দোযখের বর্ণনা এবং দোযখের ভয়াবহ শাস্তির বয়ান



ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ আল-গাযযালী (রহঃ) ছিলেন একজন যুগস্রেষ্ট সাধক ও আলেম। ইসলামের খেদমতে তাঁর বয়ান এবং তাঁর লেখা কিতাবগুলোর মাঝে এমন একটি যাদুকরী প্রভাব লক্ষ্য করা যায় যা অন্য কারো লেখায় বা বয়ানে এতটা প্রভাব সৃষ্টি করে না। তাঁর লেখা কিতাবগুলো পড়ে অতি সহজেই প্রতিটি পাঠকের হৃদয় বিগলিত হয়ে উঠে। “দোযখ ও দোযখের ভয়াবহ শাস্তির বয়ান” শীর্ষক এই প্রবন্ধখানা ইমাম গাযযালীর লেখা “মুকাশাফাতুল কুলূব” বা “আত্মার আলোকমণি” কিতাবের অনুস্মরণে লেখা হয়েছে।



দোযখ ও দোযখের ভয়াবহ শাস্তির বয়ান

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন :

لَهَا سَبۡعَۃُ اَبۡوَابٍ ؕ لِکُلِّ بَابٍ مِّنۡهُمۡ جُزۡءٌ مَّقۡسُوۡمٌ

"যার (জাহান্নামের) সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেকটি দরজার (মধ্য দিয়ে যাওয়ার) জন্য তাদের পৃথক পৃথক ভাগ রয়েছে।" (হিজ্বর : ৪৪)

আয়াতে উল্লেখিত 'جُزۡ' শব্দ দ্বারা বিভিন্ন গ্রুপ ও দল বুঝানো হয়েছে। এক উক্তি অনুযায়ী 'আওয়াব' দ্বারা স্তর অর্থাৎ উপরের ও নীচের স্তরসমূহ বুঝানো হয়েছে।

ইবনে জুরাইজ (রহঃ) বলেন, দোযখের সাতটি (দারক) অধঃগামী স্তর রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- জাহান্নাম, লাযা, হুতামাহ্, সায়ীর, সাকার, জাহীম ও হাবিয়াহ্। তন্মধ্যে সর্বপ্রথম স্তরটি তওহীদে বিশ্বাসী গুনাহগারদের জন্য, দ্বিতীয়টি ইহুদীদের জন্য, তৃতীয়টি নাসারাদের জন্য, চতুর্থটি সাবেয়ীন সম্প্রদায়ের জন্য, পঞ্চমটি মজুসী অর্থাৎ অগ্নিপূজকদের জন্য, ষষ্ঠটি মুশরিকদের জন্য এবং সপ্তমটি মুনাফিকদের জন্য। এগুলোর মধ্যে 'জাহান্নাম' হলো সর্বোচ্চ স্তর। অতঃপর অন্যান্য স্তরের অবস্থান। বিষয়টির ব্যাখ্যা এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা ইবলীসের অনুসারী সাত শ্রেণীর লোকদের শাস্তি প্রদান করবেন। এক এক শ্রেণীর লোককে দোযখের এক এক স্তরে নিক্ষেপ করবেন। এর কারণ হচ্ছে, কু ও আল্লাহর নাফরমানীরও বিভিন্ন স্তর রয়েছে এবং তা দোযখের স্তরের মতই বিভিন্ন। এক অভিমত অনুযায়ী এসব স্তর সাত অঙ্গ অর্থাৎ চক্ষু, কান, জিহ্বা, পেট, লজ্জাস্থান, হাত, পা অনুযায়ী রাখা হয়েছে। এসব অঙ্গের মাধ্যমেই যেহেতু অন্যায়-অপরাধ করা হয়, তাই দোযখের প্রবেশদ্বারও সাতটি নির্ণিত হয়েছে।

হযরত আলী (রাযিঃ) বলেন, দোযখের উপরে-নীচে সাতটি স্তর রয়েছে, প্রথম স্তরটি পূর্ণ হওয়ার পর দ্বিতীয়টি পূর্ণ করা হবে, অতঃপর তৃতীয়টি- এভাবে সবগুলো স্তরই পাপী-অপরাধীদের দ্বারা পূর্ণ করা হবে।

