প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-১৫]





হযরত হামযা ও উমরের ইসলাম গ্রহণ এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বয়কট


হামযার ইসলাম গ্রহণ

(যিলহাজ্জ ৬ষ্ঠ নববী বর্ষ)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সরাসরি দৈহিক আক্রমণের দুঃসাহস দেখানোর কঠিন সময়ে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে কুরায়েশ বীর হযরত হামযা ইসলাম কবুল করেন।

হামযার ইসলাম গ্রহণের প্রত্যক্ষ কারণ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ৬ষ্ঠ নববী বর্ষের শেষ দিকে যিলহাজ্জ মাসের কোন এক দিনে ছাফা পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাবার সময় আবু জাহল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে অশ্লীল ভাষায় তাঁকে ও তাঁর দ্বীনকে গালি দেন।[1] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নীরবে সবকিছু সহ্য করেন ও চুপচাপ বাড়ী ফিরে যান। আবু জাহল অতঃপর কা‘বাগৃহের নিকটে গিয়ে তার দলবলের সাথে বসে উক্ত কাজের জন্য বড়াই করতে থাকেন।

আব্দুল্লাহ বিন জুদ‘আনের জনৈকা দাসী ছাফা পাহাড়ে তার বাসা থেকে এ দৃশ্য অবলোকন করে। ঐ সময় হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব মৃগয়া থেকে তীর-ধনুকে সজ্জিত অবস্থায় ঘরে ফিরছিলেন। তখন উক্ত দাসী তার নিকটে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ছুটলেন আবু জাহলের খোঁজে। তিনি গিয়ে আবু জাহলকে মাসজিদুল হারামে পেলেন। অতঃপর তীব্র ভাষায় তাকে গালি দেন ও তার মাথায় ধনুক দিয়ে এমন জোরে আঘাত করেন যে, আবু জাহল তাতে রক্তাক্ত হয়ে যান। অতঃপর বলেন, তুমি তাকে গালি দিয়েছ, অথচ আমি তার দ্বীনের উপরে আছি। আমি তাই বলি যা সে বলে’। অতঃপর আবু জাহলের বনু মাখযূম গোত্র এবং হামযার বনু হাশেম গোত্র পরস্পরের বিরুদ্ধে চড়াও হয়। তখন আবু জাহল বলেন, তোমরা আবু উমারাহ (হামযা)-কে ছাড়। আমি তার ভাতিজা (মুহাম্মাদ)-কে নিকৃষ্ট ভাষায় গালি দিয়েছি’।[2] এভাবে আবু জাহল নিজের দোষ স্বীকার করে নিজ গোত্রকে নিরস্ত করেন। ফলে আসন্ন খুনোখুনি থেকে উভয় পক্ষ বেঁচে যায়। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’।[3] তবে ঘটনাটি অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া এটি আক্বীদা বা আহকামগত বিষয় নয়। এ ঘটনায় আবু জাহলের নেতৃত্ব গুণের পরিচয় পাওয়া যায়।

বলা বাহুল্য, হামযার এই ইসলাম কবুলের ঘোষণাটি ছিল আকস্মিক এবং ভাতিজার প্রতি ভালোবাসার টানে। পরে আল্লাহ তাঁর অন্তরকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন এবং তিনি নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে শক্তিশালী ও নির্ভর কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হন। বস্ত্ততঃ এটি ছিল রাসূল (ছাঃ) ও নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হ’তে বিশেষ রহমত এবং একটি দৃঢ় রক্ষাকবচ।

[1]. এখানে মানছূরপুরী ও মুবারকপুরী উভয়ে লিখেছেন, অতঃপর আবু জাহল পাথর উঠিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর মাথায় ছুঁড়ে মারেন। তাতে ফিনকি দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/৬৩; আর-রাহীক্ব ১০০ পৃঃ)। তারা একথার কোন সূত্র বর্ণনা করেননি এবং অন্য কোথাও এর সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
[2]. ইবনু হিশাম ১/২৯১-৯২; হাকেম হা/৪৮৭৮; বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/২১৩; সনদ যঈফ।
[3]. হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৫৪৬০; মা শা-‘আ ৫৩ পৃঃ।

ওমরের ইসলাম গ্রহণ

(৬ষ্ঠ নববী বর্ষের যিলহাজ্জ মাস)
হযরত হামযার ইসলাম গ্রহণের মাত্র তিন দিন পরেই আল্লাহর অপার অনুগ্রহে আরেকজন কুরায়েশ বীর হযরত ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব আকস্মিকভাবে মুসলমান হয়ে যান। ওয়াক্বেদীর হিসাব মতে, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর এবং তখন মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৫৬ জন। যাদের মধ্যে ১০ বা ১১ জন ছিলেন নারী। এটি ছিল হাবশায় প্রথম হিজরতের পরের ঘটনা।[1] ইবনু কাছীর বলেন, ওমরকে দিয়ে মুসলমানের সংখ্যা ৪০ পূর্ণ হয়, কথাটি সঠিক নয়। কেননা তার পূর্বে ৮০ জনের উপরে মুসলমান হাবশায় হিজরত করেছিল। তবে এটি হ’তে পারে যে, দারুল আরক্বামে গিয়ে ইসলাম কবুল করার সময়ে সেখানে মুসলিম নারী-পুরুষের সংখ্যা ছিল ৪০-এর কাছাকাছি (আল-বিদায়াহ ৩/৭৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে ৩৯ জন (ঐ, ৩০ পৃঃ)। ফলে সেদিন ওমরকে দিয়ে ৪০ পূর্ণ হয়।

