প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-১৯]





বায়আতনামা গ্রহণ এবং দ্বীন ও জান-মাল রক্ষার্থে ইয়াছরিবে (মদিনায়) হিজরত শুরু


বায়আতনামা

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلاَمَا نُبَايِعُكَ قال: (১) عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِى النَّشَاطِ وَالْكَسَلِ (২) وَعَلَى النَّفَقَةِ فِى الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ (৩) وَعَلَى الأَمْرِ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْىِ عَنِ الْمُنْكَرِ (৪) وَعَلَى أَنْ تَقُولُوا فِى اللهِ لاَ تَأْخُذُكُمْ فِيهِ لَوْمَةُ لاَئِمٍ (৫) وَعَلَى أَنْ تَنْصُرُونِى إِذَا قَدِمْتُ يَثْرِبَ فَتَمْنَعُونِى مِمَّا تَمْنَعُونَ مِنْهُ أَنْفُسَكُمْ وَأَزْوَاجَكُمْ وَأَبْنَاءَكُمْ وَلَكُمُ الْجَنَّةُ (৬) وَفِى رِوَايَةٍ عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ: وَعَلَى أَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ

‘জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কোন কথার উপরে আপনার নিকটে বায়আত করব? তিনি বললেন, (১) সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আমার কথা শুনবে ও তা মেনে চলবে (২) কষ্টে ও সচ্ছলতায় (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ করবে (৩) সর্বদা ন্যায়ের আদেশ দিবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে (৪) আল্লাহর জন্য কথা বলবে এভাবে যে, আল্লাহর পথে কোন নিন্দুকের নিন্দাবাদকে পরোয়া করবে না (৫) যখন আমি ইয়াছরিবে তোমাদের কাছে হিজরত করে যাব, তখন তোমরা আমাকে সাহায্য করবে এবং যেভাবে তোমরা নিজেদের ও নিজেদের স্ত্রী ও সন্তানদের হেফাযত করে থাক, সেভাবে আমাকে হেফাযত করবে। বিনিময়ে তোমরা ‘জান্নাত’ লাভ করবে’।[1] (৬) ওবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) বর্ণিত অপর রেওয়ায়াতে এসেছে যে, ‘এবং আমরা নেতৃত্বের জন্য ঝগড়া করব না’।[2]

বস্ত্ততঃ প্রায় দেড় হাযার বছর পূর্বে নেওয়া বায়‘আতের শর্তগুলির প্রতিটির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এ যুগেও পুরোপুরিভাবে মওজুদ রয়েছে। সেদিনেও যেমন জান্নাতের বিনিময়ে নেওয়া বায়আত সর্বাত্মক সমাজবিপ্লবের কারণ ঘটিয়েছিল, আজও তেমনি তা একই পন্থায় সম্ভব, যদি আমরা আন্তরিক হই।

[1]. আহমাদ হা/১৪৪৯৬; ছহীহাহ হা/৬৩।
[2]. ইবনু হিশাম ১/৪৫৪; মুসলিম হা/১৭০৯ (৪১); মিশকাত হা/৩৬৬৬।

১২ জন নেতা মনোনয়ন

৭৫ জনের বায়‘আত সম্পন্ন হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদের মধ্য হ’তে ১২ জনকে প্রতিনিধি (নাক্বীব) বা নেতা নির্বাচন করে দিলেন। তার মধ্যে ৯ জন খাযরাজ ও ৩ জন আউস গোত্র হ’তে। খাযরাজ গোত্রের নয়জন হ’লেন- (১) বনু নাজ্জারের আবু উমামাহ আস‘আদ বিন যুরারাহ (২) সা‘দ বিন রবী‘ (৩) আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা (৪) রাফে‘ বিন মালেক (৫) বারা বিন মা‘রূর (৬) আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (৭) উবাদাহ বিন ছামেত (৮) সা‘দ বিন ওবাদাহ (৯) মুনযির বিন ‘আমর।
আউস গোত্রের তিনজন হ’লেন, (১০) উসায়েদ বিন হুযায়ের (১১) সা‘দ বিন খায়ছামা (১২) রেফা‘আহ বিন আব্দুল মুনযির (আহমাদ হা/২২৮২৬)।

অতঃপর তিনি তাদের নিকট থেকে পুনরায় নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনের বায়‘আত গ্রহণ করলেন।[1]

