//]]>

Win a Prize

Mohammadia Foundation https://www.mohammadiafoundationbd.com/2022/12/%20ibn-Kathir.html

ইমাম ইবন কাসীর (রহঃ)-এর জীবনী




ইমাম ইবন কাসীরের (রহঃ) জীবনী


ইতিহাসের পৃষ্ঠায় যে সমস্ত তাফসীর শাস্ত্রজ্ঞ, মুহাদ্দিস, ফাকীহ, ধর্মীয় জ্ঞান, তত্ত্ব ও শাস্ত্রালোচনায় বিপুল পারদর্শিতা ও সর্বতোমুখী প্রতিভার পরিচয় দিয়ে এই মর-জগতের বুকে অমরত্ব লাভ করেছেন এবং যেসব মনীষী পবিত্র কুরআন, হাদীস তথা শাশ্বত সুন্নাহ্র বিজয় নিকেতন সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছেন, তন্মধ্যে হাফিয ইমাদুদ্দীন ইসমাঈল ইবন কাসীরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
তাঁর প্রকৃত নাম ইসমাঈল, আবুল ফিদা তাঁর কুনিয়াত বা উপনাম এবং ইমাদুদ্দীন (ধর্মের স্তম্ভ) তাঁর উপাধি। সুতরাং তাঁর শাজরা-ই-নাসাব' বা কুলজীনামাসহ পূরা নাম ও বংশ পরিচয় হচ্ছে : আবুল ফিদা ইমাদুদ্দীন ইসমাঈল ইব্‌ন উমার ইবন কাসীর ইবন যার আল-কারশী, আল-বাসরী, আদ্‌ দিমাশকী ।

কিন্তু সাধারণ্যে তিনি ইব্‌ন কাসীর নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ। বস্তুতঃ 'আল- বাসরী' নামক তাঁর এই 'নিসবাত'টি হচ্ছে জন্মস্থান বাচক উপাধি এবং 'আদ্ দিমাশকী' নামক তাঁর এই 'নিসবাত'টি হচ্ছে তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা বা তা'লীম ও তারবিয়াত বাচক উপাধি।

ইবন কাসীরের জন্ম ও শিক্ষা-দীক্ষা

ইমাম ইবন কাসীর (রহঃ) সিরীয়া প্রদেশের প্রসিদ্ধ শহর বাসরার অধীন মাজদাল নামক মহল্লায় ৭০১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ইবন কাসীরের জন্মের সময়ে তাঁর পিতা সেই অঞ্চলের খতীব পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চার বছর বয়সে শিশু ইবন কাসীরের স্নেহময় পিতা শিহাবুদ্দীন উমার ৭০৫ হিজরী মুতাবিক ১৩০৩ খৃষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর জ্যেষ্ঠ সহোদর শাইখ আবদুল ওয়াহাব তাঁর প্রতিপালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

ইবন কাসীরের (রহঃ) শিক্ষকবৃন্দ

তিনি জ্যেষ্ঠ ভাইয়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করে ফিকাহ শাস্ত্রের অধ্যয়ন শুরু করেন। অতঃপর শাইখ বুরহানুদ্দীন ইবরাহীম ইব্‌ন আবদুর রাহমান ফাযারী (মৃত্যু ৭২৯ হিজরী/১৩২৮ খৃষ্টাব্দ) এবং শাইখ কামালুদ্দীন ইব্‌ন কাযী শুহবার কাছে ফিকাহ শাস্ত্রের পাঠ সমাপ্ত করেন।
মুহাদ্দিস হাজ্জার ছাড়া তাঁর সমসাময়িক যেসব মুহাদ্দিসের কাছ থেকে ইমাম ইবন কাসীর একাগ্র চিত্তে হাদীস শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে নিম্নোক্ত মনীষীদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্যঃ

