সিরাতুন নবী (সাঃ)-৭৮ || উহুদে শহীদগণকে একত্রিত করণ ও দাফন || উহুদ যুদ্ধ শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন ||




উহুদ যুদ্ধ শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তন

সিরাতুন নবী (সাঃ) ৭৮, উহুদ যুদ্ধ থেকে মদিনায় প্রত্যাবর্তন পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

আবূ সুফইয়ানের আনন্দ ও উমর (রাঃ)-এর সাথে কথোপকথন

মুশরিকরা প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে ফেললে আবূ সুফইয়ান উহুদ পাহাড়ের উপর দৃশ্যমান হল এবং উচ্চৈঃস্বরে বলল, ‘তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (ﷺ) আছে কি?’ মুসলিমরা কোন উত্তর দিলেন না। সে আবার বলল, ‘তোমাদের মধ্যে আবূ কুহাফার পুত্র আবূ বকর (রাঃ) আছে কি?’ তাঁরা এবারও কোন জবাব দিল না। সে পুনরায় প্রশ্ন করে, ‘তোমাদের মধ্যে উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আছে কি?’ সাহাবীগণ এবারও উত্তর দিলেন না। কেননা, নবী (ﷺ) তাদেরকে উত্তর দিতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। আবূ সুফইয়ান এ তিন জন ছাড়া আর কারো ব্যাপারে প্রশ্ন করে নি। কেননা, তার ও তার কওমের এটা খুব ভালই জানা ছিল যে, ইসলাম এ তিন জনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মোট কথা, যখন কোন উত্তর পাওয়া গেল না তখন সে বলল, ‘চলো যাই, এ তিন জন হতে অবকাশ লাভ করা গেছে।’ এ কথা শুনে উমর (রাঃ) আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ‘ওরে আল্লাহর শত্রু। যাদের তুই নাম নিয়েছিস তাঁরা সবাই জীবিত রয়েছেন এবং এখনো আল্লাহ তোকে লাঞ্ছিত করার উৎস বাকী রেখেছেন।’ এরপর আবূ সুফইয়ান বলল, ‘তোমাদের নিহতদের মুসলা করা হয়েছে অর্থাৎ নাক, কান ইত্যাদি কেটে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরূপ করতে আমি হুকুমও করিনি এবং এটাকে খারাপও মনে করিনি।’ অতঃপর সে চিৎকার করে বলল,أعْلِ هُبَل ‘অর্থাৎ হুবল (ঠাকুর) সুউচ্চ হোক।’

নবী (ﷺ) তখন সাহাবীদেরকে বললেন,‏ ‘তোমরা জবাব দিচ্ছ না কেন? তারা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমরা কী জবাব দিব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল,‏‏(‏قُوْلُوْا‏ :‏ اللهُ أَعْلٰى وَأَجَلُّ‏) অর্থাৎ ‘আল্লাহ সুউচ্চ ও অতি সম্মানিত।’ আবার আবূ সুফইয়ান চিৎকার করে বলল,لَنَا الْعُزَّى وَلاَ عُزَّى لَكُمْ অর্থাৎ আমাদের জন্যে উযযা (প্রতিমা) রয়েছে, তোমাদের জন্যে উযযা নেই।’

নবী (ﷺ) পুনরায় সাহাবীদেরকে বললেন, ‘তোমরা উত্তর দিচ্ছ না কেন?’ তারা বললেন, ‘কী উত্তর দিব?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বল,‏‏(‏قُوْلُوْا‏:‏اللهُ مَوْلاَنَا، وَلاَ مَوْلٰي لَكُمْ‏)‏‏ অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের মাওলা এবং তোমাদের কোন মাওলা নেই।’
অতঃপর আবূ সুফইয়ান বললেন, ‘কতই না ভাল কাজ হল! আজকের দিনটি বদর যুদ্ধের দিনের প্রতিশোধ। আর যুদ্ধ হচ্ছে বালতির ন্যায়।’[১]

উমার (রাঃ) এ কথার উত্তরে বলেন, ‘সমান নয়। কেননা আমাদের নিহতরা জান্নাতে আছেন, আর তোমাদের নিহতরা জাহান্নামে আছে।’

