তাফসীরে ইবনে কাসীর - ৬ || সুরা ফাতিহা - ৬ || আল্লাহই সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক || ‘দীন' শব্দের অর্থ ||






.مَلِكِ يَوْمِ الدِّين

৩। যিনি বিচার দিনের মালিক।

বিচার দিনে আল্লাহই একক ক্ষমতার মালিক


মহান আল্লাহর এ উক্তি অনুসারে কিয়ামাত দিবসের সঙ্গে তাঁর অধিকারকে নির্দিষ্ট করার অর্থ এই নয় যে, কিয়ামাত ছাড়া অন্যান্য জিনিসের অধিকারী হতে তিনি অস্বীকার করছেন, কেননা ইতোপূর্বে তিনি স্বীয় বিশেষণ 'রাব্বুল আলামীন' রূপে বর্ণনা করেছেন এবং এর মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই জড়িত রয়েছে। কিয়ামাত দিবসের সঙ্গে অধিকারকে নির্দিষ্টকরণের কারণ এই যে, সেই দিন তো আর কেহ সার্বিক অধিকারের দাবীদারই হবেনা। বরং সেই প্রকৃত অধিকারী আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কেহ মুখ পর্যন্ত খুলতে পারবেনা। এমনকি টু শব্দটিও করতে পারবেনা। যেমন তিনি বলেনঃ

يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَتَبِكَةُ صَفًّا لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا

সেদিন রুহ্ ও মালাইকা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে; দয়াময় যাকে অনুমতি দিবেন সে ছাড়া অন্যরা কথা বলবেনা এবং সে সঙ্গত কথা বলবে। (সূরা নাবা, ৭৮ : ৩৮) অন্য এক জায়গায় ইরশাদ হচ্ছেঃ

يَوْمَهِلُو لَا تَنفَعُ الشَّفَعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلاً


দয়াময়ের সামনে সব শব্দ স্তদ্ধ হয়ে যাবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবেনা। (সূরা তা-হা, ২০ঃ ১০৯) তিনি আরও বলেনঃ

يَوْمَ يَأْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ فَمِنْهُمْ شَلِي وَسَعِيدٌ

যখন সেই দিন (কিয়ামাত) আসবে তখন কোন ব্যক্তি আমার অনুমতি ছাড়া কথাও বলতে পারবেনা, অনন্তর তাদের মধ্যে কতক তো দুর্ভাগা হবে এবং কতক হবে ভাগ্যবান। (সূরা হুদ, ১১:১০৫)

‘ইয়াওমিদ্দীন' এর অর্থ


ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ يَوْمِ الدِّينِ এর ভাবার্থ হচ্ছে সমগ্র সৃষ্ট জীবের হিসাব দেয়ার দিন অর্থাৎ কিয়ামাতের দিন, যেদিন সমস্ত ভাল-মন্দ কাজের ন্যায্য ও চুলচেরা প্রতিদান দেয়া হবে। তবে হ্যাঁ, যদি মহান আল্লাহ কোন কাজ নিজ গুণে মার্জনা করেন তাহলে তা হবে তাঁর ইচ্ছা ভিত্তিক কাজ। (ইব্‌ন আবী হাতিম ১/১৯) সাহাবা (রাঃ), তাবেঈন (রহঃ) এবং পূর্ব যুগীয় সৎ ব্যক্তিগণ হতেও এটা বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহই সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক


কেননা মহান আল্লাহই সব কিছুরই প্রকৃত মালিক। যেমন তিনি বলেনঃ

هُوَ اللهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ

তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শাস্তি। (সূরা হাশর, ৫৯ : ২৩)

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে এই মারফূ' হাদীসটি বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

