সিরাতুন নবী (সাঃ)- ৭১ || বদর পরবর্তি গাযওয়া বা অভিযানসমূহ ||




বদর পরবর্তি গাযওয়া বা অভিযানসমূহ

সিরাতুন নবী (সাঃ), ৭১-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

গাযওয়ায়ে সাভীক বা ছাতুর যু্দ্ধ

এদিকে সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া, ইহুদী এবং মুনাফিক্বরা নিজ নিজ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, অপরদিকে আবূ সুফইয়ানও এমন ব্যবস্থাপনা কার্যকরী করার সুযোগে ছিলেন যাতে কষ্ট কম হয় আর ফল ভাল হয়। তিনি এ ব্যবস্থাপনা তাড়াতাড়ি কার্যকরী করে স্বীয় কওমের মর্যাদা রক্ষা এবং তাদের শক্তি প্রকাশ করার ইচ্ছা করছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, অপবিত্রতার কারণে তাঁর মস্তক পানি স্পর্শ করবে না যে পর্যন্ত না তিনি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সঙ্গে যুদ্ধ করবেন। সুতরাং তিনি তাঁর এ প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করার জন্যে দুশ জন অশ্বারোহী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন এবং কানাত উপত্যকার শেষে অবস্থিত নীব নামক এক পর্বত প্রান্তে তাঁবু স্থাপন করেন। মদীনা হতে এ জায়গাটির দূরত্ব প্রায় বারো মাইল। মদীনার উপর খোলাখুলিভাবে আক্রমণ করার সাহস তাঁর ছিল না বলে তিনি এমন এক ব্যবস্থা কার্যকরী করলেন যেটাকে ডাকাতি বলা যেতে পারে। এর বিস্তারিত বিবরণ হল, তিনি রাত্রির অন্ধকারে মদীনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রবেশ করেন এবং হোয়াই ইবনু আখতাবের নিকট গিয়ে তার দরজা খুলিয়ে নেন। কিন্তু হোয়াই পরিণাম চিন্তা করে তাঁকে তার বাড়ীতে প্রবেশ করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। আবূ সুফইয়ান তখন সেখান হতে ফিরে গিয়ে বনু নাযীরের সালাম ইবনু মুশকিম নামক আর এক সর্দারের নিকট উপস্থিত হন। সে বনু নাযীর গোত্রের কোষাধ্যক্ষ ছিল। আবূ সুফইয়ান তার বাড়ির ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে সে অনুমতি প্রদান করে। সে তার অতিথি সেবাও করে। খাদ্য ছাড়াও মদ্যও পান করায় এবং লোকদের গোপনীয় অবস্থা সম্পর্কেও অবহিত করে। রাত্রির শেষভাগে আবূ সুফইয়ান সেখান হতে বের হয়ে নিজের সঙ্গীদের সাথে মিলিত হন এবং একটি দল পাঠিয়ে মদীনার পার্শ্ববর্তী আরীয নামক একটি জায়গার উপর হামলা করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেন। ঐ দলটি তথাকার কিছু খেজুরের গাছ কর্তন করে এবং জ্বালিয়ে দেয়, আর একজন আনসারী ও তার মিত্রকে তাদের জমিতে পেয়ে হত্যা করে দেয় এবং দ্রুত বেগে পলায়ন করে মক্কার পথে ফিরে যায়।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই দ্রুত গতিতে আবূ সুফইয়ান এবং তার সঙ্গীদের পশ্চাদ্ধাবন করেন, কিন্তু তারা আরো দ্রুত গতিতে পলায়ন করে। সুতরাং তাদেরকে ধরা সম্ভবপর হয়নি। কিন্তু তারা বোঝা হালকা করার জন্যে ছাতু, পাথেয় এবং বহু আসবাব পত্র ফেলে দেয় যা মুসলিমদের হস্তগত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কারকুরাতুল কুদর পর্যন্ত পশ্চাদ্ধাবন করে ফিরে আসেন। ফিরবার পথে তাঁরা ছাতু ইত্যাদি বোঝাই করে নিয়ে আসেন। এ অভিযানের নাম গাযওয়ায়ে সাভীক রাখা হয়। কারণ আরবী ভাষায় ছাতুকে সাভীক বলা হয়। এ যুদ্ধ বদর যুদ্ধের মাত্র দুমাস পর হিজরী ২য় সনের যুল হিজ্জাহ মাসে সংঘটিত হয়।[১]

