যিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত







আরবি দিনপঞ্জির হিসেব মতে যিলহজ্জ মাস হলো সর্বশেষ মাস । ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় ইবাদত হজ্জের মাস।

যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের ফযিলত


মানুষের প্রতি মহান আল্লাহর একটি বড় অনুগ্রহ রয়েছে, তিনি তাঁর নেক বান্দাদের জন্য প্রতি বছর বিশেষ ইবাদতের একটি মৌসুম নির্ধারণ করেছেন। যে মৌসুমে বান্দারা অধিক পরিমাণে নেক আমলের পাথেয় সংগ্রহ করার পথ খুঁজে পায়, তাঁর নৈকট্য দানকারী কর্মে আপোসে প্রতিযোগিতা করতে পারে এবং তাঁর বিশাল পরিমাণ সাওয়াব লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে।


মহান আল্লাহ পাকের অনেক অনুগ্রহের মধ্যে এটিও একটি মহা অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণের আয়ু দিয়ে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেন; যাতে আমরা পরকালের চিরসুখ লাভের জন্য অধিক পরিমাণে নেক আমল করতে সক্ষম হই।

যদিও উম্মতে মুহাম্মদীর আয়ুষ্কাল পূর্ববর্তী অন্যান্য উম্মতের তুলনায় অনেক কম । মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মতের আয়ু ষাট থেকে সত্তর বছর। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে ১০৭৩)

তবুও মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এ উম্মতকে এমন আমল ও মৌসুম দান করেছেন যার ফলে তাদের বয়স বৃদ্ধি ও বরকত লাভ করে। অল্প সময়ে সে আমল করলে এত সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়, যা বহু বছর ধরে করলে তা লাভ করা সম্ভব হতো।

এ ধরনের একটি ফযিলতপূর্ণ মৌসুম হলো যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশটি দিন। যে দিনগুলো হলো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। মহানবী বলেন, দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ট দিন হলো (যিলহজ্ব) দশ দিন। (বায্যার, ইবনে হিব্বান, সহীহুল জামে ১১৪৪ নং)

বলা বাহুল্য যে, ব্যাপকার্থে উক্ত দিনগুলো দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দিন; এগুলোর প্রতিটি মিনিট, ঘণ্টা, রাত ও দিন আল্লাহর নিকট বছরের অন্যান্য সমস্ত দিনের চাইতে অধিক প্রিয় ।

আল্লাহ তায়ালা এ দিনগুলোর শপথ করেছেন। আর কোনো জিনিসের নামে শপথ তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্যেরই প্রমাণ । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَالْفَجْرِ - وَلَيَالٍ عَشْرٍ .

অর্থাৎ, শপথ ঊষার, শপথ দশ রজনীর .......। (সূরা ফাজর : আয়াত-১-২)

এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন। যেদিন সম্বন্ধে মহানবী বলেন, “আরাফার দিন ব্যতীত এমন কোন দিন নেই, যাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অধিক হারে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে থাকেন। তিনি (ঐ দিনে) নিকটবর্তী হন এবং তাদেরকে (হাজীদেরকে) নিয়ে ফিরিশতাগণের নিকট গর্ব করেন। বলেন, কি চায় ওরা? (মুসলিম ১৩৪৮ নং)

এ দিনগুলোর শেষে রয়েছে কুরবানীর দিন এবং তার পরে মিনায় অবস্থান করার দিন। যে দুটি দিন সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) দিন হলো কুরবানীর দিন। অতঃপর মিনায় অবস্থানের দিন (যিলহজের ১১ তারিখ)। (আবু দাউদ, মিশকাত ২/৮১০)


