সিরাতুন নবী (সাঃ) || (পর্ব-৩৩) || সাওদাহ (রাঃ)-এর সাথে বিবাহ এবং মুসলিমগণের ধৈর্য ও দৃঢ়তা ||






সাওদাহ (রাঃ)-এর সাথে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বিবাহ এবং মুসলিমগণের ধৈর্য ও দৃঢ়তা



সিরাতুন নবী (সাঃ) পর্ব ৩৩-এর আলোচ্য বিষয়সমূহঃ 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে সাওদাহ (রাঃ)-এর বিবাহ

নবুওয়তের ১০ম বর্ষের শাওয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাওদা বিনতে যাম’আহ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন। এ মহিলা নবুওয়তের প্রথম অবস্থাতেই মুসলিম হয়েছিলেন। হাবশের (আবিসিনিয়ায়) দ্বিতীয় হিজরতের সময় হিজরতও করেছিলেন। তাঁর পূর্ব স্বামীর নাম ছিল সাকরান বিন ‘আমর। তিনিও প্রথম পর্যায়ের মুসলিম ছিলেন এবং সাওদাহ তাঁর সঙ্গে হাবশা হিজরত করেছিলেন। সাওদাহর স্বামী হাবশে মৃত্যুবরণ করেন। এ কথাও বলা হয়ে থাকে যে, মক্কায় ফিরে আসার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বৈধব্যের পর ইদ্দত পালন শেষ হলে নবী করীম (ﷺ) তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। তারপর তাঁরা উভয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। খাদীজাহ (রাঃ)-এর পর এ মহিলা ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রথম স্ত্রী (বিবাহ পরম্পরায়) দ্বিতীয় স্ত্রী) কয়েক বছর পর ইনি নিজের পালা আয়িশাহ (রাঃ)-কে দান করে দিয়েছিলেন।[১]


মুসলিমগণের ধৈর্য ও দৃঢ়তার অন্তর্নিহিত কারণসমূহ

আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান

উপর্যুক্ত প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য উত্তরমালার মধ্যে সর্বপ্রথম এবং সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সমগ্র বিশ্ব জাহানের অনাদি অনন্ত অদ্বিতীয়, সর্বশক্তিমান স্রষ্টা প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি প্রগাঢ় বিশ্বাস এবং তাঁর অস্তিত্ব, হিকমত এবং কুদরত সম্পর্কে সঠিক এবং সুস্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান। কারণ, তাওহীদের সুস্পষ্ট ধারণা এবং তাওহিদী নূরে যখন মু’মিনের অন্তর আলোকিত, উদ্বেলিত ও পুলকিত হয়ে ওঠে, পর্বত-প্রমাণ প্রতিবন্ধকতাও তখন তাঁর সামনে শুষ্ক তৃণখন্ডের মতো তুচ্ছ মনে হয়। যে মু’মিন পরিপক্ক ও সুদৃঢ় ঈমান এবং মজবুত ইয়াকীনের অধিকারী হওয়ার দুর্লভ সৌভাগ্য লাভ করেন, তাঁর সম্মুখে পৃথিবীর যত প্রকট সমস্যাই আসুক না কেন, তা যতই ভয়ংকর এবং ভীতিপ্রদই হোক না কেন, তাঁর অটল বিশ্বাসে বলীয়ান চেতনা এবং তাওহীদের অলৌকিক আস্বাদে পরিতৃপ্ত মন এ সব কিছুকে স্যাঁতসেঁতে এদো পরিবেশে ভগ্ন ইষ্টকখন্ডের উপর জমে উঠা শেওলার চাইতে অধিক কিছুই মনে করেন না। এ কারণেই ঈমানী সুরার অলৌকিক আস্বাদে পরিতৃপ্ত কোন ঈমানদারের প্রাণের সজীবতা এবং উদার উন্মুক্ত চিত্তের আনন্দানুভূতি মূর্খ ও নিকৃষ্ট শ্রেণীর মানব সৃষ্ট দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণাকে কখনো পরোয়া করে না। কুরআন মাজীদে যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,

‏(‏فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاء وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الأَرْضِ‏)‏ ‏[‏الرعد‏:‏17‏]

