হাদিসে কুদসী সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিস, পর্ব- ১৩





আল কুরআনের পরে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল হাদিসে কুদসী


 হাদিসে কুদসী নং     ৮৫ 

সুপারিশের হাদিস


৮৫. মা‘বাদ ইবনু হিলাল আনাজি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা বসরার কতক লোক একসাথে আনাস ইবনু মালেকের নিকট গেলাম। আমরা আমাদের সাথে সাবেত আল-বুনানিকে নিয়ে গেলাম, যেন সে আমাদের পক্ষে তাকে সুপারিশের হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তিনি বাড়িতেই ছিলেন, আমরা তাকে দোহা (চাশতে)র সালাত আদায় করতে পেলাম। আমরা অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন, তিনি বিছানায় উপবিষ্ট ছিলেন। আমরা সাবেতকে বললাম: সুপারিশের হাদিসের পূর্বে কোন বিষয় সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করবেন না, তিনি বললেন: হে আবূ হামযাহ, তারা আপনার ভাই বসরার অধিবাসী, তারা আপনার নিকট এসেছে সুপারিশের হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য। অতঃপর তিনি বললেন: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমাদেরকে বলেছেন: “যখন কিয়ামতের দিন হবে মানুষ ভীড়ে ঠাসাঠাসি করবে, অতঃপর তারা আদম আলাইহিস সালামের নিকট আসবে ও বলবে: আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন, তিনি বলবেন: আমি এর উপযুক্ত নই, তবে তোমরা ইবরাহিমের নিকট যাও, কারণ তিনি রহমানের খলিল। তারা ইবরাহিমের নিকট আসবে, তিনি বলবেন: আমি এ জন্য নই, তবে তোমরা মুসার নিকট যাও, কারণ তিনি আল্লাহর সাথে কথোপকথনকারী।

তারা মুসার নিকট আসবে, তিনি বলবেন: আমি এ জন্য নই, তবে তোমরা ঈসার নিকট যাও, কারণ তিনি আল্লাহর (পক্ষ থেকে বিশেষ) রূহ ও তার বাণী। তারা ঈসার নিকট আসবে, অতঃপর তিনি বলবেন: আমি এ জন্য নই, তবে তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাও, অতঃপর তারা আমার নিকট আসবে, আমি বলব: আমি এ জন্য, আমি আমার রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করব, আমাকে অনুমতি দেয়া হবে, তিনি আমাকে প্রশংসার বাক্য শিক্ষা দিবেন যা দ্বারা আমি তার প্রশংসা করব, যা এখন আমার স্মরণ নেই। আমি তার প্রশংসা করব ও সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, তিনি বলবেন: হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, তুমি বল তোমার কথা শোনা হবে, তুমি চাও তোমাকে দেয়া হবে, তুমি সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আমি বলব: হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি বলবেন: যাও, সেখান থেকে বের কর যার অন্তরে গমের ওজন বরাবর ঈমান রয়েছে, আমি যাব ও অনুরূপ করব। অতঃপর ফিরে আসব ও সে প্রশংসার বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব, অতঃপর তার সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, অতঃপর বলা হবে: হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, বল তোমার কথা শোনা হবে, চাও তোমাকে দেয়া হবে, সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। আমি বলব: হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি বলবেন: যাও, সেখান থেকে বের কর যার অন্তরে অণু অথবা সরিষা পরিমান ঈমান রয়েছে, আমি যাব ও অনুরূপ করব। অতঃপর ফিরে এসে সে বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব অতঃপর সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, বলা হবে: হে মুহাম্মদ মাথা উঠাও, বল তোমার কথা শোনা হবে, চাও তোমাকে দেয়া হবে, সুপারিশ কর কবুল করা হবে, অতঃপর আমি বলব: হে আমার রব, আমার উম্মত, আমার উম্মত। তিনি বলবেন: যাও, বের কর যার অন্তরে সরিষার অণু অণু অণু পরিমাণ ঈমান রয়েছে, অতএব আমি তাকে জাহান্নাম থেকে বের করব, আমি যাব ও অনুরূপ করব”। আমরা যখন আনাসের কাছ থেকে প্রস্থান করলাম, আমি আমাদের কতক সাথীকে বললাম: আমরা যদি হাসান বসরি হয়ে যাই, তার নিকট আনাসের হাদিস বর্ণনা করি! তখন তিনি আবূ খলিফার ঘরে আত্মগোপন করে ছিলেন, আমরা তার নিকট আসলাম, তাকে সালাম করলাম, তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন, আমরা তাকে বললাম: হে আবূ সায়িদ, আমরা আপনার নিকট আপনার ভাই আনাস ইবনু মালেকের কাছ থেকে এসেছি, তিনি আমাদেরকে সুপারিশ সম্পর্কে যা শুনিয়েছেন তা কখনো শুনেনি। তিনি বললেন: বল, আমরা তাকে হাদিস বললাম, এখানে এসে শেষ করলাম। তিনি বললেন: বল, আমরা বললাম এরচেয়ে বেশী বলেন নি। তিনি বললেন: তিনি আমাকে বলেছেন পূর্ণ বিশ বছর পূর্বে, জানি না তিনি ভুলে গেছেন বা তোমাদের (পক্ষ থেকে কম আমলের উপর) নির্ভর করে থাকাকে অপছন্দ করেছেন। আমরা বললাম: হে আবূ সায়িদ আপনি আমাদেরকে বলুন, তিনি হাসলেন ও বললেন: মানুষকে তড়িৎ প্রবণ করে সৃষ্টি করা হয়েছে, আমি তো তোমাদেরকে বলার জন্যই বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন যেমন তোমাদেরকে তা বলেছেন। তিনি বলেন: “অতঃপর আমি চতুর্থবার ফিরব এবং সে বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করব, অতঃপর তার সেজদায় লুটিয়ে পড়ব, বলা হবে: হে মুহাম্মদ, মাথা উঠাও, বল শোনা হবে, চাও দেয়া হবে, সুপারিশ কর কবুল করা হবে। আমি বলব: হে আমার রব, যারা বলেছে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ তাদের ব্যাপারে আমাকে অনুমতি দিন। তিনি বলবেন: আমার ইজ্জত, বড়ত্ব, মহত্ত্ব ও সম্মানের কসম, অবশ্যই আমি তাকে বের করব, لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ যে বলেছে”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।