তিনি যে আগে থেকেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন তার প্রমাণ হিসাবে বলা যায় যে, হাবশা যাত্রী মহিলা মুহাজির উম্মে আব্দুল্লাহ বিনতে আবু হাছমাহ (أبو حَثْمَة) বলেন, আমরা হাবশা যাত্রার প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলাম। আমার স্বামী ‘আমের তখন প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে ছিলেন। এমন সময় ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব এলেন। তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। বললেন, এগুলি মনে হয় চলে যাওয়ার প্রস্ত্ততি? বললাম, হ্যাঁ। আমরা অবশ্যই আল্লাহর যমীনে বেরিয়ে যাব। তোমরা আমাদের কষ্ট দিচ্ছ ও নির্যাতন করছ। নিশ্চয়ই আল্লাহ একটা পথ বের করে দিবেন’। তখন ওমর বললেন, صَحِبَكُمُ اللهُ ‘আল্লাহ তোমাদের সাথী হৌন’! এদিন আমি তাকে অত্যন্ত দুঃখিত ও সংবেদনশীল দেখতে পাই’।[2] রাবী আব্দুল্লাহ বিন ‘আমের জ্যেষ্ঠ তাবেঈ ছিলেন। যিনি প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে তার মায়ের সূত্রে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী তার সমালোচনা করেননি। ইবনু হিববান তার বিশুদ্ধতার সাক্ষ্য দিয়েছেন’।[3] তবে হাফেয ইবনু হাজার বলেন, বোন ফাতেমার গৃহে প্রবেশ ও তার নিকট থেকে কুরআন শ্রবণ তাঁর ইসলাম গ্রহণের প্রত্যক্ষ কারণ হ’তে পারে।[4] কিন্তু উক্ত বিষয়ে বর্ণিত প্রসিদ্ধ ঘটনাটির সনদ ‘যঈফ’।[5]

এছাড়াও মতনে বৈপরিত্য আছে। যেমন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, কুরায়েশ নেতারা তাকে পাঠিয়েছিলেন। কোন বর্ণনায় এসেছে, তিনি নিজ থেকে গিয়েছিলেন’ (ইবনু সা‘দ, দারাকুৎনী)। কোন বর্ণনায় এসেছে, তিনি বোনের ঘরে সূরা ত্বোয়াহা ও সূরা তাকভীর ১৪ আয়াত পর্যন্ত পড়েছিলেন’ (ইবনু হিশাম ১/৩৪৫)। কোন বর্ণনায় এসেছে সূরা হাদীদ’ পড়েছিলেন (বায়হাক্বী, দালায়েল হা/৫১৮)। অথচ সূরা হাদীদ মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে বায়তুল্লাহতে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত অবস্থায় সূরা হা-ক্কাহ শুনে তার অন্তরে ইসলাম দৃঢ় হয়’ (আহমাদ হা/১০৭)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি রাতের বেলা কা‘বার গেলাফের মধ্যে লুকিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের ক্বিরাআত শুনছিলেন। তিনি বলেন, এমন কথা আমি কখনো শুনিনি। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বেরিয়ে গেলে আমি তাঁর পিছু নেই। তখন তিনি বললেন, কে? আমি বললাম, ওমর। তিনি বললেন, হে ওমর! দিনে-রাতে কখনোই তুমি আমার পিছু নিতে ছাড়ো না’। আমি ভয় পেয়ে গেলাম যে, উনি আমাকে বদ দো‘আ করতে পারেন। তখন আমি কালেমা শাহাদাত পাঠ করলাম। রাসূল (ছাঃ) বললেন, يَا عُمَرُ، اُسْتُرْهُ ‘হে ওমর! এটি গোপন রাখ’। আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, আমি অবশ্যই প্রকাশ করব, যেভাবে শিরক প্রকাশ করতাম’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৭৭৫৪)। বর্ণনাগুলি সবই যঈফ’ (মা শা-‘আ ৫৭ পৃঃ)। উল্লেখ্য যে, দুর্বল সূত্র সমূহের আধিক্য সবসময় কোন বর্ণনার শক্তি বৃদ্ধি করেনা। বরং অনেক সময় তার দুর্বলতাই বৃদ্ধি করে। মুহাদ্দিছ বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন’ (মা শা-‘আ ৫৯ পৃঃ)।

আমরা মনে করি ওমরের ইসলাম গ্রহণ ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর বিশেষ দো‘আর ফল। কেননা তিনি তাঁর জন্য খাছভাবে দো‘আ করেছিলেন, اللهُمَّ أَعِزَّ الإِسْلاَمَ بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ‘হে আল্লাহ! তুমি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব-এর মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী কর’।[6] অন্য বর্ণনায় এসেছে, اللهُمَّ أَعِزَّ الإِسْلاَمَ بِأَحَبِّ هَذَيْنِ الرَّجُلَيْنِ إِلَيْكَ بِأَبِى جَهْلٍ أَوْ بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ‘হে আল্লাহ! আবু জাহল অথবা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব এই দুই ব্যক্তির মধ্যে যিনি তোমার নিকট অধিক প্রিয়, তার মাধ্যমে তুমি ইসলামকে শক্তিশালী কর’।[7] পরের দিন সকালে ওমর দারুল আরক্বামে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ইসলাম কবুল করেন এবং কা‘বাগৃহে গিয়ে প্রকাশ্যে ছালাত আদায় করেন’।[8] এতে প্রমাণিত হয় যে, ওমরই ছিলেন আল্লাহর নিকটে অধিকতর প্রিয় ব্যক্তি।[9]

তবে এটা নিশ্চিত যে, ওমর ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী এবং আরবী ভাষালংকারে অভিজ্ঞ ব্যক্তি। ফলে কুরআনের সারগর্ভ ও আকর্ষণীয় বাকভঙ্গি এবং ক্বিয়ামত ও জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনাসমূহ তাঁর হৃদয়ে গভীরভাবে রেখাপাত করে। যা তাকে ইসলামের দিকে চুম্বকের মত টেনে আনে। সর্বোপরি রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আ তাঁর শানে কবুল হওয়ায় তিনি দ্রুত এসে ইসলাম কবুল করেন।