এরপর আবূ সুফইয়ান বলল, ‘উমার (রাঃ) আমার নিকটে এসো।’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন, ‘যাও, দেখা যাক কী বলে?’ উমার (রাঃ) নিকটে আসলে আবূ সুফইয়ান তাঁকে বলে, ‘আমি তোমাকে আল্লাহর মাধ্যম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, ‘আমরা মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে হত্যা করেছি কি?’ জবাবে উমর (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! না, বরং এখন তিনি তোমাদের কথা শুনছেন।’ আবূ সুফইয়ান তখন বলল, ‘তুমি আমার নিকট ইবনু কামআর হতে অধিক সত্যবাদী।’[২]


বদরে আরেকবার যুদ্ধ করার প্রতিজ্ঞা

ইবনু ইসহাক্ব বর্ণনা করেছেন যে, আবূ সুফইয়ান এবং তাঁর সঙ্গীরা ফিরে যেতে শুরু করলে আবূ সুফইয়ান মুসলিমগণকে বলল, ‘আগামী বছর বদরে আবার যুদ্ধ করার প্রতিজ্ঞা থাকল।’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন একজন সাহাবীকে বললেন, ‏ (‏قُلْ‏:‏ نَعَمْ، هُوَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ مَوْعِدٌ)‘তুমি তাঁকে বলে দাও ঠিক আছে। এখন আমাদের ও তোমাদের মাঝে এটার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গেল।’[৩]


মুশরিকদের প্রত্যাগমনের সত্যাসত্য যাচাই

এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-কে রওয়ানা করিয়ে দিয়ে বলেন,

‏‏(‏اُخْرُجْ فِيْ آثَارِ الْقَوْمِ فَانْظُرْ مَاذَا يَصْنَعُوْنَ‏؟‏ وَمَا يُرِيْدُوْنَ‏؟‏ فَإِنْ كَانُوْا قَدْ جَنَبُوْا الْخَيْلَ، وَامْتَطُوْا الْإِبِلَ، فَإِنَّهُمْ يُرِيْدُوْنِ مَكَّةَ، وَإِنْ كَانُوْا قَدْ رَكِبُوْا الْخَيْلَ وَسَاقُوْا الْإِبِلَ فَإِنَّهُمْ يُرِيْدُوْنَ الْمَدِيْنَةَ)
‘(মুশরিক) কওমের পিছু পিছু যাও, অতঃপর তারা কী করে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী তা পর্যবেক্ষণ কর। যদি দেখ যে, তারা ঘোড়াকে পার্শ্বে রেখে উটের উপর সওয়ার হয়ে চলছে, তবে জানবে যে, ফিরে যাওয়াই তাদের উদ্দেশ্য আর যদি দেখ যে, তাঁরা ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে উটকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তবে জানবে যে, মদীনা (আক্রমণ করাই) তাঁদের উদ্দেশ্য।’

তারপর তিনি বলেন,

(وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ، لَئِنْ أَرَادُوْهَا لَأَسِيْرَنَّ إِلَيْهَمْ فَيْهَا، ثُمَّ لَأُنَاجِزَنَّهُمْ‏)

‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যদি মদীনা (আক্রমণ করাই) তাদের উদ্দেশ্য হয়, তবে মদীনা গিয়ে আমি তাদের মোকাবেলা করব।’

আলী (রাঃ) বলেন, ‘অতঃপর আমি তাদের পিছনে বের হয়ে দেখি যে, তারা ঘোড়াকে পাশে রেখে উটের উপর সওয়ার হয়ে আছে এবং মক্কামুখী রয়েছে।’[৪]


উহুদে শহীদ ও আহতদের অনুসন্ধান

কুরাইশের প্রত্যাবর্তনের পর মুসলিমরা তাঁদের শহীদ ও আহতদের খোঁজ খবর নেয়ার সুযোগ লাভ করেন। যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) বর্ণনা করেছেন : ‘উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে প্রেরণ করেন যে, আমি যেন সা‘দ ইবনু রাবীর (রাঃ) মৃতদেহ অনুসন্ধান করি এবং বলেন,

‏‏(‏إِنْ رَأَيْتَهُ فَأْقْرَئْهُ مِنِّيْ السَّلَامَ، وَقُلْ لَهُ‏ :‏ يَقُوْلُ لَكَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ‏:‏ كَيْفَ تَجِدُكَ؟‏‏)‏

