বিষয় ভিত্তিক আয়াত || ঈমানদার ও নেক আমলকারী সম্পর্কিত আয়াত || ঈমানদার ও নেক আমলকারীর প্রতিদান (২য় পর্ব )



 সূরাঃ আন-নূর | An-Nur | سورة النور 

 সূরাঃ আন-নূর,আয়াত ৫৫ 

৫৫ وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسۡتَخۡلِفَنَّهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ کَمَا اسۡتَخۡلَفَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ ۪ وَ لَیُمَکِّنَنَّ لَهُمۡ دِیۡنَهُمُ الَّذِی ارۡتَضٰی لَهُمۡ وَ لَیُبَدِّلَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ خَوۡفِهِمۡ اَمۡنًا ؕ یَعۡبُدُوۡنَنِیۡ لَا یُشۡرِکُوۡنَ بِیۡ شَیۡئًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ

 সূরাঃ আন-নূর,আয়াত ৫৫ এর অর্থ 

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে এ মর্মে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি নিশ্চিতভাবে তাদেরকে যমীনের প্রতিনিধিত্ব প্রদান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতি শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা আমারই ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক। 

Allah has promised those who have believed among you and done righteous deeds that He will surely grant them succession [to authority] upon the earth just as He granted it to those before them and that He will surely establish for them [therein] their religion which He has preferred for them and that He will surely substitute for them, after their fear, security, [for] they worship Me, not associating anything with Me. But whoever disbelieves after that - then those are the defiantly disobedient. 

 সূরাঃ আন-নূর,আয়াত ৫৫ এর তাফসীর 

৫৫. তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে যমীনে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়ভীতির পরে তাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না।(১), আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক।

আল্লাহ পাকের ৩টি ওয়াদা

(১) উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাথীরা যখন মদীনায় তাশরীফ আনলেন এবং আনসারগণ তাদেরকে আশ্রয় দিলেন, তখন সমস্ত আরব এক বাক্যে তাদের শক্রতে পরিণত হলো। সাহাবাগণ তখন রাতদিন অস্ত্ৰ নিয়ে থাকতেন। তখন তারা বললোঃ আমরা কি কখনো এমনভাবে বাঁচতে পারবো যে, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় না করে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুমাতে পারবো? তখন এ আয়াত নাযিল হয়।” [ত্ববারানী, মুজামুল আওসাত ৭/১১৯, হাদীস ৭০২৯, হাকীম- মুস্তাদরাকঃ ২/৪০১, দ্বিয়া আল-মাকদেসীঃ মুখতারাহঃ ১১৪৫]

এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি বিষয়ের ওয়াদা দিয়েছেন। (১) আপনার উম্মতকে যমীনের বুকে খলীফা ও শাসনকর্তা করা হবে, (২) আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ইসলামকে প্রবল করা হবে এবং (৩) মুসলিমদেরকে এমন শক্তি ও শৌর্যবীর্য দান করা হবে যে, তাদের অন্তরে শক্রর কোন ভয়ভীতি থাকবে না। আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর এই ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূণ্যময় আমলে মক্কা, খাইবার, বাহরাইন, সমগ্র আরব উপদ্বীপ ও সমগ্ৰ ইয়ামান তারই হাতে বিজিত হয় এবং তিনি হিজারের অগ্নিপূজারী ও শাম দেশের কতিপয় অঞ্চল থেকে জিযিয়া কর আদায় করেন।

রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মিসর ও আলেকজান্দ্ৰিয়ার সম্রাট মুকাউকিস, আম্মান ও আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসী প্রমুখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপঢৌকন প্রেরণ করেন ও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। তার ওফাতের পর আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খলীফা হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তিনি তা খতম করেন এবং পারস্য, সিরিয়া ও মিসর অভিমুখে সৈন্যাভিযান প্রেরণ করেন। বসরা ও দামেস্ক তারই আমলে বিজিত হয় এবং অন্যান্য দেশেরও কতক অংশ করতলগত হয়। আবু বকর সিদ্দীকের ওফাতের খলীফা নিযুক্ত করার ইলহাম করেন।