তারীখে বুখারী ও সুনানে তিরমিযী কিতাবে হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “দোযখের সাতটি দরজা রয়েছে, তন্মধ্যে একটি দরজা ঐ সব লোকের জন্য যারা আমার উম্মতের উপর তলোয়ার উঠিয়েছে।”


‘ত্ববরানী আওসাত' কিতাবে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এমন সময় উপস্থিত হয়েছেন, যে সময় তিনি কখনও উপস্থিত হোন না। নবীজী তৎপর হয়ে অগ্রসর হলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে জিবরাঈল! আপনার কি হয়েছে; এমন বিবর্ণ দেখা যাচ্ছে কেন আপনাকে? তিনি বললেন, আল্লাহ তা'আলা দোযখাগ্নি উত্তপ্ত করার হুকুম দিয়েছেন; তারপরেই এসে আপনার কাছে হাজির হলাম। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে কিছু বিবরণ শোনান। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ্ তা'আলা দোযখকে উত্তপ্ত হওয়ার জন্য হুকুম করলেন। অতঃপর সে এক হাজার বছর পর্যন্ত উত্তপ্ত হতে থাকে। ফলে দোযখের আগুন শ্বেত বর্ণ ধারণ করে। অতঃপর আবার হুকুম করেন। এবারও এক হাজার বছর জ্বলতে থাকে, ফলে দোযখের আগুন লাল বর্ণে রূপান্তরিত হয়। আল্লাহ্ তা'আলা পুনরায় দোযখকে আরও উত্তপ্ত হওয়ার জন্য হুকুম করেন। অতএব দোযখের আগুন আরও এক হাজার বছর জ্বলতে থাকে। পরিশেষে এ আগুন কৃষ্ণ বর্ণ ধারণ করে। বর্তমানে সেই আগুনের অবস্থা এই যে, এর স্ফুলিঙ্গের কোন শেষ নাই এবং এর লেলিহানেরও কোন অবধি নাই। ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ঐ পবিত্র সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য নবীরূপে পাঠিয়েছেন- একটি সুইয়ের পরিমাণ অংশও যদি দোযখের ফুটা হয়ে যায়, তাহলে জগতের সমস্ত মানুষ এর আতংকে মরে যাবে। ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য নবীরূপে পাঠিয়েছেন, দোযখের প্রহরীদের মধ্য হতে যদি একজনও দুনিয়াবাসীর সামনে প্রকাশ পায়, তবে সমগ্র দুনিয়াবাসী তার ভয়ে মৃত্যুবরণ করবে। ঐ পবিত্র সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য নবীরূপে পাঠিয়েছেন- দোযখের শিকলসমূহের মধ্য হতে এমন একটি শিকল যার উল্লেখ পবিত্র কুরআনে করা হয়েছে, যদি দুনিয়ার পাহাড়-পর্বতের উপর রাখা হয়, তবে পাহাড়সমূহ বিগলিত হয়ে যাবে এবং শিকলটি যমীনের সর্বশেষ অংশে গিয়ে থেমে যাবে। হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে জিব্রাঈল, ক্ষান্ত হও, আর বলো না; মনে হচ্ছে যেন আমার অন্তর ফেটে যাবে আর আমি এখনই মৃত্যুবরণ করবো। এ কথা বলে নবীজী হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-এর প্রতি তাকিয়ে দেখলেন- তিনি কাদছেন। নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহ্ তা'আলার নিকট তো আপনার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। জিব্রাঈল (আঃ) আরজ করলেন, আমি কেন কাদবো না, আমার তো আরও বেশী পরিমাণে কাদা উচিত। কেননা, আল্লাহর কাছে যদি আমার বর্তমান অবস্থার স্থলে অন্য কোন অবস্থা হয়ে থাকে, তবে আমার কি উপায় হবে। আমি জানিনা, ইবলীসের উপর যেভাবে বিপদ এসেছে, সেরূপ আমার উপরও এসে পতিত না হয়, অথচ সেও ফেরেশতা ছিল। জানিনা, হারুত ও মারুতের উপর যেভাবে আপদ এসেছে, আমার উপরও সেরূপ এসে না পড়ে।

বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাদতে লাগলেন, হযরত জিবরাঈল (আঃ)-ও কাঁদলেন। এভাবে উভয়ই কাদতে থাকলেন। এমন সময় গায়েব থেকে আওয়াজ আসলো, হে জিব্রাঈল, হে মুহাম্মদ! আল্লাহ তা'আলা আপনাদের উভয়কে তার নাফরমানী ও অবাধ্যতা থেকে পবিত্র ও নিষ্পাপ করে দিয়েছেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঊর্ধ্বজগতে চলে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহ থেকে বাইরে তশরীফ আনলেন। এমন সময় তিনি দেখলেন কয়েকজন আনসারী সাহাবী ক্রীড়া-কৌতুকে লিপ্ত রয়েছেন। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে নবীজী বললেন, তোমরা হাসি-ঠাট্টা ও ক্রীড়া-কৌতুকে মগ্ন রয়েছ, অথচ তোমাদের মাথার উপর রয়েছে জাহান্নাম, আমি যা জেনেছি তোমরা যদি তা জানতে, তবে খুবই কম হাসতে এবং অতি অধিক মাত্রায় ক্রন্দন করতে, খাওয়া-দাওয়া তোমাদের কাছে ভাল লাগতো না এবং নির্জন ও উজাড় জঙ্গলে আল্লাহর তালাশে তোমরা বের হয়ে যেতে। এমন সময় অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসলো, হে মুহাম্মদ! আমার বান্দাদেরকে নিরাশ করো না, তোমাকে সুসংবাদ প্রদানকারীরূপে পাঠিয়েছি; হতাশ করার জন্যে নয়। হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা সকলে দুরুস্ত ও সঠিক পথের পথিক হয়ে যাও; হক ও সত্য থেকে দূরে সরে যেও না।”


ইমাম আহমদ (রহঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছেন, হযরত মীকাঈল (আঃ)-কে কখনও হাসতে দেখি নাই-এর কারণ কি? তিনি বললেন, যখন থেকে দোযখ বানানো হয়েছে তখন থেকে হযরত মীকাঈল (আঃ)-এর হাসি বন্ধ হয়ে গেছে।

মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন দোযখকে উপস্থিত করা হবে ; এর সত্তর হাজার লাগাম হবে এবং এক একটি লাগামে সত্তর হাজার করে ফেরেশতা দোযখকে টেনে হেঁচড়িয়ে নিয়ে আসবে।

দোযখে আযাবের বিভিন্ন প্রকার

আবু দাউদ, নাসায়ী ও তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে— ইমাম তিরমিযী রেওয়ায়াতটিকে সহীহ্ বলেছেন- আল্লাহ্ তা'আলা যখন জান্নাত ও জাহান্নামকে সৃষ্টি করলেন, তখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে জান্নাতে পাঠালেন এবং বললেন, তুমি জান্নাতকে দেখ এবং জান্নাতের মধ্যে আমি যা কিছু রেখেছি, সেগুলোর প্রতিও দৃষ্টিপাত করো। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) জান্নাতে গেলেন এবং জান্নাত ও তৎসঙ্গে জান্নাতীদের জন্য সৃষ্ট নেয়ামতরাজি দেখে ফিরে এসে বললেন, হে আল্লাহ্, আপনার অনন্ত ইযযৎ ও সম্মানের কসম, জান্নাত এবং জান্নাতের আরাম ও নেয়ামতের বিষয় যে-ই শুনতে পাবে, সে তাতে প্রবেশ করতে উদ্‌গ্রীব হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতকে কষ্ট-ক্লিষ্ট ও সাধনার দ্বারা ঢেকে দিলেন (অর্থাৎ-জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে কষ্ট-ক্লিষ্ট ও সাধনা করতে হবে)। এরপর পুনরায় হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে জান্নাতে পাঠালেন। তিনি দেখে এসে বললেন, হে আল্লাহ্, আপনার ইযযৎ ও প্রতাপের কসম, জান্নাতকে কষ্টসাধনা ও অপছন্দনীয় বিষয়ের দ্বারা এমনভাবে ঢেকে দেওয়া হয়েছে যে, আমার আশংকা হয়- জান্নাতে কেউ প্রবেশ লাভ করতে পারবে না।

অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে জাহান্নামের দিকে পাঠিয়ে বললেন, দেখ, জাহান্নামবাসীদের জন্য আমি কি কি (শাস্তি) প্রস্তুত করে রেখেছি। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) গিয়ে দেখলেন, প্রচণ্ড শাস্তি, কেবল শাস্তি আর শাস্তিরই ব্যবস্থা। ফিরে এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহ্, আপনার ইয্যত ও প্রতাপের কসম, যে-ই জাহান্নামের শাস্তির কথা শুনবে সে এতে প্রবেশ করতে চাবে না। অতঃপর জাহান্নামের উপর প্রবৃত্তির তাড়না ও কামনা-বাসনার পর্দা ঢেলে দেওয়া হলো। এরপর আল্লাহ্ তা'আলা হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে বললেন, পুনরায় গিয়ে দেখ। তিনি দেখে এসে বললেন, আপনার ইযযত ও প্রতাপের কসম, আমার আশংকা হয় যে, সকলকেই জাহান্নামে যেতে হবে।


ইমাম বায়হাকী (রহঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) -সূত্রে রেওয়ায়াত করেন যে,

إنَّهَا تَرْنِي بِشَرَرِ كَالقَصْرِة

“তা' (জাহান্নাম) অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বর্ষণ করতে থাকবে।” (মুরসালাতঃ ৩২) কুরআনের উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, আমি একথা বলি না যে, দোযখের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ এক একটি বৃক্ষের মত বড় হবে, বরং আমি বলি এক একটি স্ফুলিঙ্গ বিরাট দুর্গের মত এবং বিরাট শহরের মত বড় হবে। আহমদ্ ইবনে মাজাহ্ ও হাকেম (রহঃ) রেওয়ায়াত করেছেন, দোযখের মধ্যে 'ওয়াইল' নামক একটি উপত্যকা রয়েছে, তাতে কোন কাফের নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর তলদেশে পৌঁছা পর্যন্ত সত্তর বছর লাগবে ।

তিরমিযী শরীফে আছে, বস্তুতঃ ‘ওয়াইলা হচ্ছে, দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত একটি উপত্যকা। এতে নিক্ষিপ্ত কাফের সত্তর বছরে এর তলদেশে গিয়ে পৌঁছবে।

তিরমিযী শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে, তোমরা জুল-হুন (অর্থাৎ দুঃখ-কষ্টের গর্ত) থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, সে গর্তটি কি? হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জওয়াব দিলেন, দোযখের মধ্যে এমন একটি ভয়ানক ওয়াদী (উপত্যকা) যা থেকে স্বয়ং দোযখ প্রতিদিন চারশত বার আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে। আরজ করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, এতে কারা দাখেল হবে? তিনি বললেন, এ উপত্যকাটি লোকদেখানো মনোবৃত্তি নিয়ে কুরআন পাঠকারী লোকদের জন্য তাদের অসৎ আমলের দরুন তৈরী করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য কারী সে, যে জালেম শাসকদের সাক্ষাতের অভিলাষী হয়।

ত্ববরানী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, দোযখের মধ্যে একটি উপত্যকা রয়েছে, যা থেকে স্বয়ং দোযখ প্রত্যহ চারশত বার পানাহ চেয়ে থাকে, উম্মতে- মুহাম্মদীর রিয়াকার (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদতকারী) লোকদের জন্য তা প্রস্তুত করা হয়েছে।

ইবনে আবিদ্দুনয়া বর্ণনা করেছেন, দোযখের মধ্যে সত্তর হাজার উপত্যকা রয়েছে, এর প্রত্যেকটি থেকে সত্তর হাজার শাখা নির্গত হয়েছে, আবার প্রত্যেকটি শাখার জন্য সত্তর হাজার ঘর রয়েছে এবং প্রতিটি ঘরে একটি করে সাপ রয়েছে—এ সাপগুলো দোযখীদের মুখে অবিরত আঘাত হানছে।

তারীখে বুখারীতে মুনকার সনদ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, দোযখে সত্তর হাজার উপত্যকা আছে, প্রত্যেকটি উপত্যকার সত্তর হাজার শাখা রয়েছে, প্রতিটি শাখার সত্তর হাজার ঘর রয়েছে, প্রতিটি ঘরে সত্তর হাজার কুয়া রয়েছে, প্রতিটি কুয়াতে সত্তর হাজার অজগর সাপ রয়েছে এবং প্রতিটি সাপের চোয়ালে (দাত-সংলগ্ন মুখ-গহ্বর) সত্তর হাজার বিছু রয়েছে- যখনই কোন কাফের বা মুনাফেক সেখানে পৌঁছে, এগুলো তাদের উপর আঘাত হানতে শুরু করে।

