যাকাত কি, যাকাত কে দিবেন, কিভাবে দিবেন, যাকাত কাকে দিবেন


যাকাত কি, যাকাত কে দিবেন, কিভাবে দিবেন, কাকে দিবেন



আমাদের দেশ বিশ্বের ২য় মুসলিম প্রধান দেশ। ইচ্ছা করলেও সামাজিক ও পারিপার্শিক কারণে ইসলামের সমস্ত বিধি বিধান আমরা মানতে পারি না। দুনিয়া মাত্র কয়েক দিনের রঙ্গ তামাশার জায়গা। আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলো এতই সুন্দর আলহামদুলিল্লাহ, আমরা যদি সবগুলো বিধি বিধান মানতে পারতাম তাহলে কতই না ভাল হতো, দুনিয়াটা কতই না সুন্দর হতো। শুধু যদি যাকাতের বিধানটার কথাই বলি, আমাদের দেশের প্রত্যেক সামর্থবান ব্যাক্তিই যদি সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করতেন তাহলে এদেশে কোন গরীব থাকতো। পথে ঘাটে মানুষকে ভিক্ষা করে খেতে হতো না। আল্লাহ আমাদেরকে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলার তৌফিক দান করুন।

অনেকেই যাকাত বিষয়ে নানারকম দ্বিধায় ভোগেন। যাকাত পরিশোধ করেও ভাবেন, ঠিকমত পরিশোধ হলো তো! আমরা এখানে যাকাত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনার যাকাত আপনি নিজেই হিসাব করে কত দিবেন, কাকে দিবেন এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছি। আশা করছি, অনেকের মনের অনেক প্রশ্নেরই জবাব এখানে পাবেন। দয়া করে, প্রবন্ধটি বিস্তারিত পড়ুন এবং ভাল লাগলে আপনার ফেইস বুক ওয়ালে পোস্টটি শেয়ার করে রাখুন। আর ভাল লাগলে একটা কমেন্ট করে আমাদেরকে উৎসাহিত করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে জানার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।।

যাকাত কি

যাকাত (আরবি: زكاة‎‎ zakāt, "যা পরিশুদ্ধ করে", আরও আরবি: زكاة ألمال‎‎, "সম্পদের যাকাত" হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়। সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে "যাকাত" শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটি উল্লেখ করা হয়েছে

যাকাতের শর্তসমূহ

স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে। যেমন:

১. সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা

সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পদ, মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের উপর অন্যের অধিকার বা মালিকানা না থাকা এবং নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার থাকা। যেসকল সম্পদের মালিকানা সুসস্পষ্ট নয়, সেসকল সম্পদের কোনো যাকাত নেই, যেমন: সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ। অনুরূপভাবে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়ক্‌ফকৃত সম্পদের উপরেও যাকাত ধার্য হবে না। তবে ওয়াক্‌ফ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোত্রের জন্য হয়, তবে তার উপর যাকাত দিতে হবে।

২. সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়া

যাকাতের জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে, অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতাই যথেষ্ট। যেমন: গরু, মহিষ, ব্যবসায়ের মাল, নগদ অর্থ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রীত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মালামাল বর্ধনশীল। অর্থাৎ যে সকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়, সেসবের উপর যাকাত ধার্য হবে না, যেমন: ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল, চলাচলের বাহন ইত্যাদি।


৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ

যাকাত ফরয হওয়ার তৃতীয় শর্ত হচ্ছে শরীয়ত নির্ধারিত সীমাতিরিক্ত সম্পদ থাকা। সাধারণ ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা উভয়টি মিলে ৫২.৫ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হয়। পশুর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বিভিন্ন ।

৪. মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকা

সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার উপরই যাকাত ফরয হবে। এপ্রসঙ্গে আল-কুরআনে উল্লেখ রয়েছে:
লোকজন আপনার নিকট (মুহাম্মদের [স.] নিকট) জানতে চায়, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আল্লাহ এভাবেই তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বলে দেন।

