তাফসীরে ইবনে কাসীর - ১ || সূরা ফাতিহার তাফসীর || ‘ফাতিহা' শব্দের অর্থ || উম্মুল কিতাব || সূরা ফাতিহার ফাযীলাত ||





সূরা ফাতিহার তাফসীর

সূরা - ১ঃ  ফাতিহা, মাক্কী
আয়াতঃ ৭, রুকূঃ ১

‘ফাতিহা' শব্দের অর্থ এবং এর বিভিন্ন নাম

এই সূরাটির নাম 'সূরা আল ফাতিহা। কোন কিছু আরম্ভ করার নাম 'ফাতিহা' বা উদ্‌ঘাটিকা। কুরআনুল হাকীমের প্রথমে এই সূরাটি লিখিত হয়েছে বলে একে 'সূরা আল ফাতিহা বলা হয়। তাছাড়া সালাতের মধ্যে এর দ্বারাই কিরা'আত আরম্ভ করা হয় বলেও একে এই নামে অভিহিত করা হয়েছে। 'উম্মুল কিতাব ও এর অপর একটি নাম। জামহুর বা অধিকাংশ ইমামগণ এ মতই পোষণ করে থাকেন। তিরমিযীর একটি বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

এই সূরাটি হল উম্মুল কুরআন, উম্মুল কিতাব, সাবআ' মাসানী এবং কুরআন আযীম'। এই সূরাটির নাম 'সূরাতুল হামদ' এবং 'সূরাতুস্ সালাত'ও বটে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেন : 'আমি সালাতকে (অর্থাৎ সূরা ফাতিহাকে) আমার মধ্যে এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে দিয়েছি। যখন বান্দা বলে اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে।' (তিরমিযী ৮/২৮৩) এই হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, সূরা ফাতিহার নাম সূরা-ই-সালাতও বটে। কেননা এই সূরাটি সালাতের মধ্যে পাঠ করা শর্ত রয়েছে। এই সূরার আর একটি নাম সূরাতুশ্ শিফা। এর আর একটি নাম 'সূরাতুর রুকিয়্যাহ'। আবূ সাঈদ (রাঃ) সাপে কাটা রুগীর উপর ফুঁ দিলে সে ভাল হয়ে যায়। এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ
'এটা যে রুকিয়্যাহ (অর্থাৎ পড়ে ফুঁক দেয়ার সূরা) তা তুমি কেমন করে জানলে?' (ফাতহুল বারী ৪/৫২৯) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ), কাতাদাহ (রহঃ) এবং আবুল আলীয়া (রহঃ) বলেন যে, এই সূরাটি মাক্কী। কেননা এক আয়াতে আছেঃ

وَلَقَدْ مَاتَيْتِكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْهَانَ الْعَظِيمَ

আমি তো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয় এবং দিয়েছি মহান কুরআন। (সূরা হিজর, ১৫ : ৮৭) আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

সূরা ফাতিহায় আয়াত, শব্দ ও অক্ষরের সংখ্যা

এ সূরার আয়াত সম্পর্কে সবাই একমত যে ওগুলি ৭টি।  بِسۡمِ اللّٰهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ এই সূরাটির পৃথক আয়াত কিনা তাতে মতভেদ রয়েছে। সমস্ত কারী, সাহাবী (রাঃ) এবং তাবেঈর (রহঃ) একটি বিরাট দল এবং পরবর্তী যুগের অনেক বয়োবৃদ্ধ মুরব্বী একে সূরা ফাতিহার প্রথম, পূর্ণ একটি পৃথক আয়াত বলে থাকেন। এই সূরাটির শব্দ হল পঁচিশটি এবং অক্ষর হল একশো তেরটি

সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কিতাব বলার কারণ

ইমাম বুখারী (রহঃ) সহীহ বুখারীর 'কিতাবুত্ তাফসীরে' লিখেছেন : 'এই সূরাটির নাম উম্মুল কিতাব' রাখার কারণ এই যে, কুরআন মাজীদের লিখন এ সূরা হতেই আরম্ভ হয়ে থাকে এবং সালাতের কিরা'আতও এ থেকেই শুরু হয়। (ফাতহুল বারী ৮/৬)
একটি অভিমত এও আছে যে, যেহেতু পূর্ণ কুরআনুল হাকীমের বিষয়াবলী সংক্ষিপ্তভাবে এর মধ্যে নিহিত রয়েছে, সেহেতু এর নাম উম্মুল কিতাব হয়েছে। ইন জারীর (রহঃ) বলেন : আরাব দেশের মধ্যে এ প্রথা চালু আছে যে, তারা একটি ব্যাপক কাজ বা কাজের মূলকে ওর অধীনস্থ শাখাগুলির 'উম্ম' বা 'মা' বলে থাকে। যেমন أُمُّ الرَّاسِ তারা ঐ চামড়াকে বলে যা সম্পূর্ণ মাথাকে ঘিরে রয়েছে এবং সামরিক বাহিনীর পতাকাকেও তারা أُمُّ বলে থাকে যার নীচে জনগণ একত্রিত হয়। মাক্কাকেও উম্মুল কুরা বলার কারণ এই যে, ওটাই সারা বিশ্ব জাহানের প্রথম ঘর। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী সেখান হতেই ব্যাপ্তি ও বিস্তার লাভ করেছে। (তাবারী ১/১০৭) মুসনাদ আহমাদে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'উম্মুল কুরা' সম্পর্কে বলেছেন : 'এটাই 'উম্মুল কুরআন' এটাই 'সাবআ' মাসানী' এবং এটাই কুরআনুল আযীম।' (আহমাদ ২/৪৪৮) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

'ইহাই 'উম্মুল কুরআন,' ইহাই 'ফাতিহাতুল কিতাব' এবং ইহাই 'সাবআ' মাসানী।' (তাবারী ১/১০৭)

সূরা ফাতিহার ফযিলাত

মুসনাদ আহমাদে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ 'আমি সালাত আদায় করছিলাম, এমন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ডাক দিলেন, আমি কোন উত্তর দিলাম না। সালাত শেষ করে আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে বললেন ঃ এতক্ষণ তুমি কি কাজ করছিলে?' আমি বললাম : 'হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি সালাত আদায় করছিলাম।' তিনি বললেন : 'আল্লাহ তা'আলার এই নির্দেশ কি তুমি শুননি?

 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَجِیۡبُوۡا لِلّٰهِ وَ لِلرَّسُوۡلِ اِذَا دَعَاکُمۡ
হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের জীবন সঞ্চারের দিকে আহ্বান করেন। (সূরা আনফাল, ৮ : ২৪) মাসজিদ হতে যাবার পূর্বেই আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় সূরা কোটি। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরে মাসজিদ হতে চলে যাবার ইচ্ছা করলে আমি তাঁকে তাঁর অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি বললেন : 'ঐ সূরাটি হল 'আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন'। এটাই সাবআ' মাসানী এবং এটাই কুরআন আযীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে।' (আহমাদ ৪/২১১) এভাবেই এই বর্ণনাটি সহীহ বুখারী, আবূ দাউদ, নাসাঈ এবং ইব্‌ন মাজাহয়ও অন্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। (হাদীস নং ৮/৬, ২৭১; ২/১৫০, ২/১৩৯ এবং ২ / ১২৪৪) মুসনাদ আহমাদে আরও রয়েছে, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই ইবন কা'বের (রাঃ) নিকট যান যখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। অতঃপর তিনি বলেন ঃ 'হে উবাই (রাঃ) ! এতে তিনি (তাঁর ডাকের প্রতি) মনোযোগ দেন কিন্তু কোন উত্তর দেননি। আবার তিনি বলেন : 'হে উবাই!' তিনি বলেন : 'আস্সালামু আলাইকা।' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : 'ওয়া আলাইকাস সালাম।' তারপর বলেন : 'হে উবাই! আমি তোমাকে ডাক দিলে উত্তর দাওনি কেন?' তিনি বলেন : 'হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি সালাত আদায় করছিলাম।' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন উপরোক্ত আয়াতটিই পাঠ করে বলেন :

 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَجِیۡبُوۡا لِلّٰهِ وَ لِلرَّسُوۡلِ اِذَا دَعَاکُمۡ لِمَا یُحۡیِیۡکُمۡ - এই আয়াতটি শুননি?”

