তাফসীরে ইবনে কাসীর - ৩০ || সূরা বাকারা - ২০ || মালাইকার সাজদাহ দ্বারা আদমকে (আঃ) মর্যাদা দান ||






সূরা আল বাকারা ৩৪নং আয়াতের অর্থ ও তাফসীর


وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی وَ اسۡتَکۡبَرَ ٭۫ وَ کَانَ مِنَ الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۳۴

সূরা আল বাকারা ৩৪নং আয়াতের অর্থ

   
৩৪। এবং যখন আমি মালাইকাকে বলেছিলাম যে, তোমরা আদমকে সাজদাহ কর, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সাজদাহ করেছিল; সে অগ্রাহ্য করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।

মালাইকার সাজদাহ দ্বারা আদমকে (আঃ) মর্যাদা দান

আল্লাহ তা'আলা আদমের (আঃ) এই বড় মর্যাদার কথা বর্ণনা করে মানুষের উপর তাঁর বড় অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন এবং তাদেরকে আদমের (আঃ) সামনে মালাইকাকে সাজদাহ করার নির্দেশ দেয়ার সংবাদ দিয়েছেন। আদমের (আঃ) সম্মানে আল্লাহ তা'আলা মালাইকাকে সাজদাহ করতে বললে ইবলিস/শাইতান ছাড়া সবাই সাজদাহ করে। সে ছিল জীন জাতির অন্তর্ভুক্ত।

اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ کَانَ مِنَ الۡجِنِّ فَفَسَقَ عَنۡ اَمۡرِ رَبِّهٖ

সে জিনদের একজন, সে তার রবের আদেশ অমান্য করল। (সূরা কাহফ, ১৮:৫০ )

এর প্রমাণ স্বরূপ বহু হাদীসও রয়েছে। একটি তো শাফায়াতের হাদীস যা একটু আগেই বর্ণিত হল। একটি হাদীসে আছে যে, মূসা (আঃ) আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলেনঃ 'আমাকে আদমের (আঃ) সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিন যিনি নিজেও জান্নাত হতে বের হয়েছিলেন এবং আমাদেরকেও বের করেছিলেন।' দুই নাবী একত্রিত হলে মূসা (আঃ) তাঁকে বলেনঃ 'আপনি কি সেই আদম (আঃ) যাকে আল্লাহ স্বহস্তে সৃষ্টি করেছেন, স্বীয় রূহ তাঁর মধ্যে ফুঁকেছেন এবং তাঁর সামনে মালাইকাকে সাজদাহ করিয়েছেন।' (আবূ দাউদ ৫/২৮) পূর্ণ হাদীস ইনশাআল্লাহ অতি সত্বরই বর্ণিত হবে।


আদমকে (আঃ) সাজদাহ করতে ইবলীসকে বলা হয়েছিল

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ইবলীস মালাইকার একটি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল যাদেরকে জীন বলা হয়। তারা অগ্নিশিখা হতে সৃষ্ট ছিল।
   
হাকিম (রহঃ) তার 'মুসতাদরাক' গ্রন্থে এরূপ বহু বর্ণনা এনেছেন এবং গুগুলির সনদকে বুখারীর (রহঃ) শর্তের উপর সহীহ বলেছেন। ভাবার্থ এই যে, যখন আল্লাহ তা'আলা মালাইকাকে বললেনঃ 'তোমরা আদমকে (আঃ) সাজদাহ কর।' ইবলীসও এই সম্বোধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কেননা যদিও সে তাদের অন্ত র্ভুক্ত ছিলনা, কিন্তু সে তাদের মতই ছিল এবং তাদের মতই কাজ করত। সুতরাং সম্বোধনের অন্তর্ভুক্ত সেও ছিল। আর এজন্যই অমান্য করার শাস্তি তাকে ভোগ করতে হয়েছে। এর ব্যাখ্যা ইনশাআল্লাহ کَانَ مِنَ الۡجِنِّ এর তাফসীরে আসবে।

