মোবাইল ব্যবহারের ইসলামিক রীতিনীতি || ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোন ও এর ব্যবহার






ক্যামেরা ফোন ও মোবাইলে ছবি তোলা


ইসলামি শরিয়তে কোনো প্রাণীর ছবি তোলা বা অঙ্কন করা হারাম ও নাজায়েয। কিন্তু কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য বা প্রাণহীন বস্তু যেমন- পাহাড়-নদী, গাছপালা, তরুলতা, আকাশ-সমুদ্র ইত্যাদির ছবি তোলা বা অঙ্কন করা হারাম বা নাজায়েয নয়।

ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল দ্বারা যেহেতু নিষ্প্রাণ বস্তু ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্থির ছবিও উঠানো যায় তাই তার ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয নয়। তবে তাকে নাজায়েয কাজে ব্যবহার করাকেই না জায়েয বলা হবে। অর্থাৎ এর দ্বারা কোনো প্রাণীর ছবি উঠানোকেই নাজায়েয বলা হবে।

ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমার (লেখকের) পরামর্শ হলো, প্রাণীর ছবি না উঠালেও খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এ ধরনের মোবাইল সেট ক্রয় থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ, হাতের কাছে গুনাহের সরঞ্জমাদি থাকলে গুনাহ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা নফস কিছুক্ষণের জন্য সাধু সাজলেও সুযোগ পেলে গুনাহ করে ফেলতে পারে। যখন তখন ফিরে যেতে পারে আপন স্বভাবে। এজন্যেই নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম বলেছিলেন,

وَمَا أُبَرَى نَفْسِي إِنَّ النَّفْس الأمارة بالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَحِيمٌ (٥٣) ( يوسف : ٥٣)

আমি আমার নসকে নির্দোষ মনে করি না। কারণ নট্স অধিক পরিমাণে খারাপ কাজের নির্দেশপ্রদানকারী, তবে আমার রব যাকে রহম করেন, নিশ্চয় আমার রব অধিক ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু [সূরা ইউসুফ, আয়াতঃ ৫৩]

তাছাড়া শয়তান তো আমাদের প্রকাশ্য শত্রু। পাপ কাজ করানোর জন্য সর্বদাই সে মানুষের পিছনে লেগে থাকে। তাই আজ হয়তো আপনার দৃঢ় একিন আছে যে, আপনি কখনোই প্রাণীর ছবি তুলবেন না । কিন্তু ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল হাতে থাকলে শয়তান হয়তো এক সময় সুযোগ পেয়ে আপনার অন্তরে একথার ওয়াসওয়াসা ঢেলে দিতে পারে যে, আরে! দু'একবার ছবি তুললে এমন কি পাপ হবে! দু'একবারের গুনাহ তো আল্লাহও ক্ষমা করেন!! তাছাড়া তাওবার দরজা তো খোলাই আছে ! তাই এখন একটু ছবি তুলে নাও। পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিও ।

অথবা বাসায় ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল থাকলে আপনি হয়তো প্রাণীর কোনো ছবি তুললেন না, কিন্তু আপনার পরিবারের দুর্বল ঈমানওয়ালা কাউকে দিয়ে শয়তান হয়তো প্রাণীর ছবি তোলাতে পারে । প্রিয় পাঠক-পাঠিকা। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আমি যেকথাটি বুঝাতে চাচ্ছি তাহলো- যেহেতু গুনাহের উপকরণ না থাকলে গুনাহের সম্ভাবনাও কম থাকে তাই ক্যামেরা সেট মোবাইল- যা দিয়ে যে কোনো সময় ছবি তোলা যায়, গান শোনা যায়— তা ক্রয় করা বা নিজের কাছে রাখা থেকে বিরত থাকাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

তাই আবারো বলছি, একান্ত ঠেকা না হলে, ক্যামেরা ও ভিডিও সুবিধাযুক্ত মোবাইল সেট ক্রয় না করাই শ্রেয় এবং অধিক তাকওয়ার বিষয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন। [ইমদাদুল ফাতওয়া, খণ্ডঃ ৪ পৃষ্ঠাঃ ২৪৯ # আল আশবাহ ওয়ান্ নাযায়ের, পৃষ্ঠাঃ ৫৩ [ জাওয়াহিরুল ফিক্হ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ৪৪৬ বুহুস ফি কাযায়া ফিকহিয়্যাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা : ৩৫৯ আল বাহরুর্ রায়েক, খণ্ডঃ ৮, পৃষ্ঠাঃ ২০২; আদ্দুররুল মুহতার, খণ্ডঃ ৬, পৃষ্ঠাঃ ৩৯১] 

