মা’আরেফুল কোরআন - ৩৬ || সূরা আল-বাকারাহ ১১৪-১১৫নং আয়াতের অর্থ ও তাফসীর ||






بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللّٰهِ اَنۡ یُّذۡکَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ وَ سَعٰی فِیۡ خَرَابِهَا ؕ اُولٰٓئِکَ مَا کَانَ لَهُمۡ اَنۡ یَّدۡخُلُوۡهَاۤ اِلَّا خَآئِفِیۡنَ ۬ؕ لَهُمۡ فِی الدُّنۡیَا خِزۡیٌ وَّ لَهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۱۴
وَ لِلّٰهِ الۡمَشۡرِقُ وَ الۡمَغۡرِبُ ٭ فَاَیۡنَمَا تُوَلُّوۡا فَثَمَّ وَجۡهُ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۱۱۵


সূরা আল-বাকারাহ ১১৪ ও ১১৫নং আয়াতের অর্থ

(১১৪) যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। (১১৫) পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।


সূরা আল-বাকারাহ ১১৪ ও ১১৫নং আয়াতের তাফসীর

কিবলা পরিবর্তন

(কেবলা পরিবর্তনের সময় ইহুদীরা বিভিন্ন ধরনের আপত্তি উত্থাপন করে স্বল্পজ্ঞান সম্পন্ন লোকদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করার কাজে লিপ্ত ছিল। এসব সন্দেহ অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করলে এর অনিবার্য পরিণতি ছিল রেসালতের অস্বীকৃতি এবং নামায বর্জন। নামায বর্জনের ফলে মসজিদ উজাড় হওয়া অবশ্যম্ভাবী। কাজেই ইহুদীরা যেন নিজেদের অপকর্মের মাধ্যমে নামায বর্জন এবং মসজিদসমূহকে [বিশেষ করে মসজিদে নববীকে] জনশূন্য করার ষড়যন্ত্রেও সচেষ্ট ছিল। এছাড়া অতীতে রোম সম্রাটদের মধ্যে যেহেতু কিছু সংখ্যক ছিলেন খৃস্ট ধর্মাবলম্বী,এ জন্য সাধারণভাবে রোম সম্রাটদের কার্যকলাপের প্রতি খৃস্টানরা কখনও অশ্রদ্ধা প্রকাশ করত না। এ রোম সম্রাটরাই অতীতে একবার সিরিয়ার ইহুদীদের বিরুদ্ধে অভিযান করেছিলেন। যুদ্ধ-বিগ্রহও হয়েছিল। তখন কোন কোন অর্বাচীনের হাতে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের অবমাননা ঘটে এবং এ অস্থিরতার কারণে মসজিদে নামায ও যিকর অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এভাবে খৃস্টানদের পূর্বপুরুষেরা নামায বর্জন ও মসজিদ উজাড় করার পথিকৃতরূপে চিহ্নিত হয়। এই অপকর্মের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ না করার কারণে খৃস্টানদেরও এ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বায়তুল মোকাদ্দাস অভিযানকারী এ সম্রাটের নাম ছিল তায়তোস। খৃষ্টানরা ইহুদীদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করত। উপরোক্ত ঘটনার মধ্যে ইহুদীদের অবমাননা নিহিত ছিল। এ কারণে খৃস্টানরা সম্রাট তায়তোসের অপকর্মের কাহিনীর নিন্দা করত না। এতদ্ব্যতীত মক্কা বিজয়ের পূর্বে রসূলুল্লাহ (সা) যখন মক্কায় প্রবেশ করে কা’বা গৃহের তওয়াফ ও নামায আদায় করার ইচ্ছা করলেন, তখন মুশরিকরা তাঁকে বাধা দান করে। ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি নামায আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। এভাবে মুশরিকরাও মসজিদে হারামে (কা’বাগৃহ) ইবাদতকারীর পথ রোধ করার কাজে সচেষ্ট হয়। এসব কারণে আল্লাহ তা’আলা ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করে এ কাজের দোষ প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় জালিম আর কে যে আল্লাহর মসজিদসমূহে (মক্কার মসজিদে-হারাম, মদীনার মসজিদে নববী এবং মসজিদে বায়তুল মোকাদ্দাস প্রভৃতি সব মসজিদই এর অন্তর্ভুক্ত) তাঁর নাম উচ্চারণ (ও ইবাদত) করতে বাধা দেয় এবং সে (মসজিদ)-গুলোকে জনশূন্য ( ও পরিত্যক্ত) করতে চেষ্টা করে ? তাদের পক্ষে কখনও নিঃসংকোচ (ও নির্ভীকচিত্তে) মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়। (বরং প্রবেশকালে ভয়-ভীতি, সম্মান ও শিষ্টাচার সহকারে প্রবেশ করাই বিধেয় ছিল। যখন নির্ভীকচিত্তে ভেতরে প্রবেশেরই অধিকার নেই, তখন মসজিদের অবমাননা করার অধিকার এল কোত্থেকে ? একেই বলা হয়েছে জুলুম। তাদের জন্য ইহকালে রয়েছে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।
(কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ আসার পর ইহুদীরা প্রশ্ন তোলে যে, মুসলমানরা এদিক থেকে সেদিকে কেন মুখ ফিরিয়ে নিল ? আল্লাহ তা’আলা এর উত্তরে বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম-সকল দিকই আল্লাহ্ (তবে তা তাঁর বাসস্থান নয়)।

