুমিনদের সাথে যা করছিল তার প্রত্যক্ষদর্শী।
৮. আর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। 
৯. আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব যার। আর আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী।
১০. নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে আযাব দেয়, তারপর তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর তাদের জন্য রয়েছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার আযাব।
১১. নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সফলতা।
১২. নিশ্চয় তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন।
১৩. নিশ্চয় তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন।
১৪. আর তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, প্রেমময়। 
১৫. আরশের অধিপতি, মহান।
১৬. তিনি তা-ই করেন যা চান । 
১৭. তোমার কাছে কি সৈন্যবাহিনীর খবর পৌঁছেছে? 
১৮. ফির‘আউন ও সামূদের।
১৯. বরং কাফিররা মিথ্যারোপে লিপ্ত।
২০. আর আল্লাহ তাদের অলক্ষ্যে তাদের পরিবেষ্টনকারী।
২১. বরং তা সম্মানিত কুরআন।
২২. সুরক্ষিত ফলকে (লিপিবদ্ধ)।

সূরা আল-বুরুজ তাফসীর

Surah Al-Burooj Tafseer


১. শপথ বুরূজবিশিষ্ট(১) আসমানের,
(১) بُرُوجٌ শব্দটি بُرْجٌ এর বহুবচন। অর্থ বড় প্রাসাদ ও দুর্গ। অন্য আয়াতে আছে, (وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ) এখানে এই অর্থই বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী] অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে আলোচ্য আয়াতে بُرُوجٌ এর অর্থ বড় বড় গ্রহ-নক্ষত্র। কয়েকজন তাফসীরবিদ এ স্থলে অর্থ নিয়েছেন প্রাসাদ। অর্থাৎ সেসব গৃহ, যা আকাশে প্রহরী ও তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাদের জন্যে নির্ধারিত। আবার কারও কারও মতে, এ অর্থ সুন্দর সৃষ্টি। অর্থাৎ সুন্দর সৃষ্টি আসমানের শপথ। তবে ইমাম ইবন জারীর আত-তাবারীর মত হচ্ছে, এখানে সূর্য ও চন্দ্রের অবস্থানস্থলসমূহ। আর তার সংখ্যা বারটি। সূর্য তার প্রতিটিতে একমাস চলে। আর চন্দ্র এর প্রতিটিতে দুইদিন ও একদিনের তিনভাগের এক অংশ সময় চলে। এতে করে চাঁদের আটাশটি অবস্থান হয়। তারপর সে দুদিন গোপন থাকে। এই বারটির প্রত্যেকটি একেকটি بُرْجٌ। চন্দ্র ও সূর্য আকাশের গতিতে গতিশীল হয়ে এসব بُرْجٌ এর মধ্যে অবতরণ করে। [ইবন কাসীর] তাই আয়াতের অর্থ হবে, সেই আসমানের শপথ, যাতে রয়েছে চাঁদ ও সূর্যের অবতরণস্থানসমূহ, অনুরূপ তাতে রয়েছে সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রের অবতরণস্থলসমূহ, যেগুলো নিয়ম মেনে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চলছে। এ সুন্দর চলন ও সুন্দর নিয়মই আল্লাহর অপার শক্তি, রহমত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রমাণ বহন করছে। [সা’দী]

২. আর প্রতিশ্রুত দিনের,
৩. এবং দ্রষ্টা ও দৃষ্টের(১)—
(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (وَالْيَوْمِ الْمَوْعُودِ) বা প্রতিশ্রুত দিনের অর্থ কেয়ামতের দিন। আর مَشْهُود এর অর্থ আরাফার দিন এবং شاهد এর অর্থ শুক্রবার দিন। জুম'আর দিনের চেয়ে উত্তম কোন দিনে কোন সূর্য উদিত হয়নি এবং ডুবেওনি। সেদিন এমন একটি সময় আছে, কোন মুমিন বান্দা যখনই কোন কল্যাণের দো'আ করে তখনই তার দো'আ কবুল করা হয়। অথবা যদি কোন অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয় তখনই তাকে আল্লাহ তা থেকে আশ্রয় দেয়।” [তিরমিযী: ৩৩৩৯]
৪. অভিশপ্ত হয়েছিল(১) কুণ্ডের অধিপতিরা—(২)
(১) এখানে আল্লাহ্ তা'আলা চারটি বস্তুর শপথ করার পর মূল কথা বর্ণনা করেছেন। (এক) বুরুজবিশিষ্ট আকাশের; (দুই) কেয়ামত দিবসের; (তিন) আরাফার দিনের এবং (চার) শুক্রবারের। এসব শপথের সম্পর্ক এই যে, এগুলো আল্লাহ্ তা'আলার পরিপূর্ণ শক্তি, কেয়ামতের হিসাব-নিকাশ এবং শাস্তি ও প্রতিদানের দলীল। শুক্রবার ও আরাফার দিন মুসলিমদের জন্যে আখেরাতের পুঁজি সংগ্রহের পবিত্ৰ দিন।

