কাদিয়ানী ফিতনা বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান এক ও অভিন্ন (পর্ব - ১)



[কাদিয়ানী ফিতনা বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান এক ও অভিন্ন। সকল তরীকার মুসলিমগণই কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষনার দাবী জানিয়ে আসছেন। এই বিষয়টি সাম্প্রতিক কালে আবারও খুব আলোচিত হচ্ছে। আমাদের মাঝে অনেকেই জানেন না, কাদিয়ানী কারা এবং তাদের আক্বিদা কিরূপ? আমরা এখানে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ইতিহাস, উত্থান এবং তাদের বিশ্বাস ও আক্বিদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ইন শা আল্লাহ। প্রতি পর্ব মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং অন্যান্য মুসলিম ভাই বোনদের জন্য শেয়ার করবেন এই আশা রাখছি।]
 


কাদিয়ানী ফিতনা বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত


বিসমিল্লাহির রাহমানি

"সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে হবে, যে আল্লাহ্ সম্পর্কে মিথ্যা বলে অথবা বলে, "আমার নিকট ওহী আসে। অথচ তার নিকট মোটেই কোন ওহী পাঠানো হয়না।" (সূরা আনআম, আয়াত-৯৩)।
       
"আমার উম্মতের মাঝে ত্রিশজন মিথ্যুকের আবির্ভাব হবে। তারা প্রত্যেকেই দাবী করবে যে, সে নবী। অথচ আমি হলাম খাতামুন নাবীঈন আমার পর কোন নবী আসবে না বা আমার পর কোন ব্যক্তি নবী হবে না।" - (আবু দাউদ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩৪, ২০ পৃষ্ঠা ৪৫, ফিতনা অধ্যায়, তিরমিজী, ২য় খন্ড, পৃষ্টা ৪৫, ফিতনা অধ্যায়)।

ডক্টর ইকবালের ফরিয়াদ

“আমার মতে প্রশাসনের জন্যে সর্বোত্তম পন্থা হলো কাদিয়ানীদের একটি স্বতন্ত্র দল হিসাবে মেনে নেওয়া। সেটাই কাদিয়ানীদের স্বাতন্ত্র্য ও বিধি বিধানের সাথে সামঞ্জসাহীন হবে। আর মুসলমানরা তাদের সাথে ঠিক সেইরূপ আচরণই করবে, যেমনটা তারা অন্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে করে থাকে।” (আল্লামা ডক্টর ইকবাল, হরফে ইকবাল, ১১৮ পৃঃ, লাহোর সংস্করণ)।
       
ইসলামী উম্মাহর পুরোপুরিভাবেই এ অধিকার রয়েছে যে, তারা দাবী করতে পারে, কাদিয়ানীদের পৃথক ও স্বতন্ত্র ধর্মের অনুসারী বলে ঘোষণা করা হোক। যদি প্রশাসন এ দাবী পূরণ না করে তাহলে সাধারণ মুসলমানের মনে সরকারের সদিচ্ছার ব্যাপারে সন্দেহের সৃষ্টি হবে। বৃটিশ সরকার ১৯১৯ সনে শিখদের ভিন্ন সম্প্রদায় হিসাবে মেনে নিতে কোন দাবীর জন্য অপেক্ষা করেননি। এখন তারা কাদিয়ানীদের ব্যাপারে দাবী উত্থাপনের অপেক্ষা কেন করছেন? (হরফে ইকবাল)। 

