আরাফার দিনের আমল ও কুরবানীর ফযিলত






আরাফার দিনের আমল ও ফযিলত


আরাফার দিন আল্লাহর দ্বীন ও নেয়ামত পরিপূর্ণ হওয়ার দিন
উমর ইবনে খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত, তাঁকে ইয়াহুদীদের এক ব্যক্তি বলল, হে আমীরুল মুমেনীন! আপনাদের কিতাবের এক আয়াত যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, ঐ আয়াত যদি আমাদের ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের উপর নাযিল হতো, তাহলে (যে দিনে অবতীর্ণ হয়েছে) ঐ দিনটাকে আমরা ঈদ বলে গণ্য করতাম।' তিনি বললেন, কোন আয়াত? বলল, “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীনরূপে মনোনীত করলাম।” উমর (রা) বললেন, ঐ দিনটিকে আমরা জেনেছি এবং সেই স্থানটিকে চিনেছি; যে স্থানে ঐ আয়াত নবী করীম এর উপর অবতীর্ণ হয়, যখন তিনি জুমার দিন আরাফার ময়দানে দণ্ডায়মান ছিলেন। (বুখারী ৪৫, মুসলিম ৩০১ ) প্রশ্নকারী ছিল কা'ব আল-আহবার। যেমন তাফসীরে ত্বাবারী (৯/৫২৬)-তে বর্ণিত হয়েছে। এই আয়াত জুমআর দিন এবং আরাফার দিন নাযিল হয়েছে এবং ঐ দুটি দিনই আমাদের জন্য ঈদ, আলহামদু লিল্লাহ ।

আরাফার দিন হলো মুসলিমদের (হাজী) ঈদ
মহানবী (সাঃ) বলেন, “আরাফাহ, কুরবানী ও তাশরীকের দিনসমূহ আহলে ইসলাম, আমাদের ঈদ। আর তা হলো পানাহার-ভোজনের দিন । (আবু দাউদ ২৪১৯, তিরমিযী ৭৭৩, নাসাঈ ৩০০8 )

আর উমর (রা) কর্তৃক বর্ণিত আছে, তিনি উক্ত জবাবে বলেছিলেন, ঐ আয়াত জুমআন দিন এবং আরাফার দিন অবতীর্ণ হয়েছে এবং ঐ দুটি দিনই আমাদের জন্য ঈদ, আলহামদু লিল্লাহ ।

আল্লাহ আরাফা দিনের কসম খেয়েছেন
মহান সত্তা মহা কিছুরই কসম খান । 'মাশহূদ' সেই দিনকে বলা হয়, যেদিন লোকেরা (কোনো এক স্থানে উপস্থিত ও জমায়েত হয়। অনেক তাফসীরকারদের মতে তা হলো আরাফার দিন। এই দিনের প্রতি ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ কুরআনে (সূরা বুরূজের ৩নং আয়াতে) তার কসম খেয়েছেন। আবূ হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, (সূরা বুরূজে উল্লেখিত ‘অল-ইয়াওমিল মাশহুদ' হলো কিয়ামতের দিন, ‘অল-ইয়াওমিল মাওউদ' হলো আরাফার দিন এবং ‘আশ্-শাহিদ' হলো জুমআন দিন।” (তিরমিযী-৩৩৩৯)

এই দিনকে বিজোড় দিন বলে উল্লেখ করে তার কসম খেয়েছেন (সূরা ফাজরের ৩ নং আয়াতে) ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এই আয়াতে কুরবানীর দিন এবং আরাফার দিন বলা হয়েছে । আর এই মত ইকরামা ও যাহ্হাকেরও।

এ হলো সে দিন, যে দিনে মহান স্রষ্টা আদম-সন্তানের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ আরাফায় আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন; তিনি আদমের পৃষ্ঠ থেকে প্রত্যেক সৃষ্ট বংশধরকে বের করে তাঁর সামনে পিঁপড়ের মতো ছড়িয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি তাদের সাথে সামনা-সামনি কথা বললেন-

 وَ اِذۡ اَخَذَ رَبُّکَ مِنۡۢ بَنِیۡۤ اٰدَمَ مِنۡ ظُهُوۡرِهِمۡ ذُرِّیَّتَهُمۡ وَ اَشۡهَدَهُمۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ ۚ اَلَسۡتُ بِرَبِّکُمۡ ؕ قَالُوۡا بَلٰی ۚۛ شَهِدۡنَا ۚۛ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ اِنَّا کُنَّا عَنۡ هٰذَا غٰفِلِیۡنَ ﴿۱۷۲   اَوۡ تَقُوۡلُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَشۡرَکَ اٰبَآؤُنَا مِنۡ قَبۡلُ وَ کُنَّا ذُرِّیَّۃً مِّنۡۢ بَعۡدِهِمۡ ۚ اَفَتُهۡلِکُنَا بِمَا فَعَلَ الۡمُبۡطِلُوۡنَ ﴿۱۷۳

