কাফিররেদের ভয়াবহ পরিণাম (পর্ব-২)
সুরা আল-আনকাবুত আয়াত: ৫২-৫৫
২৯:৫২ قُلۡ کَفٰی بِاللّٰهِ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنَکُمۡ شَهِیۡدًا ۚ یَعۡلَمُ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِالۡبَاطِلِ وَ کَفَرُوۡا بِاللّٰهِ ۙ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ
২৯:৫৩ وَ یَسۡتَعۡجِلُوۡنَکَ بِالۡعَذَابِ ؕ وَ لَوۡ لَاۤ اَجَلٌ مُّسَمًّی لَّجَآءَهُمُ الۡعَذَابُ ؕ وَ لَیَاۡتِیَنَّهُمۡ بَغۡتَۃً وَّ هُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ
২৯:৫৪ یَسۡتَعۡجِلُوۡنَکَ بِالۡعَذَابِ ؕ وَ اِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِیۡطَۃٌۢ بِالۡکٰفِرِیۡنَ
২৯:৫৫ یَوۡمَ یَغۡشٰهُمُ الۡعَذَابُ مِنۡ فَوۡقِهِمۡ وَ مِنۡ تَحۡتِ اَرۡجُلِهِمۡ وَ یَقُوۡلُ ذُوۡقُوۡا مَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ
আয়াতের বাংলা অনুবাদ
৫২. বল, ‘আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, তা তিনি জানেন। আর যারা বাতিলে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত’।
৫৩. আর তারা তোমাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি নির্ধারিত সময় না থাকত, তবে তাদের উপর অবশ্যই আযাব আসত এবং তা আকস্মিকভাবে তাদের উপর আসবেই। অথচ তারা টেরও পাবে না।
৫৪. তারা তোমাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে, আর নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবে।
৫৫. যেদিন আযাব তাদেরকে তাদের উপর থেকে ও তাদের পায়ের নীচে থেকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে এবং তিনি বলবেন, ‘তোমরা যা করতে, তার স্বাদ আস্বাদন কর’।
আয়াতের তাফসীর
সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট
(৫২) বল, ‘আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।[১] আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত এবং যারা অসত্যে বিশ্বাস করে ও আল্লাহকে অবিশ্বাস করে[২] তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ [৩]
[১] এই মর্মে যে, আমি আল্লাহর নবী এবং যে কিতাব আমার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে।
[২] অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে উপাসনার যোগ্য মনে করে এবং যে প্রকৃতপক্ষে ইবাদতের যোগ্য অধিকারী, সেই মহান আল্লাহকে তারা অস্বীকার করে।
[৩] কারণ, এই সকল মানুষই বিকৃত জ্ঞান ও ভুল বুঝের শিকার। যার ফলে তারা যে ব্যবসা করেছে অর্থাৎ ঈমানের পরিবর্তে কুফর ও হিদায়াতের পরিবর্তে পথভ্রষ্টতাকে ক্রয় করেছে, তাতে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
শাস্তির কাল নির্ধারিত
(৫৩) ওরা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে।[১] যদি শাস্তির কাল নির্ধারিত না থাকত, তাহলে ওদের ওপর শাস্তি এসেই পড়ত।[২] আর নিশ্চয়ই ওদের ওপর আকস্মিকভাবে ওদের অজ্ঞাতসারে তা এসে পড়বে। [৩]
[1] অর্থাৎ, পয়গম্বরের কথা না মেনে তারা বলে যে, ‘যদি তুমি সত্য হও, তাহলে আমাদের উপর আল্লাহর আযাব অবতীর্ণ করাও!’
