//]]>

Win a Prize

Mohammadia Foundation https://www.mohammadiafoundationbd.com/2023/01/Duniar-dhuka.html

দুনিয়ার ধোকা ও প্রতারণার বয়ান || দুনিয়াকে ভালবাসলে আখেরাত দূরে চলে যায় ||



ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ আল-গাযযালী (রহঃ) ছিলেন একজন যুগস্রেষ্ট সাধক ও আলেম। ইসলামের খেদমতে তাঁর বয়ান এবং তাঁর লেখা কিতাবগুলোর মাঝে এমন একটি যাদুকরী প্রভাব লক্ষ্য করা যায় যা অন্য কারো লেখায় বা বয়ানে এতটা প্রভাব সৃষ্টি করে না। তাঁর লেখা কিতাবগুলো পড়ে অতি সহজেই প্রতিটি পাঠকের হৃদয় বিগলিত হয়ে উঠে। “দোযখ ও দোযখের ভয়াবহ শাস্তির বয়ান” শীর্ষক এই প্রবন্ধখানা ইমাম গাযযালীর লেখা “মুকাশাফাতুল কুলূব” বা “আত্মার আলোকমণি” কিতাবের অনুস্মরণে লেখা হয়েছে।



দুনিয়ার ধোকা ও প্রতারণার বয়ান


দুনিয়ার সমগ্র অবস্থা মাত্র দু'ভাগে বিভক্ত। হয় আরাম-আয়েশের অবস্থা হবে, না হয় কষ্ট-ক্লেশের অবস্থা হবে। তাই, এ দুনিয়া সমগ্র জগতবাসীর অনুকূল নয়। বরং, সে এক এক সময় এক এক রূপ ধারণ করে; একচ্ছত্র ক্ষমতা ও প্রজ্ঞার অধিকারী আল্লাহ্ তা'আলা যখন যেরূপ ইচ্ছা করেন, দুনিয়ার হালাত ও অবস্থায় তেমনি পরিবর্তন আসতে থাকে। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেনঃ

 اِلَّا مَنۡ رَّحِمَ رَبُّکَ ؕ وَ لِذٰلِکَ خَلَقَهُمۡ ؕ وَ تَمَّتۡ کَلِمَۃُ رَبِّکَ 

তারা সর্বদাই মতবিরোধ করতে থাকবে, কিন্তু যার প্রতি আপনার রব্বের অনুগ্রহ হয়।” (হুদঃ ১১৯)


কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, রুজি-রোজগারের ব্যাপারে তারতম্য ও বিভিন্নতা হয়। যেমন, কখনও অভাব কখনও সুখ ও প্রাচুর্য। এজন্যেই কর্তব্য হচ্ছে, যদি দুনিয়া অনুকূল থাকে, তাহলে পরম দয়ালু আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদত ও শোকর আদায় করা এবং নেক কাজে মগ্নতার মাধ্যমে সর্বক্ষণ তাঁর প্রতি মনোনিবেশ করা। কেননা, প্রকৃত প্রস্তাবে একমাত্র তিনিই হচ্ছেন সমস্ত দুঃখীর অভাব-অনটন দূরকারী ও আশ্রয়দাতা। সেই সঙ্গে সদা সতর্ক থাকা যে, দুনিয়ার ধোকা ও প্রতারণার শিকার যেন হতে না হয়। পবিত্র কুরআনের এ আয়াতখানি খুবই যথেষ্ট-

فَلَا تَغُرَّنَّکُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ٝ وَ لَا یَغُرَّنَّکُمۡ بِاللّٰهِ الۡغَرُوۡرُ

অতএব পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং ঐ প্রতারক (শয়তানও) যেন তোমাদেরকে প্রতারিত করতে না পারে।” (লুকমান : ৩৩)

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছেঃ

وَلَكِنَّكُمْ فَتَنْتُمْ أَنفُسَكُمْ وَتَرَبَّصْتُمْ وَارْتَبْتُمْ وَغَرَّتْكُمُ الْأَمَانِي