অর্থাৎ, আমি কি তোমাদের প্রভু নই, তারা বলল অবশ্যই, নিশ্চয়ই আমরা সাক্ষী রইলাম। (এ স্বীকৃতি গ্রহণ) এ জন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বল, আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না। অথবা তোমরা যেন না বল, আমাদের পূর্বপুরুষগণই তো আমাদের পূর্বে অংশীদারস্থাপন করেছে আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর, তবে কি মিথ্যাশ্রয়ীদের কৃতকর্মের জন্য তুমি আমাদেরকে ধ্বংস করবে? (সূরা আরাফ : ১৭২-১৭৩ আয়াত, আহমদ ১/২৭২, হাকেম ২/৫৯৩, মিশকাত ১২১ নং) সুতরাং কি মহান এই দিন! আর কি মহান সেই অঙ্গীকার।


এই দিন হলো পাপরাশি মাফ হওয়ার দিন। দোষখ থেকে মুক্তি লাভের দিন। 

এ দিনে মহান প্রতিপালক আরাফায় অবস্থানরত হাজীদেরকে নিয়ে ফিরেশতাদের নিকট গর্ব করেন।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “আরাফার দিন ব্যতীত এমন কোনো দিন নেই, যাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অধিক অধিক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে থাকেন। তিনি (ঐ দিনে) নিকটবর্তী হন এবং তাদেরকে (হাজীদেরকে) নিয়ে ফিরিশতাগণের নিকট গর্ব করেন। বলেন, কি চায় ওরা? (মুসলিম ১৩৪৮)

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন বিকালে আরাফাবাসীদের নিয়ে আসমানবাসী ফিরিশতাদের নিকট গর্ব করেন। তিনি তাদেরকে বলেন, আমার বান্দাদেরকে দেখ, আমার দরবারে ধূলিমলিন এলোমেলো রুক্ষ কেশে হাজির হয়েছে। (মুসনাদ আহমদ ২/৩০৫, ত্বাবারানী, ইবনে খুযাইমা ৪/২৬৩)

মুনাবী (র) বলেন, এই গর্ব এই কথার দাবি করে যে, ব্যাপকভাবে আরাফাবাসীর সকল প্রকার পাপ ক্ষমা করা হয়। যেহেতু আল্লাহ সেই হাজীকে নিয়েই গর্ব করেন, যে সর্বপ্রকার পাপ থেকে পবিত্র হতে পেরেছে। পূত-পবিত্র ফিরিশতাদের কাছে পাপহীন পবিত্র মানুষ ব্যতীত কোন পাপীকে নিয়ে তিনি গর্ব করতে পারেন না । (ফাইযুল কাদীর ২/৩৫৪ )

আরাফার দিনে কিছু সলফে সালেহীনদের অবস্থা


কোনো কোনো সলফের হৃদয় এ দিন ভয় ও লজ্জা ছেয়ে থাকত। তাদের একজন বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার কারণে, আরাফাবাসীদেরকে (তোমার ক্ষমা থেকে) বঞ্চিত করো না ।'
আর দ্বিতীয়জন বললেন, কি মাহাত্ম্যপূর্ণ অবস্থানক্ষেত্রে এবং কত বড় আশার পাত্র সেই মা'বুদ; যদি আমি তাদের মধ্যে না থাকতাম।' পক্ষান্তরে তাঁদের কারো কারো মন আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আশায় আশান্বিত হয়ে থাকত ।

আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (র) বলেন, আরাফার বিকালে আমি সুফিয়ান সাওরীর নিকট আসলাম। তখন তিনি হাঁটুর উপর ভয় করে বসা ছিলেন এবং তাঁর চোখ দুটি থেকে পানি ঝরছিল। তিনি আমার দিকে তাকালে আমি তাঁকে বললাম, এই সমবেত লোকদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কার? উত্তরে তিনি বললেন, যে ধারণা করে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না ।

আরাফার দিন দ্বারা কিভাবে উপকৃত হব?