(২) যারা বড় বড় গর্তের মধ্যে আগুন জ্বলিয়ে ঈমানদারদেরকে তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল এবং তাদের জ্বলে পুড়ে মরার বীভৎস দৃশ্য নিজেদের চোখে দেখেছিল তাদেরকে এখানে গর্তওয়ালা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের ওপর আল্লাহর লা'নত পড়েছিল এবং তারা আল্লাহর আযাবের অধিকারী হয়েছিল। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এর আরেক অর্থ ধ্বংস হয়েছিল। [সা'দী]

গর্তে আগুন জ্বলিয়ে ঈমানদারদেরকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করার ঘটনা সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সুহাইব রুমী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। এক বাদশার কাছে একজন যাদুকর ছিল। বৃদ্ধ বয়সে সে বাদশাহকে বললো, একটি ছেলেকে আমার কাছে নিযুক্ত করো, সে আমার কাছ থেকে এ জাদু শিখে নেবে। বাদশাহ জাদু শেখার জন্য জাদুকরের কাছে একটি ছেলেকে নিযুক্ত করলো। কিন্তু সেই ছেলেটি জাদুকরের কাছে আসা যাওয়ার পথে একজন রাহেবের (যিনি সম্ভবত ঈসা আলাইহিস সালামের দ্বীনের অনুসারী একজন সাধক ছিলেন) সাক্ষাত গুণে সে অলৌকিক শক্তির অধিকারীও হয়ে গেলো। সে অন্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে এবং কুষ্ঠরোগ নিরাময় করতে লাগলো। ছেলেটি তাওহীদের প্রতি ঈমান এনেছে, একথা জানতে পেরে বাদশাহ প্ৰথমে রাহেবকে হত্যা করলো তারপর ছেলেটিকে হত্যা করতে চাইলো।

কিন্তু কোন অস্ত্ৰ দিয়েই এবং কোনভাবেই তাকে হত্যা করতে পারলো না। শেষে ছেলেটি বললো, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে চাও তাহলে প্রকাশ্য জনসমাবেশে “বিসমি রাব্বিল গুলাম” (অর্থাৎ এই ছেলেটির রবের নামে) বাক্য উচ্চারণ করে আমাকে তীর মারো, তাতেই আমি মারা যাবো। বাদশাহ তাই করলো। ফলে ছেলেটি মারা গেলো। এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে লোকেরা চিৎকার করে উঠলো, আমরা এই ছেলেটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। বাদশাহর সভাসদরা তাকে বললো, এখন তো তাই হয়ে গেলো যা থেকে আপনি বাঁচতে চাচ্ছিলেন। লোকেরা আপনার ধর্ম ত্যাগ করে এ ছেলেটির ধর্মগ্রহণ করেছে। এ অবস্থা দেখে বাদশাহ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলো। সে রাস্তার পাশে গর্ত খনন করালো। তাতে আগুন জ্বালালো। যারা ঈমান ত্যাগ করতে রাজী হলো না তাদের সবাইকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করলো। [মুসলিম: ৩০০৫ তিরমিযী: ৩৩৪০]
৫. যে কুণ্ডে ছিল ইন্ধনপূর্ণ আগুন,
৬. যখন তারা এর পাশে উপবিষ্ট ছিল;
৭. এবং তারা মুমিনদের সাথে যা করছিল তা প্ৰত্যক্ষ করছিল।
৮. আর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এ কারণে যে, তারা ঈমান এনেছিল পরাক্রমশালী ও প্রশংসার যোগ্য আল্লাহর উপর
৯. আসমানসমূহ ও যমীনের সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর; আর আল্লাহ্ সবকিছুর প্ৰত্যক্ষদর্শী।
১০. নিশ্চয় যারা মুমিন নরনারীকে বিপদাপন্ন করেছে(১) তারপর তাওবা করেনি(২) তাদের জন্য আছে জাহান্নামের যন্ত্রণা।(৩)
(১) فَتَنُوا শব্দের এক অর্থ হচ্ছে, أحرقوا বা জ্বালিয়েছিল। অপর অর্থ পরীক্ষা করা। বিপদে ফেলা। [ফাতহুল কাদীর]

