কাদিয়ানী ফিতনা বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান এক ও অভিন্ন (পর্ব - ৪)



[কাদিয়ানী ফিতনা বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান এক ও অভিন্ন। সকল তরীকার মুসলিমগণই কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষনার দাবী জানিয়ে আসছেন। এই বিষয়টি সাম্প্রতিক কালে আবারও খুব আলোচিত হচ্ছে। আমাদের মাঝে অনেকেই জানেন না, কাদিয়ানী কারা এবং তাদের আক্বিদা কিরূপ? আমরা এখানে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ইতিহাস, উত্থান এবং তাদের বিশ্বাস ও আক্বিদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ইন শা আল্লাহ। প্রতি পর্ব মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং অন্যান্য মুসলিম ভাই বোনদের জন্য শেয়ার করবেন এই আশা রাখছি।]



নিজেকে শ্রেষ্ট দাবী করে গোলাম আহমদ মুসলিম উম্মাহকে চরমভাবে আঘাত করেছেে

এই পর্বে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সকল নবী-রাসুলগণের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ট দাবী করে মুসলিম উম্মাহকে চরমভাবে আঘাত করেছে... এবিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। পড়ুন এবং অন্যান্য ভাই-বোনদের জন্য শেয়ার করুন।


মির্জা গোলাম আহমদের নবী করীম হওয়ার দাবী

(১) আমি হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর নামের পূর্ণতম প্রকাশিত স্বত্তা অর্থাৎ ছায়ারূপে আমিই মুহাম্মদ এবং আহমদ। (হাকিকাতুল ওহী, টীকা, ৭২ পৃষ্টা ।)

(২) আমি সেই আয়না, যার মাঝে মুহাম্মদী আকৃতি এবং মুহাম্মদী নবুওয়তের পূর্ণ প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হয়েছে । (নূযুলে মসীহ , ৪৮ পৃষ্ঠা ১৯০৬)

(৩) আমিই কুরআনের আয়াত।

তাদের পরবর্তী দল, যারা তাদের সাথে মিলেনি। এর প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত রূপে খাতামুন নাবীঈন বা শেষ নবী, আর খোদা তাআ'লা এখন থেকে বিশ বছর পূর্বে 'বারাহীনে আহমদিয়া'তে আমার নাম মুহাম্মদ ও আহম্মদ রেখেছেন এবং আমাকে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এরই সত্তা বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এভাবেই আমার নবী হওয়ার দ্বারা নবী করীম (সঃ)-এর খাতামুন নাবীঈন হওয়ার কোন প্রতিবন্ধকতা বা ফাটল সৃষ্টি হবে না। কেননা, ছায়া তার আসল অস্তিত্ব (অর্থাৎ মূল কায়া) থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন ও পৃথক হয়না। আর যেহেতু আমি ছায়ারূপে মুহাম্মদ (সাঃ) তাই আমার নবী হওয়ার দ্বারা 'খাতামুন নবীঈন'-এর মোহর ভাঙ্গেনি। কেননা, মুহম্মদ (সাঃ)-এর নবুওয়ত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রইলো। অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ)-ই নবী রয়েছেন, আর কেউ নবী হয়নি অর্থাৎ আমি যখন প্রকাশিত রূপে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্বত্তা এবং বুরূষী অর্থাৎ প্রকাশিত রূপে মুহাম্মদী পূর্ণতার গুণাবলী ও মুহাম্মদী নবুওয়ত আমার ছায়ারূপ আয়নায় প্রতিবিম্বত হচ্ছে, তখন ভিন্ন কোন স্বত্তা হলো কি যে ভিন্ন ভাবে নবী দাবী করছে? -(এক গলতী কা এযালাহ এর পৃষ্ঠা ১০-১১)
       
এ কথাগুলো উদ্ধৃতি হিসাবে আলোচনা করতে প্রত্যেকটি মুসলমানের অন্তর কেঁপে উঠবে। কিন্তু তখনি কথাগুলো এ জন্যে আনা হলো যেন এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে, 'মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিজের ভাষায় এই হচ্ছে ছায়ার ও প্রকাশিত রূপ নবুওয়তের ব্যাখ্যা যে সম্পর্কে বলা হয়, এর দ্বারা স্বতন্ত্র ও ভিন্ন নবুওয়তের দাবী করা হয় না। কিন্তু এখানে যে প্রশ্নের উদয় হয় তা হচ্ছে, যদি এই ছায়ারূপ ও প্রকাশিত রূপের গোলক ইধার মাঝে মির্জা গোলাম আহমদ সমস্ত মুহাম্মদী গুণাবলী ও মুহাম্মদী নবুওয়ত নিজের জন্যে নির্ধারণ করে নেয়, তখন কোন নবী থেকে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার প্রয়োজন রইলো না? এরপরও যদি ছায়ারূপ, প্রকাশিত প্রতিবিদিত রূপ হাল্কামানের নবুওয়তই হয়, আর এর দ্বরা 'খতমে নবুওয়তের' আত্মীদায় কোন ক্ষতি সাধন না হয়, তাহলে বলতে হয় যে, খতমে নবুওয়তের আকীদা এমন অর্থহীন আকীদা যে, যে কেউ যে কোন ধরনের নবুয়ত দাবী করায় তাতে কোন ক্ষতি হয়না, তা ভেঙ্গে যায় না। অথচ খতমে নবুওয়তের আকীদা মোটেই এমন নয়।