85- عَنْ مَعْبَدُ بْنُ هِلَالٍ الْعَنَزِيُّ قَالَ: اجْتَمَعْنَا -نَاسٌ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ- فَذَهَبْنَا إِلَى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ-رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، وَذَهَبْنَا مَعَنَا بِثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ إِلَيْهِ يَسْأَلُهُ لَنَا عَنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ، فَإِذَا هُوَ فِي قَصْرِهِ فَوَافَقْنَاهُ يُصَلِّي الضُّحَى فَاسْتَأْذَنَّا فَأَذِنَ لَنَا وَهُوَ قَاعِدٌ عَلَى فِرَاشِهِ، فَقُلْنَا لِثَابِتٍ: لَا تَسْأَلْهُ عَنْ شَيْءٍ أَوَّلَ مِنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ فَقَالَ: يَا أَبَا حَمْزَةَ هَؤُلَاءِ إِخْوَانُكَ مِنْ أَهْلِ الْبَصْرَةِ جَاءُوكَ يَسْأَلُونَكَ عَنْ حَدِيثِ الشَّفَاعَةِ فَقَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ مَاجَ النَّاسُ بَعْضُهُمْ فِي بَعْضٍ فَيَأْتُونَ آدَمَ فَيَقُولُونَ: اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِإِبْرَاهِيمَ فَإِنَّهُ خَلِيلُ الرَّحْمَنِ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُوسَى فَإِنَّهُ كَلِيمُ اللَّهِ، فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِعِيسَى فَإِنَّهُ رُوحُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ، فَيَأْتُونَ عِيسَى فَيَقُولُ: لَسْتُ لَهَا، وَلَكِنْ عَلَيْكُمْ بِمُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم ، فَيَأْتُونِي فَأَقُولُ: أَنَا لَهَا فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فَيُؤْذَنُ لِي وَيُلْهِمُنِي مَحَامِدَ أَحْمَدُهُ بِهَا لَا تَحْضُرُنِي الْآنَ، فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ وَأَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا فَيَقُولُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي فَيَقُولُ: انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ شَعِيرَةٍ مِنْ إِيمَانٍ، فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ، ثُمَّ أَعُودُ فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي فَيَقُولُ: انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مِنْهَا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ أَوْ خَرْدَلَةٍ مِنْ إِيمَانٍ، فَأَخْرِجْهُ فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ ثُمَّ أَعُودُ فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا, فَيَقُولُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ لَكَ، وَسَلْ تُعْطَ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ يَا رَبِّ أُمَّتِي أُمَّتِي فَيَقُولُ: انْطَلِقْ فَأَخْرِجْ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ أَدْنَى أَدْنَى أَدْنَى مِثْقَالِ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ، فَأَخْرِجْهُ مِنْ النَّارِ فَأَنْطَلِقُ فَأَفْعَلُ » . فَلَمَّا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ أَنَسٍ قُلْتُ لِبَعْضِ أَصْحَابِنَا: لَوْ مَرَرْنَا بِالْحَسَنِ وَهُوَ مُتَوَارٍ فِي مَنْزِلِ أَبِي خَلِيفَةَ فَحَدَّثْنَاهُ بِمَا حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ فَأَتَيْنَاهُ فَسَلَّمْنَا عَلَيْهِ فَأَذِنَ لَنَا فَقُلْنَا لَهُ: يَا أَبَا سَعِيدٍ جِئْنَاكَ مِنْ عِنْدِ أَخِيكَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فَلَمْ نَرَ مِثْلَ مَا حَدَّثَنَا فِي الشَّفَاعَةِ, فَقَالَ: هِيهْ, فَحَدَّثْنَاهُ بِالْحَدِيثِ فَانْتَهَى إِلَى هَذَا الْمَوْضِع,ِ فَقَالَ: هِيهْ, فَقُلْنَا: لَمْ يَزِدْ لَنَا عَلَى هَذَا فَقَالَ: لَقَدْ حَدَّثَنِي وَهُوَ جَمِيعٌ مُنْذُ عِشْرِينَ سَنَةً فَلَا أَدْرِي أَنَسِيَ أَمْ كَرِهَ أَنْ تَتَّكِلُوا, قُلْنَا: يَا أَبَا سَعِيدٍ فَحَدِّثْنَا, فَضَحِكَ، وَقَالَ: خُلِقَ الْإِنْسَانُ عَجُولاً، مَا ذَكَرْتُهُ إِلَّا وَأَنَا أُرِيدُ أَنْ أُحَدِّثَكُمْ، حَدَّثَنِي كَمَا حَدَّثَكُمْ بِهِ قَالَ: « ثُمَّ أَعُودُ الرَّابِعَةَ فَأَحْمَدُهُ بِتِلْكَ الْمَحَامِدِ ثُمَّ أَخِرُّ لَهُ سَاجِدًا فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ، وَقُلْ يُسْمَعْ، وَسَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَقُولُ: يَا رَبِّ ائْذَنْ لِي فِيمَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَيَقُولُ: وَعِزَّتِي وَجَلَالِي وَكِبْرِيَائِي وَعَظَمَتِي لَأُخْرِجَنَّ مِنْهَا مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ » . ( خ, م ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ৮৬ 