তিনি বলেনঃ 'হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হ্যাঁ (আমি শুনেছি), এরূপ কাজ আর আমার দ্বারা হবেনা।' রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেনঃ

'তুমি কি চাও যে, তোমাকে আমি এমন একটি সূরার কথা বলি যার মত কোন সূরা তাওরাত, ইঞ্জীল এবং কুরআনে নেই? তিনি বলেন : 'হ্যাঁ অবশ্যই বলুন।' তিনি বলেন ঃ এখান থেকে যাবার পূর্বেই আমি তোমাকে তা বলে দিব।' অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে চলতে চলতে অন্য কথা বলতে থাকেন, আর আমি ধীর গতিতে চলতে থাকি । এই ভয়ে যে না জানি কথা বলা বাকি থেকে যায়, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে পৌঁছে যান। অবশেষে দরজার নিকট পৌঁছে আমি তাঁকে তাঁর অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেই।' তিনি বললেন : 'সালাতে কি পাঠ কর?” আমি উম্মুল কুরা' পাঠ করে শুনিয়ে দেই। তিনি বললেনঃ

'সেই আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, এরূপ কোন সূরা তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবুরের মধ্যে নেই যা কুরআনে রয়েছে। এটাই হল 'সাবআ’ মাসানী'। (আহমাদ ২/৪১২, তিরমিযী ৮/২৮৩, হাকিম ১/৫৬০) জামে উত তিরমিযীতে আরও একটু বেশি বর্ণিত আছে। তা হল এইঃ
'এটাই মহান কুরআন যা আমাকে দান করা হয়েছে।' এই হাদীসটি সংজ্ঞা ও পরিভাষা অনুযায়ী হাসান ও সহীহ। আনাস (রাঃ) হতেও এ অধ্যায়ে একটি হাদীস বর্ণিত আছে। মুসনাদ আহমাদেও এভাবে বর্ণিত আছে। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) একে পরিভাষার প্রেক্ষিতে হাসান গারীব বলে থাকেন। মুসনাদ আহমাদে আবদুল্লাহ ইব্‌ন যাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, 'একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট গমন করি। সে সময় সবেমাত্র তিনি সৌচক্রিয়া সম্পাদন করেছেন। আমি তিনবার সালাম দেই, কিন্তু তিনি উত্তর দিলেননা। তিনি বাড়ীর মধ্যেই চলে গেলেন। আমি দুঃখিত ও মর্মাহত অবস্থায় মাসজিদে প্রবেশ করি। অল্পক্ষণ পরেই পবিত্র হয়ে তিনি আগমন করেন এবং তিনবার সালামের জবাব দেন। অতঃপর বলেন, 'হে আবদুল্লাহ ইব্‌ন যাবির! জেনে রেখ, সম্পূর্ণ কুরআনের মধ্যে সর্বোত্তম সূরা হল اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ এই সূরাটি। (আহমাদ ৪/১৭৭, মুআত্তা ১/৮৪) এর ইসনাদ খুব চমৎকার।

সূরা ফাতিহার মর্যাদার ব্যাপারে উপরোল্লিখিত হাদীসসমূহ ছাড়াও আরও হাদীস রয়েছে। সহীহ বুখারীতে 'ফাযায়িলুল কুরআন' অধ্যায়ে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : 'একবার আমরা সফরে ছিলাম। এক স্থানে আমরা অবতরণ করি। হঠাৎ একটি দাসী এসে বললঃ 'এ এলাকার গোত্রের নেতাকে সাপে কেটেছে। আমাদের লোকেরা এখন সবাই অনুপস্থিত। ঝাড় ফুঁক দিতে পারে এমন কেহ আপনাদের মধ্যে আছে কি? আমাদের মধ্য হতে একটি লোক তার সাথে গেল। সে যে ঝাড় ফুঁকও জানত তা আমরা জানতামনা। সেখানে গিয়ে সে কিছু ঝাড় ফুঁক করল। আল্লাহর অপার মহিমায় তৎক্ষণাৎ সে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করল। অতঃপর সে ৩০টি ছাগী দিল এবং আমাদের আতিথেয়তার জন্য অনেক দুধও পাঠিয়ে দিল। সে ফিরে এলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ 'তোমার কি এ বিদ্যা জানা ছিল?' সে বলল : 'আমিতো শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁক দিয়েছি।' আমরা বললামঃ 'তাহলে এ প্রাপ্ত মাল এখনই স্পর্শ করনা। প্রথমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করে নেই।' মাদীনায় এসে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করলাম। তিনি বললেনঃ 'এটা যে ফুঁক দেয়ার সূরা তা সে কি করে জানল? এ মাল ভাগ কর। আমার জন্যও এক ভাগ রেখ।' (ফাতহুল বারী ৮/৬৭১)

