সিরাতুন নবী (সাঃ) || (পর্ব-৪৬) || মদিনার নেতৃবৃন্দের সামনে কুরাইশদের বিক্ষোভ ||






আক্বাবাহর দ্বিতীয় অঙ্গীকার গ্রহণের পরের ঘটনাবলী


সিরাতুন নবী (সাঃ) ৪৬-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ


মদিনার নেতৃবৃন্দের সামনে কুরাইশদের বিক্ষোভ

এ সংবাদ কুরাইশদের কর্ণকুহরে পৌঁছিবা মাত্র অসহনীয় দুঃখে বেদনা হেতু তাদের মাঝে কলরব শুরু হয়ে গেল। কেননা, মুসলিমগণের এ ধরণের অঙ্গীকার ও চুক্তির সুদূর প্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া যে তাদের জীবন ও সম্পদের উপরে হবে সেটা ভালভাবেই জানা ছিল। সুতরাং, সকাল হওয়া মাত্র তাদের নেতা ও মাস্তানদের ভারী দল ঐ চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর উদ্দেশ্যে মদীনাবাসীদের তাঁবু অভিমুখে যাত্রা করল এবং এইভাবে আবেদন জানাল,

হে খাযরাজের লোকেরা! আমরা অবগত হলাম যে, আপনারা আমাদের এ মানুষটিকে আমাদের নিকট হতে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছেন ও আমাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য তার সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হচ্ছেন। অথচ আরব গোত্র সমূহের মধ্যে শুধুমাত্র আপনাদের সাথে যুদ্ধ করা আমাদের অপছন্দ কাজ।[১]

কিন্তু যেহেতু এ বাইআত অত্যন্ত সঙ্গোপনে রাতের অন্ধকারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেহেতু খাযরাজ মুশরিকগণ এ সম্পর্কে মোটেই টের পায় নি। সেজন্য তারা বার বার আল্লহর কসম খেয়ে বলল সে রকম কিছু অনুষ্ঠিত হয়নি। আমরা এ বিষয়ে বিন্দু মাত্র অবগত নই। পরিশেষে বিক্ষোভে শামিল এ দল আব্দুল্লাহ বিন উবাই ইবনু সুলুলের নিকট পৌঁছিল। এ বিষয়ে তাঁর নিকট জানতে চাইলে প্রত্যুত্তরে সে বলল ‘নিশ্চয় এটা বাজে কথা। এমনটি কিছুতেই হতে পারে না যে, আমার সম্প্রদায় আমাকে এড়িয়ে আমার অগোচরে এ রকম কোন কাজ করতে পারে। আমি ইয়াসরাবে থাকতাম, তাহলেও আমার পরামর্শ ছাড়া আমার সম্প্রদায় এরূপ করতনা।

অবশিষ্ট রইলেন মুসলিমগণ, তাঁরা আড় চোখে পরস্পর পরস্পরকে দেখলেন এবং চুপচাপ রইলেন। এমন কি হ্যাঁ কিংবা না বলেও কেউ মুখ খুললেন না। শেষ পর্যন্ত কুরাইশ নেতাদের ধারণা হলো মুশরিকদের কথা সত্য এবং এ কারণে তারা নিরাশ হয়ে ফিরে গেল।