যাকাত বণ্টনের খাতসমূহ

পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাওবার ৬০ নাম্বার আয়াতে যাকাত বণ্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করেছেন। এই খাতগুলো সরাসরি কুরআন দ্বারা নির্দিষ্ট এবং যেহেতু তা আল্লাহর নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে তা ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না।

ফকির (যার কিছুই নেই)
মিসকীন(যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)
যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই)
নওমুসলিমদের(আর্থিক সংকটে থাকলে)
ক্রীতদাস(মুক্তির উদ্দেশ্যে)
ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশি
(স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি
মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)
হাদিসমতে, এগুলো ফরয সাদকাহের খাত, এবং নফল সাদকাহ এই আট খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিসর আরো প্রশস্ত।উল্লেখিত খাতসমূহে যাকাত বণ্টন করতে হয় সঠিক পন্থায়। অনেকে যাকাতের অর্থে শাড়ি ক্রয় করে তা বণ্টন করে থাকেন। এভাবে যাকাত আদায় হয়ে গেলেও আসলে প্রকৃতপক্ষে যাকাত গ্রহণকারীর তেমন উপকার হয় না। তাই যাকাত বণ্টনের উত্তম পন্থা হলো: যাকাত যাদেরকে প্রদান করা যায়, তাদের একজনকেই বা একটি পরিবারকেই যাকাতের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া।

যাকাত গণনার নিয়ম

ধর্মীয়ভাবে প্রতিজন মুসলমানকে তার যাবতীয় আয়-ব্যয়-সম্পদের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়। হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ভিত্তি একটি মৌলিক ধারণা। অর্থাৎ বছরের একটা নির্দিষ্ট দিন থেকে পরবর্তি বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত যাবতীয় আয়-ব্যয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রাখতে হয়। এই 'দিন' বাছাই করার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে, কোন মাসে দিন নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত কেউ কেউ হিসাব সংরক্ষণের সুবিধার্থে হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের কোনো দিন কিংবা অধিক পূণ্যের আশায় রমজান মাসের কোনো দিন বাছাই করে থাকেন। এই হিসাব সংরক্ষণ হতে হবে যথেষ্ট সূক্ষ্মতার সাথে। সংরক্ষিত হিসাবের প্রেক্ষিতে ইসলাম ধর্মের নিয়মানুযায়ী নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে তবেই উক্ত ব্যক্তির উপর যাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক (ফরয) হয়, অন্যথায় যাকাত দিতে হয় না।

