শবে কদরের ফযীলত || শবে কদরে করণীয় ও বর্জনীয় কাজসমূহ || কদরের রাত কবে ?






ধর্মীয় দৃষ্টিতে শবে কদর

শবে কদর এমন একটি মহা পূণ্যময় রজনী যা আল্লাহ্ তা'আলা বিশেষ অনুগ্রহে একমাত্র উম্মতে মুহাম্মাদীকে প্রদান করেছেন। অন্য কোন উম্মত উক্ত পবিত্র রজনী বা অনুরূপ কোন বিশেষ নেয়ামতের রজনী পায়নি।

শবে কদরের ফযীলত

১.    উক্ত রজনীর অধিক গুরুত্ব, মর্যাদা ও ফযীলত বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা'আলা তাঁর পবিত্র কুরআনে কারীমে স্বতন্ত্র একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যার নাম সূরাতুল ক্বদর ।

২.    শবে ক্বদরে আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনে কারীম লাউহে মাহফুয থেকে প্রথম আকাশে অবতীর্ণ করেন। (সূরাতুল কদরঃ ১)
৩.    শবে কদরের এক রাত্রির ইবাদত তিরাশি বছর চার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক উত্তম। (সূরাতুল কদরঃ ৩)

৪.    হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবীয়ে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর ইবাদতের মাধ্যমে কাটাবে আল্লাহ্ তা'আলা তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ্ মাফ করে দিবেন । (বুখারী শরীফ হাদীস নং ১৯০১, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১৭৫)

৫.    এই রাত্রে আল্লাহ্ তা'আলার অনুমতিক্রমে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ফেরেশতাদের একটি জামা’আত নিয়ে পৃথিবীতে শুভাগমন করেন এবং আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদতগুযার বান্দাদেরকে সালাম ও রহমতের দু'আ করতে থাকেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীরঃ ৮/৪১৪)

কদরের রাত কবে

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন, আমি কুরআনে কারীমকে কদরের রাত্রে অবতীর্ণ করেছি। (সূরাতুল কদরঃ ১)

অন্যত্র ইন্নশাদ করেনঃ রমযান মাসে কুরআনে কারীমকে অবতীর্ণ করা হয়েছে। (বাকারা: ১৮৫)
উক্ত আয়াতদ্বয় দ্বারা বুঝা যায় যে, শবে কদর রমযান মাসেই সংঘটিত হয়। আম্মাজান হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলে পাক (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ তোমরা রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (বুখারী শরীফ: হাঃ নং ২০১৭, মুসলিম শরীফ হাঃ নং ১১৬৯)
   
যির ইবনে হুবাইশ (রহ) বর্ণনা করেন, আমি হযরত উবাই ইবনে কাআব (রাঃ) কে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম এবং বললাম আপনার ভাই আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলে থাকেন, যে ব্যক্তি পূর্ণ এক বৎসর জাগ্রত থাকবে সে লাইলাতুল কদর পাবেই। উত্তরে হযরত উবাই ইবনে কাআব (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহ্ তার উপর রহম করুণ তিনি ইচ্ছা করেছেন লোকেরা যেন এক রাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে। নিশ্চয় তিনি জানেন তা রমাযানে এবং তাও জানেন যে তা রমযানের শেষ দশকে এবং ২৭ তারিখে। অতঃপর হযরত উবাই ইবনে কাআব (রাঃ) শপথ করে বললেনঃ অবশ্যই তা ২৭ তারিখের রজনীতেই হয়ে থাকে। যির ইবনে হুবাইশ বলেনঃ আমি বললামঃ হে আবুল মুনযির! (উবাই ইবনে কাআব এর উপ নাম) এটা কিসের ভিত্তিতে বলছেন তদুত্তরে তিনি বললেনঃ আলামত বা নিদর্শনের ভিত্তিতে যা রাসূল আমাদেরকে বলে দিয়েছেন; সে দিন সূর্যের কিরণ থাকে না। (মুসলিম শরীফ হাঃ নং ৭৬২)

শবে কদর হাসিল করার উপায়

ক.    রমযানের শেষের দশকে ই'তিকাফ করা অর্থাৎ, ২০শে রমযান সূর্য ডোবার পূর্ব হতে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা। পেশাব পায়খানা বা ফরয গোসলের প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের না হওয়া।

খ.    এটা সম্ভব না হলে অন্তত শেষ দশকের শুধু রাত গুলোতে মসজিদে নফল ইতিকাফ করা। দিনে দুনিয়াবী জরুরত পূর্ণ করা।

গ.    এটাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে শেষ দশকের ইশা ও ফজরের নামায গুরুত্ব সকারে জামাআতের সাথে আদায় করা। এবং বেজোড় রাতগুলোতে নফল নামায, তিলাওয়াত ইত্যাদি তুলনামূলকভাবে বেশী করা।

শবে কদরে করণীয় কাজসমূহ

১.    এ পূণ্যময় রজনীতে অবহেলা না করে গুরুত্ব ও ইখলাসের সাথে ইবাদত বন্দেগীতে লেগে থাকা চাই। চাই নফল নামায বা তিলাওয়াত যিকির আযকারে হোক কিংবা দু'আয় মশগুল থাকার মাধ্যমে হোক।
   
