মা’আরেফুল কোরআন - ৩৫ || সূরা আল-বাকারাহ ১০৮-১১৩নং আয়াতের অর্থ ও তাফসীর ||





بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১০৮-১১৩

আহলে কিতাবী (ইহুদী ও খ্রীষ্টান) দের অন্ধ মতবিরোধ


সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১০৮


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

 اَمۡ تُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ تَسۡـَٔلُوۡا رَسُوۡلَکُمۡ کَمَا سُئِلَ مُوۡسٰی مِنۡ قَبۡلُ ؕ وَ مَنۡ یَّتَبَدَّلِ الۡکُفۡرَ بِالۡاِیۡمَانِ فَقَدۡ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِیۡلِ ﴿۱۰۸

সূরা আল-বাকারাহ ১০৮ নং আয়াতের অর্থ

(১০৮) ইতিপূর্বে মূসা (আঃ) যেমন জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, (মুসলমানগন, ) তোমরাও কি তোমাদের রসূলকে তেমনি প্রশ্ন করতে চাও? যে কেউ ঈমানের পরিবর্তে কুফর গ্রহন করে, সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।

সূরা আল-বাকারাহ ১০৮ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

[কোন কোন ইহুদী হঠকারিতাবশত হুযূর (সা)-কে বলল, মূসা (আ)-এর নিকট তওরাত যেমন একযোগে নাযিল হয়েছিল, আপনিও তেমনি একযোগে কোরআন আনয়ন করুন। এ সম্পর্কে বলা হচ্ছে, হে ইহুদীগণ, তোমরা কি চাও যে, তোমাদের (সমসাময়িক) রসূলের নিকট (অন্যায়) আবদার পেশ করবে যেমন ইতিপূর্বে (তোমাদের পূর্বপুরুষদের পক্ষ থেকে) মূসা (আ)-এর নিকটও আবদার করা হয়েছিল? (উদাহরণত তারা আল্লাহ্‌কে চাক্ষুষ দেখার আবদার করেছিল। বস্তুত সেসব আবেদনের উদ্দেশ্য রসূল (সা)-কে জব্ধ করা এবং খোদায়ী বিধানের পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। এরূপ আচরণ নির্জলা কুফর বৈ নয়। আর] যে কেউ ঈমানের পরিবর্তে কুফরের কথাবার্তা বলে, সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।

‘অন্যায় আবদার’ বলার কারণ এই যে, প্রতিটি কাজেই আল্লাহ্ তা’আলার হেকমত ও উপযোগিতা নিহিত থাকে। তাতে পন্থা নির্দেশ করার কোন অধিকার বান্দার নেই যে, সে বলবে, এ কাজটি এভাবে করা হোক। বান্দার কর্তব্য হচ্ছেঃ

زبان تازه کردن باقرار توا * نینگیختن علت از کار تو
শায়খুল হিন্দ (র)-এর তরজমা অনুযায়ী এ আয়াতে ইহুদীদেরকে নয়—মুসলমানদের সম্বোধন করা হয়েছে অর্থাৎ মুসলমানদের হুঁশিয়ার করা হয়েছে যেন তারা রসূল (সা)-কে অন্যায় প্রশ্নবাণে জর্জরিত না করে।

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১০৯-১১০


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَدَّ کَثِیۡرٌ مِّنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ لَوۡ یَرُدُّوۡنَکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ اِیۡمَانِکُمۡ کُفَّارًا ۚۖ حَسَدًا مِّنۡ عِنۡدِ اَنۡفُسِهِمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمُ الۡحَقُّ ۚ فَاعۡفُوۡا وَ اصۡفَحُوۡا حَتّٰی یَاۡتِیَ اللّٰهُ بِاَمۡرِهٖ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۱۰۹
وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡهُ عِنۡدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۱۱۰

সূরা আল-বাকারাহ ১০৯-১১০ নং আয়াতের অর্থ

(১০৯) আহলে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফের বানিয়ে দেয়। তাদের কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর (তারা এটা চায়)। যাক তোমরা আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। (১১০) তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।