[1]. ইবনু হিশাম ১/৩৪২; সীরাহ ছহীহাহ ১/১৭৭ পৃঃ।
[2]. ইবনু হিশাম ১/৩৪২-৪৩; আল-বিদায়াহ ৩/৭৭; সীরাহ ছহীহাহ ১/১৭৭ পৃঃ।
[3]. সীরাহ ছহীহাহ, টীকা-১, ১/১৭৮ পৃঃ।
[4]. বুখারী, ফাৎহসহ হা/৩৮৬২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[5]. মা শা-‘আ ৫৪ পৃঃ; ইবনু হিশাম ১/৩৪৩-৪৮; বোনের ঘটনাটি বর্ণনা শেষে রাবী ইবনু ইসহাক বলেন, فَهَذَا حَدِيثُ الرُّوَاةِ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ عَنْ إسْلاَمِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ حِينَ أَسْلَمَ ‘এটিই হ’ল ওমরের ইসলাম গ্রহণকালের ঘটনা সম্পর্কে মদীনাবাসী বর্ণনাকারীদের বক্তব্য’। অতঃপর কা‘বাগৃহে রাত্রিবেলায় ছালাতরত অবস্থায় গোপনে রাসূল (ছাঃ)-এর ক্বিরাআত শুনে বিগলিত ওমর সাথে সাথে ইসলাম কবুল করেন এবং রাসূল (ছাঃ) তার বুকে হাত মেরে ঈমানের উপর তার দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন’ বলে ঘটনাটি বর্ণনা শেষে রাবী ইবনু ইসহাক বলেন, وَاللهُ أَعْلَمُ أَيَّ ذَلِكَ كَانَ ‘আল্লাহই সর্বাধিক অবগত কোন্টি ঘটেছিল’ (ইবনু হিশাম ১/৩৪৮)।
[6]. হাকেম হা/৪৪৮৫; আহমাদ হা/৫৬৯৬; ইবনু মাজাহ হা/১০৫; ছহীহাহ হা/৩২২৫।
[7]. তিরমিযী হা/৩৬৮১, হাদীছ ছহীহ।
[8]. হাকেম হা/৬১২৯; আহমাদ হা/৫৬৯৬; তিরমিযী হা/৩৬৮১; মিশকাত হা/৬০৩৬, ‘ওমরের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ।
[9]. এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যে, لَمَّا أَسْلَمَ عُمَرُ نَزَلَ جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَقَدِ اسْتَبْشَرَ أَهْلُ السَّمَاءِ بِإِسْلاَمِ عُمَرَ ‘যখন ওমর ইসলাম কবুল করেন, তখন জিব্রীল অবতরণ করেন এবং বলেন, হে মুহাম্মাদ! ওমরের ইসলাম গ্রহণে আসমানবাসীগণ খুবই খুশী হয়েছেন’ (ইবনু মাজাহ হা/১০৩)। আলবানী বলেন, হাদীছটির সনদ অত্যন্ত দুর্বল (ضَعِيْفٌ جِدًّا)।

উল্লেখ্য যে, ওমরের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে যেসব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, তার কোনটিও বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়’ (মা শা-‘আ ৫৪ পৃঃ)। ইবনু আব্দিল বার্র (রহঃ) ওমরের ইসলাম গ্রহণের আকর্ষণীয় ঘটনা বর্ণনা শেষে বলেন, هذا حديث حسن الألفاظ، ضعيف السند ‘এটি সুন্দর শব্দময় বর্ণনা, কিন্তু সনদ দুর্বল’ (মা শা-‘আ ৫৯ পৃঃ, গৃহীত : আত-তামহীদ ২৪/৩৪৭)।

ওমরের ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী ঘটনা

ইসলাম কবুলের পরপরই তিনি ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন আবু জাহলের গৃহে গমন করেন এবং তার মুখের উপরে বলে দেন, جِئْتُ لِأُخْبِرَكَ أَنِّي قَدْ آمَنْتُ بِاللهِ وَبِرَسُولِهِ مُحَمَّدٍ، وَصَدَّقْتُ بِمَا جَاءَ بِهِ ‘আমি তোমার কাছে এসেছি এ খবর দেওয়ার জন্য যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদের উপরে ঈমান এনেছি এবং তিনি যে শরী‘আত এনেছেন, আমি তা সত্য বলে জেনেছি’। একথা শুনেই আবু জাহল সরোষে তাকে গালি দিয়ে বলে ওঠেন, قَبَّحَكَ اللهُ، وَقَبَّحَ مَا جِئْتَ بِهِ ‘আল্লাহ তোমার মন্দ করুন এবং তুমি যে খবর নিয়ে এসেছ, তার মন্দ করুন’। অতঃপর তার মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে ভিতরে চলে যান।[1]

পুত্র আব্দুল্লাহ বিন ওমর বালক অবস্থায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে বলেন, এরপর ওমর গেলেন সে সময়ের সেরা মাউথ মিডিয়া জামীল বিন মা‘মার আল-জুমাহীর (جميل بن معمر الجمحي) কাছে এবং তাকে বললেন যে, আমি মুসলমান হয়ে গেছি’। সে ছিল কুরায়েশ বংশের সেরা ঘোষক এবং অত্যন্ত উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী। গুরুত্বপূর্ণ কোন সংবাদ তার মাধ্যমেই সর্বত্র প্রচার করা হ’ত। ওমর (রাঃ)-এর মুখ থেকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর শোনামাত্র সে বেরিয়ে পড়ল। আর চিৎকার দিয়ে সবাইকে শুনাতে থাকল, أَلاَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَدْ صَبَأَ ‘শুনে রাখো, খাত্ত্বাবের পুত্র ওমর ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে’। ওমর (রাঃ) তার পিছনেই ছিলেন। তিনি বললেন, كَذَبَ، وَلَكِنِّي قَدْ أَسْلَمْتُ ‘সে মিথ্যা বলেছে। বরং আমি মুসলমান হয়েছি’। একথা শোনা মাত্র চারিদিক থেকে লোক জমা হয়ে গেল এবং সকলে ওমরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণপিটুনী শুরু করল। এই মারপিট দুপুর পর্যন্ত চলল। এ সময় কাফিরদের উদ্দেশ্যে ওমর (রাঃ) আল্লাহর কসম দিয়ে বলেন, لَوْ قَدْ كُنَّا ثَلاَثَ ماِئَةِ رَجُلٍ لَقَدْ تَرَكْنَاهَا لَكُمْ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا لَنَا ‘যদি আমরা আজ সংখ্যায় তিনশ’ পুরুষ হ’তাম, তবে দেখতাম মক্কায় তোমরা থাকতে, না আমরা থাকতাম’ (ইবনু হিশাম ১/৩৪৯)।