'ঐ ব্যক্তির নাম আল্লাহ তা'আলার নিকট অত্যন্ত জঘন্য ও নিকৃষ্ট যাকে শাহান শাহ বা রাজাধিরাজ বলা হয়। কারণ সব কিছুরই প্রকৃত মালিক আল্লাহ ছাড়া আর কেহ নেই।' (ফাতহুল বারী ১/৬০৪, মুসলিম ৩/১৬৮৮) উক্ত সহীহ হাদীস গ্রন্থদ্বয়ের মধ্যে এসেছেঃ
'আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সেদিন সমগ্র যমীনকে স্বীয় মুষ্ঠির মধ্যে গ্রহণ করবেন এবং আকাশ তাঁর ডান হাতে ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ হয়ে জড়িয়ে থাকবে, অতঃপর তিনি বলবেন ঃ 'আমি আজ প্রকৃত বাদশাহ, যমীনের সেই প্রতাপশালী বাদশাহরা কোথায় গেল? কোথায় রয়েছে সেই মদমত্ত অহংকারীরা?' (ফাতহুল বারী ১৩/৪০৪, মুসলিম ৪/২১৪৮) কুরআন কারীমে আরও রয়েছেঃ

لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

যেদিন মানুষ বের হয়ে পড়বে সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবেনা। ঐ দিন কর্তৃত্ব কার? এক, পরাক্রমশালী আল্লাহরই। (সূরা মু'মিন, ৪০ঃ ১৬) অন্যকে তাই শুধু রূপক অর্থে মালিক বলা হয়েছে। কুরআন কারীমে রয়েছেঃ

إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا

নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য রাজা রূপে নির্বাচিত করেছেন। (সূরা বাকারাহ্, ২ : ২৪৭) এখানে তালুতকে মালিক বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে বলা হয়েছেঃ

وَكَانَ وَرَاءهُم مَّلَكٌ কারণ তাদের সামনে ছিল এক রাজা। (সূরা কাহফ, ১৮ : ৭৯) কুরআন মাজীদের একটি আয়াতে আছেঃ

إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنْبِيَاءَ وَجَعَلَكُم مُّلُوكًا

তিনি তোমাদের মধ্যে বহু নারী সৃষ্টি করেছেন, রাজ্যাধিপতি করেছেন। (সূরা মায়িদাহ, ৫ : ২০) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে একটি হাদীসে আছেঃ مِثْلُ الْمُلُوكِ عَلَى الْأَسِرَّةِ. "সিংহাসনে অধিষ্ঠিত বাদশাহদের ন্যায়।' (ফাতহুল বারী ৬/৮৯, মুসলিম ৩/১৫১৮)

‘দীন' শব্দের অর্থ

دِيْن  শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রতিদান, প্রতিফল এবং হিসাব নিকাশ। যেমন আল্লাহ তা'আলা কুরআনুল হাকীমে বলেনঃ 

یَوْمَىِٕذٍ یُّوَفِّیْهِمُ اللّٰهُ دِیْنَهُمُ الْحَقَّ

সেদিন আল্লাহ তাদের প্রাপ্ত প্রতিফল পুরোপুরি দিবেন। (সূরা নূর, ২৪ : ২৫) পবিত্র কুরআনের অন্য জায়গায় আছেঃ 

ءَاِنَّا لَمَدِیْنُوْنَ

আমাদেরকে কি প্রতিফল দেয়া হবে? (সূরা সাফফাত, ৩৭ : ৫৩) হাদীসে আছেঃ বিজ্ঞ সেই ব্যক্তি যে নিজেই নিজের কাছে প্রতিদান নেয় এবং এমন কার্যাবলী সম্পাদন করে যা অবধারিত মৃত্যুর পরে কাজে লাগে।' (ইব্‌ন মাজাহ ২/১৪২৩) অর্থাৎ নিজের আত্মার কাছে নিজেই হিসাব নিকাশ নিয়ে থাকে । যেমন ফারুকে আযম (রাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের হিসাব নিকাশ গৃহীত হওয়ার পূর্বে তোমরা নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ কর এবং তোমাদের কার্যাবলী দাঁড়ি পাল্লায় ওযন হওয়ার পূর্বে তোমরা নিজেরাই ওযন কর এবং তোমরা আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে সেই বড় উপস্থিতির জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ কর যেদিন তোমাদের কোন কাজ গোপন থাকবেনা।' যেমন স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

يَوْمَين تُعْرَضُونَ لَا تَخَلَى مِنكُمْ حَافِيَةٌ

সেদিন উপস্থিত করা হবে তোমাদেরকে এবং তোমাদের কিছুই গোপন থাকবেনা। (সূরা হাক্‌কাহ, ৬৯ : ১৮)




*****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url