মা’আরেফুল কোরআন - ৫৬ || সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৫৯-১৬২ || ইলমে-দীনের প্রকাশ ও প্রচার করা ওয়াজিব এবং গোপন করা হারাম ||






بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১৫৯-১৬২



 اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡتُمُوۡنَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا مِنَ الۡبَیِّنٰتِ وَ الۡهُدٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا بَیَّنّٰهُ لِلنَّاسِ فِی الۡکِتٰبِ ۙ اُولٰٓئِکَ یَلۡعَنُهُمُ اللّٰهُ وَ یَلۡعَنُهُمُ اللّٰعِنُوۡنَ ﴿۱۵۹  اِلَّا الَّذِیۡنَ تَابُوۡا وَ اَصۡلَحُوۡا وَ بَیَّنُوۡا فَاُولٰٓئِکَ اَتُوۡبُ عَلَیۡهِمۡ ۚ وَ اَنَا التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۶۰  اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ مَاتُوۡا وَ هُمۡ کُفَّارٌ اُولٰٓئِکَ عَلَیۡهِمۡ لَعۡنَۃُ اللّٰهِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ النَّاسِ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۱۶۱  خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ۚ لَا یُخَفَّفُ عَنۡهُمُ الۡعَذَابُ وَ لَا هُمۡ یُنۡظَرُوۡنَ ﴿۱۶۲

সূরা আল-বাকারাহ ১৫৯-১৬২ নং আয়াতের অর্থ

(১৫৯) নিশ্চয় যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা মাখিল করেছি মানুষের জন্য; কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারিগণেরও। 
(১৬০) তবে যারা তওবা করে এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন করে ও মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সে সমস্ত লোকের তওবা আমি কল করি এবং আমিই তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। 
(১৬১) নিশ্চর যারা কুফরী করে এবং কাফির অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহ্র ফেরেশতাগণের এবং সমগ্র মানুষের লা'নত। 
(১৬২) এরা চিরকাল এ লা'নতের মাঝেই থাকবে। তাদের উপর থেকে আযাব কখনও হালকা করা হবে না এবং এরা বিরামও পাবে না ।

সূরা আল-বাকারাহ ১৫৯-১৬২ নং আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র

   

যোগসূত্র
পূর্ববর্তী আয়াতে কেবলার প্রসঙ্গ আলোচনা করতে গিয়ে যার কারণে বায়তুল্লাহ্ শরীফকে কেবলা হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তার সম্পর্কে আহলে-কিতাবদের সত্য গোপন করার কথা আলোচিত হয়েছিল। এখানে الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ থেকে لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ পর্যন্ত সে প্রসঙ্গটিরই পরিপূরক হিসাবে সত্য গোপনকারী এবং এ ব্যাপারে যারা বাড়াবাড়ির আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের শাস্তি ও তওবা করলে তা ক্ষমা করার ওয়াদার বিষয় বর্ণিত হচ্ছে।