সূরা আল-বাকারাহ ১০৯-১১০ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

(কোন কোন ইহুদী দিবারাত্র বিভিন্ন পন্থায় বন্ধুত্ব ও শুভেচ্ছার ভঙ্গিতে মুসলমানদের ইসলাম থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করত। অকৃতকার্যতা সত্ত্বেও তারা এ প্রচেষ্টা থেকে বিরত হতো না। আল্লাহ্ তা’আলা এজন্য মুসলমানদের হুঁশিয়ার করে দেন যে) আহলে কিতাবদের (অর্থাৎ ইহুদীদের) অনেকেই মনে মনে চায় যে, ঈমান আনার পর তোমাদের আবার কাফির বানিয়ে দেয়। (তাদের এ মনোবাঞ্ছা তাদের প্রদর্শিত শুভেচ্ছার কারণে নয়; বরং শুধু প্রতিহিংসাবশত, যা (তোমাদের কোন বিষয় থেকে উদ্ভূত নয়, বরং) তাদের অন্তর থেকেই উদ্ভূত। (আর এমনও নয় যে, সত্য তাদের কাছে প্রকাশিত হয়নি, বরং) সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও (তাদের) এই অবস্থা। (এমতাবস্থায় মুসলমানদের ক্রোধান্বিত হওয়ার কথা। তাই আল্লাহ্ বলেন,) যাক (এখন) তোমরা ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, যে পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলা (এ ব্যাপারে) স্বীয় নির্দেশ (বিধান) প্রেরণ না করেন। (ইঙ্গিতে বলা হয়েছে যে, তাদের হঠকারিতার প্রতিকার আমি সত্বরই নিরাপত্তামূলক বিধান অর্থাৎ হত্যা ও জিযিয়ার মাধ্যমে করব। এতে স্বীয় দুর্বলতা ও প্রতিপক্ষের শক্তি-সামর্থ্য দেখে এ আইন প্রয়োগের ব্যাপারে মুসলমানদের মনে সংশয় দেখা দিতে পারত। তাই বলা হচ্ছে, তোমরা সংশয়াপন্ন হবে কেন ?) নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। তোমরা (শুধু) নামায প্রতিষ্ঠা করে যাও আর (যাদের ওপর যাকাত ফরয, তারা) যাকাত দিয়ে যাও। আর (যখন প্রতিশ্রুত আইন আসবে, তখন এসব সংকর্মের সাথে তাও যুক্ত করে নেবে। এরূপ মনে করবে না যে, জিহাদের আদেশ না আসা পর্যন্ত শুধু নামায-রোযা দ্বারা পুণ্যকর্ম হবে না। বরং তোমরা) নিজের জন্য পূর্বে যে সৎ কর্মই সঞ্চয় করবে, আল্লাহর কাছে (পৌছে) তা (প্রতিদানসহ পুরোপুরি) পাবে। কারণ, আল্লাহ্ তোমাদের যাবতীয় কর্মের প্রতি লক্ষ্য রাখছেন (তোমাদের বিন্দু পরিমাণ আমলও নষ্ট হবে না)।
(তখনকার অবস্থানুযায়ী ক্ষমার নির্দেশই ছিল বিধেয়। পরবর্তীকালে আল্লাহ্ স্বীয় প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেন এবং জিহাদের আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয়। অতঃপর ইহুদীদের প্রতিও সে আইন বলবৎ করা হয় এবং অপরাধের ক্রমানুপাতে দুষ্টুদের হত্যা, নির্বাসন, জিযিয়া ইত্যাদি শাস্তি দেওয়া হয়।)

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১১১-১১৩


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَ قَالُوۡا لَنۡ یَّدۡخُلَ الۡجَنَّۃَ اِلَّا مَنۡ کَانَ هُوۡدًا اَوۡ نَصٰرٰی ؕ تِلۡکَ اَمَانِیُّهُمۡ ؕ قُلۡ هَاتُوۡا بُرۡهَانَکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۱۱۱
بَلٰی ٭ مَنۡ اَسۡلَمَ وَجۡهَهٗ لِلّٰهِ وَ هُوَ مُحۡسِنٌ فَلَهٗۤ اَجۡرُهٗ عِنۡدَ رَبِّهٖ ۪ وَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۱۱۲
وَ قَالَتِ الۡیَهُوۡدُ لَیۡسَتِ النَّصٰرٰی عَلٰی شَیۡءٍ ۪ وَّ قَالَتِ النَّصٰرٰی لَیۡسَتِ الۡیَهُوۡدُ عَلٰی شَیۡءٍ ۙ وَّ هُمۡ یَتۡلُوۡنَ الۡکِتٰبَ ؕ کَذٰلِکَ قَالَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ مِثۡلَ قَوۡلِهِمۡ ۚ فَاللّٰهُ یَحۡکُمُ بَیۡنَهُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فِیۡمَا کَانُوۡا فِیۡهِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۱۱۳

