রাহে আমল - ১৮ || পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের অধিকার ||




পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের অধিকার

বাবার চেয়ে মায়ের অধিকার তিন গুন বেশী

 قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِي ؟ قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ أُمُّكَ، قَالَ ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ أُمُّكَ، قَالَ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ أَبُوكَ ، وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ أُمُّكَ ثُمَّ أُمُّكَ ثُمَّ أُمِّكَ ثُمَّ أَبَاكَ ثُمَّ أَدْنَاكَ فَأَدْنَاكَ . (بخاري ومسلم، أبو هريرة رض)

এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো হে রাসূলুল্লাহ, কোন্ ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে বেশী সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী? তিনি বললেন : তোমার মা, সে বললো তারপর কে? তিনি বললেন তোমার মা। সে আবার বললো : তারপর কে? তিনি বললেন : তোমার মা। সে বললো : তারপর কে? তিনি বললেন : তোমার বাবা। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বললেন : তোমার মা। তারপর তোমার মা। তারপর তোমার মা। তারপর তোমার বাবা। তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার আত্মীয়স্বজন। (বোখারী, মুসলিম)

এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, মার মর্যাদা বাবার চেয়ে বেশী। কোরআন থেকেও এ কথাই জানা যায়। সূরা লোকমানে আল্লাহ বলেন “আমি মানুষকে মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছি।” এর অব্যবহিত পরেই আল্লাহ আবার বলেছেন : “তার মা কষ্টের ওপর কষ্ট সহ্য করে নয় মাস পর্যন্ত তাকে নিজের পেটে বয়ে বেড়িয়েছেন, তারপর আবার দু'বছর পর্যন্ত নিজের রক্ত দিয়ে তাকে লালন পালন করেছেন।” এ জন্যই আলেমগণ লিখেছেন যে, ভক্তিশ্রদ্ধা ও সম্মানের দিক দিয়ে বাবার এবং খেদমতের দিক দিয়ে মায়ের অধিকার সবচেয়ে
বেশী ।

বার্ধক্যে মা বাবার খেদমতের গুরুত্ব

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَغِمَ أَنْفَةٌ، رَغِمَ أَنْفَةٌ، رَغِمَ أَنْفُهُ قِيْلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّة. (مسلم، أبو هريرة رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন সেই ব্যক্তি ধিকৃত, সেই ব্যক্তি ধিকৃত, সেই ব্যক্তি ধিকৃত । জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসূলুল্লাহ কে? তিনি বললেন : যে ব্যক্তি তার মা বাবাকে বা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, তারপরও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে যেতে পারলো না। (মুসলিম, আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত)

মায়ের অবাধ্যতা হারাম

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الْأُمَّهَاتِ وَوَادَ الْبَنَاتِ وَمَنْعًا وَهَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثَرَةُ السُّوَالِ وَإِضَاعَةَ

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মায়ের অবাধ্য হওয়া, মেয়েদেরকে জ্যান্ত কবর দেয়া এবং লোভলালসা ও কৃপণতা । আর তিনি নিষ্প্রয়োজন কথা বলা, বেশী প্রশ্ন করা ও সাহায্য চাওয়া এবং সম্পদ অপচয় করাকে গর্হিত কাজ গণ্য করেছেন। বেশী প্রশ্ন করার অর্থ হলো নিষ্প্রয়োজন প্রশ্ন করা : অজানা জিনিসকে জানতে চাওয়ার জন্য প্রশ্ন করা দোষের নয়। বনী ইসলাইল যেমন গাভী সম্পর্কে অনর্থক প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেছিল। সে রকম করা ঠিক নয়। সে ধরনের প্রশ্ন সাধারণত তারাই করে থাকে যারা দ্বীন অনুযায়ী কাজ করতে চায় না।

মা বাবার মৃত্যুর পর তাদের প্রতি করণীয়


عَنْ أَبِي أسيد السَّعِدِي بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ ـ أَبَوَي شَيْ سَلِمَةٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ هَلْ بَقِي مِنْ أبوي ـ أَبَر هَمَا بِهِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا قَالَ نَعَمْ الصَّلَوةُ عَلَيْهِمَا وَالْإِسْتِغْفَارُ لَهُمَا وَإِنْفَانُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِمَا وَصِلَةٌ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوَصَلُ إِلَّا بِهِمَا وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا. (أبوداؤد)

আবু উসাইদ (রা) বলেন, আমরা রাসূল (সা)-এর কাছে বসেছিলাম। এমতাবস্থায় বনু সালমা গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূল (সা)-এর কাছে এল । সে বললো হে আল্লাহর রাসূল (সা), মা বাপের ইন্তিকালের পরও কি তাদের কোন হক বাকী থাকে, যা আমার প্রদান করা উচিত? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন হাঁ, তাদের জন্য দোয়া করবে, ক্ষমা চাইবে, তারা যদি (শরীয়ত সম্মতভাবে) কোন ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে, তবে তা পূরণ করবে। যাদের সাথে মা বাপের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল, তাদের আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখবে এবং মা বাপের বন্ধুবান্ধবের প্রতি সম্মান
দুধ মায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।