উম্মতে মুহাম্মাদির সাক্ষী


৮৬. আবূ সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন নুহ আলাইহিস সালামকে ডাকা হবে, তিনি বলবেন: সদা উপস্থিত, আপনার সন্তুষ্টি বিধানে আমি সদা তৎপর হে আমার রব, তিনি বলবেন: তুমি পৌঁছিয়েছ? তিনি বলবেন: হ্যাঁ, তার উম্মতকে বলা হবে: সে তোমাদের পৌঁছিয়েছে? তারা বলবে: আমাদের নিকট কোন সতর্ককারী আসে নি। তিনি বলবেন: তোমার জন্য কে সাক্ষী দিবে? তিনি বলবেন: মুহাম্মদ ও তার উম্মত, অতঃপর তারা সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় তিনি পৌঁছিয়েছেন, আর রাসূল হবেন তোমাদের সাক্ষী। এ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿ وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَٰكُمۡ أُمَّةٗ وَسَطٗا لِّتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيۡكُمۡ شَهِيدٗاۗ ١٤٣ ﴾ [البقرة: ١٤٣] ( وَالْوَسَطُ الْعَدْلُ ».

“আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী ‎উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের উপর ‎সাক্ষী হও এবং রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের ‎উপর”।[১] ওয়াসাত অর্থ ইনসাফপূর্ণ পথ বা মধ্যমপন্থার অনুসারী”। [বুখারি, তিরমিযি ও ইবনু মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।

[১] সূরা বাকারা: (১৪৩)
86- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « يُدْعَى نُوحٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ يَا رَبِّ, فَيَقُولُ: هَلْ بَلَّغْتَ؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ، فَيُقَالُ لِأُمَّتِهِ: هَلْ بَلَّغَكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: مَا أَتَانَا مِنْ نَذِيرٍ، فَيَقُولُ: مَنْ يَشْهَدُ لَكَ؟ فَيَقُولُ: مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ, فَتَشْهَدُونَ أَنَّهُ قَدْ بَلَّغَ -وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا- فَذَلِكَ قَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ: ﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَٰكُمۡ أُمَّةٗ وَسَطٗا لِّتَكُونُواْ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ وَيَكُونَ ٱلرَّسُولُ عَلَيۡكُمۡ شَهِيدٗاۗ﴾ (وَالْوَسَطُ الْعَدْلُ ». ( خ, ت, جه ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ৮৭ 

উম্মতে মুহাম্মাদির জান্নাতের বিনিময়


৮৭. আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন কিয়ামতের দিন হবে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলিমের নিকট একজন ইহুদি অথবা খৃস্টান দিবেন, অতঃপর বলবেন: এ হচ্ছে তোমার জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিনিময়[১]”। [মুসলিম ও আহমদ] হাদিসটি সহিহ।

