রাহে আমাল - ১৯ || স্ত্রীর অধিকার ||
স্ত্রীর অধিকার
স্বামী ও স্ত্রীর পানাহার এবং পোশাকের মান সমান হওয়া উচিৎ
عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِي عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ مَا حَقٌّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟ قَالَ أَنْ تُطْعِمُهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ و تَضْرِب الْوَجْهَ وَلَا تُقَبِّحُ، وَلَا تَهْجُرُ إِلَّا فِي الْبَيْتِ
মোয়াবিয়ার পুত্র হাকীম তাঁর পিতা মোয়াবিয়া থেকে বর্ণনা করেন, মোয়াবিয়া বলেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)কে জিজ্ঞেস করলাম, স্বামীর নিকট স্ত্রীর হক (অধিকার) কি কি? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : তার হক এই যে, তুমি যখন আহার করবে, তখন তাকেও আহার করাবে, তুমি যখন পোশাক পরিধান করবে, তখন তাকেও পোশাক দেবে, তার মুখে কখনো প্রহার করবে না, তাকে কখনো বদদোয়া করবে না বা অভিশাপ দেবে না। আর তার সাথে কখনো সাময়িক সম্পর্কচ্ছেদ করলে তাকে বাড়ীতে রেখেই করবে। (আবু দাউদ)
অর্থাৎ যে মানের খাদ্য তুমি আহার করবে, সেই মানের খাদ্য তাকেও আহার করাবে, যে মানের পোশাক তুমি পরবে, সেই মানের পোশাক তাকেও পরাবে। শেষ বাক্যটির ব্যাখ্যা এই যে, স্ত্রী যদি অবাধ্যতা প্রদর্শন ও অসদাচরণ করে, তবে কোরআনের নির্দেশ অনুসারে প্রথমে তাকে নম্র ও কোমল ভাষায় বুঝাতে হবে, তাতেও যদি ভালো না হয় তবে বিছানা আলাদা করে নেবে। কিন্তু উভয়ের বিছানা বাড়ীর ভেতরেই থাকা চাই। উভয়ের ভেতরের অসন্তোষের বিষয়টি বাইরে ফাঁস হতে দেবে না। কেননা এটা পারিবারিক সম্মান ও মর্যাদার পরিপন্থী । এতেও ভালো না হলে স্ত্রীকে মৃদু প্রহার করা যেতে পারে। তবে মুখমণ্ডল বাদ দিয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে। তাও এতটা সাবধানে মারতে হবে যেন কোন ক্ষত না হয় বা হাড় না ভাঙ্গে ।
স্ত্রীর সাথে দাসীবাঁদীর মত আচরণ করা
عَنْ لَقِيطِ بْنِ صَبْرَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي امْرَأَةٌ فِي لِسَانِهَا شَيْ يَعْنِي الْبَذَاءَ قَالَ طَلِقُهَا، قُلْتُ إِنَّ لِي مِنْهَا وَلَدَاوَلَهَا صُحْبَةٌ قَالَ فَمُرُهَا يَقُولُ عِظُهَا، فَإِنْ يَّكَ فِيهَا خَيْرٌ فَسَتَقْبَلُ، وَلَا تَضْرِبَنَّ ظَعِينَتَكَ ضَرْبَكَ أُمَيَّتَكَ. (أبوداؤد)
লাকীত বিন সাবেরা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমার স্ত্রী খুবই কটুভাষী। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : তালাক দিয়ে দাও । আমি বললাম আমাদের একটা সন্তান রয়েছে। তা ছাড়া আমরা এক সাথে বহু দিন কাটিয়ে এসেছি। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : তাহলে তাকে উপদেশ দিতে থাক। তার ভেতরে সৎ পথ অবলম্বনের যোগ্যতা থাকলে সে তোমার উপদেশ মেনে নেবে। সাবধান, তোমার স্ত্রীকে দাসীবাঁদীর মত মারপিট করবে না। (আবু দাউদ)
এ হাদীসের শেষ বাক্যটার অর্থ এটা নয় যে, দাসীবাদীদেরকে যেমন ইচ্ছা মারপিট করা যাবে। এর অর্থ এই যে, সচরাচর দাসীবাদীর সাথে যে রকম আচরণ করা হয়ে থাকে, স্ত্রীর সাথে সে রকম আচরণ করা উচিত নয়।
প্রহারকারী স্বামীরা সর্বোত্তম মানুষ নয়
