রাহে আমল-১৬ || অবৈধ ওসিয়ত || সুদ ও ঘুষ || তাকওয়ার পরিচয় ||




অবৈধ ওসিয়ত

অবৈধ ওসিয়ত ষাট বছরের এবাদত বিনষ্ট করে দেয়

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أن الرجل
ث مرها تشمل والمرأة بطاعة اللوستين سن الموت فاران في الوينتج لا الا م ترا أبو هريرة بغير ويوصي بها أودين غيرمشار إلى قوله تعالى وذلك الفوز العظيم (مسند أحمد، أبو هريرة رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : কোন পুরুষ ও নারী একাধারে ষাট বছর আল্লাহর এবাদতে কাটিয়ে দেয়ার পরও যদি মৃত্যুর সময়ে এমন অবৈধ ওসিয়ত করে যাতে উত্তরাধিকারীদের ক্ষতি হয়, তবে সেই পুরুষ ও নারীর জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যায়। এরপর হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরায়রা হাদীসের সমর্থনে সূরা নিসার........পর্যন্ত আয়াতাংশ পাঠ করে শােনান। (মুসনাদে আহমদ) কখনাে কখনাে একজন সৎ লােকও নিজের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের ওপর ক্ষিপ্ত ও অসন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং কামনা করে যেন তারা তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন অংশ না পায়। এ ধরনের লােকেরা মৃত্যুর সময় তার সমস্ত পরিত্যক্ত সম্পত্তি সম্পর্কে এমন ওসিয়ত করে যায়, যার কারণে এক বা একাধিক উত্তরাধিকারী সেই সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। অথচ কোরআন ও হাদীসের আলােকে তাদের অংশ পাওয়া অপরিহার্য ও অখন্ডনীয়। এ ধরনের পুরুষ ও নারী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে, তারা একাধারে ষাট বছর আল্লাহর এবাদত করেও শেষ পর্যন্ত জাহান্নামের যােগ্য হয়। হযরত আবু হুরায়রা হাদীসটির সমর্থনে যে আয়াত পড়লেন, তা সূরা নিসার ২য় রুকুতে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা উত্তরাধিকারীদের অংশ নির্ধারণ করার পর আয়াতে বলেছেন যে, এই অংশগুলাে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হবে মৃত ব্যক্তির গুসিয়ত ও ঋণ পরিশােধ করার পর। তারপর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সাবধান! ওসিয়তের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের ক্ষতি করবে না। এটা আল্লাহর কঠোর নির্দেশ, তিনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়। ভঁর রচিত এ আইন অজ্ঞতাপ্রসূত নয় বরং জ্ঞান ও বিজ্ঞান ভিত্তিক। এতে যুলুম ও বে-ইনসাফীর লেশমাত্র নেই। সুতরাং এ আইনকে সানন্দে মেনে নাও। এর পরের দুটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন : এগুলাে হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত সীমানা। যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ নিষেধ মেনে চলবে, তাদেরকে আল্লাহ এমন মনােম উদ্যানে ঢথা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে এবং এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য। আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য হবে এবং তার নির্দিষ্ট সীমাগুলাে লংঘন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে এবং তাদেরকে ভােগ করতে হবে অবমাননা কর শাস্তি। 

উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করলে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে


قال رسول الله صلى الله له وته من تطه
طه الله ثرائه من الجو يوم ا وارث ب القيامة. (ابن ماجة، أنس رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি তার উত্তরাধিকারীকে প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন। (ইবনে মাজাহ)

সকল উত্তরাধিকারীর অনুমতি ছাড়া ওসিয়ত করা

قال رسول اللومى الله علي ولم تجور وصية لوارث إلا أن يشاء الورثة. (مشكوة)
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন কোন উত্তরাধিকারীর পক্ষে ওসিয়ত করা জায়েয হবে কেবল তখনই, যখন অন্যান্য উত্তরাধিকারী তাতে সম্মতি দেবে। (মেশকাত) 

এক তৃতীয়াংশের বেশী ওসিয়ত করা যাবে না

عن علي بن أبي وقاص قال عادني رسول الله صلى الله عليه وسلم وأنا مريض، فقال أوصيت؟ تلت تعم، قال بكم؟ قلت مالي له في سبيل الله. قال فما تركت وكيك و تلتهم أمياه پ رتقال أو بالعشر فمازلت أناقةٹی قال أوص بالثلث والثلث كثيرة. (ترمذي)