[১] কারণ প্রতিটি মানুষের জন্য জাহান্নামে একটি স্থান রয়েছে। যখন মুসলিম জাহান্নামে গেল না, আর খৃষ্টান ও ইয়াহূদী জাহান্নামে গেল, তখন সে যেন মুসলিমের স্থান দখল করে নিল। আর মুসলিম যেন কাফেরকে তার স্থলাভিষিক্ত করল। 

87- عَنْ أَبِي مُوسَى -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ دَفَعَ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- إِلَى كُلِّ مُسْلِمٍ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا فَيَقُولُ: هَذَا فِكَاكُكَ مِنْ النَّارِ». ( م, حم ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ৮৮ 

উম্মতে মুহাম্মাদির তিন ভাগ


৮৮. আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এ উম্মতকে তিন ভাগে উপস্থিত করা হবে: প্রথম ভাগ বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দ্বিতীয় ভাগ থেকে সামান্য হিসেব নেয়া হবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তৃতীয় ভাগ নিজেদের পিঠের ওপর বড় পাহাড়ের ন্যায় পাপসহ উপস্থিত হবে, অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে অধিক জানেন: এরা কারা? তারা বলবে: এরা আপনার কতক বান্দা। তিনি বলবেন: এসব তাদের থেকে হটাও, এগুলো ইহুদি ও খৃস্টানদের ওপর রাখ এবং তাদেরকে আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাও”। [হাকেম] হাদিসটি হাসান।

88- عن أبي موسى -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « تُحْشَرُ هذه الأمةُ على ثلاثةِ أصنافٍ: (صنف) يدخُلون الجنة بغير حسابٍ (وصنفٍ) يُحاسبون حسابًا يسيرًا ثم يَدْخلون الجنة، (وصنف) يجيئون على ظهورهم أمثالُ الجبالِ الراسياتِ ذُنوبًا فيسألُ الله عنهم وهو أعلم بهم فيقول: ما هؤلاء؟ فيقولون: هؤلاء عبيدٌ من عبادِك، فيقول: حُطُّوها عنهم واجعلوها على اليهودِ والنَّصارى وأدْخِلوهم برحمتي الجنَّة » . ( ك ) حسن


 হাদিসে কুদসী নং     ৮৯ 

উম্মতে মুহাম্মাদির হিসাব


৮৯. আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন কিয়ামতের দিন হবে একদল মানুষ দাঁড়াবে, তাদের নূর সূর্যের ন্যায় দিগন্ত ঢেকে ফেলবে, অতঃপর বলা হবে: উম্মী নবী, প্রত্যেক নবী এ জন্য  প্রস্তুত হবেন। অতঃপর বলা হবে: মুহাম্মদ ও তার উম্মত। অতঃপর একদল দাঁড়াবে তাদের নূর চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায় দিগন্তের মধ্যবর্তী সব ঢেকে ফেলবে, বলা হবে: উম্মী নবী,  প্রত্যেকেই এ জন্য প্রস্তুত হবেন, অতঃপর বলা হবে: মুহাম্মদ ও তার উম্মত। অতঃপর একদল দাঁড়াবে তাদের নূর আসমানের তারকার ন্যায় দিগন্তের মধ্যবর্তী সব ঢেকে ফেলবে, বলা হবে: উম্মী নবী, প্রত্যেকেই এ জন্য প্রস্তুত হবেন, অতঃপর বলা হবে: মুহাম্মদ ও তার উম্মত। অতঃপর দু’ মুষ্টি উঠাবেন ও বলবেন: এটা তোমার জন্য হে মুহাম্মদ ও এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য হে মুহাম্মদ। অতঃপর মীযান কায়েম করা হবে এবং হিসাব আরম্ভ হবে”। [তাবরানি] হাদিসটি হাসান।