‘যদি তাঁকে জীবিত দেখতে পাও তবে তাঁকে আমার সালাম জানাবে এবং আমার কথা বলবে যে, সে নিজেকে কেমন পাচ্ছে তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতে চান।’ আমি তখন নিহতদের মধ্যে চক্কর দিতে দিতে তাঁর কাছে পৌঁছলাম। দেখি যে, তাঁর শেষ নিশ্বাস আসা যাওয়া করছে। তিনি বর্শা, তরবারী ও তীরের সত্তরেরও বেশী আঘাত পেয়েছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, ‘হে সা‘দ (রাঃ)! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং আপনি নিজেকে কেমন পাচ্ছেন তা জানতে চেয়েছেন।’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে আমার সালাম জানাবেন এবং তাঁকে বলবেন যে, আমি জান্নাতের সুগন্ধি পাচ্ছি। আর আপনি আমার কওম আনসারদেরকে বলবেন যে, যদি তাদের একটি চক্ষুও নড়তে থাকে এবং এমতাবস্থায় শত্রু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছে যায় তবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাদের কোন ওযর চলবে না।’ আর এ মুহূর্তে তাঁর প্রাণবায়ু নির্গত হয়ে গেল।’[৫]

মুসলিমরা আহতদের মধ্যে উসাইরিমকেও দেখতে পান, যার নাম ছিল ‘আমর ইবনু সা’বিত। তাঁর প্রাণ ছিল তখন ওষ্ঠাগত। ইতোপূর্বে তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হতো, কিন্তু তিনি কবুল করতেন না। এ জন্য মুসলিমরা (বিস্মিতভাবে) পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করেন, ‘এ উসাইরিম কিভাবে এখানে আসল? আমরা তো তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে এসেছিলাম যে, সে এ দ্বীনের বিরোধী ছিল। তাই, তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে উসাইরিম, কোন্ জিনিস তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে? তোমার সম্প্রদায়কে সাহায্য করার উত্তেজনা, না ইসলামের আকর্ষণ?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘ইসলামের আকর্ষণ। আসলে আমি আল্লাহ এবং তার রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান এনেছি এবং এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধে শরীক হয়েছি। তারপর যে অবস্থায় রয়েছি তা তো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।’ এ কথা বলার পরই তিনি চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হয়ে যান। মুসলিমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সামনে এ ঘটনার উল্লেখ করলে তিনি বলেন,‏(‏هُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ‏)‏‏ ‘সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হল।’

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, ‘অথচ তিনি আল্লাহর জন্যে এক ওয়াক্ত সালাতও আদায় করেন নি। (কেননা, ইসলাম গ্রহণের পর কোন সালাতের সময় হওয়ার পূর্বেই তিনি শহীদ হয়ে যান)।’[৬]

এ আহতদের মধ্যেই কুযমানকেও পাওয়া গেল। সে এ যুদ্ধে অত্যন্ত বীরত্ব দেখিয়েছিল এবং একাই সাতজন বা আটজন মুশরিককে হত্যা করেছিল। তাকে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেল। মুসলিমরা তাকে উঠিয়ে বনু যফরের মহল্লায় নিয়ে গেলেন এবং সুসংবাদ শুনালেন। সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমার যুদ্ধ তো শুধু আমার কওমের মর্যাদা রক্ষার জন্যেই ছিল। এটা না থাকলে আমি যুদ্ধই করতাম না।’ এরপর যখন তার যখমের কারণে সে অত্যধিক যন্ত্রণা অনুভব করল তখন সে নিজেকে জবাই করে আত্মহত্যা করল। এরপর যখনই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সামনে তার আলোচনা করা হত, তখনই তিনি বলতেন যে,‏‏(‏إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ‏ِ)‏ সে জাহান্নামী,[৭] আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্য ছাড়া স্বদেশ বা অন্য কিছুর উদ্দেশ্যে যুদ্ধকারীদের পরিণাম এরূপই হয়ে থাকে, যদিও সে ইসলামের পতাকার নীচে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবীদের (রাঃ) সাথে শরীক হয়ে যুদ্ধ করে।
পক্ষান্তরে, নিহতদের মধ্যে বনু সা’লাবাহর একজন ইহুদীকে পাওয়া যায়। যখন তুমুল যুদ্ধ চলছিল তখন সে তার কওমকে বলেছিল, ‘হে ইহুদীদের দল আল্লাহর কসম! তোমরা জান যে, মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সাহায্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য।’ তারা উত্তরে বলেছিল, ‘কিন্তু আজ তো শনিবার।’ সে তখন বলেছিল, ‘তোমাদের জন্যে কোন শনিবার নেই।’ অতঃপর সে নিজের তরবারী এবং সাজ-সরঞ্জাম উঠিয়ে নেয় এবং বলে, ‘আমি যদি নিহত হই তবে আমার মাল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অধিকারে চলে যাবে। তিনি তা নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করবেন।’ এরপর ঐ ব্যক্তি যুদ্ধ ক্ষেত্রে চলে যায় এবং যুদ্ধ করতে করতে নিহত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মন্তব্য করেন, ‏‏(‏مُخَيرِيْقٌ خَيْرٌ يَهُوْدٌ‏)‏‏ ‘মুখাইরীক একজন উত্তম ইহুদী ছিল।’[৮]


