মা’আরেফুল কোরআন - ৭৫ || সূরা আল-বাকারাহ, ২০৪-২০৭ || কপট মুনাফেক এবং ত্যাগী মুসলিমদের সম্পর্কে আলোচনা







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ২০৪-২০৭


 وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّعۡجِبُکَ قَوۡلُهٗ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ یُشۡهِدُ اللّٰهَ عَلٰی مَا فِیۡ قَلۡبِهٖ ۙ وَ هُوَ اَلَدُّ الۡخِصَامِ ﴿۲۰۴   وَ اِذَا تَوَلّٰی سَعٰی فِی الۡاَرۡضِ لِیُفۡسِدَ فِیۡهَا وَ یُهۡلِکَ الۡحَرۡثَ وَ النَّسۡلَ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الۡفَسَادَ ﴿۲۰۵   وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُ اتَّقِ اللّٰهَ اَخَذَتۡهُ الۡعِزَّۃُ بِالۡاِثۡمِ فَحَسۡبُهٗ جَهَنَّمُ ؕ وَ لَبِئۡسَ الۡمِهَادُ ﴿۲۰۶   وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡرِیۡ نَفۡسَهُ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ رَءُوۡفٌۢ بِالۡعِبَادِ ﴿۲۰۷

সূরা আল-বাকারাহ ২০৪-২০৭ নং আয়াতের অর্থ

(২০৪) আর এমন কিছু লোক রয়েছে, যাদের পার্থিব জীবনের কথাবার্তা আপনাকে চমৎকৃত করবে। আর তারা সাক্ষ্য স্থাপন করে আল্লাহকে নিজের মনের কথার ব্যাপারে । প্রকৃতপক্ষে তারা কঠিন ঝগড়াটে লোক। 
(২০৫) যখন ফিরে যায় তখন চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ সৃষ্টি করতে পারে এবং শস্যক্ষেত্র ও প্রাণ নাশ করতে পারে। আল্লাহ ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না। 
(২০৬) আর যখন তাকে বলা হয় যে, আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার পাপ তাকে অহংকারে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং তার জন্য দোযখই যথেষ্ট। আর নিঃসন্দেহে তা হলো নিকৃষ্টতর ঠিকানা। 
(২০৭) আর মানুষের মাঝে এক শ্রেণীর লোক রয়েছে—যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে নিজেদের জানের বাজি রাখে। আল্লাহ হলেন তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।

সূরা আল-বাকারাহ ২০৪-২০৭ নং আয়াতের পূর্বাপর যোগসূত্র


   

যোগসূত্রঃ পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে প্রার্থনাকারীদেরকে দু’শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। এক শ্রেণী হচ্ছে কাফের ও পরকালে অবিশ্বাসী। এদের প্রার্থনার একমাত্র বিষয় হচ্ছে দুনিয়া। দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে মুমিন; পরকালের প্রতি বিশ্বাসে অটল। এরা পার্থিব কল্যাণ লাভের সঙ্গে সঙ্গে আখেরাতের কল্যাণ ও সমভাবে কামনা করে। পরবর্তী আয়াতসমূহে ’নেফাক’ বা কপটতা ও ’ইখলাস’ বা আন্তরিকতার ভিত্তিতে বিভক্ত মানবশ্রেণী সম্পর্কে বলা হচ্ছে, কেউ মুনাফেক বা কপট আর কেউ মুখলেছ বা আন্তরিকতাপূর্ণ।