উমার ইবনুল খাত্তাব খলীফা নিযুক্ত হয়ে শাসনব্যবস্থা এমনভাবে সুবিন্যস্ত করলেন যে, নবীগণের পর পৃথিবী এমন সুন্দর ও সুশৃংখল শাসন ব্যবস্থা আর প্রত্যক্ষ করেনি। তার আমলে সিরিয়া পুরোপুরি বিজিত হয়। এমনিভাবে মিসর ও পারস্যের অধিকাংশ এলাকা তার করতলগত হয়। তার হাতে কায়সার ও কিসরা সমূলে নিশ্চিহ্ন হয়। এরপর উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকালে ইসলামী বিজয়ের পরিধি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পাশ্চাত্য দেশসমূহ, আন্দালুস ও সাইপ্রাস পর্যন্ত, দূরপ্রাচ্য চীন ভূখণ্ড পর্যন্ত এবং ইরাক, খোরাসান ও আহওয়ায ইত্যাদি সব তার আমলেই মুসলিমদের অধিকারভুক্ত হয়। [দেখুন: কুরতুবী]

সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আমাকে সমগ্ৰ ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত একত্রিত করে দেখানো হয়েছে।” [সহীহ মুসলিমঃ ২৮৮৯] আল্লাহ তা'আলা এই প্রতিশ্রুতি উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আমলেই পূর্ণ করে দেন। অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ “খেলাফত আমার পরে ত্রিশ বছর থাকবে।” [আবু দাউদ ৪৬৪৬, তিরমিযী ২২২৬, আহমাদ ৫/২২১]

তাফসীরে জাকারিয়া

সূরাঃ আল-কাসাস | Al-Qasas | سورة القصص

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৬৭ 

৬৭ فَاَمَّا مَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنَ مِنَ الۡمُفۡلِحِیۡنَ 

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৬৭ এর অর্থ 

তবে যে তাওবা করেছিল, ঈমান এনেছিল এবং সৎকর্ম করেছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। 

But as for one who had repented, believed, and done righteousness, it is promised by Allah that he will be among the successful.

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৬৭ এর তাফসীর 

৬৭. তবে যে ব্যক্তি তাওবা করেছিল এবং ঈমান এনেছিল ও সৎকাজ করেছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৮৩ 

৮৩ تِلۡکَ الدَّارُ الۡاٰخِرَۃُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِیۡنَ لَا یُرِیۡدُوۡنَ عُلُوًّا فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا فَسَادًا ؕ وَ الۡعَاقِبَۃُ لِلۡمُتَّقِیۡنَ 

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৮৩ এর অর্থ 

এই হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারিত করি, যারা যমীনে ঔদ্ধত্য দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।

That home of the Hereafter We assign to those who do not desire exaltedness upon the earth or corruption. And the [best] outcome is for the righteous.

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৮৩ এর তাফসীর 

৮৩. এটা আখেরাতের সে আবাস যা আমরা নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা যমীনে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না।(১) আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।(২)

মুত্তাকীদের জন্য আখেরাতের মুক্তি ও সাফল্য

(১) এ আয়াতে আখেরাতের মুক্তি ও সাফল্য শুধু তাদের জন্য নির্ধারিত বলা হয়েছে, যারা যমীনে ঔদ্ধত্য ও অনার্থের ইচ্ছা করে না। علو শব্দের অর্থ অহংকার তথা নিজেকে অন্যের চাইতে বড় মনে করা ও অন্যকে ঘৃণিত ও হেয় মনে করা। فساد বলে, অপরের উপর যুলুম বোঝানো হয়েছে। কোন কোন তাফসীরকারক বলেন, গোনাহ মাত্ৰই যমীনে ফাসাদের শামিল। কারণ, গোনাহের কুফলস্বরূপ বিশ্বময় বরকত হ্রাস পায়। এই আয়াত থেকে জানা গেল যে, যারা অহংকার, যুলুম অথবা গোনাহের ইচ্ছা করে, পরকালে তাদের অংশ নেই।