মির্জা গোলাম আহমদের পূর্ববর্তী নবীদের থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার দাবী

কাদিয়ানী ধর্মমতের অনুসারীরা নিজস্ব রচনায় এ কথা স্বীকার করেছে যে, মির্জা গোলাম আহমদ পূর্ববর্তী নবীদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। অথচ সে নবীদের প্রত্যেকেই (ছিলেন) সরাসরি নবী, কোন ছায়া বা প্রতিবিম্বরূপ নন। যেমন, গোলাম আহমদ কাদিয়ানির মেজো ছেলে মির্জা বশীর আহমদ এম, এ, কাদিয়ান লিখেছে-

“অনেক লোকের এ ধরনের একটা ধারনা রয়েছে যে, জিল্লী (ছায়ারূপ) বা বুরূযী (প্রতিবিম্বিত) নবুওয়ত খুব নিম্নমানের নবুওয়ত। এটা সম্পূর্ণই প্রবৃত্তির ধোঁকা, যার কোন বাস্তবতা নেই। কেননা, জিল্লী নবুওয়তের জন্যে নবী করীম (সঃ)-এর এই পরিমাণ অনুসরণ করতে হয় যে, আপন পর ভেদাভেদ লোপ পেয়ে যায়, " আমি তুমি এবং তুমি আমি স্তরে উপনীত হতে হয় এমন স্তরে পৌঁছতে পারলে তার মাঝে নবী করীম (সঃ)-এর সকল গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের প্রতিছবি প্রতিফলিত হয়। এমন কি তার সাথে নবী করীম (সঃ)-এর এতো বেশী নিকট সম্পর্ক গড়ে উঠে যে রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নবুওয়তের জামাও এই ব্যক্তিকে পরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তাকে বলা হবে 'জিল্লী নবী'। যেহেতু জিল বা ছায়াতে তার মূল বস্তুর পূর্ণ আকৃতি থাকাটাই বাঞ্ছনীয় এবং সকল নবীও তাতে একমত; অতএব যে দুর্গ মসীহ মাওউদের জিল্লী নবুওয়তকে নিম্নমানের নবুওয়ত বলে মনে করে বা অসম্পূর্ণ নবুওয়ত বলে ধারণা করে তাদের হুঁশ জ্ঞান ঠিক করা উচিত এবং নিজের ইসলামের খবর নেয়া প্রয়োজন। কেননা, সে ঐ নবুওয়তের মর্যাদাহানি ঘটিয়েছে যা সকল নবুওয়তের রাজটীকা। আমি বুঝতে পারি না, মানুষের কেন মসীহ মাওউদের নবুওয়ত নিয়ে এত দ্বিধা-সংশয়, আর কেনইবা কিছু লোক তার নবুওয়তকে অসম্পূর্ণ নবুওয়ত বলে ধারনা করে। কেননা, আমি তো দেখতে পাচ্ছি, তিনি নবী করীম (সঃ)-এর প্রকাশিত স্বত্তা হিসাবে ছায়ানবী ছিলেন তাই এই ছায়ানবীর মর্যাদা অনেক উঁচু। 