সূরা আল-বাকারাহ ১১১-১১৩ নং আয়াতের অর্থ

(১১১) ওরা বলে, ইহুদী অথবা খ্রীস্টান ব্যতীত কেউ জান্নাতে যাবে না। এটা ওদের মনের বাসনা। বলে দিন, তোমরা সত্যবাদী হলে, প্রমাণ উপস্থিত কর। (১১২) হাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পন করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার বয়েছে। তাদের ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (১১৩) ইহুদীরা বলে, খ্রীস্টানরা কোন ভিত্তির উপরেই নয় এবং খ্রীস্টানরা বলে, ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপরেই নয়। অথচ ওরা সবাই কিতাব পাঠ করে! এমনিভাবে যারা মূর্খ, তারাও ওদের মতই উক্তি করে। অতএব, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছিল।

সূরা আল-বাকারাহ ১১১-১১৩ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

ইহুদী ও খৃস্টানরা বলে যে, বেহেশতে কখনও কেউ যেতে পারবে না; কিন্তু যারা ইহুদী (তাদের ব্যতীত) অথবা খৃস্টান (খৃস্টানদের ছাড়া অন্য কেউ যেতে পারবে না)! আল্লাহ্ তা’আলা তাদের উক্তি খণ্ডন করে বলেন, এগুলো তাদের কল্পনাবিলাস (প্রকৃতপক্ষে কিছুই নয়)। আপনি তাদের একথা বলে দিন, তোমরা (এ দাবিতে) সত্যবাদী হলে প্রমাণ উপস্থিত কর। (কিন্তু তারা কস্মিনকালেও পারবে না। কারণ এর কোন প্রমাণ নেই। এখন আমি এর বিপক্ষে প্রথমে দাবি করছি যে, অন্য লোকেরাও বেহেশতে যাবে। অতঃপর এর প্রমাণ উপস্থিত করছি যে, সকল আসমানী ধর্মের অনুসারীদের স্বীকৃত আমার আইন এই যে,) যে কোন ব্যক্তি স্বীয় মুখমণ্ডল আল্লাহর দিকে নত করে দেয় (অর্থাৎ বিশ্বাস ও কাজকর্মে আনুগত্য অবলম্বন করে) এবং (তৎসঙ্গে শুধু বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানই নয়, আন্তরিকভাবেও) সৎকর্ম করে, সে তার আনুগত্যের প্রতিদান তার প্রতিপালকের কাছে পৌঁছে পাবে। কিয়ামতের দিন তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা (সে দিন) চিন্তিতও হবে না। (কারণ, ফেরেশতারা তাদের সুসংবাদ শুনিয়ে নিশ্চিন্ত করে দেবেন)।
(এ যুক্তির সারমর্ম এই যে, যখন এ আইনটি সর্বজনস্বীকৃত, তখন শুধু দেখে নাও যে, আইন অনুযায়ী কারা জান্নাতে যেতে পারে? পূর্ববর্তী মনসূখ নির্দেশের ওপর আমল করাই যাদের সম্বল, তারা আনুগত্যশীল হতে পারে না। এ হিসাবে ইহুদী ও খৃস্টানরা আল্লাহর অনুগত নয়। বরং পরবর্তী নির্দেশ পালন করাই হবে আনুগত্য। এ দিক দিয়ে মুসলমানরাই অনুগত। কারণ তারা শরীয়তে-মুহাম্মদীকে কবূল করেছে। সুতরাং তারাই জান্নাতে প্রবেশকারীরূপে গণ্য হবে। 

