মা’আরেফুল কোরআন-৮ || সূরা আল-বাকারাহ'র তাফসীর || আল-বাকারাহর নামকরণ, অবতরণকাল ও ফযীলত ||







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ্


আল-বাকারাহ নামকরণ ও আয়াত সংখ্যা

এ সূরার নাম 'সূরা আল্-বাকারাহ'। হাদীসেও এ নামেরই উল্লেখ রয়েছে। যে বর্ণনায় এ সূরাকে 'সূরা আল্-বাকারাহ' বলতে নিষেধ করা হয়েছে সে বর্ণনা ঠিক নয়। (ইবনে-কাসীর)

এ সূরার আয়াত সংখ্যা ২৮৬, শব্দ সংখ্যা ৬২২১, বর্ণসংখ্যা ৫০,৫০০।

সূরা আল্-বাকারাহ’র অবতরণকাল

এ সূরাটি মদনী। অর্থাৎ নবী করীম (সা)-এর মদীনায় হিজরত করার পর অবতীর্ণ হয় । অবশ্য কয়েকটি আয়াত হজ্জের সময় মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তফসীরকারগণ ঐ আয়াতগুলোকেও মদনীই বলেছেন।

সূরা আল-বাকারাহ কোরআনের সবচাইতে বড় সূরা। হিজরতের পর মদীনায় সর্বপ্রথম এ সূরারই অবতরণ শুরু হয় এবং পরে বিভিন্ন আয়াত বিভিন্ন সময়ে অবতীর্ণ হতে থাকে। সুদ সম্পর্কিত আয়াতটি নবী করীম (সা)-এর শেষ বয়সে মক্কা বিজয়ের পর অবতীর্ণ হয়।  وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا تُرۡجَعُوۡنَ فِیۡهِ اِلَی اللّٰهِ পবিত্র কোরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াতগুলির একটি। দশম হিজরীর দশই যিলহজ্জ বিদায় হজ্জের সময় এটি মিনায় অবতীর্ণ হয়। এর ৮০/৯০ দিন পর নবী করীম (সা) ইন্তিকাল করেন এবং ওহী আসা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

সূরা বাকারাহর ফযীলত

এ সুরা বহু আহ্কাম সম্বলিত সব চাইতে বড় সূরা। নবী করীম (সা) এরশাদ করেছেন যে, সূরা বাক্বারাহ পাঠ কর। কেননা, এর পাঠে বরকত লাভ হয় এবং পাঠ না করা অনুতাপ ও দুর্ভাগ্যের কারণ। যে ব্যক্তি এ সুরা পাঠ করে তার উপর কোন আহলে-বাতিল কখনও প্রভাব বিস্তার করতে পারে না ।

ইমাম কুরতুবী এ প্রসঙ্গে হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর এক বর্ণনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, উপরিউক্ত হাদীসে আহলে-বাতিল অর্থ যাদুকর। অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ সূরা পাঠ করবে তার উপর কোন যাদুকরের যাদু প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। (কুরতুবী, মুসলিম, আবু উমামা বাহেলী নবী করীম (সা) এরশাদ করেছেন, “যে ঘরে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে।” (ইবনে কাসীর হাকেম থেকে বর্ণনা করেছেন)

নবী করীম (সা) এ সূরাকে “সেনামুল-কোরআন” ও “যারওয়াতুল-কোরআন” বলে উল্লেখ করেছেন। সেনাম ও যারওয়াহ বস্তুর উৎকৃষ্টতম অংশকে বলা হয়। হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, সূরায়ে বাকারায় আয়াতুল কুরসী নামে যে আয়াতগুলো রয়েছে তা কোরআন শরীফের অন্য সকল আয়াত থেকে উত্তম। (ইবনে কাসীর)

হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেন যে, এ সূরায় এমন দশটি আয়াত রয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি সে আয়াতগুলো রাতে নিয়মিত পাঠ করে, তবে শয়তান সে ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং সে রাতের মত সকল বালা-মুসীবত, রোগ-শোক ও দুশ্চিন্তা এবং দুর্ভাবনা থেকে নিরাপদে থাকবে। তিনি আরো বলেছেন, যদি বিকৃতমস্তিষ্ক লোকের উপর এ দশটি আয়াত পাঠ করে দম করা হয়, তবে সে ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করবে। আয়াত দশটি হচ্ছে : সূরার প্রথম চার আয়াত, মধ্যের তিনটি অর্থাৎ আয়াতুল কুরসী ও তার পরের দু'টি আয়াত এবং শেষের তিনটি আয়াত।

সূরা বাকারাহর আহকাম ও মাসায়েল

বিষয়বস্তু ও মাসায়েলের দিক দিয়েও সূরা বাকারাহ সমগ্র কোরআনের মধ্যে অনন্য বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী। ইবনে আরাবী (র) বলেছেন যে, তিনি তাঁর বুযুর্গানের নিকট শুনেছেন—এ সূরায় এক হাজার আদেশ, এক হাজার নিষেধ, এক হাজার হেকমত এবং এক হাজার সংবাদ ও কাহিনী রয়েছে। তাই হযরত উমর ফারূক (রা) এ সূরার তফসীর অধ্যয়নে বার বছর এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) আট বছর অতিবাহিত করেছিলেন। (কুরতুবী)

প্রকৃতপক্ষে সূরাতুল-ফাতিহা সমগ্র কোরআনের সারমর্ম বা সার-সংক্ষেপ। এর মৌলিক বিষয়বস্তু তিনটি। এক. আল্লাহ্ তা'আলার রবুবিয়ত। অর্থাৎ তিনিই যে, সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা এ তথ্যের বর্ণনা। দুই. আল্লাহ্ তা'আলাই ইবাদতের একমাত্র হকদার। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য না হওয়া। তিন. হেদায়েত বা পথ প্রদর্শনের প্রার্থনা। সূরা ফাতিহার শেষাংশে সিরাতুল মুস্তাকীম বা সরল সঠিক পথের যে প্রার্থনা করা হয়েছে, সমগ্র কোরআন তারই প্রত্যুত্তর। যদি কেউ সরল ও সত্য পথের সন্ধান চায়, তবে সে পবিত্র কোরআনেই তা পেতে পারে ।

সে জন্যই সুরাতুল-ফাতিহার পর সূরা বাকারাহ্ সন্নিবেশিত হয়েছে এবং  ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ দ্বারা সূরা আরম্ভ করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তোমরা যে সিরাতুল মুস্তাকীমের সন্ধান করছ তা হচ্ছে এ কিতাব। অতঃপর এ সূরার প্রথমে ঈমানের মূলনীতিসমূহ, তওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতের বর্ণনা সংক্ষিপ্তাকারে এবং সূরার শেষাংশে ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। মধ্যভাগে জীবন যাপন পদ্ধতির বিভিন্ন দিকসমূহ যথা ইবাদত, আচার-ব্যবহার, মুয়াশেরাত, চরিত্র গঠন এবং আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংশোধন এবং সংস্কার সম্পর্কিত মূলনীতি ছাড়াও অন্যান্য বহু ছোট-খাট বিষয়সমূহের বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।





********************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 

Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url