অল্পেতুষ্টির কল্যাণ ও ফযীলত || অল্পেতুষ্টির মধ্যেই স্বাধীনতা ও সম্মান





ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ আল-গাযযালী (রহঃ) ছিলেন একজন যুগস্রেষ্ট সাধক ও আলেম। ইসলামের খেদমতে তাঁর বয়ান এবং তাঁর লেখা কিতাবগুলোর মাঝে এমন একটি যাদুকরী প্রভাব লক্ষ্য করা যায় যা অন্য কারো লেখায় বা বয়ানে এতটা প্রভাব সৃষ্টি করে না। তাঁর লেখা কিতাবগুলো পড়ে অতি সহজেই প্রতিটি পাঠকের হৃদয় বিগলিত হয়ে উঠে। “দোযখ ও দোযখের ভয়াবহ শাস্তির বয়ান” শীর্ষক এই প্রবন্ধখানা ইমাম গাযযালীর লেখা “মুকাশাফাতুল কুলূব” বা “আত্মার আলোকমণি” কিতাবের অনুস্মরণে লেখা হয়েছে।



অল্পেতুষ্টির কল্যাণ ও ফযীলত

অল্পেতুষ্টির কল্যাণ ও ফযীলত কোরআন ও হাদিসের বহু জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

عد الْمُؤْمِنِ اِسْتِغْنَاؤُهُ عَنِ النَّاسِ

“মুমিনের ইযযত-সম্ভ্রম এরই মধ্যে নিহিত যে, সে কারও মুখাপেক্ষী হবে না। অল্পে তুষ্ট থাকবে।”

অল্পেতুষ্টির মধ্যেই স্বাধীনতা ও সম্মান

এই অল্পেতুষ্টির মধ্যেই রয়েছে নিজ স্বাধীনতা ও সম্মান। এজন্যেই জনৈক জ্ঞানীর উক্তি রয়েছে যে, তুমি যে কোন (উন্নত) ব্যক্তির মুখাপেক্ষিতা হতে নিজেকে বাঁচাবে, তুমি (অচিরেই) তার সমকক্ষ হয়ে যাবে, আর তুমি যারই সাথে দয়া ও অনুগ্রহের আচরণ করবে, তুমি তার আমীর হয়ে যাবে। যে অল্পের দ্বারা তোমার প্রয়োজন মিটে যায়, তা সেই প্রাচুর্য অপেক্ষা বহুগুণ শ্রেষ্ঠ যে তোমাকে খোদার অবাধ্যতার দিকে ঠেলে দেয়।
এক বুযুর্গ বলেছেন যে, আমার অভিজ্ঞতায় প্রাচুর্যকে আমি অল্পেতুষ্টির তুলনায় শ্রেষ্ঠ পাই নাই। এমনিভাবে দারিদ্রকে লালসার তুলনায় কঠিন পাই নাই। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত পংতিগুলো উচ্চারণ করলেন, যার অর্থ হচ্ছেঃ

“অল্পেতুষ্টির অভ্যাসই আমাকে ইয্যতের লেবাস পরিয়েছে। এমন কোন প্রাচুর্য আছে কি যা অল্পেতুষ্টির চেয়ে বেশী ইয্যত দিতে পারে? ধৈর্য্য ও সবরই হচ্ছে তোমার মূল পুঁজি, এরপর তাকওয়াই হচ্ছে অমূল্য সম্পদ।”

মুহূর্তকাল সবর করে দেখ, বন্ধুর মুখাপেক্ষিতা হতে নিষ্কৃতি পাবে। আরও অধিককাল সবর করলে বেহেশতে স্থান পেয়ে যাবে।

অপর এক কবি বলেছেন:
“সত্যিকার প্রয়োজন যতটুকু, তোমার আত্মাকে তা দিতে কুণ্ঠিত হয়ো না। অন্যথায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সে দাবী করবে।”

তোমার এই দীর্ঘ জীবনটি অতিবাহিত হয়ে গেল, কিন্তু আসল সময়ের জন্য তুমি কোনই প্রস্তুতি গ্রহণ করলে না।

আরও একজন বলেছেনঃ
• তোমার রিযিক যদি তোমা থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে তুমি সবর কর এবং যতটুকু তোমার আছে, তা নিয়েই তুমি সন্তুষ্ট থাক।
• কোন কিছু হাসিল করা বা পাওয়ার জন্যে এমনভাবে লেগে যেয়ো না যে, তুমি প্রাণ উৎসর্গ করে দিবে, বরং এ কথা বিশ্বাস রেখ যে, নসীবে (লেখা) থাকলে তা অবশ্যই তুমি পাবে।