[1]. ইবনু হিশাম ১/৪৪৬। প্রসিদ্ধ আছে যে, এসময় তিনি বলেছিলেন, أَنْتُمْ عَلَى قَوْمِكُمْ بِمَا فِيهِمْ كُفَلاَءُ كَكَفَالَةِ الْحَوَارِيِّينَ لِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، وَأَنَا كَفِيلٌ عَلَى قَوْمِي ‘তোমরা তোমাদের সম্প্রদায়ের উপরে তাদের ভাল-মন্দের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, ঈসা (আঃ)-এর হাওয়ারীগণের দায়িত্বের ন্যায়। আর আমি আমার কওমের উপরে (মুসলমানদের উপরে) দায়িত্বশীল’ (আর-রাহীক্ব ১৫১-৫২ পৃঃ)। বর্ণনাটির সনদ যঈফ (ঐ, তা‘লীক্ব ৯৫-৯৬; আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ পৃঃ ১৫০)।

বায়আতের কথা শয়তান ফাঁস করে দিল

ইবলীস শয়তান এই বায়‘আতের সুদূরপ্রসারী ফলাফল বুঝতে পেরে দ্রুত পাহাড়ের উপরে উঠে তার স্বরে আওয়ায দিল। يَا أَهْلَ الْجُبَاجِبِ هَلْ لَكُمْ فِي مُذَمَّمٍ وَالصُّبَاةُ مَعَهُ، قَدْ أَجْمَعُوا عَلَى حَرْبِكُمْ ‘হে বড় বড় তাঁবুওয়ালারা! মুযাম্মাম ও তার সাথী ধর্মত্যাগীদের ব্যাপারে তোমাদের কিছু করার আছে কি? তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়েছে’। রাবী কা‘ব বিন মালেক (রাঃ) বলেন, এরূপ দূরবর্তী আওয়ায আমরা ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, هَذَا أَزَبُّ الْعَقَبَةِ عَدُوَّ اللهِ، أَمَا وَاللهِ لَأَفْرُغَنَّ لَكَ ‘এটা সুড়ঙ্গের শয়তান। হে আল্লাহর দুশমন। অতি সত্বর আমি তোর জন্য বেরিয়ে পড়ছি’। একথা শুনে আববাস বিন উবাদাহ বিন নাযালাহ (রাঃ) বলে উঠলেন, وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ إِنْ شِئْتَ لَنَمِيلَنَّ عَلَى أَهْلِ مِنًى غَدًا بِأَسْيَافِنَا ‘হে আল্লাহর রাসূল! সেই সত্তার কসম করে বলছি যিনি আপনাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন, আপনি চাইলে আগামীকালই আমরা মিনাবাসীদের উপরে তরবারি নিয়ে হামলা চালাব’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, لَمْ أُؤْمَرْ بِذَلِكَ ‘আমি সেজন্য আদিষ্ট হইনি’। তোমরা স্ব স্ব তাঁবুতে ফিরে যাও।[1] অতঃপর সকলে স্ব স্ব তাঁবুতে ফিরে গেল।

শয়তানের এই তির্যক কণ্ঠ কুরায়েশ নেতাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করার সাথে সাথে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে গেল। ফলে সকালে উঠেই তাদের একদল নেতা এসে ইয়াছরেবী কাফেলার লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল। তারা বলল, হে খাযরাজের লোকেরা! তোমরা নাকি আমাদের লোকটাকে বের করে নিয়ে যেতে চাচ্ছ এবং আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকল্প করেছ? আল্লাহর কসম! আমাদের সাথে তার যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের নিকট তোমাদের চাইতে বড় বিদ্বেষী আর কেউ নেই’। কা‘ব বলেন, একথা শুনে আমাদের কওমের মুশরিক নেতারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং আল্লাহর নামে কসম করে বলেন যে, এরূপ কিছুই এখানে ঘটেনি এবং আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানিনা’। কেননা আমরা যা করেছিলাম, তা তারা জানতেন না। ফলে আমরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলাম। তারা খাযরাজ নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কাছেও গেলেন। কিন্তু তিনিও একইরূপ জবাব দিলেন।[2] ইবনু ইসহাকের অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, কুরায়েশ নেতারা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হ’তে না পেরে পুনরায় এলেন। তখন কাফেলা মদীনার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সা‘দ বিন ওবাদাহ ও মুনযির বিন ‘আমর পিছনে পড়ে যান। তারা উভয়ে নক্বীব (আনছার নেতা) ছিলেন। পরে মুনযির দ্রুত এগিয়ে গেলে সা‘দ ধরা পড়ে যান। কুরায়েশরা তাকে পিছনে শক্ত করে দু’হাত বেঁধে মক্কায় নিয়ে আসে। কিন্তু মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী ও হারেছ বিন হারব বিন উমাইয়া এসে তাঁকে ছাড়িয়ে নেন। কেননা তাদের বাণিজ্য কাফেলা মদীনার পথে সা‘দের আশ্রয়ে থেকে যাতায়াত করত। এদিকে যখন ইয়াছরেবী কাফেলা তাঁর মুক্তির ব্যাপারে পরামর্শ বৈঠক করছিল, ওদিকে তখন সা‘দ নিরাপদে তাদের নিকটে পৌঁছে গেলেন। অতঃপর তারা সকলে নির্বিঘ্নে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলেন।[3] এরপর থেকে তারা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর হিজরতের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকেন।

