মা’আরেফুল কোরআন - ২৫ || সূরা আল-বাকারাহ ৬০-৬১নং আয়াতের অর্থ ও তাফসীর ||





بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৬০


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৬০

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

 وَ اِذِ اسۡتَسۡقٰی مُوۡسٰی لِقَوۡمِهٖ فَقُلۡنَا اضۡرِبۡ بِّعَصَاکَ الۡحَجَرَ ؕ فَانۡفَجَرَتۡ مِنۡهُ اثۡنَتَاعَشۡرَۃَ عَیۡنًا ؕ قَدۡ عَلِمَ کُلُّ اُنَاسٍ مَّشۡرَبَهُمۡ ؕ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا مِنۡ رِّزۡقِ اللّٰهِ وَ لَا تَعۡثَوۡا فِی الۡاَرۡضِ مُفۡسِدِیۡنَ

সূরা আল-বাকারাহ ৬০নং আয়াতের অর্থ

(৬০) আর মূসা যখন নিজ জাতির জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, স্বীয় যষ্টির দ্বারা আঘাত কর পাথরের উপরে। অতঃপর তা থেকে প্রবাহিত হয়ে এল বারটি প্রস্রবণ । তাদের সব গোত্রই চিনে নিল নিজ নিজ ঘাট। আল্লাহর দেয়া রিযিক খাও, পান কর আর দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে বেড়িও না ।

সূরা আল-বাকারাহ ৬০নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

আর (সে সময়টির কথা স্মরণ কর,) যখন হযরত মূসা (আ) নিজ সম্প্রদায়ের জন্য পানির দোয়া করেছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে আমি (মূসা-কে) হুকুম করলাম যে, (অমুক) পাথরের ওপর লাঠি দ্বারা আঘাত কর (তাহলেই তা থেকে পানি নিঃসৃত হয়ে আসবে)। বস্তুত (লাঠির আঘাতের সাথে সাথে) তৎক্ষণাৎ বারটি প্রস্রবণ ফুঁড়ে বেরিয়ে পড়ল আর (বনী-ইসরাঈলরা যেহেতু বারটি গোত্রে বিভক্ত ছিল কাজেই প্রত্যেকে) নিজ নিজ পানি পান করার স্থান চিনে নিল এবং আমি এ উপদেশ দিলাম যে, (খাবার জিনিস) খাও এবং (পান করার জিনিস) পান কর। আল্লাহ্ প্রদত্ত আহার্য (পরিমিত) এবং সীমালঙ্ঘন করে দুনিয়ার বুকে অশান্তি ও কলহ সৃষ্টি করো না।

জ্ঞাতব্যঃ এ ঘটনাটিও তীহ্ প্রান্তরেই ঘটেছিল। সেখানে তৃষ্ণা পেলে পর তারা পানি চাইল। হযরত মূসা (আ)-এর দোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাকের অপার মহিমায় নিছক একটি লাঠির আঘাতে একটি নির্দিষ্ট পাথর থেকে বারটি প্রস্রবণ প্রবাহিত হয়ে পড়ল। ইহুদীদের বারটি গোত্র নিম্নরূপ ছিল—হযরত ইয়াকুব (আ)-এর বার পুত্র ছিলেন। প্রত্যেকের সন্তান-সন্ততিরই একেকটি গোত্র বা বংশ ছিল এবং সামাজিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রত্যেককে পৃথক পৃথক রাখা হতো। সব গোত্রের দলপতিও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। এজন্য প্রস্রবণও বারটি’ বের হলো। এখানে ‘খাও’ অর্থ মান্না ও সালওয়া খাওয়া এবং ‘পান কর’ শব্দে প্রস্রবণের পানি পান করাই বোঝানো হয়েছে।

এ ধরনের অলৌকিক ঘটনাবলী অস্বীকার করা নিতান্তই ভ্রান্তিমূলক ব্যাপার। যখন আল্লাহ্ পাক কোন কোন পাথরের মধ্যে কল্পনাতীত ও সাধারণ বুদ্ধি-বিবেক বহির্ভূতভাবে এমন গুণও রেখেছেন, যা লোহাকে আকর্ষণ করতে পারে, তখন পাথরের মধ্যস্থিত ভূমির অংশ থেকে পানি আকর্ষণের গুণ সৃষ্টি করে তা থেকে প্রস্রবণ প্রবাহিত করা তাঁর পক্ষে মোটেও অসম্ভব নয়।