উহুদে শহীদগণকে একত্রিত করণ ও দাফন

এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও শহীদদেরকে পরিদর্শন করেন এবং বলেন,

أَنَا أَشْهَدُ عَلٰى هٰؤُلاَءِ إِنَّهُ مَا مِنْ جَرِيْحٍ يُجْرَحُ فِيْ اللهِ إِلَّا وَاللهِ بَعَثَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَدْمَى اللَّوْنُ لَوْنُ الدَّمِ وَالرِّيْحُ رِيْحُ الْمِسْكِ

‘আমি এ লোকদের ব্যাপারে সাক্ষী থাকব। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহত হয়, আল্লাহ তাঁকে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় উঠাবেন যে, তাঁর ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত বইতে থাকবে। রঙ তো রক্তেরই হবে, কিন্তু সুগন্ধি হবে মিশকের মতো।’[৯]

কতিপয় সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) তাঁদের শহীদদেরকে মদীনায় স্থানান্তরিত করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তাঁরা যেন শহীদদেরকে ফিরিয়ে এনে তাঁদের শাহাদতের স্থানেই দাফন করেন এবং আরো নির্দেশ দেন যে, তাঁদের অস্ত্র-শস্ত্র এবং চর্ম নির্মিত (যুদ্ধের) পোষাক যেন খুলে নেয়া না হয়, আর গোসল দেয়া ছাড়াই যে অবস্থায় তাঁরা রয়েছেন সেই অবস্থাতেই যেন তাঁদেরকে দাফন করে দেয়া হয়। তিনি দু’দুজনকে একই কাপড়ে জড়াতেন এবং দুই কিংবা তিন শহীদকে একই কবরে দাফন করতেন এবং প্রশ্ন করতেন,‏‏ (‏أَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِلْقُرْآنِ‏؟‏)‘এদের মধ্যে কুরআন কার বেশী মুখস্থ ছিল?’ সাহাবী যার দিকে ইশারা করতেন তাকেই তিনি কবরে আগে রাখতেন এবং বলতেন, ‏‏(‏أَنَا شَهِيْدٌ عَلٰى هٰؤُلاَءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ‏)‏ ‘কিয়ামতের দিন আমি এ লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দান করব।’ আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু হারাম (রাঃ) এবং ‘আমর ইবনু জমূহ (রাঃ)-কে একই কবরে দাফন করা হয়। কেননা তাঁদের দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল।[১০]
হানযালার (রাঃ) মৃতদেহ অদৃশ্য ছিল। অনুসন্ধানের পর এক জায়গায় এমন অবস্থায় দেখা গেল যে, যমীন হতে উপরে রয়েছে এবং ওটা হতে টপ্ টপ্ করে পানি পড়ছে। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবায়ে কিরামকে জানালেন যে, ‘ফিরিশতারা একে গোসল করিয়ে দিচ্ছেন।’ তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন, ‏‏ (‏سَلُوْا أَهْلَهُ مَا شَأْنُهُ‏؟‏‏) ‘তাঁর বিবিকে জিজ্ঞাসা কর প্রকৃত ব্যাপারটি কী ছিল?’ তাঁর বিবিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তার প্রকৃত ঘটনাটি বলেন। এখান থেকেই হানযালা (রাঃ)-এর নাম (غَسِيْلُ الْمَلاَئِكَةِ) গাছিলো আলমালাইকাতি (অর্থাৎ ফিরিশতাগণ কর্তৃক গোসল প্রদত্ত) হয়ে যায়।[১১]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর চাচা হামযাহ (রাঃ)-এর অবস্থা দেখে অত্যন্ত মর্মাহত হন। তাঁর ফুফু সাফিয়্যাহ (রাঃ) আগমন করেন এবং তিনিও তাঁর ভ্রাতা হামযাহ (রাঃ)-কে দেখার বাসনা প্রকাশ করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর পুত্র যুবাইর (রাঃ)-কে বলেন যে, তিনি যেন তাঁর মাতাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং তাঁর ভাইকে দেখতে না দেন।