১) বাহাউদ্দীন ইব্‌ন কাসিম ইবন মুযাফ্ফর ইবন আসাকির (মৃত্যু ৭২৩ হিজরী/১৩২৩ খৃষ্টাব্দ)
২) শাইখুয্ যাহিরিয়া আফীফুদ্দীন ইসহাক ইব্‌ন ইয়াহিয়া আল আমিদী (মৃত্যু ৭২৫ হিজরী/১৩২৪ খৃষ্টাব্দ)
৩) ঈসা ইবনুল মুইম ।
৪) মুহাম্মাদ ইবন যারাদ।
৫) বদরুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম ইব্‌ন সুয়াইদী (মৃত্যু ৭১১ হিজরী/১৩১১ খৃষ্টাব্দ)
৬) শাইখুল ইসলাম তাকিউদ্দিন আহমাদ ইব্‌ন তাইমীয়া আল হাররানী (মৃত্যু ৭২৮ হিজরী/ ১৩২৭ খৃষ্টাব্দ)।
৭) ইর রাযী ।
৮) আহমাদ ইব্‌ন আবী তালিব (ইবনুশ শাহনাহ) (মৃত্যু ৭৩০ হিজরী) ৯) ইবনুল হাযযার (মৃত্যু ৭৩০ হিজরী)
১০) আলী ইবন উমার আস সুওয়াইনী
১১) আবূ মূসা আল কারাফাই
১২) আবুল ফাত্হ আল দাব্বুসী
১৩) ইবনুর রাযী ।
১৪) হাফিয জামালুদ্দিন ইউসুফ আল মযযী শাফিঈ (মৃত্যু ৭৪২ হিজরী/১৩৪১ খৃষ্টাব্দ)।
১৫) আল্লামা হাফিয শামসুদ্দীন যাহাবী (মৃত্যু ৭৪৮ হিজরী/১৩২৭ খৃষ্টাব্দ । 
১৬) আল্লামা ইমাদুদ্দীন মুহাম্মাদ ইব্‌ন আশ-শীরাযী (মৃত্যু ৭৪৯ হিজরী/১৩৪৮ খৃষ্টাব্দ) ।
হাফিয ইবন কাসীর (রহঃ) উপরোক্ত মুহাদ্দিসদের মধ্যে যাঁর কাছ থেকে সব চেয়ে বেশি শিক্ষা-দীক্ষার সুযোগ লাভ করে উপকৃত হয়েছিলেন তন্মধ্যে 'তাহযীবুল কামাল' প্রণেতা সিরীয়া দেশীয় মুহাদ্দিস আল্লামা হাফিয জামালুদ্দিন ইউসুফ ইব্‌ন আবদুর রাহমান মিযী শাফিঈ (মৃত্যু ৭৪২ হিজরী/১৩৪১ খৃষ্টাব্দ) বিশেষভাবে উল্লেখের দাবীদার।

ইমাম ইবন কাসীর সম্পর্কে সমসাময়িক মনীষীদের মতামত

হাফিয শামসুদ্দীন যাআবী (মৃত্যু ৭৪৮ হিজরী/১৩৪৭ খৃষ্টাব্দ) তাঁর 'আল- মুজামুল মুখতাস' এবং 'তাযকিরাতুল হুফ্ফায' নামক অনবদ্য গ্রন্থদ্বয়ে বলেন ঃ

“ইবন কাসীর একজন খ্যাতনামা মুফ্‌তী (ফাতওয়া প্রদানে বিশেষজ্ঞ), বিজ্ঞ মুহাদ্দিস, আইন অভিজ্ঞ ফিকাহ শাস্ত্রবিদ, বিচক্ষণ তাফসীরকার এবং রিজাল শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী। হাদীসের মতন (মূল অংশ) সম্পর্কে তাঁর অভিনিবেশ ছিল উল্লেখযোগ্য ।