(২) কাফেরদের জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণার খবর দেয়ার সাথে সাথে কুরআন বলছে যে, এই আযাব তাদের ওপর পতিত হবে, যারা এই দুষ্কর্মের কারণে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করেনি। এতে তাদেরকে তাওবার দাওয়াত দেয়া হয়েছে। হাসান বসরী বলেনঃ বাস্তবিকই আল্লাহর অনুগ্রহ ও কৃপার কোন তুলনা নেই। তারা তো আল্লাহর নেক বান্দাদেরকে জীবিত দগ্ধ করে তামাশা দেখছে, আল্লাহ তা’আলা এরপরও তাদেরকে তওবা ও মাগফিরাতের দাওয়াত দিচ্ছেন। [ইবনুল কাইয়্যেম, বাদায়ে’উস তাফসীর; ইবন কাসীর]

(৩) এখানে অত্যাচারী কাফেরদের শাস্তি বর্ণিত হয়েছে, যারা মুমিনদেরকে কেবল ঈমানের কারণে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। শাস্তি প্রসঙ্গে দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে— (এক) তাদের জন্যে আখেরাতে জাহান্নামের আযাব রয়েছে, (দুই) তাদের জন্যে দহন যন্ত্রণা রয়েছে। এখানে দ্বিতীয়টি প্রথমটিরই বর্ণনা ও তাকীদ হতে পারে। অর্থাৎ জাহান্নামে গিয়ে তারা চিরকাল দহন যন্ত্রণা ভোগ করবে। এটাও সম্ভবপর যে, দ্বিতীয় বাক্যে দুনিয়ার শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। প্রখ্যাত আলেম রবী ইবনে আনাস বলেন, মুমিনদেরকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করার পর অগ্নি স্পর্শ করার পূর্বেই আল্লাহ তা'আলা তাদের রূহ কবজ করে নেন। এভাবে তিনি তাদেরকে দহন যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করেন। ফলে তাদের মৃতদেহই কেবল অগ্নিতে দগ্ধ হয়। অতঃপর এই অগ্নি আরও বেশি প্রজুলিত হয়ে তার লেলিহান শিখা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে যারা মুসলিমদের অগ্নি দগ্ধ হওয়ার তামাশা দেখছিল, তারাও এই আগুনে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যায়। [ফাতহুল কাদীর]
১১. নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এটাই মহাসাফল্য।
১২. নিশ্চয় আপনার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন।
১৩. তিনিই অস্তিত্ব দান করেন ও পুনরাবর্তন ঘটান,
১৪. এবং তিনি ক্ষমাশীল, অতিম্নেহময়(১),
(১) الْوَدُود শব্দটির কয়েকটি অর্থ বর্ণিত আছে। কারও কারও মতে, ‘ওয়াদূদ’ বলা হয় তাকে যার কোন সন্তান নেই। অর্থাৎ যার এমন কেউ নেই। যার প্রতি মন টানতে থাকবে। [ফাতহুল কাদীর] তবে অধিকাংশ মুফাস্‌সিরের মতে এর অর্থ, প্রিয় বা প্রিয়পাত্র। [ইবন কাসীর] যার ভালবাসায় কোন খাদ নেই। যারা তাঁকে ভালবাসেন তিনিও তাদেরকে ভালবাসেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তিনি তাদেরকে ভালবাসেন আর তারাও তাঁকে ভালবাসে”। [সূরা আল-মায়েদাহ: ৫৪] তিনি এমন সত্তা যাঁকে তার ভালবাসার পাত্ররা এমন ভালবাসে যে ভালবাসার কোন উদাহরণ দেয়া সম্ভব হয় না। যার কোন তুলনা নেই। তাঁর খালেস বান্দাদের অন্তরে তাঁর যে ভালবাসা রয়েছে সেটার তুলনা কোন ভালবাসা দিয়ে দেয়া যাবে না। আর এজন্যই ভালবাসা হচ্ছে আল্লাহর দাসত্বের মূল কথা। যে ভালবাসার কারণে যাবতীয় ভালবাসার পাত্রের উপর সেটা স্থান করে নেয়। অন্য ভালবাসা যদি আল্লাহর ভালবাসার অনুগামী না হয় তবে সেটা বান্দার জন্য বিপদ ও শাস্তির কারণ হয়। [সা'দী]