‘‘ফেনা খড়কুটোর মত উড়ে যায়, আর যা মানুষের জন্য উপকারী তা যমীনে স্থিতিশীল হয়।’ (আর-রা‘আদ : ১৩ : ১৭)

তারপর এ কারণের সূত্র ধরেই অস্তিত্ব লাভ করে অজস্র কারণ যা সেই ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও দৃঢ়তাকে আরও মজবুত করে তোলে।

মহিমান্বিত ও প্রাজ্ঞ পরিচালনা

এটা সর্বজনতবিদিত এবং সর্ববাদী সম্মত সত্য যে, নবী করীম (ﷺ) ছিলেন বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ এবং সাধারণভাবে বিশ্বমানবের জন্য মহিমান্বিত পরিচালক ও প্রাজ্ঞ পথপ্রদর্শক। দেহে, মন-মানসিকতায়, নেতৃত্বে, সৌজন্যে, সদাচারে তিনি ছিলেন সর্ব প্রজন্মের সকলের জন্য আদর্শ, অপরূপ দৈহিক সুষমা, আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা, মহোত্তম চরিত্র, বিনম্র স্বভাব, উদার-উন্মুক্ত আচরণ, ন্যায়নিষ্ঠ কার্যকলাপ, অসাধারণ পান্ডিত্য বুদ্ধিমত্তা ও বাগ্মিতা সব কিছুর সমন্বয়ে তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যাঁর সান্নিধ্য কিংবা সাহচর্যে মানুষ একবার এলে বার বার ফিরে ফিরে আসার জন্য আপনা থেকেই প্রলুব্ধ হতো এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠল। তাঁর বিনয় নম্র আচরণ, সত্যবাদিতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, আমানতদারী, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সদগুণাবলীর জন্য বন্ধু-বান্ধব দূরের কথা, শত্রুরাও তাঁকে শ্রদ্ধা না করে পারতেন না। তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁর শত্রুরাও তাঁর কোন উক্তি কিংবা অঙ্গীকারকে যে অবিশ্বাস্য বলে মনে করতে পারতেন না তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এখানে কিছু ঘটনার কথা উল্লে­খ করা হলঃ


লুকিয়ে তিন মুশরিকের কুরআন পাঠ শ্রবণ

একদা কুরাইশগণের এমন তিন ব্যক্তি একত্রিত হয় যারা পৃথক পৃথকভাবে একজন অন্যজনের অগোচরে কুরআন পাঠ শ্রবণ করেছিল। কিন্তু পরে তাদের প্রত্যেকের এ গোপন তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়ে। সেই তিন জনের মধ্যে একজন ছিল আবূ জাহল। তিন জন যখন একত্রিত হল তখন একজন আবূ জাহলকে বলল, ‘তুমি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট যা শ্রবণ করেছ সে সম্পর্কে তোমার মতামত কী তা বল।’

আবূ জাহল বলল, ‘আমি কি আর এমন শুনেছি। প্রকৃত কথা হচ্ছে আমরা এবং বনু আবদে মানাফ মান-মর্যাদার ব্যাপারে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছি। তারা যেমন গরীব-মিসকীনদের খানা খাওয়ায়, আমরাও তেমনি তাদের খানা খাওয়াই। তারা দান-খয়রাত করে, আমারও তা করি। তারা জনগণকে বাহন প্রদান করে আমরাও তা করি। এখন আমরা এবং তারা উভয় পক্ষই সর্বক্ষেত্রে একে অন্যের সমকক্ষ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতারত দুটো ঘোড়ার ন্যায় উর্ধ্বশ্বাসে অবিরাম ছুটে চলেছি। এখন তারা নতুনভাবে বলতে শুরু করেছে যে, তাদের মাঝে একজন নবী আছেন যাঁর নিকট আকাশ থেকে আল্লাহর বাণী অবতীর্ণ হয়। আচ্ছা, বলত আমরা তাহলে কিভাবে তাদের নাগাল পেতে পারি? আল্লাহর কসম! আমরা ঐ ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব না এবং তাঁকে কখনই সত্যবাদী বলব না[২] যেমনটি আবূ জাহল বলত, হে মুহাম্মাদ (ﷺ)! আমরা তোমাকে ‘মিথ্যুক’ বলছিনা কিন্তু তুমি যা নিয়ে এসেছ তা মিথ্যা মনে করছি এবং এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন,