(সব দিকের মালিক যখন তিনিই, তখন যে দিককে ইচ্ছা কেবলারূপে নির্ধারিত করতে পারেন। কারণ ইবাদতকারীদের মনের একাগ্রতা হাসিলের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট দিককে প্রতীক হিসাবে কেবলা নির্ণয় করা হয়। প্রত্যেক দিক থেকেই এ লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। সুতরাং আল্লাহ্ যে দিক সম্পর্কে নির্দেশ দেবেন, সে দিকই নির্ধারিত হবে। (নাউযুবিল্লাহ) উপাস্যের সত্তা যদি বিশেষ কোন দিকের মধ্যেই আবদ্ধ থাকত, তবে প্রয়োজনের খাতিরে সে দিককেই কেবলারূপে নির্ধারণ করা শোভন হতো; কিন্তু সে পবিত্র সত্তা কোন দিকের মধ্যেই আবদ্ধ নন। তাই, তোমরা যে দিকেই মুখ ফেরাও, সে দিকেই আল্লাহর পবিত্র সত্তা বিরাজমান। (কেননা) আল্লাহ্ স্বয়ং সকল দিক ও বস্তুকে বেষ্টন করে আছেন, যেরূপ বেষ্টন করা তাঁর পক্ষে উপযুক্ত। কিন্তু বেষ্টনকারী ও অসীম হওয়া সত্ত্বেও ইবাদতের দিক নির্দিষ্ট করার কারণ এই যে, (তিনি) সর্বজ্ঞ। (প্রত্যেক বিষয়ের উপযোগিতা সম্পর্কেই তিনি জ্ঞাত। কোন বিশেষ উপযোগিতার কারণেই তিনি কেবলা নির্ধারণের এ নির্দেশ দিয়েছেন)।

বয়ানুল-কোরআন থেকে উদ্ধৃতিঃ 
(১) মসজিদসমূহ জনশূন্য করার প্রয়াসী দলটি জগতে লাঞ্ছিত হয়েছে। এসব জাতির সবাই ইসলামী রাষ্ট্রের প্রজা ও করদাতায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া কাফির হওয়ার কারণে পরকালে যে শাস্তি ভোগ করবে, তা সবারই জানা। মসজিদ জনশূন্য করার অপচেষ্টার দরুন পরকালে এই শাস্তির কঠোরতা আরো বৃদ্ধি পাবে। পূর্ববর্তী আয়াতে এই তিনটি দলেরই সত্যপন্থী হওয়ার যে দাবি বর্ণিত হয়েছিল, এ ঘটনা কতক পরিমাণে সে দাবির অসারতাও প্রমাণ করেছে যে, এহেন অপকর্ম করে সত্যপন্থী হওয়ার দাবি করা নিঃসন্দেহে লজ্জাকর।

(২) কেবলা নির্দিষ্ট করার একটি রহস্য উদাহরণস্বরূপ পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। তাতে মুসলমানরা কা’বার পূজা করে বলে কোন কোন ইসলাম বিদ্বেষী যে অপবাদ রটনা করে, তা সম্পূর্ণ বিদূরিত হয়ে গেছে।