[1]. আহমাদ হা/১৫৮৩৬, সনদ হাসান; ইবনু হিশাম ১/৪৪৭।
[2]. আহমাদ হা/১৫৮৩৬; ইবনু হিশাম ১/৪৪৮।
[3]. ইবনু হিশাম ১/৪৪৯-৫০; সীরাহ ছহীহাহ ১/১৯৮-২০১।

বায়আতের ফলাফল

আক্বাবাহর এই বায়‘আত এক যুগান্তকারী ফলাফল আনয়ন করে। যেমন-
(১) গোত্রীয় হানাহানিতে বিপর্যস্ত ও যুদ্ধক্লান্ত ইয়াছরিববাসী, আউস ও খাযরাজ দুই পরস্পরবিরোধী যুদ্ধমান গোত্র পুনরায় ঈমানের বন্ধনে আবদ্ধ হ’ল। যা কোন দুনিয়াবী স্বার্থের ভিত্তিতে ছিল না। বরং কেবলমাত্র জান্নাতের স্বার্থে নিবেদিত ছিল।

(২) তাদের মধ্যে গোত্রীয় জাতীয়তার উপরে নতুন ঈমানী জাতীয়তার বীজ বপিত হ’ল। যা তাদেরকে নতুন জীবনবোধে উদ্দীপিত করে তুলল।

(৩) বহিরাগত সূদী কারবারী ইহূদী-নাছারাগণ আউস ও খাযরাজ দুই বড় গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে এতদিন ধরে যে অর্থনৈতিক ফায়েদা লুটে আসছিল, তার অবসানের সূচনা হ’ল।

(৪) এর ফলে হিজরতের ক্ষেত্র প্রস্ত্তত হ’ল এবং হিজরতের পূর্বেই ইয়াছরিববাসীগণ রাসূল (ছাঃ)-কে বরণ করে নেবার জন্য সার্বিক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে লাগল।

(৫) নতুন ঈমানী জাতীয়তার অনুভূতিতে আপ্লুত হয়ে ইয়াছরিববাসীগণ মক্কার নির্যাতিত মুহাজিরগণকে নিজেদের ভাই হিসাবে গ্রহণ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলো। ঈমানী ভ্রাতৃত্বের এই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল আক্বাবাহর এই মহান বায়‘আতের মাধ্যমে। এরপরেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কার নির্যাতিত মুসলমানদের ইয়াছরিবে হিজরতের নির্দেশ দেন।

বায়আতকে স্বাগত জানিয়ে আয়াত নাযিল

এই ঐতিহাসিক বায়আতকে স্বাগত জানিয়ে আল্লাহপাক স্বীয় রাসূলের নিকটে আয়াত নাযিল করে বলেন,

إِنَّ اللهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنجِيْلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ- (التوبة ১১১)

