অনর্থক গুনাহ -২ || কারও দোষ ধরা, দোষ অনুসন্ধান করা, পরনিন্দা ও অপবাদ দেওয়ার শাস্তি ||





আড়ি পেতে বা গোপনে কথা শোনা

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, কোন ব্যক্তি কোন কথা কারো কাছ থেকে গোপন করতে চায়, কিন্তু যে কৌশলে বা ফন্দি করে তা শুনে, কিয়ামতের দিবসে তার কানে গরম শীশা গালিয়ে ডালা হবে। ইহাও স্বাদহীন এবং অনুপকারী গুনাহ। কিন্তু সাধারণ মানুষ এতে লিপ্ত। আল্লাহ তা'আলা এসব থেকে রক্ষা করুন।

   

বিনা অনুমতিতে কারো বাড়িতে প্রবেশ করা

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, “যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে ঘরবাসীর জন্য জায়েয উঁকিদাতার চোখ অন্ধ করে দেয়া।” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এও ইরশাদ ফরমান, “যে ব্যক্তি অনুমতির পূর্বে কারো ঘরের পর্দা উঠিয়ে ঘরের ভিতরে দৃষ্টি করে সে এমন একটি কাজ করল যা তার জন্য হালাল নয়।” -(তিরমিযী)

এ হুকুমটিকে সাধারণ মানুষ অজ্ঞতার কারণে কেবল মেয়ে মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মনে করে। পুরুষ মহলে প্রবেশ করা অথবা উঁকি দিয়ে দেখাকে এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না এবং বিনা কারণে এ কবীরা গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হয়। তবে এমন পুরুষ মহল যা যাতায়াতের জন্য খুলা থাকে, যেমন বাজারের দোকানসমূহ বা কারখানা, ফ্যাক্টরী ইত্যাদি বা কোন বিশেষ সময়ে খুলা হয়, তাহলে উহাতে ঐ সময় অনুমতি লওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্য সময় গেলে অনুমতির প্রয়োজন আছে ।

বংশ তুলে গালি দেওয়া বা বিদ্রূপ করা

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান যে, বংশাবলী কারো জন্য গালি নয় এবং তোমরা সবাই আদমের সন্তান প্রত্যেকেই একে অন্যের নিকটবর্তী। একজন অন্যজনের উপর কোন মর্যাদা নেই দ্বীন এবং সৎকর্ম ব্যতীত। -(আহমদ এবং বায়হাকী বর্ণনা করেছেন)

   

অন্য এক হাদীছে ইরশাদ ফরমানঃ দু'টি জিনিসের ইচ্ছা করাও কুফর অর্থাৎ কুফরের নিকটবর্তী। একটি বংশের দ্বারা কারো দোষারূপ করা। দ্বিতীয়টি মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চ স্বরে ক্রন্দন করা। -(মুসলিম ২য় খন্ডে ৫২ পৃষ্ঠা) ।

কুরআনে করীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ “যারা মুসলমানদিগকে এমন বিষয়ে লজ্জা দেয়, যা তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত তারা অপবাদ দিল এবং প্রকাশ্য গুনাহর করল।” যে ব্যক্তি অন্যকে তার বংশের কারণে বিদ্রূপ করে যে, অমুক এমন বংশের লোক বা অমুকের ছেলে, সে ব্যক্তিও এ শাস্তির অন্তর্ভুক্ত। -(যাওয়াজের ২য় খণ্ডের ৫২ পৃষ্ঠা) এটিও কবীরা গুনাহ, স্বাদহীন এবং অনুপকারী, পার্থিব কোন কাজ বা কর্ম তার উপর নির্ভর করে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে অনবহিত ও অমনোযোগী। অনেক সম্প্রদায়কে, অনেক ব্যবসায়ীকে হেয় মনে করে এবং বিদ্রূপ করে অথবা এমন শব্দ দ্বারা সম্বোধন করে যাতে তার বংশের প্রতি ঘৃণা বা অবজ্ঞা প্ৰকাশ পায় যেমন কাউকে নাপিত, কসাই বা তাঁতি বলে ডাকা। (আল্লাহ তা'আলা সকলকে এ প্রকারের গুনাহ থেকে রক্ষা করুন)।

নিজ বংশ ত্যাগ করে অন্য বংশের পরিচয় দেয়া

যেমন কোন ব্যক্তি সিদ্দিকী নয় কিন্তু নিজকে সিদ্দিকী বলে পরিচয় দান করা, যে সায়্যিদ নয় সায়্যিদ লেখা বা কুরাইশী নয় নিজে কুরাইশী বলে প্রকাশ করা, আনসারী নয় কিন্তু আনসারী বলে নিজেকে প্রকাশ করা ।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতার পরিচয় পরিত্যাগ করে অন্য বংশের দিকে নিজেকে সম্পর্ক করে, তার জন্য জান্নাত হারাম। -(বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ)।