‏(‏فَإِنَّهُمْ لاَ يُكَذِّبُوْنَكَ وَلَكِنَّ الظَّالِمِيْنَ بِآيَاتِ اللهِ يَجْحَدُوْنَ‏)‏ ‏[‏الأنعام‏:‏33‏]‏‏.‏

‘কেননা তারা তো তোমাকে মিথ্যে মনে করে না, প্রকৃতপক্ষে যালিমরা আল্লাহর আয়াতকেই প্রত্যাখ্যান করে।’ (আল-আন‘আম ৬ : ৩৩)

মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে চরম ভয় পেতেন

এ ঘটনা পূর্বে সবিস্তারে উল্লে­খ করা হয়েছে যে, একদিন কাফেরগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তিনবার অভিশাপ দেন। তৃতীয় দফায় নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করলেন,

‏(‏يَا مَعْشَرُ قُرَيْشٍ، جِئْتُكُمْ بِالذَّبْحِ‏)

‘‘হে কুরাইশগণ! আমি কুরবাণীর পশু নিয়ে তোমাদের নিকট আগমন করছি।’’

এ কথা তখন তাদের উপর এমনভাবে প্রভাব সৃষ্টি করল যে, যে ব্যক্তি শত্রুতায় সকলের চাইতে অগ্রগামী ছিল সে-ই সর্বোৎকৃষ্ট কথাবার্তা দ্বারা নবী (ﷺ)-কে সন্তুষ্ট করতে সচেষ্ট হল।

অনুরূপভাবে একটি ঘটনারও বিস্তারিত বিবরণ ইতোপূর্বে উল্লে­খ করা হয়েছে। ঘটনাটি ছিল সিজদারত অবস্থায় যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর নাড়িভূঁড়ি নিক্ষেপ করা হয় এবং তারপর মাথা উত্তোলন করেন তখন তিনি নিক্ষেপকারীর বিরুদ্ধে বদদোয়া করতে থাকেন তখন তারা একদম অস্থির হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে ভয়-ভীতি ও দুশ্চিন্তার ঢেউ প্রবাহিত হতে থাকে। তারা আর বাঁচতে পারবে না বলে তাদের মনে স্থির বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়।

অন্য একটি ঘটনায় এটা উল্লে­খিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন আবূ লাহাবের পুত্র উতায়বার বিরুদ্ধে বদ দু‘আ করলেন, তখন তার স্থির বিশ্বাস হয়ে গেল যে, সে নবী করীম (ﷺ)-এর বদ দু‘আ থেকে কিছুতেই মুক্তি পাবে না। যেমনটি শাম রাজ্য সফর অবস্থায় ব্যাঘ্র দেখেই বলেছিল, ‘আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ (ﷺ) মক্কা থেকেই আমাকে হত্যা করল।’

অন্য একটি ঘটনায় উল্লে­খ করা হয়েছে যে, উবাই বিন খালফ নবী করীম (ﷺ)-কে হত্যা করার জন্য বারবার হুমকি দিতেছিল। একদা নবী করীম (ﷺ) উত্তরে বললেন যে, ‘(তোমরা নয়) বরং আল্লাহ চানতো আমিই তোমাদের হত্যা করব, ইনশা-আল্লাহ।’ এর পর উহুদের যুদ্ধে নবী করীম (ﷺ) যখন উবাইয়ের গলদেশ বর্শার দ্বারা আঘাত করলেন, তখন যদিও সে আঘাত খুবই সামান্য ছিল তবুও উবাই বারবার এ কথাই বলছিল যে, ‘মুহাম্মাদ আমাকে মক্কায় বলেছিলেন যে, আমি তোমাকে হত্যা করব। কাজেই, সে যদি আমার গায়ে থুথুও দিত তাতেও আমার মৃত্যু হয়ে যেত।[৩]

