রমজানের বিশেষ প্রবন্ধঃ লাইলাতুল কদরের আমল





লাইলাতুল কদরের আমল

   

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে”।

মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে,

لمن قامها ابتغاءها إيمانًا، وَاحْتِسَابًا ثُم وقفت له غفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَرَه

“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করবে, অতঃপর সে রাত লাভ করার তাওফীকপ্রাপ্ত হবে, তার পিছনের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে।

নাসাঈর বর্ণনায় এসেছে,

وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ».

“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তাঁর পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে"


রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কদরের রাত্রে যা করতেন

এ রাতের কিয়াম হলো, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় ও অন্যান্য সালাত আদায় করা। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু 'আনহাকে দো'আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুফইয়ান রহ. বলেন, লাইলাতুল কদরে দো'আ করা আমার কাছে সালাত আদায়ের চেয়ে অধিক প্রিয়। আর যদি কুরআন তিলাওয়াত করে, দো'আ করে এবং দো'আর দ্বারা আল্লাহ নৈকট্য তালাশ করে তাহলে তা উত্তম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং দীর্ঘ কিরাত পড়তেন। রহমাতের কোনো আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে রহমাত চাইতেন, আযাবের আয়াত আসলে তাঁর কাছে পানাহ চাইতেন। অতএব, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত, কিরাত, দো'আ ও গবেষণা একত্রিত করতেন।

   

রমযানের শেষ দশকে ও অন্যান্য সময় এভাবে সালাত আদায় করা উত্তম। শা'বী বলেন, কদরের দিন রাতের মতোই মর্যাদাবান। ইমাম শাফেঈ রহ বলেন, কদরের রাতের পরিশ্রমের মতো কদরের দিনেও ইবাদতে কঠোর পরিশ্রম আমি মুস্তাহাব মনে করি। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

يا رَسُول الله، أرأيت إن وافقت ليلة القدر ما أذهو؟ قال: تقولين: اللهم إنك عفو تحب العلو قاعفُ علي

“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কী দো'আ পড়বো? তিনি বলেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আল্লাহর পরিচয় লাভকারীগণ আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্ব জানার কারণে তার সমীপে নতজানু হয়ে পড়ে। পাপীগণ ক্ষমার ঘোষণা শুনে আল্লাহর কাছে তাওবা করে ক্ষমার আশা করে। সুতরাং হয় মুক্তি চাইবে নতুবা জাহান্নামে যাবে। তবে লাইলাতুল কদরে এবং রমযানের শেষ দশকে ইবাদতে কঠোর পরিশ্রম করার পরেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে: কারণ, আল্লাহর সত্যিকার পরিচয় লাভকারীরা বান্দাগণ ভালো কাজে কঠোর পরিশ্রম করে থাকেন কিন্তু নিজেদের আমল, অবস্থা ও কথাবার্তার দিকে তাকান না, বরং তারা আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। যেমনটি ঘটে থাকে নিজের অপরাধ স্বীকারকারী গুনাহগারের অবস্থা। এজন্যই মুতাররিফ রহ, তার দো'আয় বলতেন, হে আল্লাহ আপনি আমাদের ওপর রাজি-খুশি হয়ে যান। আর যদি আপনি রাজি-খুশি না হন তাহলে অন্তত আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

তথ্যসূত্রঃ
সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০১ ৷
মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২২৭১৩, শুআইব আৱনাউত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন; তবে দুটি ইবারত ব্যতীত। 

নাসাঈ, হাদীস নং ৩৪০৫। নাসাঈর হাদীসে bus all be pls ; কথাটি সাওমের সাথে সম্পৃক্ত; কিন্তু গ্রন্থকার এটিকে লাইলাতুল কদরের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়ে হাদীসকে সহীহ বলেছেন। (অনুবাদক)

১ম তিরমিযী, ৩৫৩১, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবন মাজাহ, ৩৮৫০, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। মুসতাদৱাক হাকিম, ১৯৪২, ইমাম হাকিম রহ. বলেছেন, হাদিসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ, তবে তারা কেউ তাখরিজ করেন নি।

   

*** ইবন রজব আল-হাম্বলী রহ. এর ‘লাতায়িফুলমা ‘আয়রফ’ অবলম্বনে ‘রমযানের দায়িত্ব-কর্তব্য’ থেকে সংকলিত




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url