//]]>

Win a Prize

Mohammadia Foundation https://www.mohammadiafoundationbd.com/2023/05/Amer-ibn-Fuhaira.html

সাহাবাগণের জীবনকথা-৭২ || মদিনায় হিজরাতে রাসুলের তৃতীয় সঙ্গী হযরত আমের ইবন ফুহাইরা (রা) এর জীবনী






আমের ইবন ফুহাইরা (রা)

নাম 'আমের, ডাক নাম আবু 'আমর। পিতা ফুহাইরা, মতান্তরে ফুহাইরা তাঁর মাতার নাম। ইবন হিশাম বলেন, 'আমের ইবন ফুহাইরা বনী আসাদের এক অনারব নিগ্রো দাস। হযরত আবু বকর সিদ্দীক তাঁকে খরীদ করে আযাদ করে দেন। (সীরাতু ইবন হিশাম-১/২৫৯) অন্য একটি বর্ণনা মতে, 'আমের ছিলেন হযরত 'আয়িশার বৈপিত্রীয় ভাই ইযদ গোত্রের তুফাইল ইবন আবদিল্লাহর দাস। হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা) হিজরাতের পূর্বে যাদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন 'আমের ইবন ফুহাইরা তাদের মধ্যে সপ্তম ব্যক্তি। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৩১৮)

হযরত রাসূলে কারীম (সা) মক্কায় হযরত আরকামের গৃহে আশ্রয় গ্রহণের পূর্বেই ইসলামের সেই সূচনা লগ্নে 'আমের ইবন ফুহাইরা তাওহীদের দাওয়াত কবুল করেন। একে তো অসহায় দাস, তার ওপর ইসলাম গ্রহণ, ফলে মুসীবতের পাহাড় তাঁর ওপর নেমে আসে। নির্যাতনের নানা রকম কৌশল তার ওপর প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তিনি সকল অত্যাচারের মুখেও পাহাড়ের মত অটল থাকেন । অবশেষে হযরত সিদ্দিকে আকবরের (রা) বদান্যতায় তিনি দাসত্বের জিঞ্জির থেকে মুক্তি পান । (উসুদুল গাবা- ৩/১৯১)

মদিনায় হিজরাতের তৃতীয় সাথী

   

হযরত রাসূলে কারীম (সা) যখন আবু বকর সিদ্দিককে (রা) সংগে করে মক্কা থেকে মদীনার উদ্দেশ্যে বের হয়ে ‘সাওর পর্বতের গুহায় আত্মগোপন করেন, তখন 'আমের ইবন ফুহাইরা সারাদিন 'সাওর' পর্বতের আশেপাশের চারণক্ষেত্রে আবু বকরের (রা) বকরী চরাতেন এবং যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা) ও আবু বকর (রা) অবস্থান করছিলেন, সন্ধ্যায় সেই গুহার নিকট ছাগলের পাল নিয়ে আসতেন। তারপর বকরীর দুধ দুইয়ে তাঁদের পানের ব্যবস্থা করতেন। আর এদিকে হযরত আবু বকরের পুত্র আবদুল্লাহ প্রতিদিন রাতে গোপনে সাওর পর্বতের গুহায় আসতেন রাসূলুল্লাহ (সা) ও সিদ্দীকে আকবরকে মক্কার অবস্থা জানাতে। সকালে তিনি যখন বাড়ীতে ফিরতেন ‘আমের বকরীর পাল নিয়ে তার পিছে পিছে চলতেন, যাতে তাঁর পায়ের নিশানা মুছে যায় এবং কারো মনে কোন রকম সন্দেহ না দেখা দেয়। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/৪৮৬, বুখারী-কিতাবুল মাগাযী)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) ও আবু বকর (রা) সাওর পর্বতের গুহা থেকে বেরিয়ে মদীনার দিকে যাত্রা করেন এবং আবু বকর (রা) স্বীয় বাহনের পেছনে 'আমেরকে উঠিয়ে নেন। এভাবে 'আমের মদীনায় হিজরাত করেন। মদীনায় তিনি হযরত সা'দ ইবন খুসাইমার (রা) অতিথি হন এবং হযরত হারিস ইবন আউসের সাথে তাঁর মুওয়াখাত বা দ্বীনী ভ্রাতৃ-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। (তাবাকাতে ইবন সা'দ-৩/১৬৪)