মির্জা গোলাম আহমদের পুত্র মির্জা বশীর আহমদ কাদিয়ানীর বক্তব্য

মসীহ মাওউদ (অর্থাৎ মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)-এর দাবী, তিনি আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হতে আদিষ্ট ব্যক্তি এবং আল্লাহ্ তায়ালা তার সাথে কথাবার্তা বলে থাকেন -দুটো পরস্পর বিপরীত অবস্থার কোন একটিকে আবশ্যিক করে। এক, হয়তো তিনি তাঁর দাবীতে মিথ্যুক (নাউযুবিল্লাহ) তিনি আল্লাহ সম্পর্কে নিছক মিথ্যা কথা বলছেন। তাহলে তিনি শুধু কাফেরই নন, বরং অনেক বড় মাপের কাফের। অথবা মসীহ মাওউদ তার ওহীর দাবীতে সত্যবাদী এবং আল্লাহ তাআলা সতাই তার সাথে কথা বলেছেন। তাহলে তাঁকে অস্বীকারকারীদের উপর কুফরের বিধান নিপতিত হবে। এখন তোমাদের ইচ্ছা হয়, মসীহ মাওউদের অস্বীকারকারীদের মুসলমান বলবে এবং মসীহ মাওউদকে বলবে কাফের, নতুবা মসীহ মাওউদকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করে তার অস্বীকারকারীদের বলবে কাফের। তোমরা এ উভয় দলকে মুসলমান বলবে তা কখনোই সম্ভব নয়। -("কালিমাতুল ফাসল” " বা সুস্পষ্ট বিধান, কৃত-মির্জা বশীর আহমদ, পৃঃ ১২৩)। 

কাদিয়ানীদের লাহোরী জামাতের নেতা মুহাম্মদ আলী লাহোরী-এর মতামত

আহমদীয়া আন্দোলন ইসলামের সাথে ঠিক সেই ধরনের সম্পর্ক রাখে যেমনটা খৃষ্টানদের সাথে ইয়াহুদীদের সম্পর্ক। (রাওয়াপিন্ডির আলোচনা হতে উৎকলিত, পৃষ্টা ২৪০)।
       

পাকিস্তানের সংসদে গৃহীত প্রস্তাব

মাননীয় স্পীকার
পাকিস্তান জাতীয় সংস
আমরা নিম্নোক্ত প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপনের অনুমতি চাইছি। 
যেহেতু এটি একটি পূর্ণ স্বীকৃত বিষয় যে, কাদিয়ানের মির্জা গোলাম আহমদ শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে, তার এ মিথ্যা দাবী কুরআন পাকের বহু আয়াতকে অস্বীকার এবং জিহাদকে মানসুখ বা রহিত ঘোষণা করার প্রচেষ্টা ছিল ইসলামের বহু হুকুম আহকামের বিপরীতে সুস্পষ্ট গাদ্দারী; তার 'নবুওয়ত' ছিল ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের গর্ভে সৃষ্ট, আর তাদের (ইংরেজদের) একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মাঝে বিরাজমান ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট করা এবং ইসলামকে অস্বীকার করা; এবং যেহেতু মুসলিম জাতির প্রতিটি ব্যক্তি এ ব্যাপারে একমত যে, মির্জা গোলাম আহমদের অনুসারী, সে মির্জা গোলাম আহমদকে নবী বলে বিশ্বাস রাখুক বা তাকে নিজের জন্যে সংশোধনকারী বা ধর্মীয় পথ প্রদর্শক যাই মনে করুন না কেন, তারা ইসলামের গন্ডি বহির্ভূত এবং তার অনুসারীদের যে নামই দেওয়া হোক না কেন, তারা মুসলমানদের সাথে মিলে মিশে থাকে এবং ইসলামের এক উপদল হওয়ার বাহানা করে আভ্যন্তরীণ ও প্রকাশ্যভাবে ইসলামের ক্ষতিসাধনে তৎপর রয়েছে। বিশ্বের মুসলিম সংস্থাগুলোর এক কনফারেন্স, যা রাবেতা আল আলম আল-ইসলামীর পরিচালনায় পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ১৯৭৪ সনের ৬ হতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ এ সম্মেলনে, যাতে বিশ্বের সকল প্রান্ত হতে ১৪৪টি মুসলিম সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ যোগদান করেন, সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, কাদিয়ানী ধর্মমত ইসলাম ও ইসলামী বিশ্বের বিপরীতে একটি ধ্বংসকর আন্দোলন, যা নিজেদের ইসলামী উপদল হিসাবে মিথ্যা দাবী করে। 

