বিষয় ভিত্তিক আয়াত || মানুষের মুক্তির জন্য নবী সম্পর্কিত আয়াতসমূহ || নবী (সা:) সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী ||



আল্লাহ নবী (সা:)কে সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছেন


সূরাঃ সাবা | Saba | سورة سبإ 

সূরাঃ সাবা, আয়াত ২৮ 

২৮ وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا کَآفَّۃً لِّلنَّاسِ بَشِیۡرًا وَّ نَذِیۡرًا وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ 

সূরাঃ সাবা, আয়াত ২৮ এর অর্থ 

আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না,
And We have not sent you except comprehensively to mankind as a bringer of good tidings and a warner. But most of the people do not know.

সূরাঃ সাবা, আয়াত ২৮ এর তাফসীর 

(২৮) আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। [1]

[1] এই আয়াতে প্রথমতঃ আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ)-এর বিশ্বজনীন রসূল হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন যে, তাঁকে সকল মানুষের হিদায়াতকারী ও পথপ্রদর্শকরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এই যে, নবী (সাঃ)-এর কামনা ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অনেকেই ঈমান থেকে বঞ্চিত থাকবে। অন্য স্থানেও উক্ত দুই বিষয়ের কথা তিনি বর্ণনা করেছেন। যেমন, নবী (সাঃ)-এর সর্বজনীন রসূল হওয়ার ব্যাপারে বলেছেন, (قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ) অর্থাৎ, বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর (প্রেরিত) রসূল। (সূরা আ’রাফ ১৫৮ আয়াত) (تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا) অর্থাৎ, কত প্রাচুর্যময় তিনি যিনি তাঁর দাসের প্রতি ফুরকান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে। (সূরা ফুরকান ১ আয়াত)

এক হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আমাকে এমন পাঁচটি বস্তু প্রদান করা হয়েছে যা আমার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। এক মাসের পথ চলার মত দূরত্বেও আমার ভীতি দুশমনদের মনে ঢুকিয়ে দিয়ে আমার সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য সারা পৃথিবীকে মসজিদ ও পবিত্র করে দেওয়া হয়েছে; অতএব আমার উম্মত যেখানেই থাকুক নামাযের সময় হয়ে গেলে সেখানেই সে যেন নামায পড়ে নেয়। আমার জন্য (যুদ্ধলব্ধ) গনীমতের সম্পদ বৈধ করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে অন্য কারোর জন্য বৈধ ছিল না। আমাকে কিয়ামতের দিন সুপারিশ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আর অন্য সকল নবীকে নির্দিষ্ট গোত্রের নিকট পাঠানো হয়েছিল, আর আমাকে সকল মানুষের জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে।’’ (বুখারীঃ কিতাবুত তায়াম্মুম, মুসলিমঃ কিতাবুল মাসাজিদ) অন্য এক হাদীসে বলেছেন, আমি লাল ও কালো সকলের জন্য প্রেরিত হয়েছি। (মুসলিমঃ কিতাবুল মাসাজিদ) লাল ও কালো থেকে অনেকে জ্বিন ও মানুষ উদ্দেশ্য নিয়েছেন, আবার অনেকে আরবী ও অনারবী উদ্দেশ্য নিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, উভয় অর্থই সঠিক। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ অধিকাংশ মানুষের অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার কথাও বর্ণনা করেছেন। (وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ) অর্থাৎ, তুমি যতই আগ্রহী হও না কেন, অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করবার নয়। (সূরা ইউসুফ ১০৩ আয়াত) (وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ) অর্থাৎ, যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল, তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। (সূরা আনআম ১১৬ আয়াত) মোটকথা বিপথগামীদের সংখ্যাই বেশি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান

সূরাঃ আল-আহযাব | Al-Ahzab | سورة الأحزاب 

সূরাঃ আল-আহযাব, আয়াত ২৮ 

২৮ یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ اِنۡ کُنۡـتُنَّ تُرِدۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا وَ زِیۡنَتَهَا فَتَعَالَیۡنَ اُمَتِّعۡکُنَّ وَ اُسَرِّحۡکُنَّ سَرَاحًا جَمِیۡلًا 

সূরাঃ আল-আহযাব, আয়াত ২৮ এর অর্থ 

হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে বল, ‘যদি তোমরা দুনিয়ার জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা কর তবে আস, আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় করে দেই’।

O Prophet, say to your wives, "If you should desire the worldly life and its adornment, then come, I will provide for you and give you a gracious release.

