রাহে আমল - ২৩ || অতিথির অধিকার || প্রতিবেশীর অধিকার ||





অতিথির অধিকার

অতিথির সমাদর ঈমানের দাবী

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَكْرِمْ ضَيْفَة. (بخاري، مسلم)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান রাখে, সে যেন অতিথির সমাদর করে।

গৃহকর্তাকে বিব্রত করা অতিথির অনুচিত

إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْ بِالْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَةٌ جَائِزَتُهُ يَوْمٍوَلَيْلَةٌ وَالنِّيَا فَةٌ ثَلَثَةٌ أَيَّامٍ فَمَا بَعْدَ ذَلِكَ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ دری ریگا د وَلَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَنْوِي عِنْدَهُ حَتَّى يُحْرِجَةٌ. (متفق عليه)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে, সে যেন অতিথির সমাদর করে। প্রথম এক রাত ও একদিন অতিথিকে সর্বোত্তম আপ্যায়নের দিন। আতিথেয়তা তিন দিন পর্যন্ত । (অর্থাৎ দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বেশী কষ্ট করে আপ্যায়ন করা নৈতিকভাবে জরুরী নয়।) এরপর সে যে কিছু করবে তা তার জন্য সদকায় পরিণত হবে। আর অতিথির জন্য গৃহকর্তার কাছে এত দীর্ঘ সময় অবস্থান করা বৈধ নয়, যাতে সে বিব্রত বোধ করে।
এ হাদীসটিতে অতিথি ও গৃহকর্তা উভয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গৃহকর্তাকে বলা হয়েছে, সে যেন অতিথির সমাদর করে। সমাদর করার অর্থ শুধু খাওয়ানো দাওয়ানো নয়। বরং হাসিমুখে কথা বলা ও হাসিখুশী ব্যবহার করা সবই। আর অতিথিকে বলা হয়েছে যে, কারও বাড়ীতে অতিথি হয়ে গেলে সেখানে এত দীর্ঘ দিন পড়ে থেক না যে গৃহকর্তা বিরক্ত ও অস্থির হয়ে পড়ে। মুসলিম শরীফের এক হাদীসে এ বিষয়টির উত্তম বিশ্লেষণ রয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন : কোন মুসলমানের জন্য তার ভাই এর নিকট এত দীর্ঘ সময় অবস্থান করা বৈধ নয়, যাতে সে বিব্রত বোধ করে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে বিব্রত বোধ করবে? রাসূল (সা) বললেন : এত দীর্ঘ সময় অবস্থান করে যে এক সময় তার কাছে আতিথেয়তা করার জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না ।

প্রতিবেশীর অধিকার

প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া ঈমানদারীর লক্ষণ নয়

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُؤْمِنُ وَاللَّهِ لَا يُؤْ مِنْ، وَاللَّهِ لَايُؤْمِنْ قِيْلَ مَنْ يَارَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ الَّذِي لَا يُؤْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ. (بخاري)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়, আল্লাহর কসম, সে মুমিন নয়। জিজ্ঞেস করা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্, কে? তিনি বললেন : যার প্রতিবেশী তার কষ্টদায়ক আচরণ থেকে নিরাপদ থাকে না ।

প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে জিবরীলের পুন:পুন: তাগিদ

قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَازَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُورثة. (متفق عليه)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন জিবরীল আমাকে প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্য এত ঘন ঘন উপদেশ দিতে থাকেন যে, আমি ভেবেছিলাম হয়তো শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করা হবে।

প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে নিজে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالَّذِي يَشْبَعُوَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ. (مشكوة)

ইবনে আব্বাস (রা) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সা)কে বলতে শুনেছি সেই ব্যক্তি মুমিন নয় যে নিজে তৃপ্তি সহকারে আহার করে, অথচ তার প্রতিবেশী তার পাশেই অনাহারে থাকে। (মেশকাত)

প্রতিবেশীকে রান্না করা খাবার দেয়ার উপদেশ

قَالَ رَسُولُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا آبَاذَرٍ إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةٌ فَاكْثِرُ مَاءَهَا وَتَعَاهَدُ خَيْرَانَكَ.(مسلم)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন হে আবু যর, তুমি যখন ঝোল রান্না করবে, তখন তাতে পানি বেশী করে দাও এবং তা দিয়ে প্রতিবেশীর খবর নাও। (মুসলিম)


প্রতিবেশীকে দেয়া উপহার সামান্য হলেও তুচ্ছ্য নয়

١٨٤ - قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لَا تَحْقِرَنَّ جَارَةً لِجَةً لِجَارَتِهَا وَلَوْ فَرْسِنَ شَاءَ.