২.    নিজের জীবনের পাপরাশির কথা স্মরণ করে আল্লাহ্ তা'আলার নিকট কাকুতি মিনতি ও রোনাজারীর সাথে তাওবা করা ও ক্ষমা চাওয়া। (সূরা নূহঃ ১০)

৩.    ইখলাসের সাথে সাওয়াবের আশায় উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে নেক আমলে লিপ্ত থাকা। (বুখারী: হাঃ নং ১৯০১, মুসনাদ আহমাদ: হাঃ নং ১৭১৪৫)

৪.    এ রাত্রিতে বেশী বেশী নিম্নোক্ত দু'আটি পড়তে থাকা-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

(আমালুল য়াউমি ওয়াললাইলাহ্ঃ  হাঃ নং ৭৬৭ ইবনে মাজাহ: নং ৩৮-৫০)

৫. উক্ত রাত্রির কিছু অংশ কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতে নিমগ্ন থাকা। কিছু অংশে নফল নামায বিশেষ করে সালাতুত তাসবীহ আদায় করা। আর কিছু অংশে যিকির আযকার দু'আ মুনাজাত করা। (সূরা আনকাবৃতঃ ৪৫)


শবে কদরে বর্জনীয় কাজসমূহ

১.    মসজিদে নিঃপ্রয়োজনে মোমবাতি জ্বালানো ও আলোক-সজ্জা করা। কারণ এটা অপব্যয়। আর অপব্যয় করা নাজায়িয। (সূরায়ে আ’রাফঃ ৩১, বনী ইসরাঈলঃ ২৭)

২.    জামাআতের সাথে সালাতুল তাসবীহ, তাহাজ্জুদ কিংবা অন্য কোন নফল নামায পড়া। কারণ নফল নামায জামাআতের সাথে নাজায়িয। (রদ্দুল মুহতারঃ ১/৫৫২)

৩.    ঘোষণা করে মসজিদে সম্মিলিত দু'আর আয়োজন করা। হ্যাঁ । ঘোষণা বা ডাকাডাকি ছাড়া এমনিতে যারা উপস্থিত ছিল তারা দু'আ করে নিলে তা জায়িয়। 

৪.    এই রাতে মসজিদে প্রচলিত মীলাদ-কিয়াম করা। কারণ ইহা সুস্পষ্ট বিদ'আত। (মুসনাদে আহমাদঃ হাঃ নং ১৭১৪৯)

৫. এত অধিক রাত্র পর্যন্ত জাগ্রত থাকা, যাতে ঘুমের তাড়নায় ফজরের জামা’আত ছুটে যায় কিংবা কাযা-ই হয়ে যায় বা এমন হয়ে যায় যে নামাযে কি সূরা কালাম পড়ছে তা নিজেরও খবর নেই। (মুআত্তা ইমাম মালেকঃ হাঃ নং ১৫৫, আল ইসাবাঃ ৩/ ২০০)

বি:দ্র: মসজিদে ইমাম ও খতীবগণের কর্তব্য ঐদিন লম্বা সময় ওয়াজ ও বয়ানে না কাটানো। বরং তার আগে জুমু’আয় বা কোন একদিন শবে কদরের আহকাম বলে দেয়া। একান্ত ঐ দিনই কথা বলার প্রয়োজন হলে সংক্ষেপে এই রাত্রের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে কিছু কথা বলে মুসল্লীদেরকে উৎসাহ দিয়ে ইবাদতের প্রতি নির্বিষ্ট করার চেষ্টা করবে। তবে সর্বাবস্থায় জাল হাদীস ও ভিত্তিহীন ঘটনাবলী বর্ণনা থেকে বিরত থাকা চাই। (মুকাদ্দামায়ে মুসলিমঃ  হাঃ নং ৭)
   
পটকাবাজী, আতশবাজী ইত্যাদি কুসংস্কার থেকে বিরত থাকা। বিশেষ করে অভিভাবকদের কর্তব্য হলো ছোটদেরকে উক্ত ব্যাপারে সাবধান করে দেয়া এবং তাদের হাতে টাকা পয়সা না দেয়া। কারণ এই অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণে নিজেকে যেমন উক্ত রাতে অনেক ফযীলতপূর্ণ ইবাদত থেকে বঞ্চিত রাখা হয়, ঠিক তেমনই উক্ত জিনিসগুলোর বিকট ও ভয়ংকর শব্দের দরুন আল্লাহর বান্দাদেরকে আতংকের মধ্যে ফেলে কষ্ট দেয়া হয়। তাই উক্ত শরী'আত পরিপন্থী জঘন্য কাজে লিপ্ত হওয়া কবীরা গুনাহ ও হারাম। (সূরা বাকারা: ১১৪, বনী ইসরাঈল: ২৭)

এই রাত্রকে উপলক্ষ্য করে অধিক ও উত্তম খানা ও তাবারকের আয়োজন থেকে বিরত থাকা। মসজিদে শিরনী, মিষ্টি ইত্যাদির আয়োজন করা থেকে বিরত থাকা।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url