ক্যামেরাযুক্ত সেট উপহার দেওয়া বা নেওয়া


পূর্বে বলা হয়েছে যে, ক্যামেরা সেট ব্যবহার করা যদিও নাজায়েয নয়, কিন্তু যেহেতু এ জাতীয় সেট হাতে থাকলে এর দ্বারা গুনাহ সংঘটিত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে তাই সবাইকে বিশেষ করে আলেম সমাজ ও উঁচু তবকার দীনদার লোকদেরকে এ ধরনের সেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা খুবই প্রয়োজন ।

অনেক দীনদার লোককে যদি প্রশ্ন করা হয়, ভাই! আপনার হাতে ক্যামেরা সেট?! তখন তিনি এই বলে জবাব দেন- ‘জনাব! এই সেট তো আমি কিনিনি। এটি আমার ভাই বা মামা বিদেশ থেকে পাঠিয়েছেন' । একথা বলার দ্বারা তিনি একথাই বুঝাতে চান যে, যেহেতু এই সেট তিনি নিজে ক্রয় করেননি তাই তার জন্য এটা ব্যবহার করাতে তেমন কোনো অসুবিধা নেই! অনেকে আবার প্রিয়জনের মন রক্ষার্থেও তার গিফ্ট করা ক্যামেরা সেট ব্যবহার করে থাকেন। আচ্ছা বলুন তো, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা বড়, নাকি ভাই-বন্ধু ও প্রিয়জনের মন রক্ষা করা বড়?!

প্রিয় পাঠক! আপনি যদি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকাকে বড় মনে করেন এবং সেই সাথে এটাও চান যে, আপনার দেখাদেখি অন্য কেউ যেন গুনাহের মধ্যে না লিপ্ত হয় তাহলে আমি মনে করি, আপনার জন্য উচিত হবে, এই সেট বাজারে বিক্রি করে ক্যামেরাবিহীন সেট ক্রয় করা। আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে তাওফিক দান করুন। আমীন 

মোবাইল স্ক্রীনে ছবি সেভ করা


মোবাইলের যে অংশে নম্বর, নাম, লেখা ইত্যাদি দেখা যায় তাকে মোবাইল স্ক্রীন বা ডিসপ্লে ইউনিট বলে। অনেককে দেখা যায় মোবাইল স্ক্রীনে নিজের ছবি, বাচ্চাদের ছবি, বন্ধু-বান্ধবদের ছবি, প্রিয়জনদের ছবি বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি সেভ করে রাখে । এরূপ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ শরয়ি ওজর ছাড়া কোনো মানুষ বা প্রাণীর ছবি উঠানো যেমন গুনাহ তেমনি সেভ করে রাখাও গুনাহ ও নাজায়েয। মোবাইল স্ক্রীনে ছবি সেভ করে রাখার আরেকটি খারাবি এই যে, এর দ্বারা ছবির প্রদর্শনী হয় এবং ছবি খুলে রাখা হয়। যা রহমতের ফেরেশতা আগমনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। হাদিস শরিফে আছে, ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না যেখানে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে । আর স্ক্রীনের ছবিটি যদি কোনো মহিলার হয় তবে তো গুনাহের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে। কেননা এক্ষেত্রে গাইরে মাহরামদের জন্য ছবিটি দেখা এবং অন্যদের দেখানোর ভিন্ন গুনাহ হবে। মোটকথা মোবাইল স্ক্রীনে কোনো অবস্থাতেই মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি সেভ করে রাখা যাবে না। [বোখারি শরিফ, খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ৮৮০ ] মুসলিম শরিফ খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ২০০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ডঃ ৫, পৃষ্ঠাঃ ৩৫৯ [ আল বাহরুর রায়েক, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠাঃ ১৭২ শামী, খণ্ডঃ ৯, পৃষ্ঠাঃ ৫১৯, আল মাদখাল ইবনুল হাজ, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ২৭৩ [বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৩০৪]