সূরা আল-বাকারাহ ২০৪-২০৭ নং আয়াতের তাফসীর

তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
(মহানবী (সা)-এর সময়ে আখনাস ইবনে শুরাইক নামক এক ব্যক্তি অত্যন্ত বাকপটু ছিল। সে নবী করীম [সা]-এর দরবারে হাযির হয়ে কসম খেয়ে খেয়ে নিজেকে মুসলমান বলে প্রকাশ করত, কিন্তু দরবার থেকে উঠে গিয়েই নানারকম বিবাদ-বিসংবাদ, অন্যায়-অনাচার এবং আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দেওয়ার কাজে আত্মনিয়োগ করত। এই কপট মুনাফেক লোকটি সম্পর্কেই বলা হচ্ছে যে,)—আর এমনও কিছু লোক রয়েছে, যাদের একান্ত পার্থিব উদ্দেশ্যপূর্ণ কথাবার্তা (যে, ’ইসলাম প্রকাশের মাধ্যমে মুসলমানদের মতই নৈকট্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে থাকতে পারব’--তাদের বাকপটুতা ও সালঙ্কার বাগ্মিতা হয়ত আপনার কাছে যথেষ্ট) ভাল লাগে এবং তারা (নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য ও মনের কথা গোপন করার উদ্দেশ্যে) আল্লাহ্কে সাক্ষী করে । অথচ (তাদের সমস্ত কথাই সর্বৈব মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে) তারা আপনার বিরুদ্ধাচরণে (অত্যন্ত) কঠোর এবং (তারা যেমন আপনার বিরোধী, তেমনি অন্যান্য মুসলমানকেও কষ্ট দিয়ে থাকে । অতএব,) যখন (আপনার) দরবার থেকে উঠে দাঁড়ায়, সঙ্গে সঙ্গে শহরে গিয়ে একটা বিবাদ-বিসংবাদ সৃষ্টির জন্য এবং কারও শস্যক্ষেত্র কিংবা গৃহপালিত পশুর অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে দৌড়ঝাপ আরম্ভ করে দেয় (এভাবে কোন মুসলমানের ক্ষতি সাধন করাও হয়েছে)। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ (বিবাদ-বিসংবাদের বিষয় ) পছন্দ করেন না। বস্তুত (তারা এ ধরনের বিরুদ্ধাচরণে ও ক্ষতি সাধনের সঙ্গে সঙ্গে এতই অহংকারী যে,) যদি তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তারা অধিকতর অহংকারজনিত পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং এ ধরনের লোকদের উপযুক্ত শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট আশ্রয়। আবার কিছু লোক রয়েছে, যারা আল্লাহ্ রেযামন্দী ও সন্তুষ্টির অন্বেষণে নিজেদের মনপ্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন করে দেয়। আল্লাহ্ তা’আলা এহেন বান্দাদের ব্যাপারে অত্যন্ত মেহেরবান, একান্ত করুণাময়।

সূরা আল-বাকারাহ ২০৪-২০৭ নং আয়াতের বিষয় বস্তু

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়


আয়াতের শেষাংশ, যাতে নিষ্ঠাবান মু’মিনগণের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মবিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না, তা সে সমস্ত নিষ্ঠাবান সাহাবায়ে কেরামের শানে নাযিল হয়েছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় অনুক্ষণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মুসতাদরাক হাকেম, ইবনে-জরীর, মসনদে ইবনে আবী-হাতেম প্রভৃতি গ্রন্থে সহীহ্ সনদের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ আয়াতটি হযরত সোহাইব রুমী (রা)-এর এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবতীর্ণ হয়েছিল। তিনি যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হয়েছিলেন, তখন পথিমধ্যে একদল কোরাইশ তাঁকে বাধা দিতে উদ্যত হলে তিনি সওয়ারী থেকে নেমে দাঁড়ালেন এবং তাঁর তূনীরে রক্ষিত সবগুলো তীর বের করে দেখালেন এবং কোরাইশদের লক্ষ্য করে বললেন, হে কোরাইশগণ! তোমরা জান, আমার তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তূনীরে একটি তীরও থাকবে, ততক্ষণ তোমরা আমার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারবে না। তীর শেষ হয়ে গেলে তলোয়ার চালাব। যতক্ষণ আমার প্রাণ থাকবে, ততক্ষণ আমি তলোয়ার চালিয়ে যাব। তারপর তোমরা যা চাও করতে পারবে। আর যদি তোমরা দুনিয়ার স্বার্থ কামনা কর, তাহলে শোন, আমি তোমাদেরকে মক্কায় রক্ষিত আমার ধন-সম্পদের সন্ধান বলে দিচ্ছি, তোমরা তা নিয়ে নাও এবং আমার রাস্তা ছেড়ে দাও। তাতে কোরাইশদল রাজী হয়ে গেল এবং হযরত সোহাইব (রা) রুমী নিরাপদে রাসূল (সা)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তখন রাসূল (সা) দু’বার ইরশাদ করলেনঃ

ربح البيع ابايحى – ربح البيع ابايحي

“হে আবূ ইয়াহ্ইয়া, তোমার ব্যবসা লাভজনক হয়েছে।” এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত নাযিল হলে রাসূল (সা)-এর ইরশাদের সত্যতা প্রমাণিত হয়, যা তাঁর পবিত্র মুখ হতে বের হয়েছিল।

কোন কোন তফসীরকার অন্যান্য কতিপয় সাহাবীর বেলায় সংঘটিত একই ধরনের কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন। (মায্হারী)





******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url