এ বর্ণনার দ্বারা বর্তমান কালের প্রজ্ঞাবান ও বিদগ্ধ মহলের শিক্ষা গ্রহণ করা ও উপকৃত হওয়া উচিত। আবার এ দৃষ্টান্তও নিছক স্থূলবুদ্ধি লোকদের জন্য নতুবা পাথরের অংশগুলো থেকেও যদি পানি বের হয়, তাইবা কেন অসম্ভব হবে? যেসব বিজ্ঞজন এ ধরনের ঘটনা অসম্ভব বলে মনে করেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে অসম্ভবের মর্মই অনুধাবন করতে পারেন নি।  

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়
উল্লিখিত আয়াতে বলা হয়েছে যে, হযরত মূসা (আ) নিজ সম্প্রদায়ের প্রয়োজনে পানির জন্য দোয়া করলে আল্লাহ্ পাক পানির ব্যবস্থা করে দিলেন। পাথরের উপর লাঠির আঘাতের সাথে সাথে প্রস্রবণ প্রবাহিত হয়ে পড়ল। এতে বোঝা গেল যে, ইস্তিসকা (পানির জন্য প্রার্থনা)-এর মূল হলো দোয়া। মূসা (আ)-এর শরীয়তেও বিষয়টিকে শুধু দোয়াতেই সীমিত রাখা হয়েছে। যেমন, ইমাম আজম আবূ হানীফা (র) বলেন যে, ইস্তিসকার মূল হলো পানির জন্য দোয়া করা। এ দোয়া কোন কোন সময়ে ইস্তিসকার নামাযের আকারেও করা হয়েছে। যেমন, ইস্তিসকার নামাযের উদ্দেশ্যে হুযূর (সা)-এর ঈদগাহে তশরীফ নেওয়া এবং সেখানে নামায, খুতবা ও দোয়া করার কথা বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রয়েছে। আবার কখনও নামায বাদ দিয়ে শুধু বাহ্যিক অর্থে দোয়া করেই ক্ষান্ত করেছেন। যেমন, বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, হুযূর (সা) জুমার খুতবায় পানির জন্য দোয়া করেন—ফলে আল্লাহ্ পাক বৃষ্টি বর্ষণ করেন।

একথা সৰ্ববাদীসম্মত যে, ইস্তিসকা নামাযের আকারে হোক বা দোয়ার রূপে হোক, তা ক্রিয়াশীল ও গুরুত্ববহ হওয়ার জন্য পাপ থেকে তওবা নিজের দীনতা-হীনতা ও দাসত্বসুলভ আচরণের অভিব্যক্তি একান্ত আবশ্যক। পাপে অটল এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় অনড় থেকে দোয়া করলে তা ক্রিয়াশীল হবে বলে আশা করার অধিকার কারো নেই।

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ৬১

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَإِذْ قُلْتُمْ يَمُوسَى لَنْ نَصْبِرَ عَلَى طَعَامٍ وَاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجُ بعْلِهَا وَقِثَّابِهَا وَفُوْمِهَا وَعَدَاسِهَا لَنَا مِمَّا تُنبت الأرم وَبَصَلِهَا، قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ ادْنى بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ اهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُمْ مَا سَالْتُمْ ، وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ ، وَبَاءُ وَبِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِايَتِ اللهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ذلِكَ بِمَا عَصَوا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ )

সূরা আল-বাকারাহ ৬১নং আয়াতের অর্থ

(৬১) আর তোমরা যখন বললে, হে মুসা, আমরা একই ধরনের খাদ্যদ্রব্যে কখনও ধৈর্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্য এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন, যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারি, কাঁকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হলো লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এজন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি-বিধান মানত না এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান, সীমালঙ্ঘনকারী।