ম্যাসেজের মাধ্যমে ছবি প্রেরণ


ম্যাসেজের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য, ফুল, ফল বা অন্যান্য বস্তুর ছবি পাঠাতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ছবি পাঠানো জায়েয নেই। কেননা এক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়া ছবির ব্যবহার হচ্ছে। আর ছবিটি যদি কোনো গাইরে মাহরাম মহিলার হয় তবে তো পর্দার হুকুম লঙ্ঘন করার গুনাহ হবে। সাধারণত দেখা যায়, এ ধরনের ছবি যার কাছে পাঠানো হচ্ছে সে তো দেখেই, সেই সাথে আশেপাশের অন্যান্য পুরুষও দেখে। এতে ব্যাপকভাবে পর্দা লঙ্ঘনের গুনাহ হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি। [সহীহ মুসলিম, খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ২০০ আল মাদখাল, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ২৭৩]

মোবাইল দ্বারা ছবি তোলা বা ভিডিও করা


মোবাইল দ্বারা কোনো মানুষ বা প্রাণীর ছবি উঠানো এবং তা সংরক্ষণ করে রাখা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। অনুরূপভাবে মোবাইলের সাহায্যে ভিডিও করাও হারাম ও নাজায়েয। মুফতী শফী রহ. বলেন, কলমের সাহায্যে যেমন জীব-জন্তুর ছবি আঁকা জায়েয নেই অনুরূপভাবে কোনো মেশিনের সাহায্যেও ছবি তৈরি করা বা প্রেসে ছাপা জায়েয নেই। [তাসভীর কি শরয়ি আহকাম, পৃষ্ঠাঃ ৬১ শামী, খণ্ডঃ ১৯, পৃষ্ঠাঃ ৫১৯; উমদাতুল কারী, খণ্ডঃ ১২, পৃষ্ঠাঃ ৩৯]

মোবাইল থেকে গান শুনা বা ছবি তোলা


গান বাজনা সর্বাবস্থায় নাজায়েয ও হারাম। চাই তা সরাসরি শুনা হউক, কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে শুনা হউক। যেমন, মোবাইল, রেডিও, টেলিভিশন, টেপ-রেকর্ডার ইত্যাদি। গানের অপকারিতা সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, মানুষের অন্তরে গান কপটতা সৃষ্টি করে যেমন পানি ক্ষেতকে উর্বর করে। অনুরূপভাবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল কিংবা অন্য কোনো উপায়ে কোনো প্রাণীর ছবি তোলাও নাজায়েয ও হারাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে গান-বাদ্য, ছবি দেখা ও ছবি দেখা তোলাসহ যাবতীয় গোনাহের কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমীন। [আবু দাউদ শরিফ, কুরতবী, খণ্ডঃ ৭, পৃষ্ঠাঃ ২১; ফতোয়ায়ে শামী, খণ্ডঃ ৯, পৃষ্ঠাঃ ৫৬৬; ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১২৬; মাসাইলে মোবাইল, পৃষ্ঠাঃ ১৮]

মোবাইলে কোরআন তিলাওয়াত রেকর্ড করা


লিখিত কোরআনের ন্যায় কোরআন তিলাওয়াতও ডাউনলোড কিংবা রেকর্ড করা জায়েয। এতে কোনো সমস্যা নেই। এর হুকুম অন্যান্য রেকর্ডারের মতোই। তবে যখন তিলাওয়াত অন করা হবে তখন খুব মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত শুনতে হবে। এমন যেন কখনোই না হয়, একদিকে তিলাওয়াত চলছে আর অপর দিকে সে অন্য কাজে ব্যস্ত। কেননা এরূপ করা তিলাওয়াতের আদব পরিপন্থী কাজ । [মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল, ২০০৮ সংখ্যা, পৃষ্ঠাঃ ২৪]