এ কথা শুনে সাফিয়্যাহ (রাঃ) বলেন, ‘এটা কেন? আমি জানতে পেরেছি যে, আমার ভাই এর নাক, কান ইত্যাদি কেটে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার ভাই আল্লাহর পথে রয়েছে। সুতরাং তার উপর যা কিছু করা হয়েছে তাতে আমি পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট আছি। আমি পুণ্য মনে করে ইনশাআল্লাহ ধৈর্য্য ধারণ করব।’ অতঃপর তিনি হামযাহ (রাঃ)-এর নিকট আসেন, তাঁকে দেখেন, তাঁর জন্যে ইন্নালিল্লাহ পড়েন এবং দুআ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশ অনুযায়ী হামযাহ (রাঃ)-কে আব্দুল্লাহ ইবনু জাহশ (রাঃ)-এর সাথে দাফন করা হয়। তিনি হামযাহ (রাঃ)-এর ভাগিনা এবং দুধভাইও ছিলেন। ইবনু মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হামযাহ ইবনু আবদিল মুত্তালিব (রাঃ)-এর জন্যে যে ভাবে কেঁদেছেন তার চেয়ে বেশী কাঁদতে আমরা তাঁকে কখনো দেখিনি। তিনি তাঁকে ক্বিবলাহমুখী করে রাখেন। অতঃপর তাঁর জানাযায় দাঁড়িয়ে তিনি এমনভাবে ক্রন্দন করেন যে, শব্দ উঁচু হয়ে যায়।[১২]

প্রকৃতপক্ষে শহীদদের দৃশ্য ছিল অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। খাব্বাব ইবনু আরত বর্ণনা করেছেন যে, হামযাহ (রাঃ)-এর জন্যে কালো প্রান্তবিশিষ্ট একটি চাদর ছাড়া কোন কাফন পাওয়া যায় নি। ঐ চাদর দ্বারা মাথা আবৃত করলে পা খোলা থেকে যেত এবং পা আবৃত করলে মাথা খোলা থেকে যেত। অবশেষে মাথা ঢেকে দেয়া হয় এবং পায়ের উপর ইযখির[১৩] ঘাস চাপিয়ে দেয়া হয়।[১৪]
আব্দুর রহমান ইবনু আউস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, ‘মুসআব ইবনু উমায়ের (রাঃ) শহীদ হন এবং তিনি আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। তাঁকে একটি মাত্র চাদর দ্বারা তাঁর মাথা ঢাকলে পা খোলা থাকত এবং পা ঢাকলে মাথা খোলা থেকে যেত।’ এ অবস্থার কথা খাব্বাবও (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি শুধু এটুকু বেশী বলেছেন, ‘(এ অবস্থা দেখে) নাবী (ﷺ) আমাদেরকে বলেন, ‏‏(‏غُطُّوْا بِهَا رَأْسَهُ، وَاجْعَلُوْا عَلٰى رِجْلَيْهِ الْإِذْخِرْ) তার মাথা ঢেকে দাও, আর তার পায়ের উপর ইযখির (ঘাষ) ফেলে দাও।’[১৫]


উহুদ যুদ্ধের পরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেন এবং তাঁর নিকট দুআ করেন

ইমাম আহমাদ (রঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, উহুদের দিন যখন মুশরিকরা মক্কার পথে ফিরে যায় তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-কে বলেন, ‘তোমরা সমানভাবে দাঁড়িয়ে যাও, আমি কিছুক্ষণ আমার মহিমান্বিত প্রতিপালকের প্রশংসা ও গুণগান করব।’ এ আদেশ অনুযায়ী সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) তাঁর পিছনে কাতার বন্দী হয়ে যান। তিনি বলেন,

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كُلُّهُ اللَّهُمَّ لاَ قَابِضَ لِمَا بَسَطْتَ وَلاَ بَاسِطَ لِمَا قَبَضْتَ وَلاَ هَادِيَ لِمَا أَضْلَلْتَ وَلاَ مُضِلَّ لِمَنْ هَدَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُقَرِّبَ لِمَا بَاعَدْتَ وَلاَ مُبَاعِدَ لِمَا قَرَّبْتَ اللَّهُمَّ ابْسُطْ عَلَيْنَا مِنْ بَرَكَاتِكَ وَرَحْمَتِكَ وَفَضْلِكَ وَرِزْقِكَ