89- عن أبي أمامة -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إذا كان يومُ القيامة قامت ثُلة من النَّاس يسدون الأفق نورهم كالشمس، فيقال: النبيُّ الأمي فيتحسس لها كلُّ نَبيٍّ فيُقَالُ: محمد وأمته، ثم تقوم ثُلَّةٌ أخرى يَسدُّ ما بين الأفق نُورهم كالقمر ليلة البدر، فيقال: النبي الأمي، فيتحسس لها كل شيءٍ، فيقال: محمدٌ وأمته، ثم تقوم ثُلةٌ أخرى يسد ما بين الأفق نورهم مثل كوكب في السماء، فيقال: النبي الأمي، فيتحسس لها كل شيءٍ، فيقال: محمدٌ وأمته، ثم يحثي حثيتين فيقول: هذا لك يا محمد وهذا مني لك يا محمد, ثم يوضع الميزانُ ويؤُخذ في الحساب » . ( طب ) حسن


 হাদিসে কুদসী নং     ৯০ 

উম্মতে মুহাম্মাদির উপহার


৯০. আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সাদা এ আয়নার ন্যায় অনুরূপ আয়না নিয়ে জিবরিল আমার নিকট এসেছে তাতে কালো একটি ফোঁটা। আমি বললাম: হে জিবরিল এটা কি? তিনি বললেন: এ হচ্ছে জুমা, আল্লাহ যা তোমার ও তোমার উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন, তোমরাই ইহুদি ও খৃস্টানদের পূর্বে, (অর্থাৎ তাদের সাপ্তাহিক ঈদের পূর্বদিন তোমাদের ঈদের দিন) তাতে একটি মুহূর্ত রয়েছে, সে সময় বান্দা আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ প্রার্থনা করবে না, যা তিনি তাকে দিবেন না। তিনি বলেন: আমি বললাম: এ কালো ফোঁটা কি? তিনি বললেন: এ হচ্ছে কিয়ামত জুমার দিন কায়েম হবে, আমরা একে মাযিদ বলি। তিনি বলেন: আমি বললাম: ইয়াওমুল মাযিদ কি? তিনি বললেন: আল্লাহ জান্নাতে প্রশস্ত ময়দান তৈরি করেছেন, সেখানে তিনি সাদা মিশকের স্তূপ রেখেছেন, যখন জুমার দিন হয় আল্লাহ সেখানে অবতরণ করবেন, সেখানে নবীদের জন্য স্বর্ণের মিম্বার রাখা হয়, আর শহীদদের জন্য মুক্তোর চেয়ার এবং (জান্নাতের) প্রাসাদসমূহ থেকে ‘হূরুল ঈন’ বা ডাগর নয়না হূর অবতরণ করে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ-গান করবে। তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ বলবেন: আমার বান্দাদের কাপড় পরিধান করাও, তাদের কাপড় পরিধান করানো হবে। তিনি বলবেন: আমার বান্দাদের খাদ্য দাও, তাদের খাদ্য দেয়া হবে। তিনি বলবেন: আমার বান্দাদের পান করাও, তাদের পান করানো হবে। তিনি বলবেন: আমার বান্দাদের সুগন্ধি দাও, তাদের সুগন্ধি দেয়া হবে। অতঃপর বলবেন: তোমরা কি চাও? তারা বলবে: হে আমাদের রব তোমার সন্তুষ্টি। তিনি বলেন: তিনি বলবেন: আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছি, অতঃপর তাদেরকে নির্দেশ দিবেন, তারা যাবে ও ‘হূরল ঈন’ প্রাসাদসমূহে প্রবেশ করবে যা সবুজ মণি-মুক্তা ও লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি”। [আবূ ইয়ালা] হাদিসটি সহিহ।