তাই এ সংসদের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা প্রদান করা হোক যে, মির্জা গোলাম আহমদের অনুসারী -তাদের যে নামই দেওয়া হোক না কেন, তারা মুসলমান নয়। সেই সাথে এই জাতীয় সংসদে এই মর্মে সরকারী বিল উত্থাপন করা হোক, যেন এই ঘোষণাকে কার্যকর করার জন্যে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের এক সংখ্যালঘু অমুসলিম সম্প্রদায় হিসাবে কাদিয়ানীদের প্রাপ্য সকল বৈদ অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে জরুরী বিধিবিধান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আইনমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করা হয়।

প্রস্তাব উত্থাপনকারী হিসাবে দস্তখত প্রদানকারীদের নাম-

১.    মাওলানা মুফতি মাহমুদ
২.    মাওলানা আব্দুল মোস্তফ আল আযহারী
৩.    মাওলানা শাহ আহমদ নূরানী সিদ্দিকী
৪.    অধ্যাপক গফুর আহমদ
৫.    মাওলানা সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আলী রেজভী
৬.    মাওলানা আব্দুল হক (আকোড়াঘটক)
৭.    চৌধুরী জহুর এলাহী
৮.    সরদার শেরবাজ খান মাযারী
৯.    মাওলানা জাফর আহমদ আনসারী
১০.    আব্দুল হামিদ জতুইসহ মোট ৩৭ জন এখানে স্বাক্ষর করেন।
       

তাওহীদ ও আখেরাত ব্যতীত বিশ্বাস যে ইসলামের ভিত্তি মৌলিক আকীদার উপর নির্ভরশীল, সে আকিদাটি হল আখেরী নবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর উপর নবুওয়াত ও রিসালতের পবিত্র ধারাবাহিকতা সমাপ্ত হয়ে গেছে, তার পরে কোন ব্যক্তি কোন প্রকারের নবী হতে পারবে না; এবং তাঁর পরে কোন ব্যক্তির উপর ওহিও আসবে না। আর এমন কোন এলহামও আসবে না, যা ইসলাম ধর্মের জন্য কোন দলিল হিসেবে পেশ হতে পারে। ইসলামের এ আকীদাকে খতমে নবুওয়তের আকীদা বলা হয়। হুজুর (সাঃ) হতে আজ পর্যন্ত উম্মতের সর্বস্তরের লোক কোন মত বিরোধ ছাড়াই এ আকীদাকে ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংগ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আসছেন।

পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত এবং হুজুর (সঃ)-এর অনেক হাদীস এ কথার সাক্ষ্য বহন করে। এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে সর্বস্বীকৃত এবং এ বিষয়ের উপর অগণিত কিতাবাদি প্রকাশিত হয়েছে।

এখানে ঐ সকল আয়াত এবং হাদীস সমূহ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, তবে যে বিষয়টির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা প্রয়োজন সেটা হল এই যে, হুজুর (সঃ) খতমে নবুওয়তের আকীদার উপর অনেক বর্ণনা পান করার সাথে সাথে কিছু ভবিষ্যবাণীও উল্লেখ করেছেন। যেমন বলেছেন, "ঐ পর্যন্ত কেয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ জন দাজ্জাল, কাব সৃষ্টি না হবে। যাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর রসুল হওয়ার দাবী করবে। (বোখারী শরীফ ১০৫৪ পৃঃ, ফিতনা অধ্যায়, দ্বিতীয় খণ্ড, মুসলিম শরীফ ৩৯৭ ফিতনা অধ্যায়, দ্বিতীয় খণ্ড)

"অচিরেই আমার উম্মতের মাঝে ত্রিশজন হিদ্যুতের আবির্ভাব হবে, যাদের প্রত্যেকেই দাবী করবে যে, সে নবী। অথচ আমি খাতামুন্নাবীঈন, আমার পর আর কোন নবী নেই”। (আবু দাউদ ২০ ও 'ফিতনা অধ্যায়, ২০৮, তিনি ২০ ফিতনা অধ্যায়, ৪৫ পৃঃ)
       