সহীহ মুসলিম ও সুনান নাসাঈতে আছে যে, একদা জিবরাঈল (আঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট বসেছিলেন, এমন সময় উপর হতে এক বিকট শব্দ এলো। জিবরাঈল (আঃ) উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন ঃ আজ আকাশের ঐ দরজাটি খুলে গেছে যা ইতোপূর্বে কখনও খুলেনি। অতঃপর সেখান হতে একজন মালাক/ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন, 'আপনি খুশি হোন! এমন দু'টি নূর আপনাকে দেয়া হল যা ইতোপূর্বে কেহকেও দেয়া হয়নি। তা হল সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারাহর শেষ আয়াতগুলি। ওর এক একটি অক্ষরের উপর নূর রয়েছে। এটি সুনান নাসাঈর শব্দ ।

সূরা ফাতিহা ও সালাত আদায় প্রসঙ্গ

সহীহ মুসলিমে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
'যে ব্যক্তি সালাতে উম্মুল কুরআন পড়ল না তার সালাত অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ, পূর্ণ নয়।' আবূ হুরাইরাহকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করা হল : 'আমরা যদি ইমামের পিছনে থাকি তাহলে? তিনি বললেনঃ 'তাহলেও চুপে চুপে পড়ে নিও।' আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে শুনেছি, তিনি বলতেনঃ

'আল্লাহ ঘোষণা করেনঃ 'আমি সালাতকে আমার এবং আমার বান্দার মধ্যে অর্ধ অর্ধ করে ভাগ করেছি এবং আমার বান্দা আমার কাছে যা চায় তা আমি তাকে দিয়ে থাকি। যখন বান্দা বলে, اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ তখন আল্লাহ বলেন : 'আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল।' বান্দা যখন বলে, الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ তখন আল্লাহ বলেন : 'আমার বান্দা আমার গুণাগুণ বর্ণনা করল।' বান্দা যখন বলে مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন : 'আমার বান্দা আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করল।' কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বলেন : “আমার বান্দা আমার উপর (সবকিছু) সমর্পণ করল।' যখন বান্দা বলে  اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ তখন আল্লাহ তা'আলা বলেন : 'এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যের কথা এবং আমার বান্দা আমার নিকট যা চাবে আমি তাকে তাই দিব' অতঃপর বান্দা যখন اِهۡدِ نَا الصِّرَاطَ الۡمُسۡتَقِیۡمَصِرَاطَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمۡتَ عَلَیۡهِمۡ ۬ۙ غَیۡرِ الۡمَغۡضُوۡبِ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا الضَّآلِّیۡنَ পাঠ করে তখন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 'এসব আমার বান্দার জন্য এবং সে যা কিছু চাইল তা সবই তার জন্য। (মুসলিম ১/২৯৬, নাসাঈ ৫ / ১১, ১২) কোন কোন হাদীসের বর্ণনায় শব্দগুলির মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

আলোচ্য হাদীস সম্পর্কিত আলোচনা

এখন এই হাদীসের উপকারিতা ও লাভালাভ লক্ষ্যণীয় বিষয়। প্রথমতঃ এই হাদীসের মধ্যে সালাতের সংযোজন রয়েছে এবং তার তাৎপর্য ও ভাবার্থ হচ্ছে কিরা'আত। যেমন কুরআনের মধ্যে অন্যান্য জায়গায় রয়েছেঃ

وَ لَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَ لَا تُخَافِتْ بِهَا وَ ابْتَغِ بَیْنَ ذٰلِكَ سَبِیْلًا
তোমরা সালাতে তোমাদের স্বর উঁচু করনা এবং অতিশয় ক্ষীণও করনা; এই দুই এর মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। (সূরা ইসরাহ, ১৭:১১০) এর তাফসীরে ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হতে প্রকাশ্যভাবে বর্ণিত আছে যে, এখানে 'সালাওয়াত' শব্দের অর্থ হল কিরা'আত বা কুরআন পঠন। (ফাতহুল বারী ৮/২৫৭) এভাবে উপরোক্ত হাদীসে কিরা'আতকে 'সালাত' বলা হয়েছে। এতে সালাতের মধ্যে কিরাআতের যে গুরুত্ব রয়েছে তা বিলক্ষণ জানা যাচ্ছে। আরও প্রকাশ থাকে যে, কিরাআত সালাতের একটি মস্তবড় স্তম্ভ। এ জন্যই এককভাবে ইবাদাতের নাম নিয়ে ওর একটি অংশ অর্থাৎ কিরা'আতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অপর পক্ষে এমনও হয়েছে যে, এককভাবে কিরা'আতের নাম নিয়ে তার অর্থ সালাত নেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলার কথাঃ