হাফিয হুসাইনী এবং আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে ইমাম ইবন কাসীর সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন ঃ 'তিনি হাদীসের বিশিষ্ট অধ্যাপক, হাদীস শাস্ত্রের হাফিয, প্রখ্যাত আলিম এবং ইমাম, বক্তৃতায় সুনিপুণ এবং বহু গুণ ও উৎকর্ষের অধিকারী।'
আল্লামা শাইখ ইব্‌ন ইমাদ হাম্বালী (মৃত্যু ১০৮৯ হিজরী/১৬৭৮ খৃষ্টাব্দ) ইমাম ইবন কাসীরকে (রহঃ) 'আল হাফিযুল কাবীর' বা মহান হাফিয অর্থাৎ কুরআনের শ্রেষ্ঠ শ্রুতিধর বলে আখ্যায়িত করেন।
অনুরূপভাবে তাঁর খ্যাতনামা প্রিয় শিষ্য আল্লামা হাফিয ইব্‌ন হচ্ছি (মৃত্যু ৮১৬ হিজরী/১৪১৩ খৃষ্টাব্দ) স্বীয় শ্রদ্ধাস্পদ উস্তাদ (ইবন কাসীর) সম্পর্কে অভিমত জানাতে গিয়ে বলেনঃ

‘আমরা যেসব হাদীস শাস্ত্রজ্ঞকে পেয়েছি তন্মধ্যে তিনি (ইবন কাসীর) হাদীসের মতন বা মূল অংশ সম্পর্কে শ্রেষ্ঠ শ্রুতিধর এবং দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে, হাদীস রিজাল শাস্ত্র জ্ঞানে ও বিশুদ্ধ-দুর্বল হাদীস নির্ধারণে ছিলেন সবার চেয়ে অভিজ্ঞ। তাঁর সমসাময়িক উলামা ও উস্তাদবৃন্দ সবাই তাঁর এই মান মর্যাদার কথা এক বাক্যে স্বীকার করেন। তাঁর কাছে আমি বহুবার যাতায়াত করেছি, তবু এ কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, যতবারই আমি তাঁর খিদমাতে গিয়ে উপনীত হয়েছি, প্রতিবারই কোন না কোন বিষয়ে তাঁর কাছে জ্ঞানলাভে ধন্য ও কৃতার্থ হয়েছি। আল্লামা হাফিয ইব্‌ন নাসিরুদ্দীন আদ্-দিমাশকী (মৃত্যু ৮৪২ হিজরী/১৪৩৮ খৃষ্টাব্দ) তাঁর (ইবন কাসীরের) প্রসঙ্গে বলেনঃ

আল্লামা হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবন কাসীর ছিলেন মুহাদ্দিসগণের নির্ভর, ঐতিহাসিকদের অবলম্বন এবং তাফসীর বিদ্যা বিশারদদের উন্নত ধ্বজা'। হাফিয ইবন হাজার আসকালানী (৮৫২ হিজরী) তাঁর 'আদুরারুল কামীনা’ গ্রন্থে বলেনঃ

“হাদীসের মতন বা মৌল অংশ এবং রিজাল বা চরিত-অভিধান শাস্ত্রের পঠন-পাঠন ও অধ্যয়নে তিনি সব সময় নিমগ্ন থাকতেন। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর, আর তিনি রসিকতা-প্রিয় ছিলেন। জীবদ্দশায় তাঁর গ্রন্থরাজি চারদিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি যেমন ছিলেন লিখা-পড়ায় অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং জ্ঞান অন্বেষণে ছিলেন অত্যন্ত তৎপর, তেমনি তার ছিল ক্ষুরধার লেখনী। ফিক্হ, তাফসীর এবং হাদীস শাস্ত্রে তার ছিল পূর্ণ দখল। পড়ালেখার সাথে সাথে তিনি বই পুস্ত ক লিখা ও দীনের প্রচার কাজে নিজকে ব্যস্ত রেখেছিলেন।

ঐতিহাসিকগণও ইমাম ইবন কাসীরের (রহঃ) সর্বতোমুখী প্রতিভা, স্মৃতিশক্তি এবং অগাধ জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইব্‌ন ইমাদ (মৃত্যু ১০৯৮ হিজরী/ ১৬৭৮ খৃষ্টাব্দ) বলেনঃ

তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ও ধীশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। কোন বিষয়কে একবার মুখস্থ করে নিলে তাঁর বিস্মরণ খুব কমই হত। আর তিনি মেধাবীও কম ছিলেননা। আরাবী সাহিত্যও তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং মধ্যম পর্যায়ের কবিতাও তিনি রচনা করতেন'।