এ দুটো হাদীসে নবী করীম (সঃ) ভন্ড নবীদের উদ্দেশ্যে 'দাজ্জাল' ও 'কাজ্জাব' শব্দ দুটো ব্যবহার করেছেন। শব্দগুলোর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে যথাক্রমে চরম ‘ধোঁকাবাজ' ও 'ডাহা মিথ্যুক'। এ শব্দ দুটোর দ্বারা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁর উম্মতকে এই বিষয়ে সতর্ক করে গেছেন যে, তাঁর পর যেসব ব্যক্তি নবুওয়তের দাবীদার হবে তারা প্রকাশ্যভাবে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন ও পৃথক হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরিবর্তে ধোঁকা ও মিথ্যার আশ্রয় নেবে। তাই, নিজেদেরকে তারা মুসলমান বলবে আর সেই সাথে নবী হওয়ার প্রচার-প্রচারণা চালাবে। তারা ইসলামের সর্বস্বীকৃত আকীদা বিশ্বাসে এমন সব ব্যাখ্যা বিবৃতি দিতে থাকবে যার দ্বারা কিছু অনবহিত লোককে তারা বিভ্রান্তিতে ফেলতে সক্ষম হবে। তাদের এ ধোকা প্রবঞ্চনা থেকে বেঁচে থাকার জন্যে উম্মতের সবাইকে হুজুর (সাঃ)- এর এ কথা মনে রাখতে হবে যে, "আমি হলাম 'খাতামুন নাবীঈন'। আর এর অর্থই হচ্ছে, 'আমি শেষ নবী আমার পর আর কোন নবী আসবে না। "

নবী করীম (সঃ)-এর এই ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়েছে। দেখা গেছে, ইসলামের ইতিহাসে যে ক'জন নবী হওয়ার মিথ্যা দাবী করেছে, তাদের সকলেই ধোঁকা দিয়ে নবুওয়তের দাবীকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা চালিয়েছে। যেহেতু উম্মতে মুহাম্মদী কুরআনের বহুবিধ আয়াত ও নবী করীম (সঃ)-এর অসংখ্য হাদীস মারফত এ বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করেছে, তাই যখনই কোন লোক নবুওতের মিথ্যা দাবীর দ্বারা এ আকীদা বিশ্বাসে চিড় ধরাবার চেষ্টা করেছে, তখনই উম্মতের সকলে একমত হয়ে তাকে কাফের ও মুরতাদ বলে চিহ্নিত করেছে। তাই সাহাবীদের যুগ থেকে শুরু করে যে কোন ইসলামী হুকুমত ও ইসলামী আদালতে কোন মিথ্যুক ভন্ড নবীর বিষয় উত্থাপিত হলে কেউ এ বিষয়টিতে কোন সাক্ষ্য প্রমাণের অপেক্ষা করেননি। নবী দাবী করার পক্ষে কোন দলীল-প্রমাণ আছে কিনা, তার তত্ত্ব-তালাশ নেবার কোনই প্রয়োজন বোধ করেননি। বরং নবী দাবী করার কারণেই তাকে 'কাফের' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং কাফের ও মুরতাদের সাথে যে আচরণ করা আবশ্যক তাদের সাথেও সেই আচরণই করা হয়েছে। সে মুসায়লামা কাজ্জাব হোক বা আসওয়াদে আনাসী হোক, সাজাহ বা তুলায়হা বা হারেছ হোক বা অন্য কেউ।

নবী দাবী করার প্রেক্ষিতে কোন দলীল-প্রমাণ বা ব্যাখ্যা বিবৃতির অপেক্ষা না করে তাদের কাফের ও মুরতাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর কারণ, খতমে নবুওয়তের আকীদাটি এতই স্পষ্ট ও প্রামাণ্য প্রকাশ্য যে, ভাতে কোন রকম অপব্যখ্যার অবকাশ নেই। আর এই আকীদাটিতে কারো কোন মতপার্থকাও নেই। সবাই এ বিষয়ে একমত যে, যে কেউ এতে নতুন কোন ব্যাখ্যা-বিবৃতি প্রদান করবে তা হবে ধোঁকা ও প্রবঞ্চনা, নবী করীম (সঃ) স্বয়ং এ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করে গেছেন।

