হজ্জ ও উমরা সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর ২





হজ্জ ও উমরার সময় ইহরাম বাঁধা এবং মহিলার মাসিক শুরু হলে

মীকাতে আসার আগে ইহরাম

মীকাতে আসার আগে ইহরাম বাঁধা হলে কোন ক্ষতি হবে কি?

নির্দিষ্ট মীকাতের পূর্বেই ইহরাম বাঁধা চলে ৩৩০ (মানাসিকুল হাজ্জ, আলবানী ১২ পৃঃ)অবশ্য নির্দিষ্ট মীকাত হতেই ইহরাম বাঁধাই উত্তম।

মীকাতে অতিক্রম করার পরে ইহরাম

ভুলবশতঃ গাড়ী চালক মীকাত অতিক্রম করে বহুদূর চলে গেলে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে উমরাহ হবে কি?

ভুলবশতঃ মীকাত অতিক্রম করে বহুদূর চলে গেলেও মীকাতে ফিরে এসে ইহরাম বাঁধা ওয়াজেব। যেখান থেকে ইহরাম বাঁধলে দম লাগবে। ৩৩১ (ইবনে উষাইমীন)

হজ্জ ও উমরার নিয়ত পরে করলে

হজ্জ ও উমরার নিয়ত না থাকলে মক্কা প্রবেশের সময় ইহরাম বাঁধতে হবে কি?
মক্কায় পৌঁছে পরবর্তীতে হজ্জ উমরার নিয়ত হলে কথা থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে?

উত্তরঃ হজ্জ ও উমরার নিয়ত না থাকলে মক্কা প্রবেশের জন্য ইহরাম বাঁধতে হবে না। কিন্তু মক্কায় কোন আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়ী বা ব্যবসার জন্য আসার পর উমরাহ করার ইচ্ছা হলে হারাম সীমার বাইরে বের হয়ে ইহরাম বেঁধে এসে উমরাহ করবে। হজ্জ করার ইচ্ছা হলে ঐ বাসস্থান থেকেই হজ্জের ইহরাম বাঁধবে ৩৩২ (ফাতাওয়া মুহাম্মাহ ২২ পৃঃ)মিনায় থাকলে মিনা থেকেই হজ্জের ইহরাম বাঁধবে। ৩৩৩ (ঐ ২৬পৃঃ)

ইচ্ছা ছিল আগে আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াব। অতঃপর সময়মত উমরাহ বা হজ্জ করব। এই জন্য ইহরাম না বেঁধে মক্কায় এসেছি। এখন উপায় কি?
পূর্ব থেকেই হজ্জ বা উমরার নিয়তে বিনা ইহরামে মীকাতে সিমা অতিক্রম করে সিমার ভিতরে কোন শহরে আত্মীয়ের বাড়ীতে থেকে সেখানে থেকেই ইহরাম বা হজ্জ করলে দম লাগবে। নচেৎ মীকাতে ফিরে গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসবে। অবশ্য মীকাতে অতিক্রম করার সময় হজ্জ বা উমরার নিয়ত না থাকলে এবং পরে আত্মীয় বাড়ীতে ঐ নিয়ত হলে এ বাড়ী থেকেই ইহরাম বাঁধতে পারে। ৩৩৪(মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ১৯/ ১৬৯)

পুলিশ মক্কা প্রবেশ করতে না দিলে

সঙ্গে পারমিট না থাকার কারণে পুলিশ মক্কা প্রবেশ করতে না দিলে অথবা কোন অসুস্থতার কারণে ইহরাম বেঁধে উমরাহ বা হজ্জ করতে না পারলে করণীয় কি?