প্রথমঃ এই দিনের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। যেহেতু কোন জিনিসের কদর না জানলে আমরা তার যথার্থ সম্মান করতে পারব না । একজনের প্রকৃত মান জানার পরই তাকে আমরা যথার্থ সম্মান প্রদান করি । তেমনি আরাফার দিনও। আর এ দিন সম্বন্ধে যে ফযিলত, মাহাত্ম্য ও সলফদের অবস্থা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে, তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
এ দিন দ্বারা উপকৃত হওয়ার জন্য নিম্নের নির্দেশমালার অনুসরণ করুন।

আরাফায় অবস্থানের জন্য করুণীয়

ক. এই দিনকে কাজে লাগাবার জন্য পূর্ণরূপে মানসিক ও দৈহিক প্রস্তুতি নিন । এই দিনের ফযিলত ও গুরুত্ব সম্বন্ধে অবহিত হোন ।

খ. এই মহান দিনে আপনি বেশি বেশি তাসবীহ, তাহলীল ও ইস্তিগফার করুন । ইবনে উমর (রা) বলেন, আমরা আরাফার সকালে আল্লাহর রাসূল-এর সাথে অবস্থান করছিলাম। আমাদের কেউ তাকবীর পড়ছিল এবং কেউ তাহলীল পড়ছিল.....। (মুসলিম ১২৮৪)

গ. তাকবীর পাঠ করুন। এই দিনের ফজরের সালাতের পর থেকে তাশরীকের শেষ দিন পর্যন্ত তাকবীর পড়া কর্তব্য।

গৃহবাসী হলে অথবা হজ করতে না এলে করণীয়

ক. এই দিনটির সকল সময়ে ইবাদতে মগ্ন থাকুন । অন্যান্য রাতের মতো এ রাতে সালাত আদায় করুন এবং দিনে নানা প্রকার ইবাদতে লিপ্ত থাকুন । সাংসারিক কর্ম-ব্যস্ততা অন্য দিনের জন্য পিছিয়ে দিন ।

খ. এ দিনে রোযা রাখুন। যেহেতু মহানবী এ দিনের প্রতি অধিক যত্নবান হতে অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি এ দিনে রোযা রাখার বিশেষ মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ দিনের রোযা গত ও আগামী বছরের গুনাহ মার্জনা করে দেয়। (মুসলিম-১১৬)

অবশ্য এ রোযা হাজীদের জন্য সুন্নাত। কোন হজ পালনরত হাজীর জন্য এ রোযা সুন্নাত নয়। যেহেতু মহানবী এর দিনে হজ করা অবস্থায় রোযা রাখেননি এবং আরাফায় থেকে আরাফার রোযা রাখতে তিনি নিষেধও করেছেন।

কাজেই হজ করতে না গেলে আরাফায় রোযা রাখার ব্যাপারে কোনো প্রকার শৈথিল্য প্রকাশ করবেন না। যেহেতু এ রোযা হলো সুন্নাতে মুআক্কাদাহ । এর মাধ্যমে আল্লাহ আপনার পূর্বের পরের দু বছরের গুনাহ-খাতা মাফ করে দেবেন এবং আপনার মর্যাদা উন্নীত করবেন।

গ. এই দিনে বেশি বেশি দুআ করুন। এই দিনের শ্রেষ্ঠ দুআ সম্পর্কে মহানবী তোমার বলেন, “শ্রেষ্ঠ দুআ আরাফার দিনের দুআ; আমি ও আমার পূর্বের নবীগণ যা বলেছেন তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ কথা-

لا إلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ .

লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা-শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। তাঁরই সারা রাজত্ব এবং তাঁরই সকল প্রশংসা। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সর্ব বস্তুর উপর সর্বশক্তিমান। (তিরমিযী ২৫৮৫)

ইবনে আব্দুল বার (র) বলেন, উক্ত হাদীস হতে এ কথা বুঝা যায় যে, আরাফার দিনের এই দুআ অন্যান্য দুআ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। যেমন আরাফার দিন অন্যান্য দিনের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর। আর এতে এ কথার দলীল বিদ্যমান রয়েছে যে, কোনো কোনো দিন অপর অন্য দিনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখে। তবে এ শ্রেষ্ঠত্বের কথা শরীয়তের বিবরণ দানের উপর নির্ভরশীল। আমরা সহীহ সূত্রে যে সকল দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য জানতে পেরেছি তা হলো, জুমআর দিন, আশুরার দিন ও আরাফার দিন । অনুরূপভাবে সোম ও বৃহস্পতিবার সম্বন্ধেও বিবরণ এসেছে। বলা বাহুল্য, এ কথা কিয়াস (অনুমিতি) দ্বারা জানার কোনো উপায় নেই এবং এতে চিন্তা-গবেষণারও কোনো হাত নেই ।