‘হে আল্লাহ! আপনার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা। হে আল্লাহ! যে জিনিসকে আপনি প্রশস্ত করেন ওটাকে কেউ সংকীর্ণ করতে পারে না, আর যে জিনিসকে আপনি সংকীর্ণ করে দেন ওটাকে কেউ প্রশস্ত করতে পারে না। যাকে আপনি পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ প্রদর্শন করতে পারে না এবং যাকে আপনি পথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না, যেটা আপনি আটকিয়ে রাখেন ওটা কেউ প্রদান করে না, আর যেটা আপনি প্রদান করেন ওটা কেউ আটকাতে পারে না, যেটাকে আপনি দূর করে দেন ওটাকে কেউ নিটকবর্তী করতে পারে না। হে আল্লাহ! আমাদের উপর স্বীয় বরকত, রহমত, অনুগ্রহ এবং রিযক প্রশস্ত করে দিন।
اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ النَّعِيْمَ الْمُقِيْمَ الَّذِيْ لاَ يَحُوْلُ وَلاَ يَزُوْلُ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ النَّعِيْمَ يَوْمَ الْعَيْلَةِ وَالْأَمْنَ يَوْمَ الْخَوْفِ اللَّهُمَّ إِنِّيْ عَائِذٌ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا أَعْطَيْتَنَا وَشَرِّ مَا مَنَعْتَ اللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الإِيْمَانَ وَزَيِّنْهُ فِيْ قُلُوْبِنَا وَكَرِّهْ إِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنْ الرَّاشِدِيْنَ اللَّهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ وَأَحْيِنَا مُسْلِمِيْنَ وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِيْنَ غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ مَفْتُوْنِيْنَ اللَّهُمَّ قَاتِلْ الْكَفَرَةَ الَّذِيْنَ يُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ وَاجْعَلْ عَلَيْهِمْ رِجْزَكَ وَعَذَابَكَ اللَّهُمَّ قَاتِلْ الْكَفَرَةَ الَّذِيْنَ أُوْتُوْا الْكِتَابَ إِلَهَ الْحَقِّ

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এমন নিয়ামতের জন্যে প্রার্থনা করছি যা স্থায়ী থাকে এবং শেষ হয় না। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দারিদ্রের দিনে সাহায্যের এবং ভয়ের দিনে নিরাপত্তার প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তার অকল্যাণ হতে এবং যা কিছু দেন নি তারও অকল্যাণ হতে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ! আমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিন এবং ওটাকে আমাদের অন্তরে সৌন্দর্যমন্ডিত করুন। আর কুফর, ফিসক ও অবাধ্যতাকে আমাদের নিকট অপছন্দনীয় করে দিন এবং আমাদেরকে হিদায়াতপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে মুসলিম থাকা অবস্থায় মৃত্যু দান করুন এবং মুসলিম থাকা অবস্থায় জীবিত রাখুন। আর আমরা লাঞ্ছিত হই এবং ফিৎনায় পতিত হই তার পূর্বেই আমাদেরকে সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি ঐ কাফিরদেরকে ধ্বংস করুন এবং কঠিন শাস্তি দিন, যারা আপনার নবীদেরকে অবিশ্বাস করে এবং আপনার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। হে আল্লাহ! ঐ কাফিরদেরকেও ধ্বংস করুন যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, হে সত্য মা’বূদ।’[১৬]


উহুদ যুদ্ধ শেষে মদীনায় প্রত্যাবর্তন এবং প্রেম-প্রীতি ও আত্মোৎসর্গের অসাধারণ ঘটনাবলী