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ খরীদ করে নিয়েছেন মুসলমানদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়। অতঃপর মারে ও মরে। এই সত্য প্রতিশ্রুতি রয়েছে তওরাত, ইনজীল ও কুরআনে। আর আল্লাহর চাইতে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? অতএব তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর সেই লেন-দেনের উপরে যা তোমারা করেছ তার সাথে। আর এ হ’ল এক মহান সাফল্য’।[1]
[1]. তওবাহ ৯/১১১; কুরতুবী, ইবনু কাছীর, তাফসীর উক্ত আয়াত।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
(১) ইসলামের প্রসার ও তার স্থায়িত্ব নির্ভর করে তার ব্যাপক প্রচারের মধ্যে। সংস্কারককে তাই প্রচারের ছোট-খাট সুযোগকেও কাজে লাগাতে হয়। হজ্জের মওসুমে গভীর রাতে বেরিয়ে তাঁবুতে তাঁবুতে গিয়ে গোপনে তাওহীদের দাওয়াত দেবার মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর উক্ত নীতি ফুটে উঠেছে।

(২) দাওয়াতের ক্ষেত্রে কোনরূপ দুনিয়াবী স্বার্থ পেশ করা যাবে না। কেবলমাত্র পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণের দাওয়াত দিতে হবে।

(৩) নিজ দেশে অসহায় ভাবলে অন্য দেশের সম আদর্শের ভাইদের আন্তরিক আহবানে সাড়া দিয়ে সেদেশে স্থায়ীভাবে হিজরত করা আদর্শবাদী নেতার জন্য সিদ্ধ। এজন্য ক্ষেত্র প্রস্ত্ততির চেষ্টা করা বৈধ।

(৪) তাওহীদের দাওয়াত প্রসারের জন্য চাই দূরদর্শী, উদ্যমী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একদল যুবক। আস‘আদ বিন যুরারাহর নেতৃত্বে ইসলাম কবুলকারী ছয় জন ইয়াছরেবী যুবক ও রাসূল (ছাঃ)-এর প্রেরিত তরুণ দাঈ মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ)-এর তারুণ্যদীপ্ত দাওয়াতী কার্যক্রম আমাদেরকে সেকথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

(৫) ইমারত ও বায়‘আতের মাধ্যমেই ইসলামী সমাজ বিপ্লব সম্ভব। ১১, ১২, ১৩ নববী বর্ষে অনুষ্ঠিত পরপর তিনটি বায়‘আত অনুষ্ঠান এ দিকেই নির্দেশনা প্রদান করে।

(৬) দাওয়াতে সফলতা লাভের জন্য নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বিশ্বাসের ঐক্য ও দৃঢ়তা এবং নিখাদ আদর্শনিষ্ঠা অপরিহার্য। হিজরতের পূর্বেই মি‘রাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়ার বিষয়টি সেদিকেই ইঙ্গিত করে।

ইয়াছরিবে কষ্টকর হিজরত শুরু

বায়‘আতে কুবরা সম্পন্ন হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্যাতিত মুসলমানদের ইয়াছরিবে হিজরতের অনুমতি দিলেন। এই হিজরত অর্থ স্রেফ দ্বীন ও প্রাণ রক্ষার্থে সর্বস্ব ছেড়ে দেশত্যাগ করা। কিন্তু এই হিজরত মোটেই সহজ ছিল না। মুশরিক নেতারা উক্ত হিজরতে চরম বাধা হয়ে দাঁড়ালো। ইতিপূর্বে তারা হাবশায় হিজরতে বাধা দিয়েছিল। এখন তারা ইয়াছরিবে হিজরতে বাধা দিতে থাকল। ইসলামের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়া ছাড়াও এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক। অর্থনৈতিক কারণ ছিল এই যে, মক্কা থেকে ইয়াছরিব হয়ে সিরিয়ায় তাদের গ্রীষ্মকালীন ব্যবসা পরিচালিত হ’ত। আর রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল এই যে, ইয়াছরিবে মুহাজিরগণের অবস্থান সুদৃঢ় হ’লে এবং ইয়াছরিববাসীগণ ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলে তা মক্কার মুশরিকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যা মক্কাবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। যাতে তাদের জান-মাল ও ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু হুমকির মধ্যে পড়বে।

এভাবে আল্লাহ এমন এক স্থানে নির্যাতিত মুসলমানদের হিজরতের ব্যবস্থা করলেন, যা ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক দিয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সব দিক বিবেচনা করে কুরায়েশ নেতারা হিজরত বন্ধ করার চেষ্টা করতে থাকেন এবং সম্ভাব্য হিজরতকারী নারী-পুরুষের উপরে যুলুম ও অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেন। যাতে তারা ভীত হয় ও হিজরতের সংকল্প ত্যাগ করে।