কিন্তু (তোমাদের অবস্থা ছিল যে,) তোমরা নিজেদেরকে গোমরাহীতে আবদ্ধ রেখেছিলে, আর তোমরা অপেক্ষা করছিলে এবং তোমরা সন্দীহান ছিলে, বরং তোমাদের অযথা আকাংখাসমূহ তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল।” (হাদীদ :১৪ )

প্রকৃত বুদ্ধিমান ব্যক্তি

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت والاحمقمَنِ اتَّبَعَ نَفْسُهُ هَوَاهَا وَتَمَنَّى عَلَى اللهِ الآمَانِي

“প্রকৃত বুদ্ধিমান সে, যে নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু- পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়; আমল-আখলাক ও ইবাদত-বন্দেগীতে নিমগ্ন হয়ে যায়। আর আহমক হচ্ছে সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে, অথচ আল্লাহর কাছে বহু কিছু পেতে আশাবাদী থাকে।”


জনৈক আরবী কবি বলেছেনঃ

• দুনিয়ার সামান্যতম সম্পদ ও উল্লাসে যে এর প্রশংসা করে, অচিরেই সে দুনিয়ার প্রতি অভাবের অভিযোগ আনবে ও ভর্ৎসনা করবে।
• দুনিয়া যখন কারও থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন সে আক্ষেপ করতে থাকে, কিন্তু এই দুনিয়াই যখন কারও লাভ হয়, তখন তার দুর্দশা ও ভোগান্তির শেষ থাকে না।

অপর একজন বলেছেনঃ

• আল্লাহর কসম, দুনিয়ার সমগ্র সম্পদও যদি কারও জন্যে চিরস্থায়ীভাবে হাসিল হয় এবং নিরঙ্কুশ স্বচ্ছল জীবন সে অতিবাহিত করে, তবুও কোন অভিজাত ভদ্রের পক্ষে (মোহে পড়ে) দুনিয়ার জন্য নিজকে সামান্যতম লাঞ্ছিত করা উচিত হবে না। অথচ এ দুনিয়া সম্পূর্ণ ক্ষণস্থায়ী ; আগামীকল্যই এর ধ্বংস অনিবার্য।


ইবনে বাস্সাম বলেনঃ

• ধিক দুনিয়ার উপর ও দুনিয়ামুখী জীবনের উপর; এ দুনিয়া সৃষ্টিই হয়েছে কেবল দুঃখ-দুর্দশা ও ভোগান্তির জন্যেই। কি বাদশাহ্ কি সাধারণ লোক কারও থেকে দুনিয়ার অস্বস্তি এক মুহূর্তের জন্যেই খতম হয় না।
• দুনিয়া এবং দুনিয়ার অবস্থার উপর বিস্মিত হই যে, সে নিজে মানুষের অথচ মানুষ তার প্রেমিক-পাগল।

অপর এক কবি বলেনঃ

দুনিয়াকে জিজ্ঞাসা কর- রোম-ইরানের সম্রাট (কায়সার ও কিস্রা), তাদের বিরাট বিশাল অট্টালিকা এবং এগুলো উপভোগকারীদের সাথে সে কি আচরণ করেছে? সেকি তাদেরকে বিক্ষিপ্ত ও পৃথক পৃথক করে দেয় নাই? বস্তুতঃ সে বোকা বুদ্ধিমান নির্বিশেষে সকলকেই ধ্বংস করে ছেড়েছে।

কথিত আছে, জনৈক মরুচারী বেদুঈন লোক একটি গোত্রের নিকট অবতরণ করে। গোত্রের লোকজন তাকে খাওয়া-দাওয়া করিয়েছে। অতঃপর লোকটি একটি তাঁবুর ছায়াতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। লোকেরা যখন তাঁবু সরিয়ে নিলো, তখন রৌদ্রের তাপে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সজাগ হয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করার সময় সে বলেছেঃ


• এতে কোন সন্দেহ নাই যে, দুনিয়া একটি গৃহের ছায়ার মত ; একদিন এ ছায়া অবশ্যই খতম হয়ে যাবে।
• সতর্ক হয়ে যাও, দুনিয়া অতি অল্প সময়ের আরামস্থল; যেখানে পথিক মুসাফির কিছুক্ষণ অবস্থান করে, অতঃপর তা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।