মক্কা থেকে মদীনায় আগত যে সকল লোকের স্বাস্থ্যের জন্য প্রথম প্রথম মদীনার আবওহাওয়া উপযোগী হচ্ছিল না 'আমের তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ইবন ইসহাক বর্ণনা করেন, হযরত আয়িশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় হিজরত করলেন, তখন মদীনা আল্লাহর যমীনের মধ্যে সর্বাধিক জ্বরের এলাকা। সেখানে রাসূলুল্লাহর (সা) সঙ্গী সাথীরা ব্যাপকভাবে জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আবু বকর তার দুই আযাদকৃত দাস—'আমের ইবন ফুহাইরা ও বিলালের সাথে একই ঘরে থাকতেন। তাঁরা সবাই জ্বরে পড়লেন। আমি তাঁদের দেখতে গেলাম । এটা পর্দার হুকুমের আগের কথা। প্রচণ্ড জ্বরে তখন তাঁদের অচেতন অবস্থা। প্রথমে আবু বকরের কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর আমি 'আমের ইবন ফুহাইরার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আমের, কেমন অনুভব করছেন ?” তিনি দু'লাইন কবিতা আউড়িয়ে জবাব দিলেনঃ


“মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণের পূর্বেই আমি তাকে পেয়েছি, নিশ্চয় কাপুরুষের মৃত্যু ওপর থেকে হঠাৎ আসে। প্রতিটি মানুষ তার সাধ্য অনুযায়ী বাঁচার চেষ্টা করে, যেমন গরু তার শিং দিয়ে চামড়া বাঁচিয়ে থাকে।”

’আয়িশা বলেন, “আল্লাহর কসম, 'আমের নিজেই জানেনা সে কী বলছে।” তারপর হযরত 'আয়িশা (রা) বিলালের কুশলাদি জিজ্ঞেস করে রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট ফিরে যান এবং তাঁদের অবস্থা রাসূলুল্লাহকে (সা) অবহিত করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন দু'আ করেন, “হে আল্লাহ, মদীনাকে তুমি আমাদের নিকট মক্কার মত বা তার চেয়ে বেশী পছন্দনীয় ও প্রিয় বানিয়ে দাও, তার খাদ্যদ্রব্যে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং তার রোগ-ব্যাধি ‘মাহইয়া' নামক স্থানে সরিয়ে নাও।” [সীরাতু ইবন হিশাম-১/৫৮৮-৮৯, সহীহুল বুখারী—বাবু হিজরাতিন নাবী ওয়া আসহাবিহি] রাসূলুল্লাহর (সা) দু'আ কবুল হয় এবং তাঁরা সকলে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বি'রে মা'উনা'র হৃদয়বিদারক ঘটনা

হযরত 'আমের ইবন ফুহাইরা বদর ও উহুদ যুদ্ধে শরিক ছিলেন। উহুদ যুদ্ধের পর আবু বারা 'আমের ইবন মালিক নামক এক ব্যক্তি মদীনায় রাসূলুল্লাহর (সা) খিদমতে হাজির হয়। হযরত রাসূলে কারীম (সা) তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন; কিন্তু সে না করলো কবুল এবং না করলো প্রত্যাখ্যান। সে বললো, “হে মুহাম্মাদ, আপনি যদি আপনার সাথীদের মধ্য থেকে কিছু লোককে নাজদবাসীদের নিকট পাঠাতেন এবং তারা যদি নাজদীদের কাছে আপনার দাওয়াত পেশ করতেন তাহলে আমার বিশ্বাস তারা আপনার দাওয়াত কবুল করতো।” রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “আমি নাজদীদের পক্ষ থেকে তাদের ওপর আক্রমণের ভয় করছি।” আবু বারা বললো, “তাদের ব্যাপারে আমি জিম্মাদার। আপনি লোক পাঠান এবং তারা আপনার দ্বীনের দাওয়াত দিক।”