[2] অর্থাৎ, ওদের কর্ম ও কথা অবশ্যই এর উপযুক্ত যে, তাদেরকে অবিলম্বে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হোক। কিন্তু আমার নিয়ম এই যে, আমি প্রত্যেক জাতিকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ঢিল দিয়ে থাকি। অতঃপর যখন সেই ঢিল দেওয়া সময় শেষ হয়ে যায়, তখন আমার আযাব এসে পড়ে।
[3] অর্থাৎ, যখন আযাবের নির্ধারিত সময় এসে যাবে তখন হঠাৎ এমনভাবে আযাব এসে যাবে যে, তারা বুঝতেও পারবে না। সেই নির্ধারিত সময় হল যা মক্কাবাসীদের জন্য লিখে রেখেছিলেন। অর্থাৎ বদরের যুদ্ধে বন্দী ও হত্যা হওয়া। অথবা কিয়ামত কায়েম হওয়া, যার পরে কাফেরদের জন্য থাকবে শাস্তি আর শাস্তি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
শাস্তির স্থান জাহান্নাম
(৫৪) ওরা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে। আর জাহান্নাম তো অবিশ্বাসীদেরকে অবশ্যই পরিবেষ্টন করবে। [১]
[১] প্রথম يَسْتَعْجِلُونَكَ খবর রূপে বর্ণিত হয়েছে এবং দ্বিতীয়টি আশ্চর্য প্রকাশরূপে। অর্থাৎ এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, শাস্তির স্থান জাহান্নাম তাদেরকে আপন পরিবেষ্টনে রেখেছে। এর পরেও তারা শাস্তির জন্য তাড়াতাড়ি করছে? অথচ প্রতিটি জিনিস যা আসবে তা অতি নিকটবর্তীই হয়, তাকে তারা দূরে কেন ভাবছে? অথবা তা তাকীদের জন্য পুনরুক্ত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
শাস্তি ওদেরকে গ্রাস করবে
(৫৫) সেদিন শাস্তি ওদেরকে গ্রাস করবে ওদের উপর দিক ও নিচের দিক হতে এবং তিনি বলবেন,[১] ‘তোমরা যা করতে তার স্বাদ গ্রহণ কর।’
[১] ‘তিনি বলবেন’ ক্রিয়াটির কর্তা আল্লাহ অথবা ফিরিশতা। অর্থাৎ, যখন সর্বদিক থেকে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে, তখন তাদেরকে বলা হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
সুরা আল-আনকাবুত আয়াত: ৬৮
২৯:৬৮ وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ کَذِبًا اَوۡ کَذَّبَ بِالۡحَقِّ لَمَّا جَآءَهٗ ؕ اَلَیۡسَ فِیۡ جَهَنَّمَ مَثۡوًی لِّلۡکٰفِرِیۡنَ
আয়াতের বাংলা অনুবাদ
৬৮. আর সে ব্যক্তির চেয়ে যালিম আর কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নিকট সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামের মধ্যেই কি কাফিরদের আবাস নয়?
আয়াতের তাফসীর
অবিশ্বাসীদের আশ্রয়স্থল জাহান্নামে
(৬৮) যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে[১] অথবা তাঁর নিকট হতে আগত সত্যকে মিথ্যাজ্ঞান করে[২] তার অপেক্ষা অধিক সীমালংঘনকারী আর কে? অবিশ্বাসীদের আশ্রয়স্থল কি জাহান্নামে নয়?
মিথ্যারচয়িতা কারা
[১] অর্থাৎ, এই দাবী করে যে, আমার প্রতি আল্লাহর প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়; অথচ তা হয় না। অথবা কেউ এই কথা বলে যে, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন আমিও তা অবতীর্ণ করতে সক্ষম। এটাই হল আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা। আর এর দাবীদারই হল মিথ্যারচয়িতা।
[২] এ হল মিথ্যাজ্ঞান করা। আর এতে লিপ্ত ব্যক্তি মিথ্যাজ্ঞানকারী। আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা বা আরোপ করা এবং সত্যকে মিথ্যাজ্ঞান করা উভয়ই কুফরী, যার শাস্তি হল জাহান্নাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
সুরা আর-রূম আয়াত: ৯-১০
৩০:৯ اَوَ لَمۡ یَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَیَنۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ ؕ کَانُوۡۤا اَشَدَّ مِنۡهُمۡ قُوَّۃً وَّ اَثَارُوا الۡاَرۡضَ وَ عَمَرُوۡهَاۤ اَکۡثَرَ مِمَّا عَمَرُوۡهَا وَ جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُهُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ ؕ فَمَا کَانَ اللّٰهُ لِیَظۡلِمَهُمۡ وَ لٰکِنۡ کَانُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ
৩০:১০ ثُمَّ کَانَ عَاقِبَۃَ الَّذِیۡنَ اَسَآءُوا السُّوۡٓاٰۤی اَنۡ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ کَانُوۡا بِهَا یَسۡتَهۡزِءُوۡنَ
আয়াতের বাংলা অনুবাদ