আল্লামা ইবন তাইমিয়ার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক

ইবন কাসীরের স্বনাম খ্যাত শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আল্লামা হাফিয ইবন তাইমিয়ার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ট নিবিঢ় সম্বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষা ও জ্ঞানার্জন ব্যাপারে এই শিষ্যের উপর উস্তাদের প্রভাববিস্তার করেছিল অতি প্রগাঢ়ভাবে। ইবন কাসীর অধিকাংশ মায়ালায় হাফিয ইবন তাইমিয়ার অনুসারী ছিলেন। ইব্‌ন কাযী শাহাবা স্বীয় 'তাবাকাত' গ্রন্থে বলেনঃ
আল্লামা ইমাম ইব্‌ন তাইমিয়ার সঙ্গে তাঁর নিবিঢ় সম্পর্ক ছিল। শুধু তাই নয়, তিনি ইব্‌ন তাইমিয়ার মত ও পথকে পূর্ণ সমর্থন যুগিয়ে বিতর্ক করতেন এবং তাঁর বহু মতের অনুসরণ করতেন। তিন তালাকের মায়ালাতেও তিনি ইব্‌ন তাইমিয়ার মতানুযায়ী ফতওয়া দিতেন। এ কারণে তাঁকে এক ভীষণ অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় এবং অন্তহীন নির্যাতন যাতনা ভোগ করতে হয়। 

ইমাম ইবন কাসীর (রহঃ) রচিত গ্রন্থমালা

১। আল্লামা হাফিয ইবন কাসীর তাঁর অমর স্মৃতির নিদর্শন হিসাবে এই মরজগতের বুকে যেসব মহামূল্য ধন-সম্পদ ও বিষয় বৈভব ছেড়ে গেছেন, তন্মধ্যে তাঁর লিখিত تَفْسِيرُ الْقُرْآنِ الْعَظِالْعَظِيْمِ 'তাফসীরুল কুরআনিল 'আযীম' যা তাফসীর ইবন কাসীর' নামেই বেশি পরিচিত। পবিত্র কুরআনের এই সু- প্রসিদ্ধ ভাষ্য গ্রন্থ সম্পর্কে আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) বলেন ‘এ ধরনের অন্য কোন তাফসীর লিপিবদ্ধই হয়নি’। কায়রোর প্রখ্যাত আলেম যাহিদ ইব্‌ন হাসান আল-কাউসারী আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতীর বরাতে বলেন هُوَ مِنْ أَفْيَدِ كُتُب ا يْرِ بِالرِّوَايَةِ "রিওয়ায়েতের বিশিষ্ট তাফসীরসমূহের মধ্যে এটি হচ্ছে সবচেয়ে কল্যাণপ্রদ ও উপকারী'।
২। التَكْمِيْلُ فِي مَعْرِفَةِ الثَّقَاتِ وَالضُّعَفَاءِ وَالْمَجَاهِيْلِ আততাকমিলাহ্ ফী মা'রিফাতিস সিকাত ওয়াআ'ফায়ে ওয়াল মাজাহীল'। হাজী খলীফা মোল্লা কাতিব চাপী তাঁর অমর গ্রন্থ 'কাশফুয যুনূনে' এই গ্রন্থখানির ‘আত্তামিলাহ্ ফী আসমাইস সিকাত ওয়াআ'ফা বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু স্বয়ং গ্রন্থকার তাঁর 'আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ' গ্রন্থে এবং ‘ইখতিসারু উলূমিল হাদীস' নামক অনবদ্য পুস্তকে উপরোক্ত নামেই উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থটির নাম থেকেই তার আলোচ্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ও সুস্পষ্ট ধারণা জন্মে। এটি রিজাল শাস্ত্রের (চরিত-অভিধান শাস্ত্র বা রাবীদের জীবনী সংগ্রহ বিজ্ঞান) একখানি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ। আল্লামা 'হুসাইনী' দিমাশকীর আলোচনা মতে এই আলোচ্য গ্রন্থ পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত হয়েছে। লেখক এতে হাফিয জামাল ইউসুফ ইবন আবদুর রাহমান মিযযীর 'তাহযীবুল কামাল' এবং হাফিয শামসুদ্দীন যাহাবীর 'মীযানুল ই'তিদাল' নামক চমৎকার গ্রন্থদ্বয়কে একত্রিত করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজের পক্ষ থেকে বহু মূল্যবান তথ্য সংযোজন করে বেশ পরিবর্ধিত আকারে প্রকাশ করেন। গ্রন্থকার স্বয়ং অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেনঃ

هُوَ الْفَعُ شَيْئًا لِلْفَقِيْهِ الْبَارِعِ وَكَذَلِكَ لِلْمُحَدِّث
কে শুরু করে একেবারে গ্রন্থকারের সময়কাল পর্যন্ত বিস্তৃত ঐতিহাসিক তত্ত্ব ও তথ্যাবলী সুন্দর ও স্বার্থকভাবে বর্ণিত হয়েছে। আর সেই সঙ্গে বিধৃত হয়েছে এই পৃথিবীর লয়প্রাপ্তি তথা রোয কিয়ামাতের আলামতসমূহ এবং আখিরাত বা পরজগতের অবস্থার কথাও ব্যাপক ও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। হাজী খলীফা তাঁর সুপ্রসিদ্ধ 'কাশফুয্ যুনূন' গ্রন্থে বলেনঃ

আল্লামা হাফিয ইবন কাসীর তাঁর অবধারিত মৃত্যুর দুই বছর পূর্ব পর্যন্ত সংঘটিত সমস্ত ঘটনাবলীকে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে এতে সীরাতুন্নাবী অংশকে বেশ চমৎকার ও সার্থকভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে।

৪। 'আল-হাদয়ু ওয়াস সুনান ফী আহাদিসিল মাসানীদে ওয়াস সুনান'। এই গ্রন্থখানি 'জামিউল মাসানীদ' নামেও প্রসিদ্ধ। এতে 'মুসনাদ আহমাদ ইবন হাম্বাল', 'মুসনাদ বায্যার, 'মুসনাদ আবূ ইয়ালা', 'মুসনাদ ইবন আবী শাইবা' এবং সাহিহায়িন এবং সুনান চতুষ্টয়ের রিওয়ায়াতগুলিকে একত্র করে বিভিন্ন অধ্যায় ও পরিচ্ছেদে সুন্দরভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে।
৫।  তাবাকাতুশ শাফিঈয়াহ। এই গ্রন্থে শাফিঈ ফকীহদের বিস্তারিত বিবরণ প্রদত্ত হয়েছে।
৬। شَرْحُ صَحِيح الْبُخَارِى انا ‘শারহু সাহীহিল বুখারী’। গ্রন্থকার ইন কাসীর বুখারীর এই ভাষ্যটি লিখতে শুরু করেছিলেন এবং এ কাজে বেশ কিছুদূর তিনি অগ্রসর হয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তা' সম্পূর্ণ করতে পারেননি।

৭। 'আল-আহকামুল কাবীর'। এ গ্রন্থখানিতে তিনি শুধুমাত্র আহকাম বা অনুশাসন সম্পর্কিত হাদীসগুলিকে বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু 'কিতাবুল হাজ্জ' পর্যন্ত পৌঁছে আর বেশীদূর অগ্রসর হতে পারেননি।

