রমজানের বিশেষ প্রবন্ধঃ মাহে রমজানেই নিহিত রয়েছে সারা বছরের শান্তি-নিরাপত্তা






মাহে রমজানেই সারা বছরের শান্তি-নিরাপত্তা


مَنْ سَلِمَ لَهُ رَمَضَانُ سَلِمَتْ لَهُ السَّنَةُ

যার রমজান মাস সঠিকভাবে অতিবাহিত হবে, (আল্লাহপ্রদত্ত তাওফিকে) তার পুরো বছর সঠিকভাবে অতিবাহিত হবে।

   

আল্লাহ পাকের অসংখ্য দয়া ও অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদের মাহে রমজান দান করেছেন, রমজানের মোবারক ও বরকতপূর্ণ মুহূর্তগুলো আমাদের নসিব করেছেন। এ মাস আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ, বরকত ও কল্যাণ অবতীর্ণ হওয়ার মাস, এ মাস মাগফিরাত ও ক্ষমা, নাজাত ও জাহান্নাম হতে মুক্তির পরোয়ানা লাভের মাস। এ মাস কুরআন শরিফ নাজিলের জন্য নির্বাচিত মাস ।

এ মাসে আল্লাহ পাকের রহমতের সুশীতল বায়ুমালা বান্দার জন্য প্রবাহিত হতে থাকে, বরকতের বারিধারা বান্দাদের ওপর মুষলধারে বর্ষিত হতে থাকে। এ মাসে মাগফিরাত ও ক্ষমার বাহানা তালাশ করা হয়। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকেন-

يَا بَاغِيَ الخير أقبلُ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرُ »

আছ কোনো মাগফিরাত ও ক্ষমার ভিখারি? আমি ক্ষমা করে দেবো। আছ কোনো রিজিক ও জীবিকার প্রত্যাশী? আমি রিজিক দান করব। আছ কোনো অসুস্থ বা বিপদগ্রস্ত? আমি সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করব।

মোটকথা, আল্লাহ পাক আপন রহমত ও বরকতে সিক্ত করার জন্য মহা মূল্যবান এক মৌসুম আমাদেরকে দান করেছেন। তাই প্রথমত এ নিয়ামতের গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। যদি আমরা এর গুরুত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারি এবং সে অনুযায়ী এ মাস অতিবাহিত করতে পারি, তাহলে তা আমাদের জীবনের এক বিস্ময়কর পট পরিবর্তনের কারণ হবে।

সর্ব প্রথম আমি আপনাদের সামনে যে হাদিসখানা পেশ করেছি, তাতে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার রমজান মাস শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত হয়, তার পুরো বছর শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত হবে।

প্রকৃতপক্ষে এ হাদিস আমাদের জন্য এক নববি খোশখবরি! নবীজি সুসংবাদ দিয়ে বলছেন, যে ব্যক্তি শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে রমজান মাস অতিবাহিত করবে, আল্লাহ পাক তাকে তার এই আমলের উসিলায় পুরো বছর শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত করার তাওফিক দিয়ে দেবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে আমরা রমজান মাস শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত করব? শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত করার অর্থ ও উদ্দেশ্য কী? এ বিষয়টিই আজকে সামান্য আলোকপাত করার ইচ্ছা করছি। আল্লাহ পাক আমাকে ও আপনাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

রমজান মাস শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে কাটানোর অর্থ

রমজান মাস শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত করার একটি অর্থ হলো রমজানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেসব বিশেষ ইবাদত নির্ধারিত করেছেন, তা সঠিকভাবে আদায় করা।

   

যেমন রমজানের একটি বিশেষ ইবাদত হচ্ছে রোজা রাখা। আল্লাহ পাক মাহে রমজানে বান্দার ওপর রোজা ফরজ করেছেন। অন্য মাসে রোজা রাখা ফরজ নয়; কেউ রাখলেও তা নফল হিসেবে বিবেচিত হয়। তো এই রোজার ইবাদতকে সঠিকভাবে আঞ্জাম দিতে হবে। সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার অর্থ সবগুলো রোজা রাখতে হবে; রোজার যাবতীয় আদব বজায় রেখে রোজা রাখতে হবে। আদব বজায় রেখে আদায় করা রোজা সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۳

হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। [সুরা বাকারাঃ ১৮৩] অর্থাৎ রমজানের রোজার বদৌলতে আমরা তাকওয়ার মহাদৌলত লাভ করতে পারব।

রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন

রমজানে রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া কীভাবে অর্জিত হবে –এ বিষয়টি যথার্থরূপে উপলব্ধি করুন।