বারা বিন ‘আযেব আনছারী (রাঃ) বলেন, আমাদের নিকট প্রথম হিজরত করে আসেন মুছ‘আব বিন উমায়ের, অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (অন্ধ ছাহাবী)। তারা লোকদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। অতঃপর আগমন করেন বেলাল, সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ ও ‘আম্মার বিন ইয়াসির। অতঃপর ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব আসেন বিশজন সাথী নিয়ে। অতঃপর আগমন করেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বয়ং।[1] নিম্নে হিজরতের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হ’ল :

আবু সালামাহ মাখযূমী

ইনি ছিলেন মদীনায় প্রথম হিজরতকারী ছাহাবী। ইতিপূর্বে মুসলমান হয়ে সস্ত্রীক হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তারপর সেখান থেকে ফিরে এসে বায়‘আতে কুবরার বছর খানেক পূর্বে কোলের পুত্র সন্তানসহ স্ত্রী উম্মে সালামাহকে নিয়ে হিজরত করেন। কিন্তু মক্কা থেকে রওয়ানা হওয়ার পর পথিমধ্যে আবু সালামাহর গোত্রের লোকেরা এসে তাদের বংশধর দাবী করে শিশুপুত্র সালামাহকে ছিনিয়ে নেয়। অতঃপর উম্মে সালামার পিতৃপক্ষের লোকেরা এসে তাদের মেয়েকে জোর করে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। ফলে আবু সালামাহ স্ত্রী-পুত্র ছেড়ে একাকী ইয়াছরিবে হিজরত করেন। এদিকে বিচ্ছেদকাতর উম্মে সালামাহ প্রতিদিন সকালে স্বামী ও সন্তান হারানোর সেই ‘আবত্বাহ’ (الأبطح) নামক স্থানটিতে এসে কান্নাকাটি করেন ও আল্লাহর কাছে দো‘আ করেন। অতঃপর সন্ধ্যায় ফিরে যান। এভাবে প্রায় একটি বছর অতিবাহিত হয়। অবশেষে তার পরিবারের জনৈক ব্যক্তির মধ্যে দয়ার উদ্রেক হয়। তিনি সবাইকে বলে রাযী করিয়ে তাকে সন্তানসহ মদীনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আদায় করেন। অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে তিনি একাকী মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হন। মক্কার অদূরে ‘তানঈম’ নামক স্থানে পৌঁছলে কা‘বাগৃহের চাবি রক্ষক ওছমান বিন ত্বালহা তার এই নিঃসঙ্গ যাত্রা দেখে ব্যথিত হন এবং তিনি স্বেচ্ছায় তার সঙ্গী হন। তাঁকে তার সন্তানসহ উটে সওয়ার করিয়ে নিজে পায়ে হেঁটে প্রায় পাঁচশত কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে যখন মদীনার উপকণ্ঠে ক্বোবায় বনু আমর বিন ‘আওফ গোত্রে পৌঁছলেন, তখন তাঁকে বললেন, তোমার স্বামী এই গোত্রে আছেন। অতএব فَادْخُلِيهَا عَلَى بَرَكَةِ اللهِ ‘আল্লাহর অনুগ্রহের উপর তুমি এই গোত্রে প্রবেশ কর’। এই বলে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে তিনি পুনরায় মক্কার পথে ফিরে আসেন (ইবনু হিশাম ১/৪৬৯-৭০)।

ওছমান বিন ত্বালহা ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে খালেদ বিন ওয়ালীদের সাথে মদীনায় হিজরত করেন ও ইসলাম কবুল করেন। তিনি আবুবকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালের শেষের দিকে আজনাদাইনের যুদ্ধে শহীদ হন। মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (ছাঃ) তাদের বংশেই কা‘বাগৃহের চাবি রেখে দেন এবং বলেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই চাবি তোমাদের হাতেই থাকবে। যালেম ব্যতীত কেউ এটা ছিনিয়ে নিবেনা’।[2]

উম্মে সালামাহ ও তাঁর স্বামী আবু সালামাহ প্রথম দিকের মুসলমান ছিলেন। একটি বর্ণনা মতে আবু সালামা ছিলেন একাদশতম মুসলমান। তাদের স্বামী-স্ত্রীর আক্বীদা ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। তদুপরি আবু সালামা ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর দুধভাই। তাঁরা দু’জনেই শৈশবে আবু লাহাবের দাসী ছুওয়াইবাহর দুধপান করেছিলেন (বুখারী হা/৫১০১)। তিনি বদরের যুদ্ধে শরীক হন এবং ওহোদের যুদ্ধে আহত হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেন। তখন দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে উম্মে সালামাহ দারুণ কষ্টে নিপতিত হন। ফলে দয়া পরবশে রাসূল (ছাঃ) তাকে নিজ স্ত্রীত্বে বরণ করে নেন (মুসলিম হা/৯১৮)।