তফসীরের সার-সংক্ষেপ

আর (সে সময়টির কথা স্মরণ কর,) যখন তোমরা (এরূপ) বললে, হে মূসা! (প্রতি দিন) একই খাবার (অর্থাৎ মান্না-সালওয়া) আমরা কখনো খেতে থাকব না। আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট দোয়া করুন, যেন তিনি এমন বস্তু (খাবার হিসাবে) সৃষ্টি করে দেন, যা ভূমি থেকে উৎপন্ন হয়—শাকসব্জি, কাঁকড়ী, গম, মসুরের ডাল, পেঁয়াজ-রসুন প্রভৃতি (যাই হোক না কেন) । তিনি (অর্থাৎ আল্লাহ্) বললেন, তোমরা কি উৎকৃষ্ট বস্তু-সামগ্রী বদলিয়ে নিকৃষ্ট জিনিস গ্রহণ করতে চাও ? (বেশ যদি না-ই মান) তবে কোন নগরীতে (গিয়ে) অবতরণ কর, (সেখানে) নিশ্চয়ই তোমরা এসব জিনিস পাবে যার জন্য আবেদন করছ। এবং (এ ধরনের পর্যায়ক্রমিক ধৃষ্টতার দরুন এককালে) তাদের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা (ক্ষতচিহ্নের মত) স্থায়ী হলো। (অর্থাৎ অপরের দৃষ্টিতে তাদের কোন মর্যাদাই রইল না।) এবং (তাদের দীনতা ও হীনতা) (অর্থাৎ তাদের স্বভাব-প্রকৃতিতে উচ্চাশা ও মহৎ সংকল্প গুণ বিদ্যমান রইল না)। বস্তুত তারা আল্লাহ্ রোষ ও গযবের যোগ্য হয়ে পড়ল। আর এ (লাঞ্ছনা ও রোষ) এজন্য (হলো) যে, তারা আল্লাহর বিধি-বিধানের প্রতি কুফরী করেছিল এবং নবীদের হত্যা করেছিল। এ হত্যা তাদের দৃষ্টিতেও ছিল অন্যায়। এ ( লাঞ্ছনা ও রোষ) এ কারণেও হলো যে, তারা আনুগত্য প্রকাশ করত না এবং আনুগত্যের সীমালঙ্ঘন করে যাচ্ছিল।

জ্ঞাতব্যঃ এ ঘটনাও তীহ্ উপত্যকাসংশ্লিষ্ট ঘটনাই। মান্না ও সালওয়ার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েই তারা ওসব সব্জি ও শস্যের জন্য আবেদন করল। এ প্রান্তরের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি শহর ছিল। সেখানে গিয়ে চাষাবাদ করে উৎপন্ন ফসলাদি ভোগ করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

তাদের লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মধ্যে এটাও একটা যে, কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য ইহুদীদের থেকে রাজ্য ছিনিয়ে নেওয়া হলো। অবশ্য কিয়ামতের অব্যবহিত পূর্বে সর্বমোট চল্লিশ দিনের জন্য নিছক লুটেরা দলের ন্যায় অনিয়মিত ও আইন-শৃঙ্খলা বিবর্জিত ইহুদী দাজ্জালের কিঞ্চিৎ ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। একে কোন বুদ্ধিমান ও বিবেকবানই রাজ্য বলতে পারবে না। আল্লাহ্ পাক হযরত মূসা (আ)-এর মাধ্যমে পূর্বেই তাদেরকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, যদি নির্দেশ অমান্য কর, তবে চিরকাল তোমরা অন্য জাতির দ্বারা শাসিত হতে থাকবে। যেমন সূরা আ’রাফে বলা হয়েছেঃ

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ يَسُومُهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ

এবং সে সময়টি স্মরণ করুন, যখন আপনার পালনকর্তা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয় তিনি ইহুদীদের উপর কিয়ামত পর্যন্ত এমন শাসক প্রেরণ (নিয়োগ) করতে থাকবেন, যারা তাদের প্রতি কঠিন শাস্তি পৌছাতে থাকবে।