এর সারমর্ম এই যে, ইবাদত-উপাসনা আল্লাহ্ তা’আলারই করা হয়; কিন্তু উপাসনার সময় মনের একাগ্রতা অপরিহার্য। এ একাগ্রতার জন্য উপাসনাকারীদের একটা সমষ্টিগত ‘দিক’-এর গুরুত্বও প্রচুর। এর প্রমাণ চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা। দিকের ঐক্যের মাধ্যমে একাগ্রতা অর্জন করার উদ্দেশ্যেই শরীয়তে দিক নির্দিষ্টকরণ সিদ্ধ হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে আপত্তি উত্থাপনের মোটেই অবকাশ নেই।

নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে এতে যদি কেউ দাবি করে যে, আমরাও এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই সামনে মূর্তি স্থাপন করে উপসনা করে থাকি, তবে প্রথমত তাদের এ দাবির কারণে মুসলিমদের উপর উপরোক্ত আপত্তি নতুনভাবে আরোপিত হয় না; বরং তা খণ্ডিতই থাকে। এক্ষেত্রে এটাই আসল উদ্দেশ্য ।

দ্বিতীয়ত, মুসলমান ও কাফিরদের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে সবাই বুঝতে পারে যে, মুসলিমরা যে বিশেষ প্রতীকের পূজা আদৌ করে না এবং কাফিররা যে শুধু প্রতীকেরই পূজা করে—একথা সর্ববাদীসম্মত।

তৃতীয়ত, একধাপ নীচে নেমে বলা যায় যে, এ দাবি মেনে নিলেও এ নির্দিষ্টকরণের পক্ষে এমন শরীয়তের নির্দেশ উপস্থিত করা প্রয়োজন, যা রহিত হয়ে যায়নি। মুসলমান ছাড়া এরূপ শরীয়ত অন্য কারও কাছে নেই।

অনুবাদ ও ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তত্ত্ব বর্ণনায় ’প্রতীক হিসাবে’ শব্দটি যোগ করার কারণ এই যে, খোদায়ী বিধি-বিধানের রহস্য সম্পূর্ণ শেষ করে ও সীমাবদ্ধ করে হৃদয়ঙ্গম করা কারও পক্ষে সম্ভবপর নয়। সুতরাং এ নির্দেশের মধ্যেও হাজারো কারণ থাকতে পারে। দু’-একটি বুঝে ফেললেই তাতে সীমাবদ্ধতা এবং অন্যগুলোর অস্বীকৃতি প্রমাণিত হয় না।

‘সেদিকেই আল্লাহ্ বিরাজমান’, ’আল্লাহ বেষ্টনকারী’ এবং এই জাতীয় অন্যান্য বিষয়বস্তুর ব্যাপারে অধিক তথ্যানুসন্ধান সমীচীন নয়। কেননা, আল্লাহর সত্তা হৃদয়ঙ্গম করা যেমন কোন বান্দার পক্ষে সম্ভবপর নয়, তেমনি তাঁর সিফাতও মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির ঊর্ধ্বে। মোটামুটিভাবে এগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা দরকার। এর চাইতে বেশির জন্য মানুষ আদিষ্ট নয়।

আয়াতের আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়
আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণিত হয়েছে। প্রথম আয়াতটি একটি বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।

ঘটনাটি এই যে, ইসলাম-পূর্বকালে ইহুদীরা হযরত ইয়াহইয়া (আ)-কে হত্যা করলে খৃষ্টানরা তার প্রতিশোধ গ্রহণে বদ্ধপরিকর হয়। তারা ইরাকের একজন অগ্নি-উপাসক সম্রাট তায়তোসের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাঁর নেতৃত্বাধীনে সিরিয়ার ইহুদীদের উপর আক্রমণ চালায় তাদের হত্যা ও লুণ্ঠন করে, তওরাতের কপিসমূহ জ্বালিয়ে ফেলে, বায়তুল মোকাদ্দাসে আবর্জনা ও শূকর নিক্ষেপ করে, মসজিদের প্রাচীর ক্ষত-বিক্ষত করে সমগ্র শহরটিকে জনমানবহীন বিরানায় পরিণত করে। এতে ইহুদীদের শক্তি পদদলিত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মহানবী (সা)-এর আমল পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাস এমনিভাবে পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল।
ফারুকে-আযম হযরত উমর (রা)-এর খেলাফত আমলে যখন সিরিয়া ও ইরাক বিজিত হয়, তখন তাঁরই নির্দেশক্রমে বায়তুল মোকাদ্দাস পুনর্নির্মিত হয়। এরপর দীর্ঘকাল পর্যন্ত সমস্ত সিরিয়া ও বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের অধিকারে ছিল। অতঃপর বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের হস্তচ্যুত হয় এবং প্রায় অর্ধ-শতাব্দী কাল পর্যন্ত ইউরোপীয় খৃস্টানদের অধিকারে থাকে । অবশেষে হিজরী ষষ্ঠ শতকে সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী বায়তুল মোকাদ্দাস পুনর্দখল করেন।