এ যুদ্ধ কালীন সময়ে মদীনায় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবূ লুবাবাহ ইবনু আব্দুল মুনযির (রাঃ)-এর উপর অর্পণ করা হয়।

গাযওয়ায়ে যূ ‘আমর

বদর ও উহুদ মধ্যবর্তী সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নেতৃত্বাধীনে এটাই সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। এটা তৃতীয় হিজরীর মুহরম মাসে সংঘটিত হয়।
এ অভিযানের কারণ : মদীনার গোয়েন্দা বাহিনী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে খবর দেন যে, বনু সা‘লাবাহ ও মুহারিব গোত্রের এক বিরাট বাহিনী মদীনার উপর আক্রমণ করার জন্য একত্রিত হচ্ছে। এ খবর শোনা মাত্রই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুসলিমগণকে প্রস্তুতির নির্দেশ দেন এবং আরোহী ও পদাতিক মিলে মোট চারশ জন সৈন্যের বাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-কে মদীনায় নিজের স্থলাভিষিক্ত করেন।

পথে সাহাবীগণ বনু সা‘লাবাহ গোত্রের জাববার নামক এক ব্যক্তিকে পাকড়াও করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে। এরপর তিনি তাকে বিলাল (রাঃ)-এর বন্ধুত্বে দিয়ে দেন এবং সে পথ প্রদর্শক রূপে মুসলিমগণকে শত্রুদের অবস্থানস্থল পর্যন্ত রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যায়।

এদিকে শত্রুরা মদীনার সৈন্য বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং আশে পাশের পাহাড় গুলোতে লুকিয়ে যায়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং সেনাবাহিনী সহ ঐ জায়গা পর্যন্ত গমন করেন যেটাকে শত্রুরা নিজেদের দলের একত্রিত হওয়ার স্থান নির্বাচিত করেছিল। এটা ছিল আসলে একটি প্রস্রবণ যা যূ ‘আমর নামে পরিচিত ছিল। বেদুইনদের উপর প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত এবং মুসলিমদের শক্তি সামর্থ্য সম্পর্কে তাদের ওয়াকিবহাল করানোর জন্য তৃতীয় হিজরীর পূর্ণ সফর মাসটি তিনি সেখানে অতিবাহিত করেন। তারপর মদীনায় ফিরে আসেন।[২]

কা‘ব ইবনু আশরাফের হত্যা

এ ছিল ইহুদীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি, যে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি অত্যন্ত শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করত। সে নবী (ﷺ)-কে কষ্ট দিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যভাবে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বেড়াত। ‘তাই’ গোত্রের শাখা বনু নাবাহানের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। আর তার মাতা বনু নাযীর গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে ছিল বড় ধনী ও পুঁজিপতি। আরবে তার সৌন্দর্য্যের খ্যাতি ছিল। সে একজন খ্যাতনামা কবিও ছিল। তার দূর্গটি মদীনার দক্ষিণে বনু নাযীর গোত্রের আবাদী ভূমির পিছনে অবস্থিত ছিল।
বদর যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় লাভ এবং নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের নিহত হওয়ার প্রথম খবর শুনে সে অকস্মাৎ বলে ওঠে ‘সত্যিই কি ঘটনা এটাই? এরা ছিল আরবের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এবং জনগণের বাদশাহ। যদি মুহাম্মাদ (ﷺ) তাদেরকে হত্যা করে থাকে তবে পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ ওর উপরিভাগ হতে উত্তম হবে অর্থাৎ আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই উত্তম হবে।