সূরাঃ আল-আহযাব, আয়াত ২৮ এর তাফসীর 

২৮. হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন, তোমরা যদি দুনিয়ার জীবন ও এর চাকচিক্য কামনা কর। তবে আস, আমি তোমাদের ভোগ-সমগ্রীর ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদেরকে বিদায় দেই।(১)

(১) উল্লেখিত আয়াতসমূহে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পুণ্যবতী স্ত্রীগণের প্রতি বিশেষ নির্দেশ রয়েছে যেন তাদের কোন কথা ও কাজের দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি কোন দুঃখ-যন্ত্রণা না পৌঁছে; সেদিকে যেন তারা যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করেন। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতে রাসূলের স্ত্রীদেরকে তালাক গ্রহণের যে অধিকার প্রদানের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, এ সম্পর্কিত পুণ্যবতী স্ত্রীগণ কর্তৃক সংঘটিত এক বা একাধিক এমন ঘটনা রয়েছে, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মার্জির পরিপন্থী ছিল, যদ্বারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনিচ্ছাকৃতভাবেই দুঃখ পান। এসব ঘটনাবলীর মধ্যে একটি ঘটনা হচ্ছে, একদিন স্ত্রীগণ সমবেতভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে তাদের জীবিকা ও অন্যান্য খরচাদির পরিমান বৃদ্ধির দাবী পেশ করেন। [মুসলিম: ১৪৭৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

সূরাঃ আল-আহযাব, আয়াত ২৯ 

২৯ وَ اِنۡ کُنۡـتُنَّ تُرِدۡنَ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ فَاِنَّ اللّٰهَ اَعَدَّ لِلۡمُحۡسِنٰتِ مِنۡکُنَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا 

সূরাঃ আল-আহযাব, আয়াত ২৯ এর অর্থ 

‘আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকালীন নিবাস কামনা কর, তবে তোমাদের মধ্য থেকে সৎকর্মশীলদের জন্য আল্লাহ অবশ্যই মহান প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন’।

But if you should desire Allah and His Messenger and the home of the Hereafter - then indeed, Allah has prepared for the doers of good among you a great reward."

সূরাঃ আল-আহযাব, আয়াত ২

৯ এর তাফসীর 

২৯. আর যদি তোমরা কামনা কর আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাতের আবাস, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীলা আল্লাহ তাদের জন্য মহাপ্রতিদান প্ৰস্তুত রেখেছেন।(১)

(১) এ আয়াতে সকল পুণ্যবতী স্ত্রীগণকে অধিকার প্রদান করা হয়েছে যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বর্তমান দারিদ্র্যপীড়িত চরম আর্থিক সঙ্কটপূৰ্ণ অবস্থা বরণ করে হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক অক্ষুন্ন রেখে জীবন যাপন করবেন অথবা তালাকের মাধ্যমে তার থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন। প্রথমাবস্থায় অন্যান্য স্ত্রীলোকের তুলনায় পুরস্কার এবং আখেরাতে স্বতন্ত্র ও সুউচ্চ মর্যাদাসমূহের অধিকারী হবেন। আর দ্বিতীয় অবস্থা, অর্থাৎ তালাক গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতেও তাদেরকে দুনিয়ার অপরাপর লোকের ন্যায় বিশেষ জটিলতা ও অগ্ৰীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে না; বরং সুন্নত মোতাবেক যুগল বস্ত্ৰ প্রভৃতি প্রদান করে সসম্মানে বিদায় দেয়া হবে। ইসলামী পরিভাষায় একে বলা হয় “তাখঈর”। অর্থাৎ স্ত্রীকে তার স্বামীর সাথে থাকার বা আলাদা হয়ে যাবার মধ্য থেকে যে কোন একটিকে বাছাই করে নেবার ফায়সালা করার ইখতিয়ার দান করা। [ফাতহুল কাদীর; বাগাবী]

হাদীসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন অধিকার প্রদানের এ আয়াত নাযিল হয়, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এটি প্রকাশ ও প্রচারের সূচনা করেন। আয়াত শোনানোর পূর্বে বলেন যে, আমি তোমাকে একটি কথা বলব-উত্তরটা কিন্তু তাড়াহুড়া করে দেবে না। বরং তোমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শের পর দেবে। আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমাকে আমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ না করে মতামত প্রকাশ করা থেকে যে বারণ করেছিলেন, তা ছিল আমার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক অপার অনুগ্রহ। কেননা, তার অটুট বিশ্বাস ছিল যে, আমার পিতা-মাতা কখনো আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বনের পরামর্শ দেবেন না। এ আয়াত শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি আরয করলাম যে, এ ব্যাপারে আমার পিতা-মাতার পরামর্শ গ্রহণের জন্য যেতে পারি কি? আমি তো আল্লাহ্ তা'আলা, তাঁর রাসূল ও আখেরাতকে বরণ করে নিচ্ছি। আমার পরে অন্যান্য সকল পুণ্যবতী স্ত্রীগণকে কুরআনের এ নির্দেশ শোনানো হলো। আমার মত সবাই একই মত ব্যক্ত করলেন; রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে দাম্পত্য সম্পর্কের মোকাবেলায় ইহলৌকিক প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দ্যকে কেউ গ্রহণ করলেন না। [মুসলিম: ১৪৭৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

সূরাঃ ফাতির | Fatir | سورة فاطر 

সূরাঃ ফাতির, আয়াত ২৪ 

২৪ اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ بِالۡحَقِّ بَشِیۡرًا وَّ نَذِیۡرًا ؕ وَ اِنۡ مِّنۡ اُمَّۃٍ اِلَّا خَلَا فِیۡهَا نَذِیۡرٌ 

সূরাঃ ফাতির, আয়াত ২৪ এর অর্থ 

আমি তোমাকে সত্যসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে; আর এমন কোন জাতি নেই যার কাছে সতর্ককারী আসেনি। 

Indeed, We have sent you with the truth as a bringer of good tidings and a warner. And there was no nation but that there had passed within it a warner. 

সূরাঃ ফাতির, আয়াত ২৪ এর তাফসীর 

২৪. নিশ্চয় আমরা আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে; আর এমন কোন উম্মত নেই যার কাছে গত হয়নি সতর্ককারী।(১)

(১) একথাটি কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুনিয়ায় এমন কোন জাতি ও সম্প্রদায় অতিক্রান্ত হয়নি যাকে সত্য-সঠিক পথের সন্ধান দেবার জন্য আল্লাহ কোন নবী পাঠাননি। আরো বলা হয়েছে, “আর প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে হেদায়াতকারী”। [সূরা আর-রাদ: ৭] অন্যত্র বলা হয়েছে, আর আপনার আগে আমরা আগেকার অনেক সম্প্রদায়ের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম। [সূরা আল হিজর: ১০] অন্য সূরায় বলা হয়েছে, আল্লাহর ইবাদাত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। [সূরা আন-নাহল: ৩৬] অন্যত্র বলা হয়েছে, আর আমরা এমন কোন জনপদ ধ্বংস করিনি। যার জন্য সতর্ককারী ছিল না। [সূরা আশ-শূ'আরা: ২০৮]
তাফসীরে জাকারিয়া



*********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url