সিরাতুন নবী (সাঃ) || (পর্ব-২১) || ইসলামের প্রথম রক্তপাত ও প্রথম হিজরত ||





সিরাতুন নবী (সাঃ) পর্ব ২১-এর আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

আরকামের বাড়ি মুসলমানদের গোপন আস্তানা

আরক্বাম বিন আবিল আরক্বাম মাখযূমীর বাড়িটি ছিল সাফা পর্বতের উপর অত্যাচারীদের দৃষ্টির আড়ালে এবং তাদের সম্মেলন স্থান হতে অন্য জায়গায় অবস্থিত। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ বাড়িকেই মুসলমানদের সাথে গোপনে মিলিত হওয়ার উপযুক্ত স্থান হিসেবে গ্রহণ করলেন। যাতে তিনি (ﷺ) সাহাবীদেরকে কুরআনের বাণী শোনানো, তাদের অন্তরকে কলূষমুক্তকরণ এবং তাদেরকে কিতাব এবং হিকমত শিক্ষা দিতে পারেন। আর মুসলমানগণ যেন নিরাপদে তাদের ইবাদাত বন্দেগী চালিয়ে যেতে পারেন। রাসূল (ﷺ) এর উপর যা অবতীর্ণ হয় তা তারা নিরাপদে গ্রহণ করতে পারেন এবং অত্যাচারী মুশরিকদের অজান্তে যারা ইসলাম গ্রহণ করতে চায় তারা যাতে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হতে পারেন।

ইসলামের প্রথম রক্তপাত

এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ ছিল না যে, তিনি যদি তাঁদের সঙ্গে একত্রিত হন তাহলে মুশরিকগণ তার আত্মশুদ্ধি এবং কিতাব ও হিকমত শেখার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন এবং এর ফলে মুসলিম ও মুশরিক উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা থাকবে। ইবনু ইসহাক্ব বর্ণনা করেন, সাহাবীগণ (রা.) তাঁদের নির্দিষ্ট ঘাঁটিগুলোতে একত্রিত হয়ে সালাত আদায় করতেন। ঘটনাক্রমে এক দিবস কিছু সংখ্যক কাফের কুরাইশ তাদের এভাবে সালাত পড়তে দেখে ফেলার পর অশ্লীল ভাষায় তাদের গালিগালাজ করতে থাকেন এবং আক্রমণ করে বসেন। মুসলিমগণও সে আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসেন। প্রতিহত করতে গিয়ে সা’দ বিন ওয়াক্কাস এক ব্যক্তিকে এমনভাবে প্রহার করেছিলেন যে তার শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে রক্তধারা প্রবাহিত হতে থাকে। ইসলামে এটাই ছিল সর্বপ্রথম রক্তপাত।[১]

এটা সর্বজনবিদিত বিষয় যে, এভাবে যদি বারংবার মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হতে থাকত তাহলে স্বল্প সংখ্যক মুসলিম স্বল্প সময়ের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যেতেন। অতএব, ইসলামের সর্বপ্রকার কাজকর্ম অত্যন্ত সঙ্গোপনে সম্পন্ন করার দাবী ছিল খুবই যুক্তিসঙ্গত ও বিজ্ঞোচিত। এ প্রেক্ষিতে সাধারণ সাহাবীগণ (রা.) তা’লীম, তাবলীগ, ইবাদত বন্দেগী সম্মেলন ও পারস্পরিক মত বিনিময় ইত্যাদি যাবতীয় কাজকর্ম সঙ্গোপনেই করতে থাকেন। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর এবাদত-বন্দেগী এবং প্রচারমূলক কাজকর্ম মুশরিকগণের সামনাসামনি প্রকাশ্যেই করতে থাকেন। তাকে কোন কিছুতেই তারা বাধা দেয়ার সাহস পেত না। তবুও মুসলিমগণের কল্যাণের কথা চিন্তা-ভাবনা করে সঙ্গোপণেই তিনি তাদের সঙ্গে একত্রিত হতেন।