যাকাত প্রদানের নিয়ম

যাকাতের 'নিসাব পরিমাণ' বিভিন্ন দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়। নিচে এসংক্রান্ত বিস্তারিত দেয়া হলো
১। নগদ অর্থ, ব্যাংক জমা এবং ব্যবসায়িক পণ্য যদি ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমানের সমান বা বেশি হয় তবে সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫% অংশ যাকাত হিসাবে দিতে হবে।
২। স্বর্ণ, রৌপ্য কিংবা সোনা-রূপার অলংকার যদি সোনা ৭.৫ তোলা বা সোনা ও রূপা মিলিয়ে মোট ৫২.৫ তোলা রূপার সমান বা বেশি হয় সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫% অংশ যাকাত হিসাবে দিতে হবে।
৩। কৃষিজাত দ্রব্য: আবু হানিফার মতে, যেকোনো পরিমাণ; অন্যান্যদের মতে, ৫ ওয়াসাক বা ২৬ মণ ১০ সের; ইসলামিক ইকোলজিক্যাল রিসার্চ ব্যুরো'র মতে, ১৫৬৮ কেজির সমান বা বেশি হলে এবং বৃষ্টিতে উৎপাদিত দ্রব্যের ১০% অংশ যাকাত হিসাবে দিতে হবে।
৪। খনিজ দ্রব্য যেকোনো পরিমাণ হলে মোচ দ্রব্যের ২০% অংশ অংশ যাকাত হিসাবে দিতে হবে।
৫। ভেড়া-ছাগল: ৪০-১২০টির জন্য ১টি ভেড়া বা ছাগল, ১২১-২০০টির জন্য ২টি ভেড়া বা ছাগল, ২০১-৪০০টির জন্য ৩টি ভেড়া বা ছাগল, ৪০০-৪৯৯টির জন্য ৪টি ভেড়া বা ছাগল, ৫০০ বা ততোধিক ভেড়া বা ছাগলের জন্য প্রতি শ’তে ১টি ভেড়া বা ছাগল যাকাত দিতে হবে।
৬। গরু-মহিষ: ৩০-৩৯টির জন্য ১টি এক বছরের বাছুর, ৪০-৪৯টির জন্য ১টি দুই বছরের বাছুর, ৫০-৫৯টির জন্য ২টি দুই বছরের বাছুর, ৬০-৬৯টির জন্য ১টি তিন বছরের এবং ১টি দুই বছরের বাছুর, ৭০-৭৯টির জন্য ২টি তিন বছরের বাছুর, ৮০-৮৯টির জন্য ৩টি দুই বছরের বাছুর, ৯০-৯৯টির জন্য ১টি তিন বছরের এবং ২টি দুই বছরের বাছুর, ১০০-১১৯টির জন্য প্রতি শ’তে দুই বছরের বাছুর -এভাবে ঊর্ধ্বে হিসাব হবে।
৭। শেয়ার, ব্যাংক নোট, স্টক: ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমানের সমান বা বেশি হলে সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%, তবে কোম্পানী যাকাত দিলে ব্যক্তিগতভাবে যাকাত দিতে হবে না।
৮। অংশীদারী কারবার ও মুদারাবা: ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমান প্রথমে সম্পত্তির যাকাত দিতে হবে, মূলধনের নয়; এরপর লাভ বন্টিত হবে। যাকাত ব্যক্তিগতভাবে লাভের উপর হবে, একভাগ (২.৫%) দিবে মূলধন সরবরাহকারী এবং একভাগ (২.৫%) দিবে শ্রমদানকারী।


যাকাতমুক্ত সম্পদ

যাকাতমুক্ত সম্পদ সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের বাণীবাহক মুহাম্মদ [স.] বলেছেন, বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আরোহণের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজে ব্যবহৃত পশু ও দাস-দাসী, কাঁচা তরিতরকারিসমূহ এবং মৌসুমী ফলসমূহ যা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়, এমন ফসলে যাকাত নেই। যদিও হানাফি মাযহাব অনুসারে নিজে নিজে উৎপন্ন দ্রব্যাদি, যথা বৃক্ষ, ঘাস এবং বাঁশব্যতীত অন্য সমস্ত শস্যাদি, তরিতরকারি ও ফলসমূহের যাকাত দিতে হয়। হাদিসের আলোকে যেসকল সম্পদসমূহকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো: জমি ও বাড়িঘর; মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়্যারহাউজ বা গুদাম ইত্যাদি; দোকান; এক বছরের কম বয়সের গবাদি পশু; ব্যবহার্য যাবতীয় পোশাক; বই, খাতা, কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী; গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি, তৈলচিত্র ও স্ট্যাম্প; অফিসের যাবতীয় আসবাব, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও নথি; গৃহপালিত সকলপ্রকার মুরগী ও পাখি; কলকব্জা, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি যাবতীয় মূলধনসামগ্রী; চলাচলের যন্তু ও গাড়ি; যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম; ক্ষণস্থায়ী বা পঁচনশীল যাবতীয় কৃষিপণ্য; বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ; যাকাতবর্ষের মধ্যে পেয়ে সেবছরই ব্যয়িত সম্পদ; দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, যা জনস্বার্থে নিয়োজিত; সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ। যে ঋণ, ফেরত পাবার আশা নেই (স্থায়ী কুঋণ), তার উপর যাকাত ধার্য হবে না।

যাকাত কাকে দিবেন

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি। এর হক্ব অতি সাবধানতার সাথে যথাযথ ভাবে আদায় করতে হবে। সাবধান, কিছু মানুষের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে নিয়মের বাইরে দিলে আপনার ফরজ আদায়  হবে না। পবিত্র কুরআনে পরিষ্কারভাবে জাকাত বা সাদাকা প্রাপ্যদের তালিকা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ

“সাদাকাহ বা যাকাত পাবার যোগ্যতা রাখে শুধুমাত্র ফকির, মিসকীন, যাকাত সংগ্রহকারী, যাদের অন্তরে (ইসলামের প্রতি) ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা আছে, আর ক্রীতদাস মুক্তিতে, ঋণগ্রস্থরা, যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে আর মুসাফির। এটা আল্লাহর তরফ থেকে ফরয। আল্লাহ সমস্ত কিছু জ্ঞাত আছেন, আর তিনি হিকমাতওয়ালা।” (সুরা তাওবাহ আয়াত ৬০)
উপরোক্ত আয়াতে ৮ ধরনের লোকের কথা বলা হয়েছে।

১) ফকিরঃ জীবন ধারণের জন্য তার যা প্রয়োজন তার কাছে তার থেকে কম আছে। প্রয়োজন পূরণে অন্যের নিকট হাত পাততে হয়। যেমন তার প্রয়োজন ১০ টাকার আছে মাত্র ৩/৫/৭ টাকা।   ।
২) মিসকীনঃ জীবন ধারণের জন্য তার যা প্রয়োজন তার কাছে তা একেবারেই নেই বা এক বেলার জন্য কিছু আছে।
৩) যাকাত সংগ্রহকারীঃ ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}
৪) যাদের অন্তর ইসলামের দিকে ঝুঁকেছেঃ যে সমস্ত গরীব বিধর্মী যারা ইসলাম গ্রহণ করতে চায় বা মুসলিমদের শত্রুর হাত হতে রক্ষা করতে চায় তাদের যাকাত দেওয়া যাবে। যেমন সফওয়া ইবনু উমাইয়াকে হুনাইন যুদ্ধের গণীমাত দিয়েছিলেন। রাসুল ﷺ আবু সুফিয়ান ইবনু হারবকে, আক্‌বা ইবনু হাবেসক এবং উয়াইনাহ ইবনু মিহসানকে জাকাত দিয়েছিলেন (মুসলিম)।
৫) ক্রিতদাস মুক্তিতেঃ দাসদের মুক্ত করা, শত্রুর হাতে বন্দী তাদেরও মুক্ত করা ইত্যাদি। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।
৬) ঋণগ্রস্থঃ সেসব গরীব যারা ঋণ করেছে এবং শোধ করার সামর্থ নেই তাদের যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যাবে। বাংলাদেশসের লক্ষ লক্ষ ঋণ খেলাফী ধনী এর আওতায় আসবেনা যারা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে শোধ করতে পারছে না। তাদের ওই ঋণ জীবন বাঁচানোর তাগিদে নেয়া হয়নি। বরং তা নেয়া হয়েছিলো নিজেদের বিলাশিতাকে পরিপূর্ণ করার মানসে।
৭) যারা আল্লাহর রাস্তায় আছেঃ যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। বর্তমানে জিহাদের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কাজেই এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। এতিমখানায় দেয়া যেতে পারে। যেখানে গরীব বাচ্চারা লেখাপড়া করে। তবে প্রাপ্ত যাকাত বা ফিতরার টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয়া যাবেনা। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}
৮) মুসাফিরঃ ঐ মুসাফির যে এক স্থান হতে অন্য স্থানে বা দেশ হতে অন্য দেশে গেছে কিন্তু টাকার অভাবে নিজ গৃহে ফিরতে পারছে না। তাকে ঐ পরিমান যাকাত দেয়া হবে যাতে নিজের গৃহে ফিরে আসতে পারে। যদি কোথাও ধার কর্জ পায় তবে যাকাত নিতে পারবে না।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ করেছেন এই যে, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না।

যেমন কাউকে কোন বস্তু ভোগ দখলের অধিকার দিয়ে নিয়ত করল যাকাতের, তাহলে এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠান বা মসজিদে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ নয়, যদিও তাতে গরীব মানুষ থাকে, নামায পড়ে, পড়াশোনা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের গরীবদের, মাদরাসা গরীব ছাত্রদের, মসজিদের গরীব মুসল্লিদের যাকাত দিলে তাতে মালিক বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি থাকায় তা জায়েজ হবে। {ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮, আল হিদায়া-১/২০৫, তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/২৯৯}



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url