৮। اخْتِصَارُ عُلُوْمِ الْحَدِيْثِ 'ইখতিসারু উলূমিল হাদীস' আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খাঁ ভূপালী তাঁর 'মিনহাল উসূল ফী ইসতিলাহি আহাদীসির্ রাসূল' গ্রন্থে এর নাম الْبَاعِثُ الْحَدِيثُ عَلَى مَعْرِفَةِ عُلُوْمِ الْحَدِيْثِ আল বাইসুল হাদীস 'আলা মা'রিফাতে উলূমিল হাদীস' বলে উল্লেখ করেছেন। এটি আল্লামা ইব্‌নস সালাহ (মৃত্যু ৬৪৩ হিজরী) লিখিত সুপ্রসিদ্ধ উসূলুল হাদীসের কিতাব ‘উলূমিল হাসীস' ওরফে 'মুকাদ্দিমা ইবনুস সালাহ' গ্রন্থের সংক্ষিপ্তসার। গ্রন্থকার ইবন কাসীর এর স্থানে স্থানে বহু সুন্দর জ্ঞাতব্য বিষয় বিশদভাবে সংযোজন করেছেন ।

৯। مُسْنَدُ الشَّيْخَيْن  'মুসনাদুস শাইখাইন' । এতে আবূ বাকর (রাঃ) এবং ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহ সংগৃহীত হয়েছে। গ্রন্থকার ইবন কাসীর (রহঃ) তাঁর 'ইখতিসারু 'উলূমিল হাদীস' গ্রন্থে আর একখানি 'মুসনাদে উমরা নামক গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটা একটা স্বতন্ত্র গ্রন্থ, না কি উপরিউক্ত গ্রন্থেরই দ্বিতীয় খণ্ড তা সঠিকভাবে জানা যায়না ।
১০। السِّيرَةُ النَّبُويَّةُ 'আসসীরাতুন নাবভীয়াহ'। এ একখানি বৃহদাকার উৎকৃষ্ট সীরাত গ্রন্থ ।

১১। تخريج أحادِيثِ أَدِلَّةِ التَّنْبِيْةِ  'তাখরীজু আহাদীসি আদিল্লাত তামবীহ'।
১২। مُحْتَصَرُ كِتَابِ الْمَدْخَلَ لِلاِمَامِ الْبَيْهَقِى 'মুখতাসার কিতাবুল মাদখাল লিল ইমাম বাইহাকী'। এই গ্রন্থের নাম গ্রন্থকার স্বয়ং ‘ইখতিসারু ‘উলূমিল হাদীস' এর ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন। এটি ইমাম আহমাদ ইব্‌ন হুসাইন আল বাইহাকী (৪৫৮ হিজরী) কৃত 'কিতাবুল মাদখালের' সংক্ষিপ্ত সার ।

১৩। رسَالَةُ الاجتهاد في طَلَب الجهاد اول 'রিসালাতুল ইজতিহাদ ফী তালাবিল জিহাদ'। খৃষ্টানরা যখন 'আয়াস' দূর্গ অবরোধ করে সেই সময়ে তিনি এই পুস্তিকাখানি আমীর মনজাকের উদ্দেশে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এটি মিসর থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে।
মোট কথা, তার লিখিত পবিত্র কুরআনের তাফসীর, হাদীসে রাসূল (সঃ), সীরাতুন্নবী (সঃ), ইতিহাস, ফিক্হ শাস্ত্র ইত্যাদি সম্বন্ধীয় গ্রন্থাবলী আজও বেশ জনপ্রিয়, সবার কাছে বিশেষ সমাদৃত ও দলমত নির্বিশেষে গ্রহণীয়। প্রায় সকল যুগের ঐতিহাসিকবৃন্দ ও তাফসীরকারগণ তাঁর ইতিহাস ও তাফসীর সম্বন্ধীয় এবং অন্যান্য গ্রন্থাবলীর প্রভূত প্রশংসা করেন ।

ইবন কাসীরের মৃত্যু

অবধারিত মৃত্যুর আগে এই নশ্বর জীবনের শেষভাগে হাফিয ইবন কাসীর দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। অতঃপর ১৩৭২ খৃষ্টাব্দ মুতাবিক ৭৭৪ হিজরীর ২৬ শা'বান রোজ বৃহস্পতিবার এই মহামনীষী অস্থায়ী দুনিয়ার বুক থেকে বিদায় নিয়ে আখিরাতের সেই অনন্তলোকে যাত্রা করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।





**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

CLICK n WIN

নটিফিকেশন ও নোটিশ এরিয়া