মা’আরেফুল কোরআন - ৫৫ || সূরা আল-বাকারাহ, ১৫৮ || সাফা ও মারওয়া‘র মধ্যে সায়ী’ করা ওয়াজিব







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৫৮

 اِنَّ الصَّفَا وَ الۡمَرۡوَۃَ مِنۡ شَعَآئِرِ اللّٰهِ ۚ فَمَنۡ حَجَّ الۡبَیۡتَ اَوِ اعۡتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِ اَنۡ یَّطَّوَّفَ بِهِمَا ؕ وَ مَنۡ تَطَوَّعَ خَیۡرًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ شَاکِرٌ عَلِیۡمٌ ﴿۱۵۸

সূরা আল-বাকারাহ ১৫৮ নং আয়াতের অর্থ

(১৫৮) নিঃসন্দেহে 'সাফা' ও ‘মারওয়া' আল্লাহ্ তা'আলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম । সুতরাং যারা কা'বাঘরে হজ্জ বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দু'টিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সেই আমলের সঠিক মূল্য দেবেন।

সূরা আল-বাকারাহ ১৫৮ নং আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র

   

যোগসূত্র
পূর্ববর্তী আয়াতগুলোর মধ্যে وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ শুরু করে সুদীর্ঘ আলোচনায় কা’বার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গাদি সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে। এর প্রথমে ছিল কা’বা শরীফ ইবাদতের স্থান হওয়া সংক্রান্ত আলোচনা এবং পরে ছিল হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দোয়া সম্পর্কিত বিবরণ। সে দোয়ার মাঝেই হযরত ইবরাহীম (আ) ’মানাসেক’-এর নিয়ম-পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়ার জন্য নিবেদন করেছিলেন। আর এই ’মানাসেক’-এর মধ্যে হজ্জ এবং ওমরাহ্ও অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তী আলোচনায় বায়তুল্লাহ্কে কেবলায় পরিণত করে একদিক থেকে ইবাদতের বিশেষ স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে তেমনি হজ্জ ও ওমরাহর কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করে এর গুরুত্বকে আরো সুস্পষ্ট করে তোলা হয়েছে। পরবর্তী আয়াতেও বায়তুল্লায় হজ্জ এবং ওমরাহ্ পালন সম্পর্কিত অপর একটি প্রসঙ্গে—’সাফা’ ও ’মারওয়ায়’ প্রদক্ষিণের বিষয় আলোচিত হয়েছে। ‘সাফা’ এবং ’মারওয়া’ বায়তুল্লাহ সন্নিহিত দু’টি পাহাড়ের নাম। হজ্জ কিংবা ওমরার সময় কা’বাঘর তওয়াফ করার পর এ দু’টি পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াতে হয়। শরীয়তের পরিভাষায় একে বলা হয় ’সায়ী’। জাহিলিয়ত যুগেও যেহেতু এ সায়ীর রীতি প্রচলিত ছিল এবং তখন এ দুটি পাহাড়ের মধ্যে কয়েকটি মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। এজন্য মুসলমানদের কারো কারো মনে এরূপ একটা দ্বিধার ভাব জাগ্রত হয়েছিল যে, বোধ হয় এ ’সায়ী’ জাহিলিয়ত যুগের কোন অনুষ্ঠান এবং ইসলাম যুগে এর অনুসরণ করা হয়তো গোনাহর কাজ। কোন কোন লোক যেহেতু জাহিলিয়ত যুগে একে একটা অর্থহীন কুসংস্কার বলে মনে করতেন, সেজন্য ইসলাম গ্রহণের পরও তাঁরা একে জাহিলিয়ত যুগের কুসংস্কার হিসাবেই গণ্য করতে থাকেন। এরূপ সন্দেহের নিরসনকল্পে আল্লাহ্ পাক যেভাবে বায়তুল্লাহ শরীফের কেবলা হওয়া সম্পর্কিত সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েছেন, তেমনিভাবে পরবর্তী আয়াতে বায়তুল্লাহ সংশ্লিষ্ট আরো একটি সংশয়ের অপনোদন করে দিয়েছেন।