জনৈক জ্ঞানী বৃদ্ধ নিজ সঙ্গীকে বলেছিলেন, দ্বীনের আহবায়ক দ্বীনের প্রতি তোমাকে ডাক দিয়েছে, দুনিয়া তোমার ডাকে সাড়া দিতে অপারগতা ঘোষণা করে দিয়েছে; বড়ই অপরাধী হবে তুমি; এরপরেও যদি ঈমান ও একীনকে বরবাদ করে ফেল এবং নেক আমল না কর।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহকে ভয় করার জন্য ইলমই যথেষ্ট এবং প্রতারিত হয়ে খোদা- বিমুখ হওয়ার জন্য মুর্খতাই যথেষ্ট।

দুনিয়াকে ভালবাসলে আখেরাত দূরে চলে যায়

হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

من اَحَبَّ الدُّنْيَا وَسُرَّبِهَا ذَهَبَ خَوفُ الْآخِرَةِ مِنْ قَلْبِهِ

যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালবাসে এবং দুনিয়ার দ্বারা আনন্দিত হয়, তার অন্তর থেকে আখেরাতের ভয় দূর হয়ে যায়।


এক বুযুর্গ বলেছেন, দুনিয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে যে যতটুকু দুঃখ ও আক্ষেপ করবে, আখেরাতে সেই অনুপাতে তার হিসাব হবে। এমনিভাবে, যে ব্যক্তি দুনিয়ার সম্পদের উপর আনন্দ-উল্লাস করবে, আখেরাতে সেই অনুপাতেই তার হিসাব হবে। আজকাল স্পষ্ট হারাম বিষয় সম্পর্কেও তোমরা নির্দ্বিধায় বলে থাক, এগুলো ব্যবহারে কোন দোষ নাই; অথচ আদর্শ পূর্বপুরুষেরা হালাল বিষয়াবলীর ব্যাপারেও কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতেন, আর হারাম বস্তু তো তাদের দৃষ্টিতে হলাহল বিষতুল্য ছিল।

হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহঃ) অনেক সময় মিসআর ইবনে কেরামের নিম্নোক্ত পংক্তিগুলো আবৃত্তি করতেনঃ

نهارك يا مغرور نوم وغفلة
وليلك نوم والرَّدَى لَكَ لازم

ওহে ধোকা ও প্রতারণার শিকার। তোমার জীবনের দিনগুলোও নিদ্রা ও অবহেলায় কাটিয়ে দিচ্ছ, আর রাতের নিদ্রা তো স্বভাবতঃ রয়েছেই। এ-ই যদি হয় অবস্থা, তবে জেনে রাখ, তোমার ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।

يَغْرُكَ مَا يَفْنَى وَتَفْرَحُ بِالْمُنى
كَمَا غَرَّ بِاللَّذَّاتِ فِي النَّوْمِ حَالِمُ


ক্ষণস্থায়ী ও ক্ষয়িষ্ণু এই দুনিয়া তোমাকে ধোকায় ফেলে রেখেছে, কামনা- বাসনা ও কল্পনায় তুমি আনন্দে মেতে রয়েছ। তোমার এ আনন্দ-উল্লাস নিদ্রাভিভূত ব্যক্তির স্বপ্নের আনন্দের চেয়ে অধিক কিছু নয়।

شغلكَ فِيهَا سَوفَ يَكْرَه غِبه
كذلك في الدُّنْيَا تَعِيشُ البَهَائِمُ

খোদাবিমুখী উল্লাসময় এই মত্ততা অচিরেই তোমাকে ত্যাগ করতে হবে, তখন তোমার জন্য তা খুবই অসহনীয় হবে। বস্তুতঃ দুনিয়াতে চতুষ্পদ জন্তুরাই এরূপ জীবনাতিবাহন করে থাকে।




**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

CLICK n WIN

নটিফিকেশন ও নোটিশ এরিয়া