90- عن أنس بن مالك -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «أتاني جبريلُ بمثل هذه المرآة البيضاء فيها نُكْتة سوداء، قلت: يا جبريلُ ما هذه؟ قال: هذا الجُمُعة جعلها الله عيدًا لك ولأمتك فأنتم قبل اليهود والنصارى، فيها ساعةٌ لا يوافقها عبدٌ يسأل الله فيها خيرًا إلا أعطاهُ إياه، قال: قلت: ما هذه النُكْتةُ السوداء؟ قال: هذا يوم القيامة تَقُوم في يوم الجمعة، ونحن ندعوه عندنا (المزيد) قال: قلت: ما يومُ المزيد؟ قال: إنَّ الله جعل في الجنة واديًا أفيح، وجعل فيه كُثْبانًا من المسك الأبيض، فإذا كان يومُ الجمعة ينزلُ الله فيه فوضعت فيه منابر من ذهب للأنبياء وكراسي من درٍّ للشهداءٍ، وينزلن الحورُ العينُ من الغُرف فحمدوا الله ومَجَّدوه، قال: ثم يقول الله: اكسوا عبادي فيكسون، ويقول: أطعموا عبادي فيطعمون، ويقول: اسقوا عبادي فيسقون، ويقول: طيِّبوا عبادي فيطيبون، ثم يقول: ماذا تُريدون؟ فيقولون: ربنا رضوانك، قال: يقول: رضيت عنكم ثم يأمرهم فينطلقون وتصعدُ الحورُ العين الغرفَ، وهي من زمردةٍ خضراء ومن ياقوتةٍ حمراء » . ( يع ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ৯১ 

উম্মতে মুহাম্মাদির প্রতি অনুগ্রহ


৯১. ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্বের উম্মতের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হচ্ছে আসর সালাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। আহলে তাওরাতকে তাওরাত প্রদান করা হয়েছে, তারা তার ওপর দিনের অর্ধেক আমল করে অতঃপর অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, তাই তাদেরকে এক কিরাত[১] এক কিরাত দেয়া হয়েছে। অতঃপর আহলে ইঞ্জিলকে ইঞ্জিল দেয়া হয়েছে, তারা তার ওপর আমল করেছে আসর সালাত পর্যন্ত, অতঃপর তারা অক্ষমতা প্রকাশ করেছে, তাই তাদেরকে এক কিরাত এক কিরাত দেয়া হয়েছে। অতঃপর তোমাদেরকে কুরআন দেয়া হয়েছে, তোমরা তার ওপর আমল করেছ সূর্যাস্ত পর্যন্ত, তাতেই তোমাদেরকে দুই কিরাত দুই কিরাত প্রদান করা হয়েছে। কিতাবিরা বলল: তারা আমাদের তুলনায় আমলে কম, কিন্তু সওয়াবে অধিক। আল্লাহ বললেন: আমি কি তোমাদের হক থেকে সামান্য বঞ্চিত করেছি? তারা বলল: না, তিনি বললেন: এটা আমার অনুগ্রহ, আমি যাকে চাই দান করি”। [বুখারি] হাদিসটি সহিহ।

[১] দ্বীনার মুদ্রা মানের ক্ষুদ্র অংশকে কিরাত বলা হয়।

91- عَنْ ابْنِ عُمَرَ -رضي الله عنهما- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَنْ سَلَفَ مِنْ الْأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ, أُوتِيَ أَهْلُ التَّوْرَاةِ التَّوْرَاةَ فَعَمِلُوا بِهَا حَتَّى انْتَصَفَ النَّهَارُ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا، ثُمَّ أُوتِيَ أَهْلُ الْإِنْجِيلِ الْإِنْجِيلَ فَعَمِلُوا بِهِ حَتَّى صُلِّيَتْ الْعَصْرُ ثُمَّ عَجَزُوا فَأُعْطُوا قِيرَاطًا قِيرَاطًا، ثُمَّ أُوتِيتُمْ الْقُرْآنَ فَعَمِلْتُمْ بِهِ حَتَّى غَرَبَتْ الشَّمْسُ فَأُعْطِيتُمْ قِيرَاطَيْنِ قِيرَاطَيْنِ، فَقَالَ: أَهْلُ الْكِتَابِ هَؤُلَاءِ أَقَلُّ مِنَّا عَمَلاً وَأَكْثَرُ أَجْرًا، قَالَ اللَّهُ: هَلْ ظَلَمْتُكُمْ مِنْ حَقِّكُمْ شَيْئًا؟ قَالُوا: لَا، قَالَ: فَهُوَ فَضْلِي أُوتِيهِ مَنْ أَشَاءُ » . ( خ ) صحيح





*******************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url