এমনভাবে একদা সা’দ বিন মা’আয মক্কায় উমাইয়া বিন খালফকে বলেছিল, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, মুসলিমগণ তোমাদের হত্যা করবে তখন থেকে উমাইয়া ভীষণভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং ভয়-ভীতি তার অন্তরে সর্বক্ষণ বিরাজমান থাকে। তাই সে মনে মনে স্থির করেছিল যে, সে কখনই মক্কার বাইরে যাবে না। কিন্তু বদর যুদ্ধের সময় আবূ জাহলের পীড়াপীড়ি এবং চাপের মুখে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য মক্কার বাইরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনবোধে যাতে দ্রুত পশ্চাদপসরণ সম্ভব হয় সে উদ্দেশ্যে সে মক্কার সব চাইতে দ্রুতগামী উটটি ক্রয় করে নিয়ে তার উপর সওয়ার হয়ে যুদ্ধে যায়।

এ দিকে যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি প্রত্যক্ষ করে তার স্ত্রীও তাকে এ ব’লে বাধা দেয় যে, ‘আবূ সাফওয়ান! আপনার ইয়াসরিবী ভাই যা বলেছিলেন আপনি কি তা ভুলে গেছেন?’ সে উত্তর দিল ‘না ভুলি নি, তবে আল্লাহর শপথ, তাদের সঙ্গে আমি অল্প দূরই যাব।[৪]

নবী (সাঃ) এর প্রতি সাহাবাগণের অকৃত্রিম ভালবাসা

এইত ছিল নবী (ﷺ) শত্রুদের অবস্থা, অন্যদিকে তাঁর সাহাবীগণ (রাঃ), সঙ্গী-সাথী ও বন্ধু-বান্ধবগণের সকলের কাছে তিনি ছিলেন প্রাণের চাইতেও প্রিয়। তিনি ছিলেন সকলের চিন্তা-চেতনা ও অন্তরের চিকিৎসক। তাঁদের অন্তর থেকে উৎসারিত ভক্তি ও ভালবাসার ধারা ঠিক সেভাবে নবী (ﷺ)-এর দিকে প্রবাহিত হতো যেমনটি জলের ধারা উচ্চ থেকে নিম্নভূমির দিকে প্রবল বেগে প্রবাহিত হতে থাকে এবং তাঁদের সকলের প্রাণ ঠিক সেইভাবে নবী (ﷺ)-এর প্রাণের দিকে আকর্ষিত হতে থাকত, যেমনটি সাধারণ লৌহখন্ড আকর্ষিত হতে থাকে চুম্বুক লৌহের আকর্ষণে।

فصورته هيولى كل جسم ** ومغناطيس أفئـدة الرجــال

অর্থঃ ‘মুহাম্মাদের ছবি প্রতিটি মানবদেহের জন্য মূল অস্তিত্ব স্বরূপ ছিল এবং তাঁর বাস্তব অস্তিত্ব প্রতিটি অন্তরের জন্য চুম্বকের মতো ছিল।’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র জন্য সাহাবীগণ (রাঃ)-এর অন্তরে প্রেম, প্রীতি, শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালবাসার যে বেহেশতী ধারা সর্বক্ষণ প্রবাহিত হতো, অখন্ড মানব জাতির ইতিহাসে কোথাও তার কোন তুলনা মেলে না। সাহাবীগণ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য কখনো কোন ত্যাগ স্বীকারকেই বড় বলে মনে করতেন না। এমন কি এ কথাও পছন্দ করতেন না যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নখে সামান্যতম আঘাত লাগুক অথবা তাঁর পায়ে কাঁটার আঁচড় লাগুক। তাঁর জন্য তাঁদের নিজেদের জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করতে তাঁরা সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকতেন।