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে, একটি বড় পাথর দোযখের কিনার হতে নিক্ষেপ করা হলে সত্তর বছর যাবৎ তা দোযখের গহ্বরে ধাবিত হতে থাকবে, তবুও শেষ প্রান্তে পৌঁছবে না।

হযরত উমর (রাযিঃ) প্রায়ই বলতেন, তোমরা দোযখের কথা বেশী করে স্মরণ কর, কারণ দোযখাগ্নির তাপ খুবই প্রচণ্ড, এর গভীরতা বহু দূর পর্যন্ত এবং দণ্ড-প্রয়োগের চাবুক লোহার।

মুসলিম শরীফে হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে বসা ছিলাম; এমন সময় হঠাৎ একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম—যেন উপর থেকে কি একটা নীচে পড়লো। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি জান এটা কি? আমরা বললাম, আল্লাহ্ ও রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এটা একটা পাথরের শব্দ, সত্তর বছর পূর্বে আল্লাহ্ তা'আলা এটাকে দোযখে নিক্ষেপ করেছেন এখন তা নীচে গিয়ে পৌঁছলো।

ত্ববরানী শরীফে হযরত আবু সাঈদ (রাযিঃ)-সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ভয়ানক আওয়াজ শুনতে তা প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইবনে আবিদ্দুনয়া বর্ণনা করেছেন, দোযখের মধ্যে সত্তর হাজার উপত্যকা রয়েছে, এর প্রত্যেকটি থেকে সত্তর হাজার শাখা নির্গত হয়েছে, আবার প্রত্যেকটি শাখার জন্য সত্তর হাজার ঘর রয়েছে এবং প্রতিটি ঘরে একটি করে সাপ রয়েছে- এ সাপগুলো দোযখীদের মুখে অবিরত আঘাত হানছে।

তারীখে বুখারীতে মুনকার সনদ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, দোযখে সত্তর হাজার উপত্যকা আছে, প্রত্যেকটি উপত্যকার সত্তর হাজার শাখা রয়েছে, প্রতিটি শাখার সত্তর হাজার ঘর রয়েছে, প্রতিটি ঘরে সত্তর হাজার কুয়া রয়েছে, প্রতিটি কুয়াতে সত্তর হাজার অজগর সাপ রয়েছে এবং প্রতিটি সাপের চোয়ালে (দাত-সংলগ্ন মুখ-গহ্বর) সত্তর হাজার বিছু রয়েছে— যখনই কোন কাফের বা মুনাফেক সেখানে পৌঁছে, এগুলো তাদের উপর আঘাত হানতে শুরু করে।

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে, একটি বড় পাথর দোযখের কিনার হতে নিক্ষেপ করা হলে সত্তর বছর যাবৎ তা দোযখের গহ্বরে ধাবিত হতে থাকবে, তবুও শেষ প্রান্তে পৌঁছবে না।

হযরত উমর (রাযিঃ) প্রায়ই বলতেন, তোমরা দোযখের কথা বেশী করে স্মরণ কর, কারণ দোযখাগ্নির তাপ খুবই প্রচণ্ড, এর গভীরতা বহু দূর পর্যন্ত এবং দণ্ড-প্রয়োগের চাবুক লোহার।

আহমদ, আবূ ইয়ালা ও হাকেম রেওয়ায়াত করেন, দোযখের লোহার গদা (মুগুর) যদি যমীনের উপর রাখা হয় এবং সমগ্র জ্বিন ও মানবজাতি তা উঠাতে ঐক্যবন্ধ প্রচেষ্টা চালায়, তবু তাদের পক্ষে তা উঠানো সম্ভব হবে না। হাকেমের বর্ণনায় রয়েছে যে, দোযখের হাতুড়ি দিয়ে যদি আঘাত করা হয়, তবে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ছাই-ভস্মের ন্যায় হয়ে যাবে।

