হজ্জ ও উমরা সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর ৭






হজ্জের কুরবানী, বিদায়ী তাওয়াফ ও অন্যান্য মাসালা মাসায়েল

হজ্জের কুরবানী ফিদয়্যাহ বা দম

হজ্জের কুরবানী , ফিদয়্যাহ অথবা দম মক্কাতেই যবেহ করা কি জরুরী?

হজ্জের কুরবানী, ফিদয়্যাহ অথবা দম মক্কাতেই যবেহ করা কি জরুরী। তা জিদ্দা বা অন্য কোথাও যবেহ করা বৈধ নয়। ৪৩৫ (ইবনে বায)

ভিড় দেখে বিদায়ী তওয়াফ না করা

জিদ্দার বাসিন্দা হজ্জের কাজ শেষ করে ভিড় দেখে বিদায়ী তওয়াফ না করে যদি জিদ্দায় ফিরে যায় এবং দু এক সপ্তাহ পরে মক্কায় এসে তা করে, তাহলে শুদ্ধ হবে কি?

না। সে তওয়াফ বিদায়ী বলে গণ্য হবে না। বিদায়ী তওয়াফ হজ্জের কাজ শেষ করে মক্কা ত্যাগ করার পূর্বেই করতে হবে। কেউ এরূপ না করে থাকলে তাকে দম দিতে হবে। ৪৩৬ (ইবনে বায)

ইদ্দতে থাকা অবস্থায় মহিলা হজ্জ

ইদ্দতে থাকা অবস্থায় মহিলা এগানার সাথে হজ্জ করতে যেতে পারে কি না?

স্বামী মৃত্যুর ইদ্দতে থাকলে সে ঘর ছেড়ে বের হতে পারবে না। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীগণ চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে।”(বাকারাহঃ ২৩৪)
তালাকের ইদ্দতে স্বামীর অনুমতি হলে যেতে পারবে।৪৩৭ (ইবনে জিবরীন)

কাবার গিলাফ ধরে দুআ করা

কাবাগৃহের দেওয়াল বুকে লাগিয়ে দুআ করা অথবা কাবার গিলাফ ধরে দুআ করা কি শরীয়ত সম্মত?

এ কাজ ভিত্তিহীন না শরীয়তে। কাবা গৃহের যে অংশ স্পর্শ করানো নবী (সঃ) কর্তৃক প্রমাণিত, কেবল সেই অংশই স্পর্শ করেই তওয়াফ বা দুআ করা উচিৎ। একদা আমির মুআবিয়া (রঃ) কাবা গৃহের তওয়াফ করছিলেন। তিনি হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ছাড়াও অন্য দুটি রুকন (কোন) কে স্পর্শ করেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন ইবনে আব্বাস (রঃ)। তাঁর এই আমল দেখে তাকে বললেন, “আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামিনী ছাড়া অন্য রুকন স্পর্শ করতেন না।” মুআবিয়া বললেন, “আল্লাহ্‌র গৃহে কোন কিছুই তো পরিত্যাজ্য নয়।” ইবনে আব্বাস বললেন, “কিন্তু (মহান আল্লাহ বলেন,) ‘তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব ২১ আয়াত) এ কথা শুনে মুআবিয়া বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ।” ৪৩৮ (তিরমিযী, শাফেয়ী, আহমাদ)

হজ্জ সফরে বিড়ি সিগারেট

কিছু হাজী আছে, যারা হজ্জ সফরে বিড়ি সিগারেট খেতে ছাড়ে না, গাড়িতে বসে গান বাজনা শোনা বর্জন করে না। এদের ব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশ কি?

এরা হল পাপাচারী। আর মহান আল্লাহ বলেছেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শওয়াল, জিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। সুতরাং যে কেউ মাসগুলিতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জের সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), কোন পাপ কাজ এবং কোন প্রকার ঝগড়া বিবাদ না করে।”(বাকারাহঃ ১৯৭)
কিন্তু যদি ইবাদতের সফরেও হারামখোরির মাধ্যমে পাপাচার বর্জন না করতে পারে, তাহলে তাদের প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ ছাড়া বলার আর কি থাকতে পারে? ৪৩৯ (ইবনে উষাইমীন)

তাশরীকের রাতে মিনায় অবস্থান না করা

তাশরীকের একটা রাত অসুস্থতার কারণে মিনায় অবস্থান করা হয়নি। তাঁর জন্য কি দম দিতে হবে?