শহীদদের দাফন কাফন এবং মহা মহিমান্বিত আল্লাহর গুণগান ও তাঁর নিকট দু‘আর কাজ শেষ করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনার পথে যাত্রা শুরু করেন। যুদ্ধকালে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) হতে প্রেম ও আত্মত্যাগের অসাধারণ ঘটনাবলী প্রকাশিত হয়েছিল, ঠিক তেমনই পথ চলাকালে মুসলিম মহিলাগণ হতেও সত্যবাদিতা ও আত্মত্যাগের বিস্ময়কর ঘটনাবলী প্রকাশ পেয়েছিল।
পথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে হামনাহ বিনতে জাহশ (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ হয়। তাঁকে তাঁর ভ্রাতা আব্দুল্লাহ ইবনু জাহশ (রাঃ)-এর শাহাদতের সংবাদ দেয়া হয়। তিনি ইন্নালিল্লাহ পাঠ করেন ও তাঁর মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করেন। তারপর তাঁর মামা হামযাহ ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর শাহাদতের খবর দেয়া হয়। তিনি আবার ইন্নালিল্লাহ পড়েন ও তাঁর মাগফিরাতের জন্য দুআ করেন। এরপর তাঁকে তাঁর স্বামী মুসআব ইবনু উমায়ের (রাঃ)-এর শাহাদতের সংবাদ দেয়া হয়। এ খবর শুনে তিনি অস্থিরভাবে চিৎকার করে উঠেন এবং হাউ মাউ করে কাঁদতে শুরু করেন। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‏‏ (‏إِنَّ زَوْجَ الْمَرْأَةِ مِنْهَا لَبِمَكَانٍ‏)‏ ‘স্ত্রীর কাছে স্বামীর বিশেষ এক মর্যাদা আছে।’[১৭]

অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বনু দীনার গোত্রের এক মহিলার পাশ দিয়ে গমন করেন যার স্বামী, ভ্রাতা এবং পিতা এ তিন জন শাহাদতের পিয়ালা পান করেছিলেন। তাঁকে এদের শাহাদতের সংবাদ দেয়া হলে তিনি বলে ওঠেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খবর কী?’ সাহাবীগণ উত্তর দেন, ‘হে উম্মু ফুলান, তুমি যেমন চাচ্ছ তিনি তেমনই আছেন (অর্থাৎ তিনি বেঁচে আছেন।)।’ মহিলাটি বললেন, ‘তাঁকে একটু আমাকে দেখিয়ে দিন, আমি তার দেহ মুবারক একটু দেখতে চাই।’ সাহাবীগণ ইঙ্গিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি তাঁর দৃষ্টি পড়া মাত্রই হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন, (كُلُّ مُصِيْبَةٍ بَعْدَكَ جَلَلٌ) অর্থাৎ ‘আপনাকে পেলে সব বিপদই নগণ্য।’[১৮]

পথে চলাকালেই সা‘দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর মা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আসেন। ঐ সময় সা‘দ ইবনু মু’আয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এ ঘোড়ার লাগাম ধরেছিলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ইনি আমার মাতা।’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন ‘মারহাবা’ বলেন। অতঃপর তাঁর অভ্যর্থনার জন্যে থেমে যান এবং তাঁর পুত্র ‘আমর ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর শাহাদতের উপর সমবেদনাসূচক কালেমা পাঠ করে তাঁকে সান্ত্বনা দেন এবং ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যখন আমি আপনাকে নিরাপদ দেখতে পেয়েছি তখন সব বিপদই আমার কাছে অতি নগণ্য।’ তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উহুদের শহীদদের জন্যে দু‘আ করেন এবং বলেন, ‏‏(‏يَا أُمَّ سَعْدٍ، أَبْشِرِيْ وَبَشِّرِيْ أَهْلَهُمْ أَنْ قَتْلاَهُمْ تَرَافَقُوْا فِي الْجَنَّةِ جَمِيْعًا، وَقَدْ شَفَعُوْا فِيْ أَهْلِهِمْ جَمِيْعاً‏‏‏) ‘হে উম্মু সা‘দ (রাঃ) তুমি খুশী হয়ে যাও এবং শহীদদের পরিবারের লোকদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দাও যে, তাঁদের শহীদরা সবাই এক সাথে জান্নাতে রয়েছে। আর তাঁদের পরিবারের লোকদের ব্যাপারে তাঁদের সবারই শাফাআত কবুল করা হবে।’
সা‘দ (রাঃ)-এর মাতা (রাঃ) তখন বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তাদের উত্তরাধিকারীদের জন্যেও দু‘আ করুন।’ তিনি বললেন,(‏اللّٰهُمَّ أَذْهِبْ حُزْنَ قُلُوْبِهِمْ، وَاجْبِرْ مُصِيْبَتِهِمْ، وَأَحْسِنْ الخَلْفَ عَلٰى مَنْ خُلِّفُوْ) ‘হে আল্লাহ! তাঁদের অন্তরের দুঃখ দূর করে দিন, তাঁদের বিপদের বিনিময় প্রদান করুন এবং জীবিত ওয়ারিসদেরকে উত্তমরূপে দেখা শোনা করুন।’[১৯]