‘আন্তরিকভাবে’ শর্তটি যুক্ত হওয়ায় মুনাফিকরা বাদ পড়ে গেল। কারণ, শরীয়তের পরিভাষায় তারা কাফিরদেরই অন্তর্ভুক্ত এবং জাহান্নামের উপযুক্ত। [একবার কয়েকজন ইহুদী ও কয়েকজন খৃস্টান একত্রিত হয়ে ধর্মীয় বিতর্কে প্রবৃত্ত হয়। ইহুদীরা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী খৃষ্ট ধর্মকে মিথ্যা বলে এবং হযরত ঈসা (আ)-এর নবুয়ত ও ইঞ্জীলকে অস্বীকার করতে থাকে। পক্ষান্তরে খৃস্টানরাও একগুঁয়েমির বশবর্তী হয়ে ইহুদী ধর্মকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে এবং মূসা (আ)-এর রিসালত ও তওরাতকে অস্বীকার করতে থাকে। আল্লাহ্ তা’আলা ঘটনাটি উদ্ধৃত করে তা খণ্ডন করার উদ্দেশ্যে বলেছেন] ইহুদীরা বলতে লাগল, খৃস্টানদের ধর্ম কোন ভিত্তির ওপর (প্রতিষ্ঠিত) নয় (অর্থাৎ সর্বৈব মিথ্যা)। তেমনিভাবে খৃস্টানরা বলতে লাগল, ইহুদীদের ধর্ম কোন ভিত্তির ওপর কায়েম নয় (অর্থাৎ সর্বৈব মিথ্যা)। অথচ তারা (উভয় পক্ষের) সবাই আসমানী গ্রন্থসমূহ পড়ে এবং পড়ায়। (অর্থাৎ ইহুদীরা তওরাত এবং খৃস্টানরা ইঞ্জীল গ্রন্থ পড়ে এবং চর্চা করে। উভয় গ্রন্থে উভয় পয়গম্বর ও উভয় গ্রন্থের সত্যায়ন বিদ্যমান রয়েছে। এটাই উভয় ধর্মের আসল ভিত্তি। অবশ্য মনসূখ হওয়ার ফলে বর্তমানে এতদুভয়ের একটিও পালনীয় নয়)।

(আহলে-কিতাবরা তো উপরোক্ত দাবি করতই, তাদের দেখাদেখি মুশরিকদের মনেও জোশ দেখা দিল।) তেমনিভাবে যারা নিরেট বিদ্যাহীন, তারাও আহলে-কিতাবদের মত একথাই বলতে লাগল (অর্থাৎ ইহুদী ও খৃস্টানদের ধর্ম ভিত্তিহীন, সত্যপন্থী একমাত্র আমরা)। অতএব (দুনিয়াতে প্রত্যেকেই আপন আপন কথা বলতে থাক) কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা তাদের মধ্যে ঐসব ব্যাপারে কার্যত ফয়সালা করে দেবেন, যাতে তারা বিরোধ করত (অর্থাৎ সত্যপন্থীদের জান্নাতে এবং অসত্যপন্থীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। “কার্যত ফয়সালা" বলার কারণ এই যে, নীতিগত ফয়সালা তো বিভিন্ন যুক্তি ও হাদীস-কোরআনের মাধ্যমে দুনিয়াতেও করা হয়েছে)।

সূরা আল-বাকারাহ ১১১-১১৩ নং আয়াতের  আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়

আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তা’আলা ইহুদী ও খৃস্টানদের পারস্পরিক মতবিরোধ উল্লেখ করে তাদের নির্বুদ্ধিতা ও মতবিরোধের কুফল বর্ণনা করেছেন। অতঃপর আসল সত্য উদ্ঘাটন করেছেন। এসব ঘটনায় মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হেদায়েত (পথনির্দেশ) নিহিত রয়েছে, যা পরে বর্ণিত হবে।
খৃস্টান ও ইহুদী- উভয় সম্প্রদায়ই ধর্মের প্রকৃত সত্যকেই উপেক্ষা করে ধর্মের নাম-ভিত্তিক জাতীয়তা গড়ে তুলেছিল এবং তারা প্রত্যেকেই স্বজাতিকে জান্নাতি ও আল্লাহর প্রিয়পাত্র বলে দাবি করত এবং তাদের ছাড়া জগতের সমস্ত জাতিকে জাহান্নামী ও পথভ্রষ্ট বলে বিশ্বাস করত। এই অযৌক্তিক মতবিরোধের ফলে মুশরিকরা একথা বলার সুযোগ পেল যে, খৃষ্টধর্ম ও ইহুদী ধর্ম মিথ্যা ও বানোয়াট এবং তাদের মূর্তিপূজাই একমাত্র সত্য ও বিশুদ্ধ ধর্ম। আল্লাহ্ তা’আলা উভয় সম্প্রদায়ের মূর্খতা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, এরা উভয় জাতিই জান্নাতে যাওয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে উদাসীন, তারা শুধু ধর্মের নাম-ভিত্তিক জাতীয়তার অনুসরণ করে। বস্তুত ইহুদী, খৃস্টান অথবা ইসলাম যে কোন ধর্মই হোক, সবগুলোর প্রাণ হচ্ছে দুটি বিষয়ঃ

এক- বান্দা মনে-প্রাণে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। তাঁর আনুগত্যকেই স্বীয় মত ও পথ মনে করবে। এ উদ্দেশ্যটি যে ধর্মে অর্জিত হয় তা-ই প্রকৃত ধর্ম। ধর্মের প্রকৃত স্বরূপকে পেছনে ফেলে ইহুদী অথবা খৃষ্টান জাতীয়তাবাদের ধ্বজা উত্তোলন করা ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতারই পরিচায়ক।

দুই- যদি কেউ মনে-প্রাণে আল্লাহ্ তা’আলার আনুগত্যের সংকল্প গ্রহণ করে; কিন্তু আনুগত্য ও ইবাদত নিজ খেয়াল-খুশিমত মনগড়া পন্থায় সম্পাদন করে, তবে তাও জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়, বরং এক্ষেত্রে আনুগত্য ও ইবাদতের সেই পন্থাই অবলম্বন করতে হবে, যা আল্লাহ্ তা’আলা রসূলের মাধ্যমে বর্ণনা ও নির্ধারণ করেছেন। 

প্রথম বিষয়টি… بَلى مَنْ أَسْلَمَ বাক্যাংশের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয় বিষয়টি وَهُوَ مُحْسِنٌ বাক্যাংশের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে জানা গেল যে, পারলৌকিক মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশের জন্য শুধু আনুগত্যের সংকল্পই যথেষ্ট নয়, বরং সৎকর্মও প্রয়োজন। কোরআন ও রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যশীল শিক্ষা ও পন্থাই সৎকর্ম।
আল্লাহর কাছে বংশগত ইহুদী, খৃস্টান ও মুসলমানের কোন মূল্য নেই ; গ্রহণীয় বিষয় হচ্ছে ঈমান ও সৎকর্মঃ 
ইহুদী হউক অথবা খৃস্টান কিংবা মুসলমান-যে কেউ উপরোক্ত মৌলিক বিষয়াদির মধ্য থেকে কোন একটি ছেড়ে দেয়, অতঃপর শুধু নামভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে নিজেকে জান্নাতের ইজারাদার মনে করে নেয়; সে আত্মপ্রবঞ্চনা বৈ কিছুই করে না। আসল সত্যের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এসব নামের ওপর ভরসা করে কেউ আল্লাহর নিকটবর্তী ও মকবুল হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তার মধ্যে ঈমান ও সৎকর্ম থাকে ।

ঈমানের মূলনীতি এক ও অভিন্ন

প্রত্যেক পয়গম্বরের শরীয়তেই ঈমানের মূলনীতি এক ও অভিন্ন। তবে সৎকর্মের আকার-আকৃতিতে পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে। তওরাতের যুগে যেসব কাজ-কর্ম মূসা (আ) তওরাতের শিক্ষার অনুরূপ ছিল, তাই ছিল সংকর্ম। তদ্রূপ ইন্‌জীলের যুগে নিশ্চিতরূপে তা-ই ছিল সৎকর্ম, যা হযরত ঈসা (আ) ও ইনজীলের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যশীল ছিল। এখন কোরআনের যুগে ঐসব কার্যকলাপই সৎকর্মরূপে অভিহিত হওয়ার যোগ্য, যা সর্বশেষ পয়গম্বর (সা)-এর বাণী ও তৎকর্তৃক আনীত গ্রন্থ কোরআন মজীদের হেদায়েতের অনুরূপ।