এই ঘটনার পর নেতারা ওমরকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাড়ী আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিল। ওমর (রাঃ) ঘরের মধ্যেই ছিলেন। এমন সময় তাদের গোত্রের সঙ্গে সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ বনু সাহম গোত্রের জনৈক নেতা ‘আছ বিন ওয়ায়েল সাহ্মী সেখানে এসে উপস্থিত হ’লেন। ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, আমি মুসলমান হয়েছি বিধায় আপনার সম্প্রদায় আমাকে হত্যা করতে চায়’। তিনি বলে উঠলেন, لاَ سَبِيلَ إِلَيْكَ ‘কখনোই তা হবার নয়’। বলেই তিনি সোজা চলে গেলেন জনতার সামনে। জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এখানে জটলা করছ কেন? তারা বলল, هَذَا ابْنَ الْخَطَّابِ الَّذِى صَبَأَ ‘ইবনুল খাত্ত্বাব ধর্মত্যাগী হয়ে গেছে’। তিনি বললেন, لاَ سَبِيلَ إِلَيْهِ ‘যাও! সেখানে যাবার কোন প্রয়োজন নেই’। তার কাছে একথা শুনে লোকেরা ফিরে গেল।[2]

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, مَا كُنَّا نَقْدِرُ عَلَى أَنْ نُصَلِّيَ عِنْدَ الْكَعْبَةِ، حَتَّى أَسْلَمَ عُمَرُ، فَلَمَّا أَسْلَمَ قَاتَلَ قُرَيْشًا حَتَّى صَلَّى عِنْدَ الْكَعْبَةِ، وَصَلَّيْنَا مَعَهُ- ‘ওমর ইসলাম গ্রহণের আগ পর্যন্ত আমরা কা‘বাগৃহে ছালাত আদায়ে সক্ষম হইনি। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর কুরায়েশদের সাথে লড়াই করেন ও কা‘বাগৃহে ছালাত আদায় করেন এবং আমরা তাঁর সাথে ছালাত আদায় করি’ (ইবনু হিশাম ১/৩৪২)। তিনি আরও বলেন, مَا زِلْنَا أَعِزَّةً مُنْذُ أَسْلَمَ عُمَرُ ‘ওমরের ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমরা সর্বদা শক্তিশালী ছিলাম’ (বুখারী হা/৩৬৮৪)। ওমর (রাঃ) যখন আততায়ীর দ্বারা আহত হন, তখন ইবনু আববাস (রাঃ) তাঁর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যখন আপনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তখন আপনার ইসলাম ছিল শক্তিশালী। আল্লাহ আপনার মাধ্যমে ইসলামকে, আল্লাহর রাসূলকে ও তাঁর সাথীদেরকে বিজয়ী করেন’।[3]

[1]. ইবনু হিশাম ১/৩৫০। ওমরের পরিবারের কোন এক ব্যক্তির সূত্রে ইবনু ইসহাক এটি বর্ণনা করেছেন, তার নাম উল্লেখ না করায় বর্ণনাটি যঈফ।
[2]. বুখারী হা/৩৮৬৪ ‘ওমরের ইসলাম গ্রহণ’ অনুচ্ছেদ।

এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, মুজাহিদ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে বললেন,يَا رَسُولَ اللهِ أَلَسْنَا عَلَى الْحَقِّ إِنْ مِتْنَا وَإِنْ حَيِينَا؟ قَالَ: بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّكُمْ لَعَلَى الْحَقِّ إِنْ مُتُّمْ وَإِنْ حَيِيتُمْ قَالَ: فَقُلْتُ: فَفِيمَ الِإِخْتِفَاءُ؟ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَنُخْرُجَنَّ- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি হক-এর উপরে নই? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যার হাতে আমার জীবন, তার কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই তোমরা সত্যের উপরে আছ। চাই তোমরা মৃত্যুবরণ কর অথবা জীবিত থাক’। তখন ওমর বললেন, তাহ’লে লুকিয়ে থাকার কি প্রয়োজন? যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন তার কসম করে বলছি, অবশ্যই আমরা প্রকাশ্যে বের হব’।

অতঃপর দুই সারির মাথায় ওমর ও হামযার নেতৃত্বে মুসলমানগণ প্রকাশ্যে মিছিল সহকারে মাসজিদুল হারামে উপস্থিত হ’লেন। ওমর (রাঃ) বলেন, এই দিন আমাকে ও হামযাকে মুসলমানদের মিছিলের পুরোভাগে দেখে কুরায়েশ নেতারা যত বেশী আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল, এমন আঘাত তারা কখনোই পায়নি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এদিনই আমাকে الْفَارُوقُ (হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী) উপাধি দান করেন’ (আবু নু‘আইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া ১/৪০ পৃঃ; সনদ যঈফ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩০৬২; আর-রাহীক্ব ১০৫ পৃঃ)।