হাকেমের রেওয়ায়াতে আছে যে, যমীনের সাতটি স্তর রয়েছে, এবং এক স্তর থেকে অপর স্তর পর্যন্ত ব্যবধান হচ্ছে পাঁচশত বছরের। সর্বোচ্চ স্তরটি রয়েছে একটি মৎস্যের পিঠের উপর। মৎস্যটির বাহু দু'টি আসমানের সাথে মিলিত হয়েছে। আর মৎস্যটি অবস্থিত একটি পাথরের উপর। পাথরটি রয়েছে এক ফেরেশ্তার হাতে। দ্বিতীয় স্তরটি হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণি ও ঝঞ্ঝাবাত্যার বন্দীখানা। আল্লাহ্ তা'আলা যখন আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার ইচ্ছা করলেন, তখন ঘূর্ণিঝড়ের দারোগাকে হুকুম করলেন তাদের উপর প্রবল ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত করে তাদেরকে ধ্বংস করতে। তখন দারোগা বলেছে, হে আল্লাহ্ তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য আমি কি গাভীর নাসিকা পরিমাণ ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত করবো! আল্লাহ্ তা'আলা বললেন, এতে সমগ্র দুনিয়া ও দুনিয়াবাসী ধ্বংস হয়ে যাবে, বরং তাদের উপর আংটি পরিমাণ হাওয়া প্রবাহিত কর।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

مَا تَذَرُ مِنْ شَيْئي انتْ عَلَيْهِ إِلَّا جَعَلَتْهُ كَالرَّمِيمة

“তা (ঝঞ্চা বায়ু) যার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো, তাকে এমন করে ছাড়তো যেমন কোন বস্তু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।" (যারিয়াত : ৪২)

যমীনের তৃতীয় স্তরে রয়েছে দোযখের পাথর। চতুর্থ স্তরে রয়েছে গন্ধক (অগ্নি-প্রজ্জ্বলন পদার্থ) সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! দোযখেরও আবার গন্ধক রয়েছে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হা, ওই পবিত্র সত্তার কসম, যার কুদরতের মুঠোয় আমার প্রাণ, দোযখের মধ্যে গন্ধকের বহু উপত্যকা (ওয়ার্দী) রয়েছে, যদি এগুলোর মধ্যে অতি বৃহৎ ও মজবুত পাহাড় রেখে দেওয়া হয়, তবে তা বিগলিত ও দ্রবীভূত হয়ে প্রবাহিত হতে থাকবে।

যমীনের পঞ্চম স্তরে দোযখের সাপ রয়েছে। এক একটি উপত্যকার ন্যায় বৃহৎ তাদের মুখ-গহবর। যখন কোন কাফেরকে দংশন করবে, তখন তার শরীরে গোস্ত বলতে কিছু অবশিষ্ট রাখবে না।
যমীনের ষষ্ঠ স্তরে রয়েছে দোযখের বিচ্ছু। এক একটি বিচ্ছু মোটা খচ্চরের মত বৃহদাকার হবে। এদের দংশন এতো মারাত্মক হবে যে, কষ্টের আতিশয্যে দংশিত কাফের দোযখাগ্নির কষ্ট ভুলে যাবে।

যমীনের সপ্তম স্তরে ইবলীস শয়তান লোহার জিঞ্জীরে পেঁচানো অবস্থায় রয়েছে। তার এক হাত সম্মুখে অপর হাত পিছনে রয়েছে। যখন আল্লাহ্ তা'আলা ইবলীসকে ছেড়ে দিয়ে কোন বান্দাকে পরীক্ষা করতে চান, তখন তাকে (ইবলীসকে) আযাদ করে দেন।

আহমদ, ত্ববরানী, ইবনে হাব্বান ও হাকেমে বর্ণিত আছে যে, দোযখের মধ্যে বখতী উটের গর্দানের মত মোটা ও লম্বা সাপ রয়েছে। এগুলো কাউকে দংশন করলে সত্তর বছর পর্যন্ত এর বিষাক্ত ব্যথা-বেদনা যন্ত্রণা দিতে থাকবে। দোযখের অভ্যন্তরে খচ্চরের ন্যায় মোটা মোটা বিচ্ছু রয়েছে, কাউকে দংশন করলে চল্লিশ বছর পর্যন্ত বিষ-যন্ত্রণায় অস্থির করে রাখবে।

তিরমিযী, ইবনে হাব্বান ও হাকেমে বর্ণিত হয়েছে, হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, কুরআনের আয়াতাংশ এ তৈলের গাদের ন্যায়)-এর অর্থ হচ্ছে, দোযখীদেরকে এমন তীব্র ও উত্তপ্ত তৈলের গাদের ন্যায় ঘৃণ্য পানীয় পান করতে দেওয়া হবে যে, তা নিকটে আনা মাত্র এর উত্তাপে চেহারা দগ্ধ হয়ে চামড়া খসে পড়বে।