যদি এই ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, তা যত নিম্নস্তরেরই হোক, মেনে নেয়া হয়, তাহলে তাওহীদের আবীদাও যথাযথ থাকবেনা এবং আখেরাতের আক্বীদা বা অন্য কোন মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসও বহাল থাকবে না। যেমন কেউ হয়তো 'খতমে নবুওয়ত' সম্পর্কে এই ব্যাখ্যা প্রদান করতে শুরু করলো যে, শরীয়ত প্রবর্তনকারী নবীর আগমন বন্ধ হলেও শরীয়তবিহীন নবীর আগমন ধারা অব্যাহত রয়েছে। তাহলে তার এ কথা ঠিক এমন হবে, যেমন কেউ বললো, তাওহীদের আকীদা বিশ্বাস অনুযায়ী বড় খোদা তো একজনই, তবে ছোট ছোট মাবুদ দেবতা অনেক হতে পারে, যাদের ইবাদত করা যাবে। তাওহীদের আকীদা-বিশ্বাস এতই সুস্পষ্ট যে তাতে এ ধরনের অপব্যাখ্যার কোন সুযোগ নেই। তেমনিভাবে খতমে নবুওয়তের মাঝেও এ ধরনের কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ফাঁক ফোকর নেই। তা না হলে এসব ব্যাখ্যা বিবৃতিকে ইসলামের আওতায় মেনে নিলে এটাই প্রতীয়মান হবে যে, ইসলামের নিজস্ব কোন আক্বীদা-বিশ্বাস নেই, নিজস্ব বিধি-বিধানের কোন গণ্ডি নেই এবং চারিত্রিক কোন পরিসীমা নেই। বরং ইসলাম যেন ইলাষ্টিকের টুপি, যে কোন ধরনের আক্বীদা-বিশ্বাসের ধারক ব্যক্তিও এটা পরিধান করতে পারবে এবং পরিধান করার পর এটা তার মাথার সাইজে রূপ নিবে। অথচ ইসলাম কখনোই এমন নয়।
       
তাই, নবী করীম (সঃ)-এর অনুসারী এই উম্মত কুরআনের অকাট্য আয়াত ও হাদীসের আলোকে প্রশাসনিক নীতিমালা, আদালতের ফয়সালা এবং সম্মিলিত ফতোয়ায় এই নীতিতে আমল করেছেন যে, নবী করীম (সঃ)-এর পর যে কোন লোক নবুওয়তের দাবী করেছে, সে মুসায়লামা কাজ্জাবের ন্যায় মুসলমান পরিচয়ধারী হোক, তাকে এবং তার অনুসারীদের কাফের বলে ঘোষণা করেছে, তাতে কোন চিন্তা- ভাবনার প্রয়োজন বোধ করেনি। সে 'খতমে নবুওয়তের' প্রকাশ্য বিরোধিতা করুক বা মুসায়লামার মত বলুক যে, নবী করীম (সঃ)-এর পর ছোট ছোট নবী আসতে পারে, অথবা সাজাহ-এর ন্যায় বলুক যে, পুরুষদের নবী হওয়া শেষ হয়েছে, তবে মহিলারা এখনো নবী হতে পারে। অথবা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ন্যায় এ কথা বলুক যে, শরীয়তবিহীন ছায়া নবী, বুরুজী নবী ও উম্মতী নবী হতে পারে।

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জানতে পারলাম কুরআন, হাদীস ও ইজমার অকাট্য দলীল দ্বারা এ কথাই সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী করীম (সঃ)-এর পর আর কোন নবীর আগমন ঘটবেনা, এ বিষয়টিতে কোন ধরণের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের অবকাশ নেই।

এখন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিম্নোক্ত দাবীগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন-