তওরাতের কপিসমূহে অগ্নিসংযোগ করা, বায়তুল মোকাদ্দাসকে বিধ্বস্ত ও জনশূন্য করার মত রোমীয় খৃষ্টানদের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের প্রেক্ষিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।

এই বক্তব্য কোরআনের ভাষ্যকার হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসের। হযরত ইবনে যায়েদ প্রমুখ অপরাপর ভাষ্যকার শানে নুযূল বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, হোদায়বিয়ার ঘটনায় মক্কায় মুশরিকরা যখন রসূল (সা)-কে কা’বা প্রাঙ্গণে প্রবেশ এবং তাঁর তওয়াফে বাধা প্রদান করে, তখন এই আয়াত নাযিল হয়।

ইবনে জরীর প্রথম রেওয়ায়েতকে এবং ইবনে কাসীর দ্বিতীয় রেওয়ায়েতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

যাহোক, ভাষ্যকারদের মতে আয়াতের শানে নুযুল উপরোক্ত দু’টি ঘটনার মধ্য থেকেই কোন একটি হবে। কিন্তু বর্ণনায় সাধারণ শব্দের মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র আইনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে-যাতে নির্দেশটিকে বিশেষ করে এসব খৃস্টান ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করা না হয় ; বরং বিশ্বের সকল সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করা হয়। এ কারণেই আয়াতে বিশেষভাবে বায়তুল মোকাদ্দাসের নামোল্লেখের পরিবর্তে ’আল্লাহর মসজিদসমূহ’ বলে সব মসজিদের ক্ষেত্রেই নির্দেশটিকে ব্যাপক করে দেওয়া হয়েছে। এসব আয়াতের বিষয়বস্তু হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার কোন মসজিদে যিকর করতে বাধা দেয় অথবা এমন কোন কাজ করে, যার দরুন মসজিদ জনশূন্য হয়ে পড়ে, সে সবচাইতে বড় জালিম।

মসজিদ বিষয়ক কিছু মাসআলা

মসজিদসমূহের মাহাত্ম্যের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ভয়, সম্মান, বিনয় ও নম্রতা সহকারে প্রবেশ করা কর্তব্য—যেমন, কোন প্রভাবশালী সম্রাটের দরবারে প্রবেশ করার সময় করা হয়। এ আয়াত থেকে কতিপয় প্রয়োজনীয় মাসআলা এবং বিধানও প্রমাণিত হয়।
প্রথমত, শিষ্টতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সকল মসজিদ একই পর্যায়ভুক্ত। বায়তুল মোকাদ্দাস, মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর অবমাননা যেমন বড় জুলুম, তেমনি অন্যান্য মসজিদের বেলায়ও তা সমভাবে প্রয়োজ্য। তবে এই তিনটি মসজিদের বিশেষ মাহাত্ম্য ও সম্মান স্বতন্ত্রভাবে স্বীকৃত। মসজিদে-হারামে এক রাকাআত নামাযের সওয়াব একলক্ষ রাকাআতের নামাযের সমান এবং মসজিদে নববী ও বায়তুল মোকাদ্দাসের পঞ্চাশ হাজার রাকাআতের নামাযের সমান। এই তিন মসজিদে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্তর থেকে সফর করে সেখানে পৌঁছা বিরাট সওয়াব ও বরকতের বিষয়। কিন্তু অন্য কোন মসজিদে নামায পড়া উত্তম মনে করে দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে আসতে বারণ করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, মসজিদে যিকর ও নামাযে বাধা দেওয়ার যত পন্থা হতে পারে, সে সবগুলোই হারাম। তন্মধ্যে একটি পন্থা এই যে, মসজিদে গমন করতে অথবা সেখানে নামায ও তিলাওয়াত করতে পরিষ্কার ভাষায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান। দ্বিতীয় পন্থা এই যে, মসজিদে হট্টগোল করে অথবা আশপাশে গান-বাজনা করে মুসল্লীদের নামায ও যিকরে বিঘ্ন সৃষ্টি করা।