ইহা কবীরা গুনাহ এবং বস্তুতঃভাবে উহা স্বাদহীন এবং অনুপকারী । এই প্রকার বংশের পরিবর্তনকে সম্মানের বিষয় মনে করা সম্পূর্ণ ভুল। এতে পার্থিব জগতেও সম্মান পাওয়া যায় না ।

গালমন্দ এবং অশ্লীল কথা বলা

গালি দেয়া এবং অশ্লীল কথা বলার অর্থ এমন কথা বা কাজ যা প্রকাশ করাকে মানুষ লজ্জাবোধ করে। যদি ঘটনা সত্য ও বাস্তব হয় তাহলে শুধু গালি দেয়ার গুনাহ হবে, আর যদি ঘটনার বিপরীত হয়, তাহলে দ্বিতীয় গুণাহ অপবাদেরও হবে। যেমন কোন ব্যক্তি বা তার মা বোনের প্রতি কোন হারাম কর্মের সম্পর্ক সাব্যস্ত করা। হাদীছ শরীফে আছে যে, মুসলমানকে গালি দেয়া ফিসক বা গুনাহ এবং তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কুফর। -(তারগীব ২য় খণ্ড ২৮৫ পৃষ্ঠা)।

হযরত জাবির বিন সুলায়ম (রাঃ) যখন মুসলমান হলেন তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে কয়েকটি প্রতিজ্ঞা নিলেনঃ এক. “কাউকে গালি দিও না। হয়রত জাবির (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শুকরীয়া, আমি সে চুক্তি পূর্ণ করেছি। এরপর থেকে আমি কাউকেও গালি দেইনি। এমন কি কোন উট, বকরী, জীব জন্তুকেও নয়। দুই. নেক কাজকে ছোট মনে করে ছেড়ে দিও না । তিন. মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে হাসি মুখে সাক্ষাৎ কর এবং সৎ ব্যবহার কর। চার. পায়জামা বা লুঙ্গি পায়ের গোছার মধ্যভাগে যেন থাকে। অন্যথায় অন্ততঃ পায়ের গিটের উপরে রাখ। গিটের নীচে করা কঠোর গুনাহ থেকে বাঁচ। কেননা, উহা অহংকারের নিদর্শন। পাঁচ. যদি কোন ব্যক্তি তোমার প্রতি এমন দোষ আরোপ করে যা তোমার মধ্যে আছে বলে জান, তবে তুমি (প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে) তার প্রতি এমন দোষ প্রকাশ কর না যা তার মধ্যে আছে বলে তুমি জান ৷

   

দীর্ঘ এক হাদীস শরীফে সতী-সাধ্বী মহিলাদের প্রতি অবৈধ কর্মের অপবাদ দেয়াকে কবীরা গুনাহর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। -(তারগীর ৩য় খণ্ডে ২৮৯ পৃষ্ঠা)।

অধিকাংশ সময় গালির মধ্যে মা, বোন, কন্যার প্রতি অবৈধ কাজের অপবাদ দেয়া হয়, ইহাও সে প্রতিশ্রুত শাস্তির অন্তর্ভুক্ত। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য এমন কথা বলে যা তার মধ্যে নেই, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তাঁকে দোযখের অগ্নিতে সেই সময় পর্যন্ত আবদ্ধ করে রাখবেন যতক্ষণ না সে নিজ কথার শাস্তি ভোগ করবে। -(তারগীর ২য় খণ্ডে ২৮৯ পৃষ্ঠা)। গালমন্দের মধ্যে সাধারণতঃ এমন কথাই বলা হয় যা প্রতিপক্ষের মধ্যে নেই। হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি আপন গোলামকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় (যদিও দুনিয়াতে শরীআতের দণ্ড বিধি তার উপর কার্যকর হবে না) তবে কিয়ামতের দিবসে অপবাদের শাস্তি দেয়া হবে । -(বুখারী, মুসলিম ও তারগীব)

- হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আল-আস (রাঃ) স্বীয় ফুফুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য গেলেন। তিনি তাঁর জন্য খানা আনার আদেশ দিলেন। বাদী খানা আনতে বিলম্ব করলে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসল, হে ব্যভিচারিনী! শীঘ্রই কেন আনছিস না? আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বললেন, আপনি অত্যন্ত মন্দ কথা বলে ফেললেন। আপনি কি তার ব্যভিচার সম্বন্ধে খবর রাখেন? তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ; তা আমার জানা নেই। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, যে ব্যক্তি স্বীয় দাসীকে ব্যভিচারিনী বলে ডাকবে অথচ সে তার ব্যভিচার সম্বন্ধে খবর রাখে না, কিয়ামতের দিবসে এ দাসী তাকে বেত্রাঘাত করবে। -(তারগীব ৩য় খণ্ডে ২৮৯ পৃষ্ঠা)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অশ্লীল কথা থেকে বিরত থাক। আল্লাহ তা'আলা অশ্লীলতা এবং অশ্লীল কথাকে অপছন্দ করেন । অশ্লীল কথার অর্থ এমন কথা যা প্রকাশ করলে মানুষ লজ্জিত হয়, যদিও উহা বাস্তবে সত্য ।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ মুশরিকদেরকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন, যারা বদরের যুদ্ধে নিহত হয়েছিল । তিনি তাও বলেছিলেন যে, তাদেরকে গালি দিলে তাদের কোন প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি হবে না, তবে জীবিতদের কষ্ট হয়। -(তাখরীজুল ইহইয়া)

হাদীস শরীফে আছে যে, মুমিন দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, গালিদাতা এবং অশ্লীল বক্তা হতে পারে না। -(তিরমিযী)

উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কাফির কিংবা জন্তু-জানোয়ারকেও গালি দেয়া, আশ্লীল বাক্য ব্যবহার করা হারাম। কাজেই মুসলমানকে গালি দেয়া কত কঠোর গুনাহ হবে তা সহজেই অনুমেয়। যদি এমন কিছু কাজ যা প্রকৃত পক্ষে জায়েয কিন্তু প্রকাশ করলে মানুষ লজ্জিত হয় যেমন, সঙ্গম এবং তার আনুসাঙ্গিক, তবে ইহাও গালি দেয়ার গুনাহ হবে। আর যদি অবাস্তব, হারাম কাজের সঙ্গে কোন ব্যক্তি বা তার মা, বোন বা জীব-জন্তুকে জড়িত করে, তাহলে দ্বিতীয় গুনাহ অপবাদের হবে।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এই গুনাহের মধ্যে অসংখ্য মুসলমান লিপ্ত রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের বাসিন্দা এবং চতুষ্পদ জন্তু লালন-পালনকারীদের মুখ থেকে গালি ব্যতীত কোন কথাই বের হয় না। তাদের অনুভূতিতেই আসেনা যে, আমরা গালি দিয়েছি। পদে পদে, মুহূর্তে মুহূর্তে কবীরা গুনাহের বোঝা তাদের মাথায় উঠিয়ে নিচ্ছে। উক্ত গাফিল ব্যক্তিদের কোন পরওয়াই নেই। একটু চিন্তা করুন, এসমস্ত গুনাহ্র মধ্যে কি কোন প্রকার স্বাদ এবং পার্থিব উপকার রয়েছে? ইহা ছেড়ে দিলে কি অসুবিধা হবে? কিন্তু আফসুস! আল্লাহ তা'আলা এবং তাঁর প্রেরিত রসূলের নাফরমানী এবং তাদের অসন্তুষ্টির কোন ভয়ই নেই।

অভিশাপ দেয়া

এর অর্থ কাউকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া বা আল্লাহর গজব এবং ক্রোধে পতিত হওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষা করা বা দোষখী বলে সম্বোধন করা যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রহমত থেকে বিতারিত করুন কিংবা আল্লাহ তা'আলার গজব পতিত হোক কিংবা জাহান্নামে নিপতিত হোক । : অর্থাৎ অভিশাপের তিনটি বস্তু আছে। এক, যে আ'মাল এবং স্বভাবের জন্য কুরআন ও হাদীসে অভিশাপ দেয়া হয়েছে উক্ত গুণাবলী সম্বলিতদের ব্যাপকভাবে অভিশাপ দেয়া। যেমনঃ

لَعْنَتُ اللهِ عَلَى الْكَافِرِينَ لَعْنَتُ اللهِ عَلَى الظَّالِمِينَ )