এ দিনগুলোতে কৃত নেক আমলের মাহাত্ম রয়েছে অনেক। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন : “এ দশ দিনের মধ্যে কৃত নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আর কোনো আমল নেই। আল্লাহর পথে জিহাদেও নয়। তবে এমন কোনো ব্যক্তি (এর আমল) যে নিজের জান-মালসহ বের হয় এবং তারপর কিছুও সঙ্গে নিয়ে আর ফিরে আসে না । ” (বুখারী, আবু দাউদ) অথচ এ কথা সার্বজন বিদিত যে, আল্লাহর পথে জিহাদ হলো ঈমানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন আমল সবচেয়ে উৎকৃষ্ট? তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের প্রতি ঈমান।” সে বলল, 'তারপর কি?” তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ।” সে বলল, ‘তারপর কি?' তিনি বললেন, “গৃহীত হজ।” (বুখারী ১৬ নং)

তবুও উপযুক্ত হাদীসসমূহে এ কথাই প্রমাণ করে যে, মহান আল্লাহর নিকট যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের আমল বছরের অন্যান্য দিনের আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও অধিক প্রিয়।

অতএব কি বিশাল এ মাহাত্ম! কি সুন্দর এ নেকীর মৌসুম! কি সুবর্ণ এ সাওয়াব অর্জনের সুযোগ!!

অন্যান্য দিনের জিহাদও উক্ত দিনগুলোর কোনো আমলের চেয়ে উত্তম নয়; অথচ জিহাদ হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান ও যথাসময়ে সালাতের পর সর্বশ্রেষ্ঠ আমল! প্রতিযোগী ইবাদতকারীর জন্য কি সুন্দরই না এই মহান মৌসুম! আর অবহেলাকারী উদাসীনের জন্য প্রবঞ্চনা বৈ আর কি?

অতএব মন থেকে আলস্য অবজ্ঞা দূর করুন এবং আখেরাতের কাজে মনোযোগ দান করুন। মহানবী বলেন, 'আখেরাতের কাজ ব্যতীত প্রত্যেক কাজে ধীরতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।” (আবু দাউদ ৪৮১০, হাকেম, সহীহুল জামে' ৩০০১)

আখেরাতের কাজে প্রতিযোতিা করতে উদ্বুদ্ধ করে মহান আল্লাহ বলেন-

وَفِي ذلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ .

অর্থাৎ আর তা লাভের জন্যই প্রতিযোগিরা প্রতিযোগিতা করুক। (সূরা মুত্বাফফিফীন : আয়াত-২৬)

তিনি আরো বলেন- فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ

অর্থাৎ, তোমরা কল্যাণের জন্য প্রতিযোগিতা কর। (সূরা বাকারা : আয়াত-১৪৮) এ জন্যেই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনে জুবাইর যিলহজের প্রথম দশক উপস্থিত হলেই (ইবাদতে) এমন পরিশ্রম করতেন যে, তিনি অক্ষম হয়ে পড়তেন। (দারেমী) তাঁর নিকট থেকে এ কথাও বর্ণনা করা হয় যে, এ দশকের রাতে তোমরা তোমাদের বাতি নিভিয়ে দিও না।'

যিলহজ্জের প্রথম দশ দিন সর্বশ্রেষ্ঠ কেন?


হাফেয ইবনে হাজার (র) বলেন, এ কথা স্পষ্ট হয় যে, যিলহজের প্রথম দশ দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণ; যেহেতু ঐ দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতসমূহ একত্রিত হয়েছে। যেমন, সালাত রোযা, সদকাহ এবং হজ। যা অন্যান্য দিনগুলোতে এভাবে একত্রিত হয় না।” (ফতহুল বারী ২/৪৬০ )

ইবনে কুদামাহ (র) বলেন, যিলহজের প্রথম দশ দিনের সবটাই মাহাত্ম্য ও মর্যাদাপূর্ণ। এ দিনগুলোতে আমলের বহুগুণ সওয়াব পাওয়া যায় এবং তাতে ইবাদতের জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালানো মুস্তাহাব। (মুগনী ৪/৪৪৩ )

পরিশেষে জেনে রাখুন যে, এই বরকতময় দিনগুলোতে নেক আমলের প্রতি আগ্রহী হওয়া প্রকৃতপক্ষে কল্যাণের প্রতি ধাবমান ও প্রতিযোগিতা এবং হৃদয়ের ‘তাক্বওয়া, পরহেযগারী ও সংযমশীলতার দলীলই বটে । মহান আল্লাহ বলেন-

ذلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ .

অর্থাৎ, এটাই আল্লাহর বিধান। আর কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) নিদর্শনাবলীদের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই এক বহিঃপ্রকাশ। (সূরা হজ : আয়াত-৩২)

তিনি আরো বলেন-

لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ

অর্থাৎ, আল্লাহর নিকট কুরবানীর পশুর গোশত এবং রক্ত পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (সংযমশীলতা)। (সূরা হজ : আয়াত-৩৭)

বলা বাহুল্য, মুবারকবাদ তার জন্য, যে নেক আমল ও কল্যাণময় বর্ষ দ্বারা এই দশ দিনের সদ্ব্যবহার করে।

অতএব আমাদের উচিত, এই দিনগুলোতে নেক আমল ও উত্তম কথা দ্বারা আবাদ করতে, আমরা যেন সর্বত্তোমভাবে সচেষ্ট হই। আর যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার দৃঢ় সংকল্প করে, আল্লাহ তাকে সে কাজে সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন এবং তার জন্য সে সকল উপায়-উপকরণ সহজ করে দেন যার ফলে সে তার কাজ উত্তমরূপে সুসম্পন্ন করতে পারে।

যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সত্যবাদিতার পরিচয় দেয়, আল্লাহ তার জন্য নিজ ওয়াদা পূর্ণ করেন। আল্লাহর পথে সাধনা করলে তিনি তাঁর পথ সহজ করে দেন । মহান আল্লাহ বলেন-

وَالَّذِينَ جَاهَدُونَ فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا .

অর্থাৎ, যারা আমার (আল্লাহর) রাস্তায় জিহাদ করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। (সূরা আনকাবূত : আয়াত-৬৯)

শ্রেষ্ঠ কোনটি : যুলহজ্জের প্রথম দশক, নাকি রমযানের শেষ দশক? এ প্রশ্নের উত্তরে ইবনে তাইমিয়্যাহ (র) বলেন, 'যিলহজের প্রথম দশকের দিনগুলো রমযানের শেষ দশকের দিনগুলো অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর রমযানের শেষ দশকের রাতগুলো যিলহজ্বের প্রথম দশকের রাতগুলো অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” (মাজমূউ ফাতাওয়া ২৫/২৮৭)

ইবনুল কাইয়্যুম (র) এই উক্তির টীকায় বলেন, এ উত্তর নিয়ে যদি কোন যোগ্য ও জ্ঞানী ব্যক্তি গভীরভাবে চিন্তা করে, তাহলে তা সন্তোষজনক ও যথেষ্টরূপে পাবে । যেহেতু এই দশ দিন ব্যতীত অন্য কোনো দিন নেই যার মধ্যে কৃত নেক আমল আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। তাছাড়া এতে রয়েছে আরাফার দিন, কুরবানী ও তালবিয়া (৮ই যিলহজ্জের) দিন। পক্ষান্তরে রমযানের শেষ দশকের রাত্রিগুলো হলো জাগরণের রাত্রি; যে রাত্রিগুলোতে রাসূল জাগরণ করে ইবাদত করতেন। আর তাতে রয়েছে এমন একটি রাত্রি, যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । অতএব যে ব্যক্তি উক্ত বিশদ বিবরণ ছাড়া ঐ প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবে, সে সঠিক দলীল উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে না।” (যাদুল মাআদ ১/৫৭) অবশ্যই একটি কথা এখানে জানা একান্ত জরুরি যে, একটি ভালো জিনিসকে অন্য একটির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়ার মানে এই নয় যে, দ্বিতীয়টির গুরুত্ব কম। বরং এই শ্রেষ্ঠত্বের মানে হলো, চেষ্টা ও সামর্থ্য অনুসারে উক্ত ভালো কাজে বেশি বেশি উদ্বুদ্ধ করা ।

যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের আমল


রোযা
রোযা সমষ্টিগতভাবে এক প্রকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেক আমল। বলা বাহুল্য এ মাসের প্রথম নয় দিনে রোযা রাখা মুস্তাহাব। কেননা মহানবী এ দিনগুলোতে নেক আমল করতে উৎসাহিত করেছেন। আর রোযা হলো অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল। তাছাড়া মহানবী (সাঃ) এ দিনগুলোতে রোযা রাখতেন। তাঁর স্ত্রী হাফসা (রা) বলেন, নবী করীম (সাঃ): আল যিলহজ্বের নয় দিন, আশুরার দিন এবং প্রত্যেক মাসে তিন দিন; মাসের প্রথম সোমবার এবং দুই বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন । ” (সহীহ আবু দাউদ ২১২৯ নং, নাসাঈ) অবশ্য যদি কেউ পূর্ণ নয় দিন রোযা রাখতে অপারগ হয়, তাহলে সে একদিন ছেড়ে পরদিন রোযা রাখতে পারে অথবা এর মধ্যে সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতে পারে।

সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এ দিনগুলোতে রোযা রাখতেন। রোযা রাখতেন মুজাহিদ প্রমুখ উলামাগণ। আর অধিকাংশ উলামাগণের মতে এ রোযা শরীয়তসম্মত। (ইবনে আবী শাইবাহ ৯২২ নং, লাড়াইফূল মাআরিফ ৪৬১পৃ:) মোটকথা, এ মাসের প্রথম নয় দিনের রোযা মুস্তাহাব। ইমাম নববী (রহ) বলেন, ঐ দিনগুলোতে রোযা রাখা মুস্তাহাব। (শারহুন নাওয়াবী ৮/৩২০)

যিকির
এই দিনগুলোতে যিকির করা অন্যান্য দিনের তুলনায় উত্তম। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন-

وبذكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتِ

অর্থাৎ, যাতে ওরা নির্দিষ্ট জানা দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে... । (সূরা হজ : আয়াত-২৮)

অধিকাংশ উলামার মতে উক্ত আয়াতে নির্দিষ্ট জানা দিনগুলো বলতে উদ্দেশ্য হলো যিলহজের প্রথম দশ দিন। বলা বাহুল্য, এ দশ দিনে আল্লাহর দ্বীনের একটি প্রতীক হলো অধিক পরিমাণে তাঁর যিকির-আযকার করা; 'আল-হামদু লিল্লাহ' ও 'সুবহানাল্লাহ' পড়া এবং অত্যান্ত আবেগসহকারে 'আল্লাহু আকবার' পড়া ।

সুতরাং এই মহান দিনগুলোতে বেশি বেশি করে উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করা উচিত। পাঠ করা উচিত বরকতময় দিনগুলোর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ে, সকালে-বিকালে, রাত্রে-ভোরে, মসজিদে-বাড়িতে, পথে-গাড়িতে, কর্মস্থলে এবং আল্লাহর যিকির বৈধ এমন সকল জায়গাতে ।

যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিন তাকবীর পাঠ হবে দুই ধরনের-

১. সময়-সীমাহীন অনির্দিষ্টভাবে তাকবীর পাঠ। যা এ দশকের প্রথম দিনের মাগরিব থেকে তাশরীকের (১১, ১২ ও ১৩ তারিখের) শেষ দিনের মাগরিব পর্যন্ত হাজী এবং অন্যান্য সকলের জন্য যে কোন সময়ে সর্বদা পাঠ করা বিধেয়। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এবং আবু হুরায়রা (রা) এই দশ দিন বাজারে বের হতেন এবং (উচ্চস্বরে) তাকবীর পড়তেন। আর লোকেরাও তাঁদের তাকবীরের সাথে তাকবীর পাঠ করত। (বুখারী, ফাতহুল বারী ২/৫৩১) 