এমনিভাবে নামাযের সময়ে যখন মুসল্লীরা নফল নামায, তসবীহ, তিলাওয়াত ইত্যাদিতে নিয়োজিত থাকেন, তখন মসজিদে সরবে তিলাওয়াত ও যিকর করা এবং নামাযীদের নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টি করাও বাধা প্রদানেরই নামান্তর। এ কারণেই ফিকহবিদগণ একে না-জায়েয আখ্যা দিয়েছেন। তবে, মসজিদে যখন মুসল্লী না থাকে, তখন সরবে যিকর অথবা তিলাওয়াত করায় দোষ নেই।

এ থেকে আরও বোঝা যায় যে, যখন মুসল্লীরা নামায, তসবীহ ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকে, তখন মসজিদে নিজের জন্য অথবা কোন ধর্মীয় কাজের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করাও নিষিদ্ধ।

তৃতীয়ত, মসজিদ জনশূন্য করার জন্য সম্ভবপর যত পন্থা হতে পারে, সবই হারাম। খোলাখুলিভাবে মসজিদকে বিধ্বস্ত করা ও জনশূন্য করা যেমন এর অন্তর্ভুক্ত, তেমনিভাবে এমন কারণ সৃষ্টি করাও এর অন্তর্ভুক্ত, যার ফলে মসজিদ জনশূন্য হয়ে পড়ে। মসজিদ জনশূন্য হওয়ার অর্থ এই যে, সেখানে নামায পড়ার জন্য কেউ আসে না কিংবা নামাযীর সংখ্যা হ্রাস পায়। কেননা, প্রাচীর ও কারুকার্য দ্বারা প্রকৃতপক্ষে মসজিদ আবাদ হয় না; বরং তা আবাদ হয় আলাহর যিকরকারী মুসল্লীদের দ্বারা। তাই কোরআন শরীফে বলা হয়েছেঃ

إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ

অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে মসজিদ আবাদ হয় ঐসব লোক দ্বারা, যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ্ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। রসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন-কিয়ামত নিকটবর্তী হলে মুসলমানদের মসজিদসমূহ বাহ্যত আবাদ, কারুকার্যখচিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হবে জনশূন্য। এসব মসজিদে নামাযীর উপস্থিতি হ্রাস পাবে।

ভদ্রতা ও মানবতার ছয়টি কাজ

হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন—ভদ্রতা ও মানবতার কাজ ছয়টি। তিনটি মুকীম বা স্বগৃহে বসবাসকালীন ও তিনটি মুসাফির বা সফরকালীন। স্বগৃহে বসবাসকালীন তিনটি হচ্ছে এই-(১) কোরআন তিলাওয়াত করা, (২) মসজিদসমূহ আবাদ করা এবং (৩) বন্ধু-বান্ধবের এমন সংগঠন তৈরি করা, যারা আল্লাহ্ ও দীনের কাজে সাহায্য করে। পক্ষান্তরে সফরকালীন তিনটি হচ্ছে এই-(১) আপন পাথেয় থেকে দরিদ্র সঙ্গীদের জন্য ব্যয় করা, (২) সচ্চরিত্রতা প্রদর্শন করা এবং (৩) সফর সঙ্গীদের সাথে হাসি-খুশি, আমোদ-প্রমোদ ও প্রফুল্লচিত্ত হওয়া। তবে আমোদ-প্রমোদে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা শর্ত।

হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুর এ উক্তিতে মসজিদ আবাদ করার অর্থ, সেখানে বিনয় নম্রতা সহকারে উপস্থিত হওয়া এবং যিকর ও তিলাওয়াতে নিয়োজিত থাকা। পক্ষান্তরে মসজিদ জনশূন্য হওয়া অর্থ হচ্ছে সেখানে নামাযী না থাকা কিংবা কমে যাওয়া অথবা এমন কারণের সমাবেশ ঘটা, যদ্দ্বারা বিনয় ও নম্রতা বিঘ্নিত হয়।