তারপর যখন সে নিশ্চিতরূপে জানতে পারল যে, এটা সত্য খবর তখন আল্লাহর এ শত্রু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং মুসলিমদের নিন্দা এবং ইসলামের শত্রুদের প্রশংসা করতে শুরু করল এবং তাদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে লাগল। কিন্তু এতেও তার বিদ্বেষ বহ্ণি প্রশমিত না হওয়ায় সে অশ্বে আরোহণ করে কুরাইশদের নিকট গমন করল এবং মুত্তালিব ইবনু আবী অদাআ সাহমীর অতিথি হল। তারপর সে কুরাইশদের মর্যাদাবোধ উত্তেজিত করতে, তাদের প্রতিশোধাগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতে এবং তাদেরকে নবী (ﷺ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে উৎসাহিত করতে কবিতা বলে বলে ঐ কুরাইশ নেতাদের জন্য বিলাপ করতে লাগল যাদের বদর প্রান্তরে হত্যা করার পর কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। মক্কায় তার অবস্থান কালে আবূ সুফইয়ান ও মুশরিকরা তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার নিকট আমাদের দ্বীন বেশী পছন্দনীয়, না মুহাম্মাদ (ﷺ)- ও তাঁর সঙ্গীদের দ্বীন? আর উভয় দলের মধ্যে কোন্ দলটি বেশী হিদায়াত প্রাপ্ত?’ উত্তরে কা‘ব ইবনু আশরাফ বলল ‘তোমরাই তাদের চেয়ে বেশী হিদায়াত প্রাপ্ত এবং উত্তম। এ ব্যাপারেই আল্লাহ তা‘আলা নিম্নের আয়াত নাযিল করেন

‏(‏أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ أُوْتُوْا نَصِيْبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُوْنَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوْتِ وَيَقُوْلُوْنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا هَؤُلاء أَهْدَى مِنَ الَّذِيْنَ آمَنُوْا سَبِيْلاً‏)‏ ‏[‏ النساء‏:‏ 51‏]‏‏.‏
‘‘যাদেরকে কিতাবের জ্ঞানের একাংশ প্রদত্ত হয়েছে, সেই লোকেদের প্রতি তুমি কি লক্ষ্য করনি, তারা অমূলক যাদু, প্রতিমা ও তাগূতের প্রতি বিশ্বাস করে এবং কাফিরদের সম্বন্ধে বলে যে, তারা মু’মিনগণের তুলনায় অধিক সঠিক পথে রয়েছে।’ (আন-নিসা ৪ : ৫১)

কা‘ব ইবনু আশরাফ এ সব কিছু করে মদীনায় ফিরে এসে সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) স্ত্রীদের ব্যাপারে বাজে কবিতা বলতে শুরু করে এবং কট্যূক্তির মাধ্যমে তাঁদেরকে ভীষণ কষ্ট দিতে থাকে।

তার এ দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘কে এমন আছে যে, কা‘ব ইবনু আশরাফকে হত্যা করতে পারে? কেননা, সে আল্লাহ এবং তার রাসূল (ﷺ)-কে কষ্ট দিয়েছে এবং দিচ্ছে।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ), আব্বাদ ইবনু বিশর (রাঃ), আবূ নায়িলাহ (রাঃ) তার নাম সিলকান বিন সালামাহ যিনি ছিলেন কা’বের দুধ ভাই, হারিস ইবনু আউস (রাঃ) এবং আবূ আবস ইবনু জাবর (রাঃ) এ খিদমতের জন্যে এগিয়ে আসেন। এ সংক্ষিপ্ত বাহিনীর নেতা ছিলেন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ)।

কা‘ব ইবনু আশরাফের হত্যার ব্যাপারে যে সব বর্ণনা রয়েছে ওগুলোর সারমর্ম হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন বললেন, ‘কা‘ব ইবনু আশরাফকে কে হত্যা করতে পারে? সে আল্লাহ এবং তার রাসূল্লাহ (ﷺ)-কে কষ্ট দিয়েছে।’ তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) উঠে আরয করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি প্রস্তুত আছি। আমি তাকে হত্যা করব এটা কি আপনি চান?’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জবাবে বললেন, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘তাহলে আপনি আমাকে অস্বাভাবিক কিছু বলার অনুমতি দিচ্ছেন কি?’
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ’ তুমি বলতে পার।’

এরপর মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) কা‘ব ইবনু আশরাফির নিকট গমন করলেন এবং তাকে বললেন, ‘এ ব্যক্তি মুহাম্মাদ (ﷺ) আমাদের কাছে সাদকাহ চাচ্ছে এবং প্রকৃত কথা হচ্ছে সে আমাদেরকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

একথা শুনে কা‘ব বলল, ‘আল্লাহর কসম! তোমাদের আরো বহু দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’

মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আমরা যখন তার অনুসারী হয়েই গেছি তখন হঠাৎ করে এখনই তার সঙ্গ ত্যাগ করা উচিত মনে করছি না। পরিণামে কী হয় দেখাই যাক। আচ্ছা, আমি আপনার কাছে এক অসাক বা দু’ অসাক (এক অসাক =১৫০ কেজি) খাদ্য শস্যের আবেদন করছি?’