وَ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ اِنَّ قُرْاٰنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُوْدًا

কারণ ফাজরের কুরআন পাঠ স্বাক্ষী স্বরূপ। (সূরা ইসরাহ, ১৭ : ৭৮) এখানে কুরআনের ভাবার্থ হল সালাত। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসে রয়েছে যে, ফাজরের সালাতের সময় রাত্রি ও দিনের মালাইকা/ফেরেশতাগণ একত্রিত হন। (ফাতহুল বারী ৮/২৫১, মুসলিম ১/৪৩৯)

প্রতি রাক'আতে অবশ্যই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা জানা গেল যে, সালাতে কিরাআত পাঠ খুবই যরুরী এবং আলেমগণও এ বিষয়ে একমত। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে উল্লেখ আছে যে, সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা যরুরী এবং অপরিহার্য এবং তা পড়া ছাড়া সালাত আদায় হয়না। অন্যান্য সমস্ত ইমামের এটাই মত। এই হাদীসটি তাঁদের দলীল যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : 'যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, অথচ তাতে উম্মুল কুরআন পাঠ করলনা, ঐ সালাত অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ; পূর্ণ নয়'। (আহমাদ ২/২৫০ ) সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

'যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করেনা তার সালাত হয়না।' (ফাতহুল বারী ২/২৭৬, মুসলিম ১/২৯৫) সহীহ ইব্‌ন খুযাইমাহ্ ও সহীহ ইবন হিব্বানে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
'ঐ সালাত হয়না যার মধ্যে উম্মুল কুরআন পড়া না হয়।” (হাদীস নং ১/২৪৮ ও ৩/১৩৯) এ ছাড়া আরও বহু হাদীস রয়েছে যে, প্রতি রাক'আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।

ইসতি‘আযাহ বা আ'উযুবিল্লাহ প্রসঙ্গ

পবিত্র কুরআনে রয়েছেঃ

خُذِ الْعَفْوَ وَأَمَرَ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَهلِينَ وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَالشَّيْطَينِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ

তুমি বিনয় ও ক্ষমা পরায়ণতার নীতি গ্রহণ কর এবং লোকদেরকে সৎ কাজের নির্দেশ দাও, আর মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল। শাইতানের কু-মন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (সূরা আ'রাফ, ৭ : ১৯৯-২০০) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ

ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّعَةَ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ وَقُل رَّبِّأَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَتِ الشَّيَاطِينِ. وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن تَحْضُرُونِ

মন্দের মুকাবিলা কর উত্তম দ্বারা, তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত। আর বল : হে আমার রাব্ব! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি শাইতানের প্ররোচনা হতে। হে আমার রাব্ব! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট ওদের উপস্থিতি হতে। (সূরা মু'মিনূন, ২৩ : ৯৬-৯৮) অন্য এক জায়গায় ইরশাদ হচ্ছেঃ

ادفع بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِى بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَإِنْ حَمِيرٌ وَمَا يُلَقَتهَا إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَعْنَهَا إِلَّا ذُو حَظِّ عَظِيمٍ وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَنِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

মন্দকে প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা ধৈর্যশীল, এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা মহাভাগ্যবান । যদি শাইতানের কু-মন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহকে স্মরণ করবে; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম সাজদাহ, ৪১ : ৩৪-৩৬)
এ মর্মে এই তিনটিই আয়াত আছে এবং এই অর্থের অন্য কোন আয়াত নেই। আল্লাহ তা'আলা এই আয়াতসমূহের মাধ্যমে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, মানুষের শত্রুতার সবচেয়ে ভাল ঔষধ হল প্রতিদানে তাদের সঙ্গে সৎ ব্যবহার করা। এরূপ করলে তারা তখন শত্রুতা করা থেকেই বিরত থাকবেননা, বরং অকৃত্রিম বন্ধুতে পরিণত হবে। আর শাইতানদের শত্রুতা হতে নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ তাঁরই নিকট আশ্রয় চাইতে বলেন। কারণ সে মানুষের বিনাশ ও ধ্বংসের মধ্যে আনন্দ পায়। তার পুরাতন শত্রুতা হাওয়া ও আদমের (আঃ) সময় হতেই অব্যাহত রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেনঃ

يَنبَنِي ءَادَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَنُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ

'হে আদমসন্তান! শাইতান যেন তোমাদেরকে সেরূপ প্রলুব্ধ করতে না পারে যেরূপ তোমাদের মাতা-পিতাকে (প্রলুব্ধ করে) জান্নাত হতে বহিস্কার করেছিল। (সূরা আ'রাফ, ৭ : ২৭) অন্য স্থানে বলা হচ্ছেঃ

إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوا إِنَّمَا يَدْعُوا حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أصحاب الشعري

শাইতান তোমাদের শত্রু; সুতরাং তাকে শত্রু হিসাবে গ্রহণ কর। সে তো তার দলবলকে আহ্বান করে শুধু এ জন্য যে, তারা যেন জাহান্নামের সাথী হয়। (সূরা ফাতির, ৩৫ঃ ৬)

أفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلاً
তাহলে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে ও তার বংশধরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করছ? তারা তো তোমাদের শত্রু; সীমা লংঘনকারীদের জন্য রয়েছে কত নিকৃষ্ট বদলা। (সূরা কাহফ, ১৮ঃ ৫০) এতো সেই শাইতান যে আমাদের আদি পিতা আদমকে (আঃ) বলেছিলঃ 'আমি তোমার একান্ত শুভাকাংখী।' তাহলে চিন্তার বিষয় যে, আমাদের সঙ্গে তার চালচলন কি হতে পারে? আমাদের জন্যই তো সে শপথ করে বলেছিলঃ

فَبِعِزَّتِكَ لأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ

সে বলল : আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে নয়। (সূরা সাদ ৩৮ ঃ ৮২- ৮৩) এ জন্য মহান আল্লাহ বলেনঃ

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْهَانَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّحِيمِ إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانُ عَلَى الَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ إِنَّمَا سُلْطَبُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُم بِهِ مُشْرِكُونَ

যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শাইতান হতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবে। তার কোন আধিপত্য নেই তাদের উপর যারা ঈমান আনে ও তাদের রবের উপরই নির্ভর করে। তার আধিপত্য শুধু তাদেরই উপর যারা তাকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে এবং যারা (আল্লাহর সাথে) শরীক করে। (সূরা নাহল, ১৬ঃ ৯৮-১০০) ঈমানদারগণ ও প্রভুর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের উপর তার কোন ক্ষমতাই নেই। তার ক্ষমতা তো শুধু তাদের উপরই রয়েছে যারা তার সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে এবং আল্লাহ তা'আলার সঙ্গে শির্ক করে।

কুরআন তিলাওয়াত করার আগে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْءَانَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَنِ الرَّحِيمِ

যখন তুমি কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শাইতান হতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবে। (সূরা নাহল, ১৬ঃ ৯৮) তিনি আরও বলেনঃ

إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَوَةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ

যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হও তখন (সালাতের পূর্বে) তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলিকে ধুয়ে নাও। (সূরা মায়িদাহ, ৫ঃ ৬)

জামহুর উলামার প্রসিদ্ধ মাযহাব এই যে, কুরআন পাঠের পূর্বে আ'উযুবিল্লাহ' পাঠ করা উচিত, তাহলে কুমন্ত্রণা হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। সুতরাং ঐ বুযুর্গদের নিকট আয়াতের অর্থ হচ্ছে : 'যখন তুমি পড়বে' অর্থাৎ তুমি পড়ার ইচ্ছা করবে। যেমন নিম্নের আয়াতটিঃ

'যখন তুমি সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়াও' (তাহলে ওযূ করে নাও) এর অর্থ হল : 'যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়ানোর ইচ্ছা কর।' হাদীসগুলির ধারা অনুসারেও এই অর্থটিই সঠিক বলে মনে হয়। মুসনাদ আহমাদের হাদীসে আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন 'আল্লাহু আকবার' বলে সালাত আরম্ভ করতেন, অতঃপর

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالَى جَدُّكَ وَ لَا إِلَهَ غَيْرُكَ.
তিনবার পড়ে ‘لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ’ পড়তেন। তারপর পড়তেনঃ