অসুস্থতা একটি ওজর। সুতরাং দম ওয়াজেব হবে না। প্রয়োজনের তাকীদে মিনায় রাত্রিবাস বর্জনে অনুমতি আছে। নবী (সঃ) পানি পরিবেশক ও পশু রক্ষকদেরকে মিনায় রাত্রিবাস বর্জনের অনুমতি দিয়েছিলেন। (ইবনে বায)

মিনায় জায়গা না পেলে

মিনায় জায়গা না পেলে মক্কায় রাত্রি যাপনের অনুমতি আছে কি?

মিনায় জায়গা না পেলে মিনার লাগালাগি শেষ খীমার ধরে রাত্রিবাস করতে হবে। মক্কায় রাত্রিবাস করা বৈধ হবে না। যেমন মসজিদে জায়গা না পেলে মসজিদের লাগালাগি জায়গায় পাশাপাশি কাতার বেঁধে নামায পড়তে হবে। সে ক্ষেত্রে ঘরে গিয়ে নামায পড়লে চলবে না। ৪৪১ (ইবনে উষাইমীন)

জোরেশোরে দুআ পড়া

এক শ্রেণীর হাজী আছে, যারা জোরেশোরে দুআ পড়ে। প্রত্যেক চক্করে নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত দুআ পাঠ করে। একজন বলে, তার পিছনে সকলে বলে চলে। এতে ডিস্টার্ব হয় বড়। এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কি?

পবিত্র কাবায় তওয়াফ একটি ইবাদত, যাতে আছে মহান আল্লাহ্‌র দরবারে বিনয় নম্রতা প্রকাশ। তওয়াফকারীর কর্তব্য হল, সত্য হৃদয় নিয়ে দুআ ও প্রশংসা, আশা, ভয় ও ভরসার সাথে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা। কিন্তু তওয়াফের চক্করে চক্করে কোন নির্দিষ্ট দুআ বর্ণিত হয়নি। কেবল দুই পাথরের মধ্যবর্তী জায়গায় ‘রাব্বানা আ-তিনা’ দুআ বলতে হয়। অথচ প্রচলিত ভুলগুলির মধ্যে একটি ভুল এই যে, লোকেরা সঙ্গে এমন বই পত্র নিয়ে দেখে দেখে প্রত্যেক চক্করের জন্য খাস এমন সব দুআ পড়ে থাকে, কিতাব ও সুন্নাহতে যার দলীল নেই। বরং তা মনগড়া বিদআত। অনেকে হয়তো যা পড়ে, তার মানেও বুঝে না। বরং তার সঠিক উচ্চারণও জানে না। অনেকে দোহারের মত অপরের পঠিত দুআর সম্পূর্ণ বুঝতে বা শুনতে না পেয়ে শেষের শব্দগুলি বলে। অথচ তাতে অর্থ বিগড়ে যায়। তাছাড়া এতে পার্শ্ববর্তী তওয়াফকারীদের বড় ডিস্টার্ব হয়। আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) সাহাবাগণকে সশব্দে কুরআন পড়তে নিষেধ করে বলেন, ‘তোমরা একে অপরকে কষ্ট দিয়ো না এবং একে অপরের উপর কিরাআতে শব্দ উঁচু করো না।’ ৪৪২ (আহমাদ ৩/৯৪, আবূ দাঊদ ১২৩২ নং, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রমুখ) এ যদি কুরআন পড়ার কথা হয়, তাহলে মনগড়া বিদআতী দুআ জোরেশোরে পড়ে অপরকে ডিস্টার্ব করা কত বড় ভুল? যে দুআ পড়ে তওয়াফকারী কোন মিষ্টতা অনুভব করে না। পক্ষান্তরে তারা যদি এমন দুআ ও যিকর পড়ত, যার মানে বুঝে এবং যা তাদের মুখস্থ আছে, তাহলে তা-ই তাদের জন্য উত্তম হত এবং কবুল হওয়ার অধিক উপযুক্ত হত। পরন্ত তা-ই যথেষ্ট ও বরকতময় হত।

উমরাহ পরে বিদায়ের সময়

উমরাহ করার পর বিদায়ের সময় বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজেব কি?

যদি উমরাহ করেই কেউ সাথে সাথে ফিরে আসে, তাহলে তাকে বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে না, উমরাহ তওয়াফই যথেষ্ট। কিন্তু কেউ যদি উমরাহর পর দীর্ঘ সময় অবস্থান করে, তাহলে সঠিক মতে বিদায়ী তওয়াফ ওয়াজেব। কারণ (এক) নবী (সঃ) বলেছন, “তোমাদের কেউ যেন (কাবা)গৃহের সাথে শেষ সময় অতিবাহিত না করে প্রস্থান না করে।” ৪৪৩ (আহমাদ ১/২২২, মুশলিম ১৩২৭ নং)