ইহরাম বাধার পর কোন কারনবশতঃ হজ্জ (বা উমরাহ) সারতে না পারলে যথাস্থানে একটি কুরবানি করে মাথার কেশ মুণ্ডন বা কর্তন করে হালাল হয়ে বাড়ী ফিরবে। অবশ্য ইহরামের সময় শর্ত লাগিয়ে থাকলে তাঁর উপর কিছু ওয়াজেব নয়। ৩৩৫ (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ ১৪/ ১৩৮)

 তামাত্তু হজ্জের নিয়তে উমরাহর ইহরাম বেঁধে উমরাহ সেরে হজ্জের ইহরাম বাঁধার পূর্বে উমরাহ যদি কোন কারনবশতঃ বাড়ী ফিরতে হয় বা হজ্জ করা না হয়, তাহলে করণীয় কী?
তামাত্তু হজ্জের নিয়তে উমরাহর ইহরাম বেঁধে উমরাহ সেরে হজ্জের ইহরাম বাঁধার পূর্বে যদি কোন কারণবশতঃ বাড়ী ফিরতে হয় বা হজ্জ করা না হয়, তাহলে তাঁর উপরও কিছু ওয়াজেব হবে না। ৩৩৬ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/২১০)

ইহরাম বেঁধে কেউ ইহরাম খুলে ফেললে 

উমরার ইহরাম বেঁধে কেউ অকারণে উমরাহ না করে ফিরে গিয়ে জেনে শুনে ইহরাম খুলে ফেললে তাকে কি করতে হবে?

উমরার ইহরাম বেঁধে কেউ অকারণে উমরাহ না করে ফিরে গিয়ে জেনে শুনে ইহরাম খুলে ফেললে ১টি কুরবানি করবে, অথবা তিন দিন রোযা পালন করবে অথবা ছয়টি মিসকিন (নিঃস্ব)কে মাথা পিছু অর্ধ সা’ (সাওয়া এক কিলো) করে খাদ্য (চাল)সাদকাহ করবে। (আর এই খাদ্য বা গোশত হারাম শরীফের মিসকীনদের মাঝে বণ্ঠন করতে হবে।) স্ত্রী সহবাস করলে দম লাগবে এবং মক্কা ফিরে এসে উমরাহ অবশ্যই পুরা করতে হবে। ৩৩৭ (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৩০০)

তামাত্তুর উমরাহ করার পর

তামাত্তুর উমরাহ করার পর মদীনার যিয়ারতে গেলে অথবা কোন প্রয়োজনে মীকাতে বাইরে গেলে পুনরায় হজ্জের জন্য আসার সময় মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে কী?

তামাত্তুর উমরাহ করার পর মদ্বীনার যিয়ারতে গেলে অথবা কোন প্রয়োজনে মীকাতে বাইরে গেলে পুনরায় হজ্জের জন্য আসার সময় মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা জরুরী। (মতান্তরে জরুরী নয়।) এই ইহরামে আর একটি উমরাহও করতে পারা যায়।

হজ্জের নিয়ত পরিবর্তন

তিন প্রকার হজ্জের নিয়তে কি পরিবর্তন করা যায়?

ক্বিরান বা তামাত্তু হজ্জের নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে পুনরায় ইফরাদের নিয়ত হয় না। যেমন হজ্জের মাসে উমরাহ সেরে মদ্বীনা বা কোন (স্বগৃহ ছাড়া)সফরে গেলে হজ্জের সময় ফিরে এসে ইফরাদ হয় না। অবশ্য ক্বিরানের নিয়ত করে তামাত্তুর নিয়ত করা যায়। ৩৩৮ (ফাতাওয়া মুহিম্মাহ ৩৬ পৃঃ)

নিজের নামে নিয়ত করে অন্যের নামে বদলী হজ্জ

আমি ইহরাম বেঁধে মীকাত পার হয়ে গেছি। তখন এক পরিচিত আমাকে মোবাইলে বললেন, আপনি আমার নামে বদল হজ্জ করুন, কিন্তু নিজের নামে নিয়ত করে অন্যের নামে পরিবর্তন করা যায় কি?