কা‘ব বলল ‘আমার কাছে কিছু বন্ধক রাখো।’

মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কী জিনিস বন্ধক রাখা পছন্দ করেন?’

কা‘ব উত্তর দিলো, ‘তোমাদের নারীদেরকে আমার নিকট বন্ধক রাখো।’

মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আপনি আরবের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুদর্শন পুরুষ, সুতরাং আমরা আমাদের নারীদেরকে কিরূপে আপনার নিকট বন্ধক রাখতে পারি?’

সে বলল, ‘তাহলে তোমাদের পুত্রদেরকে বন্ধক রাখো।’
মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আমরা আমাদের পুত্রদেরকে কী করে বন্ধক রাখতে পারি? এরূপ করলে তাদেরকে গালি দেয়া হবে যে, এক অসাক বা দু অসাক খাদ্যের বিনিময়ে তাদেরকে বন্ধক রাখা হয়েছিল। এটা আমাদের জন্যে খুবই লজ্জার কথা হবে। আমরা অবশ্য আপনার কাছে অস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি।’

এরপর দুজনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) অস্ত্র নিয়ে তার কাছে আসবেন। এদিকে আবূ নায়িলাও (রাঃ) অগ্রসর হলেন অর্থাৎ কা‘ব ইবনু আশরাফের কাছে আসলেন। কিছুক্ষণ পর্যন্ত উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন দিকের কবিতা শোনা ও শোনানোর কাজ চললো। তারপর আবূ নায়িলা (রাঃ) বললেন, ‘ভাই ইবনু আশরাফ! আমি এক প্রয়োজনে এসেছি। এটা আপনাকে আমি বলতি চাচ্ছি এই শর্তে যে, আপনি কারো কাছে এটা প্রকাশ করবেন না।’ কা‘ব বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তাই করব।’

আবূ নায়িলাহ (রাঃ) বললেন, ‘এ ব্যক্তির (মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর) আগমন তো আমাদের জন্যে পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা আরব আমাদের শত্রু হয়ে গেছে। আমাদের পথ ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে, পরিবার পরিজন ধ্বংস হতে চলেছে। সন্তান-সন্ততির কষ্টে আমরা চৌচির হচ্ছি।’ এরপর তিনি ঐ ধরণেরই কিছু আলাপ আলোচনা করলেন, যেমন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা করেছিলেন। কথোপকথনের সময় আবূ নায়িলাহ (রাঃ) এ কথাও বলেছিলেন আমার কয়েকজন বন্ধু বান্ধব রয়েছে যাদের চিন্তাধারা ঠিক আমারই মত। আমি তাদেরকেও আপনার কাছে নিয়ে আসতে চাচ্ছি। আপনি তাদের হাতেও কিছু বিক্রি করুন এবং তাদের উপর অনুগ্রহ করুন।’
মুহাম্মাদ ইবনু মাসালামা (রাঃ) এবং আবূ নায়িলাহ (রাঃ) নিজ নিজ কথোপকথনের মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে সফলকাম হন। কেননা, ঐ কথোপকথনের পরে অস্ত্রশস্ত্র বন্ধু বান্ধবসহ এ দুজনের আগমনের কারণে কা‘ব ইবনু আশরাফির সতর্ক হয়ে যাওয়ার কথা নয়। তারপর হিজরী ৩য় সনের রবিউল আওয়াল মাসের ১৪ তারীখে চাঁদনী রাতে এ ক্ষুদ্র বাহিনী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট একত্রিত হন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাকীয়ে গারকাদ পর্যন্ত তাঁদের অনুসরণ করেন। তারপর বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে যাও। বিসমিল্লাহ। হে আল্লাহ! এদেরকে সাহায্য করুন।’ তারপর তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপর বাড়িতে তিনি সালাত ও মুনাজাতে লিপ্ত হয়ে পড়েন।