হযরত সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) বলেন : আমি রুগ্ন থাকা অবস্থায় রাসূল (সা) আমাকে দেখতে এলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন। তুমি কি ওসিয়ত করেছ? আমি বললাম, হাঁ, করেছি। তিনি বললেন কতটুকু। আমি বললাম আমার সমস্ত সম্পত্তি আল্লাহর পথে দিয়ে দেয়ার জন্য ওসিয়ত করেছি। তিনি বললেন তােমার সন্তানদের জন্য কিছু রাখনি? আমি বললাম ; তারা ধনী স্বচ্ছল। না, এক দশমাংশ ওসিয়ত কর। এরপর আমি ক্রমাগত বলতে লাগলাম যে, এতাে খুবই কম। আরাে বেশী ওসিয়ত করার অনুমতি দিন। অবশেষে রাসূল (সা) বললেন : বেশ তুমি নিজের সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ ওসিয়ত কর। এক তৃতীয়াংশ একটি বিরাট অংশ। (তিরমিযী)।

এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, মৃত ব্যক্তি নিজের সম্পত্তির মাত্র এক তৃতীয়াংশের ভেতরে ওসিয়ত করতে পারে, এর বেশী নয়। এর মধ্যে সে কোন মাদ্রাসা কিংবা মসজিদের জন্য যতটুকু ইচ্ছা ওয়াকফ করে দিতে পারে অথবা যে কোন অভাবী মুসলমানের পক্ষে ওসিয়ত অর্থাৎ দান করতে পারে। এ ব্যাপারে সে স্বাধীন। তবে সর্বপ্রথম তার এটা খতিয়ে দেখা বাঞ্চনীয় যে, নিজের আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ প্রিয়জনদের কেউ উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে কিনা এবং তার আর্থিক অবস্থা কেমন। যদি কেউ এমন থেকে থাকে, যে আইনগতভাবে উত্তরাধিকারের কোন অংশ পায়নি (যেমন তার জীবদ্দশায় তার ছেলে বা মেয়ে মারা গেছে এবং নাতি-নাতনী ও পৌত্র পৌত্রীরা বাবার উত্তরাধিকার পায়নি। অনুবাদক) তার সন্তান সন্ততি আছে এবং আর্থিক অবস্থাও স্বচ্ছল নয়, তাহলে তার জন্য ওসিয়ত করা অধিকতর সওয়াবের কাজ হবে।

সুদ ও ঘুষ

সুদের সাথে জড়িতরা অভিশপ্ত

عن ابن مسعود أن البي لى الله عليه وسلم عن أكل الربا ممولة وشادثه وكاتبة. (بخاري

হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, যে সুদ খায়, যে খাওয়ায়, দু'ব্যক্তি সুদের সাক্ষী হয় এবং যে ব্যক্তি এতদসংক্রান্ত বিবরণ কাগজপত্রে লিপিবদ্ধ করে, তাদের সকলকে রাসূলুল্লাহ (সা) অভিসম্পাত করেছেন। (বোখারী ও মুসলিম) ভাবনার বিষয় বটে যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) যে গুনাহর জনা অভিসম্পাত করেন, তা কত বড় সংঘাতিক গুনাহ! শুধু তাই নয়, নাসায়ী শরীফে বর্ণিত আছে যে, যারা জেনে শুনে সুদ খায়, খাওয়ায়, সাক্ষী হয় এবং সংশ্লিষ্ট দলীল দস্তাবেজ তৈরি করে, তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) কেয়ামতের দিন অভিশাপ দেবেন। এর অর্থ হলাে, এ ধরনের লােকদের জন্য (যদি তওবা না করে মারা যায়। তিনি শাফায়াত বা সুপারিশ করা তাে দূরের কথা। অভিশাপ দেবেন! আল্লাহর কাছে এমন মহাপাপ থেকে পানাহ চাওয়া উচিত! 

লা'নত বা অভিশাপের অর্থ ধিক্কার দেয়া ও তাড়িয়ে দেয়া

من عبد الله بن عثرو قال قال رسول الله
وتم لعنة الله على الراښي صلى الله علي والمرتشي. (بخاري ومسلم)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ঘুষখাের ও ঘুষদাতা উভয়ের ওপর আল্লাহর অভিশাপ হােক। (বােখারী, মুসলিম) 

শাসককে ঘুষদাতা ও ঘুষখোর শাসক উভয়ই অভিশপ্ত

ث أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعنة الله على الراشي والتي في
হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : শাসককে যে ঘুষ দেয় সে অভিশপ্ত । আর সেই শাসকও অভিশপ্ত যে ঘুষ নেয়। (মুনতাকা) অন্যের হক বা অধিকার হরণ করার জন্য যে টাকা সরকারের কেরানী ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরকে দেয়া হয়, তাকেই ঘুষ বলা হয়। তবে নিজের ন্যায্য পাওনা আদায় করার জন্য যে অর্থ সরকারের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারী কর্মকর্তাদেরকে অন্তরের সর্বাত্মক ঘৃণা সহকারে বাধ্য হয়ে দিতে হয় এবং যা না নিলে নিজের ন্যায্য প্রাপ্য আদায় হয় না, সে অর্থ দেয়ার জন্য মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত হবে না, ইনশায়াল্লাহ। অবশ্য এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি যে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ী হওয়া ও শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অপরিহার্যতাই জোরদার দাবী জানায়, তাতে কোন সন্দেহ নেই। 