একজন মুসলমান যখন রোজা রাখে, সে যত বড় গুনাহগার হোক না কেন, যদি প্রচণ্ড গরমের দিনও হয়, পিপাসায় কাতরও হয়, দরজা-জানালা বন্ধ কামরায় একাকীও হয়, হাতের নাগালে ফ্রিজে ঠান্ডা পানিও থাকে, আর তার নফস তাকে প্ররোচিত করতে থাকে যে, যাও! উঠে পানি পান করে নাও, কেউ দেখবে না; বলুন, তারপরও কি সে পানি পান করবে? বরং কেউ যদি তাকে বলে, 'নাও, এই পানিটুকু পান করে রোজা ভেঙে ফেলো; তোমাকে একলাখ টাকা দেবো', তারপরও একজন মুসলমান উত্তর দেবে, 'না, রোজা ভাঙব না' ।

অথচ পানি পান করলে দেখার কেউ নেই, জানার কেউ নেই, তিরস্কার বা ভর্ৎসনা করার কেউ নেই, পাকড়াও করার কেউ নেই। তবুও কেন পান করবে না? কারণ একটাই, হৃদয়ে সুপ্ত এই অনুভূতি যে, আল্লাহ তো দেখছেন। মূলত এরই নাম তাকওয়া।

আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে এই ভয়ে আপন প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে নিবৃত্ত থাকার নামই তো তাকওয়া। কুরআনে তাকওয়ার এই পরিচয়ই দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে—

وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَعَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى

আর যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় পোষণ করেছে এবং নিজেকে মন্দ চাহিদা হতে বিরত রেখেছে, জান্নাতই হবে তার ঠিকানা। [সুরা নাযিআত: ৪০-৪১] 

তারাবি যেমন সুন্নাত, তারাবির জামাতও সুন্নাত

রমজানের আরেকটি বিশেষ ইবাদত হচ্ছে তারাবির নামাজ আদায় করা। তারাবি রমজানের বিশেষ ইবাদত। অন্য মাসে জামাতের সঙ্গে নফল নামাজ পড়া মাকরূহ; অথচ রমজানে জামাতে তারাবি পড়া সুন্নাত ।

আল্লাহ তাআলা আমাদের ওপর তারাবির নামাজ রোজার মতো ফরজ করেননি। তারাবির নামাজ ফরজ বা ওয়াজিব না হওয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি অনেক বড় ইহসান ও অনুগ্রহ।

হাদিস শরিফে এসেছে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন প্রথম তারাবি পড়া শুরু করেন, তখন কারও সঙ্গে জামাতে পড়েননি; বরং একাকীই পড়েছেন। মসজিদে নববির এক কোণে নবীজির জন্য চাটাই দিয়ে হুজরার মতো তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল; নবীজি সেখানে ইতিকাফ করতেন। নবীজি সেখানেই দণ্ডায়মান হয়ে তারাবি শুরু করেন। সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ বিষয়টি লক্ষ করে নবীজির পেছনে দাঁড়িয়ে যান এবং ইকতেদা করেন। প্রথম দিন অল্প কয়েকজন সাহাবি নবীজির ইকতেদা করেছিলেন। দ্বিতীয় দিন বিষয়টি অনেক সাহাবিই জানতে পারেন এবং প্রথম দিনের তুলনায় বেশি সংখ্যক সাহাবি নবীজির পেছনে জামাতে তারাবি আদায় করেন। তৃতীয় দিন মসজিদে নববি পূর্ণ হয়ে যায়। নবীজির পেছনে তারাবি পড়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সবাই মসজিদে সমবেত হয়। সেদিন নবীজি বলেন, আমাদের এই জামাতের নামাজ আল্লাহ তাআলার অনেক পছন্দ হয়েছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, না-জানি এ নামাজ আল্লাহ তাআলা আমাদের ওপর ফরজ করে দেন। আর আল্লাহ যদি ফরজ করেই দেন, আর তোমরা কখনো প্রাণবন্ততা ও উদ্দীপনার অভাবে তা আদায় না করো, তাহলে তো ফরজ তরকের কঠিন গুনাহ হবে। তাই আগামীকাল থেকে আমি আর তোমাদের সঙ্গে নিয়ে তারাবি আদায় করব না। তোমরা নিজ নিজ ঘরে পড়ে নেবে।

   

এরপর থেকে সাহাবায়ে কেরাম তারাবির নামাজ নিজ নিজ বাড়িতেই আদায় করতে থাকেন। কেউ একা, কেউ বা দু-চারজন মিলে।

