বিষয় ভিত্তিক আয়াত || আল্লাহর নেয়ামত সম্পর্কিত আয়াতসমূহ || (২য় পর্ব)




আল্লাহর নেয়ামত না পেলে মানুষ হতাশ হয়, নেয়ামত পেয়ে আল্লাহকে ভুলে যায়

 সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল) | Al-Isra | سورة الإسراء 

 সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল), আয়াত ৮৩ 

৮৩ وَ اِذَاۤ اَنۡعَمۡنَا عَلَی الۡاِنۡسَانِ اَعۡرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِهٖ ۚ وَ اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ کَانَ یَــُٔوۡسًا 

 সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল), আয়াত ৮৩ এর অর্থ 

আর আমি যখন মানুষের উপর নেয়ামত দান করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায় এবং যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে তখন সে খুব হতাশ হয়ে পড়ে।

And when We bestow favor upon the disbeliever, he turns away and distances himself; and when evil touches him, he is ever despairing. 

 সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল), আয়াত ৮৩ এর তাফসীর 

(৮৩) যখন আমি মানুষকে সম্পদ দান করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অহংকারে দূরে সরে যায়। আর তাকে অমঙ্গল স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে। [1]

[1] এতে মানুষের সেই বাস্তব অবস্থা ও পরিস্থিতির কথা তুলে ধরা হয়েছে, যাতে তারা সাধারণতঃ সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার সময় শিকার হয়ে থাকে। সচ্ছলতার সময় তারা আল্লাহকে ভুলে যায় এবং অসচ্ছল অবস্থায় তারা নিরাশ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে ঈমানদারদের ব্যাপার এই উভয় অবস্থাতেই তাদের থেকে একেবারে ভিন্ন হয়। সূরা হূদের ৯-১১ নং আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল), আয়াত ৮৪ 

৮৪ قُلۡ کُلٌّ یَّعۡمَلُ عَلٰی شَاکِلَتِهٖ ؕ فَرَبُّکُمۡ اَعۡلَمُ بِمَنۡ هُوَ اَهۡدٰی سَبِیۡلًا

 সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল), আয়াত ৮৪ এর অর্থ 

বল, ‘প্রত্যেকেই আমল করে থাকে নিজ পদ্ধতি অনুযায়ী এবং তোমার রব অধিক অবগত আছেন কে সর্বাধিক নির্ভুল পথে’।

Say, "Each works according to his manner, but your Lord is most knowing of who is best guided in way." 

 সূরাঃ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল), আয়াত ৮৪ এর তাফসীর 

(৮৪) বল, ‘প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে। অতঃপর যে পরিপূর্ণরূপে সৎপথপ্রাপ্ত তার সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক সম্যক্ অবগত আছেন।’ [1]

[1] এতে রয়েছে মুশরিকদের জন্য ধমক ও তিরস্কার। আর সূরা হূদের ১২১-১২২ নং আয়াতের যে অর্থ, এরও সেই একই অর্থ।  وَقُلْ لِلَّذِينَ لا يُؤْمِنُونَ اعْمَلُوا عَلَى مَكَانَتِكُمْ إِنَّا عَامِلُونَ  আর شَاكِلَةٌ এর অর্থ, নিয়ত, দ্বীন, তরীকা, অভ্যাস, স্বভাব, প্রকৃতি ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেন যে, এতে রয়েছে কাফেরদের নিন্দার এবং মু’মিনদের প্রশংসার দিক। কারণ, এর অর্থ হল, প্রত্যেক মানুষ তার স্বভাবগত অভ্যাস অনুযায়ী এমন কাজ করে, যার উপর গড়ে উঠে তার আখলাক-চরিত্র।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 সূরাঃ আয-যুমার | Az-Zumar | سورة الزمر 

 সূরাঃ আয-যুমার, আয়াত ৪৯ 

৪৯ فَاِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ ضُرٌّ دَعَانَا ۫ ثُمَّ اِذَا خَوَّلۡنٰهُ نِعۡمَۃً مِّنَّا ۙ قَالَ اِنَّمَاۤ اُوۡتِیۡتُهٗ عَلٰی عِلۡمٍ ؕ بَلۡ هِیَ فِتۡنَۃٌ وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

 সূরাঃ আয-যুমার, আয়াত ৪৯ এর অর্থ 

অতঃপর কোন বিপদাপদ মানুষকে স্পর্শ করলে সে আমাকে ডাকে। তারপর যখন আমি আমার পক্ষ থেকে নি‘আমত দিয়ে তাকে অনুগ্রহ করি তখন সে বলে, ‘জ্ঞানের কারণেই কেবল আমাকে তা দেয়া হয়েছে’। বরং এটা এক পরীক্ষা। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।

And when adversity touches man, he calls upon Us; then when We bestow on him a favor from Us, he says, "I have only been given it because of [my] knowledge." Rather, it is a trial, but most of them do not know. 

 সূরাঃ আয-যুমার, আয়াত ৪৯ এর তাফসীর 

(৪৯) মানুষকে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করলে সে আমাকে আহবান করে;[1] অতঃপর যখন আমি তাকে অনুগ্রহ প্রদান করি, তখন সে বলে, ‘আমি তো এ আমার জ্ঞানের মাধ্যমে লাভ করেছি।’[2] বস্তুতঃ এ এক পরীক্ষা,[3] কিন্তু ওদের অধিকাংশই জানে না। [4]

[1] এখানে মানুষের উল্লেখ ‘জাতি’ হিসাবে করা হয়েছে। অর্থাৎ, অধিকাংশ মানুষেরই এই অবস্থা যে, যখন তারা রোগ, অভাব-অনটন অথবা অন্য কোন সমস্যার শিকার হয়, তখন তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তার সামনে কাকুতি-মিনতি করে।

[2] অর্থাৎ, নিয়ামত লাভ করার সাথে সাথেই অবাধ্যতা ও ধৃষ্টতার পথ অবলম্বন করে নেয় এবং বলে যে, এতে আল্লাহর আবার অনুগ্রহ কি? এ তো আমার পারদর্শিতার ফল। অথবা যে জ্ঞান ও দক্ষতা আমার রয়েছে, তারই মাধ্যমে এসব নিয়ামত অর্জিত হয়েছে। কিংবা আমি জানতাম যে, দুনিয়াতে এই সমস্ত জিনিস আমি পাব। কেননা, আল্লাহর নিকট আমার সম্মান অনেক।

[3] অর্থাৎ, ব্যাপার তা নয়, যা তুমি মনে করছ অথবা বর্ণনা করছ। বরং এই নিয়ামতগুলো তোমার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। এই দেখার জন্য যে, তুমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছ, না অকৃতজ্ঞ হচ্ছ।

[4] এই কথা যে, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে অবকাশ ও পরীক্ষা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান



***********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url