উহুদ যুদ্ধের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায়

সেদিন হিজরী তৃতীয় সনের ৭ই শাওয়াল শনিবার সন্ধ্যার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় পৌঁছেন। বাড়িতে তিনি তাঁর নিজের তরবারীটি ফাতিমাহ (রাঃ)-কে দিয়ে বলেন, ‘মা! এর রক্ত ধুয়ে দাও। আল্লাহর কসম! এটা আজ আমার নিকট খুবই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।’ তারপর আলী (রাঃ)ও তাঁর তরবারীখানা ফাতিমাহ (রাঃ)-এর দিকে বাড়িয়ে দিলেন এবং বললেন, ‏‏(‏اِغْسِلِيْ عَنْ هٰذَا دَمَهُ يَا بُنَيَّةُ، فَوَاللهِ لَقَدْ صَدَقَنِيْ الْيَوْمَ) ‘এটারও রক্ত ধুয়ে ফেল। আল্লাহর শপথ! এটাও আজ অত্যন্ত সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।’ তাঁর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বললেন, ‏‏(‏لَئِنْ كُنْتَ صَدَقْتَ الْقِتَالَ، لَقَدْ صَدَقَ مَعَكَ سَهْلُ بْنُ حُنَيْفٍ وَأَبُوْ دُجَانَةَ) ‘তুমি যদি নিঃস্বার্থভাবে যুদ্ধ করে থাক তবে তোমার সাথে সুহায়েল ইবনু হুনায়েফ (রাঃ) এবং দুজানাহ (রাঃ) ও নিঃস্বার্থভাবে যুদ্ধ করেছে।[২০]

তথ্যসূত্রঃ
[১] অর্থাৎ কখনও একদল জয় যুক্ত হয় এবং কখনও অন্যদল। যেমন বালতি একবার একজন টেনে তোলে, আরেকবার অন্যজন।
[২] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৯৩-৯৪ পৃঃ, যাদুল মা‘আদ, ২য় খন্ড ৯৪ পৃ: এবং সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৫৭৯ পৃঃ।
[৩] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৯৪ পৃঃ।
[৪] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৯৪ পৃঃ, হাফেজ ইবনু হাজর (রঃ) ফাতহুল বারী, সপ্ত খন্ডের ৩৪৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, মুশরিকদের উদ্দেশ্য যাচাই করার জন্য সা‘আদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) রওয়ানা হয়েছিলেন।
[৫] যা’দুল মাআ’দ, ২য় খন্ড ৯৬ পৃঃ।
[৬] যাদু’ল মাআ’দ, ২য় খন্ড ৯৪ পৃঃ। ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৯০ পৃঃ।
[৭] যাদুল মাআ’দ, ২য় খন্ড ৯৭-৯৮ পৃ: এবং ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৮৮ পৃঃ।
[৮] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৮৮-৮৯ পৃঃ।
[৯] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড ৯৮ পৃঃ।
[১০] যাদুল মা‘আদ, ২য় খন্ড ৯৮ পৃঃ, এবং সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড ৫৮৪ পৃঃ।
[১১] যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড, ৯৪ পৃঃ।
[১২] এটা ইবনে শাযানের বর্ণনা। শায়খ আব্দুল্লাহর মুখতাসারুস সীরাহ এর ২৫৫ পৃ: দ্রঃ।
[১৩] এটা মুযের সাথে সম্পূর্ণরূপে সাদৃশ্যযুক্ত এক প্রকার সুগন্ধময় ঘাস যা বহু জায়গায় চায়ে ফেলে দিয়ে চা তৈরি করা হয়। আরবে এ ঘাস এক হতে দেড় হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। আর হিন্দুস্তানে এটা এক মিটারের চেয়েও বেশী লম্বা হয়।
[১৪] মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত, ১ম খন্ড ১৪০ পৃঃ।
[১৫] সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড ৫৭৯ ও ৫৮৪ পৃঃ।
[১৬] সহীহুল বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ। মুসনাদে আহমাদ, ৩য় খন্ড ৩২৪ পৃঃ।
[১৭] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড, ৯৯ পৃঃ।
[১৮] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড, ৯৯ পৃঃ।
[১৯] আস সীরাতুল হালবিয়্যাহ, ২য় খন্ড ৪৭ পৃঃ।
[২০] ইবনু হিশাম, ২য় খন্ড, ১০০ পৃঃ।




******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url