বস্তুত বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্রের মর্যাদাও আমেরিকা ও বৃটেনের গোলাম বৈ আর কিছু নয় । তা ছাড়াও বহু নবী বিভিন্ন সময়ে ইহুদীদের হাতে নিহত হয়েছেন—যা নিতান্ত অন্যায় বলে তারা নিজেরাও মনে মনে উপলব্ধি করত, কিন্তু প্রতিহিংসা ও হঠকারিতা তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছিল।


আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়
ইহুদীদের চিরস্থায়ী লাঞ্ছনার অর্থ, বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্রের ফলে উদ্ভূত সন্দেহ ও তার উত্তরঃ উল্লিখিত আয়াতসমূহে ইহুদীদের শাস্তি, ইহকালে চিরস্থায়ী লাঞ্ছনা-গঞ্জনা এবং ইহকাল ও পরকালে খোদায়ী গযব ও রোষের বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। বিশিষ্ট তফসীরকারগণ, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনের বর্ণনানুসারে ওদের স্থায়ী লাঞ্ছনা-গঞ্জনার প্রকৃত অর্থ, কোরআনের প্রখ্যাত ভাষ্যকার ইবনে কাসীরের ভাষায়ঃ

 لَا يَزَالُونَ مُسْتَذَلِّينَ، مَنْ وَجَدَهُمُ اسْتَذَلَّهُمْ وَأَهَانَهُمْ وَضَرَبَ عَلَيْهِمُ الصَّغَارَ

অর্থাৎ তারা যত ধন-সম্পদের অধিকারীই হোক, বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে তুচ্ছ ও নগণ্য বলে বিবেচিত হবে। যার সংস্পর্শে আসবে সে-ই তাদেরকে অপমানিত করবে এবং তাদেরকে দাসত্বের শৃঙ্খলে জড়িয়ে রাখবে।

বিশিষ্ট তফসীরকার ইমাম যাহ্হাকের ভাষায় এ লাঞ্ছনা-অবমাননার অর্থঃ هم أهل القبالات يعني الجزية অর্থাৎ ইহুদীগণ সর্বদা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকবে। 

একই মর্মে সূরা ’আলে-ইমরানের’ এক আয়াতে রয়েছেঃ

ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوا إِلَّا بِحَبْلٍ مِنَ اللَّهِ وَحَبْلٍ مِنَ النَّاسِ

অর্থাৎ আল্লাহপ্রদত্ত ও মানবপ্রদত্ত মাধ্যম ব্যতীত তারা যেখানে যাবে সেখানেই তাদের জন্য লাঞ্ছনা ও অবমাননা পুঞ্জীভূত হয়ে থাকবে। আল্লাহপ্রদত্ত ও মানবপ্রদত্ত মাধ্যমের অর্থ এই যে, যাদেরকে আল্লাহ্ পাক নিজের বিধান অনুসারে আশ্রয় ও অভয় দিয়েছেন। যেমন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালকগণ বা রমণীকুল বা এমন সাধক ও উপাসক যে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় না, তারা নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর মানবপ্রদত্ত মাধ্যম অর্থ শান্তিচুক্তি যার একটি রূপ এও হতে পারে যে, মুসলমানদের সাথে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে বা অমুসলিম সংখ্যালঘু হিসাবে জিযিয়া কর প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে তাদের দেশে বসবাসের সুযোগ লাভ করবে। কিন্তু কোরআনের আয়াতে مِنَ النَّاسِ বলা হয়েছে مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ বলা হয়নি। সুতরাং এমন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, অন্য অমুসলিমদের সার্থে শান্তিচুক্তির মাধ্যমে তাদের আশ্রয়াধীন হয়ে সাময়িক শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

সারকথা, ইহুদীগণ উপরিউক্ত দু’অবস্থা ব্যতীত সর্বত্র ও সর্বদাই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে। (১) আল্লাহপ্রদত্ত ও অনুমোদিত আশ্রয়ের মাধ্যমে, যার ফলে তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান-সন্ততি, নারী প্রভৃতি এই লাঞ্ছনা ও অবমাননা থেকে অব্যাহতি পাবে। (২) কিংবা শান্তিচুক্তির মাধ্যমে নিজেদেরকে এ অবমাননা থেকে মুক্ত রাখতে পারে। এ চুক্তি মুসলমানদের সাথেও হতে পারে কিংবা অন্যান্য অমুসলিম জাতির সাথেও শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে তাদের আশ্রয়াধীন হয়ে তাদের সাহায্যে এ গঞ্জনা ও অবমাননা থেকে রক্ষা পেতে পারে।