(১) সত্যি খোদা তিনিই যিনি কাদিয়ানে তার রাসুল পাঠিয়েছেন। (নাফেউল বালা, ১১ পৃঃ, ৩য় সংস্করণ, ১৯৪৬)

(২) আমি রাসুল এবং নবী; অর্থাৎ পূর্ণ ছায়াস্বরূপ। আমি ঐ আয়না, যাতে মুহাম্মদী আকৃতি এবং মুহাম্মদী নবুওয়তের পূর্ণ প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয়েছে। (নুযুলে মসীহ, ৩য় পৃঃ, ১ম সংস্করণ)

(৩) আমি ঐ খোদার কসম খেয়ে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আমার নাম 'নবী' রেখেছেন। (হাকীকাতুল ওহি ৬৮ পৃঃ ১৯৩৪ )

(৪) আমি যখন এ সময় পর্যন্ত দেড় শতের কাছাকাছি ভবিষ্যদ্বাণী খোদার নিকট থেকে লাভ করে সেগুলো নিজে প্রত্যক্ষ করারও সুযোগ পেয়েছি, এগুলো পুরোপুরিভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তখন আমি নিজের সম্পর্কে নবী বা রসুল হওয়া কিভাবে অস্বীকার করতে পারি? আর যখন স্বয়ং খোদা তা'আলা আমার নাম রেখেছেন নবী, তখন আমি কি করে তা প্রত্যাখ্যান করবো এবং তাকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করবো? (এক গলতীকা এযালাহ, অষ্টম পৃষ্টা ১৯০১)। 

(৫) আল্লাহ্ তায়া'লা আমার মাঝে সকল নবীকে প্রকাশ করেছেন এবং সকল নদীর নাম আমারই দিকে সম্পর্কিত করেছেন। আমিই আদম, আমিই সীম, আমিই নূহ, আমিই ইব্রাহীম, আমিই ইসহাক, আমিই ইসমাঈল, আমিই ইয়াকুন, আমিই ইউসুফ, আমিই ঈসা, আমিই মুসা, আমিই পাউদ, আর মুহাম্মদ (সঃ)-এ নামের পূর্ণ প্রকাশ অর্থাৎ ফায়ারূপে আমিই মুহাম্মদ ও আহমদ। (হাকীকাতুল ওহী, টীকাঃ ৭২ পৃষ্টা, ১৯৩৪)
(৬) ক'দিন হলো, আমার এক অনুসারীকে বিপক্ষ দলের এক রক্তি আপত্তি হিসাবে জানলো যে, তোমরা যার হাতে বায়আত গ্রহণ করেছে। সে নিজেকে করে। এর জবাব নেতিবাচক শব্দের ঘর প্রদান করা হয়েছে (অর্থাৎ আমার অনুসারী তার জবাবে 'না' বলেছে, অথচ এ উরা মোটেই ঠিক নয়। সত্য কথা তো এই যে, খোদা তাআ'লার পবিত্র ওহী যা আমার নিকট নাযিল কর ছ র মাঝে वानूল মুরসान শব্দ রয়েছে, একবার দু'বার নয়, বরং শত শত বার। তাহলে এ (নেতিবাচক) উত্তর কি করে শুদ্ধ ও সঠিক হতে পারে? এক গলতীকা এযালাহ, ১ম পৃষ্টা, ১৯০২ ৩ ১৯৩৪)।

(৭) আমার দাবী হচ্ছে এই যে, আমি রাসুল এবং নবী ( দ্রষ্টব্য  হাকীকাতুন নবুওয়ত, মির্জা বশীর উদ্দীন মাহমুদ প্রণীত, ১ম খন্ড, ২৭২ পৃষ্টা)
(৮)  নবী যদিও অনেক এসেছেন, কিন্তু আমি পরিচিতিতে কারো চাইতে কম নই। (নূযুলে মসীহ, ৯৭ পৃষ্টা, ১ম মুদ্রন)

এ সবই তার দাবী-দাওয়ার সামান্য নমুনা, নয়তো তার লেখা বইগুলো এ ধরনের দাবীর বহরে পুর।


****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url