কাফের এবং যালেমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক । এটা সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। দ্বিতীয়, কোন বিশেষ ভ্রষ্ট দলকে ভ্রষ্টতার জন্য লানত করা যে ইয়াহুদ নাসারাদের উপর লানত কিংবা রাফেযী ও খারিজীদের প্রতি অভিশাপ কিংবা সুদখুরদের উপর অভিশাপ। ইহাও সর্বসম্মত জায়িয। তৃতীয়, কোন বিশেষ ব্যক্তি যায়েদ ও উমর কিংবা নির্দিষ্ট দল যেমন অমুক শহরের বাসিন্দা বা কোন বংশ বা গোত্রের উপর অভিসম্পাত করা অত্যন্ত বিপৎসঙ্কুল ব্যাপার। এতে সতর্কতা অবলম্বন করা চাই। কেননা যে কর্মের কারণে কোন ব্যক্তি অভিম্পাতের উপযুক্ত হয় প্রথমে তো উহার পূর্ণাঙ্গ নিশ্চয়তা প্রতিপাদনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৃঢ় হয় না যে, অমুক ব্যক্তি কিংবা সম্প্রদায় উক্ত কাজটি করেছে। অধিকাংশই উহাতে মন্দ ধারণা ও ভুল সংবাদের প্রভাব থাকে ।

তাহকীক ব্যতীত কেবল ধারনার উপর অভিসম্পাত করা হারাম। দ্বিতীয়তঃ সেই মন্দ কর্মের উপরও অভিসম্পাদ তখনই উপযুক্ত হয় যখন জানা থাকে যে, সে ব্যক্তি উহা থেকে তাওবা করেনি এবং ভবিষ্যতে মৃত্যুর পূর্বেও তাওবা করবে না। আর ইহা স্পষ্ট যে, কোন বিশেষ ব্যক্তি বা সম্প্রদায় সম্পর্কে এইরূপ দৃঢ় জ্ঞান লাভ করা যে, সে তাওবা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না, ইহা ওহী ব্যতীত অসম্ভব । কাজেই ইহার হক অধিকার কেবল নবী ও রসূলের লাভ হতে পারে যে, কোন বিশেষ ব্যক্তি কিংবা সম্প্রদায় সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে জেনে বলবেন যে, অমুক কবীরা গুনাহে লিপ্ত রয়েছে এবং তাওবা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না, তার উপর অভিসম্পাত করবে। অন্য কারো এই হক বা অধিকার নেই। এ জন্যই অধিকাংশ আলিম ইয়াযিদের উপর অভিসম্পাত করতে নিষেধ করেছেন। –(ইহইয়াউল উলূম ১০২ পৃষ্ঠা)

মোটকথা, কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত বিশেষ ব্যক্তি বা সম্প্রদায় ব্যতীত অভিসম্পাত করা হারাম। হাদীছে শরীফে আছে, যার উপর অভিসম্পাত করা হয় যদি সে ব্যক্তি অভিসম্পাতের উপযুক্ত না হয়, তাহলে সে অভিসম্পাত অভিশাপ বর্ষণকারীর উপর পতিত হয়। (আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ) হাদীছ শরীফে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, আল্লাহ তা'আলার গজব, ক্রোধ বা জাহান্নামের অভিশাপ বা বদ-দু'আ কারো জন্য কর না । -(আবূ দাউদ তিরমিযী) অন্য হাদীছে আছে যে, মুমিনকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যা করার ন্যায় গুনাহ। (বুখারী ও মুসলিম)। যেমন কোন মুসলমানকে অভিসম্পাত করা জায়েয নেই তেমন কোন নির্দিষ্ট কাফিরকে অভিসম্পাত করাও নাজায়েয, এমনকি কোন জীব জন্তুকেও না। হাদীছ শরীফে আছে, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির সঙ্গে সফরে ছিলেন, ঐ ব্যক্তি উটকে অভিসম্পাত করলে তিনি বললেন যে, উটকে তুমি অভিসম্পাত করেছো কাজেই ঐ উটে চড়ে আমাদের সঙ্গে চল না ।

উপদেশঃ এ স্বাদহীন এবং অনুপকারী গুনাহর মধ্যে হাজার হাজার মুসলমান বিশেষ করে মহিলাগণ লিপ্ত রয়েছে। তাদের মুখে আল্লাহর মার, আল্লাহর অভিশাপ, রহমত থেকে বঞ্চিত, আগুন লাগুক, আল্লাহর গজব পড়ুক ইত্যাদি শব্দ এমনভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে যে, কথায় কথায় উক্ত শব্দগুলো উচ্চারিত হয়। অথচ এ সকল শব্দ অভিসম্পাত করার শব্দ বলে বিবেচিত। এগুলো ব্যবহার হারাম এবং এগুলো যারা বলে তাদের ইহকাল ও পরকাল ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহ তা'আলা সকল মুসলমানকে তা থেকে রক্ষা করুন ।