সূরা আল-বাকারাহ ১৫৯-১৬২ নং আয়াতের তাফসীর

তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
যেসব লোক সে সমস্ত তথ্য গোপন করে, যা আমি নাযিল করেছি (এবং) যেগুলো (নিজে নিজেই) অত্যন্ত সুস্পষ্ট এবং (অন্যদের জন্যও) পথপ্রদর্শক (এবং এ গোপন করাও এমন অবস্থায়) যখন আমি (এ সব তথ্য) কিতাবে (তওরাত ও ইঞ্জীলে নাযিল করে) সাধারণ লোকদের জন্য প্রকাশ করে দিয়েছে, এ সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহ্ তা’আলা অভিসম্পাত করেন (খাস রহমত থেকে তাদের বঞ্চিত করে দেন) এবং (অন্যান্য অনেক) অভিসম্পাতকারীও (যারা এরূপে ঘৃণ্য কাজ অপছন্দ করে) তাদের প্রতি অভিশাপ প্রেরণ করে (তাদের প্রতি বদ-দোয়া করে।) কিন্তু (এসব গোপনকারীদের মধ্য থেকে) যেসব লোক (তাদের সে সমস্ত ঘৃণ্য কাজ থেকে) তওবা করে (আল্লাহর সামনে অতীতের সেসব ক্রিয়া-কর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে) এবং যা কিছু করেছে (এবং তাদের সে দুষ্কর্মের দ্বারা যে সব অনাচার হয়ে গেছে, পরবর্তী সময়ের জন্য সে সবের) সংশোধন করে (সে সংশোধনের পন্থা হচ্ছে গোপন করা সেসব তথ্য) প্রকাশ করে দেয় ( যেন সবাই তা জানতে পারে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার দায়িত্ব অবশিষ্ট না থাকে । শরীয়তের দৃষ্টিতে এ প্রকাশ করা তখনই গ্রহণযোগ্য হবে, যখন তারা ইসলাম গ্রহণ করবে। কেননা, ইসলাম কবুল না করা পর্যন্ত সর্বসাধারণের নিকট প্রকৃত সত্য গোপনই থেকে যাবে। তারা মনে করবে যে, যদি মুহাম্মদ (সা)-এর নবুয়ত সত্যই হতো, তবে এসব আহলে-কিতাব, (যারা তাদের কিতাবসমূহে তাঁর আবির্ভাবের সুসংবাদ পাঠ করেছে, তারা) অবশ্যই ইসলাম কবূল করত। (মোটকথা, যে পর্যন্ত তারা মুসলমান না হয়, সে পর্যন্ত তওবা কবূল হবে না) তবে এসব লোকের প্রতি আমি (অনুগ্রহ করে) মনোযোগ প্রদান করি (এবং তাদের দোষত্রুটি ক্ষমা করে দেই)। আমার নিয়মই হচ্ছে তওবা কবূল করা ও অনুগ্রহ করা। (তবে সত্যিকার অর্থে তওবাকারী হওয়া চাই)। অবশ্য (এদের মধ্য থেকে) যেসব লোক ইসলাম গ্রহণ করবে না এবং ইসলাম গ্রহণ না করা অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করবে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহ্ তা’আলা, ফেরেশতাগণ এবং সমস্ত মানুষের লা’নত (এমনভাবে বর্ষিত হবে যে) ওরা চিরকালই এতে (অভিশাপে পতিত) থাকবে। (মোটকথা, এরা চিরকালের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যারা চির-জাহান্নামী তারা সব সময়ের জন্যই আল্লাহ্ তা’আলার বিশেষ রহমত থেকে বঞ্চিত থাকবে। চিরঅভিশপ্ত থাকার অর্থই তা-ই। উপরন্তু জাহান্নামে প্রবেশ করার পর কোন সময়ই) তাদের উপর থেকে (জাহান্নামের আযাব হালকা হবে না এবং (প্রবেশ করার আগেও) তাদেরকে সামান্য সময়ের জন্যও বিরাম দেওয়া হবে না।

সূরা আল-বাকারাহ ১৫৯-১৬২ নং আয়াতের জ্ঞাতব্য বিষয় সমূহ

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়

ইলমে-দীনের প্রকাশ ও প্রচার

ইলমে-দীনের প্রকাশ ও প্রচার করা ওয়াজিব এবং গোপন করা হারাম।
উল্লিখিত আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ যে সমস্ত প্রকৃষ্ট হেদায়েত অবতীর্ণ হয়েছে, সেগুলো মানুষের কাছে গোপন করা এত কঠিন হারাম ও মহাপাপ, যার জন্য আল্লাহ্ তা’আলা নিজেও লা’নত বা অভিসম্পাত করে থাকেন এবং সমগ্র সৃষ্টিও অভিসম্পাত করে। এতে কয়েকটি বিষয় জানা যায়ঃ প্রথমত, যে জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার বিশেষ জরুরী, তা গোপন করা হারাম। রসূলে করীম (সা) ইরশাদ করেছেনঃ

مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ يَعْلَمُهُ فَكَتَمَهُ أَلْجَمَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ

“যে লোক দীনের কোন বিধানের ইলম জানা সত্ত্বেও তা জিজ্ঞেস করলে গোপন করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেবেন।” — হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা ও আমর ইবনে আস (রা) থেকে ইবনে মাজাহ রেওয়ায়েত করেছেন।

ফিকহবিদগণ বলেছেন, এ অভিসম্পাত আরোপিত হবে তখনই, যখন অন্য কোন লোক সেখানে উপস্থিত থাকবে না। যদি অন্যান্য আলিম লোকও সেখানে উপস্থিত থাকেন, তবে একথা বলে দেওয়া যেতে পারে যে, অন্য কোন আলিমকে জিজ্ঞেস করে নাও (কুরতুবী, জাসসাস)

দ্বিতীয়ত, এতে বোঝা যাচ্ছে যে, কোন বিষয়ে যার যথাযথ ও বিশুদ্ধ জ্ঞান নেই, তার পক্ষে মাসআলা-মাসায়েল ও হুকুম-আহ্কাম বলার দুঃসাহস করা উচিত নয়। তৃতীয়ত, জানা যায় যে ’জ্ঞানকে গোপন করার’ অভিসম্পাত সে সমস্ত জ্ঞান ও মাসআলা গোপন করার ব্যাপারেই প্রযোজ্য, যা কোরআন ও সুন্নাহয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে এবং যার প্রকাশ ও প্রচার করা কর্তব্য। পক্ষান্তরে এমন সূক্ষ্ম ও জটিল মাসআলা সাধারণ্যে প্রকাশ না করাই উত্তম, যদ্দ্বারা সাধারণ লোকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। তখন তা كتمان علم বা জ্ঞানকে গোপন করার হুকুমের আওতায় পড়বে না। উল্লিখিত আয়াতে مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى বাক্যের দ্বারাও তেমনি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তেমনিভাবে মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেন, তোমরা যদি সাধারণ মানুষকে এমন সব হাদীস শোনাও যা তারা পরিপূর্ণভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না, তবে তাদেরকে ফেতনা-ফাসাদেরই সম্মুখীন করবে। (কুরতুবী)