অপর একজন বলেনঃ
• নীচ ও অসভ্য লোকদের অসহযোগিতা যদি তোমাকে তৃষ্ণার্ত করে তোলে, তাহলে অল্পে তুষ্টির চরিত্রকে আপন করে নাও; এতে তুমি তৃপ্তি লাভ করবে।
• তুমি এমন সাধক পুরুষ হওয়ার চেষ্টা কর যে, তোমার পা যদি থাকে মাটির নীচে, তাহলে তোমার হিম্মত ও সৎসাহসের শিরটি যেন থাকে সর্বোচ্চ নক্ষত্রসম উঁচু অবস্থানে।

আরও একজন উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেনঃ
• ওহে রিযিকের অন্বেষণকারী! তুমি জীবনের এত শক্তি ব্যয় করে রিযিকের তালাশে ব্যস্ত? হায় আফসোস! তুমি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও বাতিলের মধ্যে পড়ে রয়েছ।
• প্রচণ্ড শক্তিধর সিংহ তার প্রবল প্রতিপত্তি সত্ত্বেও পশুর মৃতদেহের উপরই রাজত্ব করে, আর নগণ্য দুর্বল মৌমাছির রাজত্ব চলে মূল্যবান মৌচাকের উপর।

বিপদের সম্মুখীন হলে নামাযে রত হয়ে যাও

হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র আমল ছিল- কোন বিপদের সম্মুখীন হলে তিনি ঘরের সকলকে বলতেন, তোমরা উঠ এবং নামাযে রত হয়ে যাও। তিনি আরও বলতেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে এরূপ হুকুম করেছেন। অতঃপর এ আয়াত তেলাওয়াত করতেনঃ

وأمر اهلك بِالصَّلوةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا

আপনি আপনার সংশ্লিষ্টদেরকে নামাযের আদেশ করতে থাকুন এবং নিজেও এর পাবন্দী করতে থাকুন।” ( তোয়াহা : ১৩২ )

জনৈক তত্ত্বজ্ঞানীর উপদেশ হচ্ছেঃ
• দুনিয়া এবং দুনিয়ার চাকচিক্যের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখ। প্রাচুর্য ও লালসার ধোকায় পতিত হয়ো না।
• অনন্ত দয়ালু আল্লাহ্ তা'আলা তোমার জন্য যতটুকু নির্ধারিত করে দিয়েছেন, তুমি সেটুকুর উপর রাজী হয়ে যাও। বস্তুতঃ অল্পেতুষ্টি এমন এক সম্পদ যা কোনদিন শেষ হয় না।
• দুনিয়ার আরাম-আয়েশের যাবতীয় সাজ- সামানই অহেতুক ; তাই এসব কিছু তুমি ত্যাগ কর। কেয়ামতের ময়দানে এগুলো তোমার কোনই উপকারে আসবে না ।
আরও একজনের উপদেশ হচ্ছেঃ
• যৎকিঞ্চিৎ যতটুকুই তোমার ভাগ্যে জুটে, ততটুকু নিয়েই তুমি সন্তুষ্ট থাক। কেননা, তোমার-আমার রব্ব একটি ক্ষুদ্র পিপিলিকাকেও ভুলেন না।

জনৈক তত্ত্বজ্ঞানী বলেছেনঃ
• সুন্দর-শোভন ও আকর্ষণীয় পোষাক পরিধানের মধ্যেই ইযযত-সম্মান নিহিত নয়। কেননা, সৌন্দর্য ও শোভা বর্ধনের ধ্যান-খেয়ালে যারা মত্ত থাকে, পরিণতিতে তারা দুনিয়ার মোহগ্রস্ত হয়ে দ্বীন-ধর্মের ব্যাপারে বেপরওয়া হয়ে যায়; এসব লোক আত্মাভিমান থেকে খুব কমই রক্ষা পায়।
আরবী কবি বলেছেন, যার অর্থ হচ্ছেঃ
• দুনিয়ার অংশ থেকে প্রাপ্য হিসাবে আমি আমার জন্য দারিদ্র্যসুলভ সামান্য খাদ্য এবং একটি চুগাকেই (পোষাক বিশেষ) যথেষ্ট মনে করে নিয়েছি অন্তরে এর অতিরিক্ত কোন বাসনাই আমি পোষণ করি না ।
• কারণ, আমি দুনিয়াকে উত্তমরূপে পর্যবেক্ষণ করেছি। দেখেছি যে, এর কোন স্থায়িত্ব নাই। অতএব, দুনিয়াও যেমন অতি ক্ষণস্থায়ী, আমার জীবনও তাই।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url