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, উত্তপ্ত গরম পানি দোযখীদের মস্তকের উপর প্রবাহিত করা হবে এবং তা মস্তক ভেদ করে পেটের অভ্যন্তরে পৌঁছে যাবে এবং পেটের সবকিছু বের করে দিবে। এমনকি পা পর্যন্ত সবকিছু জ্বালিয়ে দিবে। কুরআনের শব্দ 'হামীম' এর অর্থ হচ্ছে, উত্তপ্ত ও দগ্ধকর পানি ।

হযরত যাহহাক (রহঃ) বলেন, দোযখের এই উত্তপ্ত পানি যমীন-আসমান সৃষ্টির দিন থেকে ফুটানো হচ্ছে এবং দোযখীদেরকে পান করানোর পূর্ব পর্যন্ত তা অবিরাম ফুটানো হবে।

এছাড়া আরও একটি উক্তি রয়েছে, যা কুরআনের এ আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে-

وَ سُقُوۡا مَآءً حَمِیۡمًا فَقَطَّعَ اَمۡعَآءَهُمۡ

“তাদেরকে (দোযখীদেরকে) ফুটন্ত পানি পান করানো হবে। ফলে তা’ তাদের নাড়ি-ভুড়িগুলোকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলবে।” (মুহাম্মদ : ১৫) 
আহমদ, তিরমিযী ও হাকেম রেওয়ায়াত করেন: হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের আয়াত-

مِّنۡ وَّرَآئِهٖ جَهَنَّمُ وَ یُسۡقٰی مِنۡ مَّآءٍ صَدِیۡدٍ

("পূঁজ ও রক্ত-সদৃশ পানি তাকে পান করানো হবে, যা ঢোক ঢোক করে পান করবে এবং সহজে গলধঃকরণ করতে পারবে না।"ইব্রাহীমঃ ১৬)-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন যে, যখন এ পানি তার মুখের নিকটবর্তী করা হবে, তখন সে তা না-পছন্দ করবে এবং পান করতে চাইবে না। যখন আরও নিকটবর্তী করা হবে, তখন তার মুখমণ্ডল ঝলসে যাবে এবং মস্তকস্থিত চামড়া দগ্ধ হয়ে পড়ে যাবে। যখন পানি পান করবে, তখন তার নাড়ি-ভুড়ি কেটে যাবে এবং পিছন-পথ দিয়ে বের হয়ে পড়ে যাবে।
আল্লাহ্ পাক আরও ইরশাদ করেন:

يشْوِى الوجوه بِئْسَ الشَّرَابُ

“মুখমণ্ডলকে ভুনে ফেলবে তা কতই না নিকৃষ্ট পানীয়।” (কাহফ : ২৯)

আহমদ ও হাকেম রেওয়ায়াত করেন যে, 'গাসাক' অর্থাৎ দোযখের দুর্গন্ধময় পুঁজ এক বালতি পরিমাণ যদি দুনিয়াতে ঢেলে দেওয়া হয়, তবে সমগ্র জগত দূর্গন্ধময় হয়ে যাবে। 'গাসাকের বিষয় কুরআনুল করীমে এভাবে উল্লেখিত হয়েছে :

فليذوقوه حميم وَغَسَاقٌ هُ

“তা ফুটন্ত পানি ও পুঁজ। অতএব, তারা তা আস্বাদন করুক।"

আরও উল্লেখিত হয়েছে :

الأَحَمِيْمَا وَعَشَافًاة

(ছোয়াদ ও ৫৭ )

“উত্তপ্ত পানি ও পূঁজ ব্যতীত।” (নাবাঃ 25)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ)-এর অভিমত অনুযায়ী 'গাসসাকা হচ্ছে, দোযখের দূর্গন্ধময় পানি, যা কাফের ও অন্যান্যদের চামড়া বিগলিত হয়ে সৃষ্টি হবে। কোন কোন ব্যাখ্যাতা বলেন, 'গাস্সাক' হচ্ছে দোযখীদের পূজ।