١٤٤ - عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْسِمُ لَحْمًا بِالْبِعِرَّانَةِ إِذْ أَقْبَلَتِ امْرَأَةٌ حَتَّى دَنَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّىاللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَسَطَلهَا رِدَاءَهُ فَجَلَسَتْ عَلَيْهِ فَقَلتُ .الَّتِي أَرْضَعَتْهُ (أبوداؤد)قَالُواهي أمو

আবু তোফাইল (রা) বলেন আমি রাসূল (সা) কে জিয়াররানা নামকস্থানে গোশত বন্টনরত অবস্থায় দেখলাম। সহসা জনৈকা মহিলা তাঁর কাছে এল এবং রাসূল (সা)-এর কাছে চলে গেল। তিনি নিজের চাদর বিছিয়ে দিলেন এবং তাতে সে বসলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ মহিলা কে ? লোকেরা বললো, এ মহিলা রাসূল (সা)-এর দুধ মা। (আবু দাউদ)

দুধ মা মোশরেক হলেও তাকে সমাদর করতে হবে

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ قَالَتْ قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي . مشركة فِي عَهْدِ قُرَيْشٍ، قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَمِي قَدِمَتْ عَلَيَّ وَهِيَ رَاغِبَةً أَفَأَصِلُهَا ؟ فَقَالَ نَعَمْ

হযরত আবু বকরের মেয়ে আসমা বলেন যে সময়ে কোরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে সন্ধি হয়েছিল (হোদায়বিয়ার সন্ধি) তখন আমার মা (দুধ মা) আমার কাছে এলেন। তিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি বরং মোশরেক ছিলেন। আমি রাসূল (সা)কে জিজ্ঞেস করলাম আমার মা আমার কাছে এসেছেন এবং তিনি চান আমি যেন তাকে কিছু দেই। আমি কি তাকে কিছু দিতে পারি? তিনি বললেন হ্যাঁ তুমি তার সাথে মমতাপূর্ণ আচরণ কর । (বোখারী, মুসলিম)

আত্মীয়তার প্রকৃত সমাদর

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ الْوَاصِل بِالْكَافِي وَلكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِي إِذَا قُطِعَتْرحمة وَصَلَها. (بخاري، ابن عمر رض)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: কোন আত্মীয় সম্প্রীতিপূর্ণ আচরণ করলে তার বদলায় সম্প্রীতিপূর্ণ আচরণকারী প্রকৃত আত্মীয় সমাদরকারী নয়। বরং আত্মীয়তার প্রকৃত সমাদর হলো, অন্য আত্মীয়স্বজন যখন আত্মীয়সুলভ আচরণ করবে না, তখন তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা ও তাদের হক দেয়া। (বোখারী, ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত)

অর্থাৎ আত্মীয় স্বজনের পক্ষ থেকে সদাচরণের জবাবে সদাচরণ করা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সদাচরণ ও সমাদর নয়। সবচেয়ে বড় আত্মীয় তোষণকারী হচ্ছে সেই ব্যক্তি; যাকে অন্যান্য আত্মীয়রা দূরে ঠেলে দেয় ও সম্পর্ক ছিন্ন করে, অথচ সে তাদের সাথে সম্পর্ক জোড়ার চেষ্টা করে। অন্য আত্মীয়রা তাকে তার প্রাপ্য হক দেয় না, অথচ সে তাদের সমস্ত হক দিতে সদা প্রস্তুত থাকে। এটা মহত্ত্ব ও মহানুভবতার এত উঁচু একটা স্তর যেখানে আরোহণ করা সর্বোত্তম মানের তাকওয়া ও খোদাভীতি ছাড়া সম্ভব নয়।

অসদাচরণের জবাবে সদাচারের মর্যাদা

إِنَّ رَجُلا قَالَ يَارَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوا لِي وَأَحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِبُونَ إِلَيَّ وَأَحْلَم عَنْهُم وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُهُم المَل وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللَّهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَّا دُمْتَ عَلَىذلك. (مسلم، أبو هريرة رض)

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)কে বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমার এমন কিছু আত্মীয় স্বজন রয়েছে যাদের যাবতীয় অধিকার আমি দিয়ে থাকি। কিন্তু তারা আমার অধিকার দেয় না। আমি তাদের সাথে সদাচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সাথে অসদাচরণ করে। আমি তাদের সাথে সহনশীলতা প্রদর্শন করি, কিন্তু তারা আমার সাথে গোয়ার্তুমী করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন তোমার অবস্থা যদি সত্যই তুমি যেমন বলছ তেমন হয়ে থাকে, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে কালিমা লেপন করে চলেছ এবং যতক্ষণ তুমি এই আচরণ বজায় রাখবে, ততক্ষণ আল্লাহ তাদের মোকাবিলায় তোমাকে সাহায্য করতে থাকবেন। (মুসলিম, আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url