এটাতো প্রকাশ্য ব্যাপার যে, নবী করিম (সাঃ) এর পূর্বে যারা নবী হয়ে এসেছিলেন তাঁদের জন্যে এটা ছিল না যে, তাদের মধ্যে সকল গুনাবলী বিদ্যমান থাকতে হবে যা কিছু নবী করীম (সঃ)-এর মাঝে বিদ্যমান ছিল। বরং তাদের প্রত্যেককে নিজস্ব যোগ্যতা ও কাজের ধারা অনুযায়ী প্রদান করা হতো। তাই কাউকে অনেক ও কাউকে কম গুণ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু মসীহ মাওউদ- এর তো নবুওয়ত মিলেছেই তখন, যখন তিনি মুহাম্মদী নবুওয়তের সকল গুণ ও বৈশিষ্ট নিজের মাঝে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং এতোটুকু যোগ্যতা অর্জন করেছেন যে, তাকে এখন জিল্লী নবী বলা যায়। তাই, জিলালী নবুওত মসীহ মাওউদের পা-কে পিছনে টেনে নিয়ে যায়নি বরং আগে নিয়ে এসেছে। এতো বেশী আগে এনেছে যে একেবারে নবী করীম (সঃ)-এর পাশাপাশি এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। -(কলিমাতুল ফসল, রিভিউ অব রিলিজিয়ন্স  ১৪ নং খন্ড ৩য় নম্বর ১১৩ পৃষ্ঠা ১৯১৫)
       
এ আলোচনাকালেই পরবর্তীতে মির্জা বশীর আহমদ পিতা গোলাম আহমদকে হযরত ঈসা হযরত দাউন, হযরত সুলায়মান এমনকি হযরত মুসা (আঃ) থেকেও শ্রেষ্ঠ বলে দাবী করে লিখেছে-

অতএব, মসীহ মাওউদের ছায়া নবী হওয়া কোন নিম্নমানের নবী হওয়া নয়। বরং খোদার শপথ করে বলছি, এই নবুওয়ত যেখানে মনিবের অর্থাৎ নবী করীম (সঃ) এর মর্যাদা বাড়িয়েছে, সেখানে গোলামেরও (অর্থাৎ মির্জা গোলাম আহমদ এরও) মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাকে এমন স্থানে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে যেখানে বনী ইসরাঈলের নবীরাও পৌঁছতে পারেননি। তাঁকে মোবারকবাদ দেই যে, এই সূক্ষ্ম ব্যাপারটা সম্যকভাবে বুঝতে পারে এবং নিজকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারে। (পূর্বোক্ত পুস্তক, পৃষ্টা ১১৪)

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অপর পুত্র এবং দ্বিতীয় খলীফা মির্জা বশীরুদ্দীন মাহমুদ লিখেছে, "জিল্লী এবং বুরুযী নবুওয়ত কোন নিম্নমানের নবুওয়ত নয়। যদি তাই হতো, তাহলে বনী ইসরাঈলের এক নবী সম্পর্কে মসীহ মাওউদ কিভাবে এ কথা বলতে পারেন যে, "মরিয়মের পুত্রের আলোচনা বাদ দাও, গোলাম আহমদ তাঁর চাইতে উত্তম"। -(আল কাওলুল ফাসল ১৬ পৃষ্টা, ১৯১৫)

কাদিয়ানীরা নবী করীম (সাঃ) কে খাতামুন নাবীঈন মানে কি? 

এই হলো কাদিয়ানীদের কথিত জিল্লী এবং বুরুযী নবুওয়তের হাকীকত পরিচিতি, যার সম্পর্কে বলা হয়, এ ধরনের নবুওয়ত দ্বারা খতমে নবুওয়তের আকীদার কোন ক্ষতি হয় না। অথচ যার সামান্য পরিমাণ জ্ঞান-বুদ্ধি আছে এবং ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা, ইনসাফ ও আমানতদারী আছে উপরোক্ত জিল্লী ও বুরুযী নবুওয়ত সম্পর্কিত গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও তার ছেলেদের লেখা পড়ার পর তার কাছে কি এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়ে উঠবেনা যে, জিল্লী এবং বুরুযী নবুওয়তের চাইতে মারাত্মক আর কোন আক্বীদা হতে পারে না। যা খতমে নবুওয়তের আক্বীদাকে বিনষ্ট করে খতমে নবুওয়তের আক্বীদার সারবস্তুকে বিলীন করে দেয়।

জিল্লী এবং বুরুযী নবুওয়ত সম্পর্কিত আলোচনা পাঠ করার পর আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, এ ধরনের নবুওয়ত খতমে নবুওয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত ও পরিপন্থী। কেননা, খতমে নবুওয়াতের অর্থ হচ্ছে, রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পর আর কোন নবী আসবেনা, কোন লোক নবী হবে না আর জিল্লী এবং বুরুযী নবুওয়তের আক্বীদা বলে, তাঁর অন্তর্ধানের পর শুধু নবী আসতে পারে, তাই নয়, বরং এমন নবী আসতে পারে যে, হযরত আদম (আঃ) থেকে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত সকল নবীর চাইতে শ্রেষ্ঠ এবং অধিক মর্যাদার অধিকারী। শুধু তাই নয়, নবীদের সর্দার হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- এর সমস্ত গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে সে সকল নবীর মর্যাদাকে পিছনে ফেলে দুজাহানের সর্দার নবী করীম (সঃ)- এর পাশাপাশি অবস্থানকারী হতে পারে। এরপরও কি খতমে নবুওয়তের আকীদার কোন ক্ষতি করা হয় না? 