ইসলামের প্রথম হিজরত আবিসিনিয়ায়

অন্যায় অত্যাচারের উল্লে­খিত বিভীষিকাময় ধারা-প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম সূচিত হয় নবুয়তের চতুর্থ বর্ষের মধ্যভাগে কিংবা শেষের দিক থেকে। জুলুম নির্যাতনের শুরুতে এর মাত্রা ছিল সামান্য। কিন্তু দিনের পর দিন মাসের পর মাস সময় যতই অতিবাহিত হতে থাকল জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা ততই বৃদ্ধি পেতে পেতে পঞ্চম বর্ষের মধ্যভাগে তা চরমে পৌঁছল এবং শেষ পর্যন্ত এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হল যে, মক্কায় মুসলিমদের টিকে থাকা এক রকম অসম্ভব হয়ে উঠল। তাই এ বিভীষিকার কবল থেকে পরিত্রাণ লাভের উদ্দেশ্যে তাঁরা বাধ্য হলেন পথের সন্ধানে প্রবৃত্ত হতে। অনিশ্চয়তা এবং দুঃখ-দুর্দশার এ ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যে অবতীর্ণ হল সূরাহ যুমার।

এতে হিজরতের জন্য ইঙ্গিত প্রদান করে বলা হয় যে, ‘আল্লাহর জমিন অপ্রশস্ত নয়।’

‏(‏لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوْا فِيْ هَذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ اللهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ‏)‏ ‏[‏الزمر‏:‏10]

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। এ দুনিয়ায় যারা ভাল কাজ করবে, তাদের জন্য আছে কল্যাণ। আল্লাহর যমীন প্রশস্ত (এক এলাকায় ‘ইবাদাত-বন্দেগী করা কঠিন হলে অন্যত্র চলে যাও)। আমি ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পুরস্কার অপরিমিতভাবে দিয়ে থাকি।’ (আয-যুমার ৩৯ : ১০)

অত্যাচারের মাত্রা যখন ধৈর্য ও সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেল, বিশেষ করে কুরআন মাজীদ পড়তে এবং নামায আদায় করতে না দেয়ার মানসিক যন্ত্রণা যখন চরমে পৌঁছল তখন তারা দেশান্তরের কথা চিন্তাভাবনা করতে শুরু করলেন। তিনি বহু পূর্ব থেকেই আবিসিনিয়ার সম্রাট আসহামা নাজ্জাশীর উদারতা এবং ন্যায় পরায়ণতা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। অধিকন্তু, সেখানে কারো প্রতি যে কোন অন্যায়-অত্যাচার করা হয় না সে কথাও তিনি জানতেন। মুসলিমগণ সেখানে গমন করলে নিরাপদে থাকার এবং নির্বিঘ্নে ধর্ম কর্ম করার সুযোগ লাভ করবেন। এ সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে তাঁদের জীবন এবং ঈমানের নিরাপত্তা বিধান এবং নির্বিঘ্নে ধর্মকর্ম করার সুযোগ লাভের উদ্দেশ্যে হিজরত করে আবিসিনিয়ায় গমনের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবীগণ (রাঃ)-কে নির্দেশ প্রদান করেন।[২]

এ দিকে মুহাজিরগণ সম্পূর্ণ নিরাপদে আবিসিনিয়ায় বসবাস করতে থাকলেন।[৩] পূর্বাহ্নেই বলা হয়েছে যে, এ দলটি রজব মাসে মক্কা থেকে হিজরত করেন। কিন্তু সেই বছরটির রমাযান মাসে কাবা শরীফে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়ে যায়।

তথ্যসূত্রঃ
[১] ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড ২৬৩ পৃঃ। এবং মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব, মুখতাসারুস সীরাহ ৬০ পৃঃ।
[২] শাইখ আব্দুল্লাহ মুখতাসারুস সীরাহ পৃঃ ৯২-৯৩, যাদুল মা’আদ ১ম খন্ড ২৪ পৃঃ ও রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ৫১ পৃঃ।
[৩] রহামাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড যাদুল মাযাদ ১ম খন্ড ২৪ পৃঃ।


******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url