৯. তারা কি যমীনে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা দেখত যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল। তারা শক্তিতে তাদের চেয়েও প্রবল ছিল। আর তারা জমি চাষ করত এবং তারা এদের আবাদ করার চেয়েও বেশী আবাদ করত। আর তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ এসেছিল। বস্তুতঃ আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের প্রতি যুলম করবেন, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজদের প্রতি যুলম করত।
১০. তারপর যারা মন্দ কাজ করেছিল তাদের পরিণাম মন্দ হয়েছিল। কারণ তারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করেছিল এবং সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।
আয়াতের তাফসীর
নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করে
(৯) ওরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং দেখে না যে,[১] ওদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে?[২] শক্তিতে তারা ছিল ওদের অপেক্ষা প্রবল।[৩] তারা জমি চাষ করত এবং এরা পৃথিবীর যতটা আবাদ করেছে[৪] তার চেয়ে তারা বেশি আবাদ করেছিল।[৫] তাদের নিকট তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ এসেছিল।[৬] বস্তুতঃ ওদের প্রতি যুলুম করা আল্লাহর কাজ ছিল না,[৭] বরং ওরা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল।[৮]
[১] পূর্ব পুরুষদের পরিণাম, ধ্বংসাবশেষ ঘর-বাড়ি, বসবাস করার প্রকট চিহ্ন ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করার পরও তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করার জন্য কঠোরভাবে ধমক দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, তারা বিভিন্ন জায়গায় সফর ও যাতায়াত করে তা প্রত্যক্ষ করে নিয়েছে।
[২] অর্থাৎ, ঐ সকল কাফেরদের (পরিণাম) যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তাদের কুফরী, সত্যকে অস্বীকার ও রসূলগণকে মিথ্যা মনে করার ফলে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
[৩] অর্থাৎ, মক্কাবাসী এবং কুরাইশ অপেক্ষা।
[৪] অর্থাৎ, মক্কাবাসীরা কৃষিকর্মে অদক্ষ ছিল, কিন্তু পূর্ববর্তী জাতিসমূহ সে কর্মেও তাদের থেকে বেশি অভিজ্ঞ ছিল।
[৫] কারণ, তাদের বয়স, শারীরিক শক্তি ও জীবিকার উপায়-উপকরণও ছিল বেশি। সুতরাং তারা বেশি বেশি অট্টালিকা নির্মাণ, কৃষিকার্য এবং জীবিকা নির্বাহের সাজ-সরঞ্জামের ব্যবস্থাপনাও অধিক মাত্রায় করেছিল ।
[৬] তারা তাদের নিকট প্রেরিত রসূলগণের প্রতি ঈমান আনেনি। সুতরাং সব রকম শক্তি, উন্নতি, অবকাশ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য থাকা সত্ত্বেও ধ্বংসই তাদের ভাগ্যে নির্ধারিত হল।
[৭] অর্থাৎ, এমন ছিল না যে, তাদের কোন পাপ ছাড়াই তিনি তাদেরকে আযাবে পতিত করবেন।
[৮] অর্থাৎ, আল্লাহকে অস্বীকার ও রসূলগণকে অগ্রাহ্য করে (তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল)।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
মন্দ কাজের পরিণাম
(১০) অতঃপর যারা মন্দ কাজ করেছিল তাদের পরিণাম হয়েছে মন্দ;[১] কারণ তারা আল্লাহর বাক্যাবলীকে মিথ্যা মনে করত এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।
[১] سُوآى শব্দটির উৎপত্তি سُوء শব্দ থেকে। এটা فُعلَى -এর ওজনে أَسوَأ -এর স্ত্রী লিঙ্গ, যেমন حُسنَى - أَحسَن -এর স্ত্রী লিঙ্গ। অর্থাৎ, তাদের যে পরিণতি ঘটেছিল তা ছিল নেহাতই মন্দ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
সুরা আল-কাহফ আয়াত: ২৯
১৮:২৯ وَ قُلِ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکُمۡ ۟ فَمَنۡ شَآءَ فَلۡیُؤۡمِنۡ وَّ مَنۡ شَآءَ فَلۡیَکۡفُرۡ ۙ اِنَّاۤ اَعۡتَدۡنَا لِلظّٰلِمِیۡنَ نَارًا ۙ اَحَاطَ بِهِمۡ سُرَادِقُهَا ؕ وَ اِنۡ یَّسۡتَغِیۡثُوۡا یُغَاثُوۡا بِمَآءٍ کَالۡمُهۡلِ یَشۡوِی الۡوُجُوۡهَ ؕ بِئۡسَ الشَّرَابُ ؕ وَ سَآءَتۡ مُرۡتَفَقًا
আয়াতের বাংলা অনুবাদ
২৯. আর বল, ‘সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে যেন ঈমান আনে এবং যে ইচ্ছা করে সে যেন কুফরী করে। নিশ্চয় আমি যালিমদের জন্য আগুন প্রস্ত্তত করেছি, যার প্রাচীরগুলো তাদেরকে বেষ্টন করে রেখেছে। যদি তারা পানি চায়, তবে তাদেরকে দেয়া হবে এমন পানি যা গলিত ধাতুর মত, যা চেহারাগুলো ঝলসে দেবে। কী নিকৃষ্ট পানীয়! আর কী মন্দ বিশ্রামস্থল!