এদিকে এ বাহিনী কা‘ব ইবনু আশরাফির দুর্গের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার পর আবূ নায়িলাহ (রাঃ) উচ্চৈঃস্বরে ডাক দেন। ডাক শুনে কা‘ব তাদের নিকট আসার জন্যে উঠলে তার স্ত্রী- যে ছিল নববধূ- তাকে বলল, ‘এ সময় কোথায় যাচ্ছেন? আমি এমন শব্দ শুনতে পাচ্ছি যে, যেন তা হতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়ছে।’

স্ত্রীর এ কথা শুনে কা‘ব বলল, ‘এটা তো আমার ভাই মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা এবং দুধ ভাই আবূ নায়িলাহ। সম্ভ্রান্ত লোককে যদি তরবারী যুদ্ধের দিকে আহবান করা হয় তবে সে ডাকেও সে সাড়া দিবে।’ এরপর সে বাইরে আসল। তার দেহ থেকে সুগন্ধি ছুটছিল এবং তার মাথায় খোশবুর ঢেউ খেলছিল।

আবূ নায়িলাহ (রাঃ) তাঁর সঙ্গীদেরকে বলে রেখেছিলেন। ‘যখন সে আসবে তখন আমি তার চুল ধরে শুঁকবো। যখন তোমরা দেখবে যে, আমি তার মাথা ধরে তাকে ক্ষমতার মধ্যে পেয়ে গেছি তখন ঐ সুযোগে তোমরা তাকে হত্যা করবে।’
সুতরাং যখন কা‘ব আসলো তখন দীর্ঘক্ষণ ধরে আলাপ আলোচনা ও গল্পগুজব চললো। তারপর আবূ নায়িলাহ (রাঃ) বললেন, ‘ইবনু আশরাফ! আজুয ঘাঁটি পর্যন্ত চলুন। সেখানে আজ রাতে কথাবার্তা বলাবলি হবে। সে বলল, ‘তোমাদের ইচ্ছা হলে চলো।’ তারপর তাদের সাথে সে চলল।

পথের মধ্যে আবূ নায়িলাহ (রাঃ) তাকে বললেন, ‘আজকের মতো এমন উত্তম সুগন্ধির সাথে আপনার পরিচয় নেই।’ একথা শুনে কা'বের বক্ষ গর্বে ফুলে উঠল। সে বলল, ‘আমার পাশে আরবের সর্বাপেক্ষা অধিক সুগন্ধি ব্যবহারকারিণী মহিলা রয়েছে।’ আবূ নায়িলাহ (রাঃ) বললেন, ‘আপনার মাথাটি একটু শুঁকবো এ অনুমতি আছে কি?’ সে উত্তরে বলল ‘হ্যা, হ্যাঁ’। আবূ নায়িলাহ (রাঃ) তখন কা‘বের মাথায় হাত রাখলেন। তারপর তিনি নিজেও তার মাথা শুঁকলেন এবং সঙ্গীদেরকেও শুঁকালেন। কিছুদূর যাওয়ার পর আবূ নায়িলাহ (রাঃ) বললেন, ‘ভাই আর একবার শুঁকতে পারি কি?’ কা‘ব উত্তর দিল ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। কোন আপত্তি নেই।’ আবূ নায়িলাহ (রাঃ) আবার শুঁকলেন। সুতরাং সে নিশ্চিত হয়ে গেল।

আরো কিছুদূর চলার পর আবূ নায়িলাহ (রাঃ) পুনরায় বললেন, ‘ভাই আর একবার শুঁকবো কি?’ এবারও কা‘ব উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ, শুঁকতে পারো।