সূরা আল-বাকারাহ ১৫৮ নং আয়াতের তাফসীর

(সাফা ও মারওয়ার মধ্যকার সায়ী’র ব্যাপারে কোন দ্বিধা-সংশয় অন্তরে স্থান দিও না), নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া (এবং এতদুভয়ের মাঝে ‘সায়ী’ করা দীনেরই একটা স্মরণীয় ঘটনা ও) আল্লাহর নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত (এবং দীনের ঐতিহ্য। সুতরাং) যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ্ততে হজ্জ কিংবা ওমরাহ্ পালন করে তার উপর মোটেও গোনাহ হবে না (যেমন, তোমাদের মনে সংশয়ের উদ্রেক হয়েছে) এ দু’য়ের মধ্যে সায়ী করাতে (তার চিরাচরিত পন্থা অনুসারে, এতে গোনাহ্ তো নয়ই; বরং সওয়াব হবে। কারণ, সায়ী শরীয়তের দৃষ্টিতেও একটা সৎকর্ম ।) এবং (আমার নিয়ম হচ্ছে--) কোন ব্যক্তি যদি সানন্দচিত্তে কোন সৎকর্ম সম্পাদন করে, তবে আল্লাহ্ তা’আলা তার (অত্যন্ত) কদর করে থাকেন। (এবং সেই সৎকর্ম সম্পাদনকারীর নিয়ত ও আন্তরিক নিষ্ঠা সম্পর্কে) খুব ভালভাবেই জানেন (সুতরাং এ নিয়মেই যারা সায়ী করে তাদের নিয়ত এবং ইখলাসের অনুরূপ সওয়াব বা প্রতিদান দেওয়া হবে)। 

শব্দ বিশ্লেষণঃ شَعَائِرِ اللَّهِ এখানে شَعَائِرِ শব্দটি شعيرة শব্দের বহুবচন। এর অর্থ চিহ্ন বা নিদর্শন। شَعَائِرِ اللَّهِ বলতে সেসব আমলকে বোঝায়, যেগুলোকে আল্লাহ্ তা’আলা দীনের নিদর্শন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।

حج -এর শাব্দিক অর্থ উদ্দেশ্য স্থির করা। কোরআন-সুন্নাহর পরিভাষায় বায়তুল্লাহ শরীফের উদ্দেশ্যে গমন এবং সেখানে বিশেষ সময়ে বিশেষ ধরনের কয়েক প্রকার আমল সম্পাদন করাকে বলা হয় হজ্জ।

عمرة -শব্দের আভিধানিক অর্থ দর্শন করা। শরীয়তরে পরিভাষায় বায়তুল্লাহ শরীফে হাযির হয়ে তওয়াফ-সায়ী প্রভৃতি বিশেষ ধরনের কয়েকটি ইবাদত সম্পাদন করার নামই ওমরাহ্ ।

‘সায়ী’ ওয়াজিব

হজ্জ, ওমরাহ্ এবং সায়ীর বিস্তারিত বিবরণ ফিকহর কিতাবসমূহে আলোচিত হয়েছে। ‘সায়ী’ করা ইমাম আহমদ (র)-এর মতে সুন্নত, ইমাম মালিক (র) ও ইমাম শাফেয়ী (র)-এর মতে ফরয, ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে ওয়াজিব। যদি কোন কারণে তা ছুটে যায়, তবে একটা ছাগল জবাই করে কাফ্ফারা দিতে হবে।

উপরোক্ত আয়াতের শব্দবিন্যাস থেকে এরূপ ধারণা ঠিক হবে না যে, আয়াতে তো ’সাফা এবং ’মারওয়ার’ মধ্যে সায়ী করাতে গোনাহ্ হবে না’ বলা হয়েছে। এর দ্বারা বড়জোর এটা একটা মোস্তাহাব কাজ বলে সাব্যস্ত হতে পারে, ওয়াজিব হওয়ার কারণ কি ?

এখানে বোঝা দরকার যে, فَلَا جُنَاحَ (অর্থাৎ, গোনাহ হবে না) কথাটা প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে বলা হয়েছে। কেননা, প্রশ্ন ছিল, যেহেতু সাফা ও মারওয়াতে মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল এবং জাহিলিয়ত যুগের লোকেরা সায়ীর মাধ্যমে সে মূর্তিরই পূজা-অর্চনা করতো, সেহেতু এ কাজটি হারাম হওয়া উচিত। এরূপ প্রশ্নের জবাবেই বলা হয়েছে যে, এতে কোন গোনাহ নেই। আর যেহেতু এটা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর প্রবর্তিত সুন্নত, কাজেই কারো কোন বর্বরসুলভ আমল দ্বারা এটা গোনার কাজ বলে সাব্যস্ত হতে পারে না। প্রশ্নের জবাবে এরূপ বলাতে এ আমলটি ওয়াজিব হওয়ারও পরিপন্থী বোঝা যায় না।





******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url