হজরত উমর রাযি. নিজ খেলাফতকালে একদিন মসজিদে নববিতে এসে দেখেন সাহাবায়ে কেরাম দুজন, চারজন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারাবি আদায় করছেন। তিনি এ সময় চিন্তা করেন যে, এখন তো ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা শেষ হয়ে গেছে। কারণ, ওহি অবতীর্ণ হওয়ার বরকতময় ধারার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আর তারাবির জামাত নবীজির পছন্দও হয়েছিল। তাই তিনি উপস্থিত সবাইকে এক ইমামের পেছনে তারাবি পড়ার নির্দেশ দেন আর সকলের ইমাম বানিয়ে দেন সেই মহান সাহাবিকে, যার সম্বন্ধে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ফরমান হলো, 'উবাই বিন কাব সবচেয়ে বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের অধিকারী।' যদিও সাহাবায়ে কেরামের মোবারক ও পবিত্র জামাতের প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন যাবতীয় উত্তম ও প্রশংসনীয় গুণের অধিকারী; কিন্তু একেক সাহাবির একেক ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্ব ছিল। যেমন হজরত আলি রাযি. সম্পর্কে নবীজি ইরশাদ করেছেন, 'আলি হলো বিবাদ-মোকাদ্দমার সমাধানে সর্বশ্রেষ্ঠ।' যায়দ বিন সাবিত রাযি. সম্পর্কে নবীজি ইরশাদ, 'যায়দ হলো মিরাস (মৃত ব্যক্তির পরিত্যাজ্য সম্পদ) বণ্টনে সবচেয়ে বিজ্ঞ।' মুআয বিন জাবাল রাযি. সম্পর্কে নবীজির স্বীকৃতি, 'হালাল- হারামের জ্ঞান সবচেয়ে বেশি মুআয বিন জাবালের।' তেমনই তিলাওয়াতে কুরআনে অনন্য ও অদ্বিতীয় ছিলেন উবাই বিন কাব রাযি। আর তাই মুসলমানদের তারাবির ইমামতি করার জন্য খলিফা উমর রাযি. তাকেই নির্বাচিত করেন এবং সকলে তার পেছনে কুরআন খতম করেন ।

পরের দিন উপস্থিত হয়ে হজরত উমর রাযি. যখন সবাইকে উবাই বিন কাবের পেছনে এক জামাতে নামাজ আদায়রত দেখতে পান, তখন তিনি আনন্দিত চিত্তে মন্তব্য করেন, 'কী চমৎকার বিষয় এটি!'

এরপর থেকে সর্বযুগে তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গেই পড়া হচ্ছে। আর নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ

(তোমরা আমার সুন্নাত ও কর্মধারা যেমন অনুসরণ করবে) সুপথের অধিকারী আমার খলিফাদের সুন্নাত ও নীতি-আদর্শও অনুসরণ করবে। আর তাই তারাবির নামাজ আদায় করা যেমন সুন্নাত, তারাবি জামাতে আদায় করাও স্বতন্ত্র সুন্নাত ।

তারাবির মাধ্যমে আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ হয়

রমজানের দ্বিতীয় বিশেষ ইবাদত তারাবি । আমার শায়খ হজরত আরিফি রহ. বলতেন, এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনেক বড় ফজল ও করম, দয়া ও মেহেরবানি যে, তিনি রমজানের প্রতিটি রাতে প্রত্যেক মুমিন বান্দার জন্য অতিরিক্ত চল্লিশটি একান্ত সান্নিধ্য দান করেছেন। প্রতি রাতে বিশ রাকাত তারাবিতে চল্লিশটি সিজদা; একেকটি সিজদা আল্লাহ নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের একেকটি পরম মুহূর্ত। সিজদা আল্লাহ পাকের একান্ত সান্নিধ্য লাভের সর্বোচ্চ স্তর। বান্দা সিজদার হালতে আপন রবের যতটা নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করে, তা অন্য কখনো করে না।

এ কারণেই পবিত্র কুরআন মাজিদের এক স্থানে ইরশাদ হয়েছে- ‘সিজদা করো ও নিকটবর্তী হও।’ [সুরা আলাক : ১৯]

মাত্র দুই শব্দের কী গভীর মর্মসমৃদ্ধ বাণী! কী চমৎকার ব্যঞ্জনা! সিজদা করো আর আমার একান্ত সান্নিধ্যে এসে যাও। এমনিতে তো আল্লাহ তাআলা বান্দার নিকটেই থাকেন। ইরশাদ হয়েছে-

وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ 

আমি তার (বান্দার) গলদেশের ধমনি অপেক্ষাও তার বেশি নিকটবর্তী। [সুরা কাফ: ১৬]