আয়াতের তাফসীর
জাহান্নাম নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল
২৯. আর বলুন, সত্য তোমাদের রব-এর কাছ থেকে; কাজেই যার ইচ্ছে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছে কুফরী করুক। নিশ্চয় আমরা যালেমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি আগুন, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; এটা নিকৃষ্ট পানীয়! আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!(১)
(১) সূরা আল-ফুরকানের ৬৬ নং আয়াতেও অনুরূপ কাফেরদের শেষ আবাসস্থান সম্পর্কে অনুরূপ উক্তি করা হয়েছে।
তাফসীরে জাকারিয়া
সুরা আল-মুমিনুন আয়াত: ৬৫-৬৭
২৩:৬৫ لَا تَجۡـَٔرُوا الۡیَوۡمَ ۟ اِنَّکُمۡ مِّنَّا لَا تُنۡصَرُوۡنَ
২৩:৬৬ قَدۡ کَانَتۡ اٰیٰتِیۡ تُتۡلٰی عَلَیۡکُمۡ فَکُنۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ تَنۡکِصُوۡنَ
২৩:৬৭ مُسۡتَکۡبِرِیۡنَ ٭ۖ بِهٖ سٰمِرًا تَهۡجُرُوۡنَ
আয়াতের বাংলা অনুবাদ
৬৫. আজ তোমরা সজোরে আর্তনাদ করো না। নিশ্চয় তোমরা আমার পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।
৬৬. আমার আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে অবশ্যই তিলাওয়াত করা হত, তারপর তোমরা তোমাদের পেছন ফিরে চলে যেতে,
৬৭. এর উপর অহঙ্কারবশে, রাত জেগে অর্থহীন গল্প-গুজব করতে।
আয়াতের তাফসীর
(৬৫) (তাদেরকে বলা হবে,) আজ আর্তনাদ করো না। নিশ্চয় তোমরা আমার তরফ থেকে সাহায্য পাবে না। [১]
[১] অর্থাৎ, পৃথিবীতে আল্লাহর আযাবে আচ্ছন্ন হওয়ার পর কোন কান্নাকাটি ও আর্তনাদ আল্লাহর পাকড়াও হতে বাঁচাতে পারবে না। অনুরূপ আখেরাতের শাস্তি হতেও বাঁচানোর বা সাহায্য করার কেউ থাকবে না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
(৬৬) আমার আয়াত[১] তো তোমাদের কাছে আবৃত্তি করা হতো, কিন্তু তোমরা পিছন পায়ে ফিরে সরে পড়তে; [২]
[১] অর্থাৎ কুরআন মাজীদ বা আল্লাহর হুকুম আহকাম; যাতে নবী (সাঃ) এর বানীও শামিল।
[২] نُكُوص এর অর্থ পিছন পায়ে ফিরে সরে পড়া। কিন্তু রূপকভাবে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বা বৈমুখ হওয়ার অর্থে ব্যবহার হয়। অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর আয়াত ও হুকুম-আহকাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নিতে ও সরে পড়তে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৬৭. দম্ভভরে এবিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজবে(১) রাত মাতিয়ে(২) তোমরা খারাপ কথা বলতে।
(১) আয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে। প্রথম অর্থ তারা যখন ঈমান না এনে পিছনে ফিরে যায়, তখন তারা সেটা করে থাকে অহংকারবশত। তারা হক পন্থীদেরকে ঘৃণা ও হেয় মনে করে নিজেদেরকে বড় মনে করে এটি করে থাকে। এমতাবস্থায় আয়াতের পরবর্তী অংশ به এর অর্থ নির্ণয়ে তিনটি মত রয়েছে। এক. به এর সর্বনাম পবিত্র মক্কার হারামের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। তবে হারাম’ শব্দটি পূর্বে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তার সাথে কুরাইশদের গভীর সম্পর্ক এবং একে নিয়ে তাদের গর্ব সুবিদিত ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে শব্দটি উল্লেখ করার প্রয়োজন মনে করা হয়নি। অর্থ এই যে, মক্কার কুরাইশদের আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে মুখ ঘুরিয়ে সরে যাওয়া এবং না মানার কারণ হারামে বসে খারাপ কথা বলে রাত কাটায়। দুই. অথবা এখানে به বলে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে।