এমনিভাবে সূরা ’আলে-ইমরানে’র আয়াত দ্বারা সূরা বাকারাহ্ আয়াতের বিশদ বিশ্লেষণ হয়ে গেল। অধুনা ফিলিস্তীনে ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে মুসলমানদের মধ্যে যে সন্দেহের অবতারণা হয়েছে, এর দ্বারা তাও দূরীভূত হয়ে যায়। তা এই যে, কোরআনের আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, ইহুদীদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কখনও সম্ভব হবে না। অথচ বাস্তবে দেখা যায়, ফিলিস্তীনে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। উত্তর সুস্পষ্ট—কেননা ফিলিস্তীনে ইহুদীদের বর্তমান রাষ্ট্রের গূঢ় তত্ত্ব সম্পর্কে যারা সম্যক অবগত, তারা ভালভাবেই জানেন যে, এ রাষ্ট্র প্রকৃত প্রস্তাবে ইসরাঈলের নয়, বরং আমেরিকা ও বৃটেনের এক ঘাঁটি ছাড়া অন্য কিছু নয়। এ রাষ্ট্র নিজস্ব সম্পদ ও শক্তির উপর নির্ভর করে এক মাসও টিকে থাকতে পারবে কিনা সন্দেহ। পাশ্চাত্যের খৃস্টান শক্তি ইসলামী বিশ্বকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তাদের মাঝখানে ইসরাঈল নাম দিয়ে একটি সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছে। এ রাষ্ট্র আমেরিকা-ইউরোপীয়দের দৃষ্টিতে একটা অনুগত ও আজ্ঞাবহ ষড়যন্ত্র কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোন গুরুত্ব বহন করে না। এ যেন কোরআনের বাণী بِحَبْلٍ مِنَ النَّاسِ এরই বাস্তব রূপ। পাশ্চাত্য শক্তিবলয়, বিশেষ করে আমেরিকার সাথে নানা ধরনের প্রকাশ্যে ও গোপন চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে তাদের পক্ষপুষ্ট ও আশ্রিত হয়ে নিছক ক্রীড়নকরূপে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তাও অত্যন্ত লাঞ্ছনা ও অবমাননার ভিতর দিয়ে। সুতরাং বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দরুন কোরআনের কোন আয়াত সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহেরও অবকাশ সৃষ্টি হতে পারে না। এছাড়া এক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, ইহুদী, খৃস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে ইহুদীরাই সর্বপ্রাচীন জাতি। তাদের ধর্ম, তাদের সভ্যতা ও কৃষ্টি সর্বাপেক্ষা পুরাতন। সারা বিশ্বে ফিলিস্তীনের এক ক্ষুদ্র ভূ-ভাগে কোন প্রকারে তাদের অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত হয়েও থাকে, তবু এটা বিশাল বিশ্ব মানচিত্রে একটি ক্ষুদ্র বিন্দুর চাইতে অধিক মর্যাদার দাবি রাখে না। অপরপক্ষে খৃস্টান রাষ্ট্রসমূহ মুসলমানদের পতন-যুগ সত্ত্বেও তাদের রাষ্ট্রসমূহ এবং অন্যান্য পৌত্তলিক ও বিধর্মীদের রাষ্ট্রসমূহ যা বিশ্বের বিভিন্ন ভূখণ্ডে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত, সে তুলনায় ফিলিস্তীন এবং তাও আবার অর্ধাংশ— তদুপরি আমেরিকা ও বৃটেনের পক্ষপুষ্ট এবং আশ্রয়াধীন, এরূপভাবে যদি সেখানে ইসরাঈলদের কোন অধিকার ও শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠা হয়েও যায়, তবে এর দ্বারা গোটা ইহুদী সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহ্ পাকের পক্ষ হতে আরোপিত চিরস্থায়ী লাঞ্ছনার অবসান হয়েছে এরূপ ভাবতে পারা যায় কি?




***********************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url