একদিন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে প্রহৃত হলেন। উতবাহ বিন রাবীআহ তাঁর নিকটে এসে তালিযুক্ত জুতো দ্বারা প্রহার করতে লাগল। বিশেষ করে চেহারা লক্ষ করে মারতে মারতে তাঁর পিঠের উপর চড়ে বসল। এ অবস্থায় তাঁর গোত্র বনু তাইমের লোকজন তাঁকে কাপড়ে জড়িয়ে বাড়ি আনে। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, তিনি আর বাঁচবেন না। কিন্তু দিনের শেষ ভাগে তাঁর কথা বের হল। আর সব কিছুর আগে প্রশ্ন করলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অবস্থা কী? এর জন্য বনু তাইমের লোকেরা তাঁকে বকাঝকা করল। তাঁর মা উম্মুল খায়েরকে এ কথা বলে তারা ফিরে গেল যে, তাঁকে কিছু পানাহার করাবে। একেবারে একাকী অবস্থায় তিনি আবূ বকর (রাঃ)-কে কিছু পানাহারের জন্য অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি এ কথাই বলতে থাকলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কী অবস্থায়?’ পরিশেষে উম্মুল খায়ের বললেন, ‘আমি তোমার সাথীর সংবাদ জানি না।’ আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ‘উম্মু জামীল বিনতে খাত্তাবের নিকট যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো।’ তিনি উম্মু জামীলের নিকটে গিয়ে বললেন, ‘আবূ বকর (রাঃ), তোমার নিকট মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। উম্মু জামিল বললেন, আমি না চিনি মুহাম্মাদ সাঃ-কে আর না চিনি আবূ বকর (রাঃ)-কে। তবে তুমি যদি চাও তাহলে তোমার সাথে তোমার পুত্রের নিকট যেতে পারি।’

উম্মুল খায়ের বললেন, ‘খু-উ-ব ভালো’’।

এরপর উম্মু জামীল তার সঙ্গে এসে দেখলেন আবূ বাকর (রাঃ) চরম শ্রান্ত, ক্লান্ত এবং বিপর্যস্ত অবস্থান পড়ে রয়েছেন। তারপর তাঁর নিকটবর্তী হয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘যারা আপনাকে এই দুরবস্থার মধ্যে নিপতিত করেছে তারা অবশ্যই জঘন্য প্রকৃতির লোক এবং অমানুষ কাফের। আমি আশা করি যে, আল্লাহ আপনার এ অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন।

আবূ বাকর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কী হয়েছে?
তিনি বললেন, ‘আপনার মা তো শুনছেন’’।
বললেন, ‘কোন অসুবিধা নেই’
তিনি বললেন, ‘সহীহুল সালামতে আছেন।’
‘‘কোথায় আছেন তিনি?’
‘‘ইবনে আরকামের বাড়িতে।’

আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ‘যতক্ষণ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে উপস্থিত না হব ততক্ষণ আমি খাদ্য কিংবা পানীয় কোন কিছুই গ্রহণ করব না। এটাই হচ্ছে আল্লাহর জন্য আমার অঙ্গীকার।’

তারপর উম্মুল খায়ের এবং উম্মু জামীল সেখানেই অবস্থান করলেন। লোকদের আগমন এবং প্রত্যাগমন বন্ধ হয়ে যাবার পর যখন নিস্তব্ধতা বিরাজ করতে থাকল তখন মহিলাদ্বয় আবূ বকর (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে বাহির হলেন। তিনি তাদের উপর ভর দিয়ে চলতে থাকলেন এবং এভাবে তাঁরা তাঁকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খেদমতে পৌঁছে দিলেন।[৫]

নবী (ﷺ)-এর জন্য শ্রদ্ধা, মহববত, উৎসর্গীকরণ ও ত্যাগ তিতিক্ষার বিরল ঘটনাবলী এ গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন প্রসঙ্গে বর্ণিত হবে। বিশেষ করে উহুদ যুদ্ধের ঘটনাবলী এবং খুবায়েবের প্রসঙ্গে সেগুলো বিশেষভাবে উল্লে­খ করা হবে।

তথ্যসূত্রঃ
[১] রাহমাতুল্লিল আলামীন ২য় খন্ড ১৬৫ পৃঃ। তালকীহুল ফহুম ৬ পৃঃ।
[২] ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৩১৬ পৃঃ।
[৩] ইবনে হিশাম ২য় খন্ড ৮৪ পৃঃ।
[৪] সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৫৬৩ পৃঃ।
[৫] আলবেদায়া ওয়ান্নেহাযা ৩য় খন্ড ৩০ পৃঃ।



******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url