অর্থাৎ কুরাইশদের আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে মুখ ঘুরিয়ে সরে যাওয়া এবং না মানার কারণ তারা এ কুরআন নিয়ে খারাপ কথা বলে রাত কাটায়। কখনও এটাকে বলে জাদু, কখনও বলে কবিতা, কখনও গণকের কথা, ইত্যাদি বাতিল কথা। তিন. অথবা به শব্দ দ্বারা এখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুরাইশদের আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে মুখ ঘুরিয়ে সরে যাওয়া এবং না মানার কারণ তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে খারাপ ও কটু কথা বলে রাত কাটায়। কখনও তাকে কবি, আবার কখনও গণক, কখনও জাদুকর, কখনও মিথ্যাবাদী অথবা পাগল, ইত্যাদি বাতিল ও অসার কথাসমূহ বলে থাকে। অথচ তিনি আল্লাহর রাসূল। যাকে আল্লাহ তাদের উপর বিজয় দিয়েছেন আর তাদেরকে সেখান থেকে অপমানিত ও হেয় করে বের করে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর]
আয়াতের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তারা যখন ঈমান না এনে পিছনে ফিরে যায়, তখন তারা কা'বা ঘর নিয়ে অহংকারে মত্ত থাকে। এ অহংকারেই তারা হক গ্ৰহণ করতে রাযী হয় না। কারণ, তারা কা'বার সাথে সম্পর্ক ও তত্ত্বাবধানপ্রসূত অহংকার ও গর্বে ফেটে পড়ার উপক্রম হয়। তারা মনে করে যে, যতকিছুই হোক তাদের ব্যাপারটা আলাদা। কারণ, তারা কা'বার অভিভাবক, অথচ তারা কা'বার অভিভাবক নয়। [ইবন কাসীর] ইবন আব্বাস বলেন, তারা সেখানে বসে রাত জেগে খোশগল্পে মেতে থাকত। মসজিদ ও কা'বাকে খোশ-গল্প ও আসার কথাবার্তার আসরে পরিণত করেছিল, ইবাদাতের মাধ্যমে আবাদ করেনি। [ইবন কাসীর]
এশার পরে বেশি কথা বলা নিষেধ
(২) রাত্রিকালে কাহিনী বলার প্রথা আরব-আজমে প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত রয়েছে। এতে অনেক ক্ষতিকর দিক ছিল এবং বৃথা সময় নষ্ট হত। বর্তমান কালেও যারা সবচেয়ে ভয়ংকর ধরনের লোক তারা রাত জেগে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও দ্বীনের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র পাকাতে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই প্রথা মিটানোর প্রচেষ্টা চালান। তিনি এশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং এশার পর অনর্থক কিসসা-কাহিনী বলা নিষিদ্ধ করেন। [বুখারীঃ ৫৭৪]
এর পেছনে সম্ভবত অন্য এক রহস্য এটাও ছিল যে, এশার সালাতের সাথে সাথে মানুষের সেদিনের কাজকর্ম শেষ হয়ে যায়। এই সালাত সারাদিনের গোনাহসমূহের কাফফারাও হতে পারে। কাজেই এটাই তার দিনের সর্বশেষ কাজ হওয়া উত্তম। যদি এশার পর অনৰ্থক কিসসা-কাহিনীতে লিপ্ত হয়, তবে প্রথমতঃ এটা স্বয়ং অনর্থক ও অপছন্দনীয়; এছাড়া এই প্রসঙ্গে পরনিন্দা, মিথ্যা এবং আরও বহু রকমের গোনাহ সংঘটিত হয়। এর আরেকটি কুপরিণতি এই যে, বিলম্বে নিদ্রা গেলে প্রত্যুষে জাগ্রত হওয়া সম্ভবপর হয় না। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া
সুরা আল-মুমিনুন আয়াত: ১১৭
২৩:১১৭ وَ مَنۡ یَّدۡعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ ۙ لَا بُرۡهَانَ لَهٗ بِهٖ ۙ فَاِنَّمَا حِسَابُهٗ عِنۡدَ رَبِّهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا یُفۡلِحُ الۡکٰفِرُوۡنَ
আয়াতের বাংলা অনুবাদ
১১৭. আর যে আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে, যে বিষয়ে তার কাছে প্রমাণ নেই; তার হিসাব কেবল তার রবের কাছে। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না।
আয়াতের তাফসীর
অবিশ্বাসীরা সফলকাম হবে না
(১১৭) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করে, (অথচ) ঐ বিষয়ে তার নিকট কোন প্রমাণ নেই; তার হিসাব তার প্রতিপালকের নিকট আছে, নিশ্চয়ই অবিশ্বাসীরা সফলকাম হবে না।[১]
সফলতা শুধু ঈমানে