এবার আবূ নায়িলাহ (রাঃ) তার মাথায় হাত রেখে ভালভাবে মাথা ধরে নিলেন এবং সঙ্গীদেরকে বললেন, ‘আললাহর এ দুশমনকে হত্যা করে ফেল।’ ইতোমধ্যেই তার উপর কয়েকটি তরবারী পতিত হলো, কিন্তু কাজ হলো না। এ দেখে মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) নিজের কোদাল ব্যবহার করে তার দুনিয়ার স্বাদ চিরতরে মিটিয়ে দিলেন। আক্রমণের সময় সে এত জোরে চিৎকার করেছিল যে, চতুর্দিকে তার চিৎকারের শব্দ পৌঁছে গিয়েছিল এবং এমন কোন দূর্গ বাকী ছিল না যেখানে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হয়নি। কিন্তু ওটা মুসলিমদের ক্ষতির কোন কারণ হয় নি।
কা‘বকে আক্রমণ করার সময় হারিস ইবনু আউস (রাঃ)-কে তাঁর কোন এক সাথীর তরবারীর কোণার আঘাত লেগেছিল। ফলে তিনি আহত হয়েছিলেন এবং তাঁর দেহ হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল। কা‘বকে হত্যা করে ফিরবার সময় যখন এ ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী হররায়ে আরীয নামক স্থানে পৌঁছেন তখন দেখেন যে, হারিস (রাঃ) অনুপস্থিত রয়েছেন। সুতরাং তারা সেখানে থেমে যান। অল্পক্ষণ পরে হারিসও (রাঃ) সঙ্গীদের পদচিহ্ণ ধরে সেখানে পৌঁছে যান। সেখান হতে তাঁরা তাঁকে উঠিয়ে নেন এবং বাকীয়ে গারকাদে পৌঁছে এমন জোরে তাকবীর ধ্বনি দেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ও তা শুনতে পান। তিনি বুঝে নেন যে, কা‘ব নিহত হয়েছে। সুতরাং তিনিও আল্লাহ আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করেন। তারপর যখন এ মুসলিম বাহিনী তাঁর খিদমতে উপস্থিত হন তখন তিনি বলেন, ‘আফলাহাতিল উজূহু’ অর্থাৎ এ চেহারাগুলো সফল থাকুক। তখন তারা বললেন, ‘অ অজুহুকা ইয়া রাসূলুল্লাহ’ অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আপনার চেহারাও সফলতা লাভ করুক। আর সাথে সাথেই তাঁরা তাগূতের (কা‘বের) কর্তিত মস্তক তাঁর সামনে রেখে দেন। তিনি তখন আল্লাহ পাকের প্রশংসা করেন এবং হারিস (রাঃ)-এর ক্ষত স্থানে স্বীয় পবিত্র মুখের লালা লাগিয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরোগ্য লাভ করেন এবং পরে আর কখনো তিনি কষ্ট অনুভব করেন নি।[৩]

এদিকে ইহুদীরা যখন কা‘ব ইবনু আশরাফির হত্যার খবর জানতে পারল তখন তাদের শঠতাপূর্ণ অন্তরে ভীতি ও সন্ত্রাসের ঢেউ খেলে গেল। তারা তখন বুঝতে পারল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন অনুধাবন করবেন যে, শান্তি ভঙ্গকারী, গন্ডগোল ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এবং প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকার ভঙ্গকারীদেরকে উপদেশ দিয়ে কোন ফল হচ্ছেনা তখন তিনি তাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। এ জন্যেই তারা এ তাগূতের হত্যার প্রতিবাদে কোন কিছু করার সাহস করলনা, বরং একেবারে সোজা হয়ে গেল। তারা অঙ্গীকার পূরণের স্বীকৃতি দান করল এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধাচরণের সাহস সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলল।
এভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনার বিরুদ্ধে বহিরাক্রমণের মোকাবেলা করার অপূর্ব সুযোগ লাভ করলেন এবং মুসলিমরা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে গেলেন যে গোলযোগের তাঁরা আশঙ্কা করছিলেন এবং যার গন্ধ তাঁরা মাঝে মাঝে পাচ্ছিলেন।

গাযওয়ায়ে বাহরান

এটা ছিল বড় সামরিক অভিযান যার সৈন্য সংখ্যা ছিল তিনশ জন। এ সেনাদল নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তৃতীয় হিজরীর রবিউল আখের মাসে বাহরান নামক একটি অঞ্চলের দিকে গমন করেছিলেন। এটা হিজাযের মধ্যে ফারা সীমান্তে খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ একটি জায়গা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেনাবাহিনীর রাবিউল আখের ও জুমাদিউল উলা এ দু’মাস সেখানে অবস্থানের পর মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন। এ অভিযানে তাঁদেরকে কোন প্রকার যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়নি।[৪]