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَضْرِبُوا اِمَاءَ اللهِ فَجَاءَ عُمَرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ ذَيْرْنَ النِّسَاء عَلَى أَزْوَاجِهِنَّ فَرَخَّصَ فِي ضَرْبِهِنَّ فَطَافَ بِالِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِسَاءَ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ طَافَ بِالِ مُحَمَّدِ نِسَاءٌ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ لَيْسَ أُولئِكَ بِخِيَارِكُمْ (ابوداؤد، أياس بنعبد الله
রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন তোমরা আল্লাহর বাঁদীদেরকে (অর্থাৎ স্ত্রীদেরকে) মারপিট করো না। এরপর ওমর (রা) এলেন । তিনি বললেন, আপনার এই আদেশের কারণে স্বামীরা মারপিট করা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে স্ত্রীরা স্বামীদের মাথায় চড়ে বসেছে এবং তাদের ধৃষ্টতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ কথা শুনে রাসূল (সা) পুনরায় প্রহারের অনুমতি দিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহর (সা) সহধর্মিনীদের কাছে বহু মহিলা আসতে লাগলো এবং তাদের স্বামীরা তাদেরকে মারপিট করে বলে অভিযোগ করতে লাগলো। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন : আমার স্ত্রীদের কাছে বহু মহিলা তাদের স্বামীদের মারপিটের অভিযোগ নিয়ে আসছে। মারপিটকারী স্বামীরা সর্বোত্তম মানুষ নয়। (আবু দাউদ, আয়াস ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত)
স্ত্রীর মধ্যে শুধু দোষ থাকে না, গুণও থাকে
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَفْرُكْ مُؤْمِنٌ مُّؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلْقَارَضِيَ مِنْهَا أَخَر
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন : কোন মুমিন স্বামীর নিজের মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা করা উচিত নয়। তার একটা অভ্যাস যদি স্বামীর খারাপ লাগে, তবে অন্য একটা অভ্যাস ভালো লাগবে। (মুসলিম)
অর্থাৎ স্ত্রী যদি সুদর্শনা না হয়ে থাকে কিংবা অন্য কোন দোষ ত্রুটি তার ভেতরে থেকে থাকে, তাহলে সেজন্য তৎক্ষণাত সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেল না। একজন নারীর ভেতরে যদি কোন দিক দিয়ে কোন কমতি বা অসন্তোষজনক ব্যাপার থেকে থাকে, তবে অন্য বহু দিক এমনও থাকতে পারে, যা দিয়ে সে স্বামীর হৃদয় জয় করে নিতে সক্ষম, যদি তাকে সময় ও সুযোগ দেয়া হয় এবং তার একটি মাত্র ত্রুটির কারণে মনে তার প্রতি চিরস্থায়ী ঘৃণা ও বিদ্বেষ বদ্ধমূল করে না নেয়া হয়।
স্বামী স্ত্রী উভয়ের অধিকার আছে
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْأَحْوَصِ الْحُشَمِي أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ يَقُولُ بَعْدَ أَنْ حَمِدَ الله تَعَالَى وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَرَ وَوَعَظَ ثُمَّ قَالَ أَلَا وَ اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٍ عِنْدَكُمْ لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئًا غَيْرَ ذَلِكَ إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ، فَإِنْ فَعَلْنَ فَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِجٍ ، فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا أَلَا إِنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَاءِ كُمْ حَقَّاوَ لِنِسَاءِ كُمْ عَلَيْكُمْ حَقًّا فَحَقَّكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُؤْطِئْنَ فُرْشَكُمْ مَّنْتَكْرَهُونَ، وَلَا يَأْذَنْ فِي بُيُوتِكُمْ لِمَنْ تَكْرَهُـ أَلَا وَحَقِّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّوَطَعَامِهِنَّ. (ترمذي)