নিজের নামে হজ্জ বা উমরার নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে মীকাত পার হয়ে পরে অন্যের নামে পরিবর্তন করা যায় না।৩৩৯ (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬৭৬)

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী দেওয়ার ভয়ে ইফরাদের ইহরাম বেঁধে হজ্জ সেরে পুনরায় তানঈম এ গিয়ে উমরাহর ইহরাম বেঁধে উমরাহ করার চালাকি শরীয়তসম্মত কি?
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী দেওয়ার ভয়ে ইফরাদের ইহরাম বেঁধে হজ্জ সেরে পুনরায় তানঈম এ গিয়ে উমরাহর ইহরাম বেঁধে উমরাহ করা শরীয়তের নির্দেশে ও নিয়মের পরিপন্থী এবং এমন করা শরীয়তের সাথে ছল-বাহানা করার নামান্তর। ৩৪০ (হাজ্জাতুন্নাবী, আলবানী ২০ পৃঃ)

মীকাতে গোসল করা

মীকাতে গোসল করা কি জরুরী? ঠাণ্ডা বা ভিড়ের ভয়ে যদি বাসা বা হোটেল থেকে গোসল করে যাই অথবা গোসল না করতে পারি, তাহলে কোন ক্ষতি আছে কি?

মীকাতে গোসল করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। বাসা থেকেও গোসল করা চলে। গোসল না করতে পারলে ইহরাম বা হজ্জ উমরাহর কোন ক্ষতি হয় না।

পেশাব ঝরার রোগ থাকলে ইহরামের ক্ষতি

সর্বদা পেশাব ঝরার রোগ থাকলে ইহরামের কোন ক্ষতি হবে না?

পেশাব ঝরার রোগ থাকলে ইহরামের কোন ক্ষতি হয় না। নামায ও তাওয়াফের পূর্বে ইস্তিনজা করে (কাপড়ে লাগলে তা ধুয়ে) ওযু জরুরী। ৩৪১ (ফাতাওয়া মহিম্মাহ ২৪ পৃঃ)

ইহরাম বেঁধে তালবিয়্যাহ পড়তে ভুলে যাওয়া

ইহরাম বেঁধে মক্কার পথে যদি কেউ তালবিয়্যাহ পড়তে ভুলে যায়, তাহলে কোন ক্ষতি হবে কি?

তালবিয়্যাহ পড়তে ভুলে গেলে কোন ক্ষতি হয় না। কারণ তা সুন্নত। ৩৪২ (ফাতাওয়া মুহিম্মাহ ১৭ পৃঃ)

 ইহরাম অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গাড়ীর ধাক্কায় বিড়াল মেরে ফেললে কোন দম আছে কি?
ইহরাম অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বিড়াল মেরে ফেললে কিছু ওয়াজেব নয়। ৩৪৩ (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬৭৬)

উমরাহ করার পূর্বেই মাসিক শুরু

উমরাহ করতে গিয়ে পূর্বেই মহিলার মাসিক শুরু হয়ে গেলে কি করবে?

উমরাহ করতে গিয়ে পূর্বেই মহিলার মাসিক শুরু হয়ে গেলে পবিত্রতার অপেক্ষা করবে। সফর করা জরুরী হলে ইহরাম অবস্থায় থেকে সফর করে পুনরায় ফিরে এসে উমরাহ আদায় করবে। কিন্তু বহির্দেশের হলে খরচ, ভিসা ইত্যাদির ঝামেলা থেকে বাঁচতে উমরাহ করে নিতে পারবে। অর্থাৎ ভিসা শেষ হওয়ার ভয় থাকলে লজ্জাস্থানে পটি বেঁধে নিয়ে তাওয়াফ ও সাঈ করে চুলের ডগা কেটে উমরাহ সম্পন্ন করে হালাল হয়ে যাবে। যেহেতু ঐ সময় তাওয়াফ করা তাঁর জন্য জরুরী প্রয়োজন। আর অতি প্রয়োজনে ও অসুবিধার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ জিনিস বৈধ হয়ে যায়। ৩৪৪ (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬৪৩)তবে হজ্জের উমরাহ হলে হজ্জের কাজ সারার পর উমরাহ করে নেবে।

তাওয়াফ ইফায্বার পূর্বেই মাসিক শুরু

তাওয়াফ ইফায্বার পূর্বেই মাসিক শুরু হলে মহিলার কর্তব্য কি?