চুগলখোরী বা পরচর্চা
কেউ স্বীয় দোষ, কথা বা কাজকে সে গোপন রাখতে চায়, তা অন্যের নিকট প্রকাশ করাকে ‘চুগলী' (কারো দোষ প্রকাশ করা) বলে। ইহা কবীরা গুনাহ। যদি সে দোষ তার মধ্যে সত্যই বর্তমান থাকে তাহলে শুধু ‘চুগলী' করার গুনাহ হবে। যদি তার মধ্যে দোষ না থাকে, বা বর্ণনার সময় নিজ পক্ষ থেকে কিছু হ্রাস বৃদ্ধি করে বা বর্ণনার পদ্ধতি মন্দ হয়, তাহলে অপবাদের জন্য পৃথক একটি কবীরা গুনাহ হবে। এবং যার পক্ষ থেকে এ দোষ বর্ণনা করা হয় তার কোন দোষ যদি প্রকাশ পায়, তাহলে ইহা হবে আর একটি কবীরা গুনাহ। একটি কথার মধ্যে তিনটি কবীরা গুনাহ হয়ে যাবে।

   

হযরত উমর বিন আবদুল আযীয (রাঃ)-এর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে কোন ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোন কথা নকল করলেন। তিনি বললেন দেখ, আমি এ কথার খোঁজ খবর নিব। যদি তুমি মিথ্যুক সাব্যস্ত হও তবে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবেঃ

إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَاءٍ فَتَبَيِّنُوا .

“যদি তোমাদের নিকট কোন ফাসিক খবর নিয়ে আসে তুমি তার অনুসন্ধান কর।” আর যদি সত্যবাদী হও তাহলে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে ।

এতে "পরের দোষ এবং পর নিন্দাকারী” আর যদি তুমি ক্ষমা চাও ক্ষমা করে দিব এবং এখানেই কথা শেষ করে দিব। সে ব্যক্তি বলল, “হে আমীরুল মুমিনীন আমি ক্ষমা চাই, ভবিষ্যতে কখনও এমন কাজ করব না।” কুরআন করীমের অসংখ্য আয়াত পরনিন্দাকে হারাম এবং জঘন্য মন্দ কাজ বলে ঘোষণা দিয়েছে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান, আমি তোমাদেরকে বলে দিচ্ছি তোমাদের মধ্যে সর্ব নিকৃষ্ট ব্যক্তি কে? অতঃপর তিনি ইরশাদ করলেন, সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্টতর ব্যক্তি হলো যে পরদোষ নিয়ে এখানে সেখানে যাতায়াত করে। যে দু'বন্ধুর মধ্যে গন্ডগোলের সৃষ্ট করে এবং নিরপরাধ লোকের দোষ অন্বেষণ করে।

হাদীস শরীফে আছে, চুগলখোর জান্নাতে যাবে না। (বুখারী, মুসলিম)। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, মিথ্যা মুখকে কাল করে, পরনিন্দা হলো কবরের শাস্তি। -(তিবরানী) ইহইয়াউল উলুমে আছে, যদি কোন ব্যক্তি তোমার নিকট চুগলী অর্থাৎ অন্যের দোষ প্রকাশ করে তখন তোমার ছয়টি কর্তব্য রয়েছে-

(১) তাকে বিশ্বাসে কর না, কারণ সে পরোক্ষে নিন্দাকারী, তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় । 
(২) তাকে তার কাজ থেকে বিরত রাখ, তাকে উপদেশ দাও। 
(৩) তার এ কাজকে মন্দ জান এবং ঘৃণা কর। 
(৪) তার চুগলীর দরুন তোমার অনুপস্থিত ভাই সম্বন্ধে খারাপ ধারণা পোষণ করো না 
(৫) তার কথায় অনুসন্ধান বা তালাশ কর না, কেননা ইহাও গুনাহ 
(৬) তার কথা অন্যের নিকট নকল কর না । কেননা ইহাও এক প্রকারের চুগলখোরী হবে ।

সতর্কবাণীঃ চিন্তা করুন, কয়জন মুসলমান এ কবীরা গুনাহের মহাবিপর্যয় থেকে বেঁচে আছেন বা বাঁচার চেষ্টা করছেন। আমাদের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে দোষ ধরা; দোষ অনুসন্ধান করা, পরনিন্দা ও অপবাদ দেয়া ইত্যাদি। আর সেই সব কবীরা গুনাহ বিনা প্রয়োজনে করা হচ্ছে যা আমাদের ধ্বংস করছে। তাতে না আছে কোন উপকার না আছে কোন স্বাদ। আমাদের কোন প্রয়োজনও তার উপর নির্ভর করছে না। শুধু শয়তানের ধোকা, অলসতা ও অসতর্কতা আমাদের দ্বীন ও দুইয়া ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url