মোবাইলে লিখিত কোরআন রেকর্ড করা


অনেকে লিখিত কোরআন শরিফ বা তার অংশবিশেষ ডাউনলোড করে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে রাখে। এমনিভাবে কেউ কেউ আবার হাদিস বা হাদিসের টুকরোও স্বীয় মোবাইলে সেভ করে রাখে। এরূপ করা জায়েয। তবে যখন তা স্ক্রীনে আনা হয় তখন খুব ভালো করে সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোরআন বা হাদিসের সাথে কোনো ধরনের বেআদবী না হয়। যেমন, এ অবস্থায় বাথরুম বা কোনো নাপাক স্থানে যাওয়া। উল্লেখ্য যে, কোরআন শরিফ স্ত্রীনে কিংবা মেমোরীতে থাকা অবস্থায় বিনা অজুতে মোবাইল ধরা বা স্পর্শ করা যাবে। [ফাতাওয়া শামী, খণ্ডঃ ৯, পৃষ্ঠাঃ ৫১৯ সংখ্যা, পৃষ্ঠাঃ ২৪] মাসিক আল কাউসার, এপ্রিল, ২০০৮

মোবাইল স্ক্রীনে আয়াত, জিকির বা এগুলোর ক্যালিগ্রাফী সেভ করা


মোবাইল স্ক্রীনে পবিত্র কোরআনের আয়াত, আল্লাহ তাআলার নাম, জিকির বা এগুলোর ক্যালিওগ্রাফী সেভ করে রাখা ঠিক নয়। কেননা ক্ষেত্রবিশেষে এসব মর্যাদাপূর্ণ জিনিসের সাথে বেয়াদবি হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে । তাছাড়া সাধারণত দেখা যায়, মোবাইল খুব একটা সম্মানের সাথে ব্যবহার করা হয় না। বরং অধিক ব্যবহারের ফলে যত্রতত্র রাখা হয়। অনেক সময় ফ্লোরে, নীচে কিংবা বসার স্থানে রাখা হয়। চার্জের প্রয়োজনেও কোনো কোনো সময় নীচে রাখতে হয়। তদুপরি মোবাইল ব্যবহারকারী মোবাইল নিয়ে বাথরুমে যায়, পায়জামা বা প্যান্টের পকেটে রাখে। মোটকথা, যেহেতু স্ক্রীনে দৃশ্যমান অবস্থায় এসব সম্মানিত বস্তুর সম্মান বজায় রাখা পুরোপুরি সম্ভব হয়ে ওঠে না, তাই মোবাইল স্ক্রীনে এগুলো সেভ করে রাখা উচিত নয়। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠা ৪৫০; শামী, খণ্ডঃ ৪, পৃষ্ঠাঃ ৫১৯]

বিনা অজুতে কোরআন শরিফ রেকর্ডকৃত মোবাইল স্পর্শ করা


বিনা অজুতে কোরআন শরিফ রেকর্ডকৃত মোবাইল স্পর্শ করা জায়েয আছে। এটা মানুষের ব্রেইলে (স্মৃতিতে) সংরক্ষিত কোরআনের মতো। কোরআন শরিফ মুখস্থকারীর ব্রেইন যেমন বিনা অজুতে ধরা যায়, ছোঁয়া যায়, স্পর্শ করা যায় ঠিক তেমনি বিনা অজুতে কোরআন শরিফ রেকর্ডকৃত মোবাইলও স্পর্শ করা জায়েয আছে। অবশ্য কোরআন শরিফের কোনো আয়াত যদি মোবাইল স্ক্রীনে প্রদর্শিত অবস্থায় থাকে তাহলে বিনা অজুতে ঐ আয়াতকে স্পর্শ করা জায়েয হবে না। [ইমদাদুল ফাতওয়া, খণ্ডঃ ৪, পৃষ্ঠাঃ ২৪৫]

মোবাইলে ভিডিও গেমস


আজকাল প্রায় সব মোবাইলেই ভিডিও গেমস্ খেলার প্রোগ্রাম থাকে। এসব গেমসের বিভিন্ন ধরন আছে। যথা :- 

ক) এমন ভিডিও গেমস যেগুলোতে কোনো জীবজন্তুর ছবি থাকে না। যেমন, বিমান, হুণ্ডা, হেলিকপ্টার, রকেট, নৌযান, সাবমেরিন, গাড়ী, জাহাজ, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি। এসব প্রাণহীন বস্তু দিয়ে বিভিন্ন রকমের খেলা হয়। অথবা জীবজন্তু হলেও খুব ছোট কিংবা অস্পষ্ট হওয়ার কারণে নাক, কান, চোখ, মুখ ইত্যাদি বুঝা যায় যায় না, বরং এগুলোকে কেবল নকশার মতো মনে হয়। নিম্নোক্ত শর্ত সাপেক্ষে বিনোদন ও মানসিক প্রশান্তি লাভের উদ্দেশ্যে এসব জিনিস বা অস্পষ্ট প্রাণী দিয়ে তৈরিকৃত ভিডিও গেমস খেলা জায়েয আছে। শর্তগুলো হলো-