 
১৮৪. রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: হে মুসলিম নারীগণ, কোন প্রতিবেশিনী অপর প্রতিবেশিনীকে যত সামান্য উপহারই দিক, তাকে তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়, এমনকি তা যদি ছাগলের একটা ক্ষুরও হয়। (বোখারী, মুসলিম)

মহিলাদের মানসিকতা সচরাচর এ রকম হয়ে থাকে যে, কোন মামুলী জিনিস প্রতিবেশিনীর বাড়ীতে পাঠানো পছন্দ করে না। সব সময় খুব ভালো জিনিস পাঠাতে চায়। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) মহিলাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যত সামান্য জিনিসই হোক, প্রতিবেশীর কাছে পাঠাতে দ্বিধা বোধ করো না। আর যে মহিলার কাছে প্রতিবেশীর কাছ থেকে কোন উপহার আসে, সে যেন তা নগণ্য হলেও সাদরে গ্রহণ করে। অবজ্ঞা করা বা সমালোচনা করা ঠিক নয় ।

নিকটতর প্রতিবেশীকে অধিকতর অগ্রাধিকার

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي جَارَيْنِ فَإِلَى أَيِّهِمَا اهْدِي؟ قَالَ إِلَى أَقْرَ بِهِمَا مِنَاكَ

হযরত আয়েশা (রা) বলেন : আমি বললাম, হে রাসূলুল্লাহ্, আমার দু'জন প্রতিবেশী রয়েছে, তন্মধ্যে কার কাছে উপহার পাঠাবো? রাসূল (সা) বললেন, তাদের মধ্যে যে জনের দরজা তোমার নিকটতর তার কাছে । (বোখারী)

প্রতিবেশীত্বের এলাকা চল্লিশ বাড়ী পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের মধ্যে যে বাড়ী নিকটতর, তার অধিকার অগ্রগণ্য।

প্রতিবেশীর সাথে সৎ ব্যবহার

١٨٦ - قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ شَرَّهُ أَنْ
تُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولَهُ فَلْيَصْدَقَ حَدِيثَهُ إِذَا حَدَّثَ، وَلْيُؤْدِ
امَانَتَهُ إِذَا اشْتُمِنَ وَلْيُحْسِنْ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَة (مشكوة)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : যে ব্যক্তি এটা পছন্দ করে যে, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল তাকে ভালোবাসুক, সে যেন সব সময় সত্য কথা বলে, তার কাছে কোন জিনিস আমানত রাখা হলে তা তার মালিকের নিকট অক্ষতভাবে ফেরত দেয় এবং নিজের প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করে।

প্রতিবেশীকে কটু কথা বললে নামায রোযাও বৃথা

قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ فَلَا نَةَ تُذكَرُ مِنْ : صَلَاتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ انَّهَا تُؤْذِي خَيْرَ أَنَّهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ، قَالَ يَارَسُولَ اللَّهِ فَإِنَّ فَلَانَةٌ تُذْكَرُ قِلَةٌ صِيَا مِهَا وَصَدَ قَتِهَا وَ صَلَاتِهَا وَأَنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَا رِ مِنَ الْإِقِطِ وَلَا تُؤْذِي بِلِسَانِهَا خَيْرًا نَهَا.قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ. (مشكوة)

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)কে বললো : হে রাসূলুল্লাহ, অমুক মহিলা প্রচুর নফল নামায, রোযা ও সদকার জন্য প্রসিদ্ধ, কিন্তু প্রতিবেশীকে কটু কথা বলার মাধ্যমে কষ্ট দেয়। রাসূল (সা) বললেন : সে জাহান্নামে যাবে । লোকটি আবার বললেন হে রাসূলুল্লাহ, অমুক মহিলা সম্পর্কে খ্যাতি রয়েছে যে, সে খুবই কম নফল নামায, রোযা ও সদকা করে এবং পনিরের দু'একটা টুকরো সদকা করে থাকে। কিন্তু নিজের জিহ্বা দিয়ে কাউকে কষ্ট দেয় না। রাসূল (সা) বললেন: সে জান্নাতে যাবে ।

প্রথমোক্ত মহিলার দোযখে যাওয়ার কারণ এই যে, সে বান্দাহর হক বা অধিকার হরণ করেছে। প্রতিবেশীর অধিকার এই যে, তাকে কষ্ট দেয়া যাবে না। সে এ অধিকার সংরক্ষণ করে নি এবং দুনিয়ার জীবনে সে নিজের প্রতিবেশীর কাছে ক্ষমাও চায়নি ৷ তাই জাহান্নামই তার উপযুক্ত আবাসস্থল ।

কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম দুই প্রতিবেশীর বিরোধের বিচার হবে

قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوَّل خَصْمَيْنِ يَوْمَ الْقِيمَةِ جَارَانِ. (مشكوة)

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম যে দুই ব্যক্তির মামলা আল্লাহর আদালতে বিচারার্থে পেশ করা হবে তারা হবে দু'জন প্রতিবেশী। (মেশকাত)

অর্থাৎ বান্দার হক সংক্রান্ত বিরোধের বিচারের জন্য কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতের সামনে সর্ব প্রথম এমন দুই ব্যক্তি দাঁড়াবে। যারা পৃথিবীতে পরস্পরের প্রতিবেশী ছিল এবং একে অপরকে কষ্ট দিয়েছে ও যুলুম করেছে। তাদের মামলাই সর্ব প্রথম বিচারের জন্য পেশ করা হবে।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url