ছুহায়েব রূমী

তিনি হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে কিছু দূর যেতেই মুশরিকরা তাকে রাস্তায় ঘিরে ফেলে। তখন সওয়ারী থেকে নেমে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেখ তোমরা জানো যে, আমার তীর সাধারণতঃ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। অতএব আমার তূণীরে একটা তীর বাকী থাকতেও তোমরা আমার কাছে ভিড়তে পারবে না। তীর শেষ হয়ে গেলে তলোয়ার চালাব। অতএব তোমরা যদি দুনিয়াবী স্বার্থ চাও, তবে মক্কায় রক্ষিত আমার বিপুল ধন-সম্পদের সন্ধান বলে দিচ্ছি, তোমরা সেগুলি নিয়ে নাও এবং আমার পথ ছাড়। তখন তারা পথ ছেড়ে দিল। মদীনায় পৌঁছে এই ঘটনা বর্ণনা করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে প্রশংসা করে বলেন, يَا أَبَا يَحْيَى رَبِحَ الْبَيْعُ ‘হে আবু ইয়াহইয়া! তোমার ব্যবসা লাভজনক হয়েছে’। ছুহায়েব-এর এই আত্মত্যাগের প্রশংসা করে সূরা বাক্বারাহর ২০৭ আয়াতটি নাযিল হয়। وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَاللهُ رَؤُوْفٌ بِالْعِبَادِ ‘লোকদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন বাজি রাখে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতীব স্নেহশীল’ (বাক্বারাহ ২/২০৭)।

ছুহায়েব বিন সিনান বিন মালেক রূমী ইরাকের মূছেল নগরীতে দাজলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে মক্কায় এসে আব্দুল্লাহ বিন জুদ‘আন তামীমীর সাথে চুক্তিবদ্ধ মিত্র (حَلِيف) হন। ‘আম্মার বিন ইয়াসিরের সাথে তিনি দারুল আরক্বামে এসে ইসলাম কবুল করেন এবং আল্লাহর পথে নির্যাতিত হন। পরে আলী (রাঃ)-এর সাথে মদীনায় হিজরত করেন। তিনি বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ৩৮ হিজরীতে ৭৩ বছর বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন।[3]

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব

বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, তিনি বিশ জনকে নিয়ে হিজরত করেন (বুখারী হা/৩৯২৫)। ইবনু ইসহাক ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেন যে, ওমর (রাঃ) গোপনে হিজরত করেন। পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘আইয়াশ বিন আবু রাবী‘আহ এবং হেশাম বিন ‘আছ বিন ওয়ায়েল প্রত্যুষে একস্থানে হাযির হয়ে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাফেররা হেশাম-কে বন্দী করে ফেলে। অতঃপর ‘আইয়াশ ওমর (রাঃ)-এর সাথে যখন মদীনায় ‘ক্বোবা’-তে পৌঁছে গেলেন, তখন পিছে পিছে আবু জাহল ও তার ভাই হারেছ গিয়ে উপস্থিত হ’ল এবং বলল যে, হে ‘আইয়াশ! তোমার ও আমার মা মানত করেছেন যে, যতক্ষণ তোমাকে দেখতে না পাবেন, ততক্ষণ চুল অাঁচড়াবেন না এবং রোদ ছেড়ে ছায়ায় যাবেন না’। একথা শুনে ‘আইয়াশের মধ্যে মায়ের দরদ উথলে উঠলো এবং সাথে সাথে মক্কায় ফিরে যাওয়ার মনস্থ করল। ওমর (রাঃ) আবু জাহলের চালাকি অাঁচ করতে পেরে ‘আইয়াশকে নিষেধ করলেন এবং বুঝিয়ে বললেন যে, আল্লাহর কসম! তোমাকে তোমার দ্বীন থেকে সরিয়ে নেবার জন্য এরা কূট কৌশল করেছে। আল্লাহর কসম! তোমার মাকে যদি উকুনে কষ্ট দেয়, তাহ’লে তিনি অবশ্যই চিরুনী ব্যবহার করবেন। আর যদি রোদে কষ্ট দেয়, তাহ’লে অবশ্যই তিনি ছায়ায় গিয়ে আশ্রয় নিবেন। অতএব তুমি ওদের চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ো না। কিন্তু ‘আইয়াশ কোন কথাই শুনলেন না। তখন ওমর (রাঃ) তাকে শেষ পরামর্শ দিয়ে বললেন, আমার এই দ্রুতগামী উটনীটা নিয়ে যাও। ওদের সঙ্গে একই উটে সওয়ার হয়ো না। মক্কায় গিয়ে উটনীটাকে নিজের আয়ত্তে রাখবে এবং কোনরূপ মন্দ আশংকা করলে এতে সওয়ার হয়ে পালিয়ে আসবে। উল্লেখ্য যে, আবু জাহল, হারেছ ও ‘আইয়াশ তিনজন ছিল একই মায়ের সন্তান।