১. তাতে জুয়া থাকতে পারবে না। 
২. নামাজ নষ্ট হতে পারবে না। 
৩. বান্দার হক নষ্ট হতে পারবে না। 
৪. লেখাপড়া ও জরুরি কাজে কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারবে না। 
৫. খেলায় একেবারে বিভোর হওয়া যাবে না ।

এসব শর্তের কোনো একটি শর্ত অনুপস্থিত থাকলেও ভিডিও গেমস খেলা জায়েয হবে না।

খ) এমন ভিডিও গেমস যেগুলোতে জীব-জন্তুর ছবি স্পষ্ট থাকে। ছবির কারণে এসব গেমস খেলা এমনিতেই জায়েয নেই। তদুপরি উপরের শর্তাবলীও যদি সেখানে অনুপস্থিত থাকে তবে তো কোনো কথাই নেই। [মাহমুদিয়া, খণ্ডঃ ১৭, পৃষ্ঠাঃ ৩১৮ | এমদাদুল মুফতী, পৃষ্ঠাঃ ৮৩০

মোবাইলে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলা দেখা


প্রচলিত খেলাধূলার মধ্যে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল প্রতিটি খেলাই শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম ও নাজায়েয। তাই এসব খেলা সরাসরি দেখা যেমন হারাম তেমনি মোবাইল, টেলিভিশন ইত্যাদিতে দেখাও হারাম ।
.
প্রচলিত খেলাধূলাগুলো নাজায়েয হওয়ার কারণ হলো, এসব খেলার মধ্যে শরিয়তের দৃষ্টিতে অনেক নাজায়েয দিক রয়েছে। তবে নাজায়েয দিকগুলো বর্জন করে যদি এসব খেলাধূলা করা যায় তবে তা জায়েয আছে। নাজায়েয দিকগুলো হলো-

১. হার-জিতের উদ্দেশ্যে খেলা যাবে না। বরং খেলতে হবে একমাত্র শরীর চর্চা ও মানসিক প্রশান্তি অর্জনের জন্য। তাছাড়া জয়ী পক্ষকে যদি পরাজিত পক্ষ হতে কোনো অর্থ-সম্পদ দেওয়ার শর্ত থাকে তাহলে তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর জুয়া হলো জঘন্য গুনাহ ও হারাম ।

২. শরয়ি সতরের সিমারেখা লঙ্ঘন করা যাবে না। উল্লেখ্য যে, পুরুষের সতর হলো, নাভী রেখে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত ।
৩. নামাজ, জামাআত বা শরিয়তের অন্য কোনো বিধি-বিধান পালনে কোনো প্রকার ত্রুটি হতে পারবে না ।

মোটকথা উল্লেখিত শর্তগুলো পাওয়া গেলে এগুলো খেলাতে কোনো অসুবিধা নেই। বিশেষতঃ এসব খেলার দ্বারা শারীরিক ব্যায়ামও হয়। আর শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখার ব্যাপারে শরিয়তের পক্ষ থেকেও নির্দেশ রয়েছে।

তবে মনে রাখতে হবে, উপরে বর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলা জায়েয হলেও এসব খেলা দেখা জায়েয নেই। চাই সরাসরি হোক, চাই মোবাইল বা টেলিভিশনে হোক। কেননা এর দ্বারা নামাজ ইত্যাদিতে গাফলতী আসে। তদুপরি খেলা চলাকালে অনেক নাজায়েয ছবি ও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় যা থেকে দৃষ্টি ফেরানো অনেক মুশকিল। [এমদাদুল ফতোয়া, খণ্ডঃ ৪, পৃষ্ঠাঃ ২৫৭; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, খণ্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ৪২৩; মাআরিফুল কোরআন, খণ্ডঃ ১৭, পৃষ্ঠাঃ ২৩ ]

বিনা অনুমতিতে কারো কথা মোবাইলে রেকর্ড করা যাবে কি?


রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মজলিশের কথা আমানত। কারো কথা রেকর্ড করার ফলে যেহেতু এই আমানত সংরক্ষিত থাকে না বরং তা অন্যদের কাছে পৌঁছার সমূহ সম্ভাবনা থাকে তাই বিনা অনুমতিতে কারো কথা রেকর্ড করা জায়েয নেই। উল্লেখ্য যে, রেকর্ডকৃত কথাগুলো যদি কারো গোপন কথা হয় তাহলে তা আরো মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। হ্যাঁ, যদি আগে থেকেই কারো কথা রেকর্ড করার ব্যাপারে স্পষ্ট বা মৌন অনুমতি থাকে তাহলে তা রেকর্ড সিস্টেম মোবাইল, টেপ রেকর্ডার বা অন্য কোনো উপায়ে রেকর্ড করাতে কোনো দোষ নেই। অনুরূপভাবে যদি কারো বেলায় এমন হয় যে, তার কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার পর ঋণগ্রহীতা তার সামনে ঋণের কথা স্বীকার করে কিন্তু অন্যের সামনে স্বীকার করে না, তাহলে তার স্বীকারোক্তি গোপনে হলেও রেকর্ড করা জায়েয আছে। [তিরমিজি শরিফ, খণ্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১৭]

মোবাইল থেকে দীনি আলোচনা শুনা


মোবাইল দ্বারা দীনি আলোচনা, হামদ, নাত ইত্যাদি শুনা জায়েয। তবে শর্ত হলো, তাতে কোনো প্রাণীর স্থিরচিত্র বা চলচিত্র থাকতে পারবে না। [মাসাইলে মোবাইল : পৃষ্ঠা : ২১]

উলামায়ে কেরামের হাতে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল


ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলে কথা বলা হারাম নয় বরং তার অপব্যবহারই হারাম। কিন্তু যেহেতু ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলের অপব্যবহারই বেশি হয়ে থাকে তাই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তথা উলামায়ে কেরাম, মসজিদের ইমাম, তাবলীগের আমীর, হাফেজ ও তালিবে ইলমদের জন্য এ ধরনের মোবাইল ব্যবহার না করাই উচিত। কেননা সাধারণ মানুষ তাদেরকে অনুসরণীয় মনে করে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদেরকে লক্ষ্য করে। তাই কোনো আলেম বা উঁচু পর্যায়ের দীনদার লোকদের হাতে যদি ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল সেট থাকে, যদিও তিনি ভুলেও ক্যামেরা অপশনে যান না, তথাপি সাধারণ জনগণ বিভ্রান্তির শিকার হবে। তারা মনে করবে, ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ব্যবহারে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা আলেমদেরকেই ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ব্যবহার করতে দেখেছি।

প্রথমেই বলা হয়েছে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলের সঠিক ব্যবহারে কোনো 'অসুবিধা নেই। অসুবিধা হলো এর অপব্যবহারে। কিন্তু এমন কোনো সাধারণ মানুষ হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না, যিনি ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ব্যবহার করেন অথচ এর অপব্যবহার অর্থাৎ এর দ্বারা কখনোই তিনি ছবি তুলেননি কিংবা ভিডিও করেননি। মোটকথা, সাধারণ মানুষের হাতে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল গেলে তার অপব্যবহারই যেহেতু হয়ে থাকে তাই কোনো আলেম বা দীনদার লোকের জন্য এ ধরনের মোবাইল ব্যবহার করে সাধারণ লোককে তা কিনতে উৎসাহ না যোগানোই উচিত। বস্তুতঃ ক্যামেরাহীন মোবাইল ব্যবহার করাটাই তাদের জন্য সম্মানের বিষয়!

ইমাম মালেক রহ. বলতেন, আলেম ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত আলেম হতে পারেন না, যতক্ষণ না তিনি এমন সব আমলের পাবন্দি করেন যা সাধারণ মানুষ করে না এবং যা না করলে কোনো গুনাহ হয় না । [উসূলুল ইফতা, পৃষ্ঠাঃ ১৬৭]

তালিবে ইলমদের হাতে মোবাইল!