সহীহ্ বুখারীতে হযরত আলী (রা) থেকে উদ্ধৃত রয়েছে। তিনি বলেছেন যে, “সাধারণ মানুষের সামনে ইলমের শুধুমাত্র ততটুকু প্রকাশই করবে, যতটুকু তাদের জ্ঞান-বৃদ্ধি বরদাশত করতে পারে। মানুষ আল্লাহ্ ও রসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করুক; তোমরা কি এমন কামনা কর? কারণ, যে কথা তাদের বোধগম্য নয়, তাতে তাদের মনে নানারকম সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হবে এবং তাতে করে তারা আল্লাহ্ ও রসূলকে অস্বীকারও করে বসতে পারে।

এতে বোঝা যাচ্ছে যে, যাদের উদ্দেশ্যে কোন বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে, তাদের অবস্থার অনুপাতে কথা বলাও আলেমের একটি অন্যতম দায়িত্ব। যাদের পক্ষে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হওয়ার আশংকা রয়েছে, তাদের সামনে এমন মাসআলা-মাসায়েল বর্ণনা করবে না। সে জন্যই বিজ্ঞ ফিকহবিদগণ বহু বিষয় বর্ণনাশেষে লিখে থাকেন هَذَا مِمَّا يَعْرِفُ وَلَا يَعْرِفُ অর্থাৎ—’এ বিষয়টি এমন যা আলেমগণ জেনে নেবেন, কিন্তু সাধারণ্যে প্রচার করবেন না। অর্থাৎ তা উচিত হবে না।


এক হাদীসে রসূলে করীম (সা) ইরশাদ করেছেনঃ

 لاتمنعوا اهلها فتظلموهم ولا يضعوها في غير أهلها فتظلموها

অর্থাৎ—নিগূঢ় তত্ত্বের বিষয়সমূহ এমন লোকদের কাছে গোপন করবে না, যারা তার পূর্ণ যোগ্য। যদি তোমরা এমন কর, তাহলে তা মানুষের উপর জুলুম হবে। পক্ষান্তরে যারা যোগ্য নয়, তাদের সামনে হেকমত বা সূক্ষ্ম তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করবে না। কারণ, এটাই হবে সে বিষয়ের উপর জুলুম।

ইমাম কুরতুবী বলেন, এই বিশ্লেষণে একথাও বোঝা যাচ্ছে যে, কোন কাফির যদি মুসলমানের বিরুদ্ধে তর্ক-বিতর্কে প্রবৃত্ত হয় কিংবা কোন বিদ’আতপন্থী যদি মানুষকে নিজের ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণার প্রতি আমন্ত্রণ জানায়, তবে তাদেরকে দীনের ইলম শেখানো ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েয নয়, যতক্ষণ না স্থির বিশ্বাস হয়ে যায় যে, ইলম শিক্ষা করার পর তাদের ধ্যান-ধারণা বিশুদ্ধ হবে।

তেমনিভাবে কোন বাদশাহ কিংবা শাসককে এমন বিষয়াদি বাতলে দেওয়া জায়েয নয়, যেগুলোর মাধ্যমে সে প্রজা সাধারণের উপর উৎপীড়নের পন্থা উদ্ভাবন করতে পারে। তেমনিভাবে সাধারণ লোকদের সামনে ধর্মীয় বিধি-বিধানের ’হিলা’ বা বিকল্প পন্থাসমূহের দিকগুলো বিনা কারণে বর্ণনা করাও বাঞ্ছনীয় নয় ! কারণ, তাতে মানুষ দীনী হুকুম-আহ্কামের ব্যাপারে নানা রকম ছল-ছুতার অন্বেষণে অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। (কুরতুবী)