২. সময়-সীমাবদ্ধ তাকবীর। আর তা হলো প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীর পাঠ করা। এ তাকবীর আরাফার দিন ফজরের পর থেকে তাশরীকের শেষ দিন আসর পর্যন্ত পাঠ করা বিধেয়। এ তাকবীরের এত গুরুত্ব রয়েছে যে, কোনো কোনো উলামায়ে কেরাম বলেছেন, তা পড়তে ভুলে গেলে কাযা করতে হবে। অর্থাৎ সালাতের পর তা বলতে ভুলে গেলে মনে পড়া মাত্র তা পড়ে নিতে হবে; যদিও তার ওযু নষ্ট হয়ে যায় কিংবা মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়। অবশ্য সময় লম্বা হয়ে গেলে সে কথা ভিন্ন। ইমাম ইবনে বায (র) বলেন, এ থেকে বুঝা যায় যে, সময়-সীমাহীন তাকবীর ও সময়-সীমাবদ্ধ তাকবীর উভয়ই একত্রে সমবেত হয় আরাফা, কুরবানী ও তাশরীকের তিন দিনে। পক্ষান্তরে ৮ তারিখ ও তার পূর্বেই ১ তারিখ পর্যন্ত সকল দিনগুলোতে কেবল সময়-সীমাহীন অনির্দিষ্ট তাকবীরই বিধিবদ্ধ ।
(মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায ১৩/১৮)

যিলহজ্জ মাসের তাকবীরের ধরন


শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (র) বলেন, অধিকাংশ সাহাবা কর্তৃক যা উদ্বৃত এবং যা নবী করীম (সাঃ) থেকেও বর্ণিত করা হয় তার ধরন নিম্নরূপ -

الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، وَلِلَّهِ الْحَمْدُ .

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহ আকবার, অলিল্লাহিল হাম্দ।' 'আল্লাহু আকবার' ৩বার বলাও বৈধ।

কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় হলো, তাকবীর এ যুগে প্রত্যাখ্যাত সুন্নাতের মধ্যে পরিগণিত হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম দশ দিনে তো অল্প কিছু মানুষ ব্যতীত আর কারো নিকট হতে তাকবীর শুনাই যায় না। তাই উচ্চস্বরে তাকবীর পড়া উচিত; যাতে সুন্নাত জীবিত হয় এবং উদাসীনদের মনে সতর্কতা ফিরে আসে।

হজ্জ ও উমরাহ পালন


যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের সবচেয়ে বড় নেক আমল হলো হজ ও উমরা পালন করা। যে এখনো হজ করেননি, তার জন্য কা'বাগৃহের হজ ফরয। এমন ব্যক্তির জন্য হজ পালনে তাড়াতাড়ি করা উচিত এবং বিনা ওযরে দেরী করলে সে গোনাহগারে পরিণত হবে। মহানবী (সাঃ) বলেন : “তোমরা হজ পালনে তাড়াতাড়ি কর। যেহেতু তোমাদের কেউ জানে না যে, তার সম্মুখে কোন অসুবিধা এসে হাজির হবে। (আহমদ ১/৩১৪, উরওয়া ৪/১৬৮) 

পক্ষান্তরে যে তার ফরয হজ আদায় করে নিয়েছে এবং এখন সে নফল স্বরূপ তা করতে চায়, তাহলে তা হলো এমন এক উত্তম আমল, যা আল্লাহ নৈকট্য দান করেন। হজ ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম। মহানবী (সাঃ) বলেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর; এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রোযা পালন করা এবং সামর্থ্য থাকলে কা'বাগৃহের হজ্জ পালন করা।” (বুখারী ৮, মুসলিম ১৬ নং)

এ রুকন সামর্থ্যবান মুসলিমের উপর জীবনে একবার মাত্র হজ্জ ফরয হয়। মহান আল্লাহ বলেন-

وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً .

অর্থাৎ, মানুষের মধ্যে, যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার পক্ষে অবশ্য কর্তব্য। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-৯৭)

কোনো মুসলিমের ইসলাম পরিপূর্ণ হতে পারে না; যতক্ষণ না সে উক্ত পাঁচটি রুকন পালন করেছে। সঠিক মতে, হজ হিজরী সনের নবম সালে ফরয হয়। আর মহানবী (সাঃ) দশম বছরে বিদায়ী হজ পালন করেন। যেহেতু এরপরই মহান আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে ডেকে নিয়েছেন এবং হিজরী সনের ১১তম বছরে তিনি সুমহান বন্ধুর সাথে মিলিত হয়েছেন।

হজের ফযিলত যে সকল হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে ইবনে উমরের হাদীস অন্যতম। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “পবিত্র কা'বার দিকে স্বগৃহ থেকে তোমার বের হওয়াতে, তোমার সওয়ারীর প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে আল্লাহ একটি করে সাওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন এবং একটি করে পাপ মার্জনা করবেন। আরাফায় অবস্থান কালে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং তাদেরকে (হাজীদেরকে) নিয়ে ফিরিশতাগণের নিকট গর্ব করেন। বলেন, আমার ঐ বান্দাগণ এলোমেলো কেশে ধূলামলিন বেশে দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দিয়ে আমার দরবারে হাজির হয়ে আমার রহমতের প্রত্যাশা করে এবং আমার শাস্তিকে ভয় করে, অথচ তারা আমাকে দেখেনি। তাহলে তারা আমাকে দেখলে কি করত? অতএব তোমার যদি বলির পাহাড় অথবা পৃথিবীর বয়স অথবা আকাশের বৃষ্টি পরিমাণ গোনাহ থাকে, আল্লাহ তা ধৌত করে দিবেন।

পাথর মারার সাওয়াব তোমার জন্য জমা থাকবে। মাথা নেড়ার করলে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে একটি করে সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।

অতঃপর কা'বাগৃহের তাওয়াফ করলে তুমি তোমার পাপরাশি থেকে সে দিনের মতো বের হবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিল। (ত্বাবারানী, সহীহুল জামে' ১৩৬০)

উক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসে রয়েছে তাড়াতাড়ি হজ পালন করার প্রতি আহ্বান। এতে রয়েছে পাপ থেকে হৃদয়ের পবিত্রতা। বান্দা জানে না যে, এ পৃথিবী ছেড়ে তার বিদায়ের পালা কবে? আর হজ হলো হাতে গোনা কয়েকটি দিন। যে ব্যক্তি সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও নিজ প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দিল না সে নিশ্চয়ই বঞ্চিত।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “এবং গৃহীত হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয় ।” (বুখারী ১৭৭৩, মুসলিম ১৩৪৯ নং) 

তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ করতে যায় ও তাতে কোন প্রকারের যৌনাচার ও পাপাচরণ করে না, সে ব্যক্তি সে দিনকার মতো নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে, যেদিন তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করেছিল। (বুখারী ১৫২১ নং, মুসলিম ১৩৫০ নং)

নফল হজ করতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিই যথেষ্ট। জাবের ইবনে যায়েদ (রা) বলেন, আমি সমস্ত নেক আমল নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে দেখলাম যে, সালাত দেহ ক্ষয় করে; মাল ক্ষয় করে না। রোযাও অনুরূপ। আর হজ দেহ ও মাল উভয় ক্ষয় করে। সুতরাং হজই হলো এগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল । (হিয়্যাহ ৩/৮৭)

যিলহজ্জ মাসে সালাতের প্রতি যত্ন নিন


এটিও একটি সুবৃহৎ ইবাদত। সবচেয়ে বড় ও বেশি ফযিলতপূর্ণ আমল । সর্বদা এই ইবাদতের প্রতি যত্নবান থাকা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। কিন্তু বিশেষ করে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের দিনগুলোতে অধিক যত্নবান হতে নিম্নের নির্দেশমালা গ্রহণ করুন। 

ক. যথাসময়ে পরিপূর্ণরূপে তার রুকু ও সিজদা, সুন্নাত ও ওয়াজিব আদায় করুন। জামাআতের প্রথম কাতারের জায়গা অধিকার করার জন্য আযান শোনামাত্র মসজিদে উপস্থিত হন ।