তালিবে ইল্‌ম তথা ছাত্রদের কাছে মোবাইল রাখা মোটেও উচিত নয়। কেননা তাদের কাছে মোবাইল রাখার দ্বারা যতটা না লাভ হয়, তার চেয়ে ক্ষতি হয় কয়েকশ গুণ বেশি। তাই তো এক মনীষী বলেছেন- “তালেবে ইলমের কাছে মোবাইল থাকার অর্থই হলো, তার তলবের মাদ্দা ও জ্ঞানার্জনের আগ্রহ খতম হয়ে যাওয়া এবং ধীরে ধীরে ধ্বংস ও বরবাদির পথে এগিয়ে যাওয়া। সুতরাং ছাত্ররাই এবার সিদ্ধান্ত নিক তারা কি জ্ঞানার্জনের স্পৃহা নিঃশেষ করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে? নাকি জ্ঞানার্জনের স্পৃহা বাকী রেখে প্রকৃত আলেম হওয়ার চেষ্টা করবে?”

লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়াই কেবল ফ্যাশন হিসেবে মোবাইল ব্যবহার করে অর্থের চেয়ে অধিক মূল্যবান জিনিস ‘সময়' অপচয়ে লিপ্ত। আক্ষেপের বিষয় হলো, আমাদের তালেবে ইল্‌ম ভাইয়েরাও এই মহামারি থেকে নিরাপদ নয়। আজকাল তাদের অনেকের হাতেই মোবাইল ফোন দেখা যায়। কেউ গোপনে রাখে, কেউ প্রকাশ্যে ব্যবহার করে। অথচ আমার বুঝে আসে না যে, ইল্‌ম চর্চার প্রতি গভীর মনোনিবেশের সাথে ‘মোবাইল চর্চা' একত্র হয় কীভাবে? তদুপরি এটা নিশ্চিত যে, তালেবে ইলমের জন্য এই 'বস্তুটা' প্রয়োজনের আওতায় পড়ে না। বরং এটা তাদের জন্য একটা অতিরিক্ত জিনিস। তাই এর পেছনে পড়ার মানে একথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আমি তালেবে ইল্‌ম নই । তাই তালেবে ইলমরা যদি নিজেদের কল্যাণ চায়, তাহলে তাদেরকে সর্বপ্রথম মোবাইল পরিত্যাগ করতে হবে। পাশাপাশি সর্বপ্রকার ব্যস্ততা ও প্রতিবন্ধকতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে একাগ্রতার সাথে ইল্‌ম চর্চায় নিমগ্ন হতে হবে । এছাড়া দীনের সঠিক বুঝ ও ইমি ময়দানে পাকা-পোক্ত হওয়ার আশা করা যায় না । 

ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল পাশ্চাত্যের একটি যড়যন্ত্র


ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল পাশ্চাত্যের যড়যন্ত্র বৈ কিছুই নয়। সেদিন দীনদার লোকদের হাতে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল দেখে দারুণ আফসোস করে এক গ্রন্থকার বলেছিলেন, হায়! বিজ্ঞান আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ? পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা কত সুপরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে গুনাহের দিকে ঠেলে দিচ্ছে!! বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্র চলছে- মুসলমানদের ঈমান হরণের ষড়যন্ত্র, আমল থেকে বিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র। সু-কৌশলে গুনাহের সামগ্রী তুলে দেওয়া হচ্ছে মুসলমানদের হাতে। কিন্তু হায়! আমরা যদি তাদের সুগভীর ষড়যন্ত্র বুঝতে পারতাম!!

ফটো তোলাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। অথচ আজকাল মুসলমানদের হাতে হাতে ক্যামেরা, ভিডিও। নবীর আদরের উম্মতেরা ফটো তোলার যন্ত্র নিয়ে সর্বক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছে! ক্যামেরা এখন মুসলমানদের পকেটে পকেটে, হাতে হাতে এবং এটা যে একটা মারাত্মক গুনাহের সরঞ্জাম সে খবরও তাদের নেই!!
আরো বড় পরিতাপের বিষয় হলো, আজকাল মুসলমানরা যখন মোবাইল ক্রয় করার জন্য মার্কেটে যায় তখন তাদের প্রথম পছন্দই থাকে- ক্যামেরা সেট মোবাইল! হায়রে মুসলমান! এ-ই তোমার পছন্দ ! ধিক! শত ধিক!! তোমার পছন্দের উপর!!!







****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url