অর্থাৎ যে শিরা দিয়ে পুরো শরীরে রক্ত সঞ্চালন হয়, গ্রীবাস্থিত সেই শিরা হতেও আল্লাহ তাআলা বান্দার অধিক নিকটে! আল্লাহ তো বান্দার এত কাছে; কিন্তু বান্দা?! বান্দা বহু দূরে! বান্দার দিল-দেমাগ, চিন্তা-চেতনা এবং হৃদয় ও আত্মাজুড়ে কেবল গাইরুল্লাহর চিন্তা-ভাবনা, প্রীতি ও আকর্ষণ। অন্তরে গাইরুল্লাহর এই আকষর্ণের কারণে বান্দার অন্তরে আল্লাহর নৈকট্যের অনুভব ও অনুভূতিই থাকে না। ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহ গলদেশ হতে নিকটে থাকা সত্ত্বেও বান্দা উদাসীন থাকে, আল্লাহ হতে দূরে থাকার অনুভূতিতে আচ্ছন্ন থাকে।

তাই তো ফার্সি ভাষার জনৈক কবি বলেছেন-

تو که از طرف خویش بمن نزدیکی من که از طرف خویش بغایت دورم

হে আল্লাহ, আপনি তো আপনার দিক থেকে আমার অনেক কাছে! গ্রীবাদেশ থেকেও কাছে! কিন্তু আমি তো আমার দিক থেকে আপনার থেকে দূরে, বহু দূরে!

প্রবৃত্তির ধোঁকা ও চাহিদা, লোভ ও লিপ্সার ফাঁদে পড়ে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে অনেক দূরে সরে পড়েছি। সকাল-সন্ধ্যা, দিবস-রজনী পার্থিব নানা চিন্তায় ডুবে আছি। এ বিষয়েই আমার রচিত একটি পক্তি হলো-

جو دیا ہے قرب تو نے تو شعور بھی عطا کر بڑی دور ہے ابھی تک رگِ جان کی مسافت

হে আল্লাহ, এখনও (এত কাছের) গ্রীবাদেশের ধমনী আমার অনুভূতিতে দূর-বহুদূর! তুমি নৈকট্য দানে যখন ধন্য করেছ, নৈকট্যের অনুভূতিও দান করে চির ধন্য করো।

এ কারণেই আল্লাহ পাক আমাদের ডেকে বলছেন, সিজদা করো আর আমার কাছে এসে যাও। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোচ্চ মাকাম হচ্ছে সিজদা।

সিজদা করার সময় এ চিন্তা করতে হবে যে, আমি কার সামনে মস্তক অবনত করছি? কার দরবারে ললাট স্পর্শ করছি? যদি এ চিন্তা করে আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত করে সিজদা করা হয়, তাহলে কী হবে?

আমাদের বুজুর্গ হজরত খাজা আজিজুল হাসান মজযুব রহ. বলতেন, আল্লাহকে তখন এত সহজে পাওয়া যাবে যে, স্বগত কণ্ঠে উচ্চারিত হবে-

وہ اتنے تھے قریب کہ دل ہی میں مل گئے میں جارہا تھا دور کے ساماں کئے ہوئے

তিনি ছিলেন এত কাছে! পেয়ে গেলাম হৃদয়-মাঝে! আমি তো বের হচ্ছিলাম দূর সফরের প্রস্তুতি নিয়ে!

তো আরজ করছিলাম প্রতিটি সিজদা একটি বড় নিয়ামত, প্রতিটি সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে, সান্নিধ্য আরও গভীর ও নিবিড় হতে থাকে। রমজানের ত্রিশ দিনে তারাবির উসিলায় অতিরিক্ত আরও বারশ বার আল্লাহর নিবিড় সান্নিধ্য নসিব হয়। এটি সাধারণ কোনো বিষয় নয়; আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অনেক বড় অনুগ্রহ দান। সুতরাং রমজানকে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত করার একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে—রমজানের বিশেষ ইবাদতসমূহ তথা রোজা ও তারাবি যথাযথভাবে আদায় করা। যদি এভাবে রমজানকে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত করা হয়, তাহলে নবীজির ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের পুরো বছর শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে অতিবাহিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে রমজান শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে কাটানোর তাওফিক দান করুন। রমজানের বিশেষ ইবাদত রোজা ও তারাবি যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং রমজানের উসিলায় পুরো বছরের শান্তি ও নিরাপত্তা নসিব করুন। আমিন।

*** (মুফতি তাকি উসমানি (দামাত বারাকাতুহু) এর রমজান বিষয়ক বিশেষ বয়ান সংকলন ‘আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাযান’ থেকে সংকলিত)



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url