أَعُوْذُ بالله السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّحِيْمِ مِنْ هَمْزِهِ وَ

সুনান আরবায়ও এ হাদীসটি রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন যে, এই অধ্যায়ে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদীস এটাই। (আহমাদ ৩/৬৯, আবূ দাউদ ১/৪৯০, তিরমিযী ২/৪৭, নাসাঈ ২/১৩২) ইমাম ইব্‌ন মাজাহ (রহঃ) স্বীয় সুনানে এই অর্থ বর্ণনা করেছেন। (ইব্‌ন মাজাহ ১/২৬৫) আবূ দাউদে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে প্রবেশ করেই তিনবার 'আল্লাহু আকবার কাবীরা' তিনবার 'আলহামদুলিল্লাহ কাসীরা' এবং তিনবার 'সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসীলা' পাঠ করতেন। অতঃপর পড়তেন- “আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উজুবিকা মিন শাইতোডনর রাজীম মিন হামজিহি ওয়া নাফজিহি ওয়া নাফশিহি’ (আবূ দাউদ ১/৪৮৬) সুনান ইব্‌ন মাজাহয়ও অন্য সনদে এই হাদীসটি সংক্ষিপ্তভাবে এসেছে। (হাদীস নং ১/২৬৬)

রাগান্বিত হলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে

মুসনাদ আবি ইয়ালায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে দু'টি লোকের ঝগড়া বেধে যায়। ক্রোধে একজনের নাসারন্ধ্র ফুলে উঠে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : 'লোকটি যদি أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ পড়ে নেয় তাহলে তার ক্রোধ এখনই ঠাণ্ডা ও স্তিমিত হয়ে যাবে।' ইমাম নাসাঈ (রহঃ) স্বীয় কিতাব------- এর মধ্যেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, সুলাইমান ইব্‌ন সূরার বলেছেনঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আমরা উপবিষ্ট থাকা অবস্থায় দুই লোক তর্ক করছিল। তাদের একজন অপরজনকে গালাগালি করছিল এবং রাগে তার মুখমন্ডল রক্তিমাভ হয়েছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন : আমি এমন একটি বাক্য জানি, যদি সে তা এখন উচ্চারণ করে তাহলে তার রাগান্বিত অবস্থা চলে যাবে। তা হল আ'উযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বলা। তখন ঐ লোককে অন্যরা বললেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন তা কি তুমি শুনতে পাওনি? লোকটি বলল : আমি পাগল নই। (ফাতহুল বারী ৬/৩৮৮, মুসলিম ৪/২০১৫, আবূ দাউদ ৫/১৪০, নাসাঈ ১০২৩৩)
সহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ এবং সুনান নাসাঈতেও বিভিন্ন সনদে এবং বিভিন্ন শব্দে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে আরও হাদীস রয়েছে। এ সবের বর্ণনার জন্য যিক্, ওযীফা এবং আমলের বহু কিতাব রয়েছে।

ইসতি‘আযাহ কি যরুরী

জামহুর উলামার মতে ‘ইসতি'আযাহ্' বা 'আউযুবিল্লাহ' পড়া মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। সুতরাং তা না পড়লে পাপ হবেনা। 'আতা ইবন আবী রিবাহের (রহঃ) অভিমত এই যে, কুরআন পাঠের সময় আ'উযু পড়া ওয়াজিব, তা সালাতের মধ্যেই হোক বা সালাতের বাইরেই হোক। ইমাম রাযী (রহঃ) এই কথাটি নকল করেছেন। 'আতার (রহঃ) কথার দলীল প্রমাণ হল আয়াতের প্রকাশ্য শব্দগুলি। কেননা এতে ফাসতা’ইজ শব্দটি 'আমর' বা নির্দেশ সূচক ক্রিয়াপদ। ঠিক তদ্রূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সদা সর্বদা এর উপর আমলও তা অবশ্য করণীয় হওয়ার দলীল। এর দ্বারা শাইতানের দুষ্টামি ও দুস্কৃতি দূর হয় এবং তা দূর করাও এক রূপ ওয়াজিব। আর যা দ্বারা ওয়াজিব পূর্ণ হয় সেটাও ওয়াজিব হয়ে দাঁড়ায়।






************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • নামহীন
    নামহীন ২৬ জুলাই, ২০২৩ এ ৩:০৭ PM

    তাফসির পড়তে এসে বাজে বাজে এড আসে

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url