গোলাম আহমদ নবী করীম (সাঃ)-এর চাইতেও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন

বরং এই মারাত্মক আকীদায় এ সুযোগও রয়েছে যে, কেউ মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী করীম (সঃ)-এর চাইতেও শ্রেষ্ঠ ও অধিক মর্যাদাশালী বলে দাবী করতে পারে। কারণ গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যখন নবী কারীম (সাঃ)-এর দ্বিতীয় প্রকাশ পূণর্জন্মীয় রূপ, অতএব তা প্রথম প্রকাশ থেকে উত্তমও হতে পারে।

এটা শুধু বিরোধিতার খাতিরে কথা বাড়ানো বা কল্পনা মাত্র নয়। বরং কানিয়ানীদের পত্রিকা রিভিউ অব রিলিজিয়ন্স-এর প্রাক্তন সম্পাদক কাজী জহুরুদ্দীন আকমল গোলাম আহমদের প্রশংসা কীর্তন করে একটি কবিতা লিখে যা ১৯০৬ সনের ২৫ অক্টোবর 'বদর' নামক পত্রিকায় ছাপানো হয়। সে কবিতার কটি পংক্তি লক্ষ্যণীয়-

“হে প্রিয় বৎস! তিনি এ জগতের ইমাম ও নেতা, তিনি শান্তি ও নিরাপত্তার ভূবনে গোলাম আহমদ নামে প্রকাশিত হয়েছেন। গোলাম আহমদ হলেন মহান রাব্বুল আলামীনের আরশ, তাঁর আবাস যেন লা-মাকান স্তরে। (যার নির্দিষ্ট আকার না থাকায় নির্দিষ্ট আধার নেই, তার অবস্থানকে লা-মাকান বলে, যেমন আল্লাহর অবস্থান)।

মুহাম্মদ (সাঃ) আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন আর এখন তিনি পূর্বের তুলনায় অধিক মান মর্যাদার ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হয়ে এসেছেন। তাই, যে ব্যক্তির মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দেখার আগ্রহ রয়েছে সে কাদিয়ান শহরে এসে গোলাম আহমদকে দেখে নিতে পারে। -(বদর পত্রিকা, ২৫ অক্টোবর, ১৯০৬ সংখ্যা, ২য় খণ্ড, ৪৩ সংখ্যায়, ৪র্থ পৃষ্ঠা) 

এটা নিছক 'পীর উড়েনা, মুরীদরা উড়ায়' জাতীয় বাড়াবাড়ি নয়। বরং কবি এ কবিতাটি লিখে মির্জা গোলাম আহমদকে পড়ে শোনায় এবং মির্জা গোলাম আহমদের নিকট হস্ত লিখিত কপি উপহার দেয়। গোলাম আহমদ-এর প্রত্যুত্তরে জাযাকাল্লাহ বলে অভিনন্দন ও আন্তরিক সন্তোষও প্রকাশ করছিল। এ কথাগুলো স্বয়ং কাজী জহুরুদ্দীন আকমল আল-ফজল পত্রিকার ২২ আগস্ট ১৯৪৪ সংখ্যায় বিস্তারিত ভাবে লিখেছেঃ “এটুকু ঐ কবিতার একটি অংশ যে কবিতাটি মসীহ মাওউদ (আঃ)-এর উপস্থিতিতে পড়ে শুনানো হয়েছিল এবং সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখে তাঁর সমীপে পেশ করা হয়েছিল এবং তিনি নিজে সেটা বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গিয়েছিলেন। সে সময় এ কবিতাংশের উপর কেউ কোন আপত্তি করেনি। অথচ তখন উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে মৌলভী মুহাম্মদ আলী (লাহোরী জামাতের আমীর) এবং তার সঙ্গী সাথিগণও সেখানে হাজির ছিলেন। যতটুকু আমার স্মরণ হয়, আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, তারা সবাই শুনতে ছিলেন। তারা যদি আজ যুগ পরিবর্তনের কারণে তা অস্বীকার করেন, তাহলে জেনে রাখুন, এ কবিতাটি সে সময় 'বদর' নামক পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল আর আজকাল 'আল-ফজল' পত্রিকার যে পজিশন, সে সময় 'বদর' পত্রিকা এই পজিশনে বরং এর চাইতে ভালো পজিশনে ছিল। পত্রিকাটির সম্পাদক মুফতী মুহাম্মদ সাদেক সাহেবের সাথে লাহোরী গ্রুপের লোকজনের বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ এবং আন্তরিক সম্পর্ক ছিল তিনি এখনো আল্লাহর মেহেরবানীতে বেঁচে আছেন। তাঁর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পাবেন এবং নিজেরা এ কথার উত্তর দিন যে, আপনারা এ কবিতা শোনার পর কোন আপত্তি বা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন কিনা। হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ) এই কবিতা শোনার পর 'জাযাকাল্লাহ' বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করার পর এবং এ পংক্তিগুলোকে নিজে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যাবার পর কারো কি এ অধিকার রয়েছে যে, সে কবিতার এ অংশটিতে আপত্তি করে নিজের ঈমানের দুর্বলতা এবং মারেফাতের স্বল্পতা প্রকাশ করে? -(আল ফজল ৩২ খন্ড, ১৯৬ সংখ্যা ২২ আগষ্ট ১৯৪৪, পৃষ্টা ৬)
       