[১] এখান হতে বুঝা যায় যে, প্রকৃত সফলতা ও কৃতকার্যতা হল আখেরাতে আল্লাহর আযাব হতে বেঁচে যাওয়া। শুধুমাত্র পৃথিবীর ধন-দৌলত ও বিলাসসামগ্রীর পর্যাপ্তিই সফলতা নয়। এ সব তো পৃথিবীতে কাফেররাও অর্জন করে থাকে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাদের সফলতার কথা নাকচ করেছেন। যার পরিষ্কার অর্থ হল, আসল সফলতা পরকালের সফলতা; যা একমাত্র ঈমানদাররাই লাভ করবে। পৃথিবীর ধন-সম্পদের আধিক্য নয়; যা বিনা কোন পার্থক্যে মুসলমান ও কাফেরদল সকলেই পেয়ে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
সুরা আন-নাহাল আয়াত: ৮৮
১৬:৮৮ اَلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ صَدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ زِدۡنٰهُمۡ عَذَابًا فَوۡقَ الۡعَذَابِ بِمَا کَانُوۡا یُفۡسِدُوۡنَ
আয়াতের বাংলা অনুবাদ
৮৮. যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় বাধা দিয়েছে, আমি তাদেরকে আযাবের উপর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ তারা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করত।
আয়াতের তাফসীর
শাস্তির উপর শাস্তি
৮৮. যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিয়েছে, আমরা তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করব(১); কারণ তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।
(১) অর্থাৎ একটা আযাব হবে কুফরী করার জন্য এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়ার জন্য হবে আর একটা আযাব। এ শাস্তির ধরন সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সেগুলো হবে এমন বিচ্ছু-সাপ, যার আক্রমনাত্মক দাঁতগুলো লম্বা খেজুর গাছের মত। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩৫৫–৩৫৬]
সুরা আত-তাওবা আয়াত: ৭৯-৮০
৯:৭৯ اَلَّذِیۡنَ یَلۡمِزُوۡنَ الۡمُطَّوِّعِیۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ فِی الصَّدَقٰتِ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَجِدُوۡنَ اِلَّا جُهۡدَهُمۡ فَیَسۡخَرُوۡنَ مِنۡهُمۡ ؕ سَخِرَ اللّٰهُ مِنۡهُمۡ ۫ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ
৯:৮০ اِسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ اَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ ؕ اِنۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِیۡنَ مَرَّۃً فَلَنۡ یَّغۡفِرَ اللّٰهُ لَهُمۡ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ
আয়াতের বাংলা অনুবাদ
৭৯. যারা দোষারোপ করে সদাকার ব্যাপারে মুমিনদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাদানকারীদেরকে এবং তাদেরকে যারা তাদের পরিশ্রম ছাড়া কিছুই পায় না। অতঃপর তারা তাদেরকে নিয়ে উপহাস করে, আল্লাহও তাদেরকে নিয়ে উপহাস করেন এবং তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
৮০. তুমি তাদের জন্য ক্ষমা চাও, অথবা তাদের জন্য ক্ষমা না চাও। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা চাও, তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে হিদায়াত দেন না ।
আয়াতের তাফসীর
উপহাসকারীদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি
(৭৯) বিশ্বাসীদের মধ্যে সতস্ফুতভাবে যারা (নফল) সাদকা দান করে এবং যারা নিজ পরিশ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে এবং উপহাস করে, [১] আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করেন[২] এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
দান সদকা নিয়ে উপহাস