(দুই) উমরাহকে ‘ছোট হজ্জ’ বলা হয়। সুতরাং হজ্জে বিদায়ী তওয়াফ ওয়াজেব হলে, উমরাহতেও। (তিন) এক উমরাহকারী য়্যা’লা বিন উমইয়াকে বলেছিলেন, “তুমি তোমার উমরাতে তাই কর, যা হজ্জে করে থাকো।” ৪৪৪ (বুখারী মুসলিম)
মতান্তরে উমরাহতে বিদায়ী তওয়াফ ওয়াজেব নয়। যেহেতু নবী (সঃ)এর উক্ত আদেশ ছিল হাজীদের জন্য। ৪৪৬(লাজনাহে দায়েমাহ)

 ইহরাম সিলাইকৃত কাপড়ে পরা

ইহরাম সিলাইকৃত কাপড়ে পরা নিষেধ। কাপড়ে সে কোন সিলাই হলেই কি তা পরা যাবে না?

সিলাইকৃত কাপড় মানে হল, যা দেহের অঙ্গসমূহের মাপে কেটে জামা ও পায়জামা আকারে সিলাই করা হয়। কাটা লুঙ্গি বা চাদর সিলাই থাকা দোষ নয়। ফেটে বা ছিঁড়ে গেলে তা সিলাই করাও দোষ নয়। বেল্ট, ঘড়ি, ব্যাগ বা জুতার সিলাই থাকলে তা পরা দূষণীয় নয়। ৪৪৭ (ইবনে বায)


 তওয়াফ চত্বরে কোন কোন জামাআতের দেখা যায়, তারা তাদের মহিলাদেরকে পরপুরুষের দেহ স্পর্শ থেকে বাঁচাতে হাতে হাত দিয়ে ঘিরে রাখে। ফলে তাদের কারো কারো বুক বা পিঠ কাবার দিকে হয়। তাদের তওয়াফ কি শুদ্ধ হবে?
তওয়াফের সময় শর্ত ও ওয়াজেব হল কাবা তয়াফকারীর বাম দিকে থাকবে। অতএব যারা কাবাকে সামনে অথবা পিছনে করে তওয়াফ করবে তাদের তওয়াফ শুদ্ধ হবে না, বিধায় তাদের হজ্জ বা উমরাহও শুদ্ধ হবে না। ৪৪৯(ইবনে উষাইমীন)
হজ্জ করতে গিয়ে নবী (সঃ) এর কবর যিয়ারত করা জরুরী

হজ্জ করতে গিয়ে নবী (সঃ) এর কবর যিয়ারত

হজ্জ করতে গিয়ে নবী (সঃ) এর কবর যিয়ারত করা জরুরী কি?

হজ্জ করতে গিয়ে নবী (সঃ) এর কবর যিয়ারত জরুরী হওয়ার ব্যাপারে যে হাদিস বর্ণনা করা হয়, তা সহিহ নয়। ৪৫০ (দিফাউন আনিল হাদীসিন নাবাবী, আলবানী ১/৪৬)



হজ্জ করতে গিয়ে মদীনায় ৪০ অক্তের নামায পরা কি জরুরী?বরং এমন ধারনা করাটা বিদআত। ৪৫১ (মানাসিকুল হাজ্জ আলবানী ৬৩ পৃঃ)মদিনার মসজিদে ৪০ ওয়াক্তের নামায পড়ার হাদিসটি মুনকার।(যযীফ) ৪৫২ (সিঃ যয়ীফাহ ৩৬৪ নং)

হজ্জ করার পর মুরতাদ্দ হওয়া

হজ্জ করার পর যদি কোন মুসলিম ‘মুরতাদ্দ’ হয়ে যায়, তারপর আবার তওবা করে ইসলামে ফিরে আসে, তাহলে কি তার প্রথম হজ্জ বাতিল হয়ে যাব এবং তাকে দ্বিতীয়বার হজ্জ করতে হবে?

তার প্রথম হজ্জ বাতিল হবে যাবে না এবং তাকে দ্বিতীয়বার হজ্জ করতে হবে না। ৪৫৩ (আলবানী, সিঃ সহীহাহ ২৪৮ নং)

হজ্জের কাজগুলি হেঁটে করা

হজ্জের কাজগুলি হেঁটে করা উত্তম, নাকি সওয়ার হয়ে করা উত্তম?

সওয়ার হয়ে হজ্জ করাই উত্তম। যেহেতু মহানবী (সঃ) সওয়ার হয়েই হজ্জ করেছেন। যদি পায়ে হেঁটে হজ্জ করা উত্তম হতো, তাহলে নিশ্চয় তিনি সওয়ার হয়ে হজ্জ করতেন না। (আলবানী, সিঃ যয়ীফাহ ৪৯৫ নং)



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url