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, সে অবাধ্যতার পূর্বে যে মালাইকার মধ্যে ছিল, তার নাম আযাযীল। ভূ-পৃষ্ঠে ছিল তার বাসস্থান। বিদ্যা ও জ্ঞানে সে খুব বড় ছিল। এ জন্যই তার মস্তিষ্ক অহংকারে ভরপুর ছিল। তার ও তার দলের সম্পর্ক ছিল জীনদের সঙ্গে। (তাবারী ১/৫০২)

আদমকে (আঃ) সাজদাহ করার মাধ্যমে আল্লাহর জন্যই ছিল আনুগত্য

সাজদাহ করার নির্দেশ পালন ছিল আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার ও আদমের (আঃ) প্রতি সম্মান প্রদর্শন। আল্লাহ তা'আলা আদমকে (আঃ) সম্মানিত করেছিলেন এবং মালাইকাকে আদমকে (আঃ) তাঁর সামনে সাজদাহ করতে আদেশ করেন। (তাবারী ১/৫১২) কেহ কেহ বলেন যে, এই সাজদাহ ছিল অভিনন্দন, শান্তি স্থাপন এবং সম্মান প্রদর্শনমূলক। যেমন নাবী ইউসুফের (আঃ) ব্যাপারে রয়েছে যে, তিনি তার পিতাকে সিংহাসনে বসিয়ে দেন এবং সবাই সাজদাহয় পড়ে যায়। তখন ইউসুফ (আঃ) বলেনঃ

 وَ رَفَعَ اَبَوَیۡهِ عَلَی الۡعَرۡشِ وَ خَرُّوۡا لَهٗ سُجَّدًا ۚ وَ قَالَ یٰۤاَبَتِ هٰذَا تَاۡوِیۡلُ رُءۡیَایَ مِنۡ قَبۡلُ ۫ قَدۡ جَعَلَهَا رَبِّیۡ حَقًّا


হে পিতা! এটাই আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা যা আমার রাব্ব সত্যরূপে দেখিয়েছেন। (সূরা ইউসুফ, ১২ : ১০০) পূর্ববর্তী উম্মাতদের জন্য সাজদাহ বৈধ ছিল, কিন্তু আমাদের ধর্মে এটা রহিত হয়ে গেছে। মু'আয (রাঃ) বলেন : 'আমি সিরিয়াবাসীকে তাদের নেতৃবর্গ এবং আলেমদের সামনে সাজদাহ করতে দেখেছিলাম। অতএব আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলিঃ হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সাজদাহ পাবার বেশি হকদার।' তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ

আমি যদি কোন মানুষকে কোন মানুষের সামনে সাজদাহ করার অনুমতি দিতে পারতাম তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম যে, সে যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে। কেননা তার উপর তার (স্বামীর) শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। (তিরমিযী ১১০৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৪/৩১০ )
   
আল রাযীও (রহঃ) এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন : আল্লাহর দুশমন ইবলিসের আদমকে (আঃ) হিংসা করার কারণ ছিল আদমকে (আঃ) আল্লাহর মর্যাদা প্রদান। ইবলিস বলেছিল : আমি আগুন থেকে সৃষ্টি, আর আদমকে তৈরী করা হয়েছে মাটি থেকে। অতএব ইবলিসের প্রথম ভুল ছিল তার ঔদ্ধ্যততা, যে কারণে আল্লাহর শত্রু ইবলিস আদমকে (আঃ) সাজদাহ করতে অস্বীকার করেছিল। আমরা লক্ষ্য করলে পরবর্তী হাদীসে দেখতে পাব। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, এই অহংকারের পাপই ছিল সর্বপ্রথম পাপ যা আদমকে (আঃ) সাজদাহ করা হতে ইবলীসকে বিরত রেখেছিল। (ইবন আবী হাতিম ১/১২৩) বিশুদ্ধ হাদীসে আছেঃ

যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবেনা। (মুসলিম ১/৯৩) এই অহংকার, কুফর এবং অবাধ্যতার কারণেই ইবলীসের গলদেশে অভিসম্পাতের গলাবন্ধ লেগে গেছে এবং মহান আল্লাহর রাহমাত হতে নিরাশ হয়ে তাঁর দরবার হতে বিতাড়িত হয়েছে।






****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url