সারিয়্যাতু যায়দ ইবনু হারিসাহ

এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৩য় হিজরী জুমাদিউল আখের মাসে। উহুদ যুদ্ধের পূর্বে মুসলিমদের জন্যে এটা ছিল সর্বশেষ এবং সাফল্যজনক অভিযান।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ হল কুরাইশরা বদর যুদ্ধের পর হতে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের মধ্যে নিমজ্জিত তো ছিলই, তদুপরি যখন গ্রীষ্মকাল আসলো এবং শাম দেশে বাণিজ্যের সফরের সময় এসে পড়লো তখন তারা আর এক দুশ্চিন্তায় নিপতিত হলো। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া- যাকে ঐ বছর শামদেশে গমনকারী কাফেলার আমীর নিযুক্ত করা হয়েছিল- কুরাইশকে বলল ‘মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং তার সঙ্গীরা আমাদের বাণিজ্য পথ কঠিন করে ফেলেছে। তার সঙ্গীদের সাথে আমরা কিভাবে মোকাবেলা করব তা আমি বুঝতে পারছি না। তারা সমুদ্র উপকূল ছাড়তেই চাচ্ছে না। আর উপকূলের বাসিন্দারা তাদের সাথে সন্ধি করে নিয়েছে। সাধারণ লোকেরাও তাদের সাথী হয়ে গেছে। তাই, তখন আমি কোন্ রাস্তা অবলম্বন করব তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আর যদি আমরা বাড়িতেই বসে থাকি তবে মূলধনও খেয়ে ফেলবো, কিছুই বাকী থাকবে না। কেননা, গ্রীষ্মকালে সিরিয়ার সাথে এবং শীতকালে আবিসিনিয়ায় ব্যবসা করার উপরে আমাদের জীবিকা নির্ভর করছে।’

সাফওয়ানের এ উক্তির পর বিষয়টির উপর চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়ে গেল। অবশেষে আসওয়াদ ইবনু আব্দুল মুত্তালিব সাফওয়ানকে বলল, ‘তুমি উপকূলের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে ইরাকের রাস্তায় সফর কর।’ প্রকাশ থাকে যে, এটা খুবই দীর্ঘ রাস্তা। এটা নাজদ হয়ে সিরিয়া চলে গেছে এবং মদীনার পূর্ব দিকে কিছু দূর দিয়ে গিয়েছে। কুরাইশদের নিকট এটা ছিল সম্পূর্ণ অজানা পথ।

এ জন্য আসওয়াদ ইবনু আব্দুল মুত্তালিব সাফওয়ানকে পরামর্শ দিল যে, সে যেন বাকর ইবনু ওয়াইলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ফুরাত ইবনু হাইয়ানকে পথ প্রদর্শক হিসেবে সঙ্গে নেয়।
এ ব্যবস্থাপনার পর কুরাইশের বাণিজ্য কাফেলা সাফওয়ান ইবনু উমাইয়ার নেতৃত্বে নতুন পথ ধরে যাত্রা শুরু করল। কিন্তু এ যাত্রীদলের এ পথ যাত্রার খবর ইতোমধ্যেই মদীনায় পৌঁছে গিয়েছিল। ঘটনা হল সালীত ইবনু নুমান যিনি মুসলিম হয়েছিলেন, নাঈম ইবনু মাসউদের সাথে এক মদ্যপানের মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। নাঈম তখনো মুসলিম হয়নি। এটা মদ্যপান নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বের ঘটনা। যখন নাঈমের উপর নেশা চেপে বসল তখন সে কুরাইশ কাফেলার সফর এবং তাদের অভিপ্রায়ের কথা পূর্ণভাবে বর্ণনা করে দিল। সালীত (রাঃ) দ্রুতগতিতে নাবী কারীম (ﷺ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তৎক্ষণাৎ আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন এবং একশ জন অশ্বারোহীর একটি বাহিনীকে যায়দ ইবনু হারিসার নেতৃত্বে প্রেরণ করলেন। যায়দ (রাঃ) অত্যন্ত দ্রুতগতিতে পথ অতিক্রম করলেন। কুরাইশদের কাফেলা সম্পূর্ণ অসতর্ক অবস্থায় কারদাহ নামক একটি প্রস্রবণের উপর শিবির স্থাপনের নিমিত্ত অবতরণ করছিল, ইত্যবসরে মুসলিম বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে পুরো কাফেলার উপর অধিকার লাভ করলেন। সাফওয়ান ইবনু উমাইয়া এবং কাফেলার অন্যান্য রক্ষকদের পলায়ন ছাড়া আর কোন উপায় থাকল না।