গ. ফরযের আগে-পরে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা যথানিয়মে আদায় করুন । মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাকআত (সুন্নাত) সালাত পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে। (তিরমিযী, সহীহুল জামে' ৬৩৬২ নং) অনুরূপভাবে আসরের আগে ৪ এবং মাগরিবের আগে ২ রাকআত পড়তেও আগ্রহী হন ।

ঘ. নফল সালাত বেশি বেশি আদায় করুন। সাওবান (রা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তুমি আমার জন্য অধিক পরিমাণ সিজদা করাকে অভ্যাসে পরিণত কর; কারণ যখনই তুমি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে তখনই আল্লাহ তার বিনিময়ে তোমাকে একটি মর্যাদায় উন্নীত করবেন এবং তার দরুণ একটি গুনাহ মোচন করবেন। (মুসলিম ৪৮৮ নং তিরমিযী, নাসাঈ) 

ঙ. ফরয সালাত পড়ার পর তাড়াতাড়ি মসজিদ থেকে বের হবেন না; বরং বসে তেলাওয়াত ও যিকর করতে থাকুন।

চ. . তাহাজ্জুদের সালাত পরিপূর্ণরূপে যথানিয়মে আদায় করুন। আর উত্তম হলো মহানবী (সাঃ) -এর অনুকরণ করে ১১ রাকআত আদায় করা। তিনি এ সালাত নিয়মিত পড়তেন এবং কোনো রাতে তা ছুটে গেলে দিনে চাশতের সময় কাযা করে নিতেন।

ফজরের সালাতের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত মুসাল্লায় বসে যিকির করুন। অতঃপর দুই রাকআত সালাত আদায় করুন। এতে আপনি পরিপূর্ণ একটি হজ ও উমরার সাওয়াব লাভ করবেন। (সহীহ তিরমিযী ৪৬১)

জ. চাশতের সালাত কমপক্ষে ২ রাকআত পড়ুন ।

ঝ. ফরয সালাতের পর পঠনীয় সব রকমের যিকির পাঠ করুন। 

ঞ. এক সালাতের পর আগামী সালাতের অপেক্ষা করুন।

যিলহজ্জ মাসে কুরআন তেলাওয়াত


আল্লাহর নৈকট্যদাতা বহু আমলের একটি আমল হলো কুরআন তেলাওয়াত । কতই না উত্তম হয়, যদি আপনি এই দশ দিনের ভিতরে মসজিদে ও ঘরে বসে একবার কুরআন খতম করতে পারেন এবং কিছু হিফ্জ করতে পারেন।

যিলহজ্জ মাসে আল্লাহর রাস্তায় দান করা


নেকীর দরজাসমূহের মধ্যে দান-সদকা করা একটি বড় পূণ্যের কাজ। মহান আল্লাহ দানশীলদেরকে বৃহৎ প্রতিদান দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন-

مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةٌ 

অর্থাৎ কে সে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করবে? আল্লাহ তা তার জন্য বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন। (সূরা বাকারা : আয়াত-২৫৪)

আর মহানবী বলেন, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচ; যদিও এক টুকরো খেজুর দান করার বিনিময়ে হোক।” (বুখারী ১৪৭, মুসলিম ১০১৬)

এই দশ দিনে অনেক লোকেই টাকা-পয়সার মুখাপেক্ষী থাকে; কারো হজের জন্য প্রস্তুতি নিতে, কারো কুরবানী ও ঈদের বাজার ইত্যাদি করতে টাকার দরকার হয়ে থাকে। আর দান-খয়রাতের ফলে মানুষের কল্যাণ অর্জিত হয়, সাওয়াব পায় দ্বিগুণ-বহুগুণ, গুপ্তভাবে দানকারীকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের ময়দানে নিজের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন; যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন কোন ছায়া থাকবে না। দানকারীর জন্য মঙ্গলের দরজা খুলে যায়, বন্ধ হয়ে যায় অমঙ্গলের সকল দরজা। তার জন্য জন্নাতের একটি দরজা খুলে দেয়া হয়। আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। মানুষও তাকে ভালোবাসে। দানশীল দয়াবান মহানুভব হৃদয়ের অধিকারী হয়। তার আত্মা ও মাল পবিত্র হয়। অর্থের দাসত্ব থেকে সে মুক্তি পায়। আল্লাহ তাকে তার জান-মাল, পরিবার-সস্তানের ব্যাপারে ইহ-পরকালে নিরাপত্তা দান করেন।