মোটকথা, ইহুদী ও খৃস্টানদের মতবিরোধ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলার ফয়সালা এই যে, উভয় সম্প্রদায় মূর্খতাসুলভ কথাবার্তা বলেছে; তাদের কেউই জান্নাতের ইজারাদার নয়। তাদের কারও ধর্ম ভিত্তিহীন ও বানোয়াট নয়; বরং উভয় ধর্মের নির্ভুল ভিত্তি রয়েছে। ভুল বোঝাবুঝির প্রকৃত কারণ হচ্ছে এই যে, তারা ধর্মের আসল প্রাণ অর্থাৎ বিশ্বাস, সৎকর্ম ও সত্য মতবাদকে বাদ দিয়ে বংশ অথবা দেশের ভিত্তিতে কোন সম্প্রদায়কে ইহুদী আর কোন সম্প্রদায়কে খৃস্টান নামে অভিহিত করেছে।
যারা ইহুদীদের বংশধর অথবা ইহুদী নগরীতে বাস করে অথবা আদমশুমারীতে নিজেকে ইহুদী বলে প্রকাশ করে, তাদেরকেই ইহুদী মনে করে নেওয়া হয়েছে। তেমনিভাবে খৃস্টানদের পরিচিতি ও সংখ্যা নিরূপণ করা হয়েছে। অথচ ঈমানের মূলনীতি ভঙ্গ করে এবং সৎকর্ম থেকে বিমুখ হয়ে কোন ইহুদীই ইহুদী এবং কোন খৃষ্টানই খৃস্টান থাকতে পারে না।

কোরআন মজীদে আহ্‌লে-কিতাবদের মতবিরোধ ও আল্লাহর ফয়সালা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের সতর্ক করা, যাতে তারাও ভুল বোঝাবুঝিতে লিপ্ত হয়ে এ কথা না বলে যে, আমরা পুরুষানুক্রমে মুসলমান, প্রত্যেক অফিস ও রেজিস্টারে আমাদের নাম মুসলমানদের কোটায় লিপিবদ্ধ এবং আমরা মুখেও নিজেদের মুসলমান বলি ; সুতরাং জান্নাত এবং নবী (সা)-এর মাধ্যমে মুসলমানদের সাথে ওয়াদাকৃত সকল পুরস্কারের যোগ্য হকদার আমরাই ।

মুসলমান হতে হলে যা প্রয়োজন

এই ফয়সালা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, শুধু দাবি করলে, মুসলমান নাম লিপিবদ্ধ করলে অথবা মুসলমানের ঔরসে কিংবা মুসলমানদের আবাসভূমিতে জন্মগ্রহণ করলেই প্রকৃত মুসলমান হয় না, বরং মুসলমান হওয়ার জন্য পরিপূর্ণরূপে ইসলাম গ্রহণ করা অপরিহার্য। ইসলামের অর্থ আত্মসমর্পণ। দ্বিতীয়-সৎকর্ম অর্থাৎ সুন্নাহ্ অনুযায়ী আমল করাও জরুরী।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, কোরআন মজীদের এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও অনেক মুসলমান উপরোক্ত ইহুদী ও খৃস্টানী ভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়েছে। তারা আল্লাহ্, রাসূল, পরকাল ও কিয়ামতের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে বংশগত মুসলমান হওয়াকেই যথেষ্ট মনে করতে শুরু করেছে। কোরআন ও হাদীসে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সাফল্য সম্পর্কে মুসলমানদের সাথে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে, তারা নিজেকে সেগুলোর যোগ্য হকদার মনে করে সেগুলোর পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা করছে। অতঃপর সেগুলো পূর্ণ হওয়ার লক্ষণ দেখতে না পেয়ে কোরআন ও হাদীসের অঙ্গীকার সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। তারা লক্ষ্য করে না যে, কোরআন নিছক বংশগত মুসলমানদের সাথে কোন অঙ্গীকার করেনি যতক্ষণ না তারা নিজেদের ইচ্ছাকে আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রসূল (সা)-এর ইচ্ছার অধীন করে দেয়। بَلى مَنْ أَسْلَمَ আয়াতের সারমর্ম তাই।
আজকাল সমগ্র বিশ্বের মুসলমান নানাবিধ বিপদাপদ ও সঙ্কটে নিমজ্জিত। অনেক অর্বাচীনের ধারণা—এ অবস্থার জন্য সম্ভবত আমাদের ইসলামই দায়ী। কিন্তু উপরোক্ত বর্ণনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, ইসলাম নয় বরং ইসলামকে পরিহার করাই এর জন্য দায়ী। আমরা ইসলামের শুধু নামটুকুই রেখেছি; আমাদের মধ্যে ইসলামের বিশ্বাস, চরিত্র, আমল ইত্যাদি কিছুই নেই। কবির ভাষায়- وضع مين تم نصارى تو تمدن ميں هنود (চালচলনে তোমরা খৃস্টান আর সংস্কৃতিতে হিন্দু)। 