তার কথার উপর আস্থা রেখে হযরত রাসূলে কারীম (সা) চল্লিশ মতান্তরে সত্তর জন লোককে বাছাই করে একটি দল গঠন করেন। এই দলের মধ্যে হযরত আমের ইবন ফুহাইরাও ছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সা) নির্দেশে এই দলটি উহুদ যুদ্ধ শেষ হওয়ার চতুর্থ মাসে ৪ হিজরী সনে মদীনা থেকে যাত্রা করে এবং বনী 'আমের ও হাররা বনী সুলাইমের মধ্যবর্তী 'বি'রে মা'উনা' নামক স্থানে তাঁবু স্থাপন করে।

অতঃপর তাঁরা হারাম ইবন মিলহানের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহর (সা) একটি চিঠি 'আমের ইবন তুফাইলের কাছে পাঠান। চিঠিটি পাঠ না করেই 'আমের ইবন তুফাইল দূত হারাম ইবন-মিলহানকে হত্যা করে। তারপর বনী সুলাইম, রিল ও যাকওয়ানের সহায়তায় দলটির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে একমাত্র কা'ব ইবন যায়িদ মতান্তরে 'আমর ইবন উমাইয়া দামারী (রা) ছাড়া সকলকে হত্যা করে। হযরত কা'ব মারাত্মক আহত অবস্থায় কোন রকম বেঁচে যান। পরে তিনি খন্দক যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। (সীরাতু ইবন হিশাম- ১/১৮৩-৮৬)

আমেরের তীরবিদ্ধ লাশ আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়

গাদ্দার জাব্বার ইবন সালমার বর্ণনা যখন হযরত 'আমের ইবন ফুহাইরার (রা) বক্ষ বিদীর্ণ করে গেল, তখন অবলীলাক্রমে তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে গেল- ‘ফুতু ওয়াল্লাহ- আল্লাহর কসম, আমি সফলকাম হয়েছি।' লাশ লাফিয়ে আসমানের দিকে উঠে গেল। ফিরিশতারা তাঁর দাফন কাফন করে। তাঁর পবিত্র রূহের জন্য 'আলা 'ইল্লীয়ীনের দরযা উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো। এই অলৌকিক দৃশ্য অবলোকনে ঘাতক জাব্বার ইবন সালমা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং এত প্রভাবিত হয় যে, সে ইসলাম গ্রহণ করে। বি'রে মা'উনা'র এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর হযরত রাসুলে কারীম (সা) একাধারে চল্লিশ দিন ফজরের নামাযে কুনুতে নাযিলা পাঠ করেন এবং এই ঘাতকদের জন্য বদ দু'আ করেন।

এই ঘটনার পর 'আমের ইবন তুফাইল মদীনায় আসে এবং রাসূলুল্লাহকে (সা) জিজ্ঞেস করে, “হে মুহাম্মাদ, ঐ ব্যক্তি কে যাকে তীরবিদ্ধ করার পরই আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়?” রাসুলুল্লাহ (সাঁ) বললেন, “সে ’আমের ইবন ফুহাইরা।” (টীকা সীরাতু ইবন হিশাম-১/১৮৬, তাবাকাত ইবন সা'দ – মাগাযী )

হযরত 'আমের ইবন ফুহাইরার দেহের বাহ্যিক রং ছিল হাবশী নিগ্রোদের মত কালো এবং তাঁর ৩৪ (চৌত্রিশ) বছর জীবনের বেশীর ভাগ অত্যাচারী মনিবদের দাসত্ব ও গোলামীতে অতিবাহিত ইয়েছে। তবে চারিত্রিক সৌন্দর্যে তিনি ছিলেন মহীয়ান। তিনি বিভিন্ন বিপদ মুসীবতে যে ধৈর্য ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তাতেই তাঁর চারিত্রিক মাধুর্য অতি চমৎকার রূপে দীপ্তিমান হয়ে উঠেছে। তিনি এমন বিশ্বাসী ছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বহু সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন। শাহাদাতের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে দুনিয়ার প্রতি উদাসীন করে তুলেছিল। তাই ‘বি’রে মাউনা’র সংঘর্ষে যখন তাঁর বুকে বর্শা বিধিয়ে দেওয়া হলো, অবলীলায় তাঁর মুখ থেকে রেরিয়ে গেল ‘ফুতু ওয়াল্লাহ- আল্লাহর কসম, আমি সফলকাম হয়েছি।'




***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

0 Comments

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন ??

CLICK n WIN

নটিফিকেশন ও নোটিশ এরিয়া