আমাদের প্রত্যেকেই এ দিনগুলোতে কিছু না কিছু সদকা করতেই পারে। অংশগ্রহণ করতে পারে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মে। আমাদের প্রত্যেকেরই চেষ্টা করা উচিত, যাতে এই মঙ্গলময় দিনসমূহ কোনো মঙ্গল হাতছাড়া না হয় ।

উপরোক্ত নেক আমল ব্যতীতও উল্লেখযোগ্য আরো অনেক আমল রয়েছে যা যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের দিনগুলোতে বিশেষ করে পালন করা কর্তব্য। যেমন, পিতামাতার সেবা করা, আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করা, সালাম প্রচার করা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা, অসুস্থ রোগীকে দেখা করে সান্ত্বনা দান করা, মহানবী (সাঃ) এর উপর দরূদ পাঠ করা, ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে ঈদের সালাত আদায় করা ইত্যাদি।

পরিশেষে বলি যে, নেক আমলের কোনো সীমাবদ্ধ সংখ্যা নেই। সুতরাং এই বরকতময় দিনগুলোতে যথাসাধ্য ও সুবিধামত বেশি বেশি নানা ধরনের নেক আমল করুন। এরপর এই দিনগুলোর সাথে পরবর্তী দিনগুলোকে সংযুক্ত করুন । যেহেতু মুসলিমের সারা জীবনটাই নেক আমলের বিশাল প্লাটফরম। তবুও কিছু দিনকে বিশেষ ও বেশি মর্যাদা দিয়ে বিশিষ্ট করে তোলা হয়েছে, যাতে সে বেশী বেশি আমল করতে উদ্বুদ্ধ হয়। কাজেই কোমর বেঁধে নেক আমল করে আল্লাহকে দেখান । আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না ।

পবিত্র আরাফার দিনের আমল


আরাফার দিন হলো একটি মহান দিন। এই দিনটি মুসলমানদের গর্বের ধন। যেহেতু এদিনকার ও এখানকার মতো অন্য কোনো দিনে ও স্থানে এত বিশাল সংখ্যক মুসলিমরা একত্রিত হয় না। এ হলো মুসলমানদের বিশালতম বিশ্ব-সম্মেলন। সারা বিশ্বের ধনী মুসলিমরা এ দিনে এখানে একত্রিত হয় । একে অন্যের সাথে মিলিত হয়ে পরিচিতি লাভ করে ।

আরাফার দিন মহান প্রতিপালকের কাছে অনুনয়-বিনুনয় ও কান্না করার দিন; বিশ্ব-জাহানের অধিপতির ভয়ে ভীত হওয়ার দিন। এ দিনে দুআ কবুল হয়ে থাকে। বান্দার গুনাহ-খাতা মাফ করা হয়। এই ময়দানের উপস্থিত হাজীদের নিয়ে আল্লাহ তায়ালা ফিরিশতাবগণের নিকট গর্ব করে থাকেন।

এ হলো সেই দিন; যে দিনকে আল্লাহ মর্যাদায় মণ্ডিত করেছেন। অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিনের মাহাত্ম্য বৃদ্ধি করেছেন। এ দিনে তিনি নিজের মনোনীত দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ ও অনুগ্রহকে পরিপূর্ণ করেছেন। এ দিন ক্ষমার দিন। এ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন।

কত মহান সে দিন! তার মাহাত্ম্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য। যেমন আমাদের জানা উচিত যে, আমরা এ দিন দ্বারা কিভাবে উপকৃত হতে পারব ।




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url