//]]>

Win a Prize

Mohammadia Foundation https://www.mohammadiafoundationbd.com/2023/01/yatim.html

এতীমের উপর জুলুম-অত্যাচারের পরিণাম || এতীমের মাল ভোগ করার ভয়াবহ শাস্তি ||


ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ আল-গাযযালী (রহঃ) ছিলেন একজন যুগস্রেষ্ট সাধক ও আলেম। ইসলামের খেদমতে তাঁর বয়ান এবং তাঁর লেখা কিতাবগুলোর মাঝে এমন একটি যাদুকরী প্রভাব লক্ষ্য করা যায় যা অন্য কারো লেখায় বা বয়ানে এতটা প্রভাব সৃষ্টি করে না। তাঁর লেখা কিতাবগুলো পড়ে অতি সহজেই প্রতিটি পাঠকের হৃদয় বিগলিত হয়ে উঠে। “দোযখ ও দোযখের ভয়াবহ শাস্তির বয়ান” শীর্ষক এই প্রবন্ধখানা ইমাম গাযযালীর লেখা “মুকাশাফাতুল কুলূব” বা “আত্মার আলোকমণি” কিতাবের অনুস্মরণে লেখা হয়েছে।



এতীমের উপর জুলুম-অত্যাচারের পরিণাম


এতীমের মাল-সামান হেফাজত, তাদের প্রতি সুন্দর সদ্ব্যবহার এবং তাদের উপর সর্ববিধ জুলুম-অত্যাচার থেকে বেঁচে থাকা সম্পর্কিত পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে।

এতীমের উপর জুলুম সম্পর্কে কোরআনের হুশিয়ারী

আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

اِنَّ الَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ الۡیَتٰمٰی ظُلۡمًا اِنَّمَا یَاۡکُلُوۡنَ فِیۡ بُطُوۡنِهِمۡ نَارًا ؕ وَ سَیَصۡلَوۡنَ سَعِیۡرًا 

নিশ্চয় যারা এতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের উদরে অগ্নি ছাড়া আর কিছুই পুরছে না, এবং অতি সত্বরই তারা জ্বলন্ত আগুণে প্রবেশ করবে।” (নিসা : ১০)

হযরত কাতাদাহ্ (রাযিঃ) উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, এ আয়াতটি গাফ্ফান গোত্রের জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। ব্যক্তিটি স্বীয় এতীম-নাবালেগ ভ্রাতুষ্পুত্রের অভিভাবক ছিল। অবশেষে তার সম্পত্তি থেকে সে নিজেও খেয়েছিল।

আয়াতে ব্যবহৃত ‘জুলমান'-এর অর্থ হলো, জুলুমবশতঃ কিংবা জুলুমরত অবস্থায়। কাজেই বিনা জুলুমে অর্থাৎ অভিভাবক যদি তার প্রাপ্য হক গ্রহণ করতে চায়, তবে এতে আপত্তির কিছু নাই। বিস্তারিত শর্ত— শরায়েত ফেক্বাহর কিতাবসমূহে উল্লেখিত হয়েছে।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ

كان فقيرا فلياكل بالمعروف ر من كان غنيّا فليستعيف

আর যে ব্যক্তি অভাবমুক্ত, সে নিজকে সম্পূর্ণ বিরত রাখবে, আর যে অভাবী, সে সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করবে।” (নিসা : ৬)

অর্থাৎ প্রয়োজন পরিমাণ ব্যবহার করলে বৈধ হবে। অথবা করজ নিতে পারে, কিংবা পারিশ্রমিক হিসাবে গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়া একেবারে নিরুপায় অবস্থায় উপনীত হলে গ্রহণ করবে এবং স্বচ্ছলতার পর তা ফেরৎ দিবে। গ্রহণের পর স্বচ্ছল অবস্থা না হলে তার জন্য তা হালাল।

আল্লাহ্ তা'আলা এতীমের হক ও অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে অত্যন্ত জোর তাকীদ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ

وَليَخْشَ الَّذِينَ لَوْ تَرَكُوا مِنْ خَلْفِهِمْ ذُرِّيَّةً ضِعَافًا خَافُواعَلَيْهِمْ فَلْيَتَّقُوا اللهَ وَلِيَقُولُوا قَوْلاً سَدِيداً .