উক্ত হাদীস দ্বারা এ কথাও বুঝা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আরাফার দিনের দুআ কবুল হয়ে থাকে। আর সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ যিকির হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ.... ।

আরাফার দিনের দুআর বিশেষ আদব এই যে, হাজীগণ কেবলা মুখি হয়ে দুই হাত তুলে কাকুতি-মিনতি সহকারে, নিজের ত্রুটির কথা স্বীকার করে এবং সত্য তওবার সাথে দুআ করবে।

পক্ষান্তরে হাজীগণ অন্যান্য মুসলিম জাতিও এ মহান দিনে দুআ করতে যত্নবান হবে। মনের বিভরে এ দিনের গুরুত্বের কথা জাগরিত রেখে, দুআ কবুল হবে এই দৃঢ় আশা রেখে নিজের জন্য নিজের পিতা-মাতা ও পরিবার-সন্তানের জন্য এবং ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য দুআ করবে। আর এ দিন রোযা অবস্থায় দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা তো আরো বেশি। কারণ রোযাদারের রোযা বিফল হয় না। হ্যাঁ, আপনার দুআতে যেন সেই মুজাহিদদেরকে ভুলে যাবেন না, যাঁরা জিহাদের ময়দানের শত্রুদের মুকাবিলা করছে এবং যাঁরা দুশমনের নির্যাতনে নির্যাতিত ।

 আরাফার দিনে দুআ করুন


তবে দুআতে সীমালংঘন করবেন না। দুআ কবুল হওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করবেন না। দুআ করুন নাছোড় বান্দা হয়ে। সেই বান্দার জন্য সুসংবাদ; যে দুআর দিনে দুআ করতে তওফীক লাভ করে।

কুরবানী শব্দের ব্যাখ্যা

‘কুরবানী' শব্দটি আরবি কুরবান শব্দ থেকে গঠিত। আর কুরবান শব্দটি কুরবাতুন শব্দ থেকে উৎপন্ন। আরবি কুরবাতুন এবং কুরবান উভয় শব্দের শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, কারো নিকট্য অর্জন করা প্রভৃতি। ইসলামী পরিভাষায় কুরবান ঐ বস্তুর নাম যা দ্বারা আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। (মুফরাদাতে ইমাম রাগিব ৩য় খণ্ড, ২৮৭, তাফসীরে কাশশাফ ১ম খণ্ড, ৩৩৩) বর্তমানে আমাদের নিকটে কুরবানীর জানোয়ারকেই বিশেষভাবে কুরবান বলা হয় । (তাফসীরে আলমানার ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৪২ পৃষ্ঠা)

পরিশেষে ঐ যবেহকৃত জন্তুকেই কুরবান বলা হয়, যা লোকেরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য উপস্থাপন করতে থাকে। (তাফসীরে মাযহারী ২য় খণ্ড, ১৮৮) ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ উপমহাদেশে কুরবানী বলতে বোঝায় যিলহজ্ব মাসের ১০ম থেকে ১২ বা ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে উট, গরু, বকরী ও ভেড়া প্রভৃতির মধ্য হতে কোন এক জন্তুকে নহর বা যবেহ করা।

আমার জানা মতে আরবিতে কুরবানী শব্দটি ব্যবহৃত হয় না। তাই কুরআনে কুরবানীর বদলে 'কুরবান' শব্দটি মোট তিন জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন : ১. সূরা : আলে ইমরান, আয়াত ৩. ১৮৩; ২. সূরা : আল-মায়িদাহ, আয়াত ৫. ২৭ এবং ৩ সূরা : আল-আহকাফ, আয়াত ৪৬ : ২৮।

হাদীসটিতে ‘কুরবানী' শব্দটি ব্যবহৃত না হয়ে তার পরিবর্তে উদহিয়্যাহ এবং যাহিয়্যাহ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এজন্য কুরবানীর ঈদকে ঈদুল আযহা বলা হয় । ফারসি, হিন্দি ও উর্দূতে আরবি কুরবান শব্দটি কুরবানী অর্থে ব্যবহৃত হয় । বাংলার মুসলিমগণও কুরবানী শব্দটির সাথে খুবই পরিচিত। তাই আমি এ বইয়ে কুরবানী শব্দটি ব্যবহার করেছি যাতে পাঠকগণ সহজেই তা অনুধাবন করতে পারে।






***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url