রমযানের সওগাত - ০১ || প্রতিদিন রমযান বিষয়ক ১০টি সহীহ হাদিস




রমযানের সাওম ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে

কুতায়বা ইবনু সা’ইদ (রহঃ) ... তালহা ইবনু ’উবায়দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এলোমেলো চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলেন। তারপর বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে বলুন, আল্লাহ তা’আলা আমার উপর কত সালাত (নামায/নামাজ) ফরজ করেছেন? তিনি বলেনঃ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আমার উপর কত সিয়াম আল্লাহ তা’আলা ফরজ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রমযান মাসের সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম); তবে তুমি যদি কিছু নফল কর তবে তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বললেন, বলুন, আল্লাহ আমার উপর কি পরিমান যাকাত ফরয করেছেন? রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করেছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করল।

মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ হে মু’মিনগন! তোমাদের জন্য সিয়াম ফরজ করা হল, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকি হও (২:১৮৩)
   
* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯১

কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) ... ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জাহিলী যুগে কুরায়শগন ’আশূরা (আশুরা/আসুরা/আসূরা)র দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সিয়াম ফরজ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার ইচ্ছা ’আশূরার সিয়াম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না।

* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৩

সাওমের ফযীলত

’আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তাঁর সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাঁকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরষ্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুন।

* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৪

সাওম (গোনাহের) কাফফারা


’আলী ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) ... হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন ’উমর (রাঃ) বললেন, ফিতনা সম্পর্কিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিসটি কার মুখস্ত আছে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশীই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত (নামায/নামাজ), সিয়াম এবং সদকা এর কাফফারা হয়ে যায়। ’উমর (রাঃ) বললেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি জিজ্ঞাসা করছি না, আমি তো জিজ্ঞাসা করেছি ওই ফিতনা সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আন্দোলিত হতে থাকবে।
   
হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। ’উমর (রাঃ) বললেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, ভেঙ্গে যাবে। ’উমর (রাঃ) বললেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হবে না। আমার মাসরুক (রহঃ) কে বললাম, হুযায়ফা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করূন, ’উমর (রাঃ) কি জানতেন, কে সেই দরজা? তিনি বললেন, হাঁ, তিনি এরুপ জানতেন যেরুপ কালকের দিনের পূর্বে আজকের রাত।

* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৫

সাওম পালনকারীর জন্য রায়্যান


খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ... সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে রায়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।

* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৬

সাওম পালনকারী রায়্যান দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে


ইবরাহীম ইবনু মুনযীর (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাঁকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়কারী, তাঁকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ তাঁকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে, যে সিয়াম পালনকারী, তাঁকে রায়্যাব দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সাদকা দানকারী তাঁকে সাদকা দরজা থেকে ডাকা হবে। এরপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান, সকল দরজা থেকে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা থেকে ডাকা হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। আমি আশা করি তুমি তাঁদের মধ্যে হবে।
   
* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৭

রমযানে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শৃংখলিত করে দেয়া হয় শয়তানকে।

* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৮৯৯

চাঁদ দেখে রোযা রাখা


ইয়াহহিয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ... ইবনু ’উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফতার বন্ধ করবে। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তাঁর সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে।

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) ব্যতীত অন্যরা লায়স (রহঃ) থেকে ’উকায়লা এবং ইউনুস (রহঃ) সূত্রে বর্ননা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।

* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৭৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০০

নবী (সাঃ) রমযানে সর্বাধিক দান করতেন

মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ... ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।

   
* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৮১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০২

রোযা রেখে কাউকে গালি

ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য, তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কবজায় মুহাম্মদের প্রাণ, তাঁর শপথ! সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়ইমের জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওম বিনিময়ে আনন্দিত হবে।

* সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৭৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯০৪





**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url