এ আলোচনাতেই কবি আরো লিখেছে- 
এই কবিতাটি 'খুতবায়ে এলহামিয়্যা' পড়ার পর হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ)-এর যুগেই বলা হয়েছিল, তাঁকে শোনানোও হয়েছিল এবং ছাপানোও হয়েছিল। (পূর্বোক্ত, ৬ পৃষ্ঠা, ২ ও ৩ কলাম ১৯৬৪)

উপরোক্ত কবিতা নিয়ে লেখা আলোচনা পড়ে স্পষ্টভাবেই এ কথা বুঝা গেল যে, এ সব শুধু কাব্যিক উচ্ছাস নয়, বরং সুস্পষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জিল্লী ও বুরুযী নবুওয়তের ধ্যান-ধারণার স্বাভাবিক ফলশ্রুতি। কবিতাটির ভাব ও বিষয়বস্তু গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর লেখা 'খুতবারে এলহামিয়া' থেকেই গৃহীত হয়েছে। আর মির্জা গোলাম আহমদ কবিতাটির শুধু সত্যায়ন করেছে তাই নয়, বরং এতে আনন্দ ও খুশী প্রকাশ করেছে।

'খুতবায়ে এলহামিয়া'র যে কথাগুলো থেকে কবি এ মর্মার্থ গ্রহন করেছে সে অংশটুকু হলো, গোলাম আহমদ লিখেছে যে, কেউ এ কথা অস্বীকার করবে যে, নবী করীম (সঃ)-এর নবুওয়ত প্রাপ্তি ষষ্ঠ সহস্রের সঙ্গে সম্পর্কিত যেমন তিনি পঞ্চ সহস্রের সাথে সম্পর্কিত ছিলেন, সে সত্যের এবং কুরআনের সুস্পষ্ট বিধানের অস্বীকার করবে তাই নয়, সত্য কথা তো এই যে, নবী করীম (সঃ)-এর রুহানীয়্যাত (আত্মিক মান মর্যাদা) ঘষ্ঠ সহস্রের শেষে এই যুগে পূর্বের সে সময়ের তুলনায় অধিক শক্তিশালী, অধিকতর পূর্ণ এবং অধিকতর মজবুত। বরং এটা যেন পূর্ণিমার রাতের চাঁদ হয়ে উদ্ভাসিত হয়েছে। তাই এখন আর তরবারী ও লড়াকু দলের কোনই প্রয়োজন নাই। আর এজন্যেই খোদা তাআলা মসীহ মাওউদের নবুওয়ত প্রাপ্তির জন্যে শতাব্দীর হিসাবকে রাসূলে করীম (সঃ)-এর হিজরত হতে বদরের রাতের হিসাবের মত গ্রহণ করেছেন। যেন এই হিসাব ঐ স্তর যা উন্নতির সমস্ত স্তরের পূর্ণতম ও শ্রেষ্ঠতম পর্যায় নির্দেশ করে। (খুতবারে এলহামিয়াহ ২৭১, ১৯০২)
উল্লেখিত আলোচনার দ্বারা স্পষ্টই বুঝা গেল যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর প্রকাশিত রূপের মাধ্যমে নবী করীম (সঃ) হতে অধিক মর্যাদাশালী হওয়া স্বয়ং কাদিয়ানীর আক্বীদা বিশ্বাস ছিল, যা সে খুতবায়ে এলহামিয়্যাহ-এর উল্লেখিত উদ্ধৃতিতে আলোচিত করেছে। এরই ব্যাখ্যা করে কাজী আকমল পূর্বে বর্ণিত কবিতা লিখেছে এবং গোলাম আহমদ নিজে তার প্রশংসা করেছে।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url