আমর বিন আহওয়াস জুশামী (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বিদায় হজ্জে রাসূলের (সা) ভাষণ শুনেছেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তারপর বিভিন্ন রকমের উপদেশ দিলেন, অবশেষে বললেন : “হে জনতা শোন, স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর। কেননা তারা তোমাদের কাছে কয়েদীর মত। তারা খোলাখুলি অবাধ্যতা প্রদর্শন না করা পর্যন্ত তাদের সাথে কঠোর ব্যবহার করবে না। যখন তা করবে, তখন তাদের সাথে বিছানায় সম্পর্ক ছিন্ন কর। (অর্থাৎ দু'জনের বিছানা আলাদা কর অথবা একই বিছানায় পৃথক পৃথকভাবে শয়ন কর। -অনুবাদক) আর তাদেরকে এমনভাবে প্রহার করতে পার যা খুব কঠোর অর্থাৎ ক্ষত সৃষ্টিকারী না হয় । এরপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তাহলে আর তাদেরকে কষ্ট দেয়ার বাহানা খুঁজো না। শুনে নাও, তোমাদের কাছেও তোমাদের স্ত্রীদের কিছু অধিকার প্রাপ্য আছে, আর তোমাদের স্ত্রীদের কাছেও তোমাদের কিছু অধিকার প্রাপ্য রয়েছে। তাদের কাছে তোমাদের প্রাপ্য অধিকার এই যে, তোমরা পছন্দ করো না এমন কাউকে যেন তোমাদের বিছানা মাড়াতে না দেয় এবং তোমরা পছন্দ করো না এমন কাউকে তোমাদের বাড়ীতে যেন আসতে না দেয়। আর শুনে নাও, তোমাদের কাছে তাদের প্রাপ্য অধিকার এই যে, তোমরা তাদেরকে যথাযথভাবে খোরপোষ দেবে। (তিরমিযী)
পরিবারের পেছনে ব্যয় সদকাস্বরূপ
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا أَنْفَقَالرَّجُلُ عَلَى أَهْلِهِ يَحْتَسِبُهَا فَهُوَلَهُ صَدَقَةٌ .عليه، أبو مسعود بدري رض
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, পরকালে সওয়াব পাওয়া যাবে এই নিয়তে কোন ব্যক্তি যখন নিজ পরিবারের পেছনে অর্থ ব্যয় করে, তখন তা সদকায় পরিণত হয় । (বোখারী ও মুসলিম)
পোষ্যদেরকে নষ্ট হতে দেয়া উচিত নয়
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَفَىبالْمَرْءِ إِثْمًا أَنْ يُضِيعَ مَنْ يَقُوتُ
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন মানুষের গুনাহগার হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যাদের ভরণ পোষণ করে তাদেরকে নষ্ট হতে (অর্থাৎ বিপথগামী হতে) দেবে। (আবু দাউদ)
একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সুবিচার
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَاجَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقَةٌ سَاقِطٌ. (ترمذي)
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তির দু'জন স্ত্রী রয়েছে, সে যদি তাদের সাথে সুবিচার না করে তবে সে কেয়ামতের দিন তার অর্ধেক দেহ ফেলে রেখে আসবে। (তিরমিযী)
যে স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার সে দেয়নি, সে তো তার দেহেরই অংশ ছিল। তার প্রতি অবিচার করার মাধ্যমে সে তো তার দেহের অর্ধাংশ দুনিয়াতেই কেটে রেখে এসেছে। কাজেই কেয়ামতের দিন সে পূর্ণাঙ্গ দেহ পাবে কোথায়?
******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.