হাদীসও কুরআনের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত

রসুলে করীম (সাঃ)-এর হাদিসও কুরআনের হুকুমেরই অন্তর্ভুক্ত।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি বলেছেন, ’যদি কোরআনের আয়াত’ না থাকত, তবে আমি তোমাদের কাছে কোন হাদীস বর্ণনা করতাম না। এখানে আয়াত বলতে সে সমস্ত আয়াতকে বোঝানো হয়েছে, যাতে ইল্‌ম গোপন করার ব্যাপারে কঠোর অভিসম্পাত করা হয়েছে। এমনিভাবে অন্যান্য সাহাবীর মধ্যেও অনেকে হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে এমনি ধরনের কথা বলেছেন যে, ইলম গোপন করার ব্যাপারে যদি কোরআনের এ আয়াতটি না থাকত, তাহলে আমি এ হাদীস বর্ণনা করতাম না।

কাজেই এসব রেওয়ায়েত দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, সাহাবায়ে কেরামের নিকট রসূলে করীম (সা)-এর হাদীসও কোরআনের হুকুমেরই অনুরূপ ছিল। কারণ, আয়াতে গোপন করার ব্যাপারে সে সমস্ত লোকের প্রতিই অভিসম্পাত করা হয়েছে, যারা অবতীর্ণ সুস্পষ্ট ও প্রকৃষ্ট হেদায়েতসমূহ গোপন করবে। হাদীসে তার পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু সাহাবাগণ রসূলে করীম (সা)-এর হাদীসসমূহকেও কোরআনের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন, তা গোপন করাকেও অভিসম্পাতযোগ্য বলে ধারণা করেছেন।

সমগ্র সৃষ্টির লা’নত

কোন্ কোন্ পাপের জন্য সমগ্র সৃষ্টি লা’নত করে

وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ

আয়াতে কোরআনে-করীম লা’নত বা অভিসম্পাতকারীদের নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেনি, কারা লা’নত করে! তফসীর শাস্ত্রের ইমাম হযরত মুজাহিদ ও ইকরিমা (র) বলেছেন, এভাবে বিষয়টি অনির্ধারিত রাখাতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, দুনিয়ার প্রতিটি বস্তু এবং প্রতিটি সৃষ্টিই তাদের উপর অভিসম্পাত করে থাকে। এমনকি জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গও তাদের প্রতি অভিসম্পাত করে। কারণ, তাদের অপকর্মের দরুন সে সব সৃষ্টিরও ক্ষতি সাধিত হয়। হযরত বারা’ ইবনে আযেব (রা) বর্ণিত এক হাদীসেও তার সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে রসূলে করীম (সা) বলেছেন, اللَّاعِنُون -এর অর্থ হলো সমগ্র পৃথিবীতে বিচরণশীল সমস্ত জীব। (কুরতুবী)

কাকে কখন লানত করা যাবে

কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি লা’নত করা ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েয নয়, যতক্ষণ না তার কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ

বাক্যাংশের দ্বারা জাসসাস ও কুরতুবী প্রমুখ উদ্ভাবন করছেন যে, যে কাফির কুফর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে বলে নিশ্চিত নয়, তার প্রতি লা’নত করা বৈধ নয় । আর আমাদের পক্ষে যেহেতু কারও শেষ পরিণতির (মৃত্যুর) নিশ্চিত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়ার কোন উপায় নেই, সেহেতু কোন কাফিরের নাম নিয়ে, তার প্রতি লা’নত বা অভিসম্পাত করাও জায়েয নয়। বস্তুত রসূলে করীম (সা) যে সমস্ত কাফিরের নামোল্লেখ করে লা’নত করেছেন, কুফর অবস্থায় তাদের মৃত্যু সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে তিনি অবহিত হয়েছিলেন। অবশ্য সাধারণ কাফির ও জালিমদের প্রতি অনির্দিষ্টভাবে লা’নত করা জায়েয।

এতে একথাও প্রতীয়মান হয়ে যায় যে, লা’নতের ব্যাপারটি যখন এতই কঠিন ও নাজুক যে, কুফর অবস্থায় মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোন কাফিয়ের প্রতিও লা’নত করা বৈধ নয়, তখন কোন মুসলমান কিংবা কোন জীব-জন্তুর উপর কেমন করে লা’নত করা যেতে পারে? পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষ, বিশেষত আমাদের নারী সম্প্রদায় একান্ত গাফলতিতে পড়ে আছে। তারা কথায় কথায় নিজেদের আপনজনদের প্রতিও অভিসম্পাত বাক্য ব্যবহার করতে থাকে এবং শুধু লা’নত বাক্য ব্যবহার করেই সন্তুষ্ট হয় না; বরং তার সমার্থক যে সমস্ত শব্দ জানা থাকে সেগুলোও ব্যবহার করতে কসুর করে না। লা’নতের প্রকৃত অর্থ হলো, আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। কাজেই কাউকে ’মরদুদ’, ’আল্লাহর অভিশপ্ত’ প্রভৃতি শব্দে গালি দেওয়াও লা’নতেরই সমপর্যায়ভুক্ত।




******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url