এরপর ইসলাম ও মুসলমানের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণের জন্য অপেক্ষা করার অধিকার কি আমাদের থাকতে পারে ?

মুসলমানদের অবনতি এবং কাফিরদের উন্নতি কেন?

এখানে প্রশ্ন হয় যে, আমরা যাই হই ইসলামেরই নাম নিই এবং আল্লাহ্ তা’আলা ও রসূল (সা)-কেই স্মরণ করি। পক্ষান্তরে যেসব কাফির খোলাখুলিভাবে আল্লাহ ও রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং ইসলামের নাম মুখে উচ্চারণ করাও পছন্দ করে না, তারাই আজ বিশ্বের বুকে সব দিক দিয়ে উন্নত, তারাই বিশাল রাষ্ট্রের অধিকারী এবং তারাই বিশ্বের শিল্প ও ব্যবসায়ের ইজারাদার। দুষ্কর্মের শাস্তি হিসাবেই যদি আজ আমরা সর্বত্র লাঞ্ছিত ও পদদলিত, তবে কাফির ও পাপাচারীদের সাজা আরও বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু সামান্য চিন্তা করলেই এ প্রশ্নের অবসান হয়ে যায়।

প্রথমত, এর কারণ এই যে, মিত্র ও শত্রুর সাথে একই রকম ব্যবহার করা হয় না। মিত্রের দোষ পদে-পদে ধরা হয়। নিজ সন্তান ও শিষ্যকে সামান্য বিষয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু শত্রুর সাথে তেমন ব্যবহার করা হয় না। তাকে অবকাশ দেওয়া হয় এবং সময় আসলে হঠাৎ পাকড়াও করা হয়।
মুসলমান যতক্ষণ ঈমান ও ইসলামের নাম উচ্চারণ করে, আল্লাহর মাহাত্ম্য ও ভালবাসা দাবি করে, ততক্ষণ সে বন্ধুরই তালিকাভুক্ত। ফলে তার মন্দ আমলের সাজা সাধারণত দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয় যাতে পরকালের বোঝা হালকা হয়ে যায়। কাফিরের অবস্থা এর বিপরীত। সে বিদ্রোহী ও শত্রুর আইনের অধীন। দুনিয়াতে হালকা শাস্তি দিয়ে তার শাস্তির মাত্রা হ্রাস করা হয় না। তাকে পুরোপুরি শাস্তির মধ্যেই নিক্ষেপ করা হবে। "দুনিয়া মুমিনের জন্য বন্দীশালা, আর কাফিরের জন্য জান্নাত।"-মহানবী (সা)-এর এ উক্তির তাৎপর্যও তাই।