আয়াতে ঔদ্ধত্য ও ফাসাদের ইচ্ছার কারণে আখেরাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয় থেকে জানা গেল যে, কোন গোনাহের বদ্ধপরিকতার পর্যায়ে দৃঢ় সংকল্পও গোনাহ। তবে পরে যদি আল্লাহর ভয়ে সংকল্প পরিত্যাগ করে, তবে গোনাহের পরিবর্তে তার আমলনামায় সওয়াব লিখা হয়। পক্ষান্তরে যদি কোন ইচ্ছা-বহির্ভূত কারণে সে গোনাহ করতে সক্ষম না হয়; কিন্তু চেষ্টা ষোলআনাই করে, তবে গোনাহ না করলেও তার আমলনামায় গোনাহ লিখা হবে।

(২) এর সারমর্ম এই যে, আখেরাতের মুক্তি ও সাফল্যের জন্য দুটি বিষয় জরুরী। এক. ঔদ্ধত্য ও অনর্থ সৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকা এবং দুই. তাকওয়া অবলম্বন করা। আখেরাতের মুক্তির জন্য শুধু ঔদ্ধত্য ও অনর্থ থেকে মুক্ত থাকলেই চলবে না। সাথে সাথে তাকওয়ার অধিকারীও হতে হবে। ফিরআউন দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য, অনর্থ ও অহংকার করেছিল যা এ সূরার প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছিল, অনুরূপভাবে কারূনও চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজ করেছিল ফলে আখেরাতে সে কোন কল্যাণ লাভ করবে না। পক্ষান্তরে মূসা ও অপরাপর নবী-রাসূল ও তাদের অনুসারীগণ বিনীত ও নিরহংকার তাকওয়াভিত্তিক জীবন-যাপন করেছেন সুতরাং তাদের জন্যই আখেরাতের যাবতীয় আবাসভূমি অপেক্ষা করছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৮৪ 

৮৪ مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَهٗ خَیۡرٌ مِّنۡهَا ۚ وَ مَنۡ جَآءَ بِالسَّیِّئَۃِ فَلَا یُجۡزَی الَّذِیۡنَ عَمِلُوا السَّیِّاٰتِ اِلَّا مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ 

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৮৪ এর অর্থ 

কেউ পূণ্য নিয়ে আসলে তার জন্য থাকবে তা থেকে উত্তম প্রতিদান। আর কেউ পাপ নিয়ে আসলে তবে যারা মন্দকর্ম করেছে তাদের শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে যা তারা করেছে।

Whoever comes [on the Day of Judgement] with a good deed will have better than it; and whoever comes with an evil deed - then those who did evil deeds will not be recompensed except [as much as] what they used to do. 

 সূরাঃ আল-কাসাস, আয়াত ৮৪ এর তাফসীর 

(৮৪) যে কেউ সৎকাজ করে, সে তার কর্ম অপেক্ষা অধিক ফল পাবে [1] আর যে মন্দ কাজ করে, সে তো কেবল তার কর্মের অনুপাতে শাস্তি পাবে। [2]

[1] প্রত্যেক নেকীর বদলা কম পক্ষে দশগুণ পাওয়া যাবে। আর আল্লাহ যার জন্য চাইবেন, তাকে এর চেয়ে অনেক অনেকগুণ বেশি দান করবেন।

[2] পুণ্যের বদলা বেশি দেওয়া হবে, কিন্তু পাপের বদলা পাপের সমানই দেওয়া হবে। অর্থাৎ, পুণ্যের প্রতিদানে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কৃপা এবং পাপের প্রতিফল দানে তাঁর ন্যায় বিচারের প্রকাশ ঘটবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান



***********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url