মুসলিমরা কাফেলার পথ প্রদর্শক ফুরাত ইবনু হাইয়ানকে এবং কথিত মতে আরো দুজনকে গ্রেফতার করে নেন। কাফেলার নিকট প্রচুর পরিমাণ রৌপ্য ছিল, যার মূল্য আনুমানিক এক লক্ষ দিরহাম হবে, সবগুলোই মুসলিমরা গনীমতরূপে লাভ করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক পঞ্চমাংশ বের করে নিয়ে বাকীগুলো মুসলিমদের মধ্যে বন্টন করে দেন। ফুরাত ইবনু হাইয়ান নাবী কারীম (ﷺ) -এর পবিত্র হাতে ইসলামের দীক্ষাগ্রহণ করেন।[৫]
বদর যুদ্ধের পরে এটাই ছিল কুরাইশদের জন্য সর্বাপেক্ষা বেদনাদায়ক ঘটনা, যাত্ম ফলে তাদের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা বহুগুণ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। এখন তাদের সামনে দুটি মাত্র পথ ছিল, হয় তারা গর্ব ও অহংকার ত্যাগ করে মুসলমানদের সাথে সন্ধি করবে, না হয় ভীষণ যুদ্ধ করে নিজেদের অতীত গৌরব ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনবে এবং মুসলিমদের শক্তি এমনভাবে চূর্ণ করে দিবে যাতে তারা পুনর্বার মাথা চাড়া দিতে না পারে। মক্কাবাসীগণ দ্বিতীয় পথটি বেছে নিল। সুতরাং এ ঘটনার পর কুরাইশদের প্রতিশোধ গ্রহণের উত্তেজনা আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হল। তারা মুসলিমদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য এবং তাদের ঘরে ঢুকে তাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য পূর্ণ মাত্রায় প্রস্তুতি শুরু করে দিল। এভাবে পূর্ববর্তী ঘটনাবলী ছাড়া এ ঘটনাটিও উহুদ যুদ্ধের বড় একটা কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


তথ্যসূত্রঃ
[১] যা’দুল মা’আদ ২য় খন্ড ৯০-৯১ পৃঃ, ইবনে হিশাম ২য় খন্ড ৪৪-৪৫ পৃঃ।

[২] ইবুন হিশাম ২য় খন্ড ৪৬ পৃঃ, যা’দুল মা’আদ ২য় খন্ড ৯১ পৃঃ, কথিত আছে যে, দুা’সুর অথবা গাওরসি মুহারিবী এ যুদ্ধেই নাবী (সাঃ)-কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সঠিক কথা হচ্ছে এটা অন্য এক যুদ্ধের ঘটনা। সহীহুল বুখারীর ২য় খন্ডের ৫৯৩ পৃঃ।

[৩] এ ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৫১-৫৭ পৃঃ, সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড ৩৪১-৪২৫ পৃঃ, ২য় খন্ড ৫৭৭ পৃঃ, সুনানে আবূ দাউদ আউনুল মা’বূদ সহ দ্রষ্টব্য ২য় খন্ড ৪২-৪৩ পৃঃ এবং যা’দুল মাআ’দ ২য় খন্ড ৯১ পৃঃ, এ সব হাদীস গ্রন্থ হতে গৃহীত হয়েছে।

[৪] ইবুন হিশাম ২য় খন্ড ৫০-৫১ পৃঃ, যা’দুল মা’আদ ২য় খন্ড ৯১ পৃঃ। এ গাযওয়ার কারণের ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। কথিত আছে, মদীনায় এ খবর পৌঁছে যে, বনু সুলায়েম গোত্র মদীনা ও ওর আশেপাশে আক্রমণ চালাবার জন্যে খুব বড় রকমের সামরিক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করছে। এটাও কথিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কুরাইশদের কোন এক যাত্রীদলের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। ইবনু হিশাম এ কারণেই বর্ণনা করেছেন। আর ইবনুল কাইয়্যেমও এটাই গ্রহণ করেছেন। তাই তিনি প্রথম কারণটি উল্লেখ করেন নি। এটাই সত্য বলেও মনে হচ্ছে। কেননা, বনু সুলায়েম গোত্র ফারা এলাকায় বসবাসই করেনি বরং তারা নাজদের বাসিন্দা ছিল, যা ফারা হতে বহু দূরে।

[৫] ইবনে হিশাম ২য় খন্ড ৫০-৫১ পৃঃ, রহমাতুল্লিল আলামীন ২য় খন্ড ২১৯ পৃঃ




******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url