হযরত কা'ব (রাযিঃ) বলেন, 'গাস্সাক' দোযখস্থিত একটি ঝর্ণা। এ ঝর্ণার দিকে উত্তপ্ত পানির আরও অন্যান্য ঝর্ণা প্রবাহিত হয়। প্রতিটি ঝর্ণা সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি দ্বারা পরিপূর্ণ। দোযখী ব্যক্তিকে এর মধ্যে একবার মাত্র চুবিয়ে বের করা হবে। এতে তার অবস্থা এই হবে যে, শরীরের চামড়া ও গোশ্ত তার সর্বশরীর থেকে খসে পড়বে। শুধু হাড়গুলো অবশিষ্ট থাকবে। আর এসব গোশত ও চামড়া একত্র হয়ে তার পশ্চাদ্দেশে এবং গোড়ালির সাথে ঝুলতে থাকবে। এগুলো সহ টেনে সে চলতে থাকবে, যেমন মানুষ নিজের কাপড় টেনে চলতে থাকে।

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এই আয়াত তেলাওয়াত করলেন :

وَاتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَانتُم مُّسْلِمُونَ .

“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেমন ভয় করা তাঁর হক রয়েছে। আর তোমরা মুসলিম না হয়ে মরো না।” (আলি-ইমরান : ১০২)

অতঃপর তিনি বললেন, যদি 'যাক্কুম' (দোযখের কাটাযুক্ত খাদ্য)-এর বিন্দু পরিমাণও দুনিয়ার কোন স্থানে নিক্ষেপ করা হয়, তাতে সমগ্র জগৎবাসীর জীবন নির্বাহ অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাহলে এ ‘যাক্কুম' যাকে খাওয়ানো হবে, তার কি দশা হবে? অন্য রেওয়ায়াতে আছে, সে ব্যক্তির কি দশা হবে, যার খাদ্য হবে শুধু 'যাক্কুম'।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে এ আয়াত সম্পর্কে বর্ণিত আছেঃ وَطَعَامًا ذَا غُصّة
“(গলায় আটকানোর মত) কাটাযুক্ত খাদ্য।” (মুযযাম্মিল : ১৩) তিনি বলেন, এ কাটা তার গলদেশে এমনভাবে আটকে যাবে যে, তা বের করতে পারবে না এবং বমনও করতে পারবে না।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, কাফেরের দুই কাঁধের মাঝখানে দ্রুতগামী সওয়ারীর তিন দিনের পথ পরিমাণ দূরত্ব হবে। মুসনাদে আহমদ কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, কাফেরের চোয়াল- দাঁত উহুদ পাহাড়ের ন্যায় বড় হবে, তার উরু 'বায়যা' পাহাড়ের ন্যায় হবে, দোযখে তার পশ্চাদ্দেশ 'কুদাইদ' থেকে মক্কা পর্যন্ত দূরত্বের সমান হবে। যে দূরত্ব অতিক্রম করতে তিন দিবস সময় লাগে। তার শরীরের চামড়ার স্থূলতা হবে জেবার অর্থাৎ ইয়ামান সম্রাটের যুগে প্রচলিত মাপ অনুপাতে বিয়াল্লিশ হাত।

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, দোযখের মধ্যে দোযখী ব্যক্তির পশ্চাদ্দেশ 'রাবাযাহ্' থেকে মদীনা পর্যন্ত তিন দিনের দূরত্বের সমান হবে।

ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হযরত ফাইল ইবনে ইয়াযীদ (রাযিঃ) থেকে রেওয়ায়াড করেছেন ঃ কাফেরের জিহ্বা এতো বৃহৎ ও দীর্ঘ হবে যে, এক ফরসখ বা দুই ফরসখ (প্রায় আট কিঃ মিঃ) পর্যন্ত হেঁচড়াতে থাকবে। লোকেরা সেটাকে পদদলিত করবে।

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দোযখের মধ্যে দোযখীদের দেহ এতো বৃহদাকার করে দেওয়া হবে যে, কানের নিম্নভাগ থেকে কাঁধ পর্যন্ত সাতশত বছরের দূরত্ব হবে। শরীরের চামড়া সত্তর হাত মোটা হবে চোয়াল উহুদ পাহাড়ের ন্যায় হবে।
আহমদ ও হাকেম রেওয়ায়াত করেছেন, হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন: তোমরা কি জান, দোযখের প্রশস্ততা কতটুকু? আমি বললাম--না। তখন তিনি বললেন : দোযখীর কানের নিম্নভাগ থেকে কাধ পর্যন্ত সত্তর বছরের দূরত্ব এর মাঝখানে পুঁজ ও রক্তের উপত্যকাসমূহ রয়েছে। আমি বললাম, ঝর্ণাসমূহ ? তিনি বললেন, না, উপত্যকাসমূহ।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url