যদি হোদায়বিয়ার ঘটনা এবং মসজিদে হারামে প্রবেশ ও মুশরিকদের বাধা প্রদান আয়াতের শানে নুযুল হয়, তবে এ আয়াত দ্বারা আরও বোঝা যায় যে, মসজিদ জনশূন্য হওয়ার অর্থ মসজিদকে বিধ্বস্ত করাই নয় বরং যে উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মিত হয় অর্থাৎ নামায ও আল্লাহর যিকর, সে উদ্দেশ্যে অর্জিত না হলে কিংবা কম হলেও মসজিদকে জনশূন্য বলা হবে।
-------------------------------------
দ্বিতীয় আয়াতে রসূলে করীম (সা) ও সাহাবায়ে কেরামকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে যে, মক্কার মুশরিকরা আপনাকে মক্কা ও বায়তুল্লাহ থেকে হিজরত করতে বাধ্য করেছে, মদীনায় পৌঁছার পর প্রথম দিকে ষোল-সতের মাস পর্যন্ত আপনাকে বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এতে আপনার কোন ক্ষতি হয়নি এবং এ ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ, আল্লাহর পবিত্র সত্তা কোন বিশেষ দিকে সীমাবদ্ধ নয়, তিনি সর্বত্রই বিরাজমান। পূর্ব পশ্চিম তাঁর কাছে সমান। নামাযের কেবলা কা’বা হোক কিংবা বায়তুল মোকাদ্দাস হোক-এতে কিছুই যায় আসে না। আল্লাহর নির্দেশ পালন উভয় জায়গায়ই সওয়াবের কারণ। 

কাজেই যখন বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করার নির্দেশ ছিল, তখন তাতেই সওয়াব ছিল এবং যখন কা’বার দিকে মুখ করার নির্দেশ দেওয়া হলো, তখন এতেই সওয়াব। আপনি মনক্ষুণ্ন হবেন না। বান্দা নির্দেশ পালন করলে আল্লাহর মনোযোগ উভয় অবস্থাতেই সমান।

কয়েক মাসের জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা সাব্যস্ত করার নির্দেশ দিয়ে কার্যক্ষেত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, কোন বিশেষ স্থান অথবা দিককে কেবলা সাব্যস্ত করার কারণ এই নয় যে, (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ পাক সেই স্থান অথবা দিকের মধ্যেই রয়েছেন, অন্যত্র নেই। বরং আল্লাহ্ তা’আলা সর্বত্র এবং সবদিক সমান মনোযোগ সহকারে তিনি বিদ্যমান। রসূলুল্লাহ্ (সা)-ও এ বিষয়টি নিজের বাণীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে কোন বিশেষ দিককে সারা বিশ্বের কেবলা সাব্যস্ত করার পেছনে অন্যান্য রহস্য ও উপযোগিতাও থাকতে পারে। কারণ আল্লাহর মনোযোগ যখন কোন বিশেষ দিক অথবা স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তখন নামায পড়ার ব্যাপারে দুই পন্থাই অবলম্বন করা সম্ভব। প্রথমত, প্রত্যেককেই যেদিকে ইচ্ছা সেদিকেই মুখ করে নামায পড়ার স্বাধীনতা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, সবার জন্য বিশেষ দিক নির্দিষ্ট করে দেওয়া। প্রথমাবস্থায় একটি বিশৃঙ্খল দৃশ্য সামনে ভেসে উঠবে। দশজন একত্রে নামায পড়লে প্রত্যেকের মুখ থাকবে পৃথক পৃথক দিকে এবং প্রত্যেকের কেবলা হবে পৃথক পৃথক। দ্বিতীয় অবস্থায় শৃঙ্খলা ও একতার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠবে। এসব রহস্যের কারণে সারা বিশ্বের কেবলা এক হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এখন তা বায়তুল মোকাদ্দাস হোক অথবা কা’বাগৃহে, উভয় স্থানই পবিত্র ও পুণ্যময়। প্রত্যেক জাতি ও প্রত্যেক যুগের উপযুক্ত বিধি-বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসকে কেবলা রাখা হয়েছে। এরপর হুযূর আকরাম (সা) ও সাহাবায়ে কেরামের ইচ্ছা অনুযায়ী এ নির্দেশ রহিত করে কা’বাকে সারা বিশ্বের কেবলা স্থির করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেনঃ

قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ .

অর্থাৎ—আমি লক্ষ্য করছি, কা’বাকে কেবলা বানিয়ে দেওয়ার আন্তরিক বাসনার কারণে আপনি বারবার আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে থাকেন যে, হয় তো ফেরেশতা নির্দেশ নিয়ে আসছেন। এ কারণে আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ফিরিয়ে দেব, যা আপনি কামনা করেন । এখন থেকে আপনি নামাযে থেকেই স্বীয় মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নিন। এ নির্দেশ বিশেষভাবে শুধু আপনার জন্যই নয়, বরং সমগ্র উম্মতকেও দেওয়া হচ্ছে যে, তোমরা —যেখানেই থাক, এমনকি বায়তুল মোকাদ্দাসের অভ্যন্তরে থাকলেও নামাযে মুখমণ্ডল মসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নেবে।

মোটকথা, وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ আয়াতটিতে কেবলামুখী হওয়ার পূর্ণস্বরূপ বর্ণনা করে দেওয়া হয়েছে যে, এর উদ্দেশ্য (নাউযুবিল্লাহ) বায়তুল্লাহ্ অথবা বায়তুল মোকাদ্দাসের পূজা করা নয় কিংবা এ দুটি স্থানের সাথে আল্লাহর পবিত্র সত্তাকে সীমিত করে নেওয়াও নয়। তাঁর সত্তা সমগ্র বিশ্বকে বেষ্টন করে রেখেছে এবং সর্বত্রই তাঁর মনোযোগ সমান। এরপরও বিভিন্ন রহস্যের কারণে বিশেষ স্থান অথবা দিককে কেবলা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
আয়াতের এই বিষয়বস্তুকে সুস্পষ্ট ও অন্তরে বদ্ধমূল করার উদ্দেশ্যেই সম্ভবত হুযূরে আকরাম (সা) ও সাহাবায়ে কেরামকে হিজরতের প্রথম দিকে ষোল-সতের মাস পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়ার আদেশ দেওয়া হয়। এভাবে কার্যত বলে দেওয়া হয় যে, আমার মনোযোগ সর্বত্র রয়েছে। নফল নামাযসমূহের এক পর্যায়ে এই নির্দেশ অব্যাহত রাখা হয়েছে। সফরে কোন ব্যক্তি উট, ঘোড়া ইত্যাদি যানবাহনে সওয়ার হয়ে পথ চললে তাকে তদবস্থায় ইশারায় নফল নামায পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার জন্য যানবাহন যেদিকে চলে সেদিকে মুখ করাই যথেষ্ট।

কোন কোন মুফাসসির فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ আয়াতকে এই নফল নামাযেরই বিধান বলে সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু স্মরণ রাখা দরকার যে, এই বিধান সে সমস্ত যানবাহনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যাতে সওয়ার হয়ে চলার সময় কেবলার দিকে মুখ করা কঠিন। পক্ষান্তরে যেসব যানবাহনে সওয়ার হলে কেবলার দিকে মুখ করা কঠিন নয়, যেমন রেলগাড়ী, সামুদ্রিক জাহাজ, উড়োজাহাজ উত্যাদিতে নফল নামাযেও কেবলার দিকেই মুখ করতে হবে। তবে নামাযরত অবস্থায় রেলগাড়ী অথবা জাহাজের যদি দিক পরিবর্তন হয়ে যায় এবং আরোহীর পক্ষে কেবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে সেই অবস্থাতেই নামায পূর্ণ করবে।

এমনিভাবে কেবলার দিক সম্পর্কে নামাযীর জানা না থাকলে, রাত্রির অন্ধকারে দিক নির্ণয় করা কঠিন হলে এবং বলে দেওয়ার লোক না থাকলে সেখানেও নামাযী অনুমান করে যেদিকেই মুখ করবে, সেদিকই তার কেবলা বলে গণ্য হবে। নামায আদায় করার পর যদি দিকটি ভ্রান্তও প্রমাণিত হয়, তবুও তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে— পুনরায় পড়তে হবে না।

আয়াতে এই বর্ণনায় হুযূর (সা)-এর আমল এবং উল্লিখিত খুঁটিনাটি মাসআলা দ্বারা কেবলামুখী হওয়া সম্পর্কিত শরীয়তের নির্দেশটির পূর্ণ স্বরূপ ফুটে উঠেছে।




**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url