আর এরূপ লোকদের ভয় করা উচিত যে, যদি তারা নিজেদের পশ্চাতে ছোট ছোট সন্তান ত্যাগ করে (মারা) যায়, তবে এদের জন্য তাদের (কেমন ) ভাবনা হবে। সুতরাং তাদের উচিত- আল্লাহকে ভয় করা।"(নিসা : ৯)
আশে-পাশের আয়াতদৃষ্টে উপরোক্ত আয়াতে এতীমের হক সংরক্ষণের উপরই তাকীদ করা হয়েছে বুঝা যায়। যদিও কেউ কেউ আয়াতখানিকে এক তৃতীয়াংশের অধিক ওসীয়তের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন।

যার অভিভাবকত্বে কোন এতীম রয়েছে, তার উচিত এতীমের সাথে সৎ ও সুন্দর ব্যবহার করা। এমনকি তাকে সম্বোধন করতেও যেন সুন্দরভাবে ডাকা হয়। নিজের সন্তানদেরকে যেভাবে আদর-সোহাগের সাথে ডাকা হয়, সেভাবে এতীমকেও যেন ডাকা হয়। নিজের সম্পদের হেফাযতের ব্যাপারে যেমন মনোযোগ ও সচেতনতা অবলম্বন করা হয়, এতীমের সম্পদের ব্যাপারেও ঠিক তেমনি করা চাই। এ ব্যাপারে যে যতটুকু নিষ্ঠা ও খাঁটিত্বের সাথে আমল করবে, কিয়ামতের দিন সে ঠিক সেই অনুপাতে আল্লাহ্ তা'আলার কাছে বদলা পাবে। খেয়াল রাখতে হবে- কেয়ামতের দিন তথা প্রতিদান দিবসের একমাত্র মালিক আল্লাহ্ তা'আলা। সুতরাং সেদিন প্রত্যেকেই নিজ নিজ কৃতকর্মের ফল পাবে।

কারও মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতির উপর যদি কেউ তত্ত্বাবধায়ক বা অভিভাবক নিযুক্ত হয় এবং সে এ দায়িত্বের উপর সময় অতিক্রম করে, অতঃপর অকস্মাৎ তার মৃত্যু এসে যায়, এমতাবস্থায় সে যদি অন্যের সম্পদ ও সন্তানের বেলায় সততা ও আমানতদারীর পরিচয় দিয়ে থাকে, তবে আল্লাহ্ তা'আলা এ ব্যক্তির সম্পদ ও সন্তানের হেফাযতের জন্য ঠিক তদ্রূপ ব্যবস্থা করে দিবেন, যেরূপ সে অন্যের বেলায় করেছিল। পক্ষান্তরে, যদি সে অন্যের ক্ষতি করে থাকে, তবে নিজ সম্পদ ও সন্তানের বেলায় সেই প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতে হবে। অতএব, বুদ্ধিমান লোকের উচিত, সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতির বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকা। দ্বীন ও আখেরাতের ক্ষেত্রে তো ক্ষতি রয়েছেই, এসব ব্যাপারে অবহেলা করলে দুনিয়াতেই সমুহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই, আপন তত্ত্বাবধানে লালিত এতীমদের সাথে এরূপ সদ্ব্যবহার ও সুন্দর আচরণ করা চাই, যেরূপ নিজের সন্তানদের বেলায় তাদের এতীম হওয়ার পর কামনা করা হবে।
বর্ণিত আছে, আল্লাহ্ তা'আলা হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালামের নিকট ওহী পাঠালেনঃ “হে দাউদ! এতীমের জন্য দয়ালু পিতা এবং বিধবার জন্য স্নেহশীল স্বামীর ন্যায় হয়ে যাও। আর স্মরণ রাখ, তুমি বীজ যেরূপ বপন করবে, ফল তদ্রূপই পাবে। অর্থাৎ তোমার আচরণ যেমন হবে, তোমার সাথে সেরূপ আচরণই করা হবে। এর কারণ হচ্ছে, মৃত্যু অতি অবশ্যম্ভাবী ; কাজেই তোমাকে একদিন মরতে হবে, তোমার সন্তান— সন্তুতি এতীম হবে এবং তোমার স্ত্রীও বিধবা হবে।

এতীমের মাল-সামান হেফাজত, তাদের প্রতি সুন্দর সদ্ব্যবহার এবং তাদের উপর সর্ববিধ জুলুম-অত্যাচার থেকে বেঁচে থাকা সম্পর্কিত বহু হাদীস বর্ণিত রয়েছে। বস্তুতঃ এ হাদীসসমূহ ঐসব আয়াতেরই অনুরূপ যেগুলোর মাধ্যমে লোকদেরকে এ বিষয়ে কঠোর সতর্ক করা হয়েছে এবং এতীমের প্রতি জুলুমের বিপদসঙ্কুল ও ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

মুসলিম শরীফ প্রভৃতি কিতাবে বর্ণিত হয়েছেঃ “হে আবূ যর! আমি তোমাকে দুর্বল দেখছি ; তোমার জন্য আমি তাই পছন্দ করি, যা আমি নিজের জন্য করি। সুতরাং তুমি দু'টি লোকের নেতৃত্বের ভারও নিজ কাঁধে নিও না এবং এতীমের মালের তত্ত্বাবধায়ক হয়ো না।


সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ

বুখারী ও মুসলিম প্রভৃতি হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে আত্মরক্ষা করে চলো। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্, সেগুলো কি? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, যাদু করা, না-হক কতল করা, সূদ খাওয়া, এতীমের মাল খাওয়া ---।
বায্যার রেওয়ায়াত করেছেন, বড় গোনাহ্ সাতটি ; আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, কাউকে না-হক কতল করা, সূদ খাওয়া, এতীমের মাল খাওয়া---।

হাকেম কর্তৃক সহীহ্ সনদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, চার শ্রেণীর লোকদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলার হক রয়েছে যে, তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না এবং (পরকালে) তাদেরকে কোন নেআমতের স্বাদ আস্বাদন করাবেন না-

এক, মদ্যপানে অভ্যস্ত 
দুই, সুদখোর 
তিন, অন্যায়ভাবে এতীমের মাল ভক্ষণকারী 
চার, পিতামাতার অবাধ্য সন্তান । 

সহীহ্ ইবনে হাব্বানে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানবাসীদের প্রতি যে চিঠি হযরত আমর ইবনে হামের হাতে পাঠিয়েছিলেন, তাতে এ কথাও লেখা ছিল যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা'আলার নিকট সবচেয়ে বড় গোনাহ্ হচ্ছে-
আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, 
কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে না-হক হত্যা করা, 
তুমুল যুদ্ধ চলাকালে ময়দান ছেড়ে পলায়ন করা, 
পিতা-মাতার নাফরমানী করা, 
সতী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করা, 
যাদু শিক্ষা করা, 
সূদ খাওয়া ও 
এতীমের মাল খাওয়া।

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ এরূপ বিচার-বুদ্ধিহারা হয়ো না যে, লোকেরা যদি এহসান–উপকার করে, তাহলে তুমি এহসান—উপকার করবে, আর তারা যদি জুলুম করে, তাহলে তুমিও জুলুম করবে। বরং এরূপ চরিত্রের অধিকারী হও যে, লোকেরা এহ্সান করলে তুমিও এহ্সান করবে আর তারা জুলুম বা দুর্ব্যবহার করলেও তুমি তা করবে না।


এতীমের মাল ভোগ করার ভয়াবহ শাস্তি

আবূ ইয়ালা রেওয়ায়াত করেছেন যে, কেয়ামতের দিন একদল লোক হবে, তাদেরকে কবর থেকে এরূপ অবস্থায় বের করো হবে যে, তাদের মুখ-গহ্বর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা বের হতে থাকবে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ্, তারা কারা? তিনি বললেন, তোমরা কি লক্ষ্য কর নাই, আল্লাহ্ তা'আলা পাক কালামে কি বলেছেন? ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ اليَتَامَى ظُلماً إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بطونهم ناراً وسيصلونَ سَعِيرًا

যারা অন্যায়ভাবে এতীমের মাল ভোগ করে, তারা অবশ্যই নিজেদের উদরে অগ্নি পুরে নিচ্ছে।” (নিসা : ১০)

মেরাজ শরীফের হাদীসে মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি হঠাৎ এমন কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদের উপর কিছু লোক মোতায়েন করে দেওয়া হয়েছে, এদের কয়েকজন তাদের মুখ-গহ্বর হা করিয়ে ধরে রাখে আর অবশিষ্টরা আগুনের পাথর এনে তাদের মুখের ভিতর ভরে দিচ্ছে, আর তা তাদের পিছন- পথ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। আমি (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিব্রাঈল! এসব লোক কারা? তিনি বললেন, যারা এতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তারা নিজেদের উদর আগুনের দ্বারা পূর্তি করে নিচ্ছে।


তফসীরে কুরতুবী গ্রন্থে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ)-এর রেওয়ায়াত বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে রাত্রিতে আমাকে (বায়তুল মুকাদ্দাস ও আকাশমণ্ডলীর মে'রাজ) সফর করানো হয়েছে, সে রাত্রিতে আমি দেখেছি যে, একদল লোকের ঠোঁট উটের ঠোঁটের মত; তাদের উপর ফেরেশতা মোতায়েন করে দেওয়া হয়েছে। এঁরা তাদের ঠোঁটদ্বয় ফাঁক করে মুখের ভিতর আগুনের পাথর ঢেলে দিচ্ছে এবং তা তাঁদের পশ্চাৎপথ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিব্রাঈল! এসব লোক কারা? তিনি বললেন, এরা দুনিয়াতে এতীমের মাল জুলুম করে ভক্ষণ করতো।






***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

CLICK n WIN

নটিফিকেশন ও নোটিশ এরিয়া