মক্কার কাছাকাছি পৌঁছে ধূর্ত আবু জাহল বলল, হে ‘আইয়াশ! আমার উটটাকে নিয়ে খুব অসুবিধায় পড়েছি। তুমি কি আমাকে তোমার উটে সওয়ার করে নিবে? ‘আইয়াশ সরল মনে রাযী হয়ে গেলেন এবং উট থামিয়ে মাটিতে নেমে পড়লেন। তখন দু’জনে একত্রে ‘আইয়াশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে দড়ি দিয়ে কষে বেঁধে ফেলল এবং ঐ অবস্থায় মক্কায় পৌঁছল। এভাবে হেশাম ও ‘আইয়াশ মক্কায় কাফেরদের একটি বন্দীশালায় আটকে পড়ে থাকলেন।

পরবর্তীতে রাসূল (ছাঃ) হিজরত করে মদীনায় গিয়ে একদিন সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, مَنْ لِي بِعَيَّاشِ بْنِ أَبِي رَبِيعَةَ وَهِشَامِ ‘কে আছ যে আমার জন্য ‘আইয়াশ ও হেশামকে মুক্ত করে আনবে?’ তখন অলীদ বিন অলীদ বিন মুগীরাহ বলে উঠলেন, أَنَا لَك يَا رَسُولَ اللهِ بِهِمَا ‘ঐ দু’জনের সাহায্যে আমি প্রস্ত্তত আপনার জন্য হে আল্লাহর রাসূল!’ অতঃপর তিনি গোপনে মক্কায় পৌঁছে ঐ বন্দীশালায় খাবার পরিবেশনকারীণী মহিলার পশ্চাদ্ধাবন করেন এবং দেওয়াল টপকে ছাদবিহীন উক্ত যিন্দানখানার মধ্যে লাফিয়ে পড়ে তাদেরকে বাঁধনমুক্ত করে মদীনায় নিয়ে এলেন।[4]

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহর, বিতর ও ফজরের ছালাতে রুকূ থেকে উঠে দু’হাত তুলে আল্লাহর নিকট অলীদ বিন অলীদ, সালামাহ বিন হিশাম, ‘আইয়াশ বিন আবু রাবী‘আহ-র নাম ধরে তাদের মুক্তির জন্য এবং (মক্কার) দুর্বল মুমিনদের জন্য দো‘আ করতেন’ (বুখারী হা/৭৯৭, ২৯৩২)। তিনি রামাযানে ১৫ দিন যাবৎ এ দো‘আ করেন। অলীদ বিন অলীদ ছিলেন খালেদ বিন অলীদের ভাই’ (ফাৎহুল বারী হা/৪৫৬০-এর আলোচনা)।

উপরে বর্ণিত বারা বিন ‘আযেব ও ইবনু ইসহাক-এর দু’টি বর্ণনার সমন্বয় এটাই হ’তে পারে যে, ওমর (রাঃ)-এর ২০জন সাথী রাস্তায় পরস্পরে মিলিত হন। অতঃপর তারা প্রায় একই সময়ে মদীনায় পৌঁছে যান (মা শা-‘আ ৭১ পৃঃ)।[5]

এইভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাহাবায়ে কেরাম মক্কা হ’তে মদীনায় গোপনে পাড়ি জমাতে থাকেন। ফলে বায়‘আতে কুবরার পর দু’মাসের মধ্যেই প্রায় সকলে মদীনায় হিজরত করে যান। কেবল কিছু দুর্বল মুসলমান মক্কায় অবশিষ্ট থাকেন। যাদেরকে মুশরিকরা বিভিন্ন সুবিধা দেখিয়ে বা ভয় দেখিয়ে বলপূর্বক আটকে রেখেছিল।

[1]. বুখারী হা/৩৯২৫; ‘রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের মদীনায় আগমন’ অনুচ্ছেদ-৪৬।
[2]. ফাৎহুল বারী হা/৪২৮৯-এর আলোচনা; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬০।
[3]. ইবনু হাজার, আল-ইছাবাহ, ছুহায়েব ক্রমিক ৪১০৮; হাকেম হা/৫৭০০, ৫৭০৬; যাহাবী ছহীহ বলেছেন।
[4]. ইবনু হিশাম ১/৪৭৪-৭৬; ত্বাবারাণী হা/৯৯১৯; সনদ ‘মুরসাল’।
[5]. এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, মদীনায় হিজরতের দিন ওমর (রাঃ) তরবারিসহ কা‘বাগৃহে আসেন এবং তাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমে ছালাত আদায় করেন। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, شَاهَتِ الْوُجُوهُ ‘চেহারাসমূহ ধূলি মলিন হৌক’! অতঃপর বলেন,مَنْ أَرَادَ أَنْ يُثْكِلَ أُمَّهُ أو يُوتِمَ وَلَدَهُ أَوْ تُرْمِلَ زَوْجَتَهُ فَلْيَلْقِنِيْ وَرَاءَ هَذَا الْوَادِى ‘যে ব্যক্তি তার মাকে সন্তানহারা করতে চায়, পিতা তার সন্তানকে ইয়াতীম বানাতে চায় ও স্বামী তার স্ত্রীকে বিধবা করতে চায়, সে যেন এই উপত্যকার বাইরে গিয়ে আমার সাথে সাক্ষাৎ করে’ (ইবনুল আছীর, উসদুল গা-বাহ ৪/৫৮ পৃঃ)। হযরত আলী (রাঃ)-এর সূত্রে এটি বর্ণিত হয়েছে। অথচ এটি আদৌ প্রমাণিত নয়। ওমর (রাঃ) গোপনে নয়, বরং প্রকাশ্যে হিজরত করেছেন বলে তাঁর বীরত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে এরূপ মিথ্যা কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে’ (আলবানী, দিফা‘ ‘আনিল হাদীছ ওয়াস-সীরাহ ৪৩ পৃঃ; সীরাহ ছহীহাহ ১/২০৬; মা শা-‘আ ৭০ পৃঃ)।

বস্ত্ততঃ ওমর (রাঃ) অন্যদের মতই গোপনে হিজরত করেছিলেন এবং এতে দোষের কিছু নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও গোপনে হিজরত করেছিলেন। এগুলি পলায়ন নয়, বরং দ্বীনের স্বার্থে আত্মরক্ষা মাত্র।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
(১) ঈমান ও আমলের স্বাধীনতা না থাকলে নিজের সবকিছু এমনকি প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ করতে এবং যেকোন কষ্টকর মুছীবতসমূহ বরণ করতে ঈমানদারগণ রাযী হয়ে যান। ছাহাবায়ে কেরামের হিজরতের ঘটনাবলী আমাদেরকে সেই শিক্ষা দান করে।

(২) কাফেররা ঈমানদারগণের বিরুদ্ধে পিতৃধর্ম ত্যাগ ও দলভাঙ্গার অজুহাত দেখালেও তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে ‘দুনিয়া’। দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলে বাধা মনে করেই তারা সর্বদা ইসলামী দাওয়াতকে বাধাগ্রস্ত এমনকি নির্মূল করতে চেষ্টা করে থাকে।

(৩) পেশীশক্তি দিয়ে মুমিনকে পর্যুদস্ত করা গেলেও তার ঈমানকে নির্মূল করা যায় না। বিরোধী শক্তি তাই ইসলামী আদর্শকে সর্বদা ভীতির চোখে দেখে। মক্কার মুসলমানেরা কুরায়েশ নেতাদের কোন ক্ষতি না করলেও তারা তাদের উপরে অবর্ণনীয় যুলুম করে কেবল তাদের ঈমানের ভয়ে।



********************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url