তাওয়াফ ইফায্বার পূর্বে মাসিক শুরু হলে তওয়াফ ও সাঈ ছাড়া হজ্জের সব কিছুই করবে। অতঃপর সফর করার আগে পবিত্রা না হলে এবং সফর জরুরী হলে সফর করবে। কিন্তু বাড়ীতে ঐ ইহরাম অবস্থাতেই থাকবে। সুগন্ধি ইত্যাদি ব্যাবহার করবে না। স্বামীর সাথে কোন প্রকার যৌনাচারে লিপ্ত হবে না। অতঃপর পবিত্র হলে মক্কায় ফিরে এসে তাওয়াফ ও সাঈ করবে। যদি ফিরে আসা অসম্ভব মনে হয়, তাহলে মক্কায় মাসিক বন্ধ করার ইঞ্জেকশন (বা ট্যাবলেট)ব্যবহার করবে। তা সম্ভব না হলে লজ্জাস্থানে পটি বেঁধে তওয়াফ করে নেবে। ৩৪৫ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/২৩৭)

কোন মহিলা পবিত্রা হওয়ার পর উমরার তওয়াফ ও সাঈ করে পুনরায় খুন দেখলে কি করবে?

উমরাহ তওয়াফ অ সাঈ করার পর পুনরায় খুন দেখলে, যদি তা সত্যই মাসিকের খুন হয়, তবে পুনরায় তওয়াফ অ সাঈ করতে হবে। যেহেতু অপবিত্রতার কারণে পূর্বেই তয়াফ-আদি বাতিল হএয় যাবে। ৩৪৬ (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৬৪৭)আর উমরাহতে তওয়াফের আগে সাঈ শুদ্ধ নয়। হজ্জের তওয়াফ সাঈ হলে আর সাঈ করতে হতো না। কারণ মাসিক অবস্থায় সাঈ করা চলে।

তওয়াফ ইফায্বাহ করার সময়ে মাসিক শুরু

তওয়াফ ইফায্বাহ করা কালীন সময়ে কোন মহিলার মাসিক শুরু হলে কি করবে? অভিভাবককে লজ্জায় বলতে না পেরে কেউ যদি সেই অবস্থাতেই তওয়াফ-আদি সেরে বাড়ী ফিরে প্রকাশ করে, তাহলে করণীয় কি?

তওয়াফ ইফায্বাহ করা কালীন সময়ে কোন মহিলার মাসিক শুরু হলে তওয়াফ ছেড়ে মসজিদের বাইরে চলে যাবে। কিন্তু লজ্জায় বলতে না পারে কেউ যদি সেই অবস্থাতেই তওয়াফ-আদি সেরে বাড়ী ফিরে প্রকাশ করে, তাহলে তাঁর স্বামী বা অভিভাবকের উচিৎ, তাকে পুনরায় মক্কায় নিয়ে এসে তওয়াফ করানো। (আর সাঈ শুদ্ধ হয়ে গেছে।)এর মধ্যে যদি সে সুগন্ধি ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে, তাহলে ৩টি রোযা রাখবে অথবা ৬টি মিসকিন মিসকীনকে (সওয়া ১ কিলো করে চাল) খাদ্য দান করবে অথবা ১টি ছাগল বা ভেড়া কুরবানী দিতে হবে। স্বামী-সহবাস করে থাকলে মক্কায় ১টি কুরবানী দিয়ে তাঁর গোশত হারামের ফকীরদের মাঝে বিতরণ করবে। আর এমন মহিলাকে উক্ত কাজের জন্য অবশ্যই তওবা করতে হবে। ৩৪৭ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ২/২৩৮)

তওয়াফের পর সাঈ করার পূর্বে মাসিক শুরু

তওয়াফের পর সাঈ করার পূর্বে মাসিক শুরু হলে মহিলা কি করবে?

উত্তরঃ তওয়াফের পর সাঈ করার পূর্বে মাসিক শুরু হলে সাঈ সেরে নেবে। কারণ, সাঈর জন্য পবিত্রতা শর্ত জরুরী নয় এবং সাঈর স্থানও মসজিদের মধ্যে গণ্য নয়। তাই সে সেখানে অবস্থান ও অপেক্ষাও করতে পারে। ৩৪৮ (ঐ ২/২৩৯)
এ সব ঝামেলার হাত থেকে বাঁচার জন্য মহিলা মাসিক আসার সময় বুঝে মাসিক বন্ধ রাখার ট্যাবলেট ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারে।৩৪৯ (ঐ ২/১৮৫)



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url