১৫. আরশের অধিকারী ও সম্মানিত।
১৬. তিনি যা ইচ্ছে তা-ই করেন।(১)
(১) “তিনি ক্ষমাশীল” বলে এই মর্মে আশান্বিত করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি গোনাহ করা থেকে বিরত হয়ে যদি তাওবা করে তাহলে সে আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারে। তিনি গোনাহগারদের প্রতি এতই ক্ষমাশীল যে, তাদেরকে লজ্জা দেন না। আর তাঁর আনুগত্যকারী বন্ধুদেরকে অতিশয় ভালবাসেন। [ফাতহুল কাদীর] “অতিস্নেহময়” বলে الْوَدُود শব্দের পূর্ণ অর্থ প্রকাশ পায় না। কারণ, স্নেহ ও ভালবাসার মধ্যে খাঁটি হলেই তবে তাকে “ওয়াদূদ” বলা যাবে। তিনি নিজের সৃষ্টিকে অত্যধিক ভালোবাসেন। তাকে তিনি কেবল তখনই শাস্তি দেন যখন সে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করা থেকে বিরত হয় না। এখানে غَفُور বা ক্ষমাকারী বলার পরে وَدُود বা অতি স্নেহময় বলে এটাই বুঝাচ্ছেন যে, যারা অন্যায় করে তারপর তাওবাহ করবে, তাদেরকে তিনি শুধু ক্ষমাই করবেন না। বরং নিখাদভাবে ভালও বাসবেন। [সা’দী] “আরশের মালিক” বলে মানুষের মধ্যে এ অনুভূতি জাগানো হয়েছে যে তিনি যেহেতু আরশের মালিক। আর আরশ সবকিছুর উপরে। তাই তিনিও সবকিছুর উপরে। [ইবন কাসীর]

সবকিছু মহান আল্লাহর আরশের সামনে অতি নগন্য। বরং সমস্ত আসমান, যমীন ও কুরসী সবগুলোকেই আরশ শামিল করে। [সা’দী] কাজেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কেউ তার হাত থেকে নিস্তার পেতে পারে না। “শ্রেষ্ঠ সম্মানিত” বলে এ ধরনের বিপুল মর্যাদাসম্পন্ন সত্তার প্রতি অশোভন আচরণ করার হীন মনোবৃত্তির বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। তাছাড়া এটি আরশের গুণও হতে পারে। [ইবন কাসীর] তার শেষ গুণটি বর্ণনা করে বলা হয়েছে, “তিনি যা চান তাই করেন” অর্থাৎ আল্লাহ যে কাজটি করতে চান তাতে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এ সমগ্র সৃষ্টিকুলের কারো নেই। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মৃত্যু শয্যায় কেউ জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনাকে কি কোন ডাক্তার দেখেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারা বললেন, ডাক্তার কী বলেছেন? তিনি বললেন, ডাক্তার আমাকে বলেছেন, আমি যা ইচ্ছা তাই করি। [ইবন কাসীর]
১৭. আপনার কাছে কি পৌছেছে সৈন্যবাহিনীর বৃত্তান্ত—
১৮. ফিরআউন ও সামুদের?
১৯. তবু কাফিররা মিথ্যারোপ করায় রত;
২০. আর আল্লাহ্ সবদিক থেকে তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।
২১. বস্তুত এটা সম্মানিত কুরআন,
২২. সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।

তাফসীরে জাকারিয়া


**********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url