সন্দেহজনক জিনিস ও কাজ বর্জন করা উচিত

عين النعمان بن بشير أن النبي صلى الله عليه
ثم ق ال الحلال بي والحرام بي وبينما مورمشتبه من تر مايشتبه لنه من الإثم گان با اشتبان أترك ومن اجترأ على مايشك
به من الإثم أوشك أن واقع اشتباين والمعاصي حمى اللوممتع حول اليمى يوشك أن يواتي

হযরত নুমান ইবনে বশীর (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারাম সুস্পষ্ট। এ দু'য়ের মাঝখানে কিছু সন্দেহজনক জিনিস রয়েছে। যে ব্যক্তি সন্দেহজনক গুনাহ বর্জন করবে, সে সুস্পষ্ট গুনাহ থেকে সহজেই রক্ষা পাবে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহজনক গুনাহর কাজ করার দুঃসাহস দেখাবে, তার সুস্পষ্ট শুনাহর কাজে লিপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। গুনাহর কাজগুলাে হচ্ছে আল্লাহর নিষিদ্ধ এলাকা। (এর ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই এবং বিনা অনুমতিতে প্রবেশ অপরাধ।) যে জন্তু নিষিদ্ধ এলাকার আশপাশ দিয়ে বিচরণ করে, সে যে কোন সময় নিষিদ্ধ এলাকার ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে। (বােখারী, মুসলিম) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বক্তব্যের মর্মার্থ এই যে, যে জিনিসের হারাম হওয়া অকাট্য জানা যায় না এবং হালাল হওয়াও সুস্পষ্টভাবে জানা যায় না বরং তার কতক দিক হালাল মনে হয় এবং কতক দিক হারাম মেন হয়, সে জিনিসের ধারে কাছেও ঘেষা মুমিনের উচিত নয়। এ ধরনের সন্দেহ জনক জিনিস বা কাজ থেকে যে ব্যক্তি সংষত হয়ে চলে, সে প্রাক সুস্পষ্ট হারাম কাজ যে করতে পারেনা, তা বলাই নিষ্প্রয়ােজন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক জিনিসের অবৈধ সিৰুগুলাে দেখেও তা গ্রহণ করে, তার এই কাজের ফল দাঁড়াবে এই যে, তার মন সুস্পষ্ট হারাম কাজ করতে বা হারাম জিনিস গ্রহণ করতে সাহসী হয়ে উঠবে। এই ধৃষ্টতা মনের খুবই বিপদজ্জনক অবস্থা।


তাকওয়ার পরিচয়

عن عطية الشعدي أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لا يبلغ العبد أن يكون من المتقين حتى يدع مالابأس به حذرا لمابه البأس. (ترمذي)
হযরত আতিয়া সা'দী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: কোন ব্যক্তি কেবল তখনই মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু গণ্য হতে পারে, যখন গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে, যাতে গুনাহ নেই তাও বর্জন করে । (তিরমিযী) অর্থাৎ যে জিনিস মোবাহ হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে, যা করলে কোন গুনাহ হয় না; কিন্তু তার শেষ সীমা গুনাহর সাথে মিলিত; সচেতন মানুষ বুঝতে পারে যে, সে যদি ঐ মোবাহ কাজের সীমানার শেষ প্রান্তে বেপরোয়া ঘুরতে থাকে, তাহলে যে কোন মুহূর্তে পা পিছলে গুনাহর মধ্যে নিপতিত হতে পারে, আর এই ভয়ে সে ঐ মোবাহ কাজ দ্বারা উপকৃত হওয়াই বর্জন করে। মনের এই অবস্থাটার নামই তাকওয়া বা খোদাভীরুতা। এ ধরনের সচেতন ও সতর্ক মনের অধিকারী ব্যক্তিই প্রকৃতপক্ষে মুত্তাকী বা খোদাভীরু। পবিত্র কোরআনের যে সব আয়াতের লক্ষ্য মানুষকে আল্লাহর হুকুম লংঘন থেকে বিরত রাখা, সেখানে আল্লাহ একথা বলেননি যে, “আমার নির্ধারিত এই সীমাগুলো লংঘন করো না” বরং বলেছেন, “এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। তোমরা এগুলোর কাছেও যেয়ো না।”



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url