[১] مُطَََّوِّعََِْينَ শব্দের অর্থ হল ওয়াজেব সাদকাহ (যাকাত) ছাড়াও নিজ খুশী মতে আল্লাহর রাহে অতিরিক্ত ব্যয়কারী। جُهد শব্দের অর্থ হল শ্রম ও কষ্ট। অর্থাৎ, সেই সব মানুষ যারা ধনবান নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেদের মেহনত ও কষ্টের সাথে উপার্জিত সামান্য মাল থেকেও অল্প কিছু দান করে থাকে। আলোচ্য আয়াতে মুনাফিক্বদের আরো একটি নোংরা আচরণের কথা উল্লেখ হয়েছে। আর তা এই যে, যখন আল্লাহর রসূল (সাঃ) যুদ্ধ প্রভৃতির ব্যাপারে মুসলিমদেরকে দান করতে আহবান করতেন, তখন তাঁরা তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে ক্ষমতানুযায়ী দান করতেন। কারো কাছে অধিক মাল থাকলে তিনি বেশী বেশী স্বাদক্বাহ করতেন। আর অল্প থাকলে অল্পই দিতেন। এই মুনাফিক্বরা উভয় প্রকার মুসলমানদের প্রতি ভৎর্সনা করত। আর অধিক দানকারীর জন্য বলত, এর উদ্দেশ্য হল লোক দেখানো। আর স্বল্প দানকারীকে বলত, তোমার এই সামান্য মাল স্বাদক্বাহ করায় কি উপকার হবে? অথবা আল্লাহ তাআলা তোমার এই স্বল্প মালের মুখাপেক্ষী নন। (বুখারী সূরা তাওবার ব্যখ্যা পরিচ্ছেদ, মুসলিম যাকাত অধ্যায়) এইভাবে মুনাফিকরা মুসলিমদের সাথে ঠাট্টা-পরিহাস করত।
[২] অর্থাৎ, মু’মিনদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার বদলা এইভাবে দিয়ে থাকেন যে, তাদেরকে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন। এটি হল (কর্মের অনুরূপ দন্ডদান নীতি এবং) অলংকার শাস্ত্রের সাদৃশ্য সাধনের রীতি। অথবা এটা হল বদদুআস্বরূপ। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তাদের সাথেও উপহাস করুন, যেমন তারা মুসলিমদের সাথে করে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল্লাহ অবাধ্য সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না
(৮০) তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা না কর (উভয়ই সমান); যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর, তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না;[১] যেহেতু তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফরী করেছে। [২] আর আল্লাহ অবাধ্য সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। [৩]
[১] সত্তরের সংখ্যা আধিক্য বর্ণনার জন্য ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, তুমি যত বেশীই তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর না কেন, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। এটা উদ্দেশ্য নয় যে, ৭০ বারের অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করলে তারা ক্ষমালাভ করবে।
[২] এখানে ক্ষমা না করার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে মানুষ কারো সুপারিশের আশায় বসে না থাকে; বরং ঈমান ও নেক আমলের পুঁজি সংগ্রহ করে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়। যদি এই আখেরাতের পাথেয় কারো কাছে না থাকে, তাহলে এমন কাফের ও অবাধ্যদের জন্য কেউ সুপারিশ করবে না। যেহেতু আল্লাহ তাআলা এমন লোকদের জন্য সুপারিশের অনুমতিই দান করবেন না।
[৩] এই হিদায়াত (পথপ্রদর্শন) থেকে সেই হিদায়াত উদ্দেশ্য যা মানুষকে তার অভীষ্ট (ঈমান) পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। নতুবা হিদায়াত অর্থ হল, পথনির্দেশ করা। যার সুব্যবস্থা প্রত্যেক মু’মিন ও কাফেরের জন্য করে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি; হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় অকৃতজ্ঞ।’’ (সূরা দাহর ৩ আয়াত) তিনি আরো বলেছেন, ‘‘এবং আমি কি তাকে দু’টি পথ দেখাইনি?’’(সূরা বালাদ ১০ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
******************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url