সংবাদের সত্যতা ও শপথকারীদের পশ্চাদ্ধাধাবন


মক্কার কুরাইশ নেতাগণ সম্ভবতঃ দৃঢ়তার সঙ্গে এটা ধরেই নিয়েছিল যে, এ সংবাদ মিথ্যা। কিন্তু এর অনুসন্ধানে সর্বদা লেগেই থাকল এবং শেষ পর্যন্ত নিঃসন্দেহে আবগত হল যে, অঙ্গীকার গ্রহণের ঘটনা সত্য। এ ঘটনাটি অবগত হওয়ার পর তারা অঙ্গীকার গ্রহণকারীদের প্রতি মারমুখী হয়ে উঠে। কিন্তু যখন তারা এ সংবাদটি অবগত হল তখন অঙ্গীকারাবদ্ধ হাজীগণ নিজ নিজ গৃহাভিমুখে অনেকটা পথ অগ্রসর হয়ে গিয়েছেন। মক্কাবাসীগণ দ্রুতপদে অগ্রসর হয়েও তাঁদের নাগাল পেলনা। অবশ্য সা’দ বিন উবাদাহ এবং মুনযির বিন ‘আমরকে দেখে ফেলে এবং তাদেরকে তাড়া করতে থাকে। কিন্তু মুনযির অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের নাগালের বাইরে চলে যেতে সক্ষম হন। অবশ্য সা’দ বিন উবাদাহ তাদের হাতে ধরা পড়ে যান। তারা তাঁর হাত দুটো তাঁরই পালানের দড়ি দ্বারা গর্দানের পিছনে বেঁধে দেয়। কষ্ট দিতে দিতে মক্কা পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে মুত্ব’ঈম বিন আদী এবং হারিস বিন হারব বিন উমাইয়া এসে তাঁকে ছাড়িয়ে দেন। কারণ, তাদের দুজনের যে বাণিজ্য কাফেলা মদীনার পথ দিয়ে যাতায়াত করত তা সায়াদের আশ্রয়েই চলাচল করত। তাঁকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়ায় আনসারগণ খুবই বিব্রতবোধ করতে থাকেন এবং তাঁকে মুক্ত করার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থাবলম্বনের জন্য সলা পরামর্শ করতে থাকেন। ইতি মধ্যে দেখা গেল যে, বন্দী দশা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি সঙ্গী সাথীদের নিকট প্রত্যাবর্তন করেছেন। এরপর সকলেই নিরাপদে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলেন।[২]

এটাই হচ্ছে আক্বাবাহর দ্বিতীয় অঙ্গীকার যাকে আক্বাবাহর বড় শপথ বলে অভিহিত করা হয়। এ অঙ্গীকার এমন এক খোলা জায়গায় সম্পাদিত হয়েছিল যা ভালবাসা ও ওয়াদাপালন, সততা, বিচ্ছিন্ন ঈমানদারদের মধ্যে সাহায্য, সহযোগিতা, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, আস্থা ও বিশ্বাস, আত্মত্যাগ ও বীরত্বের উদ্দীপনায় ভরপুর ছিল। ফলে ইমানদার ইয়াসরিববাসীদের অন্তর মক্কার দুর্বল ভাইদের প্রতি দয়ামায়ায় ভরপুর ছিল। মক্কার অধিবাসী ভাইদের সাহায্য করার জন্য তাঁদের অন্তরে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। অধিকন্তু, তাঁদের প্রতি অত্যাচার কারীদের বিরুদ্ধে দারুণ দুশ্চিন্তা ও ক্রোধছিল। তাঁদের অন্তর এ ভাইদের ভালবাসায় ভরপুর ছিল যাদের না দেখে আল্লাহর ওয়াস্তে ভাই নির্ধারণ করেছিল।

আর এ উৎসাহ উদ্দীপনা ও অনুধাবন শুধু একটি কল্পিত আকর্ষণের ফলই ছিল না, যা সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে শেষ হয়ে যেতে পারে বরং এর উৎস হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান ও কিতাবের প্রতি ঈমান। অর্থাৎ যে ঈমান অন্যায় অত্যাচারের বড় থেকে বড় শক্তির কাছেও মাথানত করে না। যে ঈমানেরই বদৌলতে (কারণে) এমন সব যুগান্তকারী কর্ম ও কীর্তিমালা স্থাপিত হয়েছে এবং মানবজাতির ইতিহাসে এমন সব অধ্যায় রচিত হয়েছে যার তুলনায় অতীত কিংবা বর্তমান কোন কালেই মিলে না। সম্ভবতঃ ভবিষ্যতেও মিলবে না।


তথ্যসূত্রঃ
[১] প্রাগুক্ত।
[২] যা’দুল মা’আদ ২য খন্ড ৫১ পৃঃ। ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৪৪৮-৪৫০ পৃঃ।




******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url