মুসলমানদের অবনতি ও অস্থিরতা এবং কাফিরদের উন্নতি ও প্রশান্তির মূলে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক কর্মেরই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এক কর্ম দ্বারা অন্য কর্মের বৈশিষ্ট্য অর্জিত হতে পারে না। উদাহরণত ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আর্থিক উন্নতি আর ওষুধপত্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শারীরিক সুস্থতা। এখন যদি কেউ দিবারাত্র ব্যবসায়ে মগ্ন থাকে, অসুস্থতা ও তার চিকিৎসার প্রতি মনোযোগ না দেয়, তবে শুধু ব্যবসায়ের কারণে সে রোগের কবল থেকে মুক্তি পেতে পারে না। এমনিভাবে কেউ ওষুধপত্র ব্যবহার করেই ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ আর্থিক উন্নতি লাভ করতে পারে না। কাফিরদের পার্থিব উন্নতি এবং আর্থিক প্রাচুর্য তাদের কুফরের ফলশ্রুতি নয়, যেমন মুসলমানদের দারিদ্র্য ও অস্থিরতা ইসলামের ফলশ্রুতি নয় বরং কাফিররা যখন পরকালের চিন্তা-ভাবনা পরিহার করে পরিপূর্ণভাবে জাগতিক অর্থ-সম্পদ ও আরাম-আয়েশের পেছনে আত্মনিয়োগ করছে ব্যবসা, শিল্প, কৃষি ও রাজনীতির লাভজনক পন্থা অবলম্বন করছে এবং ক্ষতিকর পন্থা থেকে বিরত থাকছে, তখনই তারা জগতে উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হচ্ছে। তারাও যদি আমাদেরই মত ধর্মের নাম নিয়ে বসে থাকত এবং জাগতিক উন্নতির লক্ষ্যে যথাবিহিত চেষ্টা-সাধনা না করত তবে তাদের কুফর তাদেরকে অর্থ-সম্পদ ও রাষ্ট্রের মালিক বানাতে পারত না। এমতাবস্থায় আমরা কিভাবে আশা করতে পারি যে, আমাদের (তথাকথিত নামের) ইসলাম আমাদের সামনে সকল বিজয়ের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবে ? ইসলাম ও ঈমান সঠিক মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও তার আসল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পারলৌকিক মুক্তি ও জান্নাতের অফুরন্ত শান্তি লাভ। উপযুক্ত চেষ্টা-সাধনা না করা হলে ইসলাম ও ঈমানের ফলশ্রুতিতে জগতে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশের প্রাচুর্য লাভ করা অবশ্যম্ভাবী নয় ।
একথা অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত যে, যে কোন দেশে যে কোন মুসলমান যদি ব্যবসা, শিল্প ও রাজনীতির বিশুদ্ধ মূলনীতি শিক্ষা করে তদনুযায়ী কাজ করে, তবে সেও কাফিরদের অর্জিত জাগতিক ফলাফল লাভে বঞ্চিত হয় না।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, জগতে আমাদের দারিদ্র্য, পরমুখাপেক্ষিতা, বিপদাপদ ও সঙ্কট ইসলামের কারণে নয়, বরং এগুলো একদিকে ইসলামী চরিত্র ও কর্মকাণ্ড পরিহার করার এবং অন্যদিকে ঐ সমস্ত তৎপরতা থেকে বিমুখতারই পরিণতি যদ্দ্বারা আর্থিক প্রাচুর্য অর্জিত হয়ে থাকে।

পরিতাপের বিষয়, ইউরোপীয়দের সাথে মেলামেশার সুবাদে আমরা তাদের কাছ থেকে শুধু কুফর, পরকালের প্রতি উদাসীনতা, নির্লজ্জতা, অসচ্চরিত্রতা প্রভৃতি ঠিকই শিখে নিয়েছি, কিন্তু তাদের ঐসব কর্মকাণ্ড শিক্ষা করিনি, যদ্দ্বারা তারা জগতে সাফল্য অর্জন করেছে। উদ্দেশ্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা ও সাধনা, লেনদেনে সততা, জগতে প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জনের লক্ষ্যে নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন ইত্যাদি প্রকৃতপক্ষে ইসলামেরই শিক্ষা ছিল, কিন্তু আমরা তাদের দেখেও তাদের অনুকরণ করার চেষ্টা করিনি। এমতাবস্থায় দোষ ইসলামের, না আমাদের?


মোটকথা, আলোচ্য আয়াতসমূহ থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ঈমান ও সৎকর্ম পূর্ণরূপে অবলম্বন না করলে শুধু বংশগতভাবে ইসলামের নাম ব্যবহারের দ্বারা কোন শুভ ফল আশা করা যায় না।




**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url