তবে তাঁর লকব যে ‘ফারূক্ব’ ছিল, তা তাঁর সম্পর্কে আবুবকর (রাঃ)-এর মন্তব্য দ্বারা প্রমাণিত (আলবানী, যিলালুল জান্নাহ হা/১১৫৩, সনদ ছহীহ)। ইবনু হাজার বলেন, ওমর (রাঃ)-এর লকব ছিল ‘ফারূক্ব’, এ বিষয়ে সকল বিদ্বান একমত। কিন্তু উক্ত লকব প্রথমে কে দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে বলা হয়ে থাকে যে, রাসূল (ছাঃ) প্রথম এই লকব দিয়েছিলেন। কেউ বলেছেন, আহলে কিতাবগণ। কেউ বলেছেন, জিব্রীল এটা দিয়েছিলেন’ (ফাৎহুল বারী ‘ওমরের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ হা/৩৬৭৯-এর পূর্বের আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
[3]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৫৭৯, হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৪৪৬৩, সনদ হাসান; সীরাহ ছহীহাহ ১৭৯ পৃঃ।

বনু হাশিম ও বনু মুত্ত্বালিব গোত্রের প্রতি আবু ত্বালিবের আহবান

হামযা ও ওমর (রাঃ)-এর পরপর মুসলমান হয়ে যাওয়ায় কুরায়েশরা দারুণভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে এতে মুসলমানদের মধ্যে আনন্দ ও সাহসের সঞ্চার হ’লেও দূরদর্শী ও স্নেহশীল চাচা আবু ত্বালিবের বুকটা ভয়ে সব সময় দুরু দুরু করত কখন কোন মুহূর্তে শয়তানেরা আকস্মিকভাবে মুহাম্মাদকে হামলা করে মেরে ফেলে। সবদিক ভেবে তিনি একদিন স্বীয় প্রপিতামহ ‘আব্দে মানাফের দুই পুত্র হাশেম ও মুত্ত্বালিবের বংশধরগণকে একত্রিত করলেন। অতঃপর তাদের সামনে বললেন, এতদিন আমি এককভাবে ভাতিজা মুহাম্মাদের তত্ত্বাবধান করেছি। কিন্তু এখন এই চরম বার্ধক্যে ও প্রচন্ড বৈরী পরিবেশে আমার পক্ষে এককভাবে আর মুহাম্মাদের নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব নয়। সেকারণ আমি তোমাদের সকলের সহযোগিতা চাই’।

গোত্রনেতা আবু ত্বালিবের এই আহবানে ও গোত্রীয় আকর্ষণে সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন এবং মুহাম্মাদের হেফাযতের ব্যাপারে সবাই একযোগে তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। একমাত্র চাচা আবু লাহাব বিরোধিতা করল এবং সে মুহাম্মাদের বিপক্ষ দলের প্রতি সমর্থন দানের ঘোষণা দিল’ (ইবনু হিশাম ১/২৬৯; আর-রাহীক্ব ১০৮ পৃঃ)।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
(১) সংস্কার আন্দোলনে অগ্রগতির জন্য শক্তিশালী ও সাহসী পুরুষের অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী আন্দোলনে এজন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত প্রয়োজন হয়। হামযা ও ওমরের ইসলাম গ্রহণ ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আ ও আল্লাহর বিশেষ রহমতের প্রতিফলন।

(২) মানুষের ইচ্ছার বাইরে আল্লাহর ইচ্ছাই যে বাস্তবায়িত হয়, হামযা ও ওমরের ইসলাম গ্রহণ তার বাস্তব প্রমাণ। তাদের দু’জনের কেউই ইসলাম গ্রহণের জন্য বের হননি। ঘটনাক্রমে দু’জনেই আকস্মিকভাবে মুসলমান হয়ে যান।

(৩) দল শক্তিশালী হ’লে বিরোধিতাও শক্তিশালী হবে এবং মূল নেতার উপরে চূড়ান্ত হামলা হবে- এটা সর্বদা উপলব্ধি করতে হবে দলের সহযোগী নেতৃবৃন্দকে। আবু তালিবের দূরদর্শী সিদ্ধান্তে আমরা সেটাই দেখতে পাই।

সর্বাত্মক বয়কট

(মুহাররম ৭ম নববী বর্ষ)
এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া পরপর চারটি ঘটনায় মুশরিক নেতাদের মধ্যে যেমন আতংক সৃষ্টি হয়, তেমনি মুহাম্মাদ ও তার সাথীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। ঘটনাগুলি ছিল যথাক্রমে-
(১) মুহাম্মাদকে প্রদত্ত আপোষ প্রস্তাব ও লোভনীয় প্রস্তাব সমূহ নাকচ হওয়া।
(২) হামযার ইসলাম গ্রহণ ও সরাসরি আবু জাহেলের উপরে হামলা করা।
(৩) ওমরের ইসলাম গ্রহণ ও সরাসরি আবু জাহলের বাড়ীতে গিয়ে তার মুখের উপর তার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ দেওয়া। অতঃপর মুসলমানদের নিয়ে প্রকাশ্যে ধর্মীয় বিধি-বিধান সমূহ পালন শুরু করা এবং
(৪) সবশেষে আবু ত্বালিবের আহবানে সাড়া দিয়ে বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের মুসলিম-কাফির সকলের পক্ষ হ’তে মুহাম্মাদকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দানের অঙ্গীকার ঘোষণা করা। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুশরিক নেতৃবৃন্দ মুহাছছাব (وادى المحصّب) উপত্যকায় সমবেত হয় এবং বিস্তারিত আলোচনার পর বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব গোত্রদ্বয়ের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন (বুখারী হা/১৫৯০, মুসলিম হা/১৩১৪)।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকলে এই মর্মে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেন যে, (১) বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের সাথে বিয়ে-শাদী বন্ধ থাকবে (২) তাদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও যাবতীয় লেন-দেন বন্ধ থাকবে (৩) তাদের সাথে উঠাবসা, মেলা-মেশা, কথাবার্তা ও তাদের বাড়ীতে যাতায়াত বন্ধ থাকবে- যতদিন না তারা মুহাম্মাদকে হত্যার জন্য তাদের হাতে তুলে দিবে।

৭ম নববী বর্ষের ১লা মুহাররমের রাতে সম্পাদিত উক্ত অঙ্গীকারনামাটি কা‘বাগৃহের ভিতরে টাঙিয়ে রাখা হ’ল। উক্ত অঙ্গীকারনামার লেখক বাগীয বিন ‘আমের(بَغِيضُ بْنُ عَامِرِ) এর প্রতি রাসূল (ছাঃ) বদ দো‘আ করেন। ফলে তার হাতটি অবশ ও অকেজো হয়ে যায়।[1]

[1]. ইবনু ইসহাক বলেন, লেখকের নাম ছিল মানছূর বিন ইকরিমা বিন ‘আমের বিন হাশেম। ইবনু হিশাম বলেন, তার নাম ছিল নাযার বিন হারেছ’ (ইবনু হিশাম ১/৩৫০)। ইবনু কাছীর বলেন, মানছূর বিন ইকরিমা নামটি অধিক প্রসিদ্ধ। কেননা কুরায়েশরা তাকে দেখিয়ে বলত, انْظُرُوا إِلَى مَنْصُورِ بْنِ عِكْرِمَةَ ‘তোমরা মানছূর বিন ইকরিমার দিকে তাকাও’। তিনি বলেন, ওয়াক্বেদী বলেছেন, তার নাম ছিল ত্বালহা বিন আবু ত্বালহা ‘আবদাভী’ (আল-বিদায়াহ ৩/৮৬)। তবে ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, ‘বাগীয বিন ‘আমের বিন হাশেম’ নামটিই সঠিক’ (যাদুল মা‘আদ ৩/২৭)। হ’তে পারে মূল লেখকের সাথে অন্যেরা সহযোগী ছিলেন। -লেখক।

শে‘আবে আবু ত্বালিবে তিন বছর

উপরোক্ত অন্যায় চুক্তি সম্পাদনের ফলে বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব উভয় গোত্রের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নিদারুণ কষ্টের সম্মুখীন হ’ল। সঞ্চিত খাদ্যশস্য ফুরিয়ে গেলে তাদের অবস্থা চরমে ওঠে। ফলে তারা গাছের ছাল-পাতা খেয়ে জীবন ধারণে বাধ্য হন। নারী ও শিশুরা ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করত। তাদের ক্রন্দন ধ্বনি গিরি-সংকটের বাইরের লোকেরা শুনতে পেত। ফলে কেউ কেউ অতি সংগোপনে তাদের কাছে খাদ্য পৌঁছাতো। একবার হাকীম বিন হেযাম স্বীয় ফুফু খাদীজা (রাঃ)-এর নিকটে গম পৌঁছাতে গিয়ে আবু জাহলের হাতে ধরা পড়ে যান। কিন্তু আবুল বাখতারীর হস্তক্ষেপে অবশেষে সমর্থ হন। হারামের চার মাস ব্যতীত অবরুদ্ধ গোত্রদ্বয়ের লোকেরা বের হ’তে পারতেন না। যেসব কাফেলা বাহির থেকে মক্কায় আসত, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য-শস্য ক্রয়ে বাধা ছিল না। কিন্তু সেক্ষেত্রেও মক্কার ব্যবসায়ীরা জিনিষ-পত্রের এমন চড়া মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল যে, তা ক্রয় করা প্রায় অসম্ভব ছিল। অন্যদিকে আবু তালিবের দুশ্চিন্তা ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর জীবন নিয়ে। রাতের বেলা সকলে শুয়ে যাওয়ার পর তিনি রাসূলকে উঠিয়ে এনে তার বিশ্বস্ত নিকটাত্মীয়দের সাথে বিছানা বদল করাতেন। যাতে কেউ তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ না পায়। উক্ত কঠোর অবরোধ চলাকালীন সময়েও হজ্জের মওসুমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বহিরাগত কাফেলা সমূহের তাঁবুতে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত দিতেন। ওদিকে চাচা আবু লাহাব তাঁর পিছে পিছে গিয়ে লোকদেরকে তাঁর কথা না শোনার জন্য বলতেন (আর-রাহীক্ব ১১০ পৃঃ)।

অঙ্গীকারনামা ছিন্ন ও বয়কটের সমাপ্তি

প্রায় তিন বছর পূর্ণ হ’তে চলল। ইতিমধ্যে মুশরিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও দ্বিধা-বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিল। যারা এই অন্যায় চুক্তিনামার বিরোধী ছিল, তারা ক্রমেই সংগঠিত হ’তে লাগল। বনু ‘আমের বিন লুওয়াই গোত্রের হেশাম বিন আমরের উদ্যোগে যোহায়ের বিন আবু উমাইয়া ও মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী সহ পাঁচজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি হারামের নিকটবর্তী ‘হাজূন’ নামক স্থানে বসে এ ব্যাপারে একমত হন এবং তাঁদের পক্ষে যোহায়ের কা‘বাগৃহ তাওয়াফ শেষে প্রথম সরাসরি আবু জাহলের মুখের উপরে উক্ত চুক্তিনামাটি ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দেন। সাথে সাথে বাকী চারজন পরপর তাকে সমর্থন করেন। আবু জাহ্ল বললেন, বুঝেছি। তোমরা রাতের বেলা অন্যত্র পরামর্শ করেই এসেছ’। ঐ সময়ে আবু ত্বালিব কা‘বা চত্বরে হাযির হ’লেন। তিনি কুরায়েশ নেতাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আল্লাহ তাঁর রাসূলকে তোমাদের চুক্তিনামা সম্পর্কে অবহিত করেছেন যে, ‘আল্লাহ ঐ অঙ্গীকারপত্রের উপরে কিছু উঁই পোকা প্রেরণ করেছেন। তারা এর মধ্যকার বয়কট এবং যাবতীয় অন্যায় ও অত্যাচারমূলক কথাগুলো খেয়ে ফেলেছে, কেবল আল্লাহর নামগুলি ব্যতীত’। অতঃপর আবু ত্বালেব বললেন,فَإِنْ كَانَ كَاذِبًا خَلّيْنَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ وَإِنْ كَانَ صَادِقًا رَجَعْتُمْ عَنْ قَطِيعَتِنَا وَظُلِمْنَا ‘যদি সে মিথ্যা বলে থাকে, তাহ’লে তোমাদের ও তার মধ্য থেকে আমরা সরে দাঁড়াব। আর যদি তার কথা সত্য প্রমাণিত হয়, তাহ’লে তোমরা আমাদের প্রতি বয়কট ও যুলুম থেকে ফিরে যাবে’। আবু ত্বালিবের এই সুন্দর প্রস্তাবে সকলে সমস্বরে বলে উঠল,قَدْ أَنْصَفْتَ ‘আপনি ইনছাফের কথাই বলেছেন’। ওদিকে আবু জাহল ও মুত্ব‘ইম এবং অন্যান্যদের মধ্যে বাকযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী কা‘বাগৃহে প্রবেশ করে অঙ্গীকারনামাটি ছিঁড়ে ফেলার উদ্দেশ্যে বাইরে নিয়ে এলেন। দেখা গেল যে, সত্য সত্যই তার সব লেখাই পোকায় খেয়ে ফেলেছে কেবলমাত্র ‘বিসমিকা আল্লা-হুম্মা’ (‘আল্লাহ তোমার নামে শুরু করছি’) বাক্যটি এবং অন্যান্য স্থানের আল্লাহর নামগুলি ব্যতীত। এভাবে আবু ত্বালিবের মাধ্যমে প্রেরিত রাসূল (ছাঃ)-এর প্রাপ্ত অহীর সংবাদ সত্যে পরিণত হ’ল। কুরায়েশ নেতারা অবাক বিস্ময়ে তা অবলোকন করল। অতঃপর অঙ্গীকারনামাটি মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী সর্বসমক্ষে ছিঁড়ে ফেললেন এবং এভাবে বয়কটের অবসান ঘটল ঠিক তিন বছরের মাথায় ১০ম নববী বর্ষের মুহাররম মাসে’।[1]

নবুঅতের সত্যতার এ চাক্ষুষ প্রমাণ দেখেও নেতাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অহংকারী প্রবণতার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,وَإِن يَّرَوْا آيَةً يُّعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ ‘আর যদি তারা কোন নিদর্শন দেখে, তখন তারা এড়িয়ে যায় আর বলে এসব চলমান জাদু’ (ক্বামার ৫৪/২)।
বলা বাহুল্য সকল যুগের হঠকারী নাস্তিক ও মুনাফিকের চরিত্র একই রূপ।

[1]. ইবনু হিশাম ১/৩৭৪-৭৭। বর্ণনাগুলির সনদ যঈফ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ৩৬৮)। আল-বিদায়াহ ৬/১৮৬; যাদুল মা‘আদ ৩/২৬-২৮; আর-রাহীক্ব ১০৯-১১২।

বয়কট পর্যালোচনা

(১) ইবনু শিহাব যুহরীর হিসাব মতে বয়কট শুরু হয় ৭ম নববী বর্ষের শেষ দিকে। ফলে তাঁর হিসাবে মেয়াদ হয় দু’বছর। কিন্তু মূসা বিন উক্ববা দৃঢ়তার সাথে বলেন, এর মেয়াদ ছিল তিন বছর। কেননা ইবনু ইসহাক বলেছেন, ৭ম নববী বর্ষের মুহাররম মাসের শুরু থেকে বয়কটের সূচনা হয়।

(২) বয়কট সম্পর্কিত বিস্তারিত বর্ণনা সমূহের কোনটাই ছহীহ সনদে প্রমাণিত নয়। তবে এটা যে অবশ্যই ঘটেছিল তার মূল সূত্র পাওয়া যায় আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত ছহীহ হাদীছে। যেখানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে বলেন,مَنْزِلُنَا غَدًا إِنْ شَاءَ اللهُ بِخَيْفِ بَنِى كِنَانَةَ حَيْثُ تَقَاسَمُوا عَلَى الْكُفْرِ ‘আগামীকাল ইনশাআল্লাহ আমরা বনু কিনানাহ্র খায়েফ অর্থাৎ মুহাছ্ছাব উপত্যকায় অবতরণ করব। যেখানে তারা কুফরীর উপরে পরস্পরে কসম করেছিল’ (বুখারী হা/১৫৮৯)। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কুরায়েশ ও কিনানাহ গোত্র বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের বিরুদ্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল যে, তাদের সঙ্গে বিবাহ-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই বন্ধ থাকবে, যতদিন না তারা মুহাম্মাদকে আমাদের হাতে সোপর্দ করবে’ (বুখারী হা/১৫৯০)।

(৩) দীর্ঘ তিন বছর বয়কট অবস্থায় থেকে গাছের ছাল-পাতা খেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে বার্ধক্য জর্জরিত দেহ নিয়ে চাচা আবু ত্বালিব ও স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ) চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। একই অবস্থায় উপনীত হয়েছিলেন বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের মুমিন-কাফির শত শত আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। কত নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সে বয়কটে না খেয়ে ও বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল, তার হিসাব কে বলবে?

সমালোচকরা বলবেন, তারা জাহেলী যুগের লোক ছিল বলেই এই নিষ্ঠুরতা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু আধুনিক যুগের তথাকথিত ভদ্র নেতারা সে যুগের চাইতে উন্নত কিসে? বর্তমান যুগের গণতন্ত্রী ও মানবাধিকারের মোড়ল রাষ্ট্র আমেরিকা ও বৃটেন প্রভাবিত জাতিসংঘের অবরোধ আরোপের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ইরাকে অন্যূন ১৫ লাখ মুসলিম নর-নারী ও শিশু খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। অতঃপর ২০০৩ সালে ইরাকে ও আফগানিস্তানে সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইরাকে ১০ লাখ ও আফগানিস্তানে তারা বেহিসাব নর-নারী ও শিশুদের হত্যা করেছে। এখনও তাদের কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযানে হাযার হাযার বনু আদম নির্দয়ভাবে বিভিন্ন দেশে নিহত, পঙ্গু ও গৃহহারা হচ্ছে। সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপর তাদের বয়কট, অবরোধ ও হামলার মাধ্যমে এবং সার্বক্ষণিক চক্রান্তের মাধ্যমে সর্বত্র মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করে চলেছে। উদ্দেশ্য, স্রেফ ঐসব দেশের সম্পদ লুট করা এবং তাদের উপর প্রভুত্ব চাপিয়ে দেওয়া। অথচ এত বড় পশুত্ব ও হিংস্রতাকেও তারা অবলীলাক্রমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাস দমনের মহান সংগ্রাম বলে চালিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিয়োজিত শত শত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সেই মিথ্যাগুলোকে হাযারো কণ্ঠে প্রচার করছে। সেই সাথে তাদের বশংবদ রাষ্ট্রগুলো এইসব যুলুম ও অত্যাচারের পক্ষে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের উপর পরাশক্তিগুলির প্রতারণাপূর্ণ বয়কটকে একদিকে রাখুন, আর চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে মক্কার এই বয়কটকে আরেক দিকে রাখুন। দু’টির মধ্যে আসমান ও যমীনের পার্থক্য দেখতে পাবেন। যেমন (ক) আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ বয়কটের উদ্দেশ্য স্রেফ লুটপাট ও পররাজ্য গ্রাস এবং সাথে সাথে খৃষ্টানীকরণের ঘৃণ্য অপচেষ্টা। পক্ষান্তরে জাহেলী যুগের ঐ বয়কটের একমাত্র কারণ ছিল নীতি ও আদর্শের সংঘাত এবং শিরক ও তাওহীদের সংঘর্ষ। সেখানে লুটপাট, খুনোখুনি বা নারী নির্যাতনের নাম-গন্ধ ছিল না।

(খ) ইরাকের বিরুদ্ধে বয়কটের সময় মুসলিম ও আরব রাষ্ট্র গুলির প্রায় সকলে প্রকাশ্যে বা গোপনে যালেম ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন দেয়। কথিত আরব জাতীয়তাবাদের বন্ধন বা ইসলামী জাতীয়তার আকর্ষণ কোনটাই সেখানে কার্যকর হয়নি। অথচ বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব-এর প্রায় সবাই কাফের-মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বংশীয় টানে নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সমর্থনে এগিয়ে আসে এবং বয়কটের সময় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নেয়। আত্মীয়তার বন্ধনের প্রতি তাদের এই আনুগত্য ও নৈতিকতা বোধ আধুনিক বিশ্বের নীতিহীন শাসকদের জন্য চপেটাঘাত বৈ-কি! অতএব সেই যুগের চাইতে আজকের তথাকথিত সভ্য যুগকেই সত্যিকার অর্থে ‘জাহেলী যুগ’ বলা উচিত।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
(১) ইসলামী আন্দোলনের সফলতার জন্য অনেক সময় অমুসলিম শক্তি সহায়তা করে থাকে। বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের অতুলনীয় সহযোগিতা ও সহমর্মিতা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। হাবশার বাদশাহ নাজাশীর সহযোগিতার কথাও এখানে স্মর্তব্য। আল্লাহ এভাবেই তার দ্বীনকে অনেক সময় তার বিরোধীদের মাধ্যমে বিজয়ী করে থাকেন’ (বুখারী হা/৩০৬২, ৪২০২-০৩)।

(২) ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ যে কুসুমাস্থির্ণ নয়; বরং অনেক সময় সামগ্রিক বিপদের সম্মুখীন হ’তে হয়, কুরায়েশদের সর্বাত্মক বয়কট তার অন্যতম উদাহরণ।

(৩) নেতৃবৃন্দের আদর্শিক দৃঢ়তা ও সত্যের প্রতি অবিচল আস্থাই অন্যদের শ্রদ্ধা আকর্ষণে সমর্থ হয়। রাসূল (ছাঃ) ও মুসলমানদের প্রতি আবু তালেব ও অন্যদের দৃঢ় সমর্থনের পিছনে রক্ত সম্পর্ক ছাড়াও এটাই ছিল অন্যতম প্রধান কারণ। এমনকি আবু জাহল পক্ষের লোকদের অনেকে মুসলমানদের প্রতি আকৃষ্ট ছিল এবং বয়কট কালে গোপনে তাদের নিকটে খাদ্য-পানীয় পৌঁছাতো। হাকীম বিন হেযাম, আবুল বাখতারী, হেশাম বিন আমর এবং অবশেষে যোহায়ের বিন আবু উমাইয়া ও মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী প্রমুখের প্রকাশ্য সদাচরণে যার প্রমাণ মেলে।

(৪) আদর্শিক সম্পর্কের বাইরেও রক্ত সম্পর্ক যে অনেক সময় সত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করে, রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি আব্দে মানাফের দুই পুত্র হাশেম ও মুত্ত্বালিবের গোত্রদ্বয়ের সর্বদা অকপট সমর্থন তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। কেবলমাত্র আবু লাহাব ব